নবী করীম ﷺ এর ৩টি বাণী
﴾১﴿ “(একজন) হাজী সাহেব নিজ পরিবারের মধ্য হতে চারশত ব্যক্তিকে সুপারিশ করবে এবং গুনাহ থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেন সে ঐ দিনই আপন মায়ের পেট থেকে জন্ম নিয়েছে।”(মুসনাদে বাজ্জার, ৮ম খন্ড, ১৬৯ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৩১৯৬)
﴾২﴿ “হাজীর ক্ষমা হয়ে যায়, আর হাজী যার জন্য মাগফিরাতের দোআ করে তার জন্যও ক্ষমা রয়েছে।”(মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ৩য় খন্ড, ৪৮৩ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৫২৮৭)
﴾৩﴿ “যে ব্যক্তি হজ্ব অথবা ওমরার উদ্দেশ্যে বের হয় এবং পথিমধ্যে (রাস্তায়) মৃত্যুবরণ করল, তার হিসাব নিকাশ হবে না আর তাকে বলা হবে; اُدۡخُلِ الۡجَنَّةَ অর্থাৎ তুমি জান্নাতে প্রবেশ করো।” (আল মু’জামুল আওসাত, ৪র্থ খন্ড, ১১১ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৮৮৩৫)
প্রত্যেক কদমে সাত কোটি নেকী
আ’লা হযরত মাওলানা শাহ আহমদ রযা খান رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ “আনোয়ারুল বিশারত”গ্রন্থে পায়ে হেঁটে হজ্ব করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করতে গিয়ে বলেছেন যে, সম্ভব হলে আপনি পায়ে হেঁটে (মক্কা শরীফ থেকে মীনা, আরাফাত ইত্যাদিতে) যান, আর যখন আপনি মক্কা শরীফে ফিরে আসবেন, তখন আপনার প্রত্যেক কদমের বিনিময়ে সাত কোটি নেকী লিখা হবে, আর এই নেকী সমূহ আনুমানিক হিসাবে সাত লক্ষ চুরাশি হাজার কোটি হয় এবং আল্লাহ তাআলা এর অনুগ্রহ তাঁরই প্রিয় নবী, হুযুর صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর সদকায় এই উম্মতের উপর অগণিত রয়েছে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১০ম খন্ড, ৭৪৬ পৃষ্ঠা) (লিখক) সগে মদীনা عُفِیَ عَنہُ আরজ করেন যে, আ’লা হযরত رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ পুরাতন দীর্ঘ সড়কের অনুপাতে এই হিসাব করেছেন। এখন যেহেতু মক্কা শরীফ থেকে মীনায় যাওয়ার জন্য পাহাড় সমুহের মধ্যে সুড়ঙ্গ বের করা হয়েছে, আর পায়ে হেঁটে যাওয়া যাত্রীদের জন্য সড়ক খুবই সংক্ষিপ্ত ও সহজ হয়ে গেছে। সে হিসেবে নেকী সমুহের সংখ্যা ও কমে আসবে।
وَاللہ وَرَسُوۡلُہٗ اَعۡلَم عَزَّوَجَلَّ وَ صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم
পায়ে হেঁটে হজ্বকারীর সাথে ফিরিশতারা আলিঙ্গন করে
নবী করীম صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যখন হাজী (কোন বাহণে) আরোহণ করে আসে, তখন ফিরিশতারা তাঁর সাথে মুসাফাহা করে (অর্থাৎ হাত মিলায়), আর যে হাজী পায়ে হেঁটে আসে ফিরিশতারা তার সাথে মুআনাকা করে (অর্থাৎ আলিঙ্গন করে)। (ইত্তেহাফুস সাদাতু লিয্ যুবাইদী, ৪র্থ খন্ড, ৪৬৫ পৃষ্ঠা)
হজ্ব মধ্যবর্তী কোরআনের হুকুম
২য় পারার সূরা বাকারার ১৯৭ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন:
فَلَا رَفَثَ وَ لَا فُسُوۡقَ ۙ وَ لَا جِدَالَ فِی الۡحَجِّ ؕ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: তবে না স্ত্রীদের সামনে সম্ভোগের আলোচনা করা হবে, না কোন গুনাহ, না কারো সাথে ঝগড়া হজ্বের সময় পর্যন্ত।
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা, হযরত আল্লামা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আজমী رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেছেন: (হজ্বের মধ্যে) আপনাকে ঐ সকল কথাবার্তা থেকে অবশ্যই অবশ্যই অনেক দূরে থাকতে হবে। যখন রাগ আসে অথবা ঝগড়া হয় বা কোন গুনাহের খেয়াল হয় তখন সাথে সাথে দ্রুত মাথা নিচু করে অন্তরের দিকে মনোনিবেশ করে এই আয়াতটির তিলাওয়াত করুন এবং দু’একবার ‘লা হাওলা শরীফ’পড়ুন। ঐ বিষয়গুলো চলে যেতে থাকবে। এরকম নয় যে, শুধু হাজী সাহেবের পক্ষ থেকে ঐ বিষয়গুলো প্রথমে শুরু হবে অথবা তার সঙ্গী-সাথীদের সাথে ঝগড়া হয়ে যাবে বরং অনেক সময় পরীক্ষামূলক চলন্ত পথিকদেরকে সামনে ঠেলে দেয়া হয় যে, তারা কোন কারণ ছাড়া ঝগড়া বাঁধিয়ে ফেলে এমনকি গালি-গালাজ, অভিশাপ ও অপবাদ দিতেও কুন্ঠাবোধ করে না। তাই হাজী সাহেবকে সর্বদা এ ব্যাপারে সজাগ থাকা চায়। আল্লাহ না করুন, আবার যেন এমন হয়ে না যায় যে, দু’একটি বাক্যের কারণে সকল পরিশ্রম এবং ব্যয় করা সব অর্থ বরবাদ হয়ে যায়। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১০৬১ পৃষ্ঠা)
সামবাল কার পাও রাখনা হাজীয়ো! রাহে মদীনা মে
কহি এয়্যসা না হো ছারা সফর বেকার হো জায়ে
صَلُّوْا عَلَی الۡحَبِیۡب! صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
হাজীদের জন্য ইশ্কের পূঁজি থাকা জরুরী
সৌভাগ্যবান হাজীরা! হজ্বের জন্য যেভাবে প্রকাশ্য পুঁজির প্রয়োজন হয়, অনুরূপ অপ্রকাশ্য পুঁজিও খুবই প্রয়োজন। আর ঐ পূঁজি হল একমাত্র গভীর ইশক ও মুহাব্বত, আর প্রকাশ্য কথা যে, ইহা আশিকানে রাসুলদের নিকট পাওয়া যায়। ঘটনা: ছরকারে বাগদাদ, হুজুরে গাউছে পাক رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর দরবারে এক ব্যক্তি উপস্থিত হলে তিনি رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে সম্ভোধন করে বললেন: এই ব্যক্তি এখনই বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে এক কদমে আমার নিকট এসেছে যেন সে আমার কাছ থেকে ইশকের আদব সমুহ শিক্ষা গ্রহণ করে। (আখবারুল আখয়ার, ১৪ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।
اٰمِين بِجا هِ النَّبِيِّ الْاَمين صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم
আশিকে রাসুলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করুন!
سُبۡحٰنَ اللہ عَزَّوَجَلَّ একজন কারামত ধারী ওলি ও আপন অন্তরে ইশ্কের পুঁজি অর্জনে তার চেয়ে উচ্চ স্তরের অপর ওলির দরবারে হাজেরী দিয়ে থাকেন। আর আমরা কোন স্তরে ও কাতারের শামিল হই। তাই আমাদের উচিৎ কোন আশিকে রাসুল এর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে ইশ্কের আদাব সমুহ শিখে নেয়া। অতঃপর “সফরে মদীনা”শুরু করা।
পেহলে হাম শিখে করিনা, পির মিলে মুরিশদ ছে সিনা,
চল পড়ে আপনা সফিনা আওর পৌঁছ যায়ে মদীনা।
صَلُّوْا عَلَی الۡحَبِیۡب! صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
প্রিয় হাজীরা! এখনই আমি আপনাদের নিকট খোদা তালাশকারী ও আশেকানে মুস্তফা ও মুজতবা صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর ইশক ও মুহাব্বতের দিওয়ানা হাজীদের অন্তর কাঁপানো দু’টি আশ্চর্য ও অমূল্য কাহিনী উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। উহা পড়ুন এবং মুহাব্বতে খোদা ও ইশ্কে মুস্তফা صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তে মত্ত হতে থাকুন এবং আন্দোলিত হোন:
রহস্যময় হাজী
হযরত সায়্যিদুনা ফুজাইল বিন আয়াজ رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: আরাফাতের ময়দানে মানুষেরা একত্রিত হয়ে দোয়াতে লিপ্ত ছিল, তখন আমার দৃষ্টি একজন যুবকের উপর পড়ল। যিনি মাথা নত করে লজ্জিত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আমি বললাম: যুবক! তুমিও দোআ কর। সে বলল: আমার ঐ কথার ভয় হচ্ছে যে, যে সময় টুকু আমাকে দেওয়া হয়েছিল, তা হয়ত ফুরিয়ে যাচ্ছে। তাই আমি কোন মুখে দোআ করব। আমি বললাম: তুমিও দোআ কর। যেন আল্লাহ তাআলা তোমাকেও ঐ দোআ প্রার্থনাকারীদের দোআর বরকতে কামিয়াব করেন। হযরত সায়্যিদুনা ফুজাইল رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: যে মাত্র সে দোআর জন্য হাত উঠানোর চেষ্টা করল। তার উপর এমন এক কম্পণভাব সৃষ্টি হয়ে গেল যে, একটি বিকট আওয়াজ মুখ থেকে বের হল ও ছটফট করতে করতে পড়ে গেল এবং তার শরীর থেকে রূহ বের হয়ে গেল। (কাশফুল মাহজুব, ৩৬৩ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।
اٰمِين بِجا هِ النَّبِيِّ الْاَمين صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم
জবেহ হওয়া হাজী
হযরত সায়্যিদুনা জুন্নুন মিসরী رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেছেন: আমি মীনা শরীফের ময়দানে একজন যুবক দেখলাম। সে আরামে বসে ছিল। যখন মানুষের কোরবানী করতে ব্যস্ত ছিল। এমন সময়ে সে শব্দ করে বলে উঠল: হে আমার প্রিয় আল্লাহ! তোমার সকল বান্দা কোরবানী করতে লিপ্ত রয়েছে। আর আমিও তোমার দরবারে আমার প্রাণকে কোরবাণী দিয়ে দিতে চাই। হে আমার মালিক! আমাকে কবুল কর। একথা বলে নিজ আঙ্গুল গলায় ঘুরাল এবং ছটফট করতে করতে পড়ে গেল। আমি তখন নিকটে গিয়ে দেখলাম, সে নিজ প্রাণকে উৎসর্গ করে দিয়েছে। (কাশফুল মাহজুব, ৩৬৪ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।
اٰمِين بِجا هِ النَّبِيِّ الْاَمين صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم
ইয়ে এক জান্ কিয়া হে আগর হু কড়োঢ়ো
তেরে নাম পর সব কো ওয়ারা করো মে। (সামানে বখশিশ)
صَلُّوْا عَلَی الۡحَبِیۡب! صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
নিজের নামের সাথে হাজী লাগানো কেমন?
সম্মানিত হাজীগণ! আপনারা দেখলেন তো! হজ্ব এভাবেই হওয়া চাই। আল্লাহ তাআলা এ দুইজন বরকতময় হাজীদের ওসিলায় আমাদেরকে প্রশান্ত অন্তর নছীব করুন। মনে রাখবেন! প্রত্যেক ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য ইখলাছ শর্ত। আফসোস! এখন ইলমে দ্বীন এবং উত্তম সঙ্গ থেকে দুরে সরে যাওয়ার কারণে আমাদের অধিকাংশ ইবাদত রিয়াকারীর আওতাভুক্ত হয়ে যাচ্ছে। যেভাবে এখন আমাদের সকল কাজে লোক দেখানো, লৌকিকতার প্রবেশ অবশ্যই বুঝা যাচ্ছে। অনুরূপ এখন হজ্বের মত অত্যাধিক পূণ্যময় ইবাদতও লৌকিকতার ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে। যেমন: আমাদের অনেক ভাই হজ্ব পালন করার পরে নিজেকে নিজে হাজী বলে। এবং নিজ কলমে নিজ নামের পূর্বে হাজী লিখে থাকে। হয়ত আপনি মনে করতে পারেন তাতে ক্ষতি কি? হ্যাঁ! বাস্তবে তাতে কোন ক্ষতিও নেই। যখন মানুষেরা আপনাকে নিজ ইচ্ছায় হাজী সাহেব বলে সম্বোধন করবে। তবে হে প্রিয় হাজীরা ! নিজ মুখে নিজেকে হাজী সাহেব বলায় নিজ ইবাদত কে নিজে প্রচার করা ব্যতীত আর কি হতে পারে? একটি ছোট হাস্যরস দ্বারা তা বুঝে নিন।
হাস্যরস
ট্রেন ঝক ঝক করে নিজ গন্তব্যের দিকে দ্রুত গতিতে অগ্রসর হচ্ছিল। আর তাতে দুই ব্যক্তি কাছাকাছি বসা ছিল। একজন কথা শুরু করতেই জিজ্ঞাসা করল। জনাব আপনার নাম কি? উত্তর দিলেন: হাজী শফিক। আর আপনার নাম কি? দ্বিতীয়জন জিজ্ঞাসা করল: প্রথম ব্যক্তি উত্তর দিল “নামাযী রফিক”। হাজী সাহেব খুবই আশ্চর্য হল এবং জিজ্ঞাসা করল! হে নামাযী রফিক! ইহা তো খুবই আশ্চর্য জনক নাম মনে হচ্ছে।
নামাযী ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল: আপনি বলুন; কতবার আপনি হজ্ব পালনের সৌভাগ্য অর্জন করেছেন? হাজী সাহেব বলল: اَلْحَمْدُ لِلّٰہِ عَزَّوَجَلَّ! বিগত বছরেই তো হজ্বে গমন করেছিলাম। নামাযী ব্যক্তি তখন বলতে শুরু করলেন: আপনি জীবনে মাত্র একবার হজ্বে বায়তুল্লাহর সৌভাগ্য অর্জন করতে পেরে নির্দ্বিধায় নিজে নিজেকে হাজী বলতে লাগলেন, আর আপনার কৃত হজ্বের প্রচার করতে লিপ্ত হয়ে গেলেন। আর আমি তো অনেক বছর থেকে ধারাবাহিক দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ খুবই গুরুত্ব সহকারে পালন করে আসছি। তাই আমি যদি নিজে নিজেকে ‘নামাযী’ বলে থাকি, তাতে অবাক হওয়ার কি আছে!
হজ্বের সাইন বোর্ড লাগানো কেমন?
আপনারা হয়ত বুঝে গেছেন। বর্তমানে তো লৌকিকতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আশ্চর্য তামাশা যে, যখন হাজী সাহেব হজ্বে আসা-যাওয়া করে তখন কোন প্রকারের ভাল ভাল নিয়্যত ব্যতিরেকে পূর্ণ দালান ঝিলমিল বাতি দ্বারা সাজানো হয়। আর ঘরে ‘হজ্ব মোবারক’নামে হজ্বের বোর্ড লাগিয়ে দেয়া হয়। বরং তাওবা! তাওবা!! দেখা যায় কোথাও কোথাও হাজী সাহেব তো ইহরাম পরিহিত অবস্থায় সুন্দর সুন্দর ছবি উঠায়। অবশেষে এগুলো কি? পলাতক হতভাগা পাপী উম্মত হয়ে, নিজ আক্বা صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দরবারে এভাবে ধুম ধাম করে যাওয়া আপনি কি উচিৎ মনে করেন? না, কখনো না। বরং কান্না রত অবস্থায় আফসোস করতে করতে কম্পমান ভীত হৃদয়ে নম্র অবস্থায় হাজেরী দেওয়াই উচিত।
আঁচুও কি লড়ি বন রহি হো, আওর আহো ছে পাটতা হো সিনা।
বিরদে লব হো ‘মদীনা মদীনা’, জব চলে চুয়ে তৈয়্যবা সফীনা।
জব মদীনে মে হো আপনি আমদ, জব মে দেখো তেরা সব্জ গুম্বদ।
হিচকিয়া বান্দ কর রোও বে হদ, কাশ! আজায়ে এয়্যছা করিনা।
صَلُّوْا عَلَی الۡحَبِیۡب! صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
বসরা থেকে পায়ে হেঁটে হজ্বে সফর!
ভাল ভাল নিয়্যত ব্যতিরেকে শুধুমাত্র নফসের স্বাদে পড়েও আত্নতৃপ্তির কারণে নিজ ঘরের উপর ‘হজ্ব মোবারক’এর সাইন বোর্ড, ডিজিটাল ব্যানার ইত্যাদি লাগানো ব্যক্তিরা এবং নিজ হজ্বের ডাকঢোল পিটিয়ে খুব চর্চাকারীরা একটি উঁচুস্তরের ঘটনা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। যেমন; হযরত সায়্যিদুনা সুফিয়ান ছওরী رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ হজ্বের জন্য বসরা নগরী থেকে পায়ে হেঁটে যাত্রা করলেন। কেউ তাঁকে আরজ করল: আপনি رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ সাওয়ারীতে আরোহন করছেন না কেন? তিনি বললেন: পলাতক কোনো গোলাম! যখন তার মুনিবের দরবারে সন্ধির জন্য উপস্থিত হয়, তখন তাকে কি আরোহী হয়ে আসা উচিত? আমি এই মাথায় দিয়ে চলার মত পবিত্র ভূমিতে যেতে খুব বেশী লজ্জা অনুভব করছি। (তানবীহুল মুগতাররীন, ২৬৭ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।
اٰمِين بِجا هِ النَّبِيِّ الْاَمين صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم
আরে যায়েরে মদীনা! তু খুশি ছে হাস রাহা হে
দিল গমজাদা জো পা তা তু কুছ ওর বাত হোতি!
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আবু হামিদ মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ নকল করেন: এক বুযূর্গ رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ কে প্রশ্ন করা হল: আপনি কি কখনো কা’বা শরীফের ভিতরে প্রবেশ করেছেন? (তিনি বিনয় প্রকাশ করে) বলেন: কোথায় বাইতুল্লাহ শরীফ আর কোথায় আমার নোংরা পা! আমি তো আমার পা গুলোকে বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করারও উপযুক্ত মনে করি না। কেননা এটা তো আমি জানি যে, এই পা কোথায় কোথায় এবং কেমন কেমন জায়গা অতিক্রম করেছে। (ইহ্ইয়াউল উলুম, ১ম খন্ড, ৩৪৫ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁর সদ্কায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।
اٰمِين بِجا هِ النَّبِيِّ الْاَمين صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم
উন্ কে দিয়ার মে তু কেয়ছে চলে ফিরে গা?
আত্তার তেরী জুরআত! তু জায়ে গা মদীনা!!(ওয়াসায়িলে বখশিশ, ৩২০ পৃষ্ঠাা)
صَلُّوْا عَلَی الۡحَبِیۡب! صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
হাজীর উপর আত্ম-পছন্দ ও রিয়ার চরম আক্রমণ
প্রিয় হাজীরা! প্রিয় মদীনার মুসাফিররা! সম্ভবত নামায রোযা ইত্যাদির তুলনায় হজ্বে অনেক বেশী বরং প্রতি কদমে রিয়াকারীর আপদসমূহ সামনে আসে। হজ্ব এমন একটি ইবাদত যা প্রথমতো প্রকাশ্যভাবে করা হয়, আর দ্বিতীয়ত প্রত্যেকের তা নসীব হয়না। এজন্য লোকেরা বিনম্রভাবে সাক্ষাত করে, খুব সম্মান প্রদর্শন করে, হাতে চুমু দেয়, ফুলের মালা পরায়, দোআর আবেদন করে। এসব জায়গায় হাজী কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয় কেননা লোকদের বিশ্বস্ততামূলক আচরণের মধ্যে কিছু এমন স্বাদ থাকে যে, যার কারণে ইবাদতের বড় থেকে বড় কষ্টকেও ফুল মনে হয় এবং অনেক সময় বান্দা আত্ম পছন্দ এবং রিয়াকারীর ধ্বংসলীলার গর্তের মধ্যে পতিত অবস্থায় থাকে কিন্তু তার এসবের ব্যাপারে খবরও থাকেনা। তার মনে চাই যে, সব লোক আমার হজ্বে যাওয়ার বিষয়টি জানুক, যেন আমার সাথে এসে মিলিত হয়। মোবারকবাদ পেশ করে, উপহার দেয়, আমার গলায় ফুলের মালা পরিধান করিয়ে দিক, আমার নিকট দোআর জন্য আরজ করে, মদীনাতে সালাম আরজ করার জন্য খুবই বিনিতভাবে আবেদন করে, আর আমাকে বিদায় জানানোর জন্য এয়ারপোর্ট পর্যন্ত আসে ইত্যাদি ইত্যাদি প্রবৃত্তির চাহিদাসমূহের সমাহার এবং ইলমে দ্বীন না থাকার কারণে হাজী অনেক সময় “শয়তানের খেলনাতে” পরিণত হয় এজন্য শয়তানের ধোকা থেকে সাবধান থাকতে গিয়ে নিজের মনের মধ্যে খুবই বিনম্রতা সৃষ্টি করুন। প্রদর্শনীর ভাব থেকে নিজেকে বাঁচান। খোদার কসম! রিয়াকারীর শাস্তি কারো পক্ষে সহ্য করা সম্ভব হবে না। দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ৬১৬ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “নেকীর দাওয়াত (১ম খন্ড)” এর ৭৯ পৃষ্ঠায় একটি হাদীস শরীফ রয়েছে;
নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “নিঃস্বন্দেহে জাহান্নামে একটি উপত্যকা রয়েছে, যার থেকে জাহান্নাম প্রতিদিন ৪০০ বার আশ্রয় প্রার্থনা করে। আল্লাহ তাআলা এই উপত্যকা উম্মতে মুহাম্মদীয়া عَلٰی صَاحِبِہَا الصَّلٰوۃُ وَالسَّلَام এর ঐ সকল রিয়াকারদের জন্য প্রস্তুত করেছেন, যারা কোরআনের হাফেজ, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর জন্য সদকাকারী, আল্লাহ তাআলার ঘরের হাজী এবং আল্লাহ তাআলার পথে বের হওয়ার মুসাফির ব্যক্তির জন্য।” (আল মুজামুল কাবীর, ১২তম খন্ড, ১৩২ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১২৮০৩)
হাজীদের রিয়ার দু’টি উদাহরণ
নেকীর দাওয়াত ১ম খন্ডের ৭৬ পৃষ্ঠায় রয়েছে; ﴾১﴿ নিজের হজ্ব ও ওমরার সংখ্যা, কুরআনুল করীম তিলাওয়াতের প্রতিদিনের পরিমাণ, রজবুল মুরাজ্জবের এবং শাবানুল মুআজ্জমের পরিপূর্ণ এবং অন্যান্য নফলী রোযা সমূহ, নফল ইবাদত সমূহ, দরূদ শরীফের আধিক্য ইত্যাদি এজন্য প্রকাশ করা যেন বাহ্ বাহ্ দেওয়া হয়, আর লোকদের অন্তরে শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি হয়। ﴾২﴿ এজন্য হজ্ব করা অথবা নিজের হজ্বকে প্রকাশ করা যেন লোকেরা হাজী বলে। সাক্ষাতের জন্য হাজির হয়। অনুনয় বিনয় করে দোআর জন্য অনুরোধ করে, মালা পরায়, উপহার ইত্যাদি পেশ করে। (যদি নিজেকে সম্মানের পাত্র বানানো বা তোহফা পাওয়া উদ্দেশ্য না হয় বরং নেয়ামতের আলোচনা ইত্যাদি ভাল ভাল নিয়্যত সমূহ বিদ্যমান থাকে, তবে হজ্ব ও ওমরার কথা প্রকাশ করা, সম্মানী ব্যক্তিবর্গ এবং আত্মীয় স্বজনদেরকে একত্রিত করা এবং “মাহফিলে মদীনা”আয়োজন করাতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই বরং আখিরাতের জন্য সাওয়াবের কাজ। (রিয়াকারীর সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত কিতাব “নেকীর দাওয়াত”এর ১ম খন্ডের ৬৩ পৃষ্ঠা থেকে ১০৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত অধ্যয়ন করুন।
মেরা হার আমল বছ্ তেরে ওয়াসেতে হো
কর ইখলাছ এয়ছা আতা ইয়া ইলাহী! (ওয়াসায়িলে বখশিশ, ৭৮ পৃষ্ঠা)
صَلُّوْا عَلَی الۡحَبِیۡب! صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥
লিখাটি আমিরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত হজ্ব ও ওমরা সম্পর্কিত “রফিকুল হারামাঈন” (হজ্ব ও ওমরার পদ্ধতি ও দোআ সমূহ) এর ৩৮-৪৬ পৃষ্ঠা থেকে সংগৃহীত। রফিকুল হারামাঈন হজ্ব ও ওমরা বিষয়ে এক পূর্ণাঙ্গ এনসাইক্লোপিডিয়া ও মাসআলার কিতাব। কিতাবটির এন্ড্রয়েড অ্যাপ ও পিডিএফ বই ইন্সটল ও ডাউনলোড করুন।
আমাদের এই প্রয়াসকে এগিয়ে নিতে অবশ্যই পাশে থাকবেন, নিচের শেয়ার বাটনগুলো থেকে অন্তত একটি সোস্যাল সাইটে শেয়ার করুন। কপি করে রিপোস্ট করুন হোয়াটসেপ বা ফেসবুকে। কমেন্ট করে জানান অভিমত। আশা করি আবার আসবেন আমাদের এই সাইটে। ভাল থাকুন সুস্থ্য থাকুন।
দাওয়াতে ইসলামীর সকল বাংলা ইসলামীক বইয়ের পিডিএফ লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন
মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for supporting.