(১) কথাবার্তা বলা। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৪৫ পৃষ্ঠা)
(২) কাউকে সালাম করা
(৩) সালামের উত্তর দেয়া। (তাহতাবী পাদটিকা সম্বলিত মারাক্বিউল ফালাহ, ৩২২ পৃষ্ঠা)
(৪) হাঁচির উত্তর দেয়া। (নামাযে নিজের হাঁচি আসলে চুপ থাকবেন।) যদি “اَلْحَمْدُ لِلّٰه” বলেও ফেলেন তবু কোন অসুবিধা নেই আর যদি ঐ সময় তা না বলে থাকেন তবে নামায শেষ করে বলবেন (আলমগিরী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৯৮)
(৫) সুসংবাদ শুনে উত্তরে “اَلْحَمْدُ لِلّٰه”বলা। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৯৯)
(৬) খারাপ সংবাদ (যেমন কারো মৃত্যুর সংবাদ) শুনে اِنَّا لِلّٰهِ وَ اِنَّاۤ اِلَيْهِ رٰجِعُوْنَ বলা। (প্রাগুক্ত)
(৭) আযানের উত্তর দেয়া। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১০০)
(৮) আল্লাহ তাআলার নাম শুনে উত্তরে جَلَّ جَلَا لُه ٗ বলা। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৪২০ পৃষ্ঠা)
(৯) নবী করীম, রউফর রহীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর মহান নাম শুনে উত্তরে দরূদ শরীফ পড়া। (যেমন- صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم বলা) (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৯৯ পৃষ্ঠা) (অবশ্য যদি جَلَّ جَلَا لُه ٗ বা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এ কথা গুলো উত্তরের নিয়্যতে না বলে থাকলে নামায ভঙ্গ হবে না।)
নামাযে কান্না করা
নামায ভঙ্গকারী কারণ সমূহ |
নামাযে কাঁশি দেয়া
(১১) রোগীর মুখ থেকে যদি অনিচ্ছায় আহ্! শব্দ বের হয় তবে নামায ভঙ্গ হবে না। এভাবে হাঁচি, হাই, কাঁশি ও ঢেকুর ইত্যাদিতে যত অক্ষর অপারগ অবস্থায় অনিচ্ছাকৃত ভাবে বের হয় তা ক্ষমাযোগ্য। (দুররে মুখতার, ১ম খন্ড, ৪১৬ পৃষ্ঠা)
(১২) ফুঁক দিতে যদি শব্দ বের না হয় তবে তার হুকুম নিঃশ্বাসের মতই, তাতে নামায ভঙ্গ হবে না। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে ফুঁক দেয়া মাকরূহ আর যদি এর ফলে দু’টি শব্দ বের হয় যেমন-উফ, তুফ তবে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। (গুনিয়াহ, ৪২৭ পৃষ্ঠা)
(১৩) গলা পরিস্কার করার সময় যদি দু’টি অক্ষর প্রকাশ হয় যেমন (আখ) তবে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। অবশ্য যদি তা অক্ষমতা বা কোন উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, যেমন শরীরের চাহিদা বা আওয়াজ পরিস্কার করার জন্য অথবা ইমামকে লুকমা দেয়ার জন্য হয় অথবা কেউ সামনে দিয়ে অতিক্রম করার সময় তার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য হয়, তবে এসব কারণে কাঁশি দিলে কোন ক্ষতি নেই। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৪৫৫ পৃষ্ঠা)
নামাযের মধ্যে দেখে তিলাওয়াত করা
(১৪) কুরআন শরীফ থেকে কোন আয়াত কিংবা কোন কাগজ বা মেহরাব ইত্যাদিতে লিখিত স্থান হতে দেখে দেখে কুরআন তিলাওয়াত করা। (অবশ্য যদি এমন হয় যে, মুখস্থ তিলাওয়াত করছে, এ সময় কুরআনের আয়াত বা মেহরাব ইত্যাদির উপর শুধু দৃষ্টি থাকে তবে কোন ক্ষতি নেই। যদি এমন হয়, কোন কাগজ ইত্যাদির উপর আয়াত লিখা রয়েছে কেউ তা দেখলো এবং বুঝে ফেললো, কিন্তু পড়ল না তবে এমতাবস্থায় কোন ক্ষতি নেই।) (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৪৬৪ পৃষ্ঠা)
(১৫) ইসলামী কিতাব কিংবা ইসলামী বিষয়াদি নামাযের মধ্যে ইচ্ছাকৃত দেখা এবং ইচ্ছাকৃত পড়া মাকরূহ। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১০১ পৃষ্ঠা) যদি দুনিয়াবী বিষয়াদি হয়ে থাকে তাহলে আরো বেশি মাকরূহ। সুতরাং নামায অবস্থায় নিজের কাছে কিতাবাদী বা লেখাবিশিষ্ট পেকেট ও শপিং ব্যাগ, মোবাইল ফোন বা ঘড়ি ইত্যাদি এমনভাবে রাখবেন যেন এর উপর দৃষ্টি না পড়ে অথবা দৃষ্টিগোচর না হওয়ার জন্য সেগুলোর উপর রুমাল ইত্যাদি দিয়ে ঢেকে দেবেন। অনুরূপভাবে, নামাযের সময় দেয়াল ইত্যাদির গায়ে লাগানো ষ্টিকার, বিজ্ঞাপন ও ফ্রেম ইত্যাদির প্রতি দৃষ্টি দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
আমলে কসীরের সংজ্ঞা
(১৬) আমলে কসীর নামায ভঙ্গ করে দেয়। যদি তা নামাযের আমলগুলোর মধ্যকার না হয়, বা নামাযকে সংশোধন করার জন্য করা না হয়। যে কাজ সম্পাদনকারীকে দূর থেকে দেখতে এমন মনে হয় যে, সে নামাযের মধ্যে নেই, বরং যদি ধারণাও প্রবল হয় যে, সে নামাযে নেই তবে তাই হবে আমলে কসীর। আর যদি দূর থেকে দেখা ব্যক্তির এমন সন্দেহ হয় যে, সে নামাযের মধ্যে আছে কিংবা নেই তবে তা হবে আমলে কালীল। এর জন্য নামায ভঙ্গ হবে না। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৬৪ পৃষ্ঠা)
নামাযের মধ্যে পোশাক পরিধান করা
(১৭) নামাযের মধ্যে জামা বা পায়জামা অথবা লুঙ্গি পরিধান করা। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৪৬৫ পৃষ্ঠা)
(১৮) নামাযের মধ্যে সতর খুলে যাওয়া আর এমতাবস্থায় নামাযের কোন রুকন আদায় করা অথবা এমতাবস্থায় তিনবার সুবহানাল্লাহ বলার পরিমাণ সময় অতিবাহিত হওয়া। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৬৭ পৃষ্ঠা)
নামাযের মধ্যে কিছু গিলে ফেলা
(১৯) স্বল্প পরিমাণ খাদ্য বা পানীয় (যেমন তিল না চিবিয়ে) গিলে ফেলা। কিংবা মুখে ফোটা পড়লো আর গিলে ফেললো। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৪১৮ পৃষ্ঠা)
(২০) নামায শুরু করার আগে দাঁতের মধ্যে কোন বস্তু আটকানো ছিলো তা গিলে ফেলল তবে তা যদি চনার সমপরিমাণ কিংবা তদপেক্ষা বড় হয়ে থাকে তবে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি তা চনার চেয়ে ছোট হয়ে থাকে তবে তা মাকরূহ হবে। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাক্বিউল ফালাহ, ৩৪১ পৃষ্ঠা)
(২১) নামাযের পূর্বে কোন মিষ্টি জাতীয় জিনিস খেয়েছিল এখন তার কোন অংশ এখন আর মুখে অবশিষ্ট নেই, কিন্তু মুখের লালায় কিছু স্বাদ রয়েছে মাত্র। এ অবস্থায় তা গিলে ফেললে নামায ভঙ্গ হবে না। (খুলাসাতুল ফতোওয়া, ১ম খন্ড, ১২৭ পৃষ্ঠা)
(২২) মুখে চিনি ইত্যাদি রয়েছে, তা মিশে কণ্ঠনালীতে পৌঁছে গেলো, নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। (প্রাগুক্ত)
(২৩) দাঁত থেকে যদি রক্ত বের হয় আর এতে থুথুর পরিমাণ বেশি হয়, এমতাবস্থায় তা গিলে ফেললে নামায ভঙ্গ হবে না। অন্যথায় নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১০২ পৃষ্ঠা) (উল্লেখ্য যে, অধিক পরিমাণের চিহ্ন হচ্ছে কণ্ঠনালীতে রক্তের স্বাদ অনুভব হওয়া। তাহলে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। নামায ভঙ্গের জন্য স্বাদের বিষয়টি বিবেচ্য আর অযু ভঙ্গের জন্য রংয়ের বিষয়টি বিবেচ্য; সুতরাং অযু ঐ সময় ভঙ্গ হবে যখন থুথু লাল বর্ণ ধারণ করে আর যদি থুথু হলুদ বর্ণের হয় তবে অযু ভঙ্গ হবে না।)
নামাযের মাঝখানে কিবলার দিক পরিবর্তন করা
(২৪) বিনা কারণে বক্ষকে (সীনা) কা’বার দিক থেকে ৪৫০ ডিগ্রী বা এর চাইতেও বেশি ফিরালে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। (হ্যাঁ! যদি ওযরের কারণে হয়ে থাকে তবে নামায ভঙ্গ হবে না। যেমন হাদস্ অর্থাৎ অযু ভেঙ্গে গেছে বলে ধারণা হলো আর মুখ ফেরালো, এ অবস্থায় তার ধারণা ভুল বলে সুস্পষ্ট হলো তবে সে এ সময়ের মধ্যে মসজিদ থেকে বের না হলে নামায ভঙ্গ হবে না। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৬৮ পৃষ্ঠা)
নামাযে সাপ মারা
(২৫) সাপ-বিচ্ছু মারলে নামায ভঙ্গ হয় না যতক্ষণ না, তিন কদম যেতে হয়, অথবা তিন আঘাতের প্রয়োজন হয়। তবে যদি তিন কদম যেতে হয় বা তিন আঘাতের প্রয়োজন হয় তবে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৪২৩ পৃষ্ঠা) সাপ বিচ্ছু মারা তখনই বৈধ হবে, যখন তা সামনে দিয়ে অতিক্রম করে এবং দংশন করার ভয় থাকে, যদি দংশন করার ভয় না থাকে, তবে মারা মাকরূহ। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১০৩ পৃষ্ঠা)
(২৬) পরপর তিনটি চুল বা লোম উপড়ে ফেললে, অথবা তিনটি উকুন মারলে অথবা একটি উকুনকে তিনবার মারলে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি পর পর না হয় তবে নামায ভঙ্গ হবে না তবে মাকরূহ হবে। (প্রাগুক্ত)
নামাযে চুলকানো
(২৭) এক রুকনে তিনবার চুলকালে নামায ভঙ্গ হয়ে যায় অর্থাৎ এভাবে যে, চুলকানোর পর হাত সরিয়ে নিলো। অতঃপর আবার চুলকাল পুনরায় হাত সরিয়ে নিলো। দু’বার হলো। এখন যদি এভাবেই তৃতীয়বার করে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি একবার হাত রেখে কয়েকবার নাড়া দিলো (চুলকাল) তবে একবার চুলকাল বলে ধরে নেয়া হবে এক্ষেত্রে নামায ভঙ্গ হবে না। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১০৪ পৃষ্ঠা। গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৪২৩ পৃষ্ঠা)
اَللهُ اَكْبَرُ বলার ক্ষেত্রে ভুল-ভ্রান্তি
(২৮) রুকন পরিবর্তনকালীন তাকবীর বলার সময় اَللهُ اَكْبَرُ শব্দের الف কে দীর্ঘ করে পড়লে। اَللهُ এর (আলিফ) কে দীর্ঘস্বরে অর্থাৎ اٰللهُ বললো অথবা اٰكْبَرُ বললো অথবা ب এরপর الف কে অতিরিক্ত করলো অর্থাৎ اَكْبَا رُ বললো, তবে নামায ভঙ্গ হয়ে গেলো। আর যদি তাকবীরে তাহরীমাতে এমনি করলো তাহলে তো তার নামাযই শুরু হলো না। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ১৭৭ পৃষ্ঠা) অধিকাংশ মুকাব্বির (অর্থাৎ যারা জামাআত চলাকালীন ইমামের তাকবীর সমূহকে উঁচু আওয়াজে পেছন পর্যন্ত পৌঁছায়) ঐ ভুলগুলো অধিক করে থাকে আর এভাবে নিজের ও পরের নামাযগুলোকে বিনষ্ট করে দেয়। সুতরাং যারা এসব আহকাম ভালভাবে জানেনা, তাদের মুকাব্বির হওয়া উচিত নয়।
(২৯) কিরাত অথবা নামাযের যিকিরগুলোতে এমন ভুল করা যাতে অর্থ বিকৃত হয়ে যায়, তাহলে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৭৩ পৃষ্ঠা)
--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত নামায বিষয়ের এনসাইক্লোপিডিয়া ও মাসাইল সম্পর্কিত “নামাযের আহকাম” নামক কিতাবের ১৬৯-১৭৪ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। কিতাবটি নিজে কিনুন, অন্যকে উপহার দিন।
যারা মোবাইলে (পিডিএফ) কিতাবটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন অথবা প্লে স্টোর থেকে এই কিতাবের অ্যাপ ফ্রি ইন্সটল করুন
দাওয়াতে ইসলামীর সকল বাংলা ইসলামীক বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন
নামায বিষয়ক আরো পড়ুন- নামাযের পদ্ধতি, নামাযের ফরয, নামাযের ওয়াজিব, নামাযের সুন্নাত, নামাযের মুস্তাহাব, নামাযের মাকরূহে তাহরীমা, নামাযের মাকরূহে তানযীহী, ইমাম ও জামাআতের বর্ণনা, সিজদায়ে সাহু্
মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন