আপডেট
সম্পূর্ণ বিজ্ঞাপণমুক্ত সাইট। শিখুন-জানুন বিরক্তিছাড়া।
বাংলা ভাষায় অলাভজনক বৃহত্তম ইসলামিক ওয়েবসাইট বানানোর প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছে ইসলামী জীবন টিম। আসছে মোবাইল অ্যাপলিকেশন... সাইট www.islamijibon.net

শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০

বসন্তমেলা ও ঘুড়ি উড়ানো


যখনই শীত বিদায় নেয় এবং ফেব্রুয়ারীতে বসন্ত কালের আগমন ঘটে তখন বাংলাদেশে (মূল ঘটনা পাকিস্তানের) অনেক ছোট-বড় শহরে ‘বসন্ত’ নামে নাচ-গানের আসরের ব্যবস্থা করা হয়। মদ ইত্যাদি পান করা হয়, আর ঘুড়ি ওড়ানোর মেলা সাজানো হয়। যেটাতে আমাদের অসংখ্য মুসলমান ভাইয়েরা নফস ও শয়তানের প্ররোচনায় এসে বেপরোয়া ভাবে গুনাহ করে থাকে এবং কোটি কোটি টাকা বাতাসে উড়িয়ে দেয়। সাধারণত এই ধারাবাহিকতা মার্চের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

বসন্ত মেলা এক রাসূল বিদ্বেষীর স্মৃতিচারণ!

আমার সহজ সরল ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা কি জানেন? ‘বসন্ত মেলার’ শুরু কেন ও কিভাবে হয়েছে? মনযোগ সহকারে শুনুন; এটি এক রাসূল বিদ্বেষীর স্মৃতিচারণ। জী হ্যাঁ! ভারত বিভাজনের অনেক দিন পূর্বে সিয়ালকোটের এক অমুসলিম আমাদের প্রিয় আক্বা, মক্কী মাদানী মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এবং তাঁর শাহজাদী সায়্যিদাতুনা বিবি ফাতেমা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا এর মহান শানে আল্লাহর পানাহ! বেয়াদবী করে।
আশিকানে রাসূল ব্যাকুল হয়ে উঠলো। এটাই তো স্বাভাবিক। অপরাধীদের গ্রেফতার করা হলো। তাকে মারকাযুল আউলিয়া লাহোরে নিয়ে এসে কোর্টে অপরাধীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে মৃত্যুদন্ডের আদেশ শুনিয়ে দেওয়া হয়। আর পরে সেই রাসূল বিদ্বেষীর উপর সাজা কার্যকরও করা হয়েছিলো। তার মৃত্যুতে অমুসলিমদের মাঝে শোকের আভাস দেখা গেলো! তাদের এক গুরু সেই রাসূল বিদ্বেষীর ‘মৃত্যুর দিনটি'কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বসন্ত কালে এসে ‘বসন্ত মেলার’ প্রচলন শুরু করে। আর প্রতি বৎসর এই ‘বসন্ত মেলা চলতে থাকে। শত কোটি আফসোস! নফস ও শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে কতিপয় মুসলমানও এদিকে ধাবিত হয়ে গেছে। বসন্ত মেলা প্রচলনকারী ব্যক্তি তো কবেই মরে মাটির সাথে মিশে গেছে, কিন্তু নিজের অবধারিত ও নিশ্চিত মৃত্যুর থেকে উদাসীন মুসলমানেরা এই মেলা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে নিজেরাই উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। অবশেষে তারা সকলেও মৃত্যুর ঘাট পার হয়ে অন্ধকার কবরে চলে গেছে। কিন্তু আফসোস! শতকোটি আফসোস! বসন্ত মেলার গুনাহে ভরা সেই ধারাবাহিকতা এখনো আমাদের মুসলমান ভাইদের মাঝে বরাবরই তার ধ্বংসাত্মক দিকগুলো সহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। ঘুড়ি উড়ানো, প্যাঁচ মারা, ঘুড়ি ও দড়ি কুঁড়ানো ও বিক্রি করার ব্যাপারে শরয়ী বিধান “বসন্ত মেলায়” ঘুড়ি ও দড়ি ক্রয়-বিক্রয় করা, উড়ানো, প্যাঁচ খেলা এবং কেটে যাওয়া ঘুড়ি কুঁড়িয়ে আনা এসব কিছু মৌলিক বিবেচনায় অবশ্যই আল্লাহ্ তায়ালা ও তাঁর রাসূল صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে সন্তুষ্টকারী কাজ নয়। ফতোওয়ায়ে রযবীয়ার ২৪তম খন্ডের ৬৬০ পৃষ্ঠায় বণির্ত রয়েছে: ঘুড়ি কুঁড়ানো হারাম। হ্যাঁ,স্বয়ং এসে যদি কারো সামনে পড়ে, তবে সেটি ছিঁড়ে ফেলবে। আর মালিক সম্পর্কে জানা না থাকলে তবে দড়িগুলো কোন মিসকিনকে দিয়ে দিবে, সে যেন কোন জায়েয কাজে ব্যবহার করতে পারে। নিজে মিসকিন হলে নিজে ব্যবহার করতে পারবে। অতঃপর যদি জানা যায় যে, দড়িগুলো অমুক মুসলমানের, আর সে যদি সেই মিসকিনটিকে দান করা কিংবা ব্যবহার করাতে সন্তুষ্ট না থাকে, তাহলে তাকে দিয়ে দিবে। আর ঘুড়ির জন্য মূলত: কোন বদলা নেই। আ’লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ আরো লিখেন: ঘুড়ি উড়ানো নিষিদ্ধ। আর ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা গুনাহ। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৪তম খন্ড, ৬৬০ পৃষ্ঠা) আর ফতোওয়ায়ে রযবীয়ার ২৪তম খন্ডের ৬৫৯ পৃষ্ঠায় আ’লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ আরো লিখেন: ঘুড়ি উড়ানোর দ্বারা সময় ও সম্পদের অপচয় হয়ে থাকে। এটিও গুনাহ আর গুনাহের যন্ত্র ঘুড়ি, দড়ি ইত্যাদির ক্রয়- বিক্রয় করাও নিষিদ্ধ। (প্রাগুক্ত, ৬৫৯)

প্রশ্ন: বর্তমানে ঘুড়ির দড়ি কুঁড়িয়ে আনার একটি প্রচলন হয়ে গেছে। তাই এই রীতি কি সেটির অনুমতির ইঙ্গিত বহন করে?

উত্তর: অনুমতি মনে করা হবে না। প্রত্যেক সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি বৈধতার ইঙ্গিত বহন করে না। মালিক এ কারণেই নিশ্চুপ থাকে যে, ঘুড়ি বা দড়ি কুঁড়ানো একটি সাধারণ রীতিতে পরিণত হতে চলেছে। কিন্তু এভাবে সম্পদ হাত ছাড়া হওয়া কার মন মেনে নেবে! সেও সুযোগ পেলে দৌঁড়ে গিয়ে নিজের কাটা ঘুড়ি কুঁড়িয়ে নেবে। কাউকে নিজের ঘুড়ি কুঁড়াতে দেবে না। কখনো কখনো নিজের কাটা ঘুড়ি কাছে কোথাও পড়লে নিজেই দৌঁড়ে গিয়ে সকলের আগে নিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। তাছাড়া ঘুড়ি কাটা পড়ার সাথে সাথে নিজের দড়ি তাড়াহুড়ো করে তো এ কারণেই টানতে থাকে যে, কুঁড়িয়ে নেয়া লোকদের হাতে যেন না পড়ে অথবা লুটকারীদের হাত থেকে যতটুকু বাঁচানো যায় বাঁচানোর চেষ্টা করা। ব্যাপারটি এভাবে বুঝুন, কোন ডাকাত যদি কাউকে লুট করছে, আর লুণ্ঠিত ব্যক্তি ভিতরের পকেটে গোপন কোন টাকা-কড়ি ইত্যাদি লুকিয়ে রেখে বা অন্য কোন পন্থায় তা রক্ষা করার চেষ্টা করে। তার অর্থ এই নয় যে, অবশিষ্ট সম্পদ লুট করার উপর সে সন্তুষ্ট।

ঘুড়ি উড়ানোর দুনিয়াবী ও আর্থিক ক্ষতি

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আ’লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর ফতোয়াতে ঘুড়ি ফেটে দেওয়ার যে আলোচনা রয়েছে, এটি সেখানের জন্য যেখানে ঝগড়া হবার আশংকা নেই। আর যদি ঝগড়া-বিবাদ, ঘৃনা ও বিদ্বেষ ইত্যাদি সৃষ্টি হওয়ার আশংকা থাকে, তাহলে ফিতনা থেকে বাঁচার চেষ্টা করবে। মোট কথা, যারা ঘুড়ি উড়ায় এমন ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে মাদানী অনুরোধ: এ কাজ থেকে তাওবা করে আপন প্রতিপালক আল্লাহ্ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করুন। ঘুড়ি উড়ানোতে আখিরাতের ক্ষতি তো রয়েছেই, এতে দুনিয়াবী ক্ষেত্রেও ক্ষতির মাধ্যম রয়েছে। অনেক ঘুড়ি উড্ডয়নকারী (ধাতব) দড়ি ব্যবহার করে থাকে। এই ধাতব দড়িগুলো কখনো কখনো কাটা খেয়ে বৈদ্যুতিক তারের উপর গিয়ে পড়ে। এতে বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার সহ আরো অন্যান্য যন্ত্রাংশের ক্ষতি সাধিত হয় এবং এক দিনেই কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টার জন্য গোটা এলাকা অন্ধকারে ডুবে থাকে। হাসপাতালগুলোতে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে বিঘ্ন ঘটে। মোটর না চলার কারণে পানি উঠা বন্ধ হয়ে যায়। বার বার বিদ্যুতের আসা-যাওয়াতে ঘরোয়া বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র সহ কারখানা ইত্যাদির উৎপাদনের কাজে কত যে ক্ষতি হয় তা তো বলে শেষ করা যাবে না। মোটকথা, এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৩ সালের ঘুড়ির ধাতব দড়ির কারণে কেবল মারকাযুল আউলিয়া লাহোরেই বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লেস্কো-কে (Lesco) আড়াই বিলিয়ন টাকার ক্ষতি পোষাতে হয়েছিলো।

ঘুড়ি উড়ানোতে প্রাণের ক্ষয়-ক্ষতি

ঘুড়ি উড়ানোর কারণে আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতির পাশাপাশি প্রাণেরও ক্ষতি হয়ে থাকে। ধাতব দড়ি যদি বিদ্যুতের তারের সাথে লাগে তাহলে ঘুড়ি উড্ডয়নকারী বা ঘুড়ি কুঁড়িয়ে নেয় এমন ব্যক্তি অনেক সময় মৃত্যু মুখে পতিত হয়। এ সম্পর্কে সামান্য পরিবর্তন সহকারে পত্রিকার কিছু হৃদয়বিদারক সংবাদ লক্ষ্য করুন।
❃ ২০০৪ সালে মারকাযুল আউলিয়া লাহোরের “আবদুল করিম সড়কের” উপর নিজের ঘরের ছাদে দাঁড়ানো এক (ঘুড়ি) বিক্রেতা কাটা একটি ঘুড়ি কুঁড়িয়ে নেবার জন্য ধাতব তারের এক মাথা হাতে ধরেছিল এমন সময় অপর প্রান্তে বাঁধা ঘুড়িটি হাই ভোল্টেজের তারের উপর গিয়ে পড়ে। ফলে সেই (ঘুড়ি) বিক্রেতা বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়।
❃ অনুরূপ লাহোরেই বিশ বছরের এক যুবক ধাতব দড়ির ঘুড়ি কুঁড়াতে গিয়ে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়।
❃ তাজপুরা স্কিমে এগার বছরের ছেলের মা তার একটিমাত্র সন্ধানের জন্য ঈদের কাপড় কিনতে যায়। আর এদিকে ছেলে ছাদে খেলা করতে থাকে। এমন সময় ধাতব দড়ির একটি কর্তিত ঘুড়ি তার গায়ে এসে পড়ে, আর এতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে সে মারা যায়।
❃ মারকাযুল আউলিয়া লাহোরের বাদামীবাগের ৩০ বৎসরের এক ব্যক্তি ধাতব দড়ির শিকার হয়। লোকটি ঈদের আগের দিন রবিবারে ধাতব দড়ি বিশিষ্ট ঘুড়ির ঝুলন্ত দড়ির সাথে লেগে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। (বিবিসি উর্দু নিউজ অন লাইন, ফেব্রুয়ারী, ২০০৪ইং)

ঘুড়ির কেমিক্যাল সম্পন্ন দড়ির ধ্বংসলীলা

কেমিক্যাল সম্পন্ন দড়ি ব্যবহারে ঘুড়ি উড্ডয়নকারীদের কেবল হাতের আঙ্গুলই আঘাত প্রাপ্ত হয় না, বরং ঘুড়ি কাটার পর এই দড়ি যখন কোন মোটর সাইকেল আরোহী কিংবা মোটর সাইকেলের ট্যাংকে বসা শিশুর গলার পাশ দিয়ে অতিক্রম করে তখন ধারালো চুরির ন্যায় মুহূর্তের মধ্যে তাকে জবাই করে ফেলে। বিভিন্ন সংবাদপত্র থেকে নেওয়া এই ধরণের নয়টি শিক্ষণীয় ঘটনা কিছু পরিবর্তন সহকারে লক্ষ্য করুন।
❃ লাহোর: ১৪ বৎসরের এক শিক্ষার্থী নাদীম হোসাইন সন্ধ্যার সময় টিউশন পড়ে মোটর সাইকেলে করে ঘরে ফিরছিল। কাটা ঘুড়ির কেমিক্যাল সম্পন্ন দড়ি তার ঘাঁড়ে চড়ে যাওয়ার কারণে তার গলার শিরা-উপশিরা কেটে যায়। সাহায্যের জন্য কেউ ঘটনাস্থলে আসার আগেই ‘কলেমা চকের’ নিকটে সে মারা যায়। লাশ যখন ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়, শোকের মাতম নেমে আসে। সে মেট্রিক পরীক্ষার্থী ছিলো। তার বোনেরা যারা তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ব্যাপারে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলো, তার বইপত্রগুলো হাতে নিয়ে ব্যাকুল হয়ে দুই চোখের পানি ঝরাতে থাকে। তার মধ্য বয়সী মা পুত্রের লাশটি বুকের সাথে জড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ যাবৎ কান্না করতে থাকেন।
❃ মাক্ষণপুরা (মারকাযুল আউলিয়া লাহোর) এর এক অধিবাসী তার পরিবার এবং তিন বৎসরের পুত্র ফাহিমকে সাথে নিয়ে মোটর সাইকেলে করে শশুর বাড়ি যাচ্ছিলেন। মুঝাঙ্গ এসে ফাহিম রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেলো। স্বামী-স্ত্রী ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠেন। যখন গভীরভাবে দেখলেন তখন বুঝতে পারলেন যে, দড়িতে বাচ্চার গলার শিরা-উপশিরা কেটে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিন বৎসরের শিশু ফাহিম পিতার কোলে ছটফট করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। (নাওয়ায়ে ওয়াক্ত)
❃ শাদবাগের আলী নামের এক যুবক মোটর সাইকেলে করে যাচ্ছিল। তার গলায় ঘুড়ির ধাতব দড়ি আটকে যায়। (জঙ্গ) ✽ফিরোজপুর রোডে সিকান্দার আকরাম নামের এক মোটর সাইকেল আরোহীর ঘাঁড় দড়ির আঘাতে কেটে যায়। (নাওয়ায়ে ওয়াক্ত) ✽(মারকাযুল আউলিয়া) লাহোরের এলাকা শাদবাগের এক যুবক মুহাম্মদ আলী মোটর সাইকেলে করে যাচ্ছিল, হঠাৎ এক কাটা ঘুড়ির কাঁচ মিশ্রিত দড়িতে তার ঘাঁড় কেটে যায়। সে রাস্তার পাশে ছটফট করতে করতে মারা যায়।
❃ ২০০৬ এর ১৪ই আগষ্ট সোমবার দিন বিকালে তিন বৎসরের খাদীজা ইউসুফ তার পিতা মুহাম্মদ ইউসুফের সাথে মোটর সাইকেলে করে আল্লামা ইকবাল রোড দিয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় ঘুড়ির দড়ি তার গলায় লাগার কারণে গলার শিরা-উপশিরা কেটে গেলো এবং রক্ত প্রবাহিত হতে লাগলো। বাবা তাকে শালামার হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। কন্যা সন্তানটি ইসলামীয়া পার্কে বসবাস করত। (বিবিসি উর্দু, ১৪আগষ্ট, ২০০৬ইং)
❃ (মারকাযুল আউলিয়া) লাহোর: আন্দোরোন শহরের এক অধিবাসী তার দেড় বৎসরের শিশু আবদুর রহমানকে মোটর সাইকেলে বসিয়ে কোথাও যাচ্ছিলো। হঠাৎ ঘুড়ির দড়ি তার বাচ্চার ঘাঁড়ে এসে পড়ে। বাচ্চার বাবার বক্তব্য হলো; আমি হঠাৎ বাচ্চার কান্না শুনতে পেলাম। সে আমার কোলে ছটফট করতে থাকে। তার ঘাঁড় রক্তে ভরে গেলো। আমি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু তাকে প্রাণে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। (বিবিসি, উর্দু, ৫জুন, ২০০৬ইং)
❃ ২০০৬ সালের রোববার (মারকাযুল আউলিয়া) লাহোরের ফিরোজপুর রোডের ইচরা সড়কে কাটা ঘুড়ির দড়ি দশ বৎসরের মেয়ে আকসার গলায় পেঁচিয়ে যায়। যে তার বাবার সাথে মোটর-সাইকেলে সামনের দিকে বসা ছিলো। আকসার বাবা রক্তাক্ত মেয়েকে হাসপাতাল নিয়ে যায়। কিন্তু সে প্রাণে রক্ষা পায়নি। কারণ, ডাক্তারদের ভাষ্য মতে, তার গলার শিরা-উপশিরা ভিতর থেকে কেটে গেছে। অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে। আকসা ছিলো তার মা-বাবার একমাত্র কন্যা। (বিবিসি উর্দু)
❃ ২০১৩ সালের জানুয়ারীতে করাচীর মধ্যবর্তী এলাকা নাজিমাবাদে সাত বৎসরের কন্যা পিতার সাথে মোটর সাইকেলে করে যাচ্ছিলো। এমন সময় ঘুড়ির দড়ি তার গলায় আটকে যায়, যার ফলে সে মারাত্মকভাবে আহত হয়। ভয়ানক পরিস্থিথিতে মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অধিক রক্তক্ষরণের কারণে সে মারা যায়। (জঙ্গ অনলাইন পত্রিকা, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৩ইং)

ঘুড়ি কুঁড়ানোর সময় সংগঠিত হওয়া বিপদ সমূহ

এমনিভাবে অল্পদামের ঘুড়ি কুঁড়াতে গিয়ে ছেলেরা হাতে লাঠি আর বাঁশ নিয়ে রাস্তায় পাগলের মতো ছুটাছুটি করে। যখনি কোন ঘুড়ি কাটা পড়তে দেখে, তখনই তাদের মাঝে এক ধরণের পাগলামো ভাবের সৃষ্টি হয়। গতিসম্পন্ন ট্রাফিকের পরোয়া না করে কাটা ঘুড়ির পেছনে দৌঁড়ায়। এতে অনেক বাচ্চা ও যুবক গাড়ির আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হয়। অনেক সময় গাড়ি চাপায়ও মারা যায়। অনেকে এই ঘুড়ি ধরতে গিয়ে বহুতলা ভবনের ছাদের উপর থেকে নিচে পড়ে যায় এবং হাত পা ভেঙ্গে ফেলে। আবার অনেকে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। যেমনটি সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুসারে।
❃ ২০০৪ সালের ২৭ জানুয়ারীতে বিয়েতে যাওয়ার জন্য আপন পিতার সাথে রাওয়ালপিন্ডী থেকে লাহোর গামী আট বৎসরের এক ছেলে লোহার রড দিয়ে বিদ্যুতের তারের সাথে জড়ানো ঘুড়ি নিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়।
❃ ২০০৬ সালে চৌহঙ্গের অধিবাসী মেহনত কশের সাত বৎসরের ছেলে, যে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র ছিলো। ঘুড়ির প্রতি হাত বাড়ায়, এমন সময় সে ছাদ থেকে পড়ে যায় এবং বড় ধরণের আঘাত পায়, আর হাসপাতালেই মারা যায়। যখন লাশ ঘরে আনা হয়, তখন তার মা বেহুশ হয়ে যায়।
❃ নওশহরা রোডে ১৫ বৎসর বয়সের কিশোর ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে ঘরের ছাদ থেকে পড়ে যায় এবং ঐ স্থানেই মারা যায়।
❃ ২০০৬ সালের ২২শে মার্চ মারকাযুল আউলিয়া লাহোরে এক বালক ঘুড়ি কুঁড়াতে গিয়ে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মারা যায়। (বিবিসি উর্দু অনলাইন)

একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা

জাহলামে (পাঞ্জাব) অবস্থিত একটি ঘরের ছাদ থেকে বিদ্যুতের তার দুই-তিন ফিট দূরত্বে ছিলো। সেই তারে একটি ঘুড়ি আটকে গিয়েছিলো। দুই বালক ছাদের উপরের দেওয়ালে দাঁড়িয়ে ঘুড়িটি নেওয়ার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু তাদের হাত ছিলো ছোট, দূরত্ব ছিলো বেশি। উভয়ই পরামর্শ করে- দুই জনের মধ্যে ছোট বালকটি বড়টির পা মজবুত ভাবে চেপে ধরলো। আর বড় বালকটি সামনের দিকে এগিয়ে দেওয়ালে ঝুলে গেলো। যখনি ঘুড়িটি ধরার জন্য হাত বাড়ালো, তখন তার হাত বিদ্যুতের তারের সাথে লাগলো, এক আলো বিচ্ছুরিত হলো। তারপর মাংস ঝলসে যাওয়ার গন্ধ আসতে লাগল। ছোট বালকটি এক ধাক্কায় ছিটকে পড়ে গেলো, তারপর উঠে দাঁড়ালো আর দ্রুত নিচের দিকে চলে গেলো। যতটুকু সময়ে ঘরের লোকজন উপরে পৌঁছে ততক্ষণে তারে ঝুলন্ত বালকটি জ্বলে কাবাব হয়ে যায়।

৬ বছরে ঘুড়ি উড়ানোর দ্বারা ৮২৫টি মৃত্যু

এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০০ থেকে ২০০৬ সাল পযন্ত মোট ছয় বৎসরে ৮২৫জন লোক এই ঘুড়ি উড়ানোর কারণে মৃত্যু বরণ করেছে, শত শত লোক আহত হয়েছে এবং অনেকেই সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছে। ২০০৮ সালের ১৭ই মার্চ এক সংবাদপত্রে এই দুঃখজনক সংবাদ ছাপানো হয় যে: কামুনকিতে ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে ৯ বৎসরের এক বালক ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়। এ ধরণের অনেক ঘটনার কারণে কয়েক বছর যাবত বসন্ত মেলা ও ঘুড়ি উড়ানো নিয়ে নির্দ্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, যা বর্তমানেও কার্যকর রয়েছে। ২০১৩ সালে নীতিমালা প্রণয়ন হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন শহরে সংগঠিত হওয়া মৃত্যু সমূহ:-
❃ ২০১৩ সালে নীতিমালা প্রণয়ন করা সত্ত্বেও কতিপয় শহরে বসন্ত মেলা উদযাপন করা হয়েছে। সংবাদ পত্রের খবর অনুসারে সরকারি বিধি-নিষেধ থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন এলাকায় ঘুড়ি উড়ানোর সময় ছাদ থেকে পড়ার, ধাতব দড়ি লাগানো এবং হাওয়ায়ী ফায়ারিং-এ ৩জন বালকের মৃত্যু এবং একজন বালিকাসহ ৪৪ জন মানুষ গুরুতর আহত হয়।
❃ রাওয়ালপিন্ডি শহরে জুমার দিন বসন্ত মেলায় ক্যামিকেলের দড়ি, হাওয়ায়ী ফায়ারিং, দাঙ্গা-হাঙ্গামা এবং ছাদ থেকে পড়ে ৩জন বালকের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় ৪০ জন ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়েছে।
❃ এক বালিকার মাথায় গুলি লেগে বাঁচে-মরে এমন দশায় উপণীত হয়।
❃ ধাতব দড়ি বৈদ্যুতিক তারে লেগে এক বালক মৃত্যু বরণ করেছে। অনেক ঘরে মাতমের ছায়া নেমে এসেছে। এই ধারাবাহিকতা সারা দিন সারা রাত অব্যাহত ছিলো। পুরো শহর হাওয়ায়ী ফায়ারিং-এ গর্জে উঠেছিলো।
❃ (মারকাযুল আউলিয়া) লাহোরে শাদবাগ এলাকায় ১৮ বৎসরের কিশোর ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়।
❃ এক যুবক ছাদে ঘুড়ি উড়াচ্ছিল। এমন সময় পা পিছলে যাওয়ার কারণে নিচে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়। তার অবস্থা ভয়াবহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
❃ কামুঙ্গিতে ধাতব দড়ির সাথে জড়িয়ে ছোট বয়সের শিশু সহ তিন ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়।
❃ ঘুড়ি উড়ানোর ফলে গিল্লামুন্ডির সাত বৎসরের এক বাচ্চা, রাসূল নগরের এক যুবক, দরবেশপুরার এক যুবক, এবং পুরানাবাদের এক যুবক গুরুতর ভাবে আহত হয়।
❃ ঘুড়ি উড়াবার সময় রাওয়াল পিন্ডিতে হাওয়ায়ী ফায়ারিংএ ১২ বৎসরের বালিকা গুরুতর ভাবে আহত হয়।
❃ এদিকে গুজরা ওয়ালায় বিধি-নিষেধ থাকা সত্ত্বেও ধাতব দড়ি গলায় ও মুখের উপর দিয়ে ঘষে যাওয়ার কারণে ছোট বাচ্চা সহ দুই জন ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়।
❃ স্যাটেলাইট টাউনের আদিল তার তিন বৎসরের সন্তানকে সাথে নিয়ে মোটর সাইকেলে করে যাচ্ছিলো। নওশাহরা রোডের নিকটে শিশুটির গলায় হঠাৎ করে ঘুড়ির ধাতব দড়ি জড়িয়ে যায়, যার ফলে শিশুটি গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয়।
❃ তাছাড়া শাহীনাবাদে মোটর সাইকেলে করে যাওয়ার সময় জনৈক আবদুল লতিফের মুখে ঘুড়ির ধাতব দড়ি জড়িয়ে যায়। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
❃ সরকারি বিধি-নিষেধ থাকা সত্ত্বেও বিগত দিনে শহরের লোকেরা বিভিন্ন এলাকায় ঘুড়ি উড়িয়ে সরকারি বিধি-নিষেধকে বাতাসে উড়িয়ে দিলো।
❃ রাওয়াল পিন্ডিতে পুলিশ ঘুড়ি উড়ানো বিরোধী ক্র্যাকডাউনের সময় ৩০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে ঘুড়ি ও দড়িগুলো বাজেয়াপ্ত করে নেয়। যেগুলোতে কেমিক্যাল সম্পন্ন দড়িও ছিলো। (নাওয়ায়ে ওয়াক্ত অন লাইন, ৯ মার্চ, ২০১৩, ঈষৎ পরিবর্তিত)

হাওয়ায়ী ফায়ারিং এর বিপদ

বসন্ত মেলায় কিছুক্ষণ পরপর হাওয়ায়ী ফায়ারিং এর ধারাবাহিকতাও চলতে থাকে। যা দ্বারা মানসিক রোগী, ছোট শিশু এবং ঘরের মহিলারা ঘাবড়ে যায়। বন্দুক থেকে বের হওয়া গুলি কখনো কখনো কারো গায়ে গিয়ে বিদ্ধ হয়। এর দ্বারা তারা আহত হয়। কখনো কখনো মারাও যায়। অতঃপর কোন সংবাদপত্রের সংবাদ মতে, মারকাযুল আউলিয়া লাহোরে ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বসন্ত মেলায় তিন শিশু গুলি বিদ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করে। (বিবিসি উর্দু অনলাইন, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০০৭)

বসন্ত মেলার বিভিন্ন ক্ষতি

ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি ভালবাসা পোষণকারী প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ্ তায়ালা আপনাদের উপর দয়া করুক। নিঃসন্দেহে এই ঘটনাগুলো নিতান্ত আফসোসের বিষয়। বসন্ত মেলার কারণে অনেক ঘরে শোকের মাতম নেমে আসে, আহতদের দ্বারা হাসপাতাল ভরে যায়, চোখের পলকেই মোটর সাইকেল আরোহীদের গলা কেটে যায়, কত কিশোর আর বালক বিদ্যুতের তারে এবং খুঁটিতে ঝুলে প্রা ণ হারায়, ঘরের ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে বিকলাঙ্গ হওয়া লোকের সংখ্যা তো অগণিত।শত কোটি আফসোস, সম্মিলিতভাবে আল্লাহ্ তায়ালার নাফরমানি করে নিজেকে আল্লাহর গযব ও আযাবের অধিকারী করে নেওয়া হচ্ছে, পরস্পরের মাঝে ঝগড়া-বিবাদ হয়ে থাকে, প্রতিবেশীদের জীবন দুর্বিসহ করা হয়, নামায আদায় করা হয় না, সম্পদ অনর্থকভাবে খরচ করা হয়, নিজের মূল্যবান সময় গুনাহের কাজে ব্যয় করা হয়, বসন্ত মেলা এ ধরণের অনেক ক্ষতি ছড়িয়ে থাকে। প্রস্তুত কোন আশিকে রাসূল কি বসন্ত মেলা সমর্থন করতে পারে? না, না, কখনই না। বাদ্যযন্ত্র বাজানো, ঘুড়ি উড়ানো ইত্যাদি অনর্থক খেলতামাশা হিসাবে গণ্য। আর পবিত্র কুরআনে এগুলোর ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে। যেমনিভাবে ২১ পারায় সূরা লোকমানের ৬ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে:
وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّشۡتَرِیۡ لَہۡوَ الۡحَدِیۡثِ لِیُضِلَّ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ٭ۖ وَّ یَتَّخِذَهَا هُزُوًا ؕ اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ عَذَابٌ  مُّہِیۡنٌ ﴿۶﴾ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং কিছু লোক খেলাধূলার কতাবার্তা ক্রয় করে। যেন আল্লাহর পথ এবং সেটাকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ রূপে লাঞ্ছনার শাস্তি রয়েছে।

সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা মাওলানা সৈয়্যদ মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এই আয়াত প্রসঙ্গে লিখেন: লাহ অর্থাৎ খেলতামাশা প্রত্যেক ঐ বাতিল বিষয়াদিকে বলা হয়, যা মানুষকে নেকী এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকে দূরে সরিয়ে উদাসীনতায় মগ্ন রাখে। (খাযায়িনুল ইরফান) প্রসিদ্ধ মুফাস্সীর, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এই আয়াত প্রসঙ্গে বলেন: জানা গেলো; বাজনা, তাস, মদ বরং সব ধরণের খেলতামাশার জিনিসপত্র বিক্রি করাও নিষেধ এবং ক্রয় করাও নাজায়েয। কেননা, এই আয়াতটি সেসব ক্রয়-বিক্রয়কারীদের উদ্দেশ্যেই নাযিল হয়েছে। অনুরূপ নাজায়েয উপন্যাস, নোংরা পুস্তিকা, সিনেমার টিকেট, তামাশা ইত্যাদি সব কিছুর জিনিসপত্র বেচাকেনা নিষেধ। এই সবগুলোই লাহবুল হাদীস অর্থাৎ খেলতামাশার অন্তর্ভূক্ত। (নূরুল ইরফান)

গান-বাজনার কান ফাটানো শব্দ

বসন্ত মেলায় রাত থেকেই কান ফাটানো শব্দে নতুন সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে বড় বড় স্পিকার ব্যবহার করে অসঙ্গত সঙ্গীত বাজানো হয়ে থাকে এবং অনর্থক বসন্তের গান দিয়ে মহল্লা ও বাজার গরম করে তোলে। বিশেষ করে ছোট ছোট শিশু, বৃদ্ধ লোক, বিছানায় শায়িত রোগীদের রাতের ঘুম এবং দিনের প্রশ্রান্তি নষ্ট করে দেওয়া হয়। গান শুনা এবং শুনানো উভয়টি হারাম এবং জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মত কাজ। যেমনিভাবে- হযরত সায়্যিদুনা আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী ই رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ লিখেছেন: (শরীর হেলিয়ে) নাচ করা, কৌতুক করা, হাত তালি দেয়া, (তাছাড়া সঙ্গীতের সরঞ্জামাদি যেমন) সেতারার তার বাজানো, তবলা, সানাই, বেহালা, বাঁশী, ঝুমুর, শিঙ্গা ইত্যাদি বাজানো মাকরূহে তাহরীমি (অর্থাৎ হারামের কাছাকাছি)। কেননা, এ সবগুলো কাফেরদের রীতি-নীতি। বাঁশি সহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র শুনাও হারাম। যদি অনিচ্ছাকৃত শুনে নেয়, তবে তা অপারগতা হিসেবে গণ্য হবে। (রদ্দুল মুহতার, ৯ম খন্ড, ৬৫১ পৃষ্ঠা) বর্ণিত পরিস্থিতে রোগীদেরও কষ্ট হয়ে থাকে আর যদি জানা সত্ত্বেও কোন রোগীকে গান বাজানোর মাধ্যমে কষ্ট দিয়ে থাকে, তাহলে সেটিও গুনাহ্, হারাম এবং জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মত কাজ। আমার আক্বা, আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত মুজাদ্দিদে দীন ও মিল্লাত পরওয়ানায়ে শময়ে রিসালাত মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ ফতোওয়ায়ে রযবীয়া শরীফের ২৪তম খন্ডের ৩৪২ পৃষ্ঠায় তাবারানী শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেন: সুলতানে দো জাহান, মাহবুবে রহমান, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: "' অর্থাৎ- যে ব্যক্তি (শরীয়াতের অনুমতি ব্যতীত) কোন মুসলমানকে কষ্ট দিলো, সে আমাকে কষ্ট দিলো। আর যে আমাকে কষ্ট দিলো, সে ব্যক্তি আল্লাহ্ তায়ালাকে কষ্ট দিলো।” (মুজাম আওসত, ২য় খন্ড, ৩৮৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৬০) আল্লাহ্ তায়ালা ও তাঁর প্রিয় রাসূল صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে কষ্ট দেওয়া সম্পর্কে ২২ পারার সূরা আহযাবের ৫৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে:
اِنَّ  الَّذِیْنَ یُؤْذُوْنَ اللّٰهَ وَ  رَسُوْلَهٗ لَعَنَهُمُ  اللّٰهُ فِی الدُّنْیَا وَ الْاٰخِرَةِ وَ اَعَدَّ لَهُمْ  عَذَابًا  مُّهِیْنًا (۵۷)
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: নিশ্চয়ই যারা কষ্ট দেয় আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে, তাদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত দুনিয়া ও আখিরাতে এবং আল্লাহ্ তাদের জন্য লাঞ্ছনার শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।

মসজিদের নিকটে ট্রেলারের উপর হৈচৈ 

বসন্ত মেলার সময়গুলোতে মারকাযুল আউলিয়া লাহোরে এক বৎসর এক ব্যবসায়ী কোম্পানী শহরের বিভিন্ন জায়গায় ‘ট্রলার’ দাঁড় করিয়ে দেয়। যেটার উপর ছেলে-মেয়েরা গানে মগ্ন হয়ে নিলর্জ্জভাবে নাচতে থাকে। মডেল টাউনেও একই কোম্পানীর ট্রাক এক মসজিদের প্রায় ২০ ফুট দূরত্বে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। আযান ও নামাযের সময়েও এসব লোকেরা নাচে গানে বিভোর থাকে। স্পিকারের কান ফাটানো শব্দ, নিলর্জ্জকর গান, অসভ্য নাচ ও অঙ্গভঙ্গি এবং হৈচৈ করার দ্বারা অসহ্য হয়ে স্থানীয় জনগণ ঐ ট্রেলারটিতে আক্রমন চালায় এবং নাচগানের ধারাবাহিকতা জোর পূর্বক বন্ধ করে দেয়।

ধ্বংসের বিভিন্ন কারণ

মুসলমানদের দূরাবস্থার উপর আফসোস প্রক্রাশ করে দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কতর্কৃ প্রক্রাশিত ২৪৬ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব ‘ইসলামী জিন্দেগী’র ১৩৭ পৃষ্ঠায় প্রসিদ্ধ মুফাস্সীর, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: সিনেমা আজ মুসলমানদের দিয়ে আবাদ হয়ে আছে, খেলতামাশায় মুসলমানরা এগিয়ে রয়েছে, তীরখেলা, পক্ষী লড়াই, ঘুড়ি খেলা, মোরগের লড়াই, মোটকথা সব ধরণের খেলা ও ধ্বংসের সকল কারণ মুসলমান সম্প্রদায়ের মাঝে একত্রিত হয়েছে। (ইসলামী জিন্দেগী, ১৩৭ পৃষ্ঠা)

ছেলে-মেয়ে একসাথে নাঁচতে থাকে

কতিপয় বড় হোটেল, ভবন, বাংলো, ঘর, অফিসের ছাদে এবং পার্কে বসন্ত মেলা উদযাপনকারী বেপর্দা নারী-পুরুষদের সংমিশ্রনে আসর সাজানো হয়। বিভিন্ন ধরণের সাজে সজ্জিতও প্রায় অধর্নগ্ন পোশাক পরিধান করানো হয়। এতে করে কুদৃষ্টির বাজার খুব গরম হয়ে থাকে। প্রেম ও গুনাহের তুফান শুরু হয়ে যায়। মদ পান করে সঙ্গীতের ধ্যানে যুবক-যুবতীরা অত্যন্ত অশ্লীলতার সাথে নাচ-গান করতে থাকে।

কালো সাপের বিষের চুমুক

হে আল্লাহ্ তায়ালা ও তাঁর প্রিয় রাসূল صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর উপর ঈমান আনয়নকারী ইসলামী ভাই ও বোনেরা! শরীয়াতে মদ পান করা ও করানো হারাম এবং নাচ গান করাও হারাম। এ সব কিছু জাহান্নামে নিয়ে যাবার মত কাজ। শুন শুন! তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করে, তাকে আল্লাহ্তায়ালা কালো সাপের এমন বিষের চুমুক পান করাবেন, যা পান করার সাথে সাথে সর্বপ্রথম তার মুখের মাংস থালাতে পড়ে যাবে। আর সে যখন তা পান করবে, তার মাংস ও চামড়া ঝরে যাবে, যে কারণে দোযখীদেরও কষ্ট হবে।

মনে রাখবেন! নিঃসন্দেহে মদ পানকারী, মদ প্রস্তুতকারী, প্রস্তুতকরণে উদ্বুদ্ধকারী, উত্তোলনকারী, উত্তোলনে সাহায্যকারী, তাদের উপার্জন ভক্ষণকারী সবাই গুনাহের মধ্যে সম্পৃক্ত। আল্লাহ্ তায়ালা তাদের কারো নামায রোযা ও হজ্ব কবুল করবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সেই কাজ থেকে তাওবা করে নেবে না। যদি তাওবা না করে মারা যায়, তাহলে আল্লাহ তায়ালার হক রয়েছে যে, তাকে দুনিয়াতে পান করা প্রতিটি চুমুকের বিনিময়ে জাহান্নামের পূঁজ পান করানো। জেনে রাখবেন! প্রত্যেক নেশার বস্তুই হারাম আর প্রত্যেক মদই হারাম। (জাহান্নাম মেঁ লে জানে ওয়ালে আমাল, ২য় খন্ড, ৫৮২ পৃষ্ঠা ও আয যাওয়াজির, ২য় খন্ড, ৩১৬ পৃষ্ঠা)

কাফন চোর যখন কবর খনন করলো, তখন...

দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ৮৫৩ পৃষ্ঠা সম্ভলিত কিতাব ‘জাহান্নাম মেঁ লে জানে ওয়ালে আমাল’ এর ২য় খন্ডের ৫৮৬ পৃষ্ঠায় এক কাফন চোরের দীর্ঘ কাহিনীর কিছু অংশ সেটার মতো বণর্না করছি: যেমনিভাবে এক তাওবাকারী কাফন চোরের বর্ণনা; আমি যখন কাফন চুরি করার জন্য একটি কবর খনন করলাম, তখন এক হৃদয় কাঁপানো দৃশ্য দেখতে পেলাম। আমি দেখলাম, মৃত ব্যক্তিটি শুয়োরে পরিণত হয়ে গেছে। তাকে জিঞ্জির ও শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। আমি ভয়ে কেঁপে উঠলাম। এক অদৃশ্য আওয়াজ এসে আমাকে চমকে দিলো।
কেউ বলছিলো: এই লোকটির উপর আযাবের কারণ হলো, সে মদ পান করতো এবং তাওবা না করেই মারা গেছে। (আযযাওয়াজির, ২য় খন্ড, ৩১৮ পৃষ্ঠা)

কর লে তাওবা রব কি রহমত হে বড়ি,
কবর মেঁ ওয়র না সাজা হোগি কড়ি। (ওয়াসায়িলে বখশিশ, ৬৬৭ পৃষ্ঠা)

ফুটন্ত পানীয়

হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে: মদ্যপায়ী যখন পুলসিরাতে আসবে, তখন জাহান্নামের ফেরেশতারা তাকে উঠিয়ে ‘নাহরুল খাবাল নামক কূপের দিকে নিয়ে যাবে। অতঃপর, সে জীবনে যত গ্লাস মদ পান করেছিল তত গ্লাস ‘নাহরুল খাবাল’ পান করবে। আর নাহরুল খাবালের পানীয় এমন যে, সেটা যদি আসমান থেকে প্রবাহিত করা হয়, তবে সেটার গরমে সমগ্র আসমানই জ্বলে যাবে। (জাহান্নামে মেঁ লে জানে ওয়ালে আমাল, ২য় খন্ড, ৫৮২ পৃষ্ঠা। আয যাওয়াজির, ২য় খন্ড, ৩১৬ পৃষ্ঠা। কিতাবুল কাবায়ির, ৯৬ পৃষ্ঠা)

মদ্যপান পরিহার করার পুরস্কার

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ্ তায়ালা আপনাদের এবং আমার উপর দয়া করুক, আর আমাদেরকে জাহান্নামের খুবই গরম ও ফুটন্ত পানীয় পান করা থেকে রক্ষা করুক। আমীন! দয়া করে মদ পান করা থেকে বেঁচে থাকুন। যদি ভুল করে পান করে নেন, তবে সত্যিকার অর্থে তাওবা করে নিন। যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তায়ালার ভয়ে মদ পান করা পরিহার করবে, জান্নাতে সে পেয়ালা ভর্তি বেহেশতী সুধা পান করতে পারবে। যেমনিভাবে- হুযুরে পাক, সাহিবে লওলাক صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেন: “আমার ইজ্জতের কসম! আমার যে বান্দা এক চুমুক মদও পান করবে, আমি তাকে সেই পরিমাণ পূঁজ পান করাব। আর যে ব্যক্তি আমার ভয়ে মদ পান কার বর্জন করবে, আমি তাকে কিয়ামতের দিন জান্নাতের পবিত্র হাউজ থেকে পান করাব।” (মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ৮ম খন্ড, ৩০৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২২৩৭০)

হাঁড়িতে ফুটানো থেকে মৃত্যু আরো কঠিন

হে আল্লাহ্ ও রাসূলের প্রতি ভালবাসা পোষণকারী মুসলমানেরা! আর কত দিন এক রাসূল বিদ্বেষী ব্যক্তির স্মরণে প্রচলন হওয়া গুনাহে ভরা বসন্ত মেলার মাধ্যমে আপনারা আল্লাহ্ তায়ালা ও তাঁর প্রিয় হাবীব صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর অসন্তুষ্টিমূলক কাজ (আর কত দিন) করতে থাকবেন? গুনাহের আবর্জনায় ময়লাযুক্ত হয়ে যদি আপনার মৃত্যু হয়ে যায়, তখন আপনার কী অবস্থা হবে? আপনি কি কখনো মৃত্যুর কঠিন অবস্থার কথা ভেবে দেখেছেন? কখনো কি প্রাণ বের হয়ে যাওয়ার সময় কী ধরণের কষ্ট হয়, সে সম্পর্কে চিন্তা করেছেন?শুনুন, শুনুন! হযরত আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী শাফেয়ীই رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বণর্না করেন: মৃত্যু দুনিয়া ও আখিরাতের ভয়ানক সব বস্তুর চেয়ে অধিক ভয়ানক (বস্তু)। এটি করাত দিয়ে খন্ডিত করা, কাঁচি দিয়ে কাটা এবং হাঁড়িতে ফুটানোর চেয়েও অধিক কষ্টদায়ক। কোন মৃত ব্যক্তি যদি জীবিত হয়ে মৃত্যুর কঠিন অবস্থা সম্পর্কে লোকদের কাছে বলে দেয়, তাহলে তাদের ঘুম, আনন্দ-উল্লাস একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে। (শরহুস সুদূর, ৩৩ পৃষ্ঠা) আমরা মাত্র কয়েক মুহূর্তের স্বাদের বিনিময়ে কত বড় ভয়ানক বিষয় কিনে নিচ্ছি। কথাটি এই বর্ণনা থেকে বুঝার চেষ্টা করুন। যেমনিভাবে- দা’ওয়াতে ইসলামীর পক্রাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কতর্কৃ প্রকাশিত ৫০৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব ‘মিনহাজুল আবেদীন’এর ১৪১ পৃষ্ঠায় হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আবু হামিদ মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: বর্ণিত আছে, নিঃসন্দেহে মৃত্যুর যন্ত্রণার তীব্রতা দুনিয়ার বিভিন্ন স্বাদ অনুসারে হবে। অতএব, যারা দুনিয়াতে বেশি আরাম আয়েশের স্বাদ গ্রহণ করবে, তাদের মৃত্যুর যন্ত্রণাও তত বেশিই হবে। (মিনহাজুল আবেদীন, ৮৫ পৃষ্ঠা) 
আমাদেরকে পৃথিবীতে কেন সৃষ্টি করা হয়েছে? হে পবিত্র কুরআনের প্রতিটি হরফের উপর ঈমান পোষণকারী প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! নিজের জীবনের উদ্দেশ্য বুঝার চেষ্টা করুন। জীবনের অমূল্য মুহূর্তগুলো ঘুড়ি উড়ানো আর খেলতামাশায় নষ্ট করবেন না। আল্লাহর কসম! আমাদেরকে এই পৃথিবীতে খেলতামাশা করার জন্য পাঠানো হয়নি। শুনুন, শুনুন! আল্লাহ্ তায়ালা ২৭ পারার সূরা আয যারিয়াতের ৫৬ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন:
وَ مَا  خَلَقْتُ      الْجِنَّ  وَ   الْاِنْسَ   اِلَّا لِیَعْبُدُوْنِ (٥٦)
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং আমি জিন ও মানব এতটুকুর জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, আমার ইবাদত করবে।
اَفَحَسِبْتُمْ   اَنَّمَا خَلَقْنٰكُمْ  عَبَثًا  وَّ  اَنَّكُمْ   اِلَیْنَا لَا تُرْجَعُوْنَ(۱۱۵)
১৮পারার আল-মুমিননের ১১৫ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন: কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: তবে তোমরা কি এ কথা মনে করছো যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে আমার প্রতি প্রত্যাবর্তন করতে হবে না? এই আয়াত প্রসঙ্গে সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা মাওলানা সৈয়্যদ মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ খাযায়িনুল ইরফানে বলেন: এবং তোমাদেরকে কি আখিরাতে প্রতিদানের জন্য উঠতে হবে না? অথচ তোমাদেরকে ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমাদের উপর ইবাদত করা আবশ্যক, আর আখিরাতে তোমরা আমার নিকট ফিরে আসবে এবং আমি তোমাদেরকে তোমাদের আমলের প্রতিদান দেব। (খাযায়িনুল ইরফান, ৬৪৭ পৃষ্ঠা)

ঘুড়ি উড্ডয়নকারীর তাওবা

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ্ তায়ালা আপনাদের উপর তাঁর রহমত ও অনুগ্রহ দান করুক। নেকী ও সুন্নাতে ভরা দীর্ঘ জীবন দান করুক এবং বিনা হিসাবে ক্ষমা করুক। আমীন! আপনাদের প্রতি করজোড় আবেদন; আপনারা যদি জীবনে কখনো ঘুড়ি উড়িয়ে থাকেন, তাহলে সাথে সাথে সেটা থেকে এমনকি নিজের জীবনের সমস্ত গুনাহ থেকে সত্যিকার ভাবে তাওবা করে নিন। উৎসাহের জন্য এক ঘুড়ি উড্ডয়ণকারীর তাওবার মাদানী বাহার লক্ষ্য করুন: যেমনিভাবে- বাবুল মদীনা করাচীর এক ইসলামী ভাইয়ের লেখা কিছুটা পরিবর্তন করে উপস্থাপন করছি: আফসোস! আমার অতীত জীবন অত্যন্ত গুনাহের কাজেই অতিবাহিত হয়েছে। আমি ঘুড়ি উড্ডয়নে খুব আগ্রহী ছিলাম। তাছাড়া ভিডিও গেমস, গুলি খেলা ইত্যাদি আমার কর্ম ব্যস্ততায় সম্পৃক্ত ছিলো। প্ের ত্যকের ব্যাপারে নাক গলানো, অযথা মানুষের সাথে ঝগড়া বিবাদ করা, কথায় কথায় মারামারি করা এসব ছিলো আমার বদ অভ্যাস।সৌভাগ্য বশতঃ এক ইসলামী ভাইয়ের ইনফিরাদী কৌশিশে আমি রমজান মাসের শেষ দশ দিন আমাদের স্থানীয় মসজিদে ইতিকাফে এসে গেলাম। আমি অনেক ভাল ভাল স্বপ্ন দেখলাম এবং খুব প্রশান্তি পেলাম। আমি আরো দুই বৎসর ইতিকাফ করার সৌভাগ্য অর্জন করলাম। একবার আমাদের মসজিদের মুয়াজ্জিন সাহেব ইনফিরাদী কৌশিশ করে আমাকে তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপি অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর আন্তর্জাতিক মাদানী মারকায ফয়যানে মদীনায় সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় নিয়ে এলেন। একজন মুবাল্লিগ বয়ান করছিলেন। তাঁর পরনে ছিলো সাদা পোশাক, খয়েরী চাদর জড়ানো, চেহারায় এক মুষ্টি দাঁড়ি, মাথায় পাগড়ী শরীফের তাজ। এমনি আলোকোজ্জল চেহারা আমি জীবনে এই প্রথম বারই দেখেছিলাম। মুবাল্লিগটির আকর্ষণীয় চেহারা আর নূরানিয়াত আমার মনকে মুগ্ধ করে, আর আমি দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে সম্পৃক্ত হয়ে গেলাম। আর বতর্মানে দুই বৎসর যাবৎ মাদানী মারকায ফয়যানে মদীনাতেই ইতিকাফ করছি। আমি এক মুষ্টি দাঁড়িও রেখে দিয়েছি। (ফয়যানে সুন্নাত, ১ম খন্ড, ১৩৭৯ পৃষ্ঠা ঈষৎ পরিবর্তিত)

মস্ত হার দম রহোঁ মাঁই দে দে উলফত কা জাম ইয়া আল্লাহ্! ভীক দে দে গমে মদীনা কি বাহরে শাহে আনাম ইয়া আল্লাহ্!
--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত ২৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত "বসন্তমেলা" নামক রিসালার ৪-৩০ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই রিসালাটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন। অন্যকে উপহার দিন। 
যারা মোবাইলে (পিডিএফ) রিসালাটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন ।
ইসলামীক বাংলা বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন
মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks for supporting.

পোস্ট শ্রেণি

অযু-গোসল-পবিত্রতা (12) আপডেট চলমান (25) আমাদের কথা ও অন্যান্য বিষয়াবলী (6) আমাদের প্রিয় নবী ﷺ (5) আরবি মাস ও ফযীলত (11) ইসলামী ইতিহাস ও শিক্ষনীয় ঘটনা (6) ইসলামী জীবন ও সুন্দর চরিত্র (4) ঈদ-কাযা-জানাযা-তারাবী-নফল ও অন্যান্য নামায (5) উত্তম আমল ও সাওয়াবের কাজ (4) কুরআন-তাফসীর ও হাদিস (16) কুরবানী (6) চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য কথন (14) জিকির-দোআ-দুরূদ ও ফযীলত (8) নবী-সাহাবী ও আওলিয়াদের জীবনী (8) নামায (17) পর্দা ও লজ্জাশীলতা (16) ফয়যানে জুমা (3) বদ আমল ও গুনাহের কাজ (3) মওত-কবর-হাশর ও আযাব (12) মাসআলা-মাসাইল ও প্রশ্নোত্তর (15) মাসাইল (21) যাকাত-ফিতরা ও সদক্বাহ'র বিধান (1) রোযা/রমযানের বিধান ও ফযীলত (9) সুন্নাত ও আদব/ মাদানী ফুল (41) হজ্ব-ওমরাহ ও যিয়ারতে মদিনা (27)

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন