আপডেট
সম্পূর্ণ বিজ্ঞাপণমুক্ত সাইট। শিখুন-জানুন বিরক্তিছাড়া।
বাংলা ভাষায় অলাভজনক বৃহত্তম ইসলামিক ওয়েবসাইট বানানোর প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছে ইসলামী জীবন টিম। আসছে মোবাইল অ্যাপলিকেশন... সাইট www.islamijibon.net

মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০১৭

হজ্বের মাসাইল: পর্ব-২ হজ্ব ও ওমরাকারীদের জন্য ৫৬টি নিয়্যত

(রিওয়ায়াত,       হিকায়াত        ও        মাদানী        ফুল  সম্বলিত)

(উপরোক্ত       নিয়্যত       সমূহ       থেকে       হজ্ব       ও  ওমরাকারী নিজেদের সামর্থ   অনুসারে ঐ সমস্ত  নিয়্যত গুলো  করবেন,  যার উপর আমল করার আপনার পরিপূর্ণ মন-মানসিকতা আছে।)

﴾১﴿  শুধুমাত্র   আল্লাহ  তাআলার   সন্তুষ্টি  অর্জনের জন্য   হজ্ব করব।   (কবুল  হওয়ার  জন্য ইখলাছ তথা অন্তরের    একনিষ্টতা  থাকা   পূর্বশর্ত,   আর ইখলাছ   অর্জনের   ক্ষেত্রে   এই   বিষয়টি   একান্ত  সহায়ক   যে, রিয়া   তথা   লোক   দেখানো   ভাব  এবং খ্যাতি   অর্জনের  সকল   উপাদান গুলোকে বর্জন  করা।)  নবী কারীম  صَلَّی   اللہُ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন:  “লোকদের  মাঝে এমন   একটি   সময়   আসবে, আমার   উম্মতের  মধ্যকার     ধনীরা     ভ্রমণ     ও     আনন্দের     জন্য,  মধ্যবিত্তরা  ব্যবসার জন্য, ক্বারীরা দেখানোর ও শোনানোর  জন্য  আর    গরীবেরা   ভিক্ষার   জন্য  হজ্ব    করবে।   (তারিখে    বাগদাদ,      ১০ম খন্ড, ২৯৫ পৃষ্ঠা)

﴾২﴿   এই   আয়াতে    মোবারাকার    উপর    আমল করব:
وَ    اَتِمُّوا  الۡحَجَّ  وَ الۡعُمۡرَۃَ  لِلّٰہِ   

কানযুল   ঈমান   থেকে    অনুবাদ:    এবং   হজ্ব   ও ওমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে পূর্ণ করো।   (পারা:   ২,    সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৯৬)


﴾৩﴿   (এই       নিয়্যতটি       শুধুমাত্র       ফরয       হজ্ব  আদায়কারী  ব্যক্তিই  করবেন)  আল্লাহ  তাআলা  এর আনুগত্য করার  নিয়্যতে কুরআনে পাকের  এই হুকুম:
 وَلِلهِ عَلَي النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡہِ سَبِیۡلًا

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং  আল্লাহরই   জন্য মানব   কুলের  উপর   সেই  ঘরের হজ্ব করা (ফরয), যে সেটা পর্যন্ত যেতে পারে। (পারা: ৪, সূরা:  আলে    ইমরান,  আয়াত:   ৯৭)  এর  উপর আমল করার সৌভাগ্য অর্জন করব।

﴾৪﴿  হুজুর,  নবী করীম  صَلَّی اللہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم এর অনুসরণার্থে হজ্ব করব।

﴾৫﴿ মা-বাবার সন্তুষ্টচিত্ত অনুমতি নিব। (স্ত্রী    স্বামীকে   রাজি  করাবে,  ঋণগ্রস্থ  ব্যক্তি  যে এখনও  ঋণ পরিশোধ  করতে  পারেনি,  সে  ঐ  (ঋণদাতা) ব্যক্তি  থেকেও  অনুমতি নিবে।    যদি এমতাবস্থায়   হজ্ব ফরযও     হয়ে   যায়,   আর   ঐ (ঋণদাতা)    ব্যক্তির  অনুমতিও  পাওয়া   গেলনা  তবুও   তাকে    (হজ্ব  করতে) চলে  যেতে    হবে।  (বাহারে     শরীয়াত,    ১ম    খন্ড,    ১০১৫    পৃষ্ঠা)   অবশ্য  ওমরা  অথবা   নফলী   হজ্ব  করার  ক্ষেত্রে মা-বাবার অনুমতি ব্যতিরেকে যাত্রা করবেন না। এই    কথাটি    সমাজে    ভুল   প্রচলিত   আছে   যে, যতক্ষণ    পর্যন্ত   মা-বাবা   হজ্ব    করেনি,   ততক্ষণ  পর্যন্ত সন্তানেরা হজ্ব করতে পারবে না।)
হজ্ব গাইড- হজ্বের নিয়ত সমূহ
﴾৬﴿   হালাল সম্পদ   দ্বারা হজ্ব করব।   (অন্যথায় হজ্ব  কবুল  হওয়ার  সম্ভাবনা   নেই)  চাই   হজ্বের সামর্থ্য বিনষ্ট      হয়ে     যাক     অথবা     সময়সীমা অতিবাহিত হয়ে যাক। যদি  নিজ সম্পদে   কোন প্রকারের হালাল-হারাম       মিশ্রণের       সম্ভাবনা থাকে, তবে ঋণ করে  হজ্বে  যেতে পারেন  আর ঐ   ঋণ   পরবর্তীতে আপনার   (ঐ   সন্দেহযুক্ত)  সম্পদ থেকে  আদায় করে দিন। (অনুরূপভাবে) হাদীস  শরীফে  রয়েছে:  “যে ব্যক্তি হারাম মাল  নিয়ে হজ্বে যায়, আর  لَبَّیۡکَ বলে তখন  অদৃশ্য থেকে   হাতিফ   জবাব   দেয়,  না তোমার   لَبَّیۡکَ কবুল,   না    খেদমত   কবুল   এবং   তোমার    হজ্ব তোমার   মুখে    ছুড়ে  মারা  হয়।  এ  পর্যন্ত বলে থাকে   যে,     তুমি   ঐ   হারাম   মাল     যা    তোমার দখলে  রয়েছে তা তার হকদারদেরকে  ফিরিয়ে দাও।   (ফতোওয়ায়ে    রযবীয়া,    ২৩তম    খন্ড, ৫৪১ পৃষ্ঠা)

﴾৭﴿   হজ্বের   সফরের    জন্য   কেনা-কাটা   করার  ক্ষেত্রে  দর কমানো জন্য কথা  কাটাকাটি থেকে বেঁচে থাকব।    (আমার     আক্বা    আ’লা   হযরত, ইমাম আহমদ রযা   খান    رَحۡمَۃُ   اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেছেন: দাম  কমানোর জন্য  দীর্ঘালাপ ও দর কষাকষি  করা   উত্তম বরং   সুন্নাত, শুধু ঐ  বস্থর ক্ষেত্রে   ছাড়া  যা হজ্বের  সফরের    জন্য  খরিদ করা    হয়।   এ   ক্ষেত্রে    (অর্থাৎ   হজ্বের   সফরের কেনাকাটায়)   উত্তম       এটাই   যে, বিক্রেতা    যে মূল্যই    চাই    তা       দিয়ে    দেয়া।    (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১৭তম খন্ড, ১২৮ পৃষ্ঠা)

﴾৮﴿  যাত্রা   শুরু    করার    সময়  পরিবার  পরিজন, আত্মীয়   স্বজন  এবং  বন্ধু-বান্ধব   থেকে    নিজের ভুল-ত্রুটির    জন্য    ক্ষমা     চেয়ে      নিব।      তাদের মাধ্যমে    নিজের     জন্য      দোআ    করিয়ে     নিব। (অন্যের দ্বারা দোআ করানোতে বরকত অর্জিত হয়। নিজের পক্ষে অন্যের দোআ কবুল হওয়ার ব্যাপারে খুব বেশী সম্ভাবনা রয়েছে।
দা’ওয়াতে        ইসলামীর        প্রকাশনা          প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ৩২৬ পৃষ্ঠা সম্বলিত “ফযায়েলে দোআ” (দোআর ফযীলত) নামক কিতাবের ১১১ নং পৃষ্ঠায়  উদ্ধৃত রয়েছে: হযরত মুসা عَلَیۡہِ  السَّلَام  কে  বলা   হলো।    হে মুসা! আমার নিকট ঐ মুখে দোআ কর, যে মুখে তুমি     গুনাহ    করোনি। আরজ    করলেন:   ওহে আমার মালিক! ঐ মুখ আমি কোত্থেকে আনব? (এটা  নবী  عَلَیۡہِمُ  السَّلَامদের বিনয়  ও  নম্রতার  বহিঃপ্রকাশ, অন্যথায় নিঃসন্দেহে তাঁরা প্রত্যেক প্রকারে গুনাহ থেকে পবিত্র) ফরমালেন: অন্যের দ্বারা দোআ করাও, কেননা  তার  মুখ দ্বারা তুমি গুনাহ   করনি।     (মাওলানা   রুম    কর্তৃক   প্রণীত মসনবী শরীফ, ৩য় খন্ড, ৩১ পৃষ্ঠা)

﴾৯﴿ প্রয়োজনের           অতিরিক্ত          পাথেয়   (টাকা-পয়সা)   সাথে    রেখে   সফরের    সঙ্গীদের জন্য খরচ করে ও ফকিরদের প্রতি সদকা করে সাওয়াব     অর্জন    করব।    (এমন    করাটা     হজ্বে মাবরুরের  আলামত) মাবরুর    ঐ   হজ্ব   আর   ঐ  ওমরাকে  বলে: যাতে   কল্যাণ ও   উপকার  হয়, কোন   গুনাহ  করা  হয়  না। লোক  দেখানো    ও লোক  শুনানো   আমল না হয়,  মানুষদের সাথে  দয়ার   ভাব   প্রদর্শণ   করা,      খাবার খাওয়ানো, নম্রভাষায় কথা বার্তা বলা,    আগ্রহ   নিয়ে  বেশী বেশী সালাম  করা, আনন্দঘন মেজাজে সাক্ষাত করা,   এই    সকল    জিনিস,   যা   হজ্বকে   মাবরুর করে  দেয়।    যখন  খাবার  খাওয়ানোটাও   হজ্বে  মাবরুর   এ     মধ্যে   অন্তর্ভূক্ত।   তাই   প্রয়োজনের অতিরিক্ত      টাকা-পয়সা        সাথে        নিন,      যাতে সঙ্গী-সাথীদের            সাহায্য            ও            ফকীরদের  দান-সদকা      করতে      পারেন।       মূলত       مَبرور ‘মাবরুর’  শব্দটি আরবী  “بِر”  থেকে  গঠন  করা  হয়েছে। যার অর্থ হয়, ঐ আনুগত্য ও দয়া, যার দ্বারা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করা যায়। (কিতাবুল হজ্ব, ৯৮ পৃষ্ঠা)

﴾১০﴿ জিহ্বা  ও চোখ ইত্যাদির  হিফাযত করব  (“নছীহতু  কে  মাদানী    ফুল”  নামক    রিসালার  ২৯   ও   ৩০ নং     পৃষ্ঠায়    রয়েছে:   {১}   (হাদীস শরীফে     রয়েছে:     “আল্লাহ     তাআলা     ইরশাদ  করেছেন:) হে ইবনে আদম! তোমার দ্বীন (তথা ধর্ম-কর্ম)  ততক্ষণ  পর্যন্ত    বিশুদ্ধ  হতে    পারেনা, যতক্ষণ   পর্যন্ত   তোমার জিহ্বা  সোজা    হবে   না, আর  তোমার  জিহ্বা  ততক্ষণ  পর্যন্ত  সোজা  হতে  পারেনা  যতক্ষণ  পর্যন্ত  তুমি আপন  রব  আল্লাহ  তাআলাকে    লক্ষ্য   করবে   না।   {২}    যে    ব্যক্তি আমার    হারাম      কৃত      বস্থগুলো থেকে    আপন চোখকে  নত   করে   নিল    (অর্থাৎ   সে   গুলোকে দেখা   থেকে    বেঁচেছে,   আমি    তাকে জাহান্নাম থেকে নিরাপত্তা দান করব)

﴾১১﴿ সফরকালীন সময়ে যিকির ও দরূদ শরীফ পাঠ     করে    অন্তরকে    তৃপ্ত     করব।    (এর    দ্বারা ফিরিশতারা সাথে  থাকেন! আর গান-বাজনা ও অহেতুক কথা-বার্তা চালু রাখলে শয়তান  সাথে থাকবে)

﴾১২﴿ নিজের জন্য এবং সকল মুসলমানের জন্য দোআ করতে থাকব। (মুসাফিরের দোআ কবুল হয়ে থাকে। এমনকি “ফযায়িলে দোআ” নামক কিতাবে  ২২০   পৃষ্ঠায়     রয়েছে;  এক  মুসলমান অপর মুসলমানের জন্য তার অনুপস্থিতে দোআ করলে  তা  কবুল  হয়)  হাদীস  শরীফে  রয়েছে:  “এর (অনুপস্থিতিতে)  দোআ    খুব  তাড়াতাড়ি কবুল হয়। ফিরিশতারা বলে থাকেন: ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে তোমার   দোআ    কবুল     হয়েছে   এবং নেয়ামত তোমারও অর্জন হয়েছে। 

 সবার  সাথে ভালো কথা-বার্তা বলব,  আর  সামর্থানুসারে মুসলমানদেরকে খাবার খাওয়াব। (নবী করীম   صَلَّی   اللہُ   تَعَالٰی     عَلَیْہِ    وَاٰلِہٖ   وَسَلَّم ইরশাদ  করেছেন:   “মাবরুর   হজ্বের   বদলা  হল জান্নাত। আরজ করা হল: ইয়া  রাসুলাল্লাহ  صَلَّی  اللہُ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم!  হজ্বের  মাবরুরিয়্যত  তথা কল্যাণ কোন বস্তুর সাথে সম্পৃক্ত? ইরশাদ করলেন:   ভাল   কথা-বার্তা   বলা,   আর    খাবার  খাওয়ানো।”(শুআবুল   ঈমান,  ৩য়   খন্ড, ৪৭৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৪১১৯)

﴾১৪﴿ পেরেশানী      আসলে      সবর       করব। (হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আবু হামিদ মুহাম্মদ     বিন      মুহাম্মদ     বিন     মুহাম্মদ গাযালী رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন:  সম্পদ  বা শরীরে কোন   প্রকারের ক্ষতি সাধন হলে অথবা বিপদ এসে পৌছলে, তখন তাকে আনন্দ চিত্তে কবুল   করুন। কেননা,   এটা    তার   জন্য    হজ্বে  মাবরুরের    আলামত।    (ইহ্‌ইয়াউল   উলুম,   ১ম খন্ড,  ৩৫৪ পৃষ্ঠা) 

﴾১৫﴿  নিজের  সঙ্গী সাথীদের সাথে ভালো ব্যবহার প্রদর্শনার্থে তাদের আরাম, বিশ্রাম ইত্যাদির খেয়াল রাখব। রাগ করা থেকে বাঁচব  এবং  অহেতুক  কথা-বার্তায়  লিপ্ত  হবনা।  মানুষের অশালীন কথা-বার্তা সহ্য করব।

﴾১৬﴿ আরবের সকল সরল প্রাণ বিশুদ্ধ আকীদা পোষণকারী  মুসলমানের সাথে  অত্যন্ত নম্রতার   সাথে মিশব।(চাই তারা খুবই কঠোরতা প্রদর্শন করুক   তবুও)।  (বাহারে   শরীয়াত,   ১ম  খন্ডের ৬ষ্ঠ     অধ্যায়ের     ১০৬০      নং     পৃষ্ঠায়     রয়েছে:  বেদুঈন   এবং   সকল    আরবদের    সাথে   অত্যন্ত নম্রতার সাথে মেলা মেশা করবেন। যদিও তারা কঠোরতা করুক তবুও অত্যন্ত আদবের সাথে তা সহ্য  করে নিন।  কেননা এতে  করে  শাফাআত  নসীব   হওয়ার   ওয়াদা   রয়েছে।    বিশেষ   করে  হারামাঈনের বাসিন্দারা,  আর বিশেষত মদীনা বাসীরা। আরব    বাসীদের    কোন    কর্মকান্ডে   বিরোধিতা করবেন   না    এবং   অন্তরে   ঘৃণা    ভাবও পোষণ করবেন     না।       এতে     করে     উভয়      জাহানের উপকারিতা অর্জিত হবে।

﴾১৭﴿ প্রচন্ড ভিড়ের স্থানেও যাতে মানুষের কষ্ট না হয়, সেদিকে লক্ষ্য   রাখব। যদি কারো  দ্বারা নিজে কষ্ট   পাই,  তবে   ধৈর্য্যধারণ  করে   তাকে ক্ষমা করে দিব।  (হাদীস শরীফে  রয়েছে:    “যে ব্যক্তি   আপন রাগকে   প্রশমিত   করবে   আল্লাহ  তাআলা কিয়ামতের দিন তার উপর থেকে নিজ আযাবকে উঠিয়ে নিবেন)। (শুআবুল ঈমান, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩১৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৮৩১১)

﴾১৮﴿  মুসলমানদের   ইনফিরাদি    কৌশিশ  করে নেকীর দাওয়াত দিয়ে সাওয়াব অর্জন করব।

﴾১৯﴿ সফরের সুন্নাত ও আদবের প্রতি যথাসাধ্য খেয়াল রাখব।

﴾২০﴿  ইহরাম    অবস্থায়   لَبَّيْڪ    তথা   তলবীয়্যা অধিক হারে পাঠ করব। (ইসলামী ভাইয়েরা উঁচু আওয়াজে        আর        ইসলামী        বোনেরা        নিচু  আওয়াজে বলবে)

﴾২১﴿    মসজিদাইনে      করীমাইনে    (অর্থাৎ     দুই মসজিদ তথা মসজিদে হেরম ও মসজিদে নববী ছাড়াও প্রত্যেক    স্থানে,    প্রত্যেক     মসজিদে)  প্রবেশের   সময়   প্রথমে  ডান  পা  ভিতরে  রাখব  এবং       মসজিদে প্রবেশের       দোআ       পড়ব।  অনুরূপভাবে  বের হওয়ার সময় প্রথমে  বাম পা বাইরে রাখব এবং বের হওয়ার দোআ  পড়ব। 

﴾২২﴿     যখনই     কোন     মসজিদে    বিশেষ    করে মসজিদাইনে    করীমাইনে      প্রবেশের    সৌভাগ্য নসীব হবে,  তখনই  নফল  ইতিকাফের  নিয়্যত  করে  সাওয়াব  অর্জন   করব।   (স্মরণ   রাখবেন!  মসজিদে খাবার খাওয়া,   পান করা, জমজমের পানি   পান করা, সেহরী   ও   ইফতার করা এবং ঘুমানো জায়েয নেই। ইতিকাফের নিয়্যত করে  নিলে   আপনা    আপনি    এই   সব    কাজ   করাটা  জায়েয হয়ে যায়।)

﴾২৩﴿ কা’বা       শরীফের     উপর     প্রথম     দৃষ্টি পড়তেই দরূদ শরীফ পড়ে দোআ করব।

﴾২৪﴿    তাওয়াফ    করার    সময়   ‘মুসতাজাব’এর স্থানে          (যেখানে         ৭০          হাজার         ফিরিশতা দোআকালে ‘আমীন্তু বলার জন্য নিযুক্ত রয়েছে, সেখানে) নিজের এবং সকল  উম্মতের গুনাহের ক্ষমা চেয়ে দোআ করব।

﴾২৫﴿ যখনই জমজমের পানি পান করব, সুন্নাত আদায়ের  নিয়্যতে  ক্বিবলামুখী  হয়ে,  দাঁড়িয়ে, বিসমিল্লাহ    পড়ে,   ধীরে  ধীরে  তিন  নিঃশ্বাসে, পেটভরে  পান  করব।   অতঃপর   দোআ    করব।  কেননা এটা দোআ কবুল হওয়ার সময়।
(নবী   করীম   صَلَّی     اللہُ    تَعَالٰی   عَلَیْہِ   وَاٰلِہٖ    وَسَلَّم ইরশাদ    করেছেন: “আমরা  এবং মুনাফিকদের মাঝে   পার্থক্য হল,   তারা   জমজমের   পানিকে  পেট  ভরে  পান  করে    না।  (ইবনে  মাযাহ,   ৩য় খন্ড, ৪৮৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৩০৬১)

﴾২৬﴿  ‘মুলতাযিম’এর   সাথে  নিজেকে   জড়িয়ে নেয়ার তথা  তা ছোঁয়ার সময় এই নিয়্যত করুন যে, অত্যন্ত    ভালবাসা ও  আনন্দের  সাথে কাবা  শরীফ   এবং    কাবার    মারিকের   নৈকট্য   অর্জন করছি, আর এর সংস্পর্শে বরকত অর্জন করছি। (ঐ সময়  এই আশা রাখুন   যে, কাবা   শরীফের ঐ     সকল     অংশ, যা    কা’বা    শরীফের    সাথে লেগেছে اِنۡ شَآءَ اللہ عَزَّوَجَلّ জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্ত থাকবে।)

﴾২৭﴿ কা’বা শরীফের গিলাফের সাথে নিজেকে জড়ানোর সময় বা গিলাফের কাপড় জড়িয়ে ধরার সময়   এই    নিয়্যত   করুন    যে,   ক্ষমা   ও  নিরাপত্তা লাভের আবেদন করছি, যেমন: কোন দোষী   ব্যক্তি ঐ  ব্যক্তির  কাপড় জড়িয়ে ধরে অঝোর নয়নে কান্না করতে থাকে যার সে দোষ করেছে এবং খুব বিনয়ও  প্রকাশ  করে   থাকে।   তাই যতক্ষণ নিজ গুনাহের ক্ষমা না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত      হাত      ছাড়ব      না। (কা’বার      গিলাফ  ইত্যাদিতে     প্রায়    সব   জায়গায়   লোকেরা    খুব বেশী   পরিমাণে    সুগন্ধি   লাগায়।   তাই ইহরাম  অবস্থায় সতর্কতা অবলম্বণ করুন।)

﴾২৮﴿ “রমীয়ে     জামরাত”তথা     শয়তানকে পাথর  নিক্ষেপের  সময়  হযরত  ইবরাহীম  عَلَیۡہِ  السَّلَام   এর  সাথে   সাদৃশ্যতা  ও  প্রিয়  নবী  صَلَّی اللہُ   تَعَالٰی  عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم  এর  সুন্নাতের   উপর আমল,   শয়তানকে    লাঞ্চিত   করে    মেরে   দূরে তাড়িয়ে     দেওয়া     এবং     নফসের     খায়েশকে  পাথর     মেরে   ধুলিস্যাৎ   করার   নিয়্যত    করব। (ঘটনা:    হযরত    সায়্যিদুনা    জুনাইদ    বাগদাদী  رَحۡمَۃُ   اللہِ     تَعَالٰی    عَلَیْہِ   এক    হাজী   সাহেবকে জিজ্ঞাসা      করলেন:        তুমি     ‘রমী’করার     সময় নফসের খায়েশ গুলোকে কংকর নিক্ষেপ করেছ নাকি   করনি?    সে   উত্তর    দিল:   না!    বললেন: তাহলে তো তুমি ‘রমী’ই  করনি, (অর্থাৎ ‘রমী’র পরিপূর্ণ হক আদায়  করনি।)   (কাশফুল মাহযুব থেকে সংকলিত, ৩৬৩ পৃষ্ঠা)

﴾২৯﴿ হুযুর صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم বিশেষ করে     ৬     জায়গায়     অর্থাৎ      সাফা,      মারওয়া, আরাফাত, মুযদালিফা,         জামরায়ে         উলা,  জামরায়ে   উসতায়  দোআর   জন্য    দাঁড়াতেন। আমিও  হুযুর صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم এর এই সুন্নাতকে  আদায়  করার নিয়্যতে  ঐ  সকল স্থানে যেখানে সম্ভব হয় দাঁড়িয়ে দোআ করব।

﴾৩০﴿ তাওয়াফ ও  সাঈ করার  সময়  লোকদের ধাক্কা  দেয়া  থেকে  বাঁচার  চেষ্টা  করব।     (জেনে বুঝে  ইচ্ছাকৃতভাবে   কাউকে এমন  ভাবে ধাক্কা দেয়া যাতে সে কষ্ট  পায়, এরূপ করাটা  বান্দার হক   বিনষ্ট করা   এবং   গুনাহপূর্ণ   কাজ।   এমন  হলে  তবে    তাকে    তাওবাও  করতে  হবে  এবং বুযুর্গদের     থেকে বর্ণিত     আছে      যে,     আল্লাহ তাআলার       অপছন্দনীয়      একটি       অতি       ক্ষুদ্র  পরিমাণের কাজকে বর্জন  করাটা  আমার নিকট ৫ শত নফল হজ্ব করার চেয়ে বেশী পছন্দনীয়। (জামেউল উলুম  ওয়াল হেকম  লিইবনে   রজব, ১২৫ পৃষ্ঠা)

﴾৩১﴿   ওলামা  ও   মাশায়েখে  আহ্‌লে   সুন্নাতের  সাক্ষাত ও সঙ্গ লাভ করে বরকত হাসিল করব, তাদের দ্বারা   নিজের  জন্য  বিনা   হিসাবে  ক্ষমা লাভের দোআ করিয়ে নিব।

﴾৩২﴿ অধিকহারে   ইবাদত করব। বিশেষ   করে পাঁচ ওয়াক্ত নামায নিয়মিত আদায় করব।

﴾৩৩﴿ গুনাহ      থেকে সারা  জীবনের      জন্য  স্থায়ীভাবে        তাওবা করব এবং শুধুমাত্র ভালোদের সংস্পর্শে  থাকব। ইহ্‌ইয়াউল উলুমে রয়েছে:     হজ্বের     মাবরুরের     আলামত     একটা  এটাও  রয়েছে  যে, যে    গুনাহ  পূর্বে    করত   তা  ছেড়ে  দেয়,    খারাপ   বন্ধুদের  সঙ্গ  ত্যাগ  করে নেক্‌কার বান্দাদের সাথে বন্ধুত্ত্ব করে, খেলাধুলা এবং    অলসতার    আসর   গুলোকে   বর্জন    করে  যিকির  ও  হৃদয়    জাগানোর মজলিস গুলোকে আপন  করে     নেয়া।   ইমাম  গাযালী   رَحۡمَۃُ  اللہِ تَعَالٰی    عَلَیْہِ   অন্যত্র     বলেন:    হজ্বে মাবরূরের আলামত    হল    এটা    যে,    দুনিয়া    বিমুখতা    ও  আখেরাতের  প্রতি ঝুঁকি হওয়া  এবং   বায়তুল্লাহ শরীফের জেয়ারত     লাভের     পর    আপন     রব عَزَّوَجَلَّ এর সাথে সাক্ষাতের জন্য প্রস্থতি নিবে। (ইহ্‌ইয়াউর    উলুম, ১ম খন্ড,     ৩৪৯,      ৩৫৪ পৃষ্ঠা)

﴾৩৪﴿  হজ্ব থেকে  ফিরে এসে   গুনাহের  কাছেও  যাবনা।  নেক কাজের  মাত্রা  বাঁড়িয়ে দিব এবং সুন্নাতের উপর  আরো বেশী করে আমল করব। (আ’লা   হযরত    رَحۡمَۃُ  اللہِ    تَعَالٰی  عَلَیْہِ   বলেন: হজ্বে    যাওয়ার    পূর্বের   আল্লাহর   হক   সমূহ   ও বান্দার হক সমূহ  যার  যিম্মায়  বাকী  ছিল) যদি  হজ্ব    থেকে      ফিরে   আসার   পর সামর্থ্য   থাকা  সত্ত্বেও  ঐ কার্যাবলী  যেমন: কাযা নামায, কাযা রোযা, বাকী থেকে যাওয়া যাকাত ইত্যাদি এবং বিনষ্ট করা বান্দার বাকী হক সমূহের আদায়ের) ব্যাপারে      চুপচাপ    থাকে,    তাহলে   এই   সকল গুনাহ  আবার  নতুনভাবে  তার  মাথায়  বর্তাবে।  কেননা   হক   গুলোতো   পূর্ব   থেকেই   অনাদায়ী  ছিল।
এখন  আবার হজ্ব থেকে এসে দেরি ও অলসতা করার  কারণে  গুনাহগুলোর  পূণরায়  তাজা  হল  আর তার কৃত   ঐ  হজ্ব   তার গুনাহগুলোকে  দূর করতে যথেষ্ট হবেনা। কেননা হজ্ব পূর্বের গুনাহ গুলোকে  ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয়- মানে  এটা নয়  যে,  ভবিষ্যতের জন্য গুনাহ করার অনুমতি পত্র পেয়ে যাওয়া। বরং হজ্বে  মাবরূর এর  চিহ্ন হল  এটাই   যে,   পূর্বের  চেয়ে  আরো   ভাল  হয়ে ফেরা।   (ফতোওয়ায়ে   রযবীয়া,   ২৪তম   খন্ড,  ৪৬৬ পৃষ্ঠা)

﴾৩৫﴿ মক্কায়ে মুকার্‌রমা ও মদীনায়ে মুনাওয়ারা এর   স্মরণীয়   বরকতপূর্ণ   স্থানগুলোর   জেয়ারত  করব।

﴾৩৬﴿ সৌভাগ্য  মনে   করে   সাওয়াবের নিয়্যতে মদীনায়ে মুনাওয়ারা জেয়ারত করব।

﴾৩৭﴿ প্রিয় নবী صَلَّی  اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم  এর অমূল্য রত্মের ভান্ডার নূরানী দরবারের ১ম জেয়ারতের পূর্বে   গোসল    করব,    নতুন   সাদা পোষাক, মাথার  উপর   নতুন সরবন্দ এবং তার উপর   নতুন   ইমামা শরীফ    (পাগড়ী    শরীফ) বাঁধব, সুরমা ও উন্নত খুশবু লাগাব।

﴾৩৮﴿ আল্লাহ তাআলার এই মহান ইরশাদ:

وَ لَوۡ اَنَّہُمۡ اِذۡ ظَّلَمُوۡۤا اَنۡفُسَہُمۡ جَآءُوۡکَ فَاسۡتَغۡفَرُوا اللّٰہَ وَ اسۡتَغۡفَرَ  لَہُمُ الرَّسُوۡلُ لَوَجَدُوا  اللّٰہَ تَوَّابًا رَّحِیۡمًا

{কানযুল     ঈমান    থেকে     অনুবাদ:     এবং     যদি কখনো   তারা   নিজেদের    আত্মার   প্রতি     জুলুম করে     তখন,     হে     মাহবুব!     (তারা)     আপনার  দরবারে   হাযির    হয়     এবং    অতঃপর   আল্লাহর  নিকট   ক্ষমা  প্রার্থনা   করে,     আর  রসুল  তাদের পড়্গ্যে      সুপারিশ      করেন।      তবে        অবশ্যই আল্লাহকে    অত্যন্ত   তাওবা   কবুলকারী,   দয়ালু   পাবে। (পারা: ৫, সূরা: নিসা, আয়াত: ৬৪) }   এর    উপর    আমল   করে    শাহানশাহে  মদীনা, প্রিয় আক্বা صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর    অসহায়দের     আশ্রয়স্থল   দরবারে   হাজেরী দিব।

﴾৩৯﴿   যদি  সম্ভব    হয়  তাহলে  আমাদের   উপর দয়াকারী, আমাদের দুঃখে দুঃখী আক্বা  صَلَّی اللہُ تَعَالٰی  عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم  এর  আশ্রয়রূপী  দরবারে  এমনই       হাযির     হব     যেভাবে     এক     পলাকত গোলাম আপন মুনিবের দরবারে ভয়ে কম্পমান হয়ে     অশ্রু     গড়াতে     গড়াতে     হাজির     হয়।  (ঘটনা: সায়্যিদুনা ইমাম মালিক رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ যখনই সায়্যিদে আলম صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم এর আলোচনা  করতেন   তখন উনার    চেহেরার   রং   বদলে    যেত   এবং     তিনি নিচের দিকে ঝুঁকে যেতেন।

ঘটনা:   হযরত  সায়্যিদুনা   ইমাম   মালিক  رَحۡمَۃُ اللہِ  تَعَالٰی   عَلَیْہِ   থেকে   কেউ  হযরত  সায়্যিদুনা  আইয়ুব সাখতিয়ানি  رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی  عَلَیْہِ   এর  ব্যাপারে  জিজ্ঞাসা করলে   তিনি   বললেন: আমি যে   সকল    ব্যক্তি থেকে   (হাদীস)    রেওয়ায়েত করে    থাকি,  তাদের   মধ্যে  তিনি  উত্তম।  আমি  তাঁকে   দুইবার   হজ্বের   সময়  দেখি,    যখন  তাঁর সামনে    নবী    করীম,    রউফুর    রহীম,    রাসুলে   আমীন, হুযুর صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর আলোচনা   হত,    তখন  তিনি  এত    বেশী  কান্না করতেন   যে   তা  দেখে   আমার  তাঁর   প্রতি  দয়া এসে যেত।   আমি    তাঁর  মধ্যে  যখন  তা’জীমে  মুস্তফা   ও  ইশকে হাবীবে  খোদার  এমন  অবস্থা দেখতে পেলাম,      তখন      তাঁর      প্রতি      খুবই  প্রভাবান্বিত  হয়ে  তাঁর  থেকে   মোবারক   হাদীস  সমূহ  বর্ণনা   করা  শুরু   করি।     (আশশিফা,  ২য়  খন্ড, ৪১, ৪২ পৃষ্ঠা)

﴾৪০﴿ ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার صَلَّی اللہُ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ   وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم    এর   শাহী   দরবারে অতি     আদব     ও     সম্মানের     সাথে     এবং     খুব  আনন্দাবেগ নিয়ে অতি বিনম্র আওয়াজে সালাম পেশ করব।

﴾৪১﴿ কুরআনে পাকের এই হুকুম:

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَرۡفَعُوۡۤا اَصۡوَاتَکُمۡ فَوۡقَ صَوۡتِ النَّبِیِّ وَ  لَا تَجۡہَرُوۡا لَہٗ بِالۡقَوۡلِ کَجَہۡرِ بَعۡضِکُمۡ  لِبَعۡضٍ اَنۡ    تَحۡبَطَ  اَعۡمَالُکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ  لَا تَشۡعُرُوۡنَ

(কানযুল           ঈমান          থেকে            অনুবাদ: হে ঈমানদারগণ!    নিজের     আওয়াজকে   অদৃশ্যের সংবাদ দাতা      (নবীর)    আওয়াজ     থেকে     উঁচু করোনা এবং তাঁর সামনে   চিৎকার   করে  কথা  বলোনা যেভাবে পরস্পরের মধ্যে একে অপরের সামনে      চিৎকার      করো        যে       কখনো       যেন তোমাদের কর্মসমূহ  নিষ্ফল  না হয়ে যায়,   আর তোমাদের খবরই থাকবেনা। (পারা: ২৬, সূরা: হুজরাত, আয়াত: ২) এর উপর আমল করে নিজ আওয়াজকে নরম ও নিচু রাখব।

﴾৪২﴿ (اَسْئَلُکَ الشَّفَاعَةَ يَا  رَسُوْلَ الله অর্থাৎ ইয়া রাসুলাল্লাহ صَلَّی اللہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم! আমি আপনার   শায়াআতের   ভিখারী।)   এই   বাক্যটি  বারংবার     বলে       বলে      শাফাআয়াতের     ভিক্ষা চাইব।

﴾৪৩﴿  শায়খাইনে কারীমাইনের  (অর্থাৎ  হযরত আবু   বকর   সিদ্দিক    ও   হযরত     ওমর    ফারুকে আযম رَضِیَ     اللہُ      تَعَالٰی     عَنۡہُمَا)     মহিমান্বিত  দরবারেও সালাম আরজ করব।

﴾৪৪﴿   হাযিরী    দেওয়ার   সময়   এদিক    সেদিক দেখা   ও   সোনালী   জালির    ভিতর    দৃষ্টি     দেয়া  থেকে বিরত থাকব।

﴾৪৫﴿ যে সব লোকেরা সালাম পেশ করার জন্য বলেছিলেন,  তাদের সালাম  প্রিয় নবী  صَلَّی   اللہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم এর  দরবারে  পেশ করব।

﴾৪৬﴿     সোনালী    জালির    দিকে  পিঠ  দিব  না।  (অর্থাৎ সোনালী জালিকে পিছনে রাখব না।)

﴾৪৭﴿  জান্নাতুল  বাক্বীতে যারা  দাফন হয়েছেন, সকলের খেদমতে সালাম আরজ করব।

﴾৪৮﴿  হযরত  সায়্যিদুনা    হামযা  رَضِیَ  اللہُ  تَعَالٰی عَنۡہُ ও শোহাদায়ে উহুদগণের মাযার জেয়ারত করব। দোআ ও  ইছালে সাওয়াব করব, জবলে উহুদ এর (উহুদ পাহাড়ের) দীদার করব।

﴾৪৯﴿ মসজিদে কূবা শরীফে হাযিরী দিব।

﴾৫০﴿ মদীনায়ে        মুনাওয়ারার         অলি-গলি, চৌকাট-দরজা, আসবাবপত্র, পাতা-পল্লব, ফুল আর কাঁটা,  মাটি-পাথর,       ধুলাবালি       এবং ওখানকার  প্রতিটি   বস্তুর   খুব  বেশী   বেশী  করে আদব       ও       সম্মান করব। (ঘটনা:       হযরত সায়্যিদুনা  ইমাম   মালিক رَحۡمَۃُ  اللہِ   تَعَالٰی عَلَیْہِ মদীনা      শরীফের     মাটির       সম্মানার্থে কখনো মদীনায়ে     তায়্যিবাতে     প্রকৃতির   ডাকে   সাড়া দেননি।     বরং    সবসময়    হেরম     শরীফ    থেকে বাইরে  বের হয়ে  তা  সেড়ে আসতেন।   অবশ্য অসুস্থ      অবস্থায়      অপারগতার      কারণে      মাযুর  হিসেবে  ভিতরে          সাড়তেন।  (বুসতানুল  মুহাদ্দিসীন, ১৯ পৃষ্ঠা)

﴾৫১﴿ মদীনায়ে         মুনাওয়ারার      কোন       বস্তুর দোষ-ত্রুটি   বের    করব   না।   (ঘটনা:   মদীনায়ে  মুনাওয়ারায় এক ব্যক্তি সর্বদা কান্না করত, আর ক্ষমা  প্রার্থনা  করতে   থাকত।  যখন   এর  কারণ জিজ্ঞাসা  করা হল;  তখন বলল:   আমি একদিন মদীনা    মুনাওয়ারার    দই    শরীফকে   টক   এবং খারাপ বলে      ফেলি,      এটা     বলতেই     আমার নিছবত      (অর্থাৎ      ছরকারে      দোআলম,      নূরে  মুযাস্‌সম, রাসুলে মুহতাশাম صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم  এর   সাথে   রূহারিয়্যতের   যে  একটা সম্পর্ক ছিল তা) দূরীভূত হয়ে গেল এবং আমার উপর  খুব অসন্তুষ্ট হলেন, আর ভৎসনা করলেন যে,   ‘ওহে   মাহবুবে   খোদার দরবারের   দইকে  খারাপ    সম্ভোধনকারী!   ভালবাসার   দৃষ্টি   দিয়ে  একটু       দেখ!     মাহবুবের      গলির প্রতিটি  বস্তু কতইনা      উৎকৃষ্ট।’     (বাহারে     মসনবী       থেকে উৎকলিত,        ১২৮        পৃষ্ঠা)        (ঘটনা:        হযরত  সায়্যিদুনা  ইমাম   মালিক رَحۡمَۃُ  اللہِ تَعَالٰی   عَلَیْہِ এর সামনে কোন এক ব্যক্তি এটা বলে দিল যে, মদীনার মাটি খারাপ! এটা শুনতেই তিনি رَحۡمَۃُ اللہِ    تَعَالٰی   عَلَیْہِ     ফতোওয়া   দিলেন     যে,   এই  বেয়াদবকে      দোররা        লাগানো      হোক এবং  বন্দীশালায় বন্দী করে রাখা হোক। (আশশিফা, ২য় খন্ড, ৫৭ পৃষ্ঠা)

﴾৫২﴿  প্রিয়জনদের,      আত্মীয়      স্বজনদের      ও  ইসলামী       ভাইদের        তোহফা       দেয়ার       জন্য  জমজমের পানি,  মদীনা   শরীফের  খেজুর  এবং তাসবীহ     ইত্যাদি    আনব।    (বারেগাহে     আ’লা হযরতে   প্রশ্ন    করা হল:    তাসবীহ   কোন   বস্তুর হওয়া    চাই?    লাকড়ি    নাকি    পাথরের    নাকি  অন্যকিছুর?   উত্তর:   তাসবীহ লাকড়ির   হোক  অথবা     পাথরের     কিন্তু     বেশী     মূল্যের     হওয়া  মাকরূহ, আর সোনা   চাঁদি হওয়াতো  হারাম। (ফতোওয়ায়ে    রযবীয়া,   ২৩তম     খন্ড, ৫৯৭ পৃষ্ঠা)

﴾৫৩﴿ যতক্ষণ     পর্যন্ত       মদীনায়ে    মুনাওয়ারায় থাকব অধিক হারে দরূদ ও সালাম পাঠ করব।

﴾৫৪﴿   মদীনায়ে   মুনাওয়ারায়   অবস্থান   কালীন  সময়ে  যখনই সবুজ গম্বুজের পাশ  দিয়ে যাওয়া হবে তখন      দ্রুত    তার    দিকে     চেহারা     করে দাঁড়িয়ে   দাঁড়িয়ে   হাত   বেঁধে   সালাম   আরজ  করব। (ঘটনা: মদীনায়ে মুনাওয়ারায় সায়্যিদুনা আবু হাজেম رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে এক ব্যক্তি  বললেন: আমার স্বপ্নে  প্রিয়   নবী   صَلَّی  اللہُ  تَعَالٰی    عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم   এর জেয়ারত   নসীব  হল।  তিনি    ইরশাদ করলেন: আবু    হাজেমকে    এটা    বলে    দাও    যে,    “তুমি  আমার পাশ দিয়ে এমনিতেই পথ অতিক্রম করে চলে যাও, ফিরে একটা সালামও করোনা!” এর পর  থেকে    সায়্যিদুনা  আবু  হাজেম مَۃُ   اللہِ   تَعَالٰی      عَلَیْہِ    নিজ     অভ্যাসকে    এভাবে    গড়ে  নিলেন যে, যখনই রাসুলে   পাক  صَلَّی اللہُ   تَعَالٰی  عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم  এর রওযা শরীফের পাশ  দিয়ে অতিক্রম  করা হত, তখন প্রথমে আদব ও অতি সম্মানের        সাথে        দাঁড়িয়ে       সালাম       আরজ করতেন, এর পর সামনে অগ্রসর হতেন। (আল মানামাত     মাআ     মাওসুআতি      ইবনে      আবিদ  দুনিয়া, ৩য় খন্ড, ১৫৩ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৩২৩)

﴾৫৫﴿   যদি   জান্নাতুল   বাক্বীতে   দাফন   হওয়ার  সৌভাগ্য        নসীব      না       হয়,      আর       মদীনায়ে মুনাওয়ারা  থেকে বিদায়  নেয়ার  হৃদয় বিদারক সময়  এসে  পৌঁছে   তবে  বারেগাহে   রিসালাতে বিদায়ী    হাজেরী    দিব এবং     অত্যন্ত     বিগলিত হৃদয়ে  বরং  সম্ভব  হলে  কান্না   করে  করে   বার  বার উপস্থিত হতে পারার আবেদন জানাব।

﴾৫৬﴿   যদি   সম্ভবপর    হয়   তবে    মায়ের   কোল থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া বাচ্চা যেভাবে হাউমাউ করে    কাঁদতে     থাকে    ঠিক    সেভাবে     দরবারে রিসালাতকে     বার     বার      আশাভরা     মায়াভরা  দৃষ্টিতে দেখতে দেখতে বিদায় নিব।

♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥
লিখাটি আমিরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত হজ্ব ও ওমরা সম্পর্কিত  রফিকুল হারামাঈন (হজ্ব ও ওমরার পদ্ধতি ও দোআ সমূহ) থেকে সংগৃহীত।রফিকুল হারামাঈন হজ্ব ও ওমরা বিষয়ে এক পূর্ণাঙ্গ এনসাইক্লোপিডিয়া ও মাসআলার কিতাব। কিতাবটির এন্ড্রয়েড অ্যাপ ও পিডিএফ বই ইন্সটল ও ডাউনলোড করুন। 
  • এন্ড্রয়েড অ্যাপ ইন্সটল লিংক
  • পিডিএফ বই ডাউনলোড লিংক
আমাদের এই প্রয়াসকে এগিয়ে নিতে অবশ্যই পাশে থাকবেন, নিচের শেয়ার বাটনগুলো থেকে অন্তত একটি সোস্যাল সাইটে শেয়ার করুন। কপি করে রিপোস্ট করুন হোয়াটসেপ বা ফেসবুকে। কমেন্ট করে জানান অভিমত। আশা করি আবার আসবেন আমাদের এই সাইটে। ভাল থাকুন সুস্থ্য থাকুন।

দাওয়াতে ইসলামীর সকল বাংলা ইসলামীক বইয়ের পিডিএফ লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন 

মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন

পোস্ট শ্রেণি

অযু-গোসল-পবিত্রতা (12) আপডেট চলমান (25) আমাদের কথা ও অন্যান্য বিষয়াবলী (6) আমাদের প্রিয় নবী ﷺ (5) আরবি মাস ও ফযীলত (11) ইসলামী ইতিহাস ও শিক্ষনীয় ঘটনা (6) ইসলামী জীবন ও সুন্দর চরিত্র (4) ঈদ-কাযা-জানাযা-তারাবী-নফল ও অন্যান্য নামায (5) উত্তম আমল ও সাওয়াবের কাজ (4) কুরআন-তাফসীর ও হাদিস (16) কুরবানী (6) চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য কথন (14) জিকির-দোআ-দুরূদ ও ফযীলত (8) নবী-সাহাবী ও আওলিয়াদের জীবনী (8) নামায (17) পর্দা ও লজ্জাশীলতা (16) ফয়যানে জুমা (3) বদ আমল ও গুনাহের কাজ (3) মওত-কবর-হাশর ও আযাব (12) মাসআলা-মাসাইল ও প্রশ্নোত্তর (15) মাসাইল (21) যাকাত-ফিতরা ও সদক্বাহ'র বিধান (1) রোযা/রমযানের বিধান ও ফযীলত (9) সুন্নাত ও আদব/ মাদানী ফুল (41) হজ্ব-ওমরাহ ও যিয়ারতে মদিনা (27)

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন