প্রশ্ন: ভদ্র মহিলা তাওয়াফে জিয়ারত করছিলেন। তাওয়াফ চলাকালীন সময়ে তার মাসিক শুরু হয়ে যায়, এখন তিনি কী করবেন?
উত্তর: খুব দ্রুত তাওয়াফ করা বন্ধ করে দিয়ে মসজিদুল হারাম থেকে বাইরে চলে আসবে। যদি তাওয়াফ চালু রাখে অথবা মসজিদের ভেতরেই থেকে যায় তাহলে গুনাহগার হবে।
তাওয়াফে জিয়ারতের ব্যাপারে প্রশ্নোত্তর |
প্রশ্ন: যদি চার চক্কর দেয়ার পর হায়েজ আসে তখন আর চার চক্করের পূর্বে (অর্থাৎ চার চক্কর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই) আসলে তখন কী হুকুম?
উত্তর: তাওয়াফ চলাকালীন সময়ে যদি কোন মহিলার হায়েজ শুরু হয়ে যায় তখন চাই তার চার চক্কর পূর্ণ হোক বা না হোক, সে দ্রুত তাওয়াফ করা বন্ধ করে দিবে। কারণ হায়েজ অবস্থায় তাওয়াফ করা কিংবা মসজিদে অবস্থান করা জায়িয নেই এবং মসজিদুল হারাম থেকে বাইরে চলে যাবে। সম্ভব হলে তায়াম্মুম করে বাইরে আসবে। কেননা এটাই অধিক সতর্কতা অবলম্বন ও মুস্তাহাব। অতঃপর যখন ঐ মহিলা পবিত্র হবে তখন যদি পূর্বে চার চক্কর অথবা তারও বেশী চক্কর করে নিয়ে থাকে তাহলে অবশিষ্ট চক্করগুলো আদায় করে নিজের পূর্বের ঐ তাওয়াফকে পূর্ণ করবে, আর যদি তিন অথবা এর থেকেও কম চক্কর আদায় করে থাকে, তবে এখনও তা পূর্ণ (অর্থাৎ যেখান থেকে ছুটে গেছে ওখান থেকে শুরু) করতে পারে। যে মহিলার তিন চক্কর আদায় করার পর হায়েজ আসল, আর তার যদি নিজের হায়েজের অবস্থা (অর্থাৎ নির্দিষ্ট দিন-ক্ষণ) সম্পর্কে জানা ছিল এবং হায়েজ আসার পূর্বে সে এতটুকু সময় পের্য়েছিল যে, যদি সে চাইত তবে চার চক্কর পূর্ণ করে নিতে পারত তবে এক্ষেত্রে তার উপর চার চক্কর দেরীতে আদায় করার কারণে দম ওয়াজিব হবে এবং সে গুনাহগারও হবে। বাহারে শরীয়াতে রয়েছে: এমনিভাবে যদি সে এতটুকু সময় পেয়েছিল যে, তাওয়াফ করে নিতে পারত কিন্তু সে করল না, আর এখন তার হায়েজ বা নিফাছ চলে আসল, তাহলে সে গুনাহগার হল। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৪৫ পৃষ্ঠা) কিন্তু যে মহিলা চার চক্কর করে নিয়েছে, তার উপর ঐ তিন চক্করে দেরী করার কারণে কিছু ওয়াজিব হবে না। কেননা তাওয়াফে জিয়ারতের অধিকাংশ অংশ সময়ের মধ্যে হওয়াটা ওয়াজিব, পুরাটা নয়। বাহারে শরীয়াতে রয়েছে: “হজ্বের ওয়াজিব কাজ সমূহের মধ্যে একটি ওয়াজিব এমনই রয়েছে: “তাওয়াফে ইফাজা” এর অধিকাংশ অংশ কোরবানীর দিন সমূহের মধ্যে হওয়া। আরাফাত হতে ফিরে আসার পর যে তাওয়াফ করা হয়, তার নাম ‘তাওয়াফে ইফাজা’। তাওয়াফে জিয়ারতের অধিকাংশ থেকে যা অতিরিক্ত (বেশী) রয়েছে। অর্থাৎ তিন চক্কর কোরবানীর দিন ছাড়া অন্য সময়েও করা যায়। (প্রাগুক্ত, ১০৪৯ পৃষ্ঠা) যদি মহিলাটি চার চক্কর সম্পূর্ণ আদায় করে থাকে এবং অবশিষ্ট তিন চক্কর অপারগ হয়ে কিংবা অপারগ না হয়ে এই (অর্থাৎ হায়েজ) অবস্থায় পূর্ণ করে নেয় অথবা ঐ চারটি চক্কর আদায় করেই চলে যায় এবং অবশিষ্ট চক্কর গুলো ছেড়ে দেয়, তাহলে (এসকল অবস্থায়) দম ওয়াজিব হবে, আর যদি সে হায়েজ অবস্থায় করে ফেলা তাওয়াফটি পুনরায় আদায় করে নেয়, তাহলে তার উপর থেকে দম রহিত হয়ে যাবে। যদিও সে কোরবানীর দিন গুলোর পরে তা পুনরায় আদায় করে নেয় এবং যদি তিন চক্কর পাক পবিত্র অবস্থায় করে থাকে, আর অবশিষ্ট চার চক্কর হায়েজ অবস্থায় আদায় করে থাকে তবে তার উপর ‘বাদানাহ’ ওয়াজিব হবে। সাথে সাথে তা আবার পুনরায় আদায় করে দেয়াও ওয়াজিব হবে। বাহারে শরীয়াতে রয়েছে: ফরয তাওয়াফ সম্পূর্ণ অথবা এর অধিকাংশ অর্থাৎ চার চক্কর অপবিত্র অবস্থায় অথবা হয়েজ ও নেফাস অবস্থায় করল, তাহলে ‘বাদানাহ’ ওয়াজিব হবে। আর অযুবিহীন অবস্থায় করলে দম ওয়াজিব হবে। প্রথম অবস্থায় পবিত্রতা অর্জন করার পর তা পুনরায় আদায় করে দেয়া ওয়াজিব। (প্রাগুক্ত, ১১৭৫ পৃষ্ঠা) আর পবিত্র হয়ে পুনরায় আদায় করে দেয়ার ক্ষেত্রে ‘বাদানাহ’ রহিত হয়ে যাবে, যেমনি ভাবে উপরে বর্ণিত হয়েছে।
হায়েজা মহিলার যদি সিট বুকিং দেয়া থাকে, তবে তাওয়াফের জিয়ারতের কী করবে?
প্রশ্ন: হায়েজা মহিলার (অর্থাৎ যার বর্তমানে হায়েজ চলছে) যদি ফিরার দিন ক্ষণ নির্দিষ্ট থাকে তাহলে তাওয়াফে জেয়ারতে কী করবে?
উত্তর: ঐ দিনের যাত্রা বাতিল কিংবা স্থগিত করে দিন এবং পবিত্রতা অর্জনের পরেই (অর্থাৎ পাক হয়ে গোসল করে) তাওয়াফে জিয়ারত করে নিবে, আর সিট বাতিল করলে যদি তার নিজের কিংবা সাথীদের মারাত্মক অসুবিধা হয়, তাহলে অপারগ অবস্থায় তাওয়াফে জিয়ারত করে নিবে কিন্তু ‘বাদানাহ’ অর্থাৎ গাভী কিংবা উটের কোরবানী দেয়া আবশ্যক হয়ে পড়বে এবং তাওবা করাও জরুরী হবে। কেননা অপবিত্র অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করা এবং তাওয়াফ করা উভয় কাজই গুনাহ।
যদি ১২ই জিলহজ্জের সূর্য ডুবে যাওয়ার পূর্বে পবিত্রতা অর্জন করে তাওয়াফে জিয়ারতকে পুনরায় আদায় করে নিতে সফল হয়ে যায়, তাহলে কাফ্ফারাও রহিত হয়ে যাবে, আর ১২ তারিখের পরে যদি পবিত্র হওয়ার পর সময়-সুযোগ পেয়ে যায়, আর তাওয়াফও পুনরায় আদায় করে নেয়, তাহলে ‘বাদানাহ’ দেওয়া রহিত হয়ে যাবে, কিন্তু দম দিতে হবে।
প্রশ্ন: আজকাল অনেক মহিলারা হায়েজ বন্ধ রাখার জন্য ট্যাবলেট খেয়ে থাকে। তাই তাদের ঐ নির্দিষ্ট দিন গুলোতে ঔষধের কারণে যখন হায়েজ বন্ধ থাকে তখন কি তারা তাওয়াফে জিয়ারত করতে পারবে নাকি পারবেনা?
উত্তর: হ্যাঁ, করতে পারবে। (কিন্তু এ ব্যাপারে আপন কোন মহিলা ডাক্তার থেকে পরামর্শ নিন। কারণ, ঐ ধরনের ঔষধের ব্যবহার অনেক সময় মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, আর যদি খুব দ্রুত ক্ষতির সম্ভাবনার ব্যাপারে প্রবল ধারণা জন্মে, তবে ঔষধ ব্যবহার করাটা নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।) অবশ্য হায়েজ বন্ধ হওয়া অবস্থায় তাওয়াফ বিশুদ্ধ হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: যদি কেউ অযুবিহীন অথবা নাপাক কাপড়ে তাওয়াফে জিয়ারত করে নেয়, তার হুকুম কি?
উত্তর: অযু ছাড়া তাওয়াফে জিয়ারত করলে দম ওয়াজিব হবে। হ্যাঁ, তবে অযুসহ পুনরায় আদায় করে নেয়া মুস্তাহাব। পুনরায় আদায় করে নিলে দমও আর ওয়াজিব থাকবেনা। বরং ১২ই জিলহজ্জের পরেও যদি পুনরায় আদায় করে নেয়, তাহলে (তার উপর থেকে) দম রহিত হয়ে যাবে। নাপাক কাপড়ে প্রত্যেক ধরনের তাওয়াফ মাকরূহে তানযিহী, ঐ অবস্থায় করে নিলেও কোন কাফ্ফারা দিতে হবেনা।
তাওয়াফের নিয়্যতের খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাদানী ফুল
প্রশ্ন: আপনি দশম দিবসে “তাওয়াফে জিয়ারত” করার জন্যে হাজির হলেন, তবে ভুলে “নফল তাওয়াফের” নিয়্যত করে নিলেন। এখন কি করা প্রয়োজন?
উত্তর: আপনার “তাওয়াফে জিয়ারত” আদায় হয়ে গেছে। তবে একথা মনে রাখবেন যে, তাওয়াফের নিয়্যত করা ফরয, আর এটা ছাড়া তাওয়াফ হবেই না। তবে তাতে এই শর্ত নেই যে, কোন সুনির্দিষ্ট তাওয়াফের নিয়্যত করতে হবে। প্রত্যেক প্রকারের তাওয়াফ সাধারণ তাওয়াফের নিয়্যত দ্বারা আদায় হয়ে যাবে। বরং যে তাওয়াফকে কোন নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সংযুক্ত করে দেয়া হয়েছে, সে সময়ে আপনি অন্য তাওয়াফ করলেও তা আদায় হবে না। বরং সুনির্দিষ্ট সময়ের তাওয়াফ হিসেবেই ইহা গণ্য হয়ে যাবে। যেমন: কেউ ওমরার জন্য ইহরাম বেঁধে বাইরে থেকে উপস্থিত হল, আর ওমরার তাওয়াফের নিয়্যত না করে সাধারণ ভাবে শুধুমাত্র তাওয়াফেরই নিয়্যত করে নিল বরং নফল তাওয়াফে নিয়্যত করে নিল, তাহলে উপরের প্রত্যেক অবস্থায় ইহাকে ওমরার তাওয়াফ হিসেবেই গণ্য করা হবে। অনুরূপ কিরানের ইহরাম বেঁধে কেউ হাজির হল এবং আসার পরে সে যে প্রথম তাওয়াফটি করল তা ওমরারই হবে, আর দ্বিতীয় তাওয়াফ ‘তাওয়াফে কুদুম’ হিসেবে গণ্য হবে। (আল মাসলাকুল মুতাকাস্সিত লিল ক্বারী, ১৪৫ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: যদি তাওয়াফে জিয়ারত করা ছাড়া কেউ নিজ দেশে চলে যায়, তবে তার কাফ্ফারা কি হবে?
উত্তর: কাফ্ফারা দ্বারা তার রেহাই নেই। কেননা তার হজ্বও আদায় হল না। এই ভুলের সংশোধনের জন্য এর পরিপূরক কোন বদলা নেই। এখন তার উপর আবশ্যক হবে যে, সে পুনরায় মক্কা শরীফে আসবে এবং তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করবে, আর যতক্ষণ পর্যন্ত তাওয়াফে জিয়ারত করবে না ততক্ষণ পর্যন্ত তার জন্য তার স্ত্রী বৈধ হবে না। চাই এভাবে বছরের পর বছর অতিবাহিত হয়ে যাক। যদি এই ভুল কোন মহিলা করে তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত সে তাওয়াফে জিয়ারত করছে না, সে তার স্বামীর জন্য বৈধ হবে না। যদি এই ভুল কোন কুমারী মেয়ে করে বসে এবং এ অবস্থায় তার বিয়েও হয়ে যায়, তবুও যতক্ষণ পর্যন্ত সে ‘তাওয়াফে জিয়ারত’ করে নিবেনা ততক্ষণ পর্যন্ত সে (তার স্বামীর জন্য) বৈধ হবে না।
বিদায়ী তাওয়াফ প্রসঙ্গে প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন: তাওয়াফে রুখছত (বিদায়ী তাওয়াফ) করে নিল, তারপর গাড়ী লেইট হয়ে গেল। এখন নামায পড়ার জন্যে মসজিদুল হারামে যেতে পারবে কিনা? আর চলে আসার সময় কি বিদায়ী তাওয়াফ আবার করতে হবে?
উত্তর: হ্যাঁ! যেতে পারবে। বরং যতবার সুযোগ পাবেন আরো অতিরিক্ত ওমরা ও তাওয়াফ ইত্যাদি করে নিতে পারবেন। দ্বিতীয়বার তাওয়াফ করা ওয়াজিব নয়, কিন্তু করে নেয়া মুস্তাহাব। সদরুশ শরীয়াহ رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: ফিরে যাওয়ার (অর্থাৎ সফরের) ইচ্ছা ছিল কিন্তু কোন কারণে অবস্থান করতে হল; এখন যদি ইকামতের (অর্থাৎ ১৫দিনের বেশী সময় থাকার) নিয়্যত না করে, তাহলে ঐ তাওয়াফই যথেষ্ট, কিন্তু মুস্তাহাব হচ্ছে, পূনারায় আবার তাওয়াফ করা যাতে সর্বশেষ কাজ তাওয়াফই হয়। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৫১ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ১ম খন্ড, ২৩৪ পৃষ্ঠা)
বিদায়ী তাওয়াফের গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা
প্রশ্ন: যদি হজ্ব শেষে ফেরার দুই দিন পূর্বে জিদ্দা শরীফে যে কোন আত্মীয়ের কাছে থাকার ইচ্ছা আছে এবং এরপর মদীনা শরীফ যাওয়ার ইচ্ছাকরে তবে তাওয়াফে রুখছত কখন করবে?
উত্তর: জিদ্দা শরীফ গমন করার আগেই করে নিবেন। তাওয়াফে জিয়ারতের পরে যদি কেউ নফলী তাওয়াফ আদায় করে নেয়, তবে তাই হবে তাওয়াফে রুখছত। কেননা (মীকাতের বাইরের) বহিরাগত হাজীদের জন্য তাওয়াফে জিয়ারত করার পরেই তাওয়াফে রুখছতের সময় আরম্ভ হয়ে যায়, আর আগেই বর্ণনা করা হয়েছে যে, প্রত্যেক প্রকারের তাওয়াফ সাধারণ নিয়্যতে আদায় হয়ে যায়। সারকথা হল; নিজ দেশে ফেরত আসার পূর্বে তাওয়াফে জিয়ারতের পরে যদি কেউ ‘নফলী তাওয়াফ’ করে নেয় তখনই তার তাওয়াফে রুখছত আদায় হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: বিদায় হওয়ার সময় আফাকী (অর্থাৎ মীকাতের বাইরের) মহিলার হায়েজ চলে আসল, তখন তাওয়াফে রুখছত এর ব্যাপারে কী করবে? এখন কি সেখান অবস্থান করবে নাকি সে দম দিয়ে চলে যাবে?
উত্তর: তার উপর এখন আর তাওয়াফে রুখছত ওয়াজিব রইল না। সে নিজ দেশে চলে যেতে পারবে। দম দেওয়ারও তার আর প্রয়োজন হবে না। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৫১ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: যারা মক্কায়ে মুকাররমা কিংবা জিদ্দা শরীফে অবস্থান করে, তাদের উপরও কি তাওয়াফে রুখছত (বিদায়ী তাওয়াফ) ওয়াজিব?
উত্তর: জ্বি না। যারা মীকাতের বাহির থেকে হজ্বে আসে, তাদেরকে ‘আফাকী হাজী’ বলা হয়। শুধুমাত্র তাদের উপরই তাওয়াফে রুখছত ওয়াজিব।
প্রশ্ন: মদীনাবাসীরা যদি হজ্ব করে বিদায় কালে তাদের তাওয়াফে রুখছত করা ওয়াজিব, নাকি নয়?
উত্তর: ওয়াজিব। কেননা তারা আফাকী হাজী; মদীনায়ে মুনাওয়ারা মীকাত থেকে বাইরে অবস্থিত।
প্রশ্ন: ওমরাকারীদের উপরও কি তাওয়াফে রুখছত ওয়াজিব?
উত্তর: জ্বি না। ইহা শুধুমাত্র ‘আফাকী হাজীদেরই’ জন্য বিদায়কালে ওয়াজিব।
তাওয়াফ প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন: যে কোন তাওয়াফকালীন সময়ে ভিড়ের কারণে কিংবা অসতর্কতাবশতঃ কিছুক্ষণের জন্য যদি বুক অথবা পিঠকে কা’বা শরীফের দিকে হয়ে যায় তখন কি করবে?
উত্তর: তাওয়াফে বুক কিংবা পিঠ কা’বা শরীফের দিকে করে যতটুকু স্থান আপনি অতিক্রম করিয়েছেন, ঐ স্থান সমূহ পুনরায় তাওয়াফ করে দেয়া ওয়াজিব, আর উত্তম এই যে; ঐ চক্করটি আবার নতুনভাবে করে নেয়া।
হাজরে আসওয়াদকে ইসতিলাম করার সময় হাত কতটুকু উঠাবেন?
প্রশ্ন: তাওয়াফে হাজরে আসওয়াদের সামনে হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠানো সুন্নাত, নাকি নামাযী ব্যক্তির মত কান পর্যন্ত?
উত্তর: এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। “ফতোওয়ায়ে হজ্ব ও ওমরা” নামক কিতাবে আলাদা আলাদা মতামত গুলো উল্লেখ করতে গিয়ে লিখেছে: কান পর্যন্ত হাত উঠানো এটা পুরুষদের জন্য। কেননা তারা নামাযের জন্যও কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে থাকে, আর মহিলারা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবে। কেননা তারা নামাযের জন্য এতটুকু পর্যন্ত হাত উঠিয়ে থাকে। (ফতোওয়ায়ে হজ্ব ও ওমরা, ১ম খন্ড, ১২৭ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: নামাযের মত হাত বেঁধে তাওয়াফ করা কেমন?
উত্তর: (এরূপ করা) মুস্তাহাব নয়, বিরত থাকাই যুক্তিযুক্ত।
তাওয়াফকালীন চক্করের সঠিক সংখ্যা মনে না থাকলে তবে?
প্রশ্ন: যদি তাওয়াফকালীন চক্করের সংখ্যার গণনা ভুলে যায় কিংবা সংখ্যার ব্যাপারে সন্দেহ চলে আসে, তখন এই অবস্থার সমাধান কি?
উত্তর: যদি এই তাওয়াফ ফরজ হয় (যেমন: ওমরার তাওয়াফ অথবা তাওয়াফে জিয়ারত) কিংবা ওয়াজিব হয় (যেমন: তাওয়াফে বিদা বা বিদায় তাওয়াফ), তাহলে পুনরায় নতুনভাবে শুরু করবেন। যদি কোন একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি বলে দেয় যে, একটি চক্কর হয়েছে, তাহলে তার কথার উপর আমল করে নেয়া উত্তম, আর যদি দুইজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি বলে দেয় তাহলে তাদের কথার উপর অব্যশই আমল করবেন। আর যদি এই তাওয়াফ ফরয কিংবা ওয়াজিব এমন না হয়, যেমন: তাওয়াফে কুদুম (কেননা ইহা কিরান হজ্বকারী ও ইফরাদ হজ্বকারীর জন্য সুন্নাতে মুআক্কাদাহ) কিংবা অন্য কোন নফলী তাওয়াফ, তখন এমতাবস্থায় নিজের প্রবল ধরণার ভিত্তিতেই আমল করবেন।
তাওয়াফের মাঝখানে যদি অযু ভেঙ্গে যায় তখন কী করবে?
প্রশ্ন: যদি তৃতীয় চক্করে অযু নষ্ট হয়ে যায়, আর সে নতুন অযু করতে চলে গেল, তখন অযু করে ফিরে এসে সে কিভাবে তাওয়াফ আরম্ভ করবে?
উত্তর: ইচ্ছা হলে সাতটি চক্কর আবার নতুনভাবে শুরু করবে, আর এটারও অনুমতি আছে যে, যে স্থান থেকে ছুটেছে (অর্থাৎ অযু ভঙ্গ হয়েছে) সেখান থেকেই পুনরায় শুরু করবে। চক্কর এর সংখ্যা চার কিংবা তার কম হলে এই হুকুম, আর যদি চার কিংবা তার বেশী চক্কর আদায় করে নেয়ার পরে হয়, তখন আর নতুন ভাবে করতে পারবে না। যে স্থান থেকে ছুটেছে, সেখান থেকেই আদায় করতে হবে। ‘হাজরে আসওয়াদ’ থেকেও আরম্ভ করার প্রয়োজন নেই। (দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৫৮২ পৃষ্ঠা)
প্রস্রাবের ফোঁটা পড়তে থাকা রোগীর তাওয়াফের গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা
প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি প্রস্রাবের ফোঁটা পড়তে থাকা ইত্যাদি রোগের কারণে ‘শরয়ী মাজুর’ বলে সাব্যস্থ হয়, তাহলে তাওয়াফের জন্য তার অযু কতক্ষণ পর্যন্ত কার্যকর হবে?
উত্তর: যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ (ওয়াক্তের) নামাযের সময়সীমা বাক্বী থাকবে (ততক্ষণ পর্যন্ত তার অযু কার্যকর ভূমিকা রাখবে)। সদরুশ শরীয়া رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেছেন: মাজুর ব্যক্তি তাওয়াফ কালীন সময়ে চার চক্কর করার পর যদি নামাযের সময় চলে যায়, তাহলে এখন তার জন্য (শরয়ী) নির্দেশ হচ্ছে অযু করে তাওয়াফ করবে। কেননা নামাযের সময় চলে যাওয়ার কারণে মাজুর ব্যক্তির অযু ভেঙ্গে যাবে, আর অযু ব্যতিত তাওয়াফ করা হারাম। এখন (সে) অযু করে বাক্বী চক্কর গুলো পরিপূর্ণ করবে, আর যদি চার চক্কর করার পূর্বেই (নামাযের) ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায় তখনও অযু করে বাক্বী (চক্কর) গুলো পূর্ণ করবে। আর এক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে যে, শুরু থেকে পুনরায় (আবার তাওয়াফ) শুরু করা। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১০১ পৃষ্ঠা। আল মাসলাকুল মুতাকায্যিত, ১৬৭ পৃষ্ঠা)।
শুধুমাত্র প্রস্রাবের ফোঁটা চলে আসার কারণে কেউ ‘শরয়ী মাজুর’ হয়ে যায় না, এ ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে। এর বিস্তারিত জানার জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত কিতাব ‘নামাযের আহকাম’ অধ্যয়ন করুন।
মহিলারা তাদের ঋতুবর্তীকালীণ সময়ে ‘নফল তাওয়াফ’করে ফেললে তবে?
প্রশ্ন: কোন মহিলা যদি ঋতুবর্তীকালীন সময়ে ‘নফল তাওয়াফ’ করে ফেলে তাহলে এর হুকুম কি?
উত্তর: গুনাহগার হবে এবং দমও ওয়াজিব হবে। সুতরাং আল্লামা শামী رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেছেন: নফল তাওয়াফ যদি অপবিত্র অবস্থায় (বিনা গোসলে অথবা মহিলারা ঋতুবর্তীকালীণ সময়ে) করে, তাহলে দম ওয়াজিব হবে, আর যদি বিনা অযুতে করে তাহলে সদ্কা (ওয়াজিব হবে)। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৬৬১ পৃষ্ঠা) যদি গোসল অনাদায়ী ব্যক্তি পবিত্র হওয়ার পর এবং অযু বিহীন ব্যক্তি অযু করার পর তাওয়াফ পুনরায় করে নেয়, তাহলে (তার) কাফ্ফারা রহিত হয়ে যাবে। কিন্তু যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে এরূপ করে থাকে, তাহলে তাওবা করতে হবে। কেননা ঋতুবর্তী সময় এমনকি অযু ছাড়া তাওয়াফ করা গুনাহ।
প্রশ্ন: তাওয়াফে ৮ম চক্করকে ৭ম মনে করল পরে স্মরণ আসল যে, ইহা ৮ম চক্করই, তখন কি করবে?
উত্তর: এখানেই (ঐ চক্করেই) তাওয়াফ শেষ করে নিবেন। হ্যাঁ! যদি জেনে বুঝে (সে) ৮ম চক্কর করে, তাহলে এটা একটি নতুন তাওয়াফ শুরু হয়ে গেল। এখন এটারও সাত চক্কর পূর্ণ করতে হবে। (প্রাগুক্ত, ৫৮১ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: ওমরার তাওয়াফের এক চক্কর ছুটে গেলে কী কাফ্ফারা আদায় করতে হবে?
উত্তর: ওমরার তাওয়াফ ফরয। ইহার এক চক্করও যদি ছুটে যায়, তাহলে দম ওয়াজিব হবে। যদি মোটেও তাওয়াফ না করে থাকে কিংবা অধিকাংশ চক্কর (অর্থাৎ চার চক্কর) ছেড়ে দেয় তাহলে কাফ্ফারা দিতে হবে না বরং তা আদায় করে দেয়া আবশ্যক হবে। (লুবাবুল মানাসিক, ৩৫৩ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: কিরানকারী কিংবা মুফরিদ হাজী তাওয়াফে কুদুমকে ছেড়ে দিল, তখন তার কী শাস্তি?
উত্তর: তার উপর কোন কাফ্ফারা নেই। তবে সুন্নাতে মুআক্কাদা ত্যাগকারী হল এবং খুবই মন্দ কাজ করল। (লুবাবুল মানাসিক ওয়াল মাস লাকুল মুতাকায্যিত, ৩৫২ পৃষ্ঠা)
মসজিদুল হারামের ১ম অথবা ২য় তলা থেকে তাওয়াফ করার মাসআলা
প্রশ্ন: মসজিদুল হারামের ছাদে উঠে তাওয়াফ করা যাবে কি যাবে না?
উত্তর: যদি মসজিদুল হারামের ছাদে উঠে পবিত্র কা’বা ঘরের তাওয়াফ করে, তাহলে ফরয তাওয়াফ আদায় হয়ে যাবে। যদি মাঝখানে কোন দেয়াল ইত্যাদি আড়াল বা পর্দা হিসাবে না দাঁড়ায়। কিন্তু যদি নিচে মাতাফে তাওয়াফ করতে পারার কোন সম্ভাবনা সুযোগ থাকে তাহলে ছাদে উঠে তাওয়াফ করা মাকরূহ, আর তা এ কারণে যে, এ ভাবে তাওয়াফ করলে বিনা প্রয়োজনে মসজিদের ছাদে উঠা ও চলাচল করার ব্যাপারটি প্রকাশ পাচ্ছে যা মাকরূহ। এরই সাথে এই অবস্থায় তাওয়াফ করলে কা’বা শরীফের নিকটবর্তী হওয়ার স্থলে অনেক দূরবর্তী হওয়াটা প্রকাশ পাচ্ছে, আর বিনা কারণে নিজেকে খুব কষ্ট এবং ক্লান্তির মাঝে ফেলাও হচ্ছে। যেহেতু অধিকতর নিকটবর্তী স্থান দিয়ে তাওয়াফ করা উত্তম, আর বিনা কারণে নিজেকে নিজে কষ্টের মাঝে পতিত করা নিষেধ। হ্যাঁ! যদি নিচে জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে অথবা সুযোগ পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার ক্ষেত্রে যদি কোন প্রতিবন্ধকতা এসে যায়, তবে ছাদে উঠে তাওয়াফ করা কোন ধরণের মাকরূহ ছাড়া জায়েয। وَ اللهُ تَعَالٰى أَعْلَمُ (মাহানামা আশরাফিয়্যা, জুন সংখ্যা ২০০৫ইং, ১১তম ফকীহ সেমীনার, ১৪ পৃষ্ঠা)
তাওয়াফ চলাকালে উঁচু আওয়াজে মুনাজাত করা কেমন?
প্রশ্ন: তাওয়াফ করার সময় উঁচু আওয়াজে দোআ, মুনাজাত অথবা না’ত শরীফ ইত্যাদি পড়া কেমন?
উত্তর: এতটুকু আওয়াজে পড়া, যা দ্বারা অন্য তাওয়াফকারী অথবা নামাযী ব্যক্তির সমস্যা হয়, তবে তা মাকরূহে তাহরীমি। না-জায়েয ও গুনাহ। অবশ্য কারো কষ্ট না হয় এমন ধরনের গুনগুন করে অর্থাৎ নিম্নস্বরে পড়ার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা নেই। এক্ষেত্রে ঐ সকল সাহেবরা খুব গভীর ভাবে চিন্তা করে দেখুন যাদের মোবাইল ফোন থেকে তাওয়াফ করার সময় রিংটোন সর্বদা বাজতেই থাকে, আর এইদিকে ইবাদত কারীদের খুবই বিরক্ত ও পেরেশান করতে থাকে। তাদের সকলের উচিত তারা যেন তাওবা করে নেয়। স্মরণ রাখবেন! এই হুকুম (বিধান) শুধুমাত্র ‘মসজিদুল হারামের’ ক্ষেত্রে নয় বরং সকল মসজিদ এমনকি সকল স্থানের জন্য প্রযোজ্য, আর মিউজিক্যাল টোন মসজিদ ছাড়াও (সর্বদা) না-জায়েয।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for supporting.