জুমার দিন দরূদ শরীফ পাঠের ফযীলত
নবীদের সুলতান, রহমতে আলামিয়ান, সরদারে দো-জাহান, মাহবুবে রহমানصَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর জুমার দিন দুইশত বার দরূদ শরীফ পাঠ করবে, তার দুইশত বছরের গুনাহ্ মাফ হয়ে যাবে।” (জমউল জাওয়ামেয় লিস সুয়ূতী, ৭ম খন্ড, ১৯৯ পৃষ্ঠা, হাদীস-২২৩৫৩)
صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আমরা কতই না সৌভাগ্যবান যে, আল্লাহ্ তাআলা তাঁর প্রিয় হাবীব صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর ওসিলায় আমাদেরকে বরকতময় জুমার নিয়ামত দ্বারা ধন্য করেছেন। আফসোস! আমরা অকৃতজ্ঞরা অন্যান্য দিনের মতো জুমার দিনটিকেও অলসতার মধ্যে অতিবাহিত করি। অথচ জুমার দিন ঈদের দিন, জুমার দিন সকল দিনের সরদার, জুমার দিনে জাহান্নামের আগুন প্রজ্বলিত করা হয় না, জুমার রাতে জাহান্নামের দরজা খোলা হয় না, জুমাকে কিয়ামতের দিন নববধূর মতো উঠানো হবে, জুমার দিনে মৃত্যুবরণকারী সৌভাগ্যবান মুসলমান শহীদের মর্যাদা লাভ করে এবং কবরের আযাব থেকে নিরাপদ হয়ে যায়। প্রসিদ্ধ মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত হযরত আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর বর্ণনা অনুসারে;“জুমার দিন হজ্ব হলে সেটার সাওয়াব সত্তরটি হজ্জের সাওয়াবের সমপরিমাণ হবে। জুমার দিনের একেকটি সৎকাজের সাওয়াব সত্তরগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। (যেহেতু জুমার দিনের মর্যাদা অনেক বেশি, তাই) জুমার দিনে গুনাহের শাস্তিও সত্তর গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। (মীরআত, ২য় খন্ড, ৩২৩, ৩২৫, ৩২৬ পৃষ্ঠা)
বরকতময় জুমার ফযীলত সম্পর্কে আর কী বলব? আল্লাহ্ তাআলা পবিত্র কুরআনে “সুরাতুল জুমা” নামে পরিপূর্ণ একটি সূরা অবতীর্ণ করেছেন। যা কুরআনুল করীমের ২৮তম পারায় শোভা পাচ্ছে। আল্লাহ তাআলা “সুরা- জুমা”এর নবম আয়াতে ইরশাদ করেন:
يَاۤ اَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰہِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۹﴾
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:হে ঈমানদারগণ! যখন নামাযের আযান হয় জুমা দিবসে, তখন আল্লাহর যিকরের দিকে দৌঁড়াও এবং বেচা-কেনা পরিত্যাগ করো, এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানো।
হুযুর পুরনূর ﷺ প্রথম জুমা কখন আদায় করেছিলেন?
সদরুল আফাযীল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: হুযুরে আকরাম, নূরে মুজাস্সাম, শাহে বনী আদম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم যখন হিজরত করে মদীনা শরীফ তাশরীফ আন ছিলেন তখন রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ (৬২২ খ্রীষ্টাব্দ) রোজ সোমবার চাশতের (দ্বিপ্রহর) সময় ‘কুবা’নামক স্থানে অবস্থান করেন।সোম, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার সেখানে অবস্থান করেন এবং মসজিদের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। জুমার দিন তিনি মদীনা শরীফ যাওয়ার সংকল্প করলেন। বনী সালেম ইবনে আউফ এর “বতনে ওয়াদী”এলাকায় জুমার সময় উপস্থিত হলে ঐ জায়গায় লোকেরা মসজিদ তৈরী করলেন এবং তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সেখানে জুমা আদায় করেন এবং খোৎবা দেন। (খাযায়েনুল ইরফান, ৮৮৪ পৃষ্ঠা)
اَلْحَمْدُ لِلّٰہ عَزَّوَجَلَّ আজও ঐ স্থানে সুন্দর “জুমা মসজিদ” বিদ্যমান রয়েছে। যিয়ারতকারীগণ বরকত লাভের জন্য সে মসজিদটির যিয়ারত করেন এবং সেখানে নফল নামায আদায় করেন।
জুমার অর্থ
প্রখ্যাত মুফাস্সীর, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: যেহেতু সেদিনই (জুমার দিন) সমস্ত সৃষ্ট জীবের অস্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটেছে, সেদিনই হযরত সায়্যিদুনা আদম عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام এর মাটি একত্রিত করা হয়, আর সেদিনই লোকেরা একত্রিত হয়ে জুমার নামায আদায় করে। এই কারণে সে দিনকে জুমা বলা হয়। ইসলামের পূর্বে আরবরা এটাকে ‘আরুবা’ নামে অভিহিত করতো। (মিরাতুল মানাজিহ, ২য় খন্ড, ৩১৭ পৃষ্ঠা)
হুযুর পুরনূর ﷺ সর্বমোট কয়টি জুমা আদায় করেছিলেন?
প্রখ্যাত মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: নবী করীম, রউফুর রহীম, রাসূলে আমীন صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم প্রায় ৫০০টি জুমার নামায আদায় করেন। কেননা, জুমা হিজরতের পর শুরু হয় আর হিজরতের পর হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم দশ বছর সময়কাল পর্যন্ত জাহেরী জিন্দেগীতে ছিলেন।ঐ সময়ে জুমার সংখ্যা৫০০ ওয়াক্তই হয়। (মীরআত, ২য় খন্ড, ৩৪৬ পৃষ্ঠা। লুময়াত লিশ শায়খ আব্দুল হক দেহলভী, ৪র্থ খন্ড, ১৯০ পৃষ্ঠা, হাদীস-১৪১৫)
তিন জুমা অলসতায় বর্জনকারীর অন্তরে মোহর
রাসূলে আকরাম, নূরে মুজাস্সাম, শাহে বনী আদম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি অলসতার কারণে তিন জুমার নামায পরিত্যাগ করবে, আল্লাহ্ তাআলা তার অন্তুরে মোহর মেরে দিবেন।” (সুনানে তিরমিযী, ২য় খন্ড, ৩৮ পৃষ্ঠা হাদীস-৫০০) জুমা ফরযে আইন, এর ফরযিয়্যত (অর্থাৎ ফরয হওয়ার ভিত্তি) যোহর থেকেও বেশি সুদৃঢ় আর এর অস্বীকারকারী কাফির। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৫ পৃষ্ঠা।বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৬২ পৃষ্ঠা)
জুমার নামাযে ইমামার (পাগড়ীর) ফযীলত
নবীয়ে রহমত, শফীয়ে উম্মত, মুস্তফা জানে রহমত صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর ফিরিশতাগণ জুমার দিনে পাগড়ী পরিধানকারীদের উপর দরূদ শরীফ প্রেরণ করেন।” (মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ২য় খন্ড, ৩৯৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩০৭৫)
শিফা (আরোগ্য) প্রবেশ করে
হযরত হুমাইদ বিন আব্দুর রহমান رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন তার নখ কাটে, আল্লাহ্ তাআলা তার শরীর থেকে অসুস্থতা দূর করে সুস্থতা প্রবেশ করান।” (মুসান্নিফে ইবনে আবি শায়বা, ২য় খন্ড, ৬৫ পৃষ্ঠা)
১০ দিন পর্যন্ত বালা-মুসীবত থেকে রক্ষা
সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা, আল্লামা মাওলানা আমজাদ আলী আযমী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন;হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে: “যে ব্যক্তি জুমার দিন নখ কাটবে আল্লাহ তাআলা তাকে দ্বিতীয় জুমা ও পরবর্তী আরো তিনদিন সহ সর্বমোট দশ দিন পর্যন্ত যাবতীয় বালা মুসীবত থেকে রক্ষা করবেন।”অপর এক বর্ণনায় রয়েছে; যে ব্যক্তি জুমার দিন নখ কাটবে, তাঁর নিকট রহমতের আগমন ঘটবে এবং তার গুনাহ দূর (ক্ষমা) হবে। (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম অংশ, ২২৬ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার, ৯ম খন্ড, ৬৬৮-৬৬৯ পৃষ্ঠা)
রিযিক সঙ্কুচিত হওয়ার একটি কারণ
সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা, হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “জুমার দিন নখ কাটা মুস্তাহাব। তবে অতিরিক্ত বেড়ে গেলে জুমাবারের (শত্রুবারের) জন্য অপেক্ষা না করে তাড়াতাড়ি নখ কেটে ফেলা উচিত। নখ বড় রাখা ভালো নয়। কারণ নখ বড় থাকলে রিযিক সঙ্কুচিত হয়ে যায়।” (বাহারে শরীয়াত, ১৬তম অংশ, ২২৫ পৃষ্ঠা)
ফিরিশতারা সৌভাগ্যবানদের নাম লিখেন
নবী করীম, রউফুর রহীম, রাসূলে আমীনصَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যখন জুমুার দিন আসে তখন মসজিদের দরজায় ফিরিশতারা আগমনকারী মুসল্লীদের নাম লিখতে থাকেন। যে ব্যক্তি সর্ব প্রথম মসজিদে আগমন করে, তার নাম সর্বপ্রথম লিখেন। জুমার দিন সর্বপ্রথম মসজিদে আগমনকারী ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একটি উট সদকাকারীর মতো। এরপর যে আসবে সে একটি গাভী সদকাকারীর মতো। এরপর যে আসবে সে একটি ভেড়া সদকাকারীর মতো। এরপর যে আসবে সে একটি মুরগী সদকাকারীর মতো। এরপর যে আসবে সে একটি ডিম সদকাকারীর মতো সাওয়াব পাবে। আর যখন ইমাম সাহেব খুৎবা দেওয়ার জন্য মিম্বরে আরোহণ করেন, তখন ফিরিশতারা মুসল্লীদের ঐ আমলনামাটি বন্ধ করে খোৎবা শ্রবণ করতে থাকেন।” (সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, ৩১৯ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৯২৯)
প্রখ্যাত মুফাস্সীর, হাকীমুল উম্মত, মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: কিছু ওলামায়ে কিরাম বলেন, ফিরিশতারা জুমার দিন ফজর উদয় হওয়ার পর থেকে মসজিদের দরজায় দাঁড়ায়। কেউ কেউ বলেন, সূর্য আলোকিত হওয়ার পর দাঁড়ায়। তবে বিশুদ্ধ মত হলো, সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পর থেকে তারা দাঁড়ায়। কেননা, তখন থেকে জুমার সময় শুরু হয়। জানা গেলো;ঐ ফিরিশতারা সকল আগমনকারীর নাম জানেন। উল্লেখ্য যে, যদি সর্বপ্রথম একশত লোক একত্রে মসজিদে আগমন করে থাকে তবে তারা সবাই প্রথম আগমনকারী হিসাবে গন্য হবে। (মীরআত, ২য় খন্ড, ৩৩৫ পৃষ্ঠা)
প্রথম শতাব্দীতে জুমার প্রতি মানুষের উৎসাহ
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: প্রথম শতাব্দীতে সাহরীর সময় ও ফযরের পর রাস্তায় মানুষের ভীড় দেখা যেতো। তখন তারা বাতি নিয়ে জুমার নামায আদায়ের জন্য জামে মসজিদে যেতো, মনে হতো যেন ঈদের দিন। অতঃপর জুমার জন্য মানুষের খুব তাড়াতাড়ি যাওয়ার গমনের এ প্রবণতার পরিসমাপ্তি ঘটলো। এজন্যই বলা হয়ে থাকে যে, ইসলামে সর্বপ্রথম যে বিদআতটি প্রকাশ পেয়েছে তা হলো (জুমার নামাযের জন্য) জামে মসজিদে দ্রুত যাওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করা।আফসোস! ইহুদীদের দেখে মুসলমানদের লজ্জাবোধ হয় না কেন?তারা শনি ও রবিবার খুব ভোরে তাদের উপসনালয়ে যায়, এমনকি দুনিয়া প্রত্যাশীরা ব্যবসা বাণিজ্য ও দুনিয়া লাভের জন্য খুব ভোরে হাট বাজারে যায়, তাহলে পরকালের কল্যাণকামনা কারীরা কেন তাদের মোকাবেলা করে না! (ইহইয়াউল উলুম, ১ম খন্ড. ২৪৬ পৃষ্ঠা) যে মসজিদে জুমার নামায আদায় হয়, তাকে “জামে মসজিদ”বলে।
গরীবদের হজ্ব
হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُمَا থেকে বর্ণিত;মাহবুবে রব, শাহে আরব, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “اَلْجُمْعَةُ حَجُّ الْمَسَاكِيْن অর্থাৎ জুমার নামায মিসকিনদের হজ্ব। অন্য বর্ণনায় রয়েছে;اَلْجُمْعَةُ حَجُّ الْفُقَرَاء অর্থাৎ জুমার নামায গরীবদের হজ্ব।” (জমউল জাওয়ামে লিস সুয়ূতী, ৪র্থ খন্ড, ৮৪ পৃষ্ঠা, হাদীস১১১০৮, ১১১০৯)
জুমার জন্য তাড়াতাড়ি বের হওয়া হজ্ব
নবীয়ে রহমত, শফীয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “নিঃসন্দেহে তোমাদের জন্য প্রত্যেক জুমার দিন একটি হজ্ব ও একটি ওমরা রয়েছে। এই কারণে জুমার নামাযের জন্য তাড়াতাড়ি বের হওয়া তোমাদের জন্য হজ্ব এবং জুমার নামাযের পর আসরের নামাযের জন্য অপেক্ষা করা ওমরা।” (আস সুনানুল কুবরা, লিল বায়হাকী, ৩য় খন্ড, ৩৪২ পৃষ্ঠা, হাদীস ৫৯৫০)
হজ্ব ও ওমরার সাওয়াব
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: (জুমার নামাযের পর) আসরের নামায আদায় করা পর্যন্ত মসজিদেই অবস্থান করবে আর যদি মাগরিব পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয় তবে তা উত্তম হবে। বলা হয়ে থাকে: যে ব্যক্তি জামে মসজিদে (জুমা আদায় করার পর সেখানেই অবস্থান করে) আসরের নামায আদায় করে তার জন্য হজ্ব এর সাওয়াব এবং যে ব্যক্তি সেখানে অবস্থান করে মাগরিবের নামাযও আদায় করে তার জন্য হজ্ব ও ওমরা উভয়ের সাওয়াব রয়েছে। (ইহ্ইয়াউল উলুম, ১ম খন্ড, ২৪৯ পৃষ্ঠা)
সকল দিনের সর্দার
মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ারصَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “জুমার দিন হলো সকল দিনের সর্দার এবং আল্লাহ্ তাআলার নিকট সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন। এমনকি তা তাঁর নিকট ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর এর চেয়েও শ্রেষ্ঠ দিন। এই দিনের ৫টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে: (১) আল্লাহ্ তাআলা ঐ দিন আদম عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام কে সৃষ্টি করেছেন, (২) ঐ দিন পৃথিবীতে তাঁকে পাঠিয়েছেন, (৩) ঐ দিন তাঁকে ওফাত দিয়েছেন, (৪) ঐ দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, বান্দা ঐ সময় আল্লাহ্ তাআলার নিকট যা চাইবে আল্লাহ্ তাআলা তা তাকে দান করবেন যদি সে হারাম কোন কিছু না চায় এবং (৫) ঐ দিনেই কিয়ামত সংগঠিত হবে। আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য লাভকারী ফিরিশতা আসমান, জমিন, বাতাস, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্রএমন কোন জিনিস নেই, যে জুমার দিনকে ভয় করে না। (সুনানে ইবনে মাযাহ, ২য় খন্ড, ৮ পৃষ্ঠা, হাদীস-১০৮৪)
জন্তুদের কিয়ামতের ভয়
অপর এক বর্ণনায় হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আরো ইরশাদ করেছেন: “মানুষ ও জ্বীন ব্যতীত এমন কোন জীব জন্তু নেই, যারা জুমার দিন ভোর হওয়া থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত কিয়ামত হওয়ার ভয়ে চিৎকার করে না।” (মুআত্তা ইমাম মালেক, ১ম খন্ড, ১১৫ পৃষ্ঠা, হাদীস-২৪৬)
দোয়া কবুল হয়
নবী করীম, রাসূলে আমীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন:“জুমার দিন এমন একটা মূহুর্ত রয়েছে, যদি কোন মুসলমান সেটা পেয়ে আল্লাহ্ তাআলার নিকট কোন কিছু চায় তবে অবশ্যই আল্লাহ তাআলা তা দান করবেন। তবে ঐ মূহুর্তটা খুবই সংক্ষিপ্ত।” (সহীহ মুসলিম, ৪২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৮৫২)
আসর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়ে অনুসন্ধান করো
মক্কী আক্বা, মাদানী মুস্তফা, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “জুমার দিনের কাক্সিক্ষত সময়টা আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে অনুসন্ধান করো।” (সুনানে তিরমিযী, ২য় খন্ড, ৩০ পৃষ্ঠা, হাদীস ৪৮৯)
বাহারে শরীয়াত প্রণেতার অভিমত
হযরত সদরুশ শরীয়া মাওলানা মুহাম্মদ আমজাদ আলী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: দোয়া কবুল হওয়ার সময়ের ব্যাপারে দুইটি নির্ভরযোগ্য অভিমত রয়েছে: (১) ইমাম খোৎবার জন্য বসার পর থেকে নামায শেষ করা পর্যন্ত। (২) জুমার নামাযের পরবর্তী সময়। (বাহরে শরীয়াত, ১ম খন্ড৭৫৪ পৃষ্ঠা)
দোয়া কবুল হওয়ার সময় কোনটি?
প্রখ্যাত মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত, মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “প্রত্যেক রাতে দোয়া কবুল হওয়ার সময় আসে কিন্তু দিনের মধ্যে শুধুমাত্র জুমার দিনই দোয়া কবুল হওয়ার সময়। তবে নিশ্চিতভাবে জানা নেই যে, জুমার দিন কখন দোয়া কবুল হয়?নির্ভরযোগ্য মতানুসারে দোয়া কবুল হওয়ার সে সময়টা দুই খোৎবার মধ্যবর্তী সময়ে কিংবা মাগরিবের কিছু পূর্বে। অন্য আরেক হাদীস প্রসঙ্গে মুফতী সাহেব বলেন: দোয়া কবুল হওয়ার সময়ের ব্যাপারে ৪০টি অভিমত রয়েছে। তন্মধ্যে ২টি অভিমত সব চাইতে মজবুত। এদের একটি হলো দুই খোৎবার মধ্যবর্তী সময় আর অপরটি হলো সূর্যাস্তের সময়। (মীরআত, ২য় খন্ড, ৩১৯-৩২০ পৃষ্ঠা)
কাহিনী
হযরত সায়্যিদাতুনা ফাতিমাতুয যাহরা رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہَا তখন (সূর্যাস্তের সময়) আপন কক্ষে অবস্থান করতেন এবং খাদিমা ফিদ্দাহ্ رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہَا কে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখতেন। যখনই সূর্য অস্ত যাওয়া শুরু করতো তখন খাদিমা এসে তাঁকে সূর্য অস্ত যাওয়ার কথা বলত, তখন তিনি হাত উঠিয়ে দোয়া করতেন। (প্রাগুক্ত, ৩২০ পৃষ্ঠা) ঐ সময় (সামগ্রিক) প্রার্থনা মূলক দোয়া করাই উত্তম। যেমন-কুরআনী দোয়া:
رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنْیَا حَسَنَۃً وَّ فِی الْاٰخِرَۃِ حَسَنَۃً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ ﴿۲۰۱﴾
(পারা-২, সূরা-বাকারা, আয়াত-২০১) কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: হে আমাদের প্রতিপালক!আমাদেরকে দুনিয়ায় কল্যাণ দাও এবং আখিরাতেও কল্যাণ দাও। আর আমাদেরকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা করো। (মীরআত, ২য় খন্ড, ৩২৫ পৃষ্ঠা) দোয়ার নিয়্যতে দরূদ শরীফও পড়া যায়। কেননা দরূদ শরীফও একটি অতি উত্তম দোয়া। (মিরআত, ২য় খন্ড, ৩২৫ পৃষ্ঠা) সর্বোত্তম এটাই যে, দুই খোৎবার মাঝখানে হাত উঠানো ব্যতীত মুখে উচ্চারণ করা ছাড়া মনে মনে দোয়া করা।
--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত নামায বিষয়ের এনসাইক্লোপিডিয়া ও মাসাইল সম্পর্কিত “নামাযের আহকাম” নামক কিতাবের ১৫৯-১৬৭ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। কিতাবটি নিজে কিনুন, অন্যকে উপহার দিন।
যারা মোবাইলে (পিডিএফ) কিতাবটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন অথবা প্লে স্টোর থেকে এই কিতাবের অ্যাপ ফ্রি ইন্সটল করুন
ইসলামীক বাংলা বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন
ফয়যানে জুমা বিষয়ে বাকী পর্ব- দ্বিতীয় পর্ব, তৃতীয় পর্ব
মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন