আপডেট
সম্পূর্ণ বিজ্ঞাপণমুক্ত সাইট। শিখুন-জানুন বিরক্তিছাড়া।
বাংলা ভাষায় অলাভজনক বৃহত্তম ইসলামিক ওয়েবসাইট বানানোর প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছে ইসলামী জীবন টিম। আসছে মোবাইল অ্যাপলিকেশন... সাইট www.islamijibon.net

রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭

ইসলামী বই পাঠ প্রতিযোগিতা-২০১৭ এর সকল সেটের প্রশ্ন ও উত্তর

সংরক্ষনের জন্য ও সকলেই যাচাই করার জন্য আমাদের এবারের আয়োজনের সকল প্রশ্ন ও উত্তর ইসলামী জীবন ব্লগে পাবলিশ করা হলো। বইয়ের নাম ও পৃষ্ঠা সহ উল্লেখ করা হয়েছে। যারা মাসআলা গুলো জানেন না, ভুল উত্তর দিয়েছেন যার মানে দাঁড়ায় আপনি সেসকল মাসআলা জানেন না। তাদের প্রতি অনুরোধ, বিজয়ী হওয়া বাদ দিন, অন্তত মাসআলা গুলো শিখে নিন। কেননা, নবী করীম ﷺ বলেন "একটি মাসয়ালা শিক্ষা করা আমার মতে সারা রাত জেগে নফল নামাজ পড়ার চেয়েও উত্তম।"


প্রশ্ন সেট নং ১

১/ অযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ'র সাথে দুরুদ শরীফ পাঠ করা...?
উত্তর: মুস্তাহাব। (নামাযের আহকাম, ১৩/২৮)

২/ মাকে এমন কোন কথাটি বলল, যার দরুন মৃত্যুর পর তার আকৃতি গাধার মত হয়ে গেল?
উত্তর: তুমি গাধার মত চিৎকার কর। (সামুদ্রিক গম্বুজ, ২০)

৩/ সিলেবাস অনুযায়ী- বয়স্কদের ফ্রি কোরআন শিক্ষা দানকারী প্রতিষ্ঠানের নাম কি?
উত্তর: মাদরাসাতুল মদীনা। (নামাযের আহকাম, ১৫৩/১০০)

৪/ পুলসিরাত তিনিই সহজে পার হতে পারবেন যিনি আল্লাহর... থাকেন। এখানে কি হবে?
উত্তর: ভয়ে প্রকম্পিত। (চার ভয়ঙ্কর স্বপ্ন, ১৯)

৫/ ২৮ টি কুফরী বাক্য বইটি নিতান্তই ছোট। এই বইটিতে আরো কুফরী বাক্য সম্পর্কে জানতে কোন কিতাবটি পড়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে?
উত্তর: কুফরীয়া কালেমাত কে বারে মে সুওয়াল জাওয়াব।  (২৮ টি কুফরী বাক্য, ১৩)

৬/ নামাযে আমীন উচ্চ আওয়াজে বলা কি?
উত্তর: মাকরূহে তানযীহি। (নামাযের আহকাম১৮২/১২৩)

৭/ যে একবার সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে, সে পুনরায় সমবেদনা জ্ঞাপন করতে যাওয়া কি?
উত্তর: মাকরূহ। (নেক্কার হওয়ার উপায়, ২৮)

৮/ নিজের কৃত কর্মের আত্মসমালোচনা করার জন্য সিলেবাসে উল্লিখিত রিসালা (ছোট পুস্কিতা) এর নাম কি?
উত্তর: মাদানী ইনআমাত। (আমি সংশোধন হতে চাই, ১২)

৯/ দাসীর বর্ণনানুযায়ী- কতজনকে পুলসিরাতে উঠানো হয় এবং এর মধ্যে কতজন পুলসিরাত পার হতে সক্ষম হন এবং তিনি কে?
উত্তর: ৪ জন, ১ জন, হযরত ওমর বিন আবদুল আজিজ رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ (চার ভয়ঙ্কর স্বপ্ন- ১৬,১৭)

১০/ রওজা শরীফ যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে গোসল করা...?
উত্তর: মুস্তাহাব। (নামাযের আহকাম, ৮৬/৬০)

১১/ যে আমার সুন্নাত থেকে চল্লিশটি হাদীস আমার উম্মতদের শিক্ষা দেবে, কিয়ামতের দিন আমি তাকে আমার ... অন্তর্ভূক্ত করে নেব। কিসের অন্তর্ভূক্ত?
উত্তর: শাফায়াতের। (চার ভয়ঙ্কর স্বপ্ন- ২৯)

১২/ ব্যস! আল্লাহর ঘরের তো সমস্ত রীতিই উল্টো। বাক্যটি কোন প্রকারের কুফরী বাক্যের উদাহরণ?
উত্তর: অভিযোগ ও আপত্তির সময় উচ্চারিত। (২৮ টি কুফরী বাক্য, ৬)

রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৭

মসজিদ সুবাশিত রাখুন (মসজিদের আদব)

মসজিদে কফ দেখে হুযুর পুরনূর এর অসন্তুষ্টি

একবার নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم মসজিদে নববী শরীফের زَادَهَا اللهُ شَرَفًا وَّتَعْظِيْمًا কিবলার দিকে কফ পড়ে থাকতে দেখে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। তা দেখে এক আনসারী সাহাবীয়া رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا উঠলেন এবং তা পরিস্কার করে সেখানে সুগন্ধি লাগিয়ে দিলেন। অতঃপর হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আনন্দচিত্তে ইরশাদ করলেন: مَا اَحْسَنَ هٰذا অর্থাৎ এই মহিলা কতইনা উত্তম কাজ করলো। (নাসাঈ, ১২৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৭২৫)

ফারুকে আযম এবং মসজিদে সুগন্ধি

সায়্যিদুনা ফারুকে আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ প্রতি জুমা মোবারকে মসজিদে নববী শরীফে زَادَهَا اللهُ شَرَفًا وَّتَعْظِيْمًا সুগন্ধির ধোঁয়া দিতেন। (মুসনদে আবি ইয়ালা, ১ম খন্ড, ১০৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ১৮৫)

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 


মসজিদ সুবাসিত রাখুন!

উম্মুল মু’মিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا বর্ণনা করেন: প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসূলুল্লাহ্ صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم মহল্লায় মহল্লায় মসজিদ নির্মাণের ও সেগুলো পরিস্কার এবং সুবাসিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। (সুনানে আবি দাউদ, ১ম খন্ড, ১৯৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৪৫৫)

মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৭

মদ এর ধ্বংসলীলা

۞ মদ অপবিত্র এবং (তা পান করা) শয়তানী কাজ। মদ থেকে বেঁচে থাকা শান্তি ও সফলতার নিদর্শন। (সূরা- আল মায়েদা, আয়াত- ৯০ থেকে সংকলিত) 

۞ মদ পরস্পর বিদ্বেষ ও শত্রুতা সৃষ্টি করে এবং আল্লাহ্ তা‘আলার স্মরণ থেকে বাধা প্রদান করে। (সূরা- আল মায়েদা: ৯১ থেকে সংকলিত) 

۞ ৫টি হাদীস শরীফ: 

(১) “প্রত্যেক নেশা আনয়নকারী বস্তু মদের অন্তর্ভূক্ত আর সব ধরণের মদ হারাম।” (মুসলিম, ১১০৯ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২০০৩) 

(২) “আল্লাহ্ তা‘আলা মদের উপর, সেটির উৎপাদনকারী এবং যাদের জন্য উৎপাদন করা হয়, তাদের উপর পানকারী এবং যারা পান করায় তাদের উপর, (মদ) আনয়নকারী এবং যাদের জন্য আনা হয়, তাদের উপর, ক্রেতা ও বিক্রেতার উপর এবং মদের মাধ্যমে উপার্জনের টাকা ভোগকারী সকল ব্যক্তিদের উপর অভিশাপ দিয়েছেন।” (আল মুস্তাদরাক, ১৯৯/৫, হাদীস- ৭৩১০) 

(৩) “মদকে দেওয়ালে ছুড়ে মারো, কেননা সেটি ঐ ব্যক্তির পানিয় যে আল্লাহ্ তা‘আলা এবং শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে না।” (হিলইয়াতুল আউলিয়া, ১৫৯/৬, হাদীস- ৮১৪৮) 

(৪) “মদ পানকারী যখন মদ পান করে, তবে ঐ সময় সে মুমীন থাকে না।” (মুসলিম, ৪৮ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৫৭) 

বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৭

কারবালার রক্তিম দৃশ্য (ধৈর্য্য বিষয়ে)

بِسۡمِ اللّٰہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمَِ সগে মদীনা মুহাম্মদ ইলিয়াছ আত্তার কাদেরী রযবীর عُفِىَ عَنْهُ পক্ষ থেকে মদীনার প্রেমে আত্মহারা, প্রিয় নবী, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর ইশ্কে পাগলপারা, দা’ওয়াতে ইসলামীর মহিলা মুবাল্লিগার* ........... খেদমতে মাদানী শরীফের আশপাশ ঘুরে আসা, নূরানী বাতাসের এবং সেখানখার পরিবেশের ঘনঘটার বরকতে পরিপূর্ণ সুগন্ধিময় সালাম!

اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُه اَلحَمدُ لِلهِ رَبِّ العلَمِين عَلٰى كُلِّ حَال
---------------
*বিপদগ্রস্থ এক মহিলা মুবাল্লিগাকে শান্তনা দেবার জন্য এবং তাঁরই আবেদনের প্রেক্ষিতে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজের কর্ম-পদ্ধতির উপর লিখিত এক গুরুত্বপূর্ণ শান্ত¡নামূলক মাকতুব পরিবর্ধন সহকারে পেশ করা হল। ... মজলিসে মাকতুব।
--------------
ইশকে রাসুল এ ভরপুর আপনারই হাতের লেখা এক মাকতুব আমি গুনাহগারের হাতে এসেছে। আমি আপনার সেই মাদানী সুধায় পরিপূর্ণ মাকতুবটি সম্পূর্ণ পাঠ করেছি। আপনি দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রতি অত্যন্ত আন্তরিকতা রাখেন এবং চেষ্টারত রয়েছেন জেনে আমার মন আনন্দিত হয়ে মদীনার বাগানে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। হে আমার মাদানী কন্যা! আপনি লোকজনের অপবাদের ভয় করবেন না। বর্তমানে যারাই সুন্নাতের পথে চলার চেষ্টা করে সমাজ তাদের সাথে এই ধরনের গর্হিত ব্যবহারই করে থাকে। হায়! 

ওহ দওর আয়া কে দীওয়ানায়ে নবী কে লিয়ে
হার এক হাত মেঁ পাত্থর দেখাই দেতা হে।

শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৭

"বই পাঠ প্রতিযোগিতা-২০১৭" এর প্রতিযোগীদের নাম

৩০ নভেম্বর-২০১৭ তারিখের পর আর কারো রেজিষ্ট্রেশন করা হবে না।

আপনার ফেসবুক প্রোফাইল পিকচারে প্রতিযোগিতার ফ্রেম লাগাতে ক্লিক করুন  👉  এখানে

নিশ্চিতভাবে যারা অংশ নিবেন, নাম্বারটি সবুজ করতে যোগাযোগ করুন

১। ইফতেখার আলম>> চট্টগ্রাম>> হোয়াটসেপ

২। Sabekun Nahar (Simu)>> চাঁপাইনবাবগঞ্জ>> ফেসবুক পেজ

৩। Md Jobayer Mahmud>> নরসিংদী>> ফেসবুক পেজ

৪। মুহাম্মদ ইসমাঈল হুসাইন>> ঢাকা>> হোয়াটসেপ

৫। সোহেল রেজা>> ঢাকা>> হোয়াটসেপ
সাদা ও সবুজ এই দুই ক্যটাগরিই অংশ নিতে পারবে
৬। ইসমাইল>> কুমিল্লা>> হোয়াটসেপ

৭। M. M. Rahman Ashrafi>> ঢাকা >> ফেসবুক পেজ

৮। মুহাম্মদ খলিলুর রহমান>> চট্টগ্রাম>> ফেসবুক পেজ

৯। মোহাম্মদ আবদুল মোতালেব>> চট্টগ্রাম>> ফেসবুক পেজ

১০। মোহাম্মদ আরমান হোসেন>> চট্টগ্রাম>> হোয়াটসেপ

১১। শামীম কাদরী>> দিনাজপুর>> হোয়াটসেপ

১২। Md Saidullah>> কুমিল্লা>> ফেসবুক পেজ

১৩। Md Rahamat Ullah>> চট্টগ্রাম>> হোয়াটসেপ

১৪। শাওন আহমেদ>> হবিগঞ্জ>> ফেসবুক পেজ

১৫। Masum Billah Sunny>> চট্টগ্রাম>> হোয়াটসেপ

১৬। মুহাম্মদ অামানুল ইসলাম>> ঢাকা>> ফেসবুক পেজ

১৭। এ.বি.এম. আবিদুর রহমান>> হবিগঞ্জ>> ফেসবুক পেজ

১৮। মোঃ বোরহান উদ্দিন>> কুমিল্লা>> ফেসবুক পেজ

১৯। সৈয়দ রাকিবুর রহমান>> ঢাকা>> ফেসবুক পেজ

২০। মোল্লা শাকির আহমদ মাছুম>> মৌলভীবাজার>> ফেসবুক পেজ
প্রতিযোগীদের ক্রম অনুসারে টেষ্টের তারিখ
২১। কাশফিয়া হক>> ঢাকা>> ফেসবুক পেজ

২২। নাফিসা সালসাবিল>> কুমিল্লা>> ফেসবুক পেজ

২৩। Juyel Ahmed Jawdan>> সিলেট>> ফেসবুক পেজ

২৪। ইসমাঈল হোসেন প্রামানিক>> পাবনা>> ফেসবুক পেজ

২৫। Md Mamun>> নোয়াখালী>> ফেসবুক পেজ

বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৭

চলাফেরা করার ১৫টি সুন্নাত ও আদব

(১) পারা ১৫ সূরা বনী ইসরাঈল আয়াত নং ৩৭ এর মধ্যে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّكَ لَن تَخْرِقَ الْأَرْضَ وَلَن تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُولًا (৩৭)

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং ভূ পৃষ্ঠে অহংকার করে চলাফেরা করো না নিশ্চয় কখনো তুমি ভূ-পৃষ্ঠকে বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং কখনো উচ্চতার মধ্যে পাহাড় সমান হতে পারবে না।

(২) দাওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মাদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ৩১২ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব বাহারে শরীয়ত এর ১৬ অংশের, ৭৮ পৃষ্টার মধ্যে ফরমানে মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم বর্ণিত রয়েছে, এক ব্যক্তি দুইটি চাদর পরিহিত অবস্থায় অহংকার করে চলছিল তাকে ভূ-পৃষ্ঠে দাবিয়ে দেয়া হল। সে কিয়ামত পর্যন্ত দাবতেই থাকবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৪৬৫)

(৩) মাদীনার তাজেদার, উভয় জগতের সরদার صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কখনো কখনো পথ চলতে চলতে কোন সাহাবীর হাত আপন হাত মুবারকে নিয়ে নিতেন। (আল মুজামুল কাবীর লিত তাবরানী, খন্ড-৭, পৃ-১৬২)

আমরাদ অর্থাৎ সুশ্রী বালকদের হাত ধরবেন না, কামভাব নিয়ে যে কোন ইসলামী ভাইয়ের হাত ধরা কিংবা মুসাফাহা করা (অর্থাৎ হাত মিলানো) অথবা কুলাকুলি করা হারাম ও জাহান্নামে নিক্ষেপকারী কাজ।

সামুদ্রিক গম্বুজ : পিতা-মাতার হক্ব

আল্লাহ তাআলা হযরত সায়্যিদুনা সুলায়মান عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام কে ওহী প্রেরণ করলেন সমূদ্রের তীরে গিয়ে আমার কুদরতের নিদর্শন দেখুন। তিনি عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام আপন সাথীদেরকে নিয়ে সমূদ্র তীরে তাশরীফ আনলেন কিন্তু তেমন কোন নিদর্শন দেখলেন না, তিনি একটি জ্বিনকে আদেশ করলেন সমূদ্রে ডুব দিয়ে তলদেশের সংবাদ নিয়ে আস। সে ডুব দিয়ে ফিরে আসার পর আরয করলেন, আমি তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছতে পারিনি এবং কোন কিছু দেখিনি। তিনি عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام তার চেয়েও শক্তিশালী জ্বিনকে আদেশ দিলেন, সে প্রথম জ্বীনের তুলনায় দ্বিগুন গভীরে ডুব দিল কিন্তু সেও কোন সংবাদ আনতে পারল না। তিনি عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام আপন ওযীর হযরত আসীফ বিন বারখিয়া رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ কে হুকুম দিলেন, তিনি কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি চার দেয়াল বিশিষ্ট কাফুরের আলীশান সামুদ্রিক গম্বুজ সায়্যিদুনা সুলায়মান عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام এর মহিমান্বিত দরবারে উপস্থিত করলেন। এর একটা দরজা মুক্তার, দ্বিতীয়টি ইয়াকুতের, তৃতীয়টি হীরার এবং চতুর্থটি যামাররুদ (এক প্রকার সবুজ পাথর) এর ছিল। চারটি দরজা খোলা থাকা সত্ত্বেও সমূদ্রের পানির একটা ফোটাও ভিতরে প্রবেশ করেনি। এ সামুদ্রিক গম্বুজের ভিতর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিহিত একজন সুদর্শন যুবক নামাযে মশগুল ছিল। যখন সে নামায শেষ করল, তিনি عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام তাকে সালাম করে এ সামুদ্রিক গম্বুজ সম্পর্কে জানতে চাইলেন। সে আরয করল, হে আল্লাহর নবী عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام আমার পিতা পঙ্গু এবং আমার মা অন্ধ ছিলেন। اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ আমি সত্তর বছর তাদের খিদমত করেছি, আমার মা ইন্তেকালের পূর্বে দুআ করলেন, হে আল্লাহ আমার ছেলেকে মঙ্গলজনক দীর্ঘায়ু দান করুন। আমার পিতা মহোদয় ইন্তেকালের সময় দুআ করলেন, আমার ছেলেকে এমন স্থানে ইবাদতের ব্যবস্থা করে দিন যেখানে শয়তান প্রবেশ করতে পারবে না। আমার মরহুম পিতার দাফনের পর আমি সমূদ্রে এসে এ সামুদ্রিক গম্বুজটা দেখতে পেলাম এবং আমি সেটার ভিতর প্রবেশ করলাম। এমন সময় এক ফিরিশতা আসল এবং সে এ গম্বুজকে সমূদ্রের তলায় নামিয়ে দিল।

মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৭

পর্দার মাসআলা (ত্রয়োদশ পর্ব)

কুফু (যোগ্যতা) কাকে বলে?
প্রশ্ন:- কুফু কাকে বলে? 
উত্তর:- সাধারণ পরিভাষায় শুধুমাত্র স্ব-জাতিকে (বংশ) কুফু বলা হয়ে থাকে এবং শরীয়াতে কুফুর সংজ্ঞা হলো; “জাতি অথবা ধর্ম অথবা পেশা অথবা চলাফেরা অথবা অন্য কোন কর্মে অযোগ্য না হওয়া, যা দ্বারা বিয়ে হওয়ায় অভিভাবকের জন্য (অর্থাৎ মেয়ের বাবা, দাদা ইত্যাদি) সামাজিক ভাবে লজ্জা ও বদনামীর কারণ হয়।” (ফতোওয়া মালেকুল উলামা, ২০৬ পৃষ্ঠা) সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ “বাহারে শরীয়াত”এ বর্ণনা করেন: “যোগ্যতার জন্য ছয়টি জিনিসের উপর নির্ভর করা হয়: ১. জাত (বংশ)। ২. ইসলাম। ৩. পেশা। ৪. আযাদ (স্বাধীন হওয়া)। ৫. সততা। ৬. সম্পদ।” (বাহারে শরীয়াত, ৭ম অংশ, ৫৩ পৃষ্ঠা) 

কুফু'র প্রতিটি শর্তের বিস্তারিত বর্ণনা 
(১) জাত (বংশ) এর বর্ণনা 
প্রশ্ন:- বংশের মধ্যে যোগ্যতা দ্বারা কি উদ্দেশ্য? 
উত্তর:- বংশের মধ্যে যোগ্যতা দ্বারা উদ্দ্যেশ হলো; প্রচলিত নিয়মানুযায়ী মেয়ের বিপরীতে ছেলের বংশ হয়তো উচ্চ হবে অথবা সমান, আর যদি সামান্য কম হয়েও যায় তবে এতটুকু যেন কম না হয় যে, মেয়ের অভিভাবকের (অর্থাৎ বাবা ও দাদা ইত্যাদি) জন্য অসম্মানের কারণ হয়। বংশের উচ্চতা ও নিম্নতা সমান পর্যায় হওয়ার কিছু বিস্তারিত বর্ণনা নিম্নরূপ: (ক) কোরাইশের যতগুলো বংশ রয়েছে তা সবগুলো পরস্পর যোগ্যতা রাখে। শুধু তাই নয়, কোরাইশ তো বটে, কিন্তু হাশেমি নয়। তবে এমন কোরাইশি হাশেমি বংশের যোগ্য। “ফতোওয়ায়ে রযবীয়া”য় বর্ণিত আছে: “সৈয়দজাদীর বিয়ে কোরাইশ বংশের প্রতিটি বংশের সাথে হতে পারবে, হোক সে আলাবী বংশের অথবা আব্বাসি অথবা জাফরি অথবা সিদ্দীকি অথবা ফারুকি অথবা উসমানি অথবা উমাবী।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১১তম খন্ড, ৭১৬ পৃষ্ঠা) 

পর্দার মাসআলা (দ্বাদশ পর্ব)

আবদুল্লাহ্ বিন মোবারকের তাওবার কারণ 
প্রশ্ন:- হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ বিন মোবারকও رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ কি অবৈধ প্রেমের রোগে আক্রান্ত ছিলেন? 
উত্তর:- জ্বী, হ্যাঁ। কিন্তু তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরে তাওবা করে নেন এবং উচ্চ মর্যাদা লাভ করেন। হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ বিন মোবারক رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর ঘটনা কিছুটা এমন: “শুরুতে তিনি একজন সাধারণ যুবক ছিলেন। তিনি رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এক দাসীর (কানিয) প্রেমে পড়ে গেলেন এবং তা খুবই গভীর হয়ে গিয়েছিলো। প্রচন্ড শীতে একবার তার দর্শন লাভের জন্য তিনি সেই দাসীর বাড়ীর পাশে পুরো রাত দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমনকি এই অবস্থায় সকাল হয়ে গেলো। সারা রাত অহেতুক অতিবাহিত হওয়াতে তার অন্তরে নিন্দাভাব সৃষ্টি হলো এবং এ বিষয়ে খুবই অনুশোচনা হলো যে, এই দাসীর অপেক্ষায় পুরো রাত অতিবাহিত করে দিলাম, কিন্তু কোন উপকার হলো না। আহ! যদি এই রাত আল্লাহ্ তাআলার ইবাদতে অতিবাহিত করতাম! এই ভাবনায় তার অন্তরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে গেলো এবং তাঁর অন্তরে মাদানী পরিবর্তন সাধিত হলো। তিনি رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ সত্য অন্তরে তাওবা করলেন, দাসীর ভালবাসা তার অন্তর থেকে বের করে দিলেন। আপন প্রতিপালকের দিকে মনোযোগী হলেন এবং অতি অল্প সময়ে বিলায়াতের উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হলেন এবং আল্লাহ্ তাআলা তার শান এতো বৃদ্ধি করলেন যে, 

সাপ, মাছি তাড়ানোয় রত ছিলো 
একবার তাঁর সম্মানীত আম্মাজান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهَا তাঁর খোঁজে বের হলেন, তখন একটি বাগানের গোলাপ গাছের নিচে তাঁকে এভাবে শোয়া অবস্থায় দেখলেন যে, একটি সাপ মুখে নার্গিছ গাছের ডাল নিয়ে মাছি তাড়াচ্ছিলো। অর্থাৎ তাঁর শরীর থেকে মাছি তাড়াচ্ছিলো। (তাযকিরায়ে আওলিয়া, ১ম খন্ড, ১৬৬ পৃষ্ঠা) 
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁর সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।  اٰمِين بِجا  هِ  النَّبِىِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم 

পর্দার মাসআলা (একাদশ পর্ব)

দোয়ার ফযীলত 
ইসলামী বোনেরা! আসলেই এই কথাটি বিশুদ্ধ যে, “নিয়্যত পরিস্কার তো মঞ্জিল সহজ” সেই ইসলামী বোনের সংশোধন হওয়ার আকাঙ্খা ছিলো আর এর জন্য দোয়াও করতো তখন আল্লাহ্ তাআলা তার সংশোধনের ব্যবস্থাও করে দিলেন। আমাদেরও উচিত, নফস ও শয়তানের আক্রমন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দোয়া করাতে অবহেলা না করা। কেননা, “দোয়া মুমিনের হাতিয়ার” দোয়ার মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যায়, রহমতে আলম, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দু'টি বাণী লক্ষ্য করুন: (১) “আমি কি তোমাদের সেই জিনিসের ব্যাপারে বলবো না, যা তোমাদেরকে তোমাদের শত্রু থেকে মুক্তি দান করবে এবং তোমাদের রিযিক প্রশস্থ করে দিবে, রাত দিন আল্লাহ্ তাআলার নিকট দোয়া করতে থাকো। কেননা, দোয়া মুমিনের হাতিয়ার।” (মুসনদে আবু ইয়ালা, ২য় খন্ড, ২০১ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১৮০৬) 

(২) “দোয়া ভাগ্যকে পরিবর্তন করে দেয় এবং উপকার করার দ্বারা বয়স বৃদ্ধি পায় এবং বান্দা গুনাহের কারণে রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।” (ইবনে মাজাহ্, ৪র্থ খন্ড, ৩৭৯ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৪০২২) 

দা'ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ৩১২ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “বাহারে শরীয়াত” এর ১৬তম অধ্যায়ের ১৯৯ পৃষ্ঠায় সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “এই হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, দোয়ার মাধ্যমে বিপদাপদ দূর হয়ে যায়, এখানে ভাগ্য দ্বারা উদ্দেশ্য তাকদীরে মুয়াল্লাক (ঝুলন্ত ভাগ্য) এবং বয়স বৃদ্ধি দ্বারাও এই উদ্দেশ্য যে, উপকার করা বয়স বৃদ্ধির কারণ এবং রিযিক দ্বারা আখিরাতের সাওয়াবই উদ্দেশ্য। কেননা, গুনাহ রিযিক থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ এবং হতে পারে যে, কখনো দুনিয়াবী রিযিক থেকেও বঞ্চিত হয়ে যায়।” 

পর্দার মাসআলা (দশম পর্ব)

আকর্ষনীয় বোরকা 
প্রশ্ন:- ইসলামী বোন আধুনিক ডিজাইনের মুক্তো গাঁথা দৃষ্টিনন্দন বোরকা পরিধান করে বাইরে যাবে কিনা? 
উত্তর:- এতে পুরোপুরি ফিতনা রয়েছে যে, মনের রোগী এই আকর্ষনীয় বোরকা চোখ তুলে তুলে দেখবে। মনে রাখবেন! মহিলার বোরকা যতই দৃষ্টিনন্দন ও ডিজাইনেবল হবে ততই ফিতনার আশংকা বৃদ্ধি পাবে। প্রসিদ্ধ মুফাস্সীর হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “মহিলার জন্য আবশ্যক হলো; উচ্চমানের পোশাক এবং উন্নত মানের বোরকা পরিধান করে যেন বাইরে না যায়। কেননা, সুশোভিত বোরকা পর্দা নয় বরং তা সৌন্দর্য্য প্রকাশ করা।” (মিরআত, ৫ম খন্ড, ১৫ পৃষ্ঠা) 

প্রশ্ন:- মহিলা (যদি) সাদা অথবা সুন্দর চাদরের মাধ্যমে সম্পূর্ন দেহ ঢেকে বের হয় তাহলে? 
উত্তর:- চাদরের মধ্যে কোন ধরনের আকর্ষনীয় কিছু না থাকা উচিত। যেমনিভাবে- হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মাদ গাযালী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর মর্যাদা পূর্ণ বর্ণনার সারাংশ হচ্ছে: “সাধারনত মহিলা যে দৃষ্টিনন্দন চাদর ও ঘোমটা পরিধান করে, তা যথেষ্ট নয়। বরং যখন তারা সাদা চাদর পরিধান করে অথবা সুন্দর ঘোমটা পরিধান করে তখন তার মাধ্যমে উত্তেজনা আরও নাড়া দিয়ে উঠে যে, হয়ত মুখ খোলার পর তাকে আরও সুন্দর দেখা যাবে! সুতরাং সাদা চাদর ও সুন্দর ঘোমটা এবং বোরকা পরিধান করে বাইরে বের হওয়া মহিলাদের জন্য হারাম। যে মহিলা এমন করবে, সে গুনাহগার হবে এবং তার পিতা, ভাই বা স্বামী যে তাকে এর অনুমতি প্রদান করবে সেও তার সাথে গুনাহে লিপ্ত হবে।” (কিমিয়ায়ে সাআদাত, ২য় খন্ড, ৫৬০ পৃষ্ঠা) 

মাদানী বোরকা 
প্রশ্ন:- তাহলে বোরকার ধরণ কেমন হবে? 
উত্তর:- মোটা কাপড়ের ঢিলেঢালা ও অনার্কষনীয় রংয়ের তাবু সাদৃশ্য সাদাসিদে বোরকা হওয়া চাই, যাতে পরিধানকারীনীর ব্যাপারে অনুমান করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায় যে, “সে যুবতী নাকি বৃদ্ধা।” 

পর্দার মাসআলা (নবম পর্ব)

ইসলামী বোন ও নেকীর দাওয়াত 
প্রশ্ন:- ইসলামী বোনেরা নেকীর দাওয়াত দেয়ার জন্য নিজের প্রতিবেশী ইসলামী বোনের ঘরের দরজায় যেতে পারবে কিনা? 
উত্তর:- পরিপূর্ণ পর্দা সহকারে যেতে পারবে। কিন্তু এই অবস্থায় ইসলামী বোনকে অনেক সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে। 

আওয়াজ কিভাবে স্পষ্ট হলো! 
ইসলামী বোনেরা! দুনিয়া ও আখিরাতের অগণিত মঙ্গল লাভ করার জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন সাংগঠনিক পদ্ধতি অনুযায়ী নেকীর দাওয়াতের মাদানী দাওরায় অংশগ্রহণ করুন। নেকীর দাওয়াতের এলাকায়ে দাওরার বরকতের কথা কি বলবো! আপনাদের ঈমান সতেজ করার জন্য মাদানী কাফেলার একটি মনোরম ও সুগন্ধিত মাদানী বাহার উপস্থাপন করছি। পাঞ্জাবের এক ইসলামী বোনের লিখিত বর্ণনার সারাংশ হলো; আমাদের এলাকার একজন ইসলামী বোন গলার রোগে আক্রান্ত ছিলো। স্পষ্ট আওয়াজ বের হতো না এবং তা এমন ছিলো যে, তার একেবারে নিকটে বসা লোকও তার আওয়াজ ভালভাবে বুঝতে পারতো না। ডাক্তার অপারেশনের জন্য বললো এবং এটাও বললো যে, হয়তো আওয়াজ ভাল হবে অথবা একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে দা'ওয়াতে ইসলামীর একজন ইসলামী বোন তাকে নেকীর দাওয়াতের মাদানী দাওরায় অংশগ্রহণ করার উৎসাহ প্রদান করলো, তখন সে বিভিন্ন ঘরে পর্দাসহকারে প্রদান করা নেকীর দাওয়াতে অংশগ্রহণ করার জন্য তাদের সঙ্গ অবলম্বন করলো। যখন সেই ইসলামী বোন মাদানী দাওরা থেকে ফিরে এলো তখন আশ্চর্যজনক ঘটনা হলো যে, তার আওয়াজ পূর্বের তুলনায় অনেক ভাল হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর পরের দিনেই যখন সে দা'ওয়াতে ইসলামীর ইসলামী বোনদের সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় অংশগ্রহণ করলো, তখন তার আওয়াজ এমন ভাবে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, মনে হয় কখনোও বন্ধই হয়নি। এমনি ভাবে নেকীর দাওয়াতের মাদানী দাওরা ও সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় অংশগ্রহণ করার বরকতে সে এই রোগ থেকে মুক্তি পেলো। 

আমিনা কে লাল! সদকা ফাতেমা কে লাল কা, 
দুর আব তো শা'মতেঁ কর বে'কসু ও মজবুর কি। 
বেহরে শাহে করবালা হোঁ দূর আফাত ও বালা, 
এ্যায় এ হাবিবে রব্বে দাওয়ার বে'কসু ও মজবুর কি। 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 

পর্দার মাসআলা (অষ্টম পর্ব)

ইসলামী বোনেরা! আপনারা দেখলেন তো! সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় অংশগ্রহণ করার কেমন বরকত, এই কথাটি স্মরন রাখবেন! ইজতিমায় অংশগ্রহণ করার নিয়্যত যেন শুধুমাত্র দুনিয়াবী সমস্যা সমাধান হওয়ার কারণে না হয়। জ্ঞান অন্বেষন ও সাওয়াব অর্জনের নিয়্যতও অবশ্যই করে নেয়া উচিত। اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ ইসলামী বোনদের শরয়ী পর্দা সহকারে পাকিস্তান সহ বাংলাদেশের অসংখ্য শহর এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন স্থানে সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমা হয়ে থাকে। প্রত্যেক ইসলামী বোনের উচিত, দা'ওয়াতে ইসলামী ইজতিমায় শুধু নিজে অংশগ্রহণ করবেন না বরং অন্যান্য ইসলামী বোনদেরকেও মুহাব্বত সহকারে সাক্ষাত করে ইনফিরাদী কৌশিশ করে ইজতিমায় অংশগ্রহণের দাওয়াত দিতে থাকা। 

মাদানী ফুল: হযরত সায়্যিদুনা জাবির رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত; খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “প্রত্যেক নেকী সদকা স্বরূপ আর তোমাদের আপন ভাইয়ের সাথে উৎফুল্লতা সহকারে সাক্ষাত করাও নেকী, আর নিজের বালতি দ্বারা নিজের ভাইয়ের পাত্রে পানি ঢেলে দেয়াও নেকী।” (মুসনদে আহমদ বিন হাম্বল, ৫ম খন্ড, ১১১ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১৪৭১৫) 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 

পর্দা করতে সংকোচবোধ হলে... 
প্রশ্ন:- পরিবেশ খুবই আধুনিক এবং ফ্যাশন খুবই ছড়িয়ে পড়েছে, শরয়ী পর্দা করতে সংকোচবোধ হয়, এখন কি করা যায়? 
উত্তর:- শরয়ী পর্দা ত্যাগ করা যাবে না। কেননা, এটা উচ্চ পর্যায়ের নেকী। আর বেপর্দা হওয়া মারাত্মক গুনাহ। পর্দা করাতে যত বেশি কষ্ট অনুভব হবে, সাওয়াবও اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ তত বেশি অর্জিত হবে। কথিত আছে: اَفْضَلُ الْعِبَادَاتِ اَحْمَزُهَا অর্থাৎ “সর্বোত্তম ইবাদত সেটাই যাতে বেশি কষ্ট হয়।” (কাশফুল খিফা, ১ম খন্ড, ১৪১ পৃষ্ঠা) 

ইমাম শরফুদ্দিন নববী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “যদি ইবাদতে কষ্ট ও খরচ বেশি হয় তবে সাওয়াব ও ফযীলতও বেশি হয়ে যায়।” (শরহে সহীহ্ মুসলিম লিন নববী, ১ম খন্ড, ৩৯০ পৃষ্ঠা) হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আব্দুল আযিয رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন: “উত্তম ইবাদত সেটা, যার জন্য নফসকে অপারগ হতে হয়।” (ইত্তিহাফু সাদাত লিয যুবায়দী, ১১তম খন্ড, ১০ পৃষ্ঠা) হযরত সায়্যিদুনা ইব্রাহিম বিন আদহাম رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “যে আমল দুনিয়াতে যতটুকু কষ্টসাধ্য হবে, কিয়ামতের দিন তা (আমল) মিযানে (পরিমাপের পাল্লায়) ততটুকু ভারী হবে।” (তাযকিরাতুল আউলিয়া, ৯৫ পৃষ্ঠা সংকলিত) তবে হ্যাঁ! যদি কারো নিজের অন্তরই ভেজাল হয়, তখন আর কি বলব! প্রখ্যাত মুফাস্সীর হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ নূরুল ইরফানের ৩১৮ নং পৃষ্ঠায় বলেন: “যার জন্য গুনাহ করা সহজ ও নেক কাজ করা কষ্ট অনুভূত হয়, তবে মনে করো তার অন্তরে নিফাক রয়েছে।” আল্লাহ্ তাআলা রক্ষা করুন। 

اٰمِين بِجا  هِ  النَّبِىِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم 

পর্দার মাসআলা (সপ্তম পর্ব)

মহিলাদের চাকরী করা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর 

প্রশ্ন:- মহিলারা কি চাকরী করতে পারবে? 
উত্তর:- পাঁচটি শর্তাবলী সহকারে অনুমতি রয়েছে। যেমনিভাবে- আমার আক্বা আ'লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দীদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “এখানে পাঁচটি শর্তাবলী রয়েছে; ১। কাপড় যেন পাতলা না হয়, যা দ্বারা মাথার চুল অথবা হাতের কব্জি ইত্যাদি এবং সতরের কোন অংশের রং প্রকাশ পায়। 

২। কাপড় যেন আঁটোসাঁটো না হয়, যা দ্বারা শরীরের অবস্থাদি (অর্থাৎ বুকের উত্থান অথবা রানের গোলাকৃতি) ইত্যাদি প্রকাশ পায়। 

৩। চুল অথবা গলা কিংবা পেট বা হাতের কব্জির বা পায়ের গোড়ালীর কোন অংশ যেন প্রকাশ না পায়। 

৪। কখনও যেন কোন পর-পুরুষের সাথে সামান্য সময়ের জন্যও একাকীত্বে অবস্থান করতে না হয়। 

৫। তার (মহিলার) সেখানে চাকরী করাতে বা বাহিরে আসা যাওয়াতে কোন ফিতনার আশংকাও যেন না হয়। যদি এই পাঁচটি শর্তাবলী পূরণ হয় তবে কোন সমস্যা নেই, আর যদি এর মধ্যে থেকে একটিও কম হয় তবে চাকরী করা হারাম।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২২তম খন্ড, ২৪৮ পৃষ্ঠা) 


বর্তমান যুগ মুখর্তা ও কপটতার যুগ, বর্ণিত পাঁচটি শর্তাবলীর উপর আমল করাটা বর্তমানে খুবই কঠিন। আজকালঅফিসগুলোতে পুরুষ ও মহিলা مَعَاذَ الله عَزَّوَجَل (আল্লাহর পানাহ! ) একত্রে কাজ করে আর এমনিভাবেই উভয়ের জন্য বেপর্দা, অন্তরঙ্গতা আর কুদৃষ্টি দেয়া হতে বেঁচে থাকা একেবারেই অসম্ভব। এজন্য মহিলাদের উচিত, ঘর ও অফিস ইত্যাদিতে চাকরী না করে অন্য কোন ঘরোয়া উপার্জনের মাধ্যম অবলম্বণ করা। 


পর্দার মাসআলা (ষষ্ঠ পর্ব)

শিক্ষকের সাথেও কি পর্দা করতে হবে? 
প্রশ্ন:- না মাহরাম শিক্ষকের সাথেও কি পর্দা করতে হবে? 
উত্তর:- জ্বী, হ্যাঁ! যেমন; শৈশবকালে কোন না-মাহরামের নিকট কোরআনে পাক পড়তো, আর এখন সে বালিগা হয়ে গেছে। তবে সেই শিক্ষকের সাথেও পর্দা করা ফরয হয়ে যাবে। আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দীদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “বাকী রইল পর্দা করা, শিক্ষক ও শিক্ষক নয় এমন ব্যক্তি, পীর ও পীর নয় এমন ব্যক্তি, আলীম ও আলীম নয় এমন পীর এতে সবাই সমান।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৩তম খন্ড, ৬৩৯ পৃষ্ঠা) 

পীর ও মুরিদনীর পর্দা 
প্রশ্ন:- মুরিদনী এবং পীরের মধ্যেও কি পর্দা রয়েছে? 
উত্তর:- জ্বী, হ্যাঁ! না-মাহরাম পীরের সাথেও মহিলার পর্দা রয়েছে। আমার আক্বা আ’লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “পর্দার ব্যাপারে পীর ও পীর নয় এমন ব্যক্তি প্রত্যেক পর-পুরুষের ব্যাপারে হুকুম সমান।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২২তম খন্ড, ২০৫ পৃষ্ঠা) 


পর্দা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর: দাইয়্যুস কে এবং পালিত সন্তানের সাথে পর্দার বিধান (পঞ্চম পর্ব)

দাইয়্যুসের সংজ্ঞা

প্রশ্ন:- দাইয্যুস কাকে বলে?
উত্তর:- যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও নিজের স্ত্রী ও মাহরিমদেরকে বেপর্দা হওয়া থেকে বারণ করে না, সেই “দাইয়্যুস”। প্রিয় নবী, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ! ইরশাদ করেন: “তিন ব্যক্তি কখনও জান্নাতে প্রবেশ করবে না; দাইয়্যুস এবং পুরুষ সূলভ আকৃতি ধারণকারী মহিলা আর মদ্য পানে অভ্যস্থ ব্যক্তি।” (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৪র্থ খন্ড, ৫৯৯ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৭৭২২) পুরুষের ন্যায় চুল কর্তনকারী এবং পুরুষ সূলভ পোশাক পরিধানকারীরা বর্ণিত হাদীসে পাক থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। ছোট মেয়েদেরকে ছেলেদের মতো চুল কাটানো এবং তাদেরকে ছেলে সূলভ কাপড় এবং ক্যাপ ইত্যাদি পরিধান করানো ব্যক্তিরাও সতর্কতা অবলম্বন করুন, যেন ছোট মেয়েরা এই সময় থেকেই নিজেকে পুরুষ থেকে আলাদা মনে করে আর বুদ্ধি হওয়ার পর এবং বালিগা (প্রাপ্ত বয়স্কা) হওয়ার পর যেন নিজের অভ্যাস ও চালচলনকে শরীয়াতানুযায়ী পরিচালিত করতে কষ্টের সম্মুখীন হতে না হয়। হাদীসে পাকে এটা বলা হয়েছে যে: “কখনও জান্নাতে প্রবেশ করবে না” তা দ্বারা দীর্ঘদিন যাবত জান্নাতে প্রবেশ হওয়া থেকে বঞ্চিত থাকাই উদ্দেশ্য। কেননা, যে মুসলমান নিজের গুনাহের কারণে مَعَاذَ الله عَزَّوَجَل ( (আল্লাহর পানাহ!) জাহান্নামে যাবে, সে অবশেষে জান্নাতে অবশ্যই প্রবেশ করবে। কিন্তু এটা স্মরণ রাখবেন! এক মুহুর্তের কোটি ভাগের এক ভাগও জাহান্নামের আগুন সহ্য করা যাবে না। তাই আমাদেরকে প্রত্যেক গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য সদা সর্বদা চেষ্টা ও জান্নাতুল ফিরদাউসে বিনা হিসাবে প্রবেশের দোয়া করা উচিত। দাইয্যুসের ব্যাপারে হযরত আল্লামা আলাউদ্দিন হাসকাফী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “দাইয়্যুস সেই ব্যক্তি, যে নিজের স্ত্রী অথবা অন্য কোন মাহারিমের প্রতি যথাযথ শরয়ী বিধান প্রয়োগ না।” (দুররে মুখতার, ৬ষ্ট খন্ড, ১১৩ পৃষ্ঠা) জানা গেলো, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও নিজের স্ত্রী, মা, বোন এবং যুবতি মেয়ে ইত্যাদিকে অলি-গলিতে, বাজার সমূহে, শপিং সেন্টারগুলোতে এবং পার্ক সমূহে বেপর্দা ভাবে ঘুরে বেড়াতে, অপরিচিত প্রতিবেশীদের, নামাহরাম আত্মীয়দের, না-মাহরাম চাকর, পাহারাদার এবং ড্রাইভারের সাথে সংকোচহীন এবং বেপর্দা হওয়া থেকে বাধা প্রদান করে না, তারাই দাইয়্যুস। আর তারা জান্নাত থেকে বঞ্চিত এবং জাহান্নামের ভাগীদার।
আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দীদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “দাইয়্যুস ব্যক্তি খুবই মারাত্মক পর্যায়ের ফাসিক এবং প্রকাশ্য ফাসিকের (ফাসিকে মুলিন) পিছনে নামায আদায় করা মাকরূহে তাহরিমী। তাকে ইমাম বানানো বৈধ নয় এবং তার পিছনে নামায আদায় করা গুনাহ এবং আদায় করলে পুনরায় আদায় করা ওয়াজিব।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া সংকলিত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৫৮৩ পৃষ্ঠা)

পর্দা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর: কাদের সাথে পর্দা করতে হবে? (চতুর্থ পর্ব)

মহিলাদের জন্য কার কার সাথে পর্দা রয়েছে?

প্রশ্ন:- মহিলাদের জন্য কোন কোন পুরুষের সাথে পর্দা রয়েছে, আর কোন পুরুষের সাথে পর্দা নেই?
উত্তর:- মহিলাদের জন্য প্রত্যেক অচেনা বালিগ পুরুষের সাথে পর্দা রয়েছে। অচেনা বলতে; যে মাহরামের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত নয়। মাহরাম দ্বারা সে পুরুষগণ উদ্দেশ্য, যাদের সাথে সব সময়ের জন্য বিয়ে হারাম। চাই সে হারাম বংশগত হোক বা অন্য কোন কারণে হোক। যেমন; দুধের সম্পর্ক অথবা শশুড়ালী সম্পর্ক হোক।

মাহারিমের প্রকারভেদ

প্রশ্ন:- মাহরামের মধ্যে কোন কোন লোক অন্তর্ভূক্ত?
উত্তর:- মাহরামের মধ্যে তিন প্রকারের লোক অন্তর্ভূক্ত:
(১) বংশের কারণে যাদের সাথে সবসময়ের জন্য বিয়ে হারাম।
(২) দুধের সম্পর্কের কারণে যাদের সাথে বিয়ে হারাম।
(৩) ‘মুসাহারাত’ অর্থাৎ শশুড়ালী সম্পর্কের কারণে যাদের সাথে বিয়ে হারাম। যেমন; শশুড়ের জন্য তার পুত্রবধু অথবা শাশুড়ীর জন্য তার মেয়ের জামাই। ‘মুসাহারাত’কে এভাবে বুঝে নেয়া যায়, মেয়ে যেই ছেলের সাথে বিয়ে করে, সেই ছেলের উসুল (মূল) ও ফুরু (শাখা)। উসুল দ্বারা উদ্দেশ্য পিতা, দাদা, পিতার দাদা এভাবে উপরস্থ পর্যন্ত, আর ফুরু দ্বারা উদ্দেশ্য সন্তানের সন্তান এভাবে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত) তার জন্য সব সময়ের জন্য হারাম হয়ে যায়। অনূরূপভাবে স্বামীর জন্য তার স্ত্রীর উসুল (মূল) ও ফুরুর (শাখার) সাথেও বিয়ে সব সময়ের জন্য হারাম। এছাড়া যিনা এবং যিনার দিকে আহ্বানকারী কর্ম (যেমন; উত্তেজনা সহকারে শরীরকে আবরণ ব্যতিত স্পর্শ করা বা চুম্বন করার) মাধ্যমেও পুরুষ ও মহিলার জন্যও এই বিধান কার্যকর হবে। অর্থাৎ ‘মুসাহারাতে’র হারাম কর্মের বিধান কার্যকর হবে। বংশগত মাহরাম ব্যতিত উভয় প্রকারের মাহরামের সাথে পর্দা ওয়াজিব নয় এবং নিষেধাজ্ঞা নেই। বিশেষ করে যখন মেয়ে যুবতী হয়ে যায় বা ফিতনার আশংকা থাকে তবে পর্দা করবে। 

পর্দা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর: বর-কনে একে অন্যকে দেখা (তৃতীয় পর্ব)

যাকে বিয়ে করবে তাকে দেখা

প্রশ্ন:- শুনেছি যেই মেয়েকে বিয়ে করবে তাকে নাকি পুরুষ দেখতে পারবে?
উত্তর:- আপনি ঠিকই শুনেছেন। উভয়েই একে অপরকে দেখতে পারবে। সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “(পুরুষ ও মহিলা একে অপরকে দেখার অনুমতি সমৃদ্ধ) আরও একটি ধরণ রয়েছে, আর তা হলো যদি ছেলে সেই মেয়েকে বিয়ে করার ইচ্ছা পোষণ করে, তবে এই নিয়্যতে সে ঐ মেয়েকে দেখতে পারবে। কেননা, হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে: “যার সাথে বিয়ে করবে, তাকে দেখে নাও। কেননা, এটা ভালবাসা দৃঢ়তার মাধ্যম।” (সুনানে তিরমিযী, ২য় খন্ড, ৩৪৬ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১০৮৯)
তেমনিভাবে মহিলাও সেই পুরুষকে দেখতে পারবে, যে তার নিকট বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। যদিওবা যৌন উত্তেজনার আশংকা থাকে, কিন্তু দেখার মধ্যে উভয়ের এই নিয়্যতই থাকা উচিত যে, হাদীস শরীফের উপর আমল করছি।”  (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম অংশ, ৯০ পৃষ্ঠা)


যদি দেখা সম্ভব না হয় তবে কি করা উচিৎ

প্রশ্ন:- যদি ছেলে মেয়ে একে অপরকে দেখা সম্ভব না হয়, তবে অন্য কোন পদ্ধতি রয়েছে কি?:
উত্তর:- এর পদ্ধতি বর্ণনা করতে গিয়ে সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “যেই মেয়েকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক, যদি তাকে দেখা সম্ভব না হয়, যেমনিভাবে বর্তমান যুগে প্রচলিত রয়েছে যে, যদি কেউ বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তবে কোনভাবেই ছেলেকে মেয়ের চেহারা দেখতে দেয় না (অর্থাৎ এমতাবস্থায় ছেলের সাথে এতোটা মজবুত পর্দা করা হয়, যা পর-পুরুষের সাথেও করা হয় না) এই অবস্থায় সেই ব্যক্তির উচিত যে, যেন অন্য কোন মহিলাকে পাঠিয়ে কনেকে দেখিয়ে নেয়া এবং সে এসে মেয়ের সম্পূর্ণ অবয়ব ও দৈহিক কাঠামো ইত্যাদি বর্ণনা করবে, যেন বরের কাছে তার দৈহিক অবস্থা ও আকৃতির ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা হয়ে যায়।” (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম অংশ, ৯০ পৃষ্ঠা)

পর্দা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর: সতর এর মাসআলা (দ্বিতীয় পর্ব)

সতর কাকে বলে?

প্রশ্ন:- সতরে আওরাত (সতর ঢাকা) কাকে বলে?
উত্তর:- সতরের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে; গোপন করা বা ঢেকে রাখা। যে অঙ্গ সমূহকে ঢেকে রাখা আবশ্যক, সেগুলোকে “আওরাত” বলা হয়। আর সমষ্টিগত ভাবে ঢেকে রাখার এই কর্মকে “সতরে আওরাত” (অর্থাৎ গোপনীয় অঙ্গ সমূহকে ঢেকে রাখা) বলা হয়।আমাদের সমাজে এই বিশেষ অঙ্গ সমূহকে সতর বলা হয়। যেগুলোকে ঢেকে রাখা আবশ্যক।

দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ১২৫০ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “বাহারে শরীয়াত”এর ১ম খন্ডের ৪৭৯ পৃষ্ঠায় সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “সতরে আওরাত (অর্থাৎ সতর গোপন করা) প্রতিটি অবস্থায় ওয়াজিব। চাই সে নামাযে থাকুক বা না থাকুক। একা হোক বা সবার সামনে থাকুক। কোন সঠিক কারণ ব্যতিত একাকীত্বেও সতর খোলা বৈধ নয় এবং লোকদের সামনে হোক অথবা নামাযের মধ্যে (প্রতিটি অবস্থায়) সতর ঢেকে রাখা সর্বসম্মতিক্রমে ফরয।” (বাহারে শরীয়াত, ১ম অংশ, ৩য় অংশ, ৪৭৯ পৃষ্ঠা)

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد

সতর সম্পর্কিত বিধানের দু’টি প্রকারভেদ রয়েছে:

(১) নামাযের মধ্যে নারী ও পুরুষের জন্য সতরের বিধান।
(২) নামাযের বাইরে সতরের বিধান। অর্থাৎ কে কার শরীরের কতটুকু অংশ দেখতে পারবে। প্রথম প্রকারের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা প্রশ্নোত্তর আকারে লক্ষ্য করুন।

সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৭

পর্দা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর: পর্দার মাসআলা (প্রথম পর্ব)

عورت (তথা মহিলা) এর শাব্দিক অর্থ

প্রশ্ন:- عورت (তথা মহিলা) এর শাব্দিক অর্থ কি?
উত্তর:- عورت (তথা মহিলা) শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো; “গোপন করার বস্তু”। আল্লাহ্ তাআলার মাহবুব, হুযুর পুরনূ রাসূলুল্লাহ্ صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: عورت ( তথা মহিলা), “মহিলা’ই” (অর্থাৎ গোপন করার বস্তু)। যখন সে বের হয় তখন তাকে শয়তান উঁকিমেরে দেখে।” (অর্থাৎ তাকে দেখা শয়তানের কাজ) (সুনানে তিরমিযী, ২য় খন্ড, ৩৯২ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১১৭৬)

আজকালও কি পর্দা করা আবশ্যক?

প্রশ্ন:- এই যুগেও কি পর্দা করা আবশ্যক?
উত্তর:- জ্বী, হ্যাঁ! কিছু বিষয় যদি দৃষ্টির সামনে রাখা হয় তবে اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ পর্দার মাসয়ালা বুঝার ক্ষেত্রে সহজ হবে। ২২ পারা সূরা আহযাব এর ৩৩ নং আয়াতে পর্দার হুকুম দিতে গিয়ে আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:

وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَىٰ

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং নিজেদের ঘরগুলোতে অবস্থান করো এবং বেপর্দা থেকো না যেমন পূর্ববর্তী জাহেলী যুগের পর্দাহীনতা; (পারা: ২২, সূরা: আহযাব, আয়াত: ৩৩)

খলিফায়ে আ’লা হযরত, সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এই আয়াতের টীকায় বলেন: পূর্বের অন্ধকার যুগ (জাহেলীয়্যতের যুগ)দ্বারা উদ্দেশ্য ইসলামের পূর্বের যুগ। সেই যুগে মহিলারা বেপর্দা বের হতো। নিজের সৌন্দর্য্যতা ও রূপ মাধুর্যকে (অর্থাৎ শরীরের সাজসজ্জা ও সৌন্দর্যতা যেমন; বুকের উত্তান ইত্যাদি) প্রকাশ করতো। যেন পর-পুরুষেরা তা দেখে। এমন পোশাক পরিধান করতো যার দ্বারা শরীর পুরোপুরি আবৃত হতো না। (খাযায়িনুল ইরফান, ৬৭৩ পৃষ্ঠা)

আফসোস! অন্ধকার যুগের সেই পর্দাহীনতা ও নির্লজ্জতা বর্তমান যুগেও দেখা যাচ্ছে, নিঃসন্দেহে যেমনি ভাবে সেই যুগে পর্দা আবশ্যক ছিলো, তেমনি ভাবে বর্তমানেও আবশ্যক।

সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

তিন সাহসী ভাই (একটি অসাধারণ ইসলামীক সত্য ঘটনা)

হযরত আল্লামা আবুল ফারাজ আবদুর রহমান বিন জওযী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ উয়ূনুল হিকায়াতে বর্ণনা করেন: সিরিয়ার তিনজন ঘোড়সওয়ার সাহসী যুবক ভাই ইসলামী সৈন্যদের সাথে জিহাদে রওয়ানা হন। কিন্তু তাঁরা সৈন্যদের থেকে আলাদা হয়ে চলতেন। যতক্ষণ পর্যন্ত কাফেররা প্রথমে আক্রমণ না চালাত তাঁরা যুদ্ধে লিপ্ত হতেন না। একবার রোমদের একটি বড় সৈন্যদল মুসলমানদের উপর আক্রমণ চালাল এবং বেশ কিছু মুসলমানদের শহীদ করল ও অনেককে বন্দী করে ফেলল। তিন ভাই নিজেদের মধ্যে বলাবলি করলেন, মুসলমানদের উপর একটি বড় মুসিবত নাযিল হয়েছে, আমাদের উচিত নিজেদের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া। এ উদ্দেশ্যে তাঁরা সামনে অগ্রসর হলেন আর প্রাণে বেঁচে যাওয়া অবশিষ্ট মুসলমানদের বললেন: আপনারা আমাদের পিছনে চলে যান। এবং আমাদেরকে তাদের সাথে যুদ্ধ করতে দিন। আল্লাহ্ চাইলে আমরাই আপনাদের জন্য যথেষ্ট। অতঃপর তাঁরা রোম সৈন্যদের উপর এমন আক্রমণ চালাল যে, রোম সৈন্যরা পিছু হটতে বাধ্য হল। রোম সম্রাট (তিন যুবক ভাইয়ের বাহাদুরী অবলোকন করছিল) নিজের একজন সেনাপতিকে বলল: যে ব্যক্তি এই তিনজন ভাইদের মধ্য হতে যে কোন একজনকে গ্রেফতার করে আনতে পারবে, আমি তাকে আমার নিকটতম পদ দান করব আর সেনাপতি নিয়োজিত করব। রোম সৈন্যরা এই ঘোষণা শোনার সাথে সাথে প্রচন্ড লড়াইয়ে নিয়োজিত হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত তিন ভাইকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হল। রোম সম্রাট বলল: এই তিনজনকে গ্রেফতার করতে পারাই আমাদের জন্য সব চেয়ে বড় বিজয়। অতঃপর সে সেনাবাহিনীকে ফিরে আসার আদেশ দিল আর এ তিন ভাইকে নিজের সাথে রাজধানী কস্তান্তানিয়ায় নিয়ে আসল। এসে বলল: তোমরা যদি ইসলাম পরিত্যাগ কর, তা হলে আমি আমার কন্যাদের সাথে তোমাদের বিয়ে দিব আর ভবিষ্যৎ সাম্রাজ্যও তোমাদের হাতে ন্যস্ত করব। তিন ভাই ঈমানের উপর অবিচলতা প্রদর্শনপূর্বক তার এই প্রস্তাবনাকে নস্যাৎ করে দিল। তাঁরা সরকারে মদীনা, নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে আহ্বান করলেন। তাঁর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলেন। সম্রাট তার সভাসদের কাছে জিজ্ঞাসা করল: এরা কী বলছেন? সভাসদগণ জবাবে বলল: এঁরা তাঁদের নবীকে ডাকছেন। সম্রাট তিন সহোদরকে বলল: তোমরা যদি আমার কথা অমান্য কর, তা হলে আমি তিনটি কড়াইতে তেল গরম করে তোমাদের তিনজনকেই এক এক করে ঢেলে দেব।

হোসাইনী দুলহা

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! বিগত দিনগুলোতে আমরা তো কারবালার মহান শহীদদের স্মৃতিচারণ করেছি। আসুন! আমি আপনাদেরকে কারবালার হোসাইনী দুল্‌হার হৃদয়-বিদারক করুন ঘটনা শোনাই। যেমন; সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈম উদ্দীন মুবাদাবাদী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘সাওয়ানিহে কারবালায়’ উল্লেখ করেছেন : হোসাইনী দুল্‌হা সায়্যিদুনা হযরত ওহাব ইবনে আবদুল্লাহ কালবী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বনী কল্‌ব গোত্রের একজন সদাচারী ও চরিত্রবান যুবক ছিলেন। তারুণ্য, উচ্ছ্বলতা ও যৌবনকাল ছিল তার। বিয়ে করেছেন মাত্র সতের দিন হল। তখনও যৌবনের তারুণ্যঘন যুগল-জীবনের পূর্ণ স্বাদে বিভোর ছিলেন। এমতাবস্থায় শ্রদ্ধেয় আম্মাজান এসে উপস্থিত হলেন। তিনি ছিলেন বিধবা। যার একমাত্র অবলম্বন ও ঘরের উজ্জল প্রদিপ ছিলেন এই একটি মাত্র পুত্র সন্তানই। স্নেহময়ী মা কান্না জুড়ে দিলেন। পুত্র আশ্চর্য হয়ে মাকে জিজ্ঞাসা করল: প্রাণপ্রিয় মা! আপনি কান্না করছেন কেন? আমার মনে পড়ছে না যে, জীবনে কখনো আপনার অবাধ্য হয়েছি, আগামীতেও আমি এমন হতে পারি না। আপনার আনুগত্য ও মান্যতা আমার জন্য ফরয। আমি সারা জীবন আপনার অনুগত হয়েই থাকব। মা! আপনার মনে কিসের দুঃখ? কোন দুঃখে আপনি কাঁদছেন? হে আমার প্রিয় মা! আমি আপনার আদেশে নিজের জীবনও উৎসর্গ করতে রাজি আছি। আপনি চিন্তিত হবেন না।

রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ইমাম হোসাইন এর কারামত (৩)

ইয়াজিদের মর্মান্তিক মৃত্যু

হযরত সায়্যিদুনা হাসান বসরী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ থেকে মুরসাল ভাবে বর্ণিত আছে: حُبُّ الدُّنْيَا رَأْسُ كُلِّ خَطِيْئَةٍ অর্থাৎ দুনিয়ার ভালবাসাই সকল পাপের মূল। (আল জামেউস সাগীর লিস সুয়ূতী, ২২৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৬৬২, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ্, বৈরুত)

পাপাত্মা ইয়াজিদের মন সর্বদাই এ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার ভালবাসায় মত্ত ছিল। তাই সে দুনিয়ার লোভ লালসায় উন্মাদ হয়ে রাজত্ব, আধিপত্য, যশ-খ্যাতীর ফাঁদে আটকা পড়েছিল। সে নিজের করুন পরিণতির কথা ভুলে গিয়ে ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ও তাঁর সঙ্গীদের নির্দয়ভাবে হত্যা করে তাঁদের রক্ত দ্বারা নিজের হাত রঞ্জিত করেছিল। যে নেতৃত্ব ও আধিপত্যের জন্য সে কারবালাতে জুলুম নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের তান্ডবলীলা চালিয়েছিল, সে নেতৃত্ব আধিপত্যও বেশিদিন তার কাছে স্থায়ী হয়নি। বদ নসীব ইয়াজিদ মাত্র তিন বৎসর ছয়মাস ক্ষমতার আসনে বসে শাসনের নামে লাম্পট্য ও বদমায়েশি করে অবশেষে রবিউন নূর শরীফ, ৬৪ হিজরীতে শাম রাজ্যের হামস শহরে হুওয়ারিন অঞ্চলে ৩৯ বছর বয়সে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। (আল কামেল ফিত্ তারিখ, ৩য় খন্ড, ৪৬৪ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ্, বৈরুত)
পাপাত্মা ইয়াজিদের মৃত্যুর একটি কারণ এটাও বলা হয়ে থাকে, সে একজন রোমান বংশোদ্ভূত যুবতী মহিলার প্রেমের ফাঁদে আটকা পড়েছিল। কিন্তু সে মহিলা তাকে মনে-প্রাণে ঘৃণা করত। একদিন আমোদ-প্রমোদের বাহানা করে সে মহিলা ইয়াজিদকে একাকী সুদূর এক মরুভূমিতে নিয়ে গেল। সে মরুভূমির ঠান্ডা ও শীতল আবহাওয়া ইয়াজিদকে ক্লান্ত ও অবসন্ন করে ফেলল। তাই সে মাতালের মত মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। আর মহিলাও এ সুযোগ হাতছাড়া করল না। “যে পাপীষ্ট নিমক হারাম তার নবীর প্রিয় দৌহিত্রের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে কুণ্ঠিত হয়নি, সে আমার প্রতি কতটুকু ওফাদার হতে পারে।” এ বলে সে যুবতী মহিলা তার ধারালো ছুরি দ্বারা ইয়াজিদের অপবিত্র শরীর টুকরো টুকরো করে তা মরুভূমিতে ফেলে চলে আসল। কয়েকদিন যাবৎ তার মৃতদেহ চিল কাকের খোরাকে পরিণত ছিলো। অবশেষে খবর পেয়ে তার অনুচরেরা সেখানে পৌঁছে তার ক্ষতবিক্ষত লাশ একটি গর্তে মাটি চাপা দিয়ে চলে আসল। (আওরাকে গম, ৫৫০ পৃষ্ঠা)

ওহ তখত হে কিছ কবর মে ওহ তাজ কাঁহা হে
আয় খাক বাতা জুরে ইয়াজিদ আজ কাঁহা হে?

ইমাম হোসাইন এর কারামত (২)

মস্তক মোবারকের সমাধি যিয়ারত

হযরত সায়্যিদুনা আবদুল ফাত্তাহ্ বিন আবু বকর বিন আহমদ শাফেয়ী খালুতী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ তাঁর রচিত ‘নূরুল আইন’ রিসালাতে বর্ণনা করেন: শায়খুল ইসলাম শামসুদ্দিন লক্কানী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ যিনি তৎকালীন যুগে মালেকী মাযহাবের শিক্ষাগুরু ছিলেন,সর্বদা মাসহাদে হোসাইনীতে মস্তক মোবারকের যিয়ারতের জন্য গমন করতেন। তিনি বলতেন: হযরত ইমামে আলী মকাম, ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মস্তক মোবারক এখানে অবস্থিত। হযরত সায়্যিদুনা শায়খ শিহাব উদ্দীন হানাফী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ আমি ‘মাসহাদে হোসাইনী’ যিয়ারত করেছিলাম, কিন্তু আমার সন্দেহ জাগল সেখানে মস্তক মোবারক আছে কিনা? হঠাৎ আমার চোখে ঘুম চলে এল, আমি স্বপ্নে দেখলাম এক ব্যক্তি নকিবের আকৃতিতে মস্তক মোবারকের কাছ থেকে বের হয়ে হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর হুজরা মোবারকে গিয়ে উপস্থিত হলেন এবং হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে আরয করলেন: “ইয়া রাসূলাল্লাহ্ صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم!আহমদ বিন খালবী ও আবদুল ওয়াহ্হাব আপনার শাহজাদা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মস্তক মোবারকের সমাধি যিয়ারত করেছেন। তখন নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “ اَللّٰهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْهُمَا وَاغْفِرْ لَهُمَا" অর্থাৎ- হে আল্লাহ্! তুমি তাঁরা উভয়ের যিয়ারত কবুল করো এবং তাদেরকে ক্ষমা করে দাও।”
হযরত সায়্যিদুনা শায়খ শিহাব উদ্দীন হানাফী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন; সেদিন থেকে আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে, হযরত ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মস্তক মোবারক এখানেই বিদ্যমান আছেন। অতঃপর আমি মৃত্যু পর্যন্ত সে মস্তক মোবারকের যিয়ারত করা ত্যাগ করিনি। (শামে কারবালা, ২৪৭ পৃষ্ঠা)

উন কি পাকী কা খোদায়ী পাক করতা হে বয়ান
আয়ায়ে তাথহীর ছে জাহের হে শানে আহলে বাইত।

শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ইমাম হোসাইন এর কারামত (১)

এ রিসালা পাঠ করার ২১টি নিয়্যত

নবী করীম نِيَّةُ المُؤْمِنِ خَيْرٌ مِنْ عَمَلِه অর্থাৎ “মুসলমানের নিয়্যত তার আমলের চেয়ে উত্তম।” (তাবারানী, মুজামে কবীর, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৮৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫৯৪২)

দুইটি মাদানী ফুল

  • ভাল নিয়্যত ব্যতীত কোন ভাল কাজের সাওয়াব অর্জিত হয় না।
  • ভাল নিয়্যত যত বেশি হবে, সাওয়াবও তত বেশি হবে।
(১) প্রত্যেকবার হামদ, 
(২) দরূদ শরীফ, 
(৩) তা’আউয়ূজ ও
(৪) তাসমিয়্যাহ দ্বারা রিসালাটি পাঠ করা শুরু করব। (এ পৃষ্ঠার উপরে প্রদত্ত আরবী ইবারতটুকু পাঠ করলে এ চারটি নিয়্যতের উপরই আমল হয়ে যাবে।) 
(৫) আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে রিসালাটি শুরু থেকে শেষ পযন্ত সম্পূর্ণ পাঠ করব, 
(৬) সামর্থ্য অনুযায়ী সম্ভব হলে ওযু সহকারে এবং, 
(৭) কিবলামুখী হয়েই পাঠ করব, 
(৮) কুরআনের আয়াত এবং
(৯) হাদীসে মোবারাকা মূল কিতাবের সাথে মিলিয়ে দেখব।

শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

মুহাররম ও আশুরার দিনের ফযীলত ও রোযা

আশুরার দিনের ২৫টি বৈশিষ্ট্য

(১) ১০ই মুহাররামুল হারাম আশুরার দিন হযরত সায়্যিদুনা আদম ছফিউল্লাহ عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام এর তাওবা কবুল হয়েছিল, 
(২) সে দিনই আদম عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام কে সৃষ্টি করা হয়েছিল, 
(৩) সে দিনই আদম عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام কে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল, 
(৪) সেদিনই আরশ, 
(৫) কুরসী, 
(৬) আসমান, 
(৭) জমিন, 
(৮) সূর্য, 
(৯) চন্দ্র, 
(১০) নক্ষত্র ও 
(১১) জান্নাত সৃষ্টি করা হয়েছিল, 

বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

বসন্তের প্রভাত: মিলাদুন্নবী (০২)

দা’ওয়াতে ইসলামী ও জশ্নে বিলাদতে মুস্তফা

কুরআন ও সুন্নাত প্রচারের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন “দা’ওয়াতে ইসলামী”র জশনে বিলাদতে মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর উদযাপনে নিজেদের একটি নিজস্ব পন্থা রয়েছে। পৃথিবীর অগণিত দেশে দা’ওয়াতে ইসলামীর ব্যবস্থাপনায় ঈদে মিলাদুন্নবী صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم রাতে আজিমুশ্শান ইজতিমায়ে মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বিশাল ইজতিমায়ে মিলাদ এর মাহফিল বাবুল মদীনা করাচীতে অনুষ্ঠিত হয়। তার বরকতের কথা কি বলব! এখানে অংশগ্রহণকারীরা জানি না কত সৌভাগ্যবানদের জীবনে মাদানী ইনকিলাব (পরিবর্তন) হয়েছে। এতদ্প্রসঙ্গে চারটি মাদানী বাহার আপনাদের সামনে পেশ করছি।

(১) পাপের চিকিৎসা মিলে গেল

একজন নবী প্রেমিকের কিছুটা এরূপ বর্ণনা যে: “ঈদে মিলাদুন্নবী” صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর রাতে বাবুল মদীনা করাচী ‘কাকরী গ্রাউন্ডে’ অনুষ্ঠিত ইজতিমায়ে মিলাদ (১৪২৬ হিঃ) এ আমার পরিচিত একজন প্রসিদ্ধ বেনামাযী মডার্ণ যুবক অংশগ্রহণ করে। বসন্তের সকালের (১২ই রবিউল আউয়াল) আগমণের সময় দুরূদ সালামের আওয়াজ এবং মারহাবা ইয়া মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর সুললিত চিৎকারে তার অন্তরের জগতে পরিবর্তন এসে গেল। সৎকাজের প্রতি মুহাব্বত এবং অসৎ কাজে ঘৃণা চলে আসল। তিনি সাথে সাথেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পাবন্দী ও দাঁড়ি রাখার নিয়্যত করলেন, আর বাস্তবিকই শেষ পর্যন্ত তিনি নামাযী ও দাঁড়িওয়ালা হয়ে গেলেন। এছাড়াও তার ভিতর এমন এক মন্দ স্বভাব ছিল, যা এখানে আলোচনা করা আমি ভাল মনে করছি না। ইজতিমায়ে মিলাদের বরকতে اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ তার ঐ মন্দ অভ্যাসও দূর হয়ে গেল। অন্যভাবে যদি বলতে চান তাহলে এভাবে বলতে হয়, ইজতিমায়ে মিলাদে অংশগ্রহণের বদৌলতে পাপীদের গুণাহের চিকিৎসা মিলে যায়।
মাংলো মাংলো উনকা গম মাংলো, চশমে রহমত নিগাহে করম মাংলো।
মাসিয়ত কি দাওয়া লা জারাম মাংলো, মাংনে কা মজা আজ কি রাত হে।

মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

বসন্তের প্রভাত: ঈদে মিলাদুন্নবী

মাহে রবিউন্ নূর তথা রবিউল আউয়াল শরীফ আসতেই চতুর্দিকে বসন্তকাল আগমন করে। প্রিয় আক্বা, মক্কী মাদানী মুস্তফা এর আশিকদের অন্তরে আনন্দের ঢেউ খেলে যায়। বৃদ্ধ হোক কিংবা যুবক, প্রত্যেক প্রকৃত মুসলমান যেন অন্তরের মুখ দিয়ে অন্তরের ভাষায় বলে উঠে:-

নিছার তেরী চেহেল পেহেল পর হাজার ঈদে রবিউল আউয়াল,
সিওয়ায়ে ইবলিস কে জাহা মে সবহি তো খুশিয়া মানা রহে হে।

যখন সমগ্র বিশ্ব কুফরী, শিরক, পশুত্ব, বর্বরতার ঘোর অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল ঠিক তখনি ১২ই রবিউন নুর এর রাতে মক্কায়ে মোকাররমায় হযরত সায়্যিদাতুনা মা আমিনা رضى الله عنها এর পবিত্র ঘর থেকে এমন এক নূরের জ্যোতি বিচ্ছুরিত হল, যা সমগ্র বিশ্ব জগতকে আলোকিত করে দিল। ভুলুণ্ঠিত মানবতা যার আগমনের প্রতীক্ষায় ব্যাকুল ছিল, তাজেদারে মদীনা, রহমতের খযিনা, আল্লাহর প্রিয় মাহবুব صلى الله عليه وسلم সমগ্র বিশ্ব জগতের জন্য রহমত হয়ে এই পৃথিবীতে শুভাগমণ করলেন।

মোবারক হো কেহ খাতামুল মুরসালিন তাশরিফ লে আয়ে,
জনাবে রাহমাতুল্লিল আলামিন তাশরিফ লে আয়ে।

শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ইমাম আহমদ রযার সংক্ষিপ্ত জীবনী

শুভ জন্ম

আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, ওলীয়ে নেয়ামত, আযিমুল বারকাত, আযিমুল মারতাবাত, পারওয়ানায়ে শময়ে রিসালাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, হামিয়ে সুন্নাত, মাহিয়ে বিদ্আত, আলিমে শরীয়াত, পীরে তরীকত, বায়িছে খাইর ও বরকত, হযরত আল্লামা মাওলানা আল হাজ্ব, আল হাফিজ, আল ক্বারী, শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খান رحمة الله عليه ১০ ই শাওয়াল ১২৭২ হিজরী, ১৪ই জুন ১৮৫৬ ইং রোজ শনিবার যোহরের সময় বেরেলী শহরের যাচুলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্ম বৎসরের হিসাবে তাঁর ঐতিহাসিক নাম ‘আল মুখতার’ (১২৭২ হিঃ) (হায়াতে আ’লা হযরত, ১ম খন্ড, ৫৮ পৃষ্ঠা, মাকতাবাতুল মদীনা, বাবুল মদীনা, করাচী)

আ‘লা হযরতের জন্ম সাল

আমার আক্বা আ’লা হযরত رحمة الله عليه নিজের জন্ম সাল ২৮ পারার সূরাতুল মুজাদালার ২২ নং আয়াত থেকে বের করেন। এই আয়াতে করীমার ‘ইলমে আবজাদ’ মোতাবেক সংখ্যা ১২৭২ আর হিজরী সাল মোতাবেক এটাই তাঁর জন্ম সাল। যেমন: মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত “মলফুজাতে আ’লা হযরত” এর ৪১০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে: জন্মের তারিখ সমূহের আলোচনা ছিল এবং এর উপর (সায়্যিদী আ’লা হযরত বলেন: আল্লাহ তাআলার জন্য সকল প্রশংসা আমার জন্ম তারিখ এই আয়াতে করীমায় বিদ্যমান: 
أُولَٰئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٍ مِّنْهُ :আয়াত
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ- “এরা ঐসব লোক যাদের অন্তরগুলোতে আল্লাহ ঈমান অংকিত করে দিয়েছেন এবং তাঁর নিকট থেকে রূহ দ্বারা তাঁদের সাহায্য করেছেন।”

তাঁর নাম মোবারক ছিল মুহাম্মদ। কিন্তু তাঁর পিতামহ তাঁকে আহমদ রযা বলে ডাকতেন বিধায় তিনি ঐ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন।

মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

২৮ টি কুফরী বাক্য

অভাব-অনটন, রোগ-শোক, মানসিক কষ্ট এবং আপন জনের মৃত্যুতে অনেক লোক আঘাতের আতিশয্যে কিংবা উত্তেজনায় এসে আল্লাহর পানাহ্! কুফরী বাক্য বলে থাকে। আল্লাহ তাআলার বিরুদ্ধে আপত্তি করা, তাঁকে অত্যাচারী, অভাবী, পর-মুখাপেক্ষী অথবা অপারগ মনে করা কিংবা বলা, এসবই প্রকাশ্য কুফরী বাক্য। স্মরণ রাখবেন! শরীয়াতের অনুমতি ছাড়া জেনে বুঝে যে প্রকাশ্য কুফরী বাক্য বলে এবং অর্থ জানা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি তাতে হ্যাঁ বলে বরং এর পক্ষে যে ব্যক্তি মাথা নেড়ে সায় দেয়, সেও কাফির হয়ে যায়। এর বিবাহ-বন্ধন ও বাইয়াত ভঙ্গ হয়ে যায় এবং জীবনের সমস্ত নেক আমল ধ্বংস হয়ে যায়। যদি হজ্ব আদায় করে থাকে, তবে তাও নষ্ট হয়ে যায়। এমতাবস্থায় ঈমান নবায়নের পর (অর্থাৎ পুনরায় নতুন ভাবে মুসলমান হওয়ার পর) সামর্থ্যবান হওয়া সাপেক্ষে নতুন সূত্রে হজ্ব ফরয হবে।

বিপদের সময় বলা হয়, এমন কতিপয় কুফরী বাক্যের উদাহরণ

(১) আপত্তি করে বলা: ঐ ব্যক্তি লোকদের সাথে যা কিছুই করুক, আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য পূর্ণ (FULL) স্বাধীনতা রয়েছে।

(২) এইভাবে আপত্তি করে বলা: কখনো আমরা অমুকের সাথে সামান্য কিছু করলে আল্লাহ তৎক্ষনাৎ আমাদের পাকড়াও করে ফেলেন।

(৩) আল্লাহ সর্বদা আমার শত্রুদের সহায়তা করেছেন। 

(৪) সর্বদা সবকিছু আল্লাহর সমীপে সমর্পণ করেও দেখেছি, কিছুই হয়না। 

(৫) আল্লাহ তাআলা আমার ভাগ্যকে এখনো পর্যন্ত সামান্য ভাল করলেন না। 

কাফন-দাফনের নিয়মাবলী

পুরুষের সুন্নাত মোতাবেক কাফন

পুরুষের জন্য সুন্নাত মোতাবেক  কাফন তিনটি। যথা-    
(১)      লিফাফাহ    (চাদর)    ,     
(২)     ইযার (তাহবন্দ) ও
(৩) কামীস (জামা) ।

মহিলাদের সুন্নাত মোতাবেক কাফন

মহিলাদের      জন্য     সুন্নাত     মোতাবেক     কাফন  পাঁচটি।   যথা-  
(১)   লিফাফাহ,
 (২)  ইযার,  
(৩) কামীস,
(৪) সীনাবন্ধ ও
(৫) ওড়না।

হিজড়া অর্থাৎ মেয়েলি স্বভাবের পুরুষদেরকেও মহিলাদের     অনুরূপ       পাঁচটি      কাফন     পরাতে  হবে।

রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

মাদানী অসিয়তনামা (কাফন-দাফনের আহকাম সম্বলিত)

اَلْحَمْدُ  لِلّٰہِ  عَزَّوَجَلَّ  এখন  ফযরের  নামাযের  পর  মসজিদে   নববী  শরীফে    عَلٰی  صَاحِبِہَا    الصَّلٰوۃُ  وَالسَّلَام       বসে  “মদীনা      মুনাওয়ারা        থেকে  চল্লিশখানা    অসিয়ত”   লিখার   সৌভাগ্য    অর্জন করছি। আফসোস! শত আফসোস! আজ আমার মদীনা   মুনাওয়ারাতে  উপস্থিতির  শেষ   সকাল। সূর্য  প্রিয়  মাহবুব صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی  عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ   وَسَلَّم এর রওজা মোবারকে সালাম পেশ  করার  জন্য হাজির  হতে   চলেছে।  আহ!   আজ  রাতেই যদি জান্নাতুল বাক্বীতে সমাহিত হওয়ার কোন ব্যবস্থা না   হয়,   তবে    (আগামীকালই)   মদীনা    শরীফ ত্যাগ করতে  হবে। চোখ  অশ্রুসিক্ত, মন  অস্থির হয়ে আছে। হায়!

আফসোস   চন্দ  ঘড়িয়া  তয়্যবা  কি   রাহ  গেয়ী হে, 
দিল মে জুদায়ী কা গম তুফান মাচা রাহা হে।

আহ!   মন   ব্যথা   বেদনায়   নিমজ্জিত।   মদীনার  বিচ্ছেদের     হৃদয়     বিদারক    চিন্তা    আপাদমস্তক বেদনার প্রতিচ্ছবি বানিয়ে  দিয়েছে। এমন মনে হচ্ছে     যেন    মুখের    হাসি   কেউ   ছিনিয়ে    নিয়ে গেছে। আহ!  শীঘ্রই মদীনা ছেড়ে যেতে  হবে। তখন   মন   ভেঙ্গে    যাবে।   আহ!     মদীনা   থেকে স্বদেশের    উদ্দেশ্যে    রাওয়ানা   হওয়ার   মূহুর্তটি এমনি বেদনা দায়ক  হয়ে থাকে যে, যেন কোন দুগ্ধপোষ্য   শিশুকে   তার    মায়ের   কোল    থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। আর সে খুবই আফসোস করে! কেঁদে কেঁদে বারবার মায়ের   দিকে ফিরে দেখছে,      হয়ত      মা       পুনরায়      তাকে       ডেকে নিবেন.....স্নেহ  ভরে  তাকে   কোলে  তুলে নিয়ে নিজের     বুকে    জড়িয়ে    ধরবে।     আর       শ্লোক শুনিয়ে     আপন     মায়াভরা     কোলে     মধুর     ঘুম  পাড়াবেন। হায়!

ইছালে সাওয়াবের পদ্ধতি

ইছালে     সাওয়াব     বা     কারো     জন্য     সাওয়াব  পৌঁছিয়ে    দেবার    জন্য       অন্তরে    নিয়্যত     করে নেওয়াই    যথেষ্ট।   মনে   করুন;আপনি    কাউকে  একটি টাকা দান করলেন কিংবা একবার দরূদ শরীফ    পাঠ    করলেন    অথবা    কাউকে    একটি  সুন্নাত     শিখালেন     নতুবা     কাউকে     ইন্ফিরাদি  কৌশিশের   মাধ্যমে   নেকীর     দাওয়াত    দিলেন অথবা সুন্নাতে ভরা বয়ান করলেন।  মোট কথা; যে কোন নেক কাজ করলেন, আপনি মনে মনে এভাবে  নিয়্যত  করে  নিন:  আমি  এই  মাত্র   যে  সুন্নাতটি       শিক্ষা       দিলাম,        সেটির        সাওয়াব তাজেদারে  মদীনা,  নবী  করীম    صَلَّی  اللّٰہُ    تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দরবারে পৌঁছে যাক। তবে اِنْ   شَآءَ     اللّٰہ   عَزَّوَجَلَّ     সাওয়াব   পৌঁছে   যাবে। তাছাড়া  আরো  যাদের  জন্য  নিয়্যত  করবেন,  তাদের কাছেও পৌঁছে যাবে। মনে মনে  নিয়্যত করার সাথে সাথে  মুখে উচ্চারণ করে নেওয়াও উত্তম। কেননা,  এটি সাহাবীرَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ থেকে প্রমাণিত   রয়েছে।   যেমন;হযরত সা’আদ رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ এর হাদীস। তিনি কূপ খনন করে  বলেছিলেন  :  هٰذِهٖ    لِأُمِّ  سَعد    ‘অর্থাৎ  এই কূপটি সা’আদের মায়ের জন্য’।

ফাতিহা ও ইছালে সাওয়াব কি?

মৃত আত্মীয়-স্বজনদেরকে স্বপ্নে দেখার উপায়


হযরত   আল্লামা   আবু   আবদুল্লাহ্   মুহাম্মদ   বিন  আহমদ মালেকী  কুরতুবী  رَحْمَۃُ اللّٰہِ  تَعَالٰی عَلَیْہِ বর্ণনা  করেন:  হযরত  সায়্যিদুনা     হাসান  বসরী رَحْمَۃُ   اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِএর খিদমতে হাজির   হয়ে এক     মহিলা   আবেদন   করলো,   আমার   যুবতী মেয়ে  মারা  গেছে।   এমন  কোন    আমল   আছে  কি? যা করলে আমি তাকে স্বপ্নে  দেখতে পাব। তিনি     رَحْمَۃُ    اللّٰہِ   تَعَالٰی   عَلَیْہِ    মহিলাটিকে    ঐ আমল     বলে    দিলেন।    মহিলাটি    তার   মরহুমা কন্যাটিকে    স্বপ্নে    তো    দেখলেন,    কিন্তু    এমন  অবস্থায়     দেখলেন     যে,       তার      সারা     শরীরে  আলকাতরার    পোষাক      ছিলো।      তার    ঘাড়ে শিকল,    আর    পায়ে     লোহার    বেড়ি      ছিলো। ভয়ানক এই দৃশ্য দেখে মহিলাটি কেঁপে   উঠল! পরের  দিন   সে  এসে   হযরত  সায়্যিদুনা  হাসান বসরী  رَحْمَۃُ   اللّٰہِ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ   কে   স্বপ্নের    কথা  বলল। স্বপ্নটি শুনে  তিনি رَحْمَۃُ اللّٰہِ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ অত্যন্ত   চিন্তিত    হয়ে   গেলেন।   কিছু    দিন     পর হযরত সায়্যিদুনা  হাসান  বসরী رَحْمَۃُ اللّٰہِ  تَعَالٰی عَلَیْہِ   এক   মেয়েকে   স্বপ্নে   দেখলেন।     মেয়েটি জান্নাতে একটি আসনে মাথায় তাজ   পরে বসে  আছে।   তিনি   رَحْمَۃُ   اللّٰہِ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ  কে  দেখে মেয়েটি  বললো:আমি   হলাম    সেই  মহিলাটিরই কন্যা,    যিনি   আপনাকে    আমার   অবস্থার   কথা  বলেছিলেন।      তিনি     رَحْمَۃُ     اللّٰہِ      تَعَالٰی       عَلَیْہِ বললেন:     মহিলাটির     কথা      মত       কন্যা     তো আজাবে লিপ্ত  ছিলো।   তার এত বড় পরিবর্তন কীভাবে      হলো?        মরহুমা      মেয়েটি      বললো: কবরস্থানের পাশ দিয়ে একটি লোক যাচ্ছিলেন। লোকটি নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ   وَسَلَّم     র উপর  দরূদ  শরীফ পাঠ করেছিলেন। তাঁর সেই দরূদ শরীফ পাঠের   বরকতে     আল্লাহ    তাআলা    ৫৬০    জন কবরবাসীর        উপর         থেকে       আযাব       উঠিয়ে নিয়েছেন।  (আত-তাযকিরাতু  ফি আহওয়ালিল  মাওতা ওয়া   উমুরিল আখিরাতে, ১ম খন্ড, ৭৪ পৃষ্ঠা)

জানাযা নামাযের পদ্ধতি ও গায়েবানা জানাযার বিধান (পর্ব ২)

জানাযার নামাযের পদ্ধতি (হানাফী) 

মুক্তাদী  এভাবে   নিয়্যত  করবে:    আমি   আল্লাহর  ওয়াস্তে  এই  ইমামের  পিছনে  এই  মৃত  ব্যক্তির  দোয়ার জন্য  এই  জানাযার  নামাযের  নিয়্যত    করছি।    (ফতোওয়ায়ে    তাতারখানিয়্যাহ,    ২য়  খন্ড,  ১৫৩  পৃষ্ঠা) এবার      মুক্তাদী  ও      ইমাম উভয়ে প্রথমে কান পর্যন্ত হাত উঠাবেন এবং اَللهُ اَكْبَرُ বলে দ্রুত নিয়মানুযায়ী নাভীর নিচে  হাত বেঁধে নিবেন এবং সানা পড়বেন। সানা পড়ার সময় وَ تَعَالٰى جَدُّكَ এরপর وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَ لَآ اِلٰهَ غَيْرُكَ ط পড়বেন। অতঃপর হাত উঠানো ব্যতীত   اَللهُ   اَكْبَرُ   বলবেন,   অতঃপর   দুরূদে  ইবরাহীম পড়বেন,    এরপর    হাত   না   উঠিয়ে আবার   اَللهُ   اَكْبَرُ    বলবেন    এবং   দোয়া   পাঠ করবেন   (ইমাম    সাহেব  তাকবীর   সমূহ    উচ্চ আওয়াজে  বলবেন    আর  মুক্তাদীগণ   নিম্নস্বরে। বাকী  দোয়া, যিকির  আযকার ইত্যাদি ইমাম ও মুক্তাদী সকলেই নিম্নস্বরে পাঠ করবেন।) দোয়া পাঠ  শেষে  পুনরায়  اَللهُ  اَكْبَرُ     বলবেন এবং  হাত     ছেড়ে    দিবেন,     অতঃপর     উভয়    দিকে সালাম            ফিরাবেন।সালামে            মৃত            ব্যক্তি ফেরেশতাগণ             এবং             নামাযে             উপস্থিত ব্যক্তিবর্গদের   নিয়্যত  করবেন।    ঐভাবে  যেমন অন্যান্য নামাযের   সালামে   নিয়্যত   করা    হয়,  এখানে  এতটুকু  কথা      বেশি  যে  মৃত  ব্যক্তিরও নিয়্যত  করবেন। (বাহারে  শরীয়াত,  ১ম  খন্ড,  ৮২৯, ৮৩৫ পৃষ্ঠা) 

বালিগ (প্রাপ্ত বয়স্ক)  পুরুষ  ও মহিলার জানাযার দোয়া


اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَ مَيِّتِنَا وَ  شَاهِدِنَا وَ غَآئِبِنَا وَ صَغِيْرِنَا  وَ  كَبِيْرِنَا   وَ  ذَكَرِنَا    وَ  اُنْثٰنَا  ط  اَللّٰهُمَّ  مَنْ  اَحْيَيْتَهٗ مِنَّا فَاَ حْيِهٖ عَلَى الْاِسْلَامِ وَ  مَنْ تَوَفَّيْتَهٗ  مِنَّا فَتَوَفَّهٗ عَلَى الْاِيْمَان

অনুবাদ: হে  আল্লাহ! ক্ষমা   করে দাও আমাদের প্রত্যেক       জীবিতকে      ও      আমাদের      প্রত্যেক  মৃতকে,     আমাদের     প্রত্যেক        উপস্থিতকে      ও প্রত্যেক অনুপস্থিতকে, আমাদের ছোটদেরকে ও আমাদের  বড়দেরকে,  আমাদের  পুরুষদেরকে  ও   আমাদের   নারীদেরকে।    হে   আল্লাহ!    তুমি  আমাদের   মধ্যে   যাকে    জীবিত   রাখবে    তাকে ইসলামের   উপর  জীবিত রাখো।আর আমাদের  মধ্যে   যাকে  মৃত্যু দান করবে, তাকে    ঈমানের উপর মৃত্যু দান করো। (আল মুসতাদরাক লিল  হাকিম, ১ম খন্ড, ৬৮৪ পৃষ্ঠা, হাদীস-১৩৬৬)

জানাযা নামাযের বিধান ও মাসআলা (পর্ব ১)

আল্লাহর ওলীর জানাযায় অংশগ্রহণ করার বরকত

এক ব্যক্তি হযরত সায়্যিদুনা সারী সাকতী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর জানাযার নামাযে অংশগ্রহণ করলেন। রাতে ঐ ব্যক্তির স্বপ্নে হযরত সায়্যিদুনা সারী সাকতী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ   এর যিয়ারত নসীব হলো। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: مَا فَعَلَ اللهُ بِكَ؟ অর্থাৎ-আল্লাহ্ তাআলা আপনার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন?

উত্তর দিলেন: আল্লাহ্ তাআলা আমাকে এবং আমার জানাযার নামাযে অংশগ্রহণকারী সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। ঐ ব্যক্তি আরয করলো: ইয়া সায়্যিদী! আমিওতো আপনার জানাযায় অংশগ্রহণ করে জানাযার নামায আদায় করেছিলাম। তখন তিনি رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ  একটি তালিকা বের করলেন কিন্তু এতে ঐ ব্যক্তির নাম অন্তর্ভূক্ত ছিলো না, যখন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখলেন তখন দেখা গেলো, তার নাম তালিকার পার্শ্বটিকাতে ছিলো। (তারিখে দামেশক লিইবনে আসাকির, ২০তম খন্ড, ১৯৮ পৃষ্ঠা) আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক, আর তাঁর সদকায় আমাদের বিনা হিসেবে ক্ষমা হোক। 

  اٰمِين بِجا  هِ  النَّبِىِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
 

কাযায়ে ওমরী আদায় করার নিয়ম

প্রত্যেক   দিনের   কাযা    হয়  মাত্র  ২০   রাকাত।  ফজরের    ২    রাকাত,    জোহরের       ৪     রাকাত,  আছরের    ৪    রাকাত,    মাগরিবের    ৩    রাকাত,  ইশার  ৪ রাকাত এবং বিতরের ৩ রাকাত মিলে মোট ২০ রাকাত। আর এভাবেই নিয়্যত করবে যে; “সর্বপ্রথম  ফযরের  যে নামায  আমার উপর কাযা  রয়েছে    তা  আমি  আদায়   করে   দিচ্ছি।” প্রত্যেক নামাযে এভাবেই   নিয়্যত  করবে। আর যার     যিম্মায়   অধিক   নামায   কাযা   রয়েছে   সে সহজের    জন্য   এভাবে   পড়লেও  জায়েয  হবে যে, প্রত্যেক রুকু ও সিজদাতে  ৩+৩  বার  سُبْحٰنَ رَبِّىَ  الْعَظِيْم,   سُبْحٰنَ رَبِّىَ  الْاَ عْلٰى পড়ার  পরিবর্তে মাত্র  ১+১ বার   পড়বে।   কিন্তু  সর্বদা এবং  সব ধরণের নামাযে এটা খেয়াল রাখা বাঞ্চনীয় যে, রুকুতে পরিপূর্ণভাবে পৌঁছার পরেই “سُبْحٰنَ”এর সীন    শুরু    করবে     (এর       আগে  নয়।)    এবং “عَظِيْم”   শব্দের    মীম   পড়া    শেষ   করেই   রুকু থেকে মাথা উঠাবে।  এরূপ  সিজদাতেও করতে হবে।   সহজতার   এক   পদ্ধতিতো   এটা   হলো।  আর   “দ্বিতীয়   পদ্ধতি”   এই   যে,   ফরয   নামায  সমূহের  তৃতীয় ও   চতুর্থ  রাকাতের মধ্যে  اَلْحَمْدُ পড়ার   পরিবর্তে  শুধুমাত্র   ৩  বার   সুবহানাল্লাহ পড়ে রুকুতে চলে যাবে। কিন্তু বিতরের প্রত্যেক রাকাতেই    اَلْحَمْدُ   এবং   সুরা   অবশ্যই    পড়তে হবে।  আর   “তৃতীয়   সহজতর পদ্ধতি” এই যে, শেষ   বৈঠকে তাশাহুদ অর্থাৎ  আত্তাহিয়্যাত  এর পরে উভয় দরূদ শরীফ এবং দোয়ায়ে  মাছুরার পরিবর্তে   শুধু   اَللّٰہُمَّ   صَلِّ   عَلٰی   مُحَمَّدٍ   وَّاٰلِهٖ   পড়ে  সালাম  ফিরিয়ে  নিবে।  আর  “চতুর্থ      সহজতর পদ্ধতি    হলো,   বিতরের    ৩য়    রাকাতের   মধ্যে  দোয়ায়ে কুনুত এর পরিবর্তে “اَللهُ اَکْبَرُ” বলে মাত্র একবার কিংবা তিনবার رَبِّ اغْفِرْ لِىْ  পড়ে নিবে।    (ফতোওয়ায়ে   রযবীয়া  হতে  সংগৃহীত, ৮ম খন্ড, ১৫৭ পৃষ্ঠা) 

মনে   রাখবেন! সহজতার এই  পদ্ধতির   অভ্যাস কখনো  বানাবেন   না।  সামগ্রিক  নামায  সুন্নাত  মোতাবেক  আদায় করবেন   এবং   তাতে ফরয, ওয়াজীব সমূহের সাথে সাথে সুন্নাত ও মুস্তাহাব সমূহের ও খেয়াল রাখবেন।

তওবার পদ্ধতি ও কাযায়ে ওমরী আদায় করার পদ্ধতি

সদরুল      আফাযিল      হযরত      আল্লামা      সায়্যিদ মুহাম্মদ  নঈমুদ্দীন  মুরাদাবাদী  رَحۡمَۃُ  اللہِ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ   বলেন:  তাওবার  রুকন তিনটি। যথা-
(১) কৃত   পাপ    স্বীকার   করা।   
(২)     এতে    লজ্জিত  হওয়া।
(৩) ঐ গুনাহের কাজ ছেড়ে দেয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা        করা।        আর        যদি        ঐ        গুনাহের  ক্ষতিপূরণের  ব্যবস্থা   থাকে,  তাহলে পরবর্তীতে যথাযথভাবে         তা         ক্ষতিপূরণ        করে        নেয়া আবশ্যক।   যেমন-    নামায    ত্যাগকারী   ব্যক্তির তাওবা    শুদ্ধ    হওয়ার    জন্য    ঐ      নামায    কাযা আদায় করে নেয়া জরুরী। (খাযায়েনুল ইরফান, ১২ পৃষ্ঠা)

ঘুমন্ত   ব্যক্তিকে   নামাযের   জন্য   জাগিয়ে   দেয়া  ওয়াজিব

কেউ ঘুমাচ্ছে কিংবা নামায আদায় করতে ভুলে গিয়েছে তবে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জ্ঞাত ব্যক্তির জন্য  জরুরী  হবে  যে,   ঘুমন্ত   ব্যক্তিকে    জাগিয়ে দেয়া    কিংবা  ভুলে  যাওয়া    ব্যক্তিকে   নামাযের কথা   স্মরণ  করিয়ে    দেয়া।  (বাহারে   শরীয়াত, ১মখন্ড,    ৭০১পৃষ্ঠা)     (অন্যথায়    সে   গুনাহগার হবে।) মনে রাখবেন! জাগ্রত  করা কিংবা স্মরণ করিয়ে     দেয়া    তখনই    ওয়াজীব      হবে,    যখন আপনার প্রবল ধারণা হয় যে, এ ব্যক্তি অবশ্যই নামায পড়বে অন্যথায় ওয়াজীব নয়।

কাযা নামাযের পদ্ধতি

৩০ পারায় (সুরাতুল মাঊন)   এর আয়াত  নং ৪ ও ৫ এ ইরশাদ হচ্ছে:

فَوَیۡلٌ    لِّلۡمُصَلِّیۡنَ ۙ﴿۴﴾  الَّذِیۡنَ ہُمۡ عَنۡ صَلَاتِہِمۡ  سَاہُوۡنَ ۙ﴿۵﴾

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: সুতরাং ঐ সকল নামাযীদের     জন্য  অনিষ্ট   রয়েছে,   যারা  আপন নামায থেকে ভুলে বসেছে।

প্রসিদ্ধ      মুফাসসির,      হাকীমুল      উম্মত     হযরত মুফতী   ইয়ার  খাঁন  رَحْمَۃُ   اللّٰہِ  تَعَالٰی   عَلَیْہِ  সূরা মাঊন এর ৫নং আয়াতের টীকায় বলেন: নামায থেকে ভুলে বসার কিছু ধরণ রয়েছে: কখনো না পড়া,      নিয়মিত      ভাবে      নামায      না      পড়া,   নির্ধারিত   সময়ে    নামায    না   পড়া,    শুদ্ধভাবে  নামায     না     পড়া,      আগ্রহ     ভরে     না     পড়া,  বুঝে-শুনে নামায আদায়  না করা,   অলসতা ও   বেপরোয়া   ভাবে   নামায   আদায়    করা।   (নূরুল  ইরফান, ৯৫৮ পৃষ্ঠা) 

জাহান্নামের ভয়ানক উপত্যকা

সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আমজাদ  আলী আযমী  رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ    বলেন:     জাহান্নামে     “ওয়াইল”     নামের  একটি        ভয়ানক        উপত্যকা       রয়েছে,         যার ভয়াবহতা থেকে স্বয়ং জাহান্নামও আশ্রয় প্রার্থনা করে।  আর   জেনে  বুঝে নামায  কাযা কারীরাই ঐ স্থানের যোগ্য।  (বাহারে   শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৪৮ পৃষ্ঠা)

মুসাফিরের নামায

আল্লাহ  তাআলা  সূরা নিসার ১০১   নং  আয়াতে ইরশাদ করেন:

وَ  اِذَا  ضَرَبۡتُمۡ  فِی  الۡاَرۡضِ   فَلَیۡسَ    عَلَیۡکُمۡ  جُنَاحٌ  اَنۡ تَقۡصُرُوۡا مِنَ الصَّلٰوۃِ ٭ۖ اِنۡ  خِفۡتُمۡ   اَنۡ یَّفۡتِنَکُمُ  الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا   ؕ     اِنَّ   الۡکٰفِرِیۡنَ   کَانُوۡا   لَکُمۡ   عَدُوًّا   مُّبِیۡنًا ﴿۱۰۱﴾

কানযুল    ঈমান    থেকে    অনুবাদ:    এবং       যখন তোমরা  যমীনে  সফর     করো   তখন  তোমাদের এতে গুনাহ নেই যে, কোন কোন নামায ‘কসর’ করে পড়বে;যদি  তোমাদের  আশংকা হয়   যে, কাফিররা তোমাদেরকে     কষ্ট       দেবে।    নিশ্চয় কাফিরগণ  তোমাদের   প্রকাশ্য  শত্রু। (পারা-৫, সূরা-নিসা, আয়াত- ১০১) 
সদরুল    আফাযিল     হযরত     আল্লামা    মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی   عَلَیْہِ   বলেন:   কাফিরদের     ভয়    কসরের জন্য শর্ত নয়,  হযরত   সায়্যিদুনা ইয়ালা ইবনে  উমাইয়া  হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম  رَضِیَ  اللّٰہُ تَعَالٰی   عَنْہُএর নিকট    আরয করলেন: “আমরাতো           নিরাপত্তার           মধ্যে           রয়েছি,  তারপরেও                   কেন                   আমরা                   কসর  করবো?”বললেন: “এতে আমারও আশ্চর্যবোধ হয়েছিল     তখন    আমি     রহমতে    আলম,     নূরে মুজাস্সাম,  হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর   নিকট   বিষয়টি   জিজ্ঞাসা   করলাম।   হুযুরে  আকরাম,  নূরে     মুজাস্সাম,  শাহে  বনী  আদম, রাসূলে   মুহতাশাম      صَلَّی   اللّٰہُ   تَعَالٰی   عَلَیْہِ   وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم  ইরশাদ করলেন:    “তোমাদের জন্য এটা (কসর    করা)    আল্লাহ্    তাআলার      পক্ষ    থেকে সদকা  স্বরূপ,  তোমরা  তাঁর  সদকা  কবুল  করে নাও।” (সহীহ মুসলিম, ১ম খন্ড, ২৩১ পৃষ্ঠা) 

সিজদায়ে সাহু ও তিলাওয়াতে সিজদার বর্ণনা

(১)    নামাযের ওয়াজীবগুলোর মধ্য  থেকে  যদি কোন  একটি   ওয়াজীব  ভুলে     বাদ   পড়ে   যায় অথবা     নামাযের     ফরয     ও     ওয়াজীব     সমূহে  ভুলক্রমে  দেরী   হয়ে  যায়   তবে  সিজদায়ে  সাহু ওয়াজীব।       (রদ্দুল       মুহতার      সম্বলিত      দুররে মুখতার,    ২য়     খন্ড,    ৬৫৫    পৃষ্ঠা)     
(২)     যদি   সিজদায়ে সাহু  ওয়াজীব   হওয়া  সত্ত্বেও করলো  না,       তবে     নামায    পুনরায়    পড়া     ওয়াজীব। (প্রাগুক্ত)   
(৩)  ইচ্ছাকৃত    ভাবে  ওয়াজীব   বর্জন করলো, তবে সিজদায়ে  সাহু   দিলে যথেষ্ট  হবে না।     পুনরায়     নামায       আদায়       করে     দেওয়া ওয়াজীব।    

ইমামত ও জামাআতের বর্ণনা

সুস্থ সবল ব্যক্তির ইমামের জন্য ছয়টি শর্ত


(১) বিশুদ্ধ আকীদা সম্পন্ন মুসলমান হওয়া,
(২) প্রাপ্ত বয়স্ক    হওয়া,
(৩) বিবেকবান হওয়া,
(৪)  পুরুষ  হওয়া,     
(৫)  কিরাত  বিশুদ্ধ  হওয়া,   
(৬)   মা’যুর না  হওয়া (শরয়ী ভাবে অক্ষম না হওয়া) ।  (রদ্দুল  মুহতার  সম্বলিত  দুররে  মুখতার,  ২য়  খন্ড, ২৮৪ পৃষ্ঠা)

ইমামের অনুসরণ করার ১৩টি শর্ত


(১) নিয়্যত করা
(২) ইক্তিদা করা আর ইক্তিদার নিয়্যত তাহরীমার সাথে হওয়া অথবা তাকবীরে তাহরীমার পূর্বে হওয়া তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো, নিয়্যত   ও    তাহরীমার     মাঝখানে   অন্য    কোন  বাহ্যিক  কাজ দ্বারা  যেন  ব্যবধান   সৃষ্টি   না হয়)

শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

নামাযের ৩৩টি মাকরূহে তানযীহী

(১)  অন্য  কাপড়    থাকা    সত্ত্বেও   কাজ   কর্মের পোষাকে     নামায     আদায়     করা।     (গুনিয়াতুল মুসতামলা,       ৩৩৭     পৃষ্ঠা)    মুখে     এমন    কোন জিনিস রাখা যার দ্বারা কিরাতই পড়া সম্ভব হয় না   কিংবা   এমন   শব্দাবলী   বের   হয়ে   যায়   যা  কুরআনে পাকের নয় তাহলে নামাযই ভঙ্গ হয়ে যাবে।     (দুররে   মুখতার,   রদ্দুল   মুহতার)      

(২) অলসতাবশতঃ    খালি    মাথায়      নামায     আদায়  করা।    (আলমগিরী,    ১ম     খন্ড,    ১০৬     পৃষ্ঠা)    নামাযরত   অবস্থায়   টুপি   কিংবা   ইমামা   শরীফ  পড়ে    গেলে     তা    উঠিয়ে      নেয়া    উত্তম,    যদি “আমলে     কসীর”     এর     প্রয়োজন     না       হয়।   “আমলে কসীর” করতে  হলে নামায   ভঙ্গ হয়ে যাবে।   আর   বার   বার   উঠাতে   হলে   তবে   তা  পতিত অবস্থায় রেখে   দিন।   না উঠানোতে যদি একাগ্রতা  ও বিনয়   প্রকাশ উদ্দেশ্য  হয় তাহলে না    উঠানোই   উত্তম।   (রদ্দুল    মুহতার   সম্বলিত দুররে     মুখতার,     ২য়   খন্ড,   ৪৯১   পৃষ্ঠা)     যদি কাউকে    খালি     মাথায়    নামায   আদায়   করতে দেখা    যায়    বা   তার   টুপি   পড়ে   যায়   তাহলে তাকে অপর ব্যক্তি টুপি পরিয়ে দেবেন না।

নামাযের ৩২টি মাকরূহে তাহরীমা

(১)   নামাযরত   অবস্থায়    দাঁড়ি,   শরীর    কিংবা কাপড় ইত্যাদি নিয়ে খেলা করা। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১০৪ পৃষ্ঠা)
(২) কাপড় গুটিয়ে নেয়া (যেমন-আজকাল কিছু কিছু  লোক সিজদাতে যাওয়ার  সময়  পায়জামা ইত্যাদি    সামনে  অথবা  পিছনের  দিকে   উঠিয়ে নেয়।  (গুনিয়াতুল  মুসতামলা, ৩৩৭  পৃষ্ঠা) হ্যাঁ! যদি     কাপড়  শরীরের  সাথে  লেগে  যায়   তবে  এক হাতে ছাড়িয়ে নিলে কোন ক্ষতি নেই।

কাঁধের উপর চাদর ঝুলানো

(৩)    সাদল   অর্থাৎ   কাপড়   ঝুলানো।     যেমন- মাথা  অথবা  কাঁধে  এমনভাবে  চাদর  বা  রুমাল  ইত্যাদি    রাখা   যে   উভয়   পার্শ্ব    ঝুলতে   থাকে। অবশ্য  যদি  এক  পার্শ্বকে  অপর    কাঁধের   উপর তুলে   দেয়   এবং  অপরটি   ঝুলতে    থাকে,  তবে ক্ষতি     নেই।    (রদ্দুল     মুহতার     সম্বলিত    দুররে মুখতার,   ২য় খন্ড, ৪৮৮ পৃষ্ঠা)  
(৪)   আজকাল কিছু  সংখ্যক  লোক এক  কাঁধের উপর  এভাবে রুমাল  রাখে   যে,  তার  এক  প্রান্ত  পেটের   উপর অপর প্রান্ত   পিঠের  উপর  ঝুলতে থাকে  এভাবে নামায      আদায়      করা       মাকরূহে        তাহরীমী।  (বাহারে শরীয়াত,   ৩য়  অংশ,  ১৬৫ পৃষ্ঠা)  
(৫)  উভয়   আস্তীন   হতে  একটি   আস্তীনও  যদি   অর্ধ  কব্জি   অপেক্ষা  বেশি   উঠে   থাকে  তবে    নামায  মাকরূহে      তাহরীমী        হবে।       (রদ্দুল      মুহতার সম্বলিত   দুররে মুখতার,  ২য়  খন্ড,  ৪৯০ পৃষ্ঠা)

বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

নামায ভঙ্গকারী ২৯টি বিষয়

(১)   কথাবার্তা     বলা।   (রদ্দুল   মুহতার   সম্বলিত দুররে   মুখতার,    ২য়   খন্ড,     ৪৪৫   পৃষ্ঠা)     
(২) কাউকে সালাম করা 
(৩) সালামের উত্তর দেয়া। (তাহতাবী        পাদটিকা        সম্বলিত        মারাক্বিউল  ফালাহ,    ৩২২  পৃষ্ঠা) 
 (৪)   হাঁচির   উত্তর  দেয়া। (নামাযে  নিজের   হাঁচি  আসলে   চুপ  থাকবেন।) যদি   “اَلْحَمْدُ   لِلّٰه”    বলেও ফেলেন    তবু   কোন অসুবিধা  নেই  আর   যদি  ঐ  সময়  তা   না   বলে থাকেন      তবে       নামায      শেষ       করে      বলবেন (আলমগিরী,  ১ম খন্ড,  পৃষ্ঠা ৯৮) 
(৫) সুসংবাদ শুনে উত্তরে    “اَلْحَمْدُ لِلّٰه”বলা। (আলমগিরী, ১ম খন্ড,   পৃষ্ঠা   ৯৯)   
(৬)    খারাপ   সংবাদ     (যেমন কারো  মৃত্যুর   সংবাদ)  শুনে  اِنَّا   لِلّٰهِ   وَ  اِنَّاۤ  اِلَيْهِ  رٰجِعُوْنَ   বলা।   (প্রাগুক্ত)   
 (৭)   আযানের     উত্তর দেয়া।  (আলমগিরী,  ১ম  খন্ড, পৃষ্ঠা ১০০)  

>>Donate Us<< ⬅ Click For More...



(৮) আল্লাহ তাআলার নাম   শুনে উত্তরে  جَلَّ جَلَا لُه ٗ বলা। (গুনিয়াতুল   মুসতামলা, ৪২০   পৃষ্ঠা) 
(৯) নবী করীম,  রউফর  রহীম   صَلَّی   اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم    এর   মহান   নাম  শুনে  উত্তরে   দরূদ শরীফ পড়া। (যেমন-  صَلَّی  اللّٰہُ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم    বলা)  (আলমগিরী,  ১ম  খন্ড,  ৯৯  পৃষ্ঠা) (অবশ্য  যদি جَلَّ جَلَا لُه ٗ বা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم  এ  কথা  গুলো   উত্তরের  নিয়্যতে   না বলে থাকলে নামায ভঙ্গ হবে না।) 

নামাযে কান্না করা

নামাযের প্রায় ১৪টি মুস্তাহাব

(১)   নিয়্যতের  শব্দ  সমূহ  মুখে    উচ্চারণ   করা। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত তানবীরুল আবছার, ২য় খন্ড,   ১১৩   পৃষ্ঠা)   (এটা   অর্থবহ   তখনই   হবে  যখন   অন্তরে   নিয়্যত   থাকে   অন্যথায়   নামাযই  হবে  না।)   
(২)   কিয়ামের    মধ্যে  উভয়  পায়ের গোড়ালীর     মধ্যভাগে     চার     আঙ্গুলের     দূরত্ব  থাকা।  (আলমগিরী,  ১ম  খন্ড,  ৭৩  পৃষ্ঠা)   
 (৩) কিয়াম অবস্থায় সিজদার স্থানে 
(৪) রুকূ অবস্থায় উভয়     পায়ের    পিঠের    উপর    
(৫)     সিজদাতে  নাকের  দিকে  
(৬)  বৈঠকে  কোলের  উপর 
 (৭)  প্রথম   সালামে   ডান   কাঁধের   দিকে   এবং     
(৮) দ্বিতীয়  সালামে  বাম  কাঁধের  দিকে  দৃষ্টি  রাখা। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত তানবীরুল আবছার, ২য় খন্ড,        ২১৪       পৃষ্ঠা)       
(৯)       একাকী        নামায আদায়কারী   রুকূ   ও   সিজদার   মধ্যে   বিজোড়  সংখ্যায়   তিনবারের   বেশি     (যেমন-   ৫,   ৭,   ৯ ইত্যাদি)   তাসবীহ   বলা।   (রদ্দুল   মুহতার,   ২য়  খন্ড,  ২৪২     পৃষ্ঠা)   
(১০)  হিলইয়া  ও    অন্যান্য কিতাবে   রয়েছে,   হযরত  সায়্যিদুনা   আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ প্রমুখ থেকে বর্ণিত আছে যে, ইমামের জন্য তাসবীহ পাঁচবার বলা   মুস্তাহাব।  

নামাযের ফযিলত ও কাযা করার শাস্তি

মদীনার         তাজেদার,           মাহবুবে          গাফ্ফার, শাহানশাহে আবরার, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ   وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم  নামাযের    পর  হামদ   ও  সানা অর্থাৎ   আল্লাহ্ তাআলার   প্রশংসা, গুণকীর্তন ও দরূদ     শরীফ       পাঠকারীকে      ইরশাদ     করেন: “দোয়া   করো    কবুল  করা  হবে,  প্রার্থনা  করো  প্রদান করা হবে।” (সুনানে    নাসাঈ,  ১ম   খন্ড, ১৮৯ পৃষ্ঠা) 

صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد

প্রিয়  ইসলামী  ভাইয়েরা!  কুরআন  ও  হাদীসের  মধ্যে    নামায  আদায়  করার     অগণীত  ফযীলত এবং   নামায  বর্জন      করার  কঠিন   শাস্তির  কথা বর্ণিত        রয়েছে।         যেমন-পারা          ২৮         ‘সূরা মুনাফিকুন’ এর আয়াত নং ৯ এর মধ্যে আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:
یٰۤاَیُّہَا   الَّذِیۡنَ    اٰمَنُوۡا   لَا   تُلۡہِکُمۡ   اَمۡوَالُکُمۡ    وَ    لَاۤ اَوۡلَادُکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰہِ  ۚ   وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ  ہُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ ﴿۹﴾

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: হে ঈমানদারগণ! তোমাদের         ধন         সম্পদ,         না           তোমাদের সন্তান-সন্ততি     কোন     কিছুই     যেন      তোমাদের  আল্লাহর   যিকির      (স্মরণ)    থেকে   উদাসীন   না  করে;এবং  যে   কেউ তেমন  করে তবে ঐ  সমস্ত লোক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।

আযান, ইকামত ও আযান-ইকামতের জবাব (পর্ব ৩)

আযান



 اَللهُ     اَكْبَرُ ط    اَللهُ اَكْبَرُ ط
আল্লাহ   মহান,   আল্লাহ   মহান,   
اَللهُ     اَكْبَرُ ط     اَللهُ     اَكْبَرُ ط
আল্লাহ   মহান,  আল্লাহ মহান,
 اَشْهَدُ اَنْ لَّآ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ ط
আমি   সাক্ষ্য   দিচ্ছি   যে,    আল্লাহ্     ছাড়া   কোন মাবুদ নেই।
اَشْهَدُ اَنْ لَّآ اِلٰهَ اِلَّا  اللهُ ط
আমি   সাক্ষ্য    দিচ্ছি     যে,   আল্লাহ্   ছাড়া   কোন মাবুদ নেই
اَشْہَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ الله ط
আমি     সাক্ষ্য   দিচ্ছি     যে,   হযরত   মুহাম্মদ   ﷺ আল্লাহর রাসূল।
اَشْہَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ الله ط
আমি     সাক্ষ্য     দিচ্ছি   যে,   হযরত   মুহাম্মদ   ﷺ আল্লাহর রাসূল।
حَیَّ عَلَی الصَّلٰوۃ ط حَیَّ عَلَی الصَّلٰوۃ ط
নামাযের দিকে আসুন নামাযের দিকে আসুন
حَیَّ عَلَی الفَلَاح ط حَیَّ عَلَی الفَلَاح ط
মুক্তি পেতে আসুন মুক্তি পেতে আসুন
اَللهُ اَكْبَرُط اَللهُ اَكْبَرُط
আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান,
لَآ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ ط
আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন মাবুদ নেই।

পোস্ট শ্রেণি

অযু-গোসল-পবিত্রতা (12) আপডেট চলমান (25) আমাদের কথা ও অন্যান্য বিষয়াবলী (6) আমাদের প্রিয় নবী ﷺ (5) আরবি মাস ও ফযীলত (11) ইসলামী ইতিহাস ও শিক্ষনীয় ঘটনা (6) ইসলামী জীবন ও সুন্দর চরিত্র (4) ঈদ-কাযা-জানাযা-তারাবী-নফল ও অন্যান্য নামায (5) উত্তম আমল ও সাওয়াবের কাজ (4) কুরআন-তাফসীর ও হাদিস (16) কুরবানী (6) চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য কথন (14) জিকির-দোআ-দুরূদ ও ফযীলত (8) নবী-সাহাবী ও আওলিয়াদের জীবনী (8) নামায (17) পর্দা ও লজ্জাশীলতা (16) ফয়যানে জুমা (3) বদ আমল ও গুনাহের কাজ (3) মওত-কবর-হাশর ও আযাব (12) মাসআলা-মাসাইল ও প্রশ্নোত্তর (15) মাসাইল (21) যাকাত-ফিতরা ও সদক্বাহ'র বিধান (1) রোযা/রমযানের বিধান ও ফযীলত (9) সুন্নাত ও আদব/ মাদানী ফুল (41) হজ্ব-ওমরাহ ও যিয়ারতে মদিনা (27)

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন