আল্লাহ তাআলা সূরা নিসার ১০১ নং আয়াতে ইরশাদ করেন:
وَ اِذَا ضَرَبۡتُمۡ فِی الۡاَرۡضِ فَلَیۡسَ عَلَیۡکُمۡ جُنَاحٌ اَنۡ تَقۡصُرُوۡا مِنَ الصَّلٰوۃِ ٭ۖ اِنۡ خِفۡتُمۡ اَنۡ یَّفۡتِنَکُمُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا ؕ اِنَّ الۡکٰفِرِیۡنَ کَانُوۡا لَکُمۡ عَدُوًّا مُّبِیۡنًا ﴿۱۰۱﴾
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং যখন তোমরা যমীনে সফর করো তখন তোমাদের এতে গুনাহ নেই যে, কোন কোন নামায ‘কসর’ করে পড়বে;যদি তোমাদের আশংকা হয় যে, কাফিররা তোমাদেরকে কষ্ট দেবে। নিশ্চয় কাফিরগণ তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (পারা-৫, সূরা-নিসা, আয়াত- ১০১)
সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: কাফিরদের ভয় কসরের জন্য শর্ত নয়, হযরত সায়্যিদুনা ইয়ালা ইবনে উমাইয়া হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُএর নিকট আরয করলেন: “আমরাতো নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছি, তারপরেও কেন আমরা কসর করবো?”বললেন: “এতে আমারও আশ্চর্যবোধ হয়েছিল তখন আমি রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নিকট বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলাম। হুযুরে আকরাম, নূরে মুজাস্সাম, শাহে বনী আদম, রাসূলে মুহতাশাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “তোমাদের জন্য এটা (কসর করা) আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে সদকা স্বরূপ, তোমরা তাঁর সদকা কবুল করে নাও।” (সহীহ মুসলিম, ১ম খন্ড, ২৩১ পৃষ্ঠা)
মুসাফিরের নামায |
হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে ওমরرَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُمَا থেকে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম, নূরে মুজাস্সামصَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সফরের নামায দুই রাকাত নির্ধারণ করেছেন এবং এটা পরিপূর্ণ, স্বল্প নয়। অর্থাৎ যদিও বাহ্যিকভাবে দুই রাকাত কম হয়ে গেলো কিন্তু সাওয়াবের ক্ষেত্রে দুই রাকাত চার রাকাতের সমান। (সুনানে ইবনে মাজাহ্, ২য় খন্ড, ৫৯ পৃষ্ঠা, হাদীস-১১৯৪)
শরীয়াতের দৃষ্টিতে সফরের দূরত্ব
যে ব্যক্তি সাড়ে ৫৭ মাইল (প্রায় ৯২ কিলোমিটার) দূরত্বে যাওয়ার ইচ্ছায় আপন স্থায়ী বাসস্থান যেমন শহর বা গ্রাম থেকে রাওয়ানা হয়ে পড়ে, তাকে শরীয়াতের দৃষ্টিতে মুসাফির বলা হয়। (সার সংক্ষেপ-ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৮ম খন্ড, ২৭০ পৃষ্ঠা)
মুসাফির কখন হবে?
শুধু সফরের নিয়্যত করলেই মুসাফির হবে না। বরং মুসাফিরের হুকুম তখন থেকেই প্রযোজ্য হবে, যখন আপন বাসস্থানের জনবসতি এলাকা থেকে বের হয়ে পড়বে। শহরে থাকলে শহরের জনবসতি এলাকা আর গ্রামে থাকলে গ্রামের জনবসতি এলাকা অতিক্রম করতে হবে। শহরবাসীদের জন্য এটাও আবশ্যক যে, শহরের আশে পাশের যেসব বসতি এলাকা শহরের সাথে সংযুক্ত তাও অতিক্রম করতে হবে। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৫৯৯ পৃষ্ঠা)
জনবসতি এলাকা শেষ হওয়ার মর্মার্থ
জনবসতি এলাকা অতিক্রম করার মর্মার্থ হলো, যেদিকে যাচ্ছে সেদিকের জনবসতি এলাকা শেষ হয়ে যাওয়া, যদিও এর সোজাসুজি অপরাপর প্রান্তের জনবসতি এলাকা শেষ না হয়। (গুনিয়াতুল মুস্তামলা, ৫৩৬ পৃষ্ঠা)
শহরতলীর এলাকা
শহরতলী সংলগ্ন যে গ্রামগুলো আছে, শহরবাসীদের জন্য ঐ গ্রামগুলো অতিক্রম করে যাওয়া আবশ্যক নয়। অনুরূপ শহর সংলগ্ন বাগান থাকলে যদিও বাগানে এর পরিচর্যাকারী এবং রক্ষণাবেক্ষণ কারীরা বসবাস করে থাকে, তা সত্ত্বেও শহরবাসীদের জন্য উক্ত বাগান অতিক্রম করে যাওয়া আবশ্যক নয়। (রদ্দুল মুখতার, ২য় খন্ড, ৫৯৯ পৃষ্ঠা)
শহরতলীর বাহিরে যে স্থান শহরের কাজে ব্যবহৃত হয় যেমন কবরস্থান, ঘোড়াদৌড়ের মাঠ, আবর্জনা ফেলার স্থান, যদি তা শহর সংলগ্ন হয় তাহলে তা অতিক্রম করে যাওয়া আবশ্যক। আর যদি তা শহর ও শহরতলী থেকে দূরে অবস্থিত হয়, তবে তা অতিক্রম করে যাওয়া আবশ্যক নয়। (প্রাগুক্ত, ৬০০ পৃষ্ঠা)
মুসাফির হওয়ার জন্য শর্ত
সফরের জন্য এটাও আবশ্যক, যে স্থান হতে যাত্রা শুরু করলো সেখান থেকে তিনদিনের রাস্তা (অর্থাৎ-প্রায় ৯২ কিলোমিটার) সফরের উদ্দেশ্য থাকতে হবে। আর যদি দুই দিনের রাস্তা (৯২ কিলোমিটার হতে কম) সফরের উদ্দেশ্যে বের হয়, অতঃপর সেখানে পৌঁছে অন্য স্থানের উদ্দেশ্যে রাওয়ানা হয়ে পড়ে, তাও তিন দিনের রাস্তা (তথা ৯২ কিলোমিটার এর) চেয়ে কম। এভাবে সারা দুনিয়া ভ্রমণ করে আসলেও সে মুসাফির হবে না। (গুনিয়া, দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ২০৯ পৃষ্ঠা)
এটাও শর্ত যে, একাধারে তিনদিনের রাস্তা সফরের উদ্দেশ্যে বের হতে হবে। যদি এভাবে ইচ্ছা করে যেমন দুই দিনের রাস্তায় পৌঁছে কিছু কাজ করব, তা শেষ করেই পুনরায় একদিনের রাস্তা সফর করব। এটা একাধারে তিনদিনের রাস্তা সফরের উদ্দেশ্য না হওয়ায় সে মুসাফির হিসাবে গণ্য হবে না। (বাহারে শরীয়াত, ৪র্থ অংশ, ৭৭ পৃষ্ঠা)
বাসস্থানের প্রকারভেদ
বাসস্থান দুই প্রকার
(১) স্থায়ী বাসস্থান: অর্থাৎ ঐ স্থান যেখানে সে জন্মগ্রহণ করেছে বা তার পরিবারের লোকজন সেখানে বাস করে কিংবা সেখানে তারা স্থায়ী হয়ে গেলো এবং সেখান থেকে স্থানান্তর করার ইচ্ছা পোষণ না করে।
(২) অবস্থানগত বাসস্থান: অর্থাৎ ঐ স্থান যেখানে মুসাফির পনের কিংবা তার চেয়ে বেশি দিন অবস্থানের ইচ্ছা পোষণ করে। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৪৫ পৃষ্ঠা)
(১) স্থায়ী বাসস্থান: অর্থাৎ ঐ স্থান যেখানে সে জন্মগ্রহণ করেছে বা তার পরিবারের লোকজন সেখানে বাস করে কিংবা সেখানে তারা স্থায়ী হয়ে গেলো এবং সেখান থেকে স্থানান্তর করার ইচ্ছা পোষণ না করে।
(২) অবস্থানগত বাসস্থান: অর্থাৎ ঐ স্থান যেখানে মুসাফির পনের কিংবা তার চেয়ে বেশি দিন অবস্থানের ইচ্ছা পোষণ করে। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৪৫ পৃষ্ঠা)
অবস্থানগত বাসস্থান বাতিল হয়ে যাওয়ার ধরণ
এক অবস্থানগত বাসস্থান অপর অবস্থানগত বাসস্থানকে বাতিল করে দেয় অর্থাৎ কোন এক স্থানে ১৫ দিন থাকার উদ্দেশ্যে অবস্থান করলো অতঃপর অপর জায়গায় সে ততদিন থাকার উদ্দেশ্যে অবস্থান করলো। তাহলে প্রথম স্থানটি আর বাসস্থান রইলো না। উভয়ের মাঝখানে সফরের দূরত্ব থাকুক বা না থাকুক। অনুরূপভাবে অবস্থানগত বাসস্থান, স্থায়ী বাসস্থানও সফর দ্বারাও বাতিল হয়ে যায়। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৪৫ পৃষ্ঠা)
সফরের দু’টি রাস্তা
কোন জায়গায় যাওয়ার দু’টি রাস্তা আছে, তন্মধ্যে একটি রাস্তা সফরের দূরত্বের সমপরিমাণ অপরটি তা থেকে কম। এমতাবস্থায় সে যে রাস্তা দিয়ে যাবে তাই ধরা হবে। নিকটবর্তী রাস্তা দিয়ে গেলে মুসাফির হবে না আর দূরবর্তী রাস্তা দিয়ে গেলে মুসাফির হবে। যদিও রাস্তা নির্বাচন করার ক্ষেত্রে তার কোন সঠিক, উদ্দেশ্য থাকে। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৩৮ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার সম্বলিত রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৬০৩ পৃষ্ঠা)
মুসাফির কতক্ষণ পর্যন্ত মুসাফির থাকবে?
মুসাফির ততক্ষণ পর্যন্ত মুসাফির থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত সে আপন এলাকায় পৌঁছে না যায় কিংবা সফরকৃত স্থানে পূর্ণ পনের দিন অবস্থানের নিয়্যত না করে। আর এটা তখন প্রযোজ্য হবে যখন সে পূর্ণ তিন দিনের রাস্তা (অর্থাৎ-প্রায় ৯২ কিলোমিটার) অতিক্রম করে থাকে। আর তিন মানযিল তথা ৯২ কিলোমিটার পৌঁছার পূর্বেই যদি সে ফিরে আসার ইচ্ছা করে, তাহলে সে মুসাফির হিসাবে গণ্য হবে না যদিও সে জঙ্গলে থাকুক না কেন। (দুররে মুখতার সম্বলিত রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৬০৪ পৃষ্ঠা)
অবৈধ উদ্দেশ্যে সফর করলে তখন?
জায়িয কাজের জন্য সফর করে থাকুক কিংবা নাজায়িয কাজের জন্য। সর্বাবস্থায় মুসাফিরের আহকাম তার উপর প্রযোজ্য হবে। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৩৯ পৃষ্ঠা)
মালিক ও চাকরের এক সাথে সফর
মাসিক বা বাৎসরিক (বেতনে) নিয়োজিত চাকর যদি তার মালিকের সাথে সফর করে, তবে সে মালিকের অনুসরণ করবে। পিতার অনুগত সন্তান পিতার অনুসরণ করবে এবং যে ছাত্র তার উস্তাদের কাছ থেকে খাবার পায় সে ওস্তাদের অনুসরণ করবে। অর্থাৎ- যে নিয়্যত মাতবু তথা অনুসরণীয় ব্যক্তি করবে, সে নিয়্যতই তার তথা অনুসারী ব্যক্তির নিয়্যত হিসাবে গন্য হবে। আর অনুসারী ব্যক্তির কর্তব্য হবে, অনুসরণীয় ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করে তার নিয়্যত সম্পর্কে অবগত হওয়া, সে যাই বলবে সে অনুযায়ী তাকে আমল করতে হবে। আর যদি সে কোন উত্তর না দেয়, তাহলে (অনুসরণীয় ব্যক্তি) মুকিম না মুসাফির। সে যদি মুকীম হয়, তবে নিজেকে মুকীম মনে করবে, আর মুসাফির হলে নিজেকে মুসাফির মনে করবে। আর এটাও জানা না গেলে তবে তিনদিনের রাস্তা (অর্থাৎ-প্রায় ৯২ কিলোমিটার) সফর করার পর কসর করবে এর পূর্বে পরিপূর্ণ নামায আদায় করবে। আর যদি জিজ্ঞাসা করে অনুসরণীয় ব্যক্তির নিয়্যত সম্পর্কে অবগত না হয়, তাহলে জিজ্ঞাসা করার পর উত্তর না পাওয়া অবস্থায় যে হুকুম সে হুকুমই হবে। (রদ্দুল মুহতার হতে সংগৃহিত, ২য় খন্ড, ৬১৬, ৬১৭ পৃষ্ঠা)
কাজ সমাপ্ত হয়ে গেলে চলে যাবো!
মুসাফির কোন কাজের জন্য বা কোন বন্ধু বান্ধবের অপেক্ষায় দু’চার দিন কিংবা তের চৌদ্দ দিনের নিয়্যতে কোন স্থানে অবস্থান করলো অথবা এটা ইচ্ছা করলো যে, কাজ হয়ে গেলে চলে যাবো, উভয় অবস্থায় যদি আজ চলে যাবো, কাল চলে যাব করতে করতে বছরের পর বছর উক্ত স্থানে কাটিয়ে ফেলে তবুও মুসাফির থাকবে এবং কসর নামায আদায় করবে। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৩৯ পৃষ্ঠা)
মহিলাদের সফরের মাসয়ালা
মহিলাদের মুহরিম লোক ব্যতীত তিনদিনের (প্রায় ৯২ কিলোমিটার) বা এর চেয়ে বেশি পথ সফর করা জায়িয নেই বরং একদিনের রাস্তাও। অপ্রাপ্ত বয়স্ক, বালক বা অর্ধ পাগল লোকের সাথেও মহিলারা সফর করতে পারবে না। মহিলাদের সঙ্গে প্রাপ্ত বয়স্ক মুহরিম অথবা স্বামী থাকা আবশ্যক। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৪২ পৃষ্ঠা) মুহরিম যদি নির্ভরযোগ্য মুরাহিক (অর্থাৎ-বালেগ হওয়ার কাছাকাছি ছেলে) হয়, তাহলে মহিলারা তার সাথেও সফর করতে পারবে। মুরাহিক প্রাপ্ত বয়স্কের হুকুমের মধ্যে রয়েছে। (ফতোওয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, ২১৯ পৃষ্ঠা) মুহরিম চরম ফাসিক, নির্লজ্জ ও অবিশ্বস্থ না হওয়া আবশ্যক। (বাহারে শরীয়াত, ৪র্থ অংশ, ৮৪ পৃষ্ঠা)
মহিলাদের শশুর বাড়ী ও বাপের বাড়ী
বিবাহের পর যদি মহিলা শশুর বাড়ী চলে যায় এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকে, তাহলে তার বাপের বাড়ী তার জন্য আর স্থায়ী নিবাস থাকবে না। অর্থাৎ শশুর বাড়ী যদি তিন মনযিল তথা ৯২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হয়, সেখান থেকে সে বাপের বাড়ী বেড়াতে আসে এবং সেখানে পনের দিন থাকার নিয়্যত না করে, তাহলে সে নামায কসর করে আদায় করবে। আর যদি বাপের বাড়ী সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ না করে বরং অস্থায়ীভাবে শশুর বাড়ী যায়, তাহলে বাপের বাড়ী আসার সাথে সাথেই তার সফর শেষ হয়ে যাবে এবং তাকে পরিপূর্ণ নামাযই আদায় করতে হবে। (বাহারে শরীয়াত, ৪র্থ অংশ, ৮৪ পৃষ্ঠা)
আরব দেশ সমূহে ভিসা নিয়ে অবস্থানকারীদের মাসয়ালা
আজকাল চাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির উদ্দেশ্যে কিছু লোক পরিবার পরিজন নিয়ে নিজ দেশ হতে অন্য দেশে গিয়ে সেখানে বসবাস করছে। তাদের নিকট নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বসবাসের ভিসা থাকে। যেমন আরব রাষ্ট্র সমূহে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত অবস্থানের ভিসা দেয়া হয়। এ ভিসা সম্পূর্ণ অস্থায়ী এবং প্রতি তিন বছর পরপর নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পরিশোধ করে নবায়ন করতে হয়। যেহেতু ভিসা নির্দিষ্ট মেয়াদকালের জন্য দেয়া হয়, তাই সে পরিবার-পরিজন সহ সেখানে বাস করলেও স্থায়ীভাবে সেখানে বসবাস করার নিয়্যত করা তার জন্য অর্থহীন। এভাবে কেউ ভিসা নিয়ে একশ বছর পর্যন্ত আরব রাষ্ট্র সমূহে বসবাস করলেও তা কখনও তার জন্য স্থায়ী নিবাস হবে না। সে যখনই সফর থেকে ফিরে আসবে এবং সেখানে অবস্থান করার ইচ্ছা পোষণ করবে, তাকে ইকামতের নিয়্যত করতে হবে। যেমন কেউ ভিসা নিয়ে দুবাই থাকে। সে সুন্নাতের প্রশিক্ষণের জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফিলাতে আশিকানে রাসূল সাথে দুবাই হতে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আমিরাতের রাজধানী আবুধাবীতে সুন্নাতে ভরা সফর করলো।
এখন সে আবুধাবী হতে দুবাই ফিরে এসে সেখানে পুনরায় অবস্থান করতে চাইলে, তাকে পুনরায় পনের কিংবা তারও বেশি দিন অবস্থান করার নিয়্যত করতে হবে অন্যথায় তার উপর মুসাফিরের হুকুম প্রয়োগ হবে। তবে হ্যাঁ, তার বাহ্যিক অবস্থা দ্বারা যদি বুঝা যায় যে সে পনের কিংবা তারও বেশি দিন দুবাইতেই অবস্থান করবে, তাহলে নিয়্যত ছাড়াই সে মুকীম হয়ে যাবে। আর যদি তার ব্যবসা বাণিজ্য এরূপ হয় যে, সে পূর্ণ পনের দিন-রাত দুবাইতে থাকতে পারে না, প্রায় সময়ই তাকে শরয়ী সফর করতে হয়। এভাবে যদি সে সারা বছরই দুবাইতে তার পরিবার পরিজনের নিকট আসা যাওয়া করতে থাকে, সে মুসাফিরই থাকবে মুকীম হবে না, তাই তাকে নামায কসর করে আদায় করতে হবে। নিজ শহরের বাইরে দূরদূরান্তে মাল সাপ্লাইকারী, বিভিন্ন শহর ও দেশে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিভ্রমণকারী এবং ড্রাইবার সাহেবগণ এসব মাসয়ালা স্মরণ রাখবেন।
মদীনা শরীফ যিয়ারতকারীদের জন্য জরুরী মাসয়ালা
কেউ মক্কা শরীফে ইকামত তথা অবস্থানের নিয়্যত করলো, কিন্তু তার অবস্থার প্রেক্ষিতে বুঝা গেলো যে, সে পনের দিন সেখানে অবস্থান করবে না, তাহলে তার নিয়্যত শুদ্ধ হবে না। যেমন- কেউ হজ্ব করতে গেলো এবং যিলহজ্জ মাস শুরু হওয়া সত্ত্বেও সে ১৫ দিন মক্কা শরীফ থাকার নিয়্যত করলো, তার এ নিয়্যত নিষ্ফল হবে। কেননা সে যখন হজ্জের ইচ্ছা করলো, তখন পনের দিন মক্কা শরীফে থাকার সময় পাবে না। ৮ই যিলহজ্ব মীনা শরীফ এবং ৯ তারিখ আরাফা শরীফে তাকে অবশ্যই যেতে হবে, তাই একাধারে পনের দিন পর্যন্ত মক্কা শরীফে সে কিভাবে থাকতে পারে?তবে হ্যাঁ! মীনা শরীফ হতে ফিরে এসে যদি বাস্তবেই মক্কা শরীফে পনের কিংবা তারও বেশি দিন থাকার নিয়্যত করে, তবে তার নিয়্যত শুদ্ধ হবে। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৭২৯ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৪০ পৃষ্ঠা) আর যদি প্রবল ধারণা হয় যে, সে পনের দিনের মধ্যেই মদীনা শরীফে বা নিজ দেশের উদ্দেশ্যে রাওয়ানা হয়ে পড়বে, তাহলে মীনা থেকে ফিরে আসার পরও সে মুসাফির থেকে যাবে।
ওমরার ভিসায় গিয়ে হজ্বের জন্য থেকে যাওয়া কেমন?
ওমরার ভিসায় গিয়ে অবৈধভাবে হজ্বের জন্য থেকে যাওয়া বা দুনিয়ার যে কোন দেশে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অবৈধভাবে থাকার যার নিয়্যত থাকবে তার ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই যেই শহর বা গ্রামের মুকিম হবে সেখানে যতদিন থাকবে তার জন্য মুকিমের হুকুম প্রযোজ্য হবে। যদিও বছরের পর বছর পড়ে থাকুক মুকিম থাকবে। অবশ্য একবারই ৯২ কিলোমিটার বা তার চেয়ে বেশি দূরত্বে সফরের ইচ্ছায় ঐ শহর থেকে বের হয়, তবে নিজ বাসস্থান থেকে বের হতেই মুসাফির হয়ে যাবে। এখন তার স্থায়ী ভাবে অবস্থানের নিয়্যত করাটা অনর্থক। উদাহরণ স্বরূপ-কোন ব্যক্তি পাকিস্তান থেকে ওমরা ভিসায় মক্কা শরীফ গেলো, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই মক্কা শরীফের মুকিম থাকবে। তখন তার উপর মুকিমের হুকুম প্রয়োগ হবে। এখন যদি উদাহরণ স্বরূপ-সেখানে থেকে জেদ্দা শরীফ বা মদীনা শরীফ চলে আসলো, তখন সে অবৈধ ভাবে পড়ে থাকলেও মুসাফির। এমনকি যদি সে দ্বিতীয়বার মক্কা শরীফে চলে আসে তার পরও মুসাফির থাকবে। তাকে নামায কসর আদায় করতে হবে। হ্যাঁ! যদি দ্বিতীয়বার ভিসা পাওয়া যায় তখন মুকিম হওয়ার নিয়্যত করা যেতে পারে। স্মরণ রাখবেন! যেই আইনের বিরোধীতা করার দ্বারা অপমান, ঘুষ এবং মিথ্যা ইত্যাদি বিপদে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেই আইনের বিরোধীতা করা জায়েয নেই। অতঃপর আমার আক্বা আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: মুবাহ অর্থাৎজায়েয পদ্ধতির মধ্যে কিছু পদ্ধতি আইনানুগভাবে অপরাধ। এই ধরণের আইনের বিরোধীতা করা নিজ ব্যক্তিত্ব্যকে কষ্ট ও অপমানের জন্য পেশ করার মতো। আর তা নাজায়িয। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১৭তম খন্ড, ৩৭০ পৃষ্ঠা) এইজন্য ভিসা ছাড়া দুনিয়ার কোন দেশে থাকা বা হজ্বের জন্য অবস্থান করা জায়েয নেই। অবৈধভাবে হজ্বের জন্য থাকার মধ্যে সফলতা অর্জন করাকে আল্লাহ্র পানাহ! আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর রাসূল صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দয়া বলাটা মারাত্মক নির্লজ্জতা।
কসর করা ওয়াজীব
মুসাফিরের জন্য কসর করে নামায আদায় করা ওয়াজীব অর্থাৎ চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযকে দুই রাকাত পড়বে। তার জন্য দুই রাকাতই হচ্ছে পূর্ণ নামায। কোন মুসাফির ইচ্ছাকৃতভাবে চার রাকাত নামায আদায় করলে এবং দুই রাকাতের পর বসলে তার ফরয আদায় হয়ে যাবে এবং পরবর্তী দুই রাকাত নফল হিসাবে গণ্য হবে। তবে ওয়াজীব বর্জন করার কারণে সে গুনাহগার হবে এবং জাহান্নামের শাস্তির হকদার হবে। তাই তাকে তাওবা করতে হবে। আর যদি দুই রাকাতের পর না বসে, তাহলে তার ফরয আদায় হবে না এবং ঐ নামায নফল হবে। তবে যদি তৃতীয় রাকাতের সিজদা করার পূর্বে ইকামতের নিয়্যত করে, তাহলে তার ফরয বাতিল হবে না কিন্তু তাকে কিয়াম ও রুকু পুনরায় করতে হবে। আর তৃতীয় রাকাতের সিজদাতে ইকামতের নিয়্যত করলে ফরয বাতিল হয়ে যাবে। অনুরূপ মুসাফির চার রাকাত নামায আদায় করার সময় প্রথম দুই রাকাত কিংবা এক রাকাতে কিরাত না পড়লে তার নামায বিনষ্ট হয়ে যাবে। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৩৯ পৃষ্ঠা)
কসরের পরিবর্তে চার রাকাতের নিয়্যত করে ফেলল তবে...?
কোন মুসাফির যদি কসরের পরিবর্তে চার রাকাত ফরযের নিয়্যত করে ফেললো, কিন্তু স্মরণে আসার পর দুই রাকাতে সালাম ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তার নামায হয়ে যাবে। অনুরূপ মুকীম ব্যক্তিও চার রাকাত ফরযের পরিবর্তে দুই রাকাত ফরযের নিয়্যত করলে এবং চার রাকাত আদায় করার পর সালাম ফেরালে তার নামাযও হয়ে যাবে। ফকীহগণ رَحِمَہُمُ اللہُ تَعَالٰی বর্ণনা করেন: নামাযের নিয়্যতে রাকাতের সংখ্যা উল্লেখ করা আবশ্যক নয়।কেননা এটা প্রাসঙ্গিকভাবে বুঝা যায়। নিয়্যতে রাকাতের সংখ্যা উল্লেখ করার সময় ভুল হলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। (দুররে মুখতার সম্বলিত রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৯৭, ৯৮ পৃষ্ঠা)
মুসাফির ইমাম ও মুকীম মুকতাদী
ইকতিদা শুদ্ধ হওয়ার জন্য একটি শর্ত এটাও যে, ইমামের মুকীম বা মুসাফির হওয়া সম্বন্ধে অবগত হওয়া। চাই নামায আরম্ভ করার সময় অবগত হোক কিংবা পরে। আর ইমামেরও উচিত, নামায শুরু করার সময় তার মুসাফির হওয়ার কথা মুকতাদীদের জানিয়ে দেয়া। আর যদি মুসাফির হওয়ার কথা শুরুতে না জানায়, তাহলে নামায শেষ করে তাকে বলে দিতে হবে যে, “মুকীম ইসলামী ভাইয়েরা আপনারা আপনাদের নামায পূর্ণ করে নিন, আমি মুসাফির।” (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৬১১, ৬১২ পৃষ্ঠা) নিজের মুসাফির হওয়ার কথা নামাযের শুরুতে বলে থাকলেও নামাযের পর আবারও বলে দিতে হবে, যাতে যে সমস্ত লোক নামায শুরু করার সময় উপস্থিত ছিল না তারা জানতে পারে। আর যদি ইমামের মুসাফির হওয়াটা সকলের জানা থাকে, তবে নামাযের পর ঘোষণা করাটা মুস্তাহাব। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৭৩৫-৭৩৬ পৃষ্ঠা)
মুকীম মুকতাদী ও অবশিষ্ট দু’রাকাত
কসর বিশিষ্ট নামাযে মুসাফির ইমাম সালাম ফিরানোর পর মুকীম মুকতাদী যখন নিজের অবশিষ্ট নামায আদায় করবে তখন ফরযের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে সুরা ফাতিহা পাঠ করার পরিবর্তে অনুমান করে ততটুকু সময় পর্যন্ত চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। (বাহারে শরীয়াত, ৪র্থ অংশ, ৮২ পৃষ্ঠা)
মুসাফিরের জন্য কি সুন্নাত সমূহ রহিত?
সুন্নাতের মধ্যে কসর নেই বরং পূর্ণ চার রাকাতই আদায় করতে হবে। ভীতিকর অবস্থায় সুন্নাত ছেড়ে দিতে পারবে আর নিরাপদ থাকলে আদায় করতে হবে। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৩৯ পৃষ্ঠা)
চলন্ত গাড়িতে নফল নামায আদায় করার চারটি মাদানী ফুল
(১) শহরের বাহিরে (অর্থাৎ শহরের বাইরে দ্বারা উদ্দেশ্য যেখান থেকে মুসাফিরের উপর নামায কসর করা ওয়াজীব) সাওয়ারীর উপর (যেমন চলন্ত কার, বাস, মালগাড়ী ইত্যাদিতেও) নফল নামায পড়া যেতে পারে। তখন কিবলামুখী হওয়া শর্ত নয় বরং সাওয়ারী বা গাড়ি যেদিকে যাচ্ছে সেদিকেই মুখ করতে হবে। সেদিকে মুখ না করলে নামায শুদ্ধ হবে না। এমনকি নামায শুরু করার সময়ও কিবলামুখী হওয়া শর্ত নয় বরং সাওয়ারী বা গাড়ি যেদিকে যাচ্ছে সেদিকেই মুখ করতে হবে। এমতাবস্থায় রুকু ও সিজদা ইশারা করে আদায় করতে হবে এবং রুকুর তুলনায় সিজদাতে অধিক পরিমাণ ঝুঁকতে হবে (অর্থাৎ-রুকুতে যতটুকু পরিমাণ ঝুঁকবে সিজদাতে তার চেয়ে বেশি ঝুঁকতে হবে। (দুররে মুখতার সম্বলিত রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৪৮৭ পৃষ্ঠা) চলন্ত ট্রেন ও এমন সব যানবাহন যেগুলোতে স্থানের সংকুলান আছে সেগুলোতে কিবলামুখী হয়ে নিয়মানুযায়ী নফল নামায আদায় করতে হবে।
(২) গ্রামে বসবাসকারী লোক যখন গ্রাম থেকে বের হয়ে পড়বে তখন সাওয়ারী বা গাড়িতে নফল নামায আদায় করতে পারবে। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৪৮৬ পৃষ্ঠা)
(৩) শহরের বাইরে সাওয়ারীর উপর নামায শুরু করেছিল এবং নামায পড়া অবস্থায় শহরে প্রবেশ করলো। তাহলে ঘরে না পৌঁছা পর্যন্ত সাওয়ারীর উপর নামায পূর্ণ করতে পারবে। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৮৭, ৪৮৮ পৃষ্ঠা)
(৪) শরীয়াত সম্মত অসুবিধা ব্যতীত চলন্ত গাড়িতে ফরয নামায, ফজরের সুন্নাত, সমস্ত ওয়াজীব যেমন-বিতর ও মান্নতের নামায এবং যে সমস্ত নফল নামায শুরু করার পর পূর্ণ না করেই ভঙ্গ করা হয়েছে তা, তিলাওয়াতে সিজদা যদি সিজদার আয়াত জমিনে তিলাওয়াত করা হয় আদায় করা যাবে না। আর যদি শরীয়াত সম্মত অসুবিধা থাকে, তাহলে চলন্ত গাড়িতে তা আদায় করার জন্য শর্ত হলো, কিবলামূখী হয়ে দাঁড়িয়ে তা আদায় করতে হবে, যদি সম্ভবপর হয়, অন্যথায় যেভাবে সম্ভব সেভাবেই আদায় করবে। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৮৮ পৃষ্ঠা)
মুসাফির তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেলে তবে...
কসর বিশিষ্ট নামাযে মুসাফির যদি তৃতীয় রাকাত শুরু করে দেয়, তখন এর দু’টি পদ্ধতি:
(১) তাশাহহুদ পরিমাণ বসার পর তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে তৃতীয় রাকাতের সিজদা না করা পর্যন্ত সে বসে যাবে এবং সিজদায়ে সাহু দিয়ে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করে নেবে। না বসে দাঁড়ানো অবস্থায় সালাম ফিরিয়ে নিলেও তার নামায হয়ে যাবে, তবে সুন্নাতের পরিপন্থি হবে। আর যদি তৃতীয় রাকাতের সিজদা করে ফেলে, তাহলে আরো এক রাকাত মিলিয়ে সিজদায়ে সাহু দিয়ে নামায পূর্ণ করে নেবে, এমতাবস্থায় তার শেষ দুই রাকাত নামায নফল হিসাবে গণ্য হবে।
(২) দুই রাকাতের পর শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পরিমাণ না বসেই যদি তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে তৃতীয় রাকাতের সিজদা না করলে ফিরে আসবে এবং সিজদায়ে সাহু দিয়ে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করে নেবে। আর যদি তৃতীয় রাকাতের সিজদা করে ফেলে, তাহলে তার ফরয বাতিল হয়ে যাবে। সে আরো এক রাকাত মিলিয়ে সিজদায়ে সাহু দিয়ে নামায পূর্ণ করে নেবে তখন চার রাকাতই নফল নামায হিসাবে গণ্য হবে। (পরে দুই রাকাত ফরয নামায তাকে অবশ্যই আদায় করে দিতে হবে।) (দুররে মুখতার সম্বলিত রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৫৫ পৃষ্ঠা)
সফরে কাযা নামায
মুকীম অবস্থায় কাযাকৃত নামায সফরে আদায় করলে পূর্ণ নামাযই আদায় হবে আর সফরে কাযাকৃত নামায মুকীম অবস্থায় আদায় করলে কসরই পড়তে হবে।
চাশতের নামাযের সময়
এর সময়, সূর্য উপরে উঠার পর থেকে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত। তবে উত্তম হলো দিনের এক চতুর্থাংশে আদায় করে নেওয়া। (বাহারে শরীয়াত, ৪র্থ খন্ড, ২৫ পৃষ্ঠা) ইশরাকের নামাযের পরও ইচ্ছা করলে চাশতের নামায আদায় করা যায়।
صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
হিফয ভুলে যাওয়ার শাস্তি
নিঃসন্দেহে কুরআনুল কারীম হিফয করা বড় সাওয়াবের কাজ। কিন্তু স্মরণ রাখবেন! কুরআন শরীফ হিফয করা সহজ, তবে সারা জীবন তা মনে রাখা খুবই কঠিন। হাফিয সাহেব ও হাফিযা সাহেবাগণের উচিত যে, দৈনিক কমপক্ষে এক পারা অবশ্যই তিলাওয়াত করে নেয়া। যে সমস্ত হাফিয সাহেবগণ রমযানুল মুবারক আসার কিছুদিন পূর্বে শুধুমাত্র মুসল্লীদেরকে শুনানোর উদ্দেশ্যে কুরআন তিলাওয়াত দ্বারা ঘর সরগরম করে তোলে, এছাড়া আল্লাহ্র পানাহ! সারা বছর অলসতার কারণে তারা কুরআনের অনেক আয়াত ভুলে যায়, তাদের উচিত নিয়মিত কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা এবং আল্লাহ্ তাআলার ভয়ে ভীত হওয়া। যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের একটি আয়াতও ভুলে গিয়েছে সে তা পুনরায় মুখস্থ করে নেবে এবং কুরআনের আয়াত ভুলে যাওয়ার কারণে তার যে গুনাহ হয়েছে তা থেকে সত্যিকার তাওবা করে নেবে।
(১) যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের কোন আয়াত মুখস্থ করার পর তা আবার ভুলে যায়, কিয়ামতের দিন তাকে অন্ধ অবস্থায় উঠানো হবে। (পারা-১৬, সূরা- ত্বাহা, আয়াত-১২৫, ১২৬)
(২) ফরমানে মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم
আমার উম্মতের সাওয়াব আমার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল, আমি এতে ঐ ক্ষুদ্র খড়কুটাও দেখতে পেয়েছিলাম, যা লোকেরা মসজিদ হতে বাইরে নিক্ষেপ করেছিল এবং আমার উম্মতের গুনাহসমূহও আমার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল, এতে আমি আমার উম্মতের কোন লোক কুরআন শরীফের একটি সূরা বা আয়াত মুখস্থ করার পর তা ভুলে যাওয়ার কারণে তার যে গুনাহ হয়েছিল তার চাইতে কোন বড় গুনাহ দেখতে পাইনি। (জামে তিরমিযী, হাদীস- ২৯১৬)
(৩) যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ মুখস্থ করার পর তা আবার ভুলে যায়, কিয়ামতে দিন সে আল্লাহ্ তাআলার সাথে কুষ্ঠ রোগী হয়ে সাক্ষাৎ করবে। (আবু দাউদ শরীফ, হাদীস-১৪৭৪)
(৪) কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে যে গুনাহের জন্য পরিপূর্ণ শাস্তি দেয়া হবে তা হচ্ছে, তাদের কেউ কুরআন শরীফের কোন সূরা মুখস্থ করার পর তা আবার ভুলে গেলো। (কানযুল উম্মাল, হাদীস- ২৮৪৬)
(৫) আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ ِ বর্ণনা করেন: “সে ব্যক্তি হতে মূর্খ আর কে আছে? যাকে আল্লাহ্ তাআলা এমন শক্তি (অর্থাৎ কুরআন শরীফ মুখস্থ করার শক্তি) দান করেছেন, আর সে তা নিজেই হাতছাড়া করে দিয়েছে। যদি সে কুরআন শরীফ মুখস্থ করার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারত এবং কুরআন শরীফ মুখস্থ করাতে যে সাওয়াব ও মর্যাদা রয়েছে তা অবগত হতে পারত, তাহলে সে কুরআন শরীফ মুখস্থ করাকে নিজের প্রাণের চাইতেও বেশি প্রিয় মনে করতো।”
তিনি আরো বলেন: “যতটুকু সম্ভব কুরআন শরীফ শিক্ষাদান, মুখস্থ করানো এবং নিজে মুখস্থ রাখার চেষ্টা করবে। যাতে এর জন্য আল্লাহ্ প্রদত্ত যে সাওয়াবের প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা লাভ করার সৌভাগ্য অর্জিত হয় এবং কিয়ামতের দিন অন্ধ ও কুষ্ঠ রোগী হয়ে উঠা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৩তম খন্ড, ৬৪৫, ৬৪৭ পৃষ্ঠা)
صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত নামায বিষয়ের এনসাইক্লোপিডিয়া ও মাসাইল সম্পর্কিত “নামাযের আহকাম” নামক কিতাবের ২০৪-২২০ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। কিতাবটি নিজে কিনুন, অন্যকে উপহার দিন।
যারা মোবাইলে (পিডিএফ) কিতাবটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন অথবা প্লে স্টোর থেকে এই কিতাবের অ্যাপ ফ্রি ইন্সটল করুন
দাওয়াতে ইসলামীর সকল বাংলা ইসলামীক বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন
নামায বিষয়ক আরো পড়ুন- প্রথম পর্ব, দ্বিতীয় পর্ব, তৃতীয় পর্ব, চতুর্থ পর্ব
মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন