এ রিসালা পাঠ করার ২১টি নিয়্যত
নবী করীম نِيَّةُ المُؤْمِنِ خَيْرٌ مِنْ عَمَلِه অর্থাৎ “মুসলমানের নিয়্যত তার আমলের চেয়ে উত্তম।” (তাবারানী, মুজামে কবীর, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৮৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫৯৪২)
দুইটি মাদানী ফুল
- ভাল নিয়্যত ব্যতীত কোন ভাল কাজের সাওয়াব অর্জিত হয় না।
- ভাল নিয়্যত যত বেশি হবে, সাওয়াবও তত বেশি হবে।
(২) দরূদ শরীফ,
(৩) তা’আউয়ূজ ও
(৪) তাসমিয়্যাহ দ্বারা রিসালাটি পাঠ করা শুরু করব। (এ পৃষ্ঠার উপরে প্রদত্ত আরবী ইবারতটুকু পাঠ করলে এ চারটি নিয়্যতের উপরই আমল হয়ে যাবে।)
(৫) আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে রিসালাটি শুরু থেকে শেষ পযন্ত সম্পূর্ণ পাঠ করব,
(৬) সামর্থ্য অনুযায়ী সম্ভব হলে ওযু সহকারে এবং,
(৭) কিবলামুখী হয়েই পাঠ করব,
(৮) কুরআনের আয়াত এবং
(১০) যেখানেই আল্লাহ্ তাআলার পবিত্র নাম আসবে সেখানেই عَزَّوَجَلّ এবং
(১১) যেখানেই ছরকারে দো-আলম, নূরে মুজাস্সম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নাম মোবারক আসবে সেখানেই صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم পাঠ করব,
(১২) এই রেওয়ায়াত عِنْدَ ذِكْرِ الصَّالِحِيْنَ تَنَزَّلُ الرَحْمَةُ অর্থাৎ “নেক লোকদের আলোচনার সময় (আল্লাহ্ তাআলার) রহমত নাযিল হয়।” (হিলয়াতুল আউলিয়া, ৭ম খন্ড, ৩৩৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১০৭৫০) এর উপর আমল করে এ রিসালায় প্রদত্ত ইমামে আলী মকাম এবং অন্যান্য বুযুর্গানে দ্বীন عَلَيْهِمُ الرِّضْوَان এর ঘটনাবলী অন্যদের নিকট আলোচনা করে ‘যিক্রে সালেহীন’ এর বরকত অর্জন করব,
(১৩) নিজের ব্যক্তিগত কপিতে প্রয়োজনে বিশেষ স্থানে আন্ডার লাইন করে নেব,
(১৪) অন্যদেরকে এ রিসালা পাঠ করার উৎসাহ প্রদান করব,
(১৫) এ হাদীসে পাক تَهَادَوْا تَحَابُّوْا অর্থাৎ “একে অপরকে হাদিয়া দাও, পরস্পর ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে।” (মুওয়াত্তা ইমাম মালেক, ২য় খন্ড, ৪০৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৭৩১) এর উপর আমল করে ১০ই মুহাররামুল হারাম এর সাথে সম্পর্ক রেখে কমপক্ষে দশটি কপি অথবা নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী) এ রিসালা ক্রয় করে অন্যদেরকে তোহ্ফা দিব,
(১৬) এ রিসালা পাঠ করে সাওয়াব সকল উম্মতের রূহে পৌঁছিয়ে দিব,
(১৭) এ রিসালাতে শরয়ী কোন ভূলত্রুটি পরিলক্ষিত হলে, তা লিখিতভাবে প্রকাশকদেরকে অবহিত করব, (শুধু মৌখিকভাবে প্রকাশকদেরকে এর ভুল-ত্রুটি জানিয়ে দিলে বিশেষ কোন উপকার হয় না।)
(১৮) সুযোগ হলে এ রিসালা থেকে দরস প্রদান করব,
(১৯) প্রতি বছর মুহাররামুল হারাম মাসে এ রিসালা পাঠ করে নিব,
(২০) এ রিসালার যা বুঝে আসবে না, আল্লাহ্ তাআলার বানী: فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: “হে লোকেরা তোমরা যদি না জান, তবে জ্ঞানীদের নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (পারা-১৪, সূরা-আন নাহল, আয়াত নং- ৪৩) এর উপর আমল করে আলিমদের কাছ থেকে তা জেনে নিব,
(২১) আর যা বুঝতে কষ্ট হয় তা বারবার পাঠ করতে থাকব।
কারামত পূর্ণ জন্ম
হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর কাঁধ মোবারকে আরোহনকারী, হযরত আলী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর কলিজার টুকরা, মা ফাতেমার رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا নয়ন মণি, সুলতানে কারবালা, সায়্যিদুশ শোহাদা, ইমামে আলী মকাম, ইমামে আরশে মকাম, ইমামে হুমাম, ইমামে তৃষ্ণায়ে কাম, হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর আপাদমস্তক কারামতে ভরপুর ছিল। এমনকি তাঁর শুভ জন্মগ্রহণও কারামতে ভরপুর ছিল। হযরত সায়্যিদি আরিফ বিল্লাহ্ নূর উদ্দীন আবদুর রহমান জামী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ “শাওয়াহেদুন নুবুওয়াত” কিতাবে বলেছেন: “হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ৪ঠা শাবানুল মুআজ্জাম ৪র্থ হিজরী রোজ মঙ্গলবার মদীনায়ে মুনাওয়ারাতে জন্মগ্রহণ করেন। বর্ণিত আছে, ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ মাত্র ছয় মাস পর্যন্ত তাঁর মায়ের গর্ভে ছিলেন। হযরত সায়্যিদুনা ইয়াহিয়া عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام ও ইমামে আলী মকাম, ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ব্যতীত গর্ভের ছয় মাসের কোন বাচ্চা ভূমিষ্ট হওয়ার পর জীবিত থাকার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। (শাওয়াহেদুন নবুওয়াত, পৃষ্ঠা ২২৮, মাকতাবাতুল হাকীকত, তুর্কী)
মারহাবা সারওয়ারে আলম কে পেসর আয়ে হেঁ,
সায়্যিদা ফাতেমা কে লখতে জিগর আয়ে হেঁ।
ওয়াহ্ কিস্মত কে ছেরাগে হারামাঈন আয়ে হেঁ,
এ্যয় মুসলমানো! মোবারক কে হুসাইন আয়ে হেঁ।
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
চেহারাতে নূরের ঝলক
হযরত আল্লামা জামী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ আরো বলেন: “হযরত ইমামে আলী মকাম সায়্যিদুনা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর শান এমন ছিল যে, যখন তিনি অন্ধকার রাতে কোথাও যেতেন, তখন তাঁর পবিত্র ললাট ও উভয় পবিত্র গন্ডদেশ থেকে নূরের ঝলক বের হতো। যার ফলে তাঁর চতুর্দিকে আলোকিত হয়ে যেতো।” (প্রাগুক্ত, ২২৮ পৃষ্ঠা)
তেরি নছলে পাক মে হে বাচ্চা বাচ্চা নূর কা,
তো হে আইনে নূর তেরা ছব গরানা নূর কা
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
কূপের পানি উপচে পড়ল
একদা সায়্যিদুনা ইমামে আলী মকাম, ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ মদীনা মুনাওয়ারা থেকে মক্কা মুকাররামাতে যাচ্ছিলেন, পথিমধ্যে হযরত সায়্যিদুনা ইবনে মুতী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর সাথে সাক্ষাৎ হলো। ইবনে মুতী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ তাঁকে আরয করলেন: “হুযুর! আমার কূপটার পানি একেবারে কমে গেছে, দয়া করে আমার কূপের পানি বৃদ্ধির জন্য একটু দোয়া করুন। ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কূপটার পানি নিয়ে আসার জন্য বললেন। যখন পাত্রে করে পানি নিয়ে আসা হলো, তখন তিনি মুখ লাগিয়ে তা থেকে কিছু পানি পান করলেন এবং কুলি করলেন আর পাত্রের অবশিষ্ট পানি কূপে ঢেলে দিলেন। তখন কূপের পানি যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পেল এবং আগের চেয়েও সুমিষ্ট এবং সুস্বাদু হয়ে গেল। (আত্ তাবকাতুল কুবরা, ৫ম খন্ড, ১১০ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ্, বৈরুত)
বাগে জান্নাত কে হে বাহরে মাদ্হা খানে আহলে বাইত
তুম কো মুজ্দা নার কা এ্যয় দুশমনানে আহলে বাইত
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
ঘোড়া বেয়াদবকে আগুনে নিক্ষেপ করল
ইমামে আলী মকাম, ইমামে আরশে মকাম, ইমামে হুমাম, ইমামে তৃষ্ণায়ে কাম, হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ১০ ই মুহাররামুল হারাম, শুক্রবার, ৬১ হিজরীতে ইয়াজিদ বাহিনীর জুলুম নির্যাতনের প্রতিবাদে যখন কারবালা প্রান্তরে ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখন তাঁর মজলুম কাফিলার তাবু সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে খননকৃত খন্দকে প্রজ্জলিত আগুনের দিকে ইঙ্গিত করে (মালিক বিন উরওয়াহ নামক) এক বেয়াদব ইয়াজিদী বেপরোয়াভাবে বকাবকি করতে লাগল: “হে হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ! তুমি জাহান্নামের আগুনের পূর্বে এখানেই আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছ।” তার কথার জবাবে হযরত সায়্যিদুনা ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বললেন: كَذَّبْتَ يَا عَدُوَّ الله অর্থাৎ- “হে আল্লাহর দুশমন! তুই মিথ্যুক।” তোর কি ধারণা, ) আল্লাহর পানাহ) আমি দোযখে যাব?” ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর কাফিলার একজন নিবেদিত প্রাণ যুবক হযরত সায়্যিদুনা মুসলিম বিন আওসাজা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ সেই নরাধম ইয়াজিদীর মুখে তীর নিক্ষেপের জন্য হযরত ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করলেন। কিন্তু হযরত ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ তাঁকে তীর নিক্ষেপের অনুমতি না দিয়ে বললেন: “আমি আমাদের পক্ষ থেকে যুদ্ধের সূচনা করতে চাই না।” অতঃপর ইমামে তৃষ্ণায়ে কাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ হাত উত্তোলন করে আল্লাহ্ তাআলার দরবারে দোয়া করলেন: “হে রব্বে কাহ্হার! তুমি এ পাপিষ্ঠকে পরকালে দোযখের আগুনের শাস্তি দেয়ার পূর্বে ইহকালেও আগুনের শাস্তি প্রদান করো।” হযরত ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর দোয়া সাথে সাথেই আল্লাহ্ তাআলার দরবারে কবুল হয়ে গেল। সে নরাধমের ঘোড়ার পা মাটির একটি গর্তে পতিত হয়ে ঘোড়াটি প্রচন্ড বেগে ধাক্কা খেল। ফলে সে নরাধম বেয়াদব ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে ধরাশায়ী হলো, তার পা দুটি ঘোড়ার রেকাবের সাথে আটকে গেলো। ঘোড়া তাকে টেনে-হেঁচড়ে নিয়ে গিয়ে সে খন্দকের লেলিহান আগুনে নিক্ষেপ করল। আর সে নরপিশাচ আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। তার এ করুন পরিণতি দেখে ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ সিজদায়ে শোকর আদায় করলেন এবং আল্লাহ্ তাআলার প্রশংসা করে বললেন: “হে আল্লাহ্! তোমার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি, তুমি আমার চোখের সামনে রাসূল পরিবারের একজন দুশমনকে শাস্তি দিয়েছ।” (সাওয়ানেহে কারবালা, ৮৮ পৃষ্ঠা)
আহলে বাইত পাক ছে বে বাকীয়াঁ গুস্তাখিয়াঁ
لَعْنَةُ اللهِ عَلَيْكُمْ দুশমনানে আহলে বাইত
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
কালো বিচ্ছু দংশন করল
রাসূল পরিবারের সদস্যদের সাথে বেপরোয়া ও বেয়াদবীপূর্ণ আচরণের করুণ ও মর্মান্তিক পরিণতি তৎক্ষণাৎ দেখার পরও বেয়াদব ইয়াজিদ বাহিনী তা থেকে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ না করে বারবার এটাকে নিছক একটি দুর্ঘটনা বলে উড়িয়ে দিতে থাকে। এক বেয়াদব ইয়াজিদী বলল: “হে হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ! আল্লাহর রাসূলের صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সাথে আপনার সম্পর্ক কী?” এটা শুনে ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ মনে খুবই কষ্ট পেলেন। তাই তিনি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আল্লাহ্ তাআলার দরবারে দোয়া করলেন: “হে রব্বে জব্বার! তুমি এ বেয়াদবকেও শাস্তি দাও। সাথে সাথেই আল্লাহ্ তাআলার দরবারে তাঁর দোয়া কবুল হয়ে গেল। আল্লাহর আযাবের প্রচন্ড আঘাতে সে হতভাগা ধরাশায়ী হলো। হঠাৎ তার পায়খানার হাজত হলো। পায়খানার বেগ সামলাতে না পেরে সে তাড়াতাড়ি ঘোড়া থেকে নেমে একদিকে দৌঁড়ে গিয়ে উলঙ্গ হয়ে বসে পড়ল। হঠাৎ একটি কালো বিচ্ছু এসে তাকে দংশন করল। বিচ্ছুর বিষাক্ত ছোবলে সে ময়লা যুক্ত অবস্থায় ছটফট করতে লাগল। অতঃপর তার বাহিনীর সামনে করুণ ভাবে লাঞ্চিত হয়ে সে বেয়াদব প্রাণ হারাল। তারা এবারও এ ঘটনাকে নিছক একটি দুর্ঘটনা বলে উড়িয়ে দিল। (প্রাগুক্ত, ৮৯ পৃষ্ঠা)
আলী কে পিয়ারে খাতুনে কিয়ামত কে জিগর পারে
জমি ছে আসমাঁ তক ধুম হে উন কি ছিয়াদত কি।
হোসাইন বিদ্বেষীর তৃষ্ণার্ত অবস্থায় মৃত্যু
মুজনী বংশোদ্ভূত ইয়াজিদ বাহিনীর এক পাষাণ ব্যক্তি ইমামে আলী মকাম ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর সামনে এসে এভাবে বকাবকি করতে লাগল: “দেখ! ফোরাত নদীর স্বচ্ছ পানি কিভাবে প্রবাহিত হচ্ছে। খোদার কসম! তোমাকে এটির এক ফোঁটা পানিও পান করতে দেবনা, তুমি এভাবে তৃষ্ণার্ত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।” ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ আল্লাহ্ তাআলার দরবারে দোয়া করলেন: “اَللّٰهُمَّ اَمِتْهُ عَطْشَانًا"অর্থাৎ- "হে আল্লাহ্!তুমি তাকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় মৃত্যু দাও।” ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর দোয়া করার সাথে সাথেই আল্লাহ্ তাআলার দরবারে কবুল হয়ে গেল। সে নরাধম মুজনীর ঘোড়া লাগাম ছিঁড়ে দৌড় দিল। ঘোড়াকে ধরার জন্য সেও ঘোড়ার পিছনে ছুটল। দৌড়াতে দৌড়াতে সে পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ল। তীব্র পিপাসায় সে হায় পিপাসা! হায় পিপাসা! করে চিৎকার করতে লাগল। তার মুখের নিকট পানি নিয়ে পান করার জন্য বারবার চেষ্টা করার পরও সে এক ফোঁটা পানিও পান করতে পারল না। অবশেষে তীব্র পিপাসায় ছটফট করতে করতে সে মৃত্যুর মুখে পতিত হল। (সাওয়ানেহে কারবালা, ৯০ পৃষ্ঠা)
হাঁ মুঝ কো রাখহো ইয়াদ মে হায়দর কা পেসর হোঁ
আওর বাগে নবুওয়্যত কে শজর কা মে চমর হোঁ
মে দিদায়ে হিম্মত কে লিয়ে নূরে নজর হোঁ
পিয়াছা হো মগর ছাকীয়ে কাওছার কা পেসর হোঁ
কারামতগুলো সত্যতা প্রমাণ করার একটি মাধ্যম ছিল
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! ইমামে আলী মকাম ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ একজন কত উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। জানা গেলো, তাঁর সাথে বেয়াদবী করা আল্লাহ্ তাআলা একেবারে পছন্দ করেন না, তাঁর সমালোচনাকারী ও বিরুদ্ধাচারীরা উভয় জাহানে ঘৃণিত ও লাঞ্চিত। হোসাইন বিদ্বেষীদের দুনিয়াতেও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সম্মুখীন হয়। তাই এতে আমাদের জন্য অনেক শিক্ষা রয়েছে। সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর বিরুদ্ধাচারী কতিপয় দুর্বৃত্তের তৎক্ষণাৎ শোচনীয় পরিণতির করুণ কাহিনী বর্ণনা করার পর লিখেছেন: আওলাদে রাসূল জগত বাসীকে এ কথাও দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি আল্লাহর একজন মকবুল বান্দা এবং আল্লাহ্ তাআলার নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভের ব্যাপারে যেভাবে কুরআন হাদীসের অসংখ্য দলীল প্রমাণ রয়েছে, তাঁর অসংখ্য কারামত ও অলৌকিক ঘটনাবলীও আরেকটি সাক্ষ্য বহন করে। তাই তিনি তাঁর এ কৃতিত্ব ও মহত্ত্বের বাস্তব প্রমাণ দেখিয়ে বিরুদ্ধাচারীদের সমালোচনার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছিলেন। তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় তাদের জানিয়ে দিয়েছিলেন: “হে সমালোচনাকারীরা! তোমাদের যদি চোখ থাকে, তাহলে ভালভাবে দেখে নাও, যার দোয়া আল্লাহ্ তাআলার দরবারে মুহূর্তের মধ্যে কবুল হয়ে যায়, তাঁর বিরুদ্ধে লড়তে আসা অসীম ক্ষমতাধর আল্লাহর সাথে লড়তে আসার মত। তাই এর করুণ পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা করে এবং যুদ্ধ বিগ্রহ থেকে বিরত থাকো। কিন্তু সে নরপিশাচরা তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করল না। এ অস্থায়ী দুনিয়ার লোভ লালসার ভূত তাদের ঘাড়ে সাওয়ার হয়ে তাদেরকে অন্ধই বানিয়ে দিয়েছিল। (সাওয়ানেহে কারবালা, ৯০ পৃষ্ঠা)
নূরের স্তম্ভ ও সাদা সাদা পাখি
ইমামে আলী মকাম ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর শাহাদাতের পর তাঁর শির মোবারক থেকে অসংখ্য কারামত প্রকাশিত হয়েছিল। আহলে বাইতের কাফিলার অবশিষ্ট সদস্যরা ১১ই মুহাররামুল হারাম কুফায় পৌঁছে ছিলেন। এর আগেই শোহাদায়ে কারবালার মস্তক মোবারকগুলো সেখানে পৌঁছানো হয়েছিল। ইমামে আলী মকাম ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর শির মোবারক যুগের কলঙ্ক, নরপিশাচ ইয়াজিদী খাওলী বিন ইয়াজিদের কাছে ছিল। ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মস্তক মোবারক নিয়ে সে হতভাগা রাতের বেলায় কুফায় পৌঁছেছিল। কিন্তু রাজ প্রাসাদের দরজা বন্ধ থাকায় সে মস্তক মোবারক নিয়ে তার বাড়ীতে চলে এলো। সে হতভাগা নূরানী মস্তককে বেয়াদবীর সাথে মাটিতে রেখে একটি বড় পাত্র দ্বারা ঢেকে রাখল এবং তার স্ত্রী নওয়ারকে গিয়ে বলল: আমি তোমার জন্য আজীবনের ধনদৌলত নিয়ে এসেছি। তুমি গিয়ে দেখো, হোসাইন বিন আলীর মস্তক তোমার ঘরে পড়ে আছে। সে ক্রুদ্ধ হয়ে বলে উঠল: “হে পাপীষ্ঠ! তোর উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক, তুই চিরতরে ধ্বংস হয়ে যা। মানুষেরা তো স্বর্ণ-রৌপ্য, মনি-মাণিক্য নিয়ে আসে, আর তুই আমার জন্য নূর নবীর দৌহিত্রেরই পবিত্র মস্তক নিয়ে আসলি। দূর হও! আমার কাছ থেকে, তুই দূর হও! খোদার কসম! আমি আর কখনো তোর সাথে থাকব না।” এ বলে নওয়ার তার শয্যা থেকে উঠে দাঁড়াল এবং যেখানেই সে নুরানী মস্তক মোবারক রাখা হয়েছিল সেখানে গিয়ে বসল। নওয়ারের বর্ণনা: “খোদার কসম! আমি দেখতে পেলাম, আসমান থেকে সে বরতন পর্যন্ত একটি নূরের স্তম্ভ ঝলমল করছিল এবং সে বরতনের চারদিকে সাদা সাদা পাখি উড়ছিল। যখন সকাল হলো খাওলী বিন ইয়াজিদ সে নূরানী মস্তক ইবনে যিয়াদের কাছে নিয়ে গেলো। (আল কামিল ফিত তারিখ, ৩য় খন্ড, ৪৩৪ পৃষ্ঠা)
বাহারোঁ পর হে আজ আরায়িশিঁ গুলজারে জান্নাত কি
ছুওয়ারি আনে ওয়ালি হে, শুহদানে মুহাব্বত কি।
খাওলী বিন ইয়াজিদের নির্মম পরিণতি
দুনিয়ার ভালবাসা ও ধনসম্পদের মোহ মানুষকে চিরতরে অন্ধ করে ফেলে। কিন্তু তাকে যে একদিন নির্মম পরিণতির শিকার হতে হবে তা সে ভুলে যায়। হতভাগা খাওলী বিন ইয়াজিদ দুনিয়ার লোভ লালসায় মোহিত হয়ে মজলুমে কারবালা হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মস্তক মোবারক তাঁর দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল। কিন্তু বেশি দিন অতিবাহিত হয়নি, সে নরাধমকে অত্যন্ত নির্মম ও নৃশংসভাবে এ দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিতে হয়েছিল। তার নির্মম পরিণতির কথা শুনলে গা শিউরে ওঠে, অন্তর প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর শাহাদাতের কয়েক বছর পর মুখতার সখফী হযরত ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর হত্যাকারীদের থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য যে অভিযান পরিচালনা করে, তার বর্ণনা দিয়ে সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বর্ণনা করেন: মুখতার আদেশ জারি করল, কারবালাতে যারা ইয়াজিদের সেনাপতি আমর বিন সাআদ এর বাহিনীতে ছিল তাদেরকে যেখানে পাওয়া যায় সেখানে হত্যা করো।
মুখতারের এ আদেশ শুনে কুফার সাদ বাহিনীর বর্বর ও অত্যাচারী সৈন্যরা বসরার দিকে পালাতে শুরু করল। মুখতারের সৈন্যরাও তাদের পিছু নিলো। তারা যাকে যেখানে পেলে সেখানে হত্যা করল, তাদের মৃত দেহগুলো আগুনে পুড়ে ফেলা হল এবং তাদের ঘর-বাড়ি লুণ্ঠন করা হল। খাওলী বিন ইয়াজিদ যে হযরত ইমামে আলী মকাম, সায়্যিদুনা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মস্তক মোবারক তাঁর দেহ মোবারক থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিল, সে নরাধমও মুখতারের বাহিনীর হাতে ধরা পড়ল। তাকে গ্রেফতার করে মুখতারের নিকট আনা হলো। মুখতারের নির্দেশে তার হাত পা কেটে ফেলা হলো, তাকে শূলে চড়ানো হলো, অবশেষে তার মৃত দেহ আগুনে নিক্ষেপ করা হলো এভাবে ইবনে সাআদ এর বাহিনীর সকল সৈন্যকে বিভিন্ন শাস্তির মাধ্যমে হত্যা করা হলো। ছয় হাজার কুফাবাসী যারা হযরত ইমামে আলী মকাম ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর হত্যায় অংশ নিয়েছিল সকলকে মুখতার বিভিন্ন শাস্তির মাধ্যমে হত্যা করে ছিলো। (সাওয়ানেহে কারবালা, ১২২ পৃষ্ঠা)
আয় তিসনাগানে খুনে জাওয়ানানে আহলে বাইত,
দেখা কেহ তুম কো জুলম কি কেইছি সাজা মিলি।
কুত্তোঁ কি তরেহ লাশে তোমহারে ছাড়া কিয়ে,
ঘুর পে বি নহ ঘুর তোমহারে জাঁ মিলি।
রসওয়ায়ে খলক হো গেয়ে বরবাদ হো গেয়ে,
মরদুদো তুম জিল্লত হার দো-সরা মিলি।
তুম মে উজাড়া হযরত জাহরা কা বুস্তান,
তুম খোদ উজড় গেয়ে তুমহিঁ ইয়ে বদ্ দোয়া মিলি।
দুন্য়া পরসতো দিন ছে মুহ মুড় কর তুমহে,
দুন্ইয়া মিলি নহ আইশ তরব কি হাওয়া মিলি।
আখের দেখায়া রংগ শহিদো কি খুন নে,
ছর কাট গেয়ে আমা নহ তুমহে এক জারা মিলি।
পায়ি হে কেয়া নঈম উনহোঁ নে আবি ছাজা,
বর্শা বিদ্ধ মস্তক মোবারকের কুরআন তিলাওয়াত
হযরত সায়্যিদুনা যায়েদ বিন আরকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বর্ণনা করেন: যখন ইয়াজিদীরা হযরত ইমামে আলী মকাম সায়্যিদুনা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর শির মোবারক বর্শার অগ্রভাগে বিদ্ধ করে কুফার অলিগলিতে ঘুরে ঘুরে আনন্দ করছিল তখন আমি আমার ঘরের বালাখানাতে ছিলাম। যখন মস্তক মোবারক আমার সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন আমি শুনতে পেয়েছিলাম, মস্তক মোবারক সূরা আল্ কাহাফের ৯ নং আয়াতটি তিলাওয়াত করছেন:
أَمْ حَسِبْتَ أَنَّ أَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيمِ كَانُوا مِنْ آيَاتِنَا عَجَبًا
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:“আপনি কি অবগত হয়েছেন যে, পাহাড়ের গুহা এবং অরণ্যের পাশে অবস্থানকারীরা আমার এক বিস্ময়কর নিদর্শন ছিলো।” (সূরা- কাহাফ, পারা- ১৫, আয়াত- ৯) (শাওয়াহেদুন নবুওয়াত, ২৩১ পৃষ্ঠা)
অপর এক বুযুর্গ বর্ণনা করেন: যখন ইয়াজিদীরা মস্তক মোবারক বর্শা থেকে নামিয়ে হতভাগা ইবনে যিয়াদের শাহী মহলে ঢুকল, তখন তাঁর পবিত্র ওষ্ঠদ্বয় নড়তে দেখা গেল এবং তাঁর পবিত্র জবান মোবারক দ্বারা সূরায়ে ইব্রাহীমের ৪২ নং আয়াতটি তিলাওয়াত করতে শুনা গেল:
وَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:“এবং নিশ্চয় আল্লাহকে অনবহিত মনে করো না, যালিমদের কার্যকলাপ সম্পর্কে।” (সূরা ইব্রাহিম,পারা-১৩, আয়াত-৪২) (রাওজাতুশ শোহদা মুতারজাম, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৮৫)
ইবাদত হো তো এইছি হো, তিলাওয়াত হো তো এইছি হো
ছরে সাব্বির তো নে-জে পে বি কুরআঁ ছুনাথা হে।
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
মিনহাল বিন আমর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বর্ণনা করেন: খোদার কসম! আমি স্বচক্ষে দেখেছি, যখন লোকেরা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর শির মোবারক বর্শার অগ্রভাগে বিদ্ধ করে নিয়ে যাচ্ছিল তখন আমি দামেস্কে ছিলাম। শির মোবারকের সামনে এক ব্যক্তি সুরাতুল কাহাফ তিলাওয়াত করছিল। যখন সে সূরা কাহাফের ১৫ পারার ৯নং আয়াতে পৌঁছল;
أَنَّ أَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيمِ كَانُوا مِنْ آيَاتِنَا عَجَبًا
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: পাহাড়ের গুহা এবং অরণ্যের পাশে অবস্থানকারীরা আমার এক বিস্ময়কর নিদর্শন ছিলো। (সূরা- কাহাফ, পারা- ১৫, আয়াত- ৯)
তখন আল্লাহ্ তাআলা সে মস্তক মোবারককে কথা বলার শক্তি প্রদান করলেন। মস্তক মোবারক বলতে লাগল:
اَعْجَبُ مِنْ اَصْحَابِ الكَهْفِ قَتْلِى وَحَمْلِى
অর্থাৎ- “আসহাবে কাহাফের হত্যার ঘটনার চেয়েও আমার হত্যা ও আমার মস্তক নিয়ে ঘোরাফেরা করা আরো অধিক বিস্ময়কর।” (শরহুস সুদূর, ২১২ পৃষ্ঠা)
ছর শহীদানে মহব্বত কি হে, নাইজোঁ পর বুলন্দ
আউর উছে কি খোদা নে ইজ্জ শানে আহলে বাইত
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সদরুল আফাযিল মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ তাঁর রচিত “সাওয়ানেহে কারবালা” গ্রন্থে এ ঘটনা উল্লেখ করে বলেন: “মূল কথা হল, আসহাবে কাহাফদের উপর কাফিররা অত্যাচার করেছিল। আর হযরত ইমামে আলী মকাম ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কে তাঁর নানাজানের উম্মতেরা মেহমান হিসাবে কুফাতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। অতঃপর তারা বিশ্বাস ঘাতকতা করে পানি পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিল এবং ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর সামনেই তাঁর পরিবার পরিজন ও সঙ্গীদের নৃশংসভাবে শহীদ করে দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সে নর পিশাচরা স্বয়ং হযরত ইমামে আলী মকাম ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কে শহীদ করে দেয়। আহলে বাইত্দের বন্দী করে নিয়ে এসেছিল, শির মোবারককে বর্শার অগ্রভাগে বিদ্ধ করে শহরে শহরে পরিভ্রমণ করেছিল। আসহাবে কাহাফরা শত শত বছর নিদ্রা মগ্ন থাকার পর কথা বলেছিল, এটা অবশ্যই আশ্চর্যজনক। কিন্তু শির মোবারক দেহ মোবারক থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরপরই কথা বলা আরো অধিক বিস্ময়কর ছিল। (সাওয়ানেহে কারবালা, ১১৮ পৃষ্ঠা)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
রক্ত দিয়ে লিখা কবিতা
কুলাঙ্গার ইয়াজিদের নরপিশাচ সৈন্যরা কারবালার শহীদদের মস্তক মোবারক সমূহ নিয়ে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে তারা এক স্থানে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিয়েছিল। হযরত সায়্যিদুনা শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ লিখেছেন: বিশ্রাম নিয়ে তারা খেজুরের শরবত পান করছিল। অন্য এক বর্ণনাতে এসেছে, তখন তারা মদ পান করছিল। এ মুহুর্তে একটি লোহার কলম আবির্ভূত হয়ে রক্ত দিয়ে নিম্ন প্রদত্ত ছন্দটি লিখে দিল:
اَتَرْجُوْ اُمَّةٌ قَتَلَتْ حُسَيْنًا شَفَاعَةَ جَدِّهٖ يَوْمَ الْحِسَابِ
অর্থাৎ- ইমাম হোসাইন এর হত্যাকারীরা কি কখনো এ আশা পোষণ করতে পারে যে, কিয়ামতের দিন তাঁর নানাজান তাদের পক্ষে সুপারিশ করবেন? অপর বর্ণনায় আছে: হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর আবির্ভাবের ৩০০ বছর পূর্বেই এ ছন্দটি একটি পাথরে লিখিত পাওয়া গিয়েছিল। (আস সাওয়ায়েকুল মুহরাকা, ১৯৪ পৃষ্ঠা)
মস্তক মোবারকের কারামত দেখে পাদ্রীর ইসলাম গ্রহণ
এক খ্রীষ্টান পাদ্রী তার গীর্জা থেকে ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ মস্তক মোবারক নিয়ে যেতে দেখে জিজ্ঞাসা করল: “এটা কার মস্তক?” তারা বলল: “এটা হোসাইনেরই মস্তক।” পাদ্রী বলল: “তোমরা খুবই নিকৃষ্ট লোক। দশ হাজার আশরাফির বিনিময়ে এ মস্তক মোবারক আমার নিকট এক রাতের জন্য রাখতে তোমরা কি রাজী আছ?” সে লোভীরা তাতে রাজী হয়ে গেল এবং দশহাজার আশরাফী নিয়ে পাদ্রীকে এক রাতের জন্য মস্তক মোবারক দিয়ে দিল। পাদ্রী তাদের নিকট থেকে মস্তক মোবারক নিয়ে ভালভাবে ধৌত করল। এতে সুগন্ধি লাগাল এবং সারারাত তা কোলে নিয়ে জাগ্রত রইল। রাতে সে মস্তক মোবারকের এক বিস্ময়কর কারামত দেখে হতবাক হয়ে গেল। সে দেখতে পেল, একটি নূরের জ্যোতি মস্তক মোবারক থেকে আসমান পর্যন্ত আলোকিত হয়ে উঠল। পাদ্রী এ অলৌকিক ঘটনা দেখে সারারাত কান্নারত অবস্থায় অতিবাহিত করল। যখন সকাল হল, সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করল। সে গীর্জা, ধন-সম্পদ সবকিছু পরিত্যাগ করে তার বাকী জীবন আহলে বাইতের খিদমতে উৎসর্গ করে দিল। (আস সাওয়ায়েকুল মুহরাকা, ১৯৯ পৃষ্ঠা)
দওলতে দিদার পায়ি পাক জানে বেছ কর
কারবালা মে খোভী ছমকী দুঃখানে আহলে বাইত
দিরহাম-দিনার কংকর হয়ে গেল
ইয়াজিদীরা ইমামে আলী মকাম, ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর সৈন্যদের এবং তাদের তাবুগুলো লুণ্ঠন করে যে দিরহাম-দিনার লাভ করেছিল এবং পাদ্রী থেকে যে আশরাফী নিয়েছিল তা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করার জন্য যখন থলের মুখ খুলল, তখন দেখতে পেল সব দিরহাম-দিনার কংকরে পরিণত হয়ে গেছে এবং তার এক প্রান্তে ১৩ পারার সুরা ইব্রাহীমের ৪২ নং আয়াত:
وَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: “এবং নিশ্চয় আল্লাহকে অনবহিত মনে করো না, যালিমদের কার্যকলাপ সম্পর্কে।” (সূরা-ইব্রাহিম, পারা-১৩, আয়াত- ৪২)
এবং অপর প্রান্তে ১৯ পারার সূরা আশ শুআরা ২২৭ নং আয়াত লিখা ছিল:
وَسَيَعْلَمُ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَيَّ مُنقَلَبٍ يَنقَلِبُونَ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: “এখন যালিমগণ জানতে চায় যে, কোন্ পার্শ্বের উপর তারা পলট খাবে।” (আস সাওয়ায়েকুল মুহরাকা, ১৯৯ পৃষ্ঠা)
তুনে উজাড়া হযরত জাহরা কা বুসতান,
তু খোদ উজড় গেয়ে তুমহে ইয়ে বদ-দোয়া মিলি।
রুসওয়ায়ে খালক হো গেয়ি বরবাদ হো গেয়ে,
মরদুদোঁ তুম কো জিল্লতে হার দো-ছরা মিলি।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এটি কুদরতী ভাবে একটি বাস্তব শিক্ষণীয় বিষয় ছিল যে, হে হতভাগারা! তোমরা এ ক্ষণস্থায়ী জগতের লোভ লালসায় মত্ত হয়ে দ্বীন-ধর্ম থেকে বিমুখ হয়ে পড়েছিলে এবং রাসূলের পরিবার পরিজনের উপর নির্যাতন চালিয়েছিলে। তোমরা স্মরণ রাখো! ধর্ম হতে তোমরা একেবারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলে এবং যে নশ্বর ও ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার লোভ লালসায় মোহিত হয়ে তোমরা ইতিহাসের এ নিষ্ঠুর বর্বরতম হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিলে, দুনিয়াও তোমাদের হস্তগত হবে না এবং দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে সর্বনাশ হয়ে গিয়েছিল।
দুনিয়া পুরুস্তো দ্বিন ছে মুহ মুড় কর তোম হে,
দুনিয়া মিলি নহ আইশ তরফ কি হাওয়া মিলি।
ইতিহাস সাক্ষী, মুসলমানেরা যখনই দ্বীন ধর্মের পরিবর্তে এ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াকে প্রাধান্য দিয়েছিল, তখনই তারা এ বেওফা দুনিয়া থেকে হাত ধুয়ে বসেছিল। আর যারা এ দুনিয়াকে লাথি মারতে পেরেছিল কুরআন ও সুন্নাহর বিধি বিধানের উপর অটল ছিল এবং দ্বীন ও ঈমান থেকে বিমূখ হয়ে পড়েনি বরং নিজের চরিত্র ও আমল দ্বারা সর্বদাই এটা প্রমাণ করে গিয়েছিল যে,
ছর কাটে কুম্ভা মেরে ছব কুছ লুটে,
দামানে আহমদ নাহ হাতো ছে ছুটে।
তবে দুনিয়াও হাত বেঁধে তার পিছনে পিছনে চলতে থাকবে এবং তারাই উভয় জগতে সফলকাম হতে পেরেছিল।আমার আক্বা আ’লা হযরত খুবই সুন্দর বলেছেন:
ওহ্ কেহ ইছ কা দরকা হুয়া খলকে খোদা উছ কি হুয়ী,
ওহ্ কেহ্ ইছ দর ছে ফিরা আল্লাহ্ উছ ছে ফির গেয়া।
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
সে নূরানী মস্তক কোথায় সমাহিত করা হয়েছিল?
ইমামে আলী মকাম, হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর সে নূরানী মস্তক কোথায় সমাহিত করা হয়েছিল, সে ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। আল্লামা কুরতুবী ও হযরত সায়্যিদুনা শাহ্ আবদুল আযিয মুহাদ্দিস দেহলভী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِما বলেন: ইয়াজিদ কারবালার বন্দীদের এবং ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর সে নূরানী মস্তক মদীনা মুনাওয়ারাতে পাঠিয়ে দিয়েছিল এবং মদীনা মুনাওয়ারাতে কাফন দিয়ে জান্নাতুল বাক্বীতে হযরত সায়্যিদাতুনা ফাতেমা যাহরা বা হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হাসান মুজতবা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর সমাধির পাশেই সে নূরানী মস্তক সমাহিত করা হয়েছিল। কেউ কেউ বলেন: কারবালার বন্দীরা চল্লিশ দিন পর কারবালা প্রান্তরে এসে সে মস্তক মোবারক দেহ মোবারক সহ কারবালাতে সমাহিত করেছিলেন। কেউ কেউ বলেন: হতভাগা ইয়াজিদ নির্দেশ দিয়েছিল যে, ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মস্তক মোবারক বর্শার অগ্রভাগে বিদ্ধ করে বিভিন্ন শহরের অলিগলিতে পরিভ্রমণ করার জন্য। পরিভ্রমণকারীরা এ পবিত্র মস্তক নিয়ে যখন আসকলান পৌঁছল, তখন সেখানকার তৎকালীন আমীর তাদের কাছ থেকে সে মস্তক মোবারক নিয়ে তথায় দাফন করেছিলেন। যখন আসকলানে ফিরিঙ্গী সম্প্রদায় জয়লাভ করল, তলায়েঈ বিন রিয্যিক নামক জনৈক ব্যক্তি (যাকে সালেহ বলা হতো), ফিরীঙ্গীদের কাছ থেকে ত্রিশ হাজার দিনারের বিনিময়ে সে নূরানী মস্তক নিয়ে নিলেন। তিনি তাঁর সৈন্য সামন্ত, চাকর-বাকর সহ ৮ই জমাদিউল আখির ৫৪৮ হিজরী, রোজ রবিবার খালিপায়ে সে মস্তক মোবারক নিয়ে আসকলান থেকে মিসর চলে আসলেন। তখনও সে মস্তক মোবারকের রক্ত তাজা ছিল এবং তা থেকে মেশকের ন্যায় সুগন্ধি বিচ্ছুরিত হচ্ছিল। তিনি সবুজ রেশমের একটি থলেতে সে মস্তক মোবারক ভরে আবনুস কাঠের তৈরী একটি কুরসীর উপর রেখে এর নিচে ও চার পার্শ্বে এর সমপরিমাণ মেশকে-আম্বর ও সুগন্ধি রেখে তা সমাহিত করলেন এবং এর উপর “মাসহাদে হোসাইনী” নামে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করলেন। যা “খানে খলিলীর” নিকটবর্তী “মাসহাদে হোসাইনী” নামে আজও প্রসিদ্ধ। (শামে কারবালা, ২৪৬ পৃষ্ঠা)
কিছ শকী কি হে হুকুমত হায় কিয়া আন্ধীর হে
দিন দোহাড়ে লুট রাহাহে কারওয়ানে আহলে বাইত
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত ৫০পৃষ্ঠা সম্বলিত “ইমাম হোসাইনের কারামত“ নামক রিসালার ৩-২৩ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই রিসালাটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন। অন্যকে উপহার দিন।
যারা মোবাইলে (পিডিএফ) রিসালাটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন ।
বাংলা ইসলামীক বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন
মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন