কবরে মাটি দেয়ার কারণে ক্ষমা হয়ে গেলো
এক ব্যক্তির ইন্তিকালের পর কেউ তাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করলো: مَا فَعَلَ اللهُ بِكَ؟ অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলা আপনার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন? উত্তরে বললেন: আমার আমল পরিমাপ করা হলো, গুণাহের ওজন বেড়ে গেলো, অতঃপর একটি থলে আমার নেকীর পাল্লায় রাখা হলো, যার কারণে اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ আমার নেকীর পাল্লা ভারী হয়ে গেলো এবং আমার ক্ষমা হয়ে গেলো। যখন সেই থলেটি খোলা হলো তখন তার মধ্যে সেই মাটি দেখলাম যা আমি এক মুসলমানের দাফনের সময় তার কবরে দিয়েছিলাম। (মিরকাতুল মাফাতিহ, ৪র্থ খন্ড, ১৮৯ পৃষ্ঠা)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
কেউ সত্যিই বলেছেন:
রহমতে হক ‘বাহা’ না মে জুইদ,
রহমতে হক ‘বাহানা’ মে জুইদ।
(অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলার রহমত মূল্য নয়, বাহানা খোঁজে থাকে)
কবরে মাটি দেওয়ার পদ্ধতি
মুসলমানের কবরে মাটি দেওয়া মুস্তাহাব। এর পদ্ধতি হলো: কবরের মাথার পার্শ্ব হতে দুই হাতে মাটি উঠিয়ে তিনবার কবরে দেবে, প্রথমবার দেওয়ার সময় বলবে: مِنْهَا خَلَقْنٰكُمْ (আমি জমিন থেকেই তোমাদের সৃষ্টি করেছি) দ্বিতীয়বার দেওয়ার সময় বলবে: وَفِيْهَا نُعِيْدُكُمْ (সেটার মধ্যেই তোমাদেরকে আবার নিয়ে যাবো) এবং তৃতীয়বার দেওয়ার সময় বলবে: وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً اُخرٰى (এবং সেটা থেকে পুনরায় তোমাদেরকে বের করবো।) এবার বাকী মাটি কোদাল ইত্যাদি দিয়ে ঢেলে দিন।
কবরের নিকট উপস্থিত হয়ে কান্নাকাটি
আমীরুল মু’মিনীন হযরত সায়্যিদুনা ওসমান গনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ যখন কারো কবরে উপস্থিত হতেন তখন এমনভাবে কান্নাকাটি করতেন যে, তাঁর দাঁড়ি মোবারক ভিজে যেতো। আরয করা হলো: “জান্নাতও জাহান্নাম আলোচনা করার সময় আপনি কান্না করেন না কিন্তু কবরে গিয়ে অনেক কান্নাকাটি করেন, এর কারণ কি?” বললেন: আমি নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে ইরশাদ করতে শুনেছি: “আখিরাতের সর্বপ্রথম ধাপ হলো কবর, যদি কবরবাসীরা এর থেকে মুক্তি পায় তবে পরবর্তী অবস্থা তার জন্য সহজ হয়ে যায় এবং যদি মুক্তি না পায়, তবে পরবর্তী অবস্থা খুবই কঠিন হবে। (ইবনে মাযাহ, ৪র্থ খন্ড, ৫০০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৪২৬৭)
ওসমানী ভয়
আল্লাহ্! আল্লাহ্! যুন্নুরাঈন, কুরআন সংকলক, হযরত সায়্যিদুনা ওসমান বিন আফফান رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর খোদা ভীরুতা! তাঁর উপাধী এই কারণেই যুন্নুরাঈন ছিলো যে, তাঁর বিবাহ বন্ধনে রহমতে কাওনাঈন, নানায়ে হাসাইন, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর একের পর এক দুই শাহ্জাদী ছিলো, তিনি দুনিয়াতেই নিশ্চিত জান্নাতী হওয়ার সুসংবাদ পেয়েছিলেন এবং তাঁকে নিস্পাপ ফিরিশতারা লজ্জা করতো। এরপরও কবরের ভয়াবহতা এবং অন্ধকারাচ্ছনতা সম্পর্কে ভীত সন্ত্রস্ত থাকতেন, খোদাভীতির আধিক্যের সময়ে তিনি একবার বলেন: “যদি আমাকে জান্নাত ও জাহান্নাম মাঝখানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এটা জানিনা যে, এ দু’টির মধ্য হতে কোনটিতে যাবো তবে আমি সেখানেই ছাই হয়ে যাওয়া পছন্দ করবো।” (হিলইয়াতুল আউলিয়া, ১ম খন্ড, ৯৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ১৮৩, সংক্ষেপিত)
আহ! আমার মা যদি আমাকে জন্মই না দিতো
আফসোস! শত কোটি আফসোস! আমাদের অন্তরে গুণাহের জমাট বেঁধে গেছে, অথচ নিঃসন্দেহে জানি যে, মৃত্যু আসবেই, হয়তো আজই এসে যাবে এবং আমাদের কবরে নামিয়ে দেয়া হবে, এটাও জানি যে, রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে, মনে ভয় চলে আসে এবং অন্ধকার ভয়ের জন্ম দেয়, এরপরও কবরের ভয়াবহ অন্ধকারের কোন অনুভূতি নাই। আমীরুল মু’মিনীন হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ নিশ্চিত জান্নাতী হওয়ার পরও খোদাভীতিতে কাঁপতে থাকতেন। একবার খোদাভীতির অতিশয্যে তিনি একটি খড়ের টুকরো হাতে নিয়ে বললেন: “আহ! আমি যদি এই খড় হতাম, কখনো বলতেন: আহ! আমাকে যদি সৃষ্টিই না করা হতো, কখনো বা বলতেন: আহ! আমার মা যদি আমাকে জন্মই না দিতো। (ইহইয়াউল উলুম, ৪র্থ খন্ড, ২২৬ পৃষ্ঠা, সংক্ষেপিত)
কাশকে না দুনিয়া মে পয়দা মায় হুয়া হোতা,
কবর ও হাশর কা সব গম খতম হো গিয়া হোতা।
গুলশানে মদীনা কা কাশ! হোতা মে সবঝা,
ইয়া মে বন কে এক তিনকা হি ওহাঁ পড়া হোতা।
আহ! সলবে ঈমাঁ কা খউফ খায়ে জাতা হে,
কাশকে মেরী মা নে হি নেহী জানা হোতা।
দুনিয়াবী জিনিসের অনুশোচনা
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আফসোস! আমরা অনুশোচনায় ভরা মৃত্যুর প্রস্তুতি থেকে একেবারে উদাসীন। মনে রাখবেন! জীবন চলার পথে ঐ সকল জিনিস যার প্রতি মানুষের শুধুমাত্র দুনিয়াবী ভালবাসা ছিলো, মৃত্যুর পর এসবের স্মরণ মানুষকে ব্যাকুল করে তুলে এবং এই আক্ষেপ মৃতের জন্য অসহ্য হয়ে পড়ে, এই বিষয়টি এভাবে বুঝার চেষ্টা করুন যে, যখন কারো ফুলের মতো একমাত্র সন্তান হারিয়ে যায়, তবে সে কিরূপ ব্যাকুল হয়ে যায় এবং পাশাপাশি তার ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদি যদি ক্ষতির সম্মুখীন হয় তবে তার আক্ষেপ অনুশোচনার অবস্থা কেমন হবে! তাছাড়া সে যদি কোন বড় পদের অফিসার হয় এবং বিপদের উপর বিপদ যদি তার এই পদচ্যুতি হয় তবে তার উপর যে কষ্ট ও আক্ষেপের পাহাড় ভেঙ্গে পড়বে তা কেবল সেই বলতে পারবে। সুতরাং তার পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বোন এবং বন্ধুবান্ধবের বিচ্ছেদ, তাছাড়া গাড়ি-বাড়ি, পোশাক-পরিচ্ছেদ, ব্যবসাবাণিজ্য, মিল-ফ্যাক্টরি, উন্নত খাট, ফ্রিজ, খাওয়া-দাওয়ার সরঞ্জামের ভান্ডার, রক্ত ও ঘামের উপার্জন, উচ্চ পদ ইত্যাদি প্রতিটি জিনিসের প্রতি তার শুধুমাত্র দুনিয়াবী কারণেই ভালবাসা ছিলো, সুতরাং এর বিচ্ছেদের ফলে তার কষ্ট হয়ে থাকে এবং যে যতই নফসের চাহিদানুযায়ী আরাম-আয়েশে জীবন অতিবাহিত করে, মৃত্যুর পর সেই বিলাসীতাকে ছেড়ে যাওয়ার কষ্টও তত বেশি হবে। যার নিকট ধন-সম্পদ কম হবে তার তা ছেড়ে যাওয়ার কষ্টও কম হবে এবং যার নিকট বেশি হবে, তার তা ছেড়ে যাওয়ার কষ্টও বেশি হবে। মনে রাখবেন! এই কম বেশির কষ্ট তখনই হবে যখন সে এই ধনসম্পদের ভালবাসা দুনিয়াবী কারণেই হবে। হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “এর প্রকাশ রুহ বের হওয়ার সাথে সাথে দাফনের পূর্বেই হয়ে যায় এবং সে নশ্বর পৃথিবীর যেই যেই নেয়ামতের প্রতি পরিতৃপ্ত ছিলো, এসবের বিচ্ছেদের আগুন তার ভেতর জ্বলে উঠে।” (ইহইয়াউল উলুম, ৫ম খন্ড, ২৪৮ পৃষ্ঠা)
মুমিনের কবর ৭০ হাত প্রশস্থ করে দেয়া হয়
যে মুসলমান শুধুমাত্র নিতান্ত প্রয়োজনীয় দুনিয়াবী জিনিসকে চলার পাথেয় বানিয়েছিলো, তার বোঝা ভারী হবে না, মৃত্যু তার জন্য প্রিয়তমের সাক্ষাতের বার্তা নিয়ে আসে, যারা আল্লাহ্ তাআলার নেক বান্দা হয়ে থাকে, যারা দুনিয়ার ধন-সম্পদের প্রতি আগ্রহী ছিলো না, তাদের সম্পদ ছাড়ার অনুশোচনাও হয় না এবং কবরে তার খুবই আনন্দ অনুভূত হয়। যেমনিভাবে; রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “মুমিন নিজের কবরে একটি সবুজ শ্যামল বাগানে (অবস্থান করে) থাকে এবং তার কবরকে ৭০ হাত প্রশস্থ করে দেয়া হয়, আর তার কবরকে চৌদ্দ তারিখের চাঁদের মতো আলোকিত করে দেয়া হয়।” (মুসনাদে আবি ইয়ালা, ৫ম খন্ড, ৫০৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৬৬১৩)
ঈর্ষাযোগ্য কে?
হযরত সায়্যিদুনা মাসরূখ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন: আমার অন্য কারো প্রতি এমন ঈর্ষা হয় না, যেমন হয় কবরে যাওয়া সেই মু’মিনের প্রতি, যে দুনিয়ার কষ্ট থেকে আরাম পেয়ে গেলো এবং আযাব থেকে সুরক্ষিত রইলো। (ইহইয়াউল উলুম, ৫ম খন্ড, ২৪৯ পৃষ্ঠা)
কি অবস্থা হবে!
হযরত সায়্যিদুনা আতা বিন ইয়াসার رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন: প্রিয় রাসুল, রাসুলে মাকবুল, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমীরুল মু’মিনীন হযরত সায়্যিদুনা ফারুকে আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কে বললেন: হে ওমর! যখন তোমার ইন্তিকাল হবে, তখন কি অবস্থা হবে! তোমার সম্প্রদায়ের লোকেরা তোমাকে নিয়ে যাবে এবং তিন গজ লম্বা ও দেড় গজ প্রশস্থ কবর তৈরী করবে, অতঃপর ফিরে এসে তোমাকে গোসল দিবে এবং কাফন পরাবে আর সুগন্ধি লাগিয়ে তোমাকে উঠিয়ে নিবে, আর তোমাকে কবরে রেখে দিবে, অতঃপর তোমার কবরে মাটি ভরাট করে দিবে এবং তোমাকে দাফন করে দেবে, আর যখন তারা ফিরে আসবে তখন তোমার নিকট পরীক্ষা গ্রহনকারী দু’জন ফিরিশতা মুনকার ও নকীর আসবে। তাদের আওয়াজ মেঘের গর্জনের মতো এবং চোখ জ্বলন্ত বিদ্যুতের মতো হবে, তারা নিজের চুলকে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে আসবে এবং তাদের দাঁত দিয়ে কবর খুঁড়ে আসবে,তারা তোমাকে ধরে নাড়িয়ে কথা বলবে। হে ওমর! সেই সময় কি অবস্থা হবে? হযরত ওমর ফারুকে আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ আরয করলেন: তখনো কি আমার অনুভুতি শক্তি আজকের মতোই বহাল থাকবে? ইরশাদ করলেন: “হ্যাঁ”। আরয করলেন: তবে اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ আমি তাদের জন্য যথেষ্ট হবো। (ইত্তেহাফুস সা’দাত লিয যুবাইদী, ১৪তম খন্ড, ৩৬২ পৃষ্ঠা)
মৃত ব্যক্তির অনুভূতি শক্তি সুরক্ষিত থাকে
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এই হাদীসে পাক উদ্ধৃত করার পর বলেন: মৃত্যুর কারণে জ্ঞান ও অনুভুতিতে কোন পরিবর্তন আসে না, শুধুমাত্র শরীর ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গে পরিবর্তন আসে, সুতরাং মৃত ব্যক্তি আগের মতো বুদ্ধিমান, বুঝশক্তি সম্পন্ন এবং কষ্ট ও স্বাদ অনুভূতি সম্পন্ন হয়ে থাকে। জ্ঞান ও অনুভূতি হচ্ছে বাতেনী বিষয় এবং তা দৃষ্টিগোচর হয় না। মানুষের শরীর যদিওবা পঁচে গলে নষ্ট হয়ে যায় তবুও জ্ঞান ও অনুভূতি সুরক্ষিত থাকে। (ইহইয়াউল উলুম, ৫ম খন্ড, ২৫৮ পৃষ্ঠা, সংক্ষেপিত)
মহা চিন্তার বিষয়
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহর কসম! মহা চিন্তা, ভয় এবং খুবই ভীতিকর বিষয়, পশুদের তো মরতেই অনুভুতি শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়, কিন্তু মানুষের জ্ঞান ও অনুভূতি শক্তি যেমনই ছিলো তেমনই রয়ে যায়, বরং দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণ শক্তি কয়েক গুন বেড়ে যায়।
হায়! হায়! যদি আমাদের মন্দ আমলের কারণে আল্লাহ্ তাআলা আমাদের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে যান, তবে আমাদের কি অবস্থা হবে! একটু কল্পনা তো করুন! যদি আমাদেরকে সুন্দর এবং সকল সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন কোন ঘরে একাকী আটকে রাখা হয়, তবুও ঘাবড়ে যাব! আর আমাদের মাঝে সম্ভবত কেউ কবরস্থানে একটি রাত একা কাটানোর সাহস করতে পারবে না! আহ! সেই সময় কি অবস্থা হবে, যখন কয়েক মণ মাটির নিচে একা আমাকে ছেড়ে আমার বন্ধুরা ফিরে যাবে, শরীর যদিও স্থীর হয়ে থাকবে, কিন্তু জ্ঞান বুদ্ধি তো অটুট থাকবে, লোকদের চলে যেতে দেখবো, তাদের চলার শব্দ শুনতে পাবো, কয়েক মণ মাটির নিচে আমি পড়ে থাকবো। আহ! আহ!! আহ!!! হে বে-নামাযী! হে রমযান মাসের রোযা শরীয়াতের অনুমতি ছাড়া ভঙ্গকারী! হে যাকাত প্রদানে গড়িমসিকারী! হে সিনেমা-নাটকের দর্শণকারী! হে গান-বাজনা শ্রবণকারী! হে পিতা-মাতাকে কষ্ট প্রদানকারী! হে শরীয়াতের অনুমতি ব্যতীত মুসলমানদের মনে কষ্ট দানকারী! হে চুরি-ডাকাতী ও লোকদের হুমকিভরা চিঠি দিয়ে টাকা আদায়কারী! হে পকেটমার! হে লোকদের জায়গা সম্পত্তি দখলকারী!
হে অসহায় কৃষকের রক্ত পানকারী! হে ক্ষমতার নেশায় মত্ত হয়ে অত্যাচার ও নিপীড়নের তুফান বর্ষণকারী! হে নিজের স্বাস্থ্য ও সম্পদের নেশায় মত্ত হয়ে গুণাহের বাজার গরমকারী! শুনো! শুনো!! হয়তো এই প্রকাশ্য জীবনে কেউ তোমাদের কবরে বন্ধ করতে পারবে না, তবে অতিশীগ্রই অর্থাৎ কয়েক বছর বা কয়েক মাস বা কয়েক দিন,বরং হতে পারে কয়েক ঘন্টা পরই মৃত্যু এসে আলিঙ্গন করে নিবে এবং তোমাদের কবরে একা বন্দী করে দেবে! হযরত সায়্যিদুনা বকর আবিদ رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ তার মাকে বললেন: “প্রিয় মা! এটা কতইনা ভাল হতো যে, আপনি আমার ব্যাপারে বন্ধ্যা (নিঃসন্তান) হতেন। আহ! এখনতো আমি জন্ম লাভ করে ফেলেছি তবে শুনে রাখুন! আপনার সন্তানকে অনেকদিন যাবৎ কবরে বন্দি থাকতে হবে অতঃপর সেখান থেকে বের হয়ে হাশরের ময়দানের দিকে যাত্রা করতে হবে।” (ইহইয়াউল উলুম, ৫ম খন্ড, ২৩৮ পৃষ্ঠা)
গুণাহ থেকে বাঁচার একটি ব্যবস্থাপত্র
হায়! হায়! মৃত্যুর পর কিরূপ একাকীত্ব হবে! কেমন অসহায়ত্ব অবস্থা হবে! প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যদি আপনি আপনার সংশোধন চান, তবে গুণাহ করার যখন ইচ্ছা জাগে তখন এই ব্যবস্থাপত্রটি অবলম্বন করুন, অর্থাৎ এরূপ চিন্ত ভাবনা করার অভ্যাস করুন যে, নিঃসন্দেহে মৃত্যু যা আজকেও আসতে পারে আর মৃত্যুর পর আমাকে ঘোর অন্ধকার এবং ছোট্ট কবরে রেখে বন্ধ করে দেয়া হবে, আমি যদিও প্রকাশ্যভাবে নড়তেও পারবো না কিন্তু সবকিছু বুঝতে পারবো! হায়! সেই সময় আমার উপর কিরূপ অবস্থা বিরাজ করবে! আমার সন্তান এবং আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা জানে যে, আমি সব কিছু দেখছি তবুও সবাই আমাকে একা ফেলে চলে আসবে,হায়! হায়!! আমার নাফরমানি সমূহ! যদি আল্লাহ্ তাআলা অসন্তুষ্ট হয়ে যান, তবে আমার কি অবস্থা হবে! হযরত আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতী শাফেয়ী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ “শরহুস সুদুর” এ উদ্ধৃত করেন:
কবরের তিরস্কার
হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ বিন উবাইদ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বর্ণিত, নবী করীম, রউফুর রহীম, রাসুলে আমীন صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যখন মৃত ব্যক্তির সাথে আসা লোকেরা ফিরে যায় তখন মৃত ব্যক্তি বসে তাদের পায়ের আওয়াজ শুনে এবং কবরের পূর্বে তার সাথে কারো কথা হয় না, কবর বলে: হে আদম সন্তান! তুমি কি আমার অবস্থা সম্পর্কে শুনোনি? আমার সংকীর্ণতা, দূর্গন্ধ, ভয়াবহতা এবং কীটপতঙ্গ সম্পর্কে কি তোমাকে ভীতি প্রদর্শণ করা হয়নি? যদি এমন হয় তবে তুমি কি প্রস্তুতি নিয়েছ? (সরহুস সুদুর, ১১৪ পৃষ্ঠা)
পালাতে পারবে না
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ভাবুন তো একবার, সেই সময় যখন কবরে একা হয়ে যাবো, আতংকিত হয়ে যাবো, কোথাও যেতে পারবো না, কাউকে ডাকতে পারবো না এবং পালিয়ে যাওয়ারও কোন উপায় থাকবে না। সেই সময় কবরের কলিজা বিদীর্ন করা চিৎকার শুনে কি অবস্থা হবে! কবরের মধ্যে নামায আদায়কারী এবং সুন্নাতের উপর আমলকারীর জন্য প্রশান্তি,অন্যদিকে বেনামাযী এবং শরীয়াত বিরোধী ফ্যাশনকারীদের জন্য বিপদই বিপদ হবে। যেমনিভাবে; হযরত আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতী শাফেয়ী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন:
অনুগত বান্দাদের প্রতি দয়া
হযরত সায়্যিদুনা উবাইদ বিন ওমাইর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত; কবর মৃত ব্যক্তিকে বলে: যদি তুমি তোমার জীবনে আল্লাহ্ তাআলার আনুগত্য করে থাকো তবে আমি তোমার প্রতি দয়া করবো এবং যদি তুমি তোমার জীবনে আল্লাহ্ তাআলার অবাধ্য হয়ে থাকো তবে আমি তোমার জন্য আযাব স্বরূপ, আমি সেই ঘর, যে আমার মধ্যে নেককাজ এবং আনুগত্যশীল বান্দা হয়ে প্রবেশ করেছে, সে আমার মধ্য হতে খুশি মনে বের হবে এবং যে অবাধ্য ও গুণাহগার, সে আমার মধ্য হতে ধ্বংসশীল অবস্থায় বের হবে। (সরহুস সুদুর, ১১৪ পৃষ্ঠা, আহওয়ালুল কুবুর লিইবনে রজব, ২৭ পৃষ্ঠা)
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দৃশ্য
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ্ তাআলার কসম! কবরের অভ্যন্তরীন অবস্থা খুবই উদ্ভেগজনক, কেউ জানে না যে, আমার সাথে কি অবস্থা হবে? আল্লাহর প্রিয় হাবীব, রাসুলুল্লাহ্ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “কবরের দৃশ্য সকল দৃশ্য থেকে বেশি ভয়াবহ।” (তিরমীযি, ৪র্থ খন্ড, ১৩৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ২৩১৫)
তাজেদারে রিসালাত, নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর কবর সম্পর্কীত খোদাভীরুতা লক্ষ্য করুন। যেমনিভাবে; হযরত সায়্যিদুনা বারা’বিন আ’যিব رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন:আমরা হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর সাথে একটি জানাযায় শরীক ছিলাম, তখন হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কবরের এক পাশে বসলেন এবং এতই কান্নাকাটি করলেন যে, মাটি ভিজে গেলো। অতঃপর ইরশাদ করলেন: “এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করো।” (ইবনে মাযাহ্, ৪র্থ খন্ড, ৪৬৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৪১৯৫)
কবরের পেট
হযরত সায়্যিদুনা হাসান বিন সালিহ رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ যখন কবরস্থানের পাশ দিয়ে যেতেন, তখন বলতেন: হে কবরেরা! তোমাদের প্রকাশ্য অবস্থা খুব ভাল, কিন্তু বিপদ সব তোমাদের পেটে। (ইহইয়াউল উলুম, ৫ম খন্ড, ২৩৮ পৃষ্ঠা)
হায়! মৃত্যু
হযরত সায়্যিদুনা আতা সুলামী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর পবিত্র অভ্যাস ছিলো যে, যখন রাত হতো তখন কবরস্থানের দিকে চলে যেতেন এবং বলতেন: হে কবরবাসীরা! তোমরা মৃত্যুবরণ করেছো, হায় মৃত্যু! তোমরা নিজের আমল দেখেছো, হায় আমল! অতঃপর বলতেন: হায়, হায়! কাল ‘আতা’ও কবরে যাবে, হায়! কাল আতাও কবরে যাবে। এভাবেই কান্নাকাটি করতে করতে সারা রাত অতিবাহিত করতেন। (ইহইয়াউল উলুম, ৫ম খন্ড, ২৩৮ পৃষ্ঠা)
আন্ধেরী কবর কা দিল সে নেহী নিকালতা ডর
করোঙ্গা কিয়া জু তু নারাজ হো গিয়া ইয়া রব!
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
মৃত ব্যক্তি দাফনকারীদের দেখেন
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ভেবে দেখুন! গুণাহে ভরা জীবন অতিবাহিত করে মৃত্যু বরণকারীদের জন্য কিরূপ যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা হবে আর যখন কবরে সে সব কিছু দেখবে, শুনবে এবং বুঝবে সেই মুহুর্তে তার কিরূপ অবস্থা হবে! আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ্ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “মৃত ব্যক্তি এই বিষয়টি বুঝতে পারে যে, তাকে কে গোসল দিচ্ছে এবং কে তাকে কাঁধে উঠাচ্ছে, এমনকি তাকে কবরে কে নামাচ্ছে। (মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ৪র্থ খন্ড, ৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ১০৯৯৭)
একাকীত্বের দিন
আহ! আহ! আহ! যখন কবরে নামানো হবে, তখন কি অবস্থা হবে! হযরত সায়্যিদুনা আবু যর গিফারী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন:আমি তোমাকে নিজের নিঃসঙ্গতার (একাকীত্বের) দিনের কথা বলবো না? তা সেই দিন, যখন আমাকে কবরে একাকী নামিয়ে দেয়া হবে। (ইহইয়াউল উলুম, ৫ম খন্ড, ২৩৭ পৃষ্ঠা)
গো পেশ নজর কবর কা পুর হোল গাড়াহ হে,
আফসোস মগর ফির ভি ইয়ে গফলত নেহি জাথী।
প্রতিবেশী মৃতদের আহবান
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ উদ্ধৃত করেন: যখন গুণাহগার মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা হয় এবং তার উপর আযাবের ধারাবাহিকতা শুরু হয়ে যায়, তখন তার প্রতিবেশী মৃতরা তাকে বলে: “হে আমাদের প্রতিবেশী এবং ভাইদের পর দুনিয়ায় অবস্থানকারী! তোমার জন্য কি আমাদের অবস্থা থেকে কোন শিক্ষণীয় বিষয় ছিলো না? আমাদের তোমার পূর্বে দুনিয়া থেকে চলে যাওয়া কি তোমার জন্য চিন্তা ভাবনার বিষয় ছিলো না? তুমি কি আমাদের আমলের ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়ে যাওয়া দেখনি? তোমার তো সুযোগ ছিলো, তুমি সেই নেকীগুলো কেন করোনি, যা তোমার ভাইয়েরা করতে পারেনি?” মাটির কোণা থেকে তাকে বলবে: “হে প্রকাশ্য দুনিয়ার চাকচিক্য দ্বারা ধোঁকা খাওয়া ব্যক্তি! তুমি তা থেকে শিক্ষা কেন নাও নি, যারা তোমার পূর্বে এখানে এসেছে এবং তাদেরও দুনিয়া ধোঁকায় রেখেছিলো।” (ইহইয়াউল উলুম, ৫ম খন্ড, ২৫৩ পৃষ্ঠা)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! বাস্তবতা হচ্ছে; প্রত্যেক মৃত্যুবরণকারী মৃত্যুবরণ করতেই মূলত এই বার্তা দিয়ে যায় যে, যেভাবে আমি মারা গেলাম ঠিক সেভাবেই তোমাকেও মরতে হবে, যেভাবে আমাকে কয়েক মণ মাটির নিচে দাফন করা হচ্ছে, ঠিক সেভাবেই তোমাকেও দাফন করা হবে।
জানাযা আগে বড় কে কেহ রাহা হে এ্যয় জাহাঁ ওয়ালো!
মেরে পীছে চলে আও তোমাহারা রেহনুমা মে হোঁ।
আমার সন্তান-সন্তুতি কোথায়!
হযরত সায়্যিদুনা আতা বিন ইয়াসার رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বর্ণনা করেন: যখন মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা হয়, তখন সর্বপ্রথম তার আমল এসে তার বাম উরুতে নাড়া দিয়ে বলে: আমি তোমার আমল। সেই মৃত ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করে: আমার সন্তান সন্তুতি কোথায়? আমার নেয়ামত, আমার সম্পদ কোথায়? তখন আমল বলে: এসব তোমার পিছনে রয়ে গেছে এবং আমি ছাড়া তোমার কবরে আর কেউ আসেনি। (সরহুস সুদুর, ১১১ পৃষ্ঠা)
সাথ জিগরী ইয়ার ভি না আয়ে গা,
তু একেলা কবর মে রেহ জায়েগা।
মাল, দুনিয়া কা এহিঁ রেহ জায়েগা,
হার আমল আচ্ছা বুরা সাথ আয়েগা।
মালে দুনিয়া দো জাহাঁ মে হে ওবাল,
কাম আয়েগা না পেশে যুল জালাল।
জান্নাতের বাগান বা জাহান্নামের গর্ত!
তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “কবর হয়তো জান্নাতের বাগান সমূহের একটি বাগান বা জাহান্নামের গর্ত সমূহের একটি গর্ত।” (তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ২০৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ২৪৬৮)
হযরত সায়্যিদুনা সুফিয়ান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: যে ব্যক্তি কবরের আলোচনা বেশি পরিমাণে করে, সে একে জান্নাত বাগান সমূহের একটি বাগান হিসেবে পায় এবং যে এর স্মরণ থেকে উদাসীন থাকে, সে এটিকে জাহান্নামের গর্ত সমূহ থেকে একটি গর্ত হিসেবে পায়। (ইহইয়াউল উলুম, ৫ম খন্ড, ২৩৮ পৃষ্ঠা)
অসংখ্য লোক বিষন্ন রয়েছে
হযরত সায়্যিদুনা সাবিত বুনানী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: আমি কবরস্থানে প্রবেশ করলাম, যখন সেখান থেকে বের হতে লাগলাম তখন উচ্চ স্বরে কেউ বললো: হে সাবিত! এই কবরবাসীদের নিরবতা (দেখে) ধোঁকা খেও না, এদের মধ্যে অসংখ্য লোক বিষন্ন রয়েছে। (ইহইয়াউল উলুম, ৫ম খন্ড, ২৩৮ পৃষ্ঠা)
অস্থায়ী কবর
হযরত সায়্যিদুনা রাবিই বিন খুসাইম رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ নিজের ঘরে একটি কবর খুঁড়ে রেখেছিলেন। যখনই তিনি নিজের অন্তরে কোন কঠোরতা অনুভব করতেন তখন তার ভিতর গিয়ে শুয়ে পড়তেন এবং যতক্ষণ আল্লাহ্ তাআলা চাইতেন সেখানে অবস্থান করতেন। অতঃপর ১৮ পারা সুরা মু’মিনুন এর ৯৯ ও ১০০ নং আয়াতের এই অংশটুকু তিলাওয়াত করতেন: ربِّ ارْجِعُوْنِ (99) لَعَلِّىْ اَعْمَلُ صَالِحًا فِيْمَا تَرَكْتَ কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: হে আমার রব! আমাকে পূনর্রায় ফেরত পাঠান! হয়তো আমি তখন কিছু পুণ্য অর্জন করবো তাতেই, যা আমি ছেড়ে এসেছি। অতঃপর নিজের নফসের দিকে মনোনিবেশ করে বলতেন: হে রবীই! এখন তোমাকে আবার ফিরিয়ে দেয়া হলো। (ইহইয়াউল উলুম, ৫ম খন্ড, ২৩৮ পৃষ্ঠা)
কবরবাসীদের সঙ্গ
হযরত সায়্যিদুনা আবু দারদা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কবরের পাশে বসা ছিলেন, এই সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে বললেন: আমি এমন লোকদের নিকট বসে আছি, যারা আখিরাতের স্বরন করিয়ে দেয় এবং যখন উঠে যাই তখন (তারা) আমার গীবত করে না। (ইহইয়াউল উলুম, ৫ম খন্ড, ২৩৭ পৃষ্ঠা)
আমিও তো এদের অন্তর্ভূক্ত
হযরত সায়্যিদুনা জাফর বিন মুহাম্মদ رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ রাতে কবরস্থানে তাশরীফ নিয়ে যেতেন এবং বলতেন: হে কবরবাসীরা! কি ব্যাপার যে, আমি তোমাদের ডাকছি অথচ তোমরা উত্তর দিচ্ছো না? অতঃপর বলতেন: আল্লাহ্ তাআলার কসম! এদের উত্তর দেয়াতে কোন প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, আহ! মূলত যেন আমিও এদের অন্তর্ভূক্ত। অতঃপর ফযরের সময় উদিত পর্যন্ত নফল নামায আদায় করতে থাকতেন। (ইহইয়াউল উলুম, ৫ম খন্ড, ২৩৭ পৃষ্ঠা)
কীট-পতঙ্গ বিচরণ করছে
আমীরুল মু’মিনীন হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আব্দুল আযীয رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ একবার তার কোন বন্ধুকে বললেন: ভাই! মৃত্যুর স্মরণ আমার ঘুম কেঁড়ে নিয়েছে, আমি রাতভর জেগে থাকি এবং কবরবাসীদের সম্পর্কে ভাবতে থাকি। হে ভাই! যদি তুমি তিনদিন পর কোন মৃত ব্যক্তিকে কবরের মধ্যে দেখ তবে জীবনে অনেকদিন তার সাথে থাকার পরও তোমার তাকে দেখে আতঙ্ক বিরাজ করবে এবং যদি তুমি তার ঘরের অর্থাৎ তার কবরের অভ্যান্তরিন অংশ দেখো যাতে কীট-পতঙ্গ বিচরণ করছে এবং শরীরকে খাচ্ছে, পূঁজ বের হচ্ছে, মারাত্মক দূগর্ন্ধ আসছে আর কাফনও ময়লা হয়ে গেছে। হায়, হায়! ভাবুন তো একবার! এই মৃত ব্যক্তি যখন জীবিত ছিলো তখন সুন্দর ছিলো, সুগন্ধিও উন্নতমানের ব্যবহার করতো, উন্নত মানের পোশাক পরিধান করতো............ বর্ণনাকারী বলেন: এতটুকু বলার পর তাঁর মধ্যে ভাবাবেগ সৃষ্টি হয়ে গেলো, আর একটি চিৎকার দিয়ে বেহুশ হয়ে গেলেন। (ইহইয়াউল উলুম, ৫ম খন্ড, ২৩৭ পৃষ্ঠা)
নরম নরম বিছানা ও কবর
হযরত সায়্যিদুনা আহমদ বিন হারব رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: ঐ ব্যক্তির প্রতি জমিন (মাটি) আশ্চার্যাহ্নিত হয়, যে নিজের স্বপ্নের ঘরকে পরিপাটি করে এবং শোয়ার জন্য নরম বিছানা বিছিয়ে থাকে। জমিন তাকে বলে: হে আদম সন্তান! তুমি আমার মাঝে অনেকদিন যাবৎ পঁচে গলে যাওয়াকে কেন স্মরণ করছো না? মনে রাখবে! আমার এবং তোমার মাঝে কোন কিছূ আড়াল হবে না! (অর্থাৎ তোমাকে মাটির উপর কোন তোষক ছাড়াই রেখে দেয়া হবে!) (ইহইয়াউল উলুম, ৫ম খন্ড, ২৩৮ পৃষ্ঠা)
ষাঁড়ের মতো চিৎকার করতো
হযরত সায়্যিদুনা ইয়াজিদ রাখাশী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ মৃত্যুকে অধিকহারে স্মরণকারী ছিলেন। যখন কবর দেখতেন তখন কবরের অন্ধকার ও একাকীত্বের নির্জনতার ভয়ে এতই আতঙ্কিত হতেন যে, তাঁর মুখ থেকে ষাঁড়ের মতো আওয়াজ বের হতো। (ইহইয়াউল উলুম, ৫ম খন্ড, ২৩৭ পৃষ্ঠা)
কবরে ভীতি প্রদর্শণকারী বিষয়গুলো
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! বাস্তবেই কবরের অবস্থা র্নিভয়ে থাকার মতো নয়, আজ আমাদের শরীরে টিকটিকি উঠে গেলে বরং বিচ্ছু পাশ দিয়ে চলে গেলেও শরীরে কাঁপুনি সৃষ্টি হয়ে যায় এবং মুখ থেকে চিৎকার বের হয়ে যায়। হায়, হায়! গুণাহের কারণে যদি আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর রাসূল صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم অসন্তুষ্ট হয়ে যান, তবে সংকীর্ণময় কবরে এসে কে আমাদের বাঁচাবে, কে আমাদের সান্তনা দেবে। আহ! আহ! আহ! হে বিড়ালের আওয়াজ শুনে ঘাবড়ানো ব্যক্তিরা শোন! হযরত সায়্যিদুনা আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতী শাফেয়ী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ “শরহুস সুদুর” এ উদ্ধৃত করেন: “যখন মানুষ কবরে প্রবেশ করে তখন সেই সব জিনিস তাকে ভয় প্রদর্শণ করার জন্য চলে আসে যেগুলোকে সে দুনিয়াতে ভয় করতো এবং আল্লাহ্ তাআলাকে ভয় করতো না।” (শরহুস সুদুর, ১১২ পৃষ্ঠা)
করলে তাওবা রব কি রহমত হে বড়ী,
কবর মে ওয়ারনা সাজা হোগী কাড়ী।
গুণাহের ভয়ঙ্কর আকৃতি
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: যদি তুমি অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা নিজের বাতেনকে দেখো তবে দেখবে যে, বিভিন্ন হিংস্রপ্রাণী তোমাকে ঘিরে রেখেছে;যেমন; রাগ, কামভাব, ঘৃণা, হিংসা, অহঙ্কার, আত্ম অহমিকা এবং লৌকিকতা ইত্যাদি। যদি তুমি গুণাহের কারণে দৃষ্টিগোচর না হওয়া এই সকল হিংস্র প্রাণী হতে সামান্য পরিমাণ উদাসীন হয়ে গুণাহ করো তবে এই হিংস্র প্রাণীগুলো তোমাকে কামড়াতে এবং আচড়াতে থাকে।
যদিও এখন তোমার এই কষ্ট অনুভূত হচ্ছেনা এবং তা তোমার দৃষ্টিগোচরও হচ্ছেনা কিন্তু মৃত্যুর পর কবরে পর্দা উঠে যাবে আর তুমি সেই হিংস্র প্রানীদের দেখবে। হ্যাঁ, হ্যাঁ! তুমি নিজের চোখেই দেখবে যে, গুণাহসমূহ বিচ্ছু এবং সাপ ইত্যাদির আকৃতিতে কবরে তোমাকে ঘিরে রেখেছে। বিশ্বাস করুন! এই মন্দ অভ্যাসগুলো আসলে ভয়ঙ্কর হিংস্র প্রাণীই, যা এখনও তোমার সাথেই আছে কিন্তু এদের ভয়ানক আকৃতি তোমার কবরে দৃষ্টিগোচর হবে। এই ভয়ঙ্কর হিংস্র প্রাণীগুলোকে নিজের মৃত্যুর পূর্বেই মেরে ফেলো অর্থাৎ গুণাহ ছেড়ে দাও, যদি না ছাড়ো তবে ভাল ভাবে জেনে নাও যে, সেই গুণাহের হিংস্র প্রাণী এখনও তোমার অন্তরকে কাটছে এবং আচড়াচ্ছে। যদিও এই কষ্ট তোমার অনুভব হচ্ছে না। (ইহইয়াউল উলুম, ৪র্থ খন্ড, ২৩৩ পৃষ্ঠা, সংক্ষেপিত)
যদি ঈমান নষ্ট হয়ে যায়!
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! চরম উদাসীনতার যুগ, শুধুমাত্র দুনিয়াবী জ্ঞান ও কর্মপদ্ধতি শিখার প্রতি ধাবিত এবং চারিদিকে সম্পদ উপার্জনের ভিড় লেগে আছে। ইলমে দ্বীন অর্জন করা, নামায আদায় এবং সুন্নাতের উপর আমল করার জন্য মুসলমান আগ্রহী নয়, চেহারা, পোশাক বরং সমাজসংস্কৃতি সবকিছুতেই কাফিরদের অনুসরনেরই মানসিকতা। আল্লাহ্ তাআলার কসম! সর্বদা অযথা বকবক এবং গুণাহের আধিক্য খুবই ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, অত্যাধিক বলার কারণে অনেক সময় মুখ দিয়ে কুফরী বাক্যও বের হয়ে যায়, কিন্তু সে সেই সম্পর্কে জানেই না। ঈমানের হিফাজতের মানসিকতাও আজ গুটিকতেকের কাছেই বিদ্যমান। আল্লাহ্ না করুন! নাফরমানীর কারণে যদি ঈমান নষ্ট হয়ে যায় এবং কুফরির উপর মৃত্যু হয়, তবে অবস্থা খুবই ভয়াবহ হবে। যে কুফরের উপর মৃত্যুবরণ করবে, তার কবর আযাবের একটি ঝলক লক্ষ্য করুন। যেমন; হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম মুহাম্মদ গাযালী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ উদ্ধৃত করেন:
অন্ধ বধির চতুষ্পদ জন্তু
হযরত মুহাম্মদ বিন মুনকাদির رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন: আমি এই সংবাদ পেয়েছি যে, কবরে কাফিরের উপর অন্ধ এবং বধির চতুষ্পদ জন্তু লেলিয়ে দেয়া হয়। তার হাতে লোহার একটি চাবুক থাকে। সে এই চাবুক দিয়ে কাফিরকে কিয়ামত পর্যন্ত প্রহার করতে থাকবে। (ইহইয়াউল উলুম, ৫ম খন্ড, ২৫৯ পৃষ্ঠা, সংক্ষেপিত)
আহ! আমি যদি সেই ব্যক্তি হতাম
প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানের হিফাজতের চিন্তা থাকা উচিত, এজন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সফর করাকে অভ্যাসে পরিনত করুন, যেন আশিকানে রাসূলের উত্তম সঙ্গ প্রাপ্ত হই, ইলম অর্জিত হয়, মুখের সতর্কতার উৎসাহ পাওয়া যায় এবং ঈমানের গুরুত্ব ও মর্যাদা অন্তরে বৃদ্ধি পায় আর দুনিয়াবী উদ্দেশ্য যেমন; রোজগার ও চাকরীর জন্য দোয়ার পাশাপাশি শেষ পরিণতি ভাল হওয়ার এবং ক্ষমা লাভের জন্য দোয়া করা আর করানোরও মানসিকতা তৈরি হয়।
আমাদের পূর্ববর্তী বুযুর্গরা মন্দ মৃত্যুর ব্যাপারে খুবই ভীত সন্ত্রস্ত থাকতেন। যেমন; হযরত সায়্যিদুনা হাসান বসরী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: এক ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে এক হাজার বছর পর বের হবে। অতঃপর বললেন: “আহ! সেই ব্যক্তি যদি আমি হতাম।” তিনি এই কথাটি জাহান্নামে সর্বদা অবস্থান করা এবং মন্দ মৃত্যুর ভয়ে বলেছিলেন। (ইহইয়াউল উলুম, ৪র্থ খন্ড, ২৩১ পৃষ্ঠা)
ভীত সন্ত্রস্ত বুযুর্গ
এক বর্ণনায় রয়েছে, হযরত সায়্যিদুনা হাসান বসরী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ চল্লিশ বছর পর্যন্ত হাসেননি। বর্ণনাকারী বলেন: আমি যখন তাকে বসা অবস্থায় দেখতাম মনে হতো যেন একজন কয়েদী, যাকে গর্দান উড়ানোর জন্য আনা হয়েছে! আর যখন কথা বলতেন যেন মনে হতো তিনি আখিরাতকে চোখের সামনে দেখে দেখে কথা বলছেন এবং যখন চুপ থাকতেন তখন এমন মনে হতো যেন চোখের সামনে আগুন প্রজ্জলিত করা হচ্ছে! এরূপ বিষন্ন ও ভীত সন্ত্রস্ত থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে বলেন: আমার ঐ বিষয়ে ভয় হয় যে, যদি আল্লাহ্ তাআলা আমার কতিপয় অপছন্দনীয় আমল দেখে আমাকে আযাব দেন এবং বলেন যে, যাও তোমাকে ক্ষমা করা হলো না, তবে আমার কি হবে? (ইহইয়াউল উলুম, ৪র্থ খন্ড, ২৩১ পৃষ্ঠা)
আহ! কসরতে ইসইয়াঁ, হায়! খওফ দোযখ কা,
কাশ! ইস জাহাঁ কা মে না বশর বনা হোতা।
আল্লাহ্ তাআলা সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন!
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! নিঃসন্দেহে খোদাভীরুদের মর্যাদা অনেক উচ্চ স্তরে হয়ে থাকে। এমনিভাবে যে রাতে হযরত সায়্যিদুনা হাসান বসরী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ ইন্তিকাল করেন, সেই রাতে দেখা গেলো যে, যেন আসমানের দরজা খোলা রয়েছে এবং এক আহবানকারী ঘোষনা করছেন: শোন! হাসান বসরী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ আল্লাহ্ তাআলার দরবারে এই অবস্থায় উপস্থিত হয়েছেন যে, আল্লাহ্ তাআলা তাঁর উপর সন্তুষ্ট। (ইহইয়াউল উলুম, ৫ম খন্ড, ২৬৬ পৃষ্ঠা)
আরশে পর ধুমে মাছী ওহ মু’মিনে সালিহ মিলা,
ফরশ পর মা’তম উঠে ওহ তৈয়ব ও তাহির গিয়া।
(হাদায়িকে বখশীশ শরীফ)
অতি আত্মবিশ্বাসের মধ্যে থেকো না
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যারা এই অতি আত্মবিশ্বাসে থাকে যে, আমার আকীদা খুবই মজবুত, আমার যদিও বদ আকীদা ও কাফিরের সাথে বন্ধুত্ব, বদ আকীদা লোকের বয়ান শ্রবণ করলেও, তাদের কিতাব ও পত্রিকার কলাম গুলো পড়লেও এমনকি তাদের সংস্পর্শে থাকলেও আমার ঈমান নষ্ট হবে না! আল্লাহ্ তাআলার শপথ! এমন লোক বড় ভুলের মধ্যে রয়েছে। “মলফুযাতে আ’লা হযরত’ এ রয়েছে: যে নিজের নফসের প্রতি আস্থা রাখে, সে অনেক বড় এক মিথ্যুকের উপর আস্থা রাখলো এবং যদি নফস কোন বিষয়ের উপর কসম খেয়ে বলে তবে সেটাই সবচেয়ে বড় মিথ্যা। (সংক্ষেপিত মলফুযাতে আ’লা হযরত, ২৭৭ পৃষ্ঠা)
অন্তরের কান দিয়ে শ্রবণ করুন! কাফের এবং বদ মাযহাবীদের এমনকি প্রিয় মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এবং সাহাবা ও আউলিয়াদের বেয়াদবদের সাথে বন্ধুত্ব এবং তাদের সংস্পর্শে থাকা, তাদের শিক্ষক বানানো, তাদের বয়ান শ্রবণ করা ইত্যাদি সব হারাম ও জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ এবং যদি তাদের অমঙ্গলের কারণে ঈমান নষ্ট হয়ে যায় তবে কবরে অসংখ্য আযাবের সম্মুখীন হতে হবে, যেমন; কিয়ামত পর্যন্ত নিরানব্বইটি ভয়ঙ্কর অজগর সাপ ছোবল মারতে থাকবে এবং জাহান্নামে সর্বকালের জন্য থাকতে হবে। কাফেরের সংস্পর্শের কারণে ঈমান নষ্টকারী দূর্ভাগা মুরতাদ কিয়ামতের দিন আফসোস করে খুবই আর্তনাদ করবে। যেমনিভাবে; ১৯ পারা সুরা ফুরকানের ২৮ ও ২৯ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে:
يٰوَيْلَتٰى لَيْتَنِىْ لَمْ اَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيْلًا (28) لَقَدْ اَضَلَّنِىْ عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ اِذْ جَاءَنِىْ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: হায়, দুর্ভোগ আমার! হায়, কোনমতে আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! নিশ্চয় সে আমাকে বিভ্রান্ত করে দিয়েছে আমার নিকট আগত উপদেশ থেকে।
ঈমান সহকারে মৃত্যুর ওযীফা
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! গুণাহের কারণেও ঈমান নষ্ট হতে পারে। সুতরাং গুণাহ থেকে বেঁচে থাকা উচিত, ঈমান হিফাযতের দোয়া করা থেকে উদাসীন না হওয়া চাই, কামিল পীরের বাইয়াত গ্রহন করে তাঁর দোয়ার আশ্রয়ে চলে আসা উচিৎ। তাছাড়া ঈমান হিফাযতের ওযীফাও পাঠ করতে থাকা উচিৎ। “শাজারায়ে কাদেরীয়া রযবীয়া আত্তারীয়া” এর ২৩ পৃষ্ঠার মধ্যে একটি ওযীফা লিখা হয়েছে: যে প্রতিদিন সকালে (অর্থাৎ অর্ধ রাত ঢলে পড়ার পর থেকে সূর্যের প্রথম কিরণ চমকানো পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে ৪১বার اَنْتَ يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ لَآ اِلٰهَ اِلَّا (পূর্বে ও পরে তিনবার করে দরূদ শরীফ) পাঠ করবে, তবে اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ ঐ ব্যক্তির অন্তর জীবিত থাকবে এবং ঈমান সহকারে মৃত্যু হবে।
মুসলমাঁ হে আত্তার তেরে করম সে,
হো ঈমান পর খাতেমা ইয়া ইলাহী!
ঘুম উড়ে গেছে
হযরত সায়্যিদুনা তাউস رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ যখন রাতে বিছানায় শুতেন তখন এমন ভাবে গড়াগড়ি করতেন যেমনিভাবে; গরম কড়াইয়ের মধ্যে শষ্য ইত্যাদি এদিক সেদিক লাফাতে থাকে! অতঃপর বিছানাকে গুটিয়ে নিতেন এবং কিবলামূখী হয়ে যেতেন (অর্থাৎ নফল নামায আদায় করতেন) এবং বলতেন: জাহান্নামের স্মরণ খোদাভীরুদের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে। সকাল পর্যন্ত এমনি ভাবে ইবাদতে ব্যস্ত থাকতেন। (ইহ্ইয়াউল উলুম, ৪র্থ খন্ড, ২৩১ পৃষ্ঠা)
দিওয়ানা
হযরত সায়্যিদুনা ওয়ায়েস করনী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ ওয়াজকারীর কাছে তাশরীফ নিয়ে যেতেন এবং তাঁর ওয়াজ শুনে কান্না করতেন, যখন জাহান্নামের আলোচনা হতো তখন চিৎকার করে করে উঠে চলে যেতেন, লোকেরা পাগল পাগল বলে তাঁর পিছু নিতো। (ইহ্ইয়াউল উলুম, ৪র্থ খন্ড, ২৩১ পৃষ্ঠা)
পুলসিরাত
হযরত সায়্যিদুনা মুয়াজ বিন জাবাল رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন:মু’মিনের ভয় ততক্ষণ পর্যন্ত শেষ হবে না যতক্ষন পর্যন্ত সে জাহান্নাম উপর স্থাপিত পুলসিরাত পার হবে না। (ইহ্ইয়াউল উলুম, ৪র্থ খন্ড, ২৩১ পৃষ্ঠা)
স্বপ্নে প্রিয় মুস্তফা ﷺ এর দয়া
মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত রিসালা “মন্দ মৃত্যুর কারণ” মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে সংগ্রহ করে পাঠ করুন, যদি আপনার অন্তর জীবিত থাকে তবে পড়ার সময় কান্না চলে আসবে। এক ইসলামী ভাই সম্ভবত ১৪১৯ হিজরীতে নিজের একটি ঘটনা লিপিবদ্ধ করেন: আমি রাতে রিসালা “মন্দ মৃত্যুর কারণ” পাঠ করাতে আমি ঈমান নষ্ট হওয়ার ভয়ে একেবারে ঘাবড়ে গেলাম, চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো, কাঁদতে কাঁদতে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম, ঘুমাতেই আমার ঘুমন্ত ভাগ্য জেগে উঠলো, রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমার স্বপ্নে তাশরীফ নিয়ে আসলেন, আমি কাঁদতে কাঁদতে আরয করলাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ্ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমার ঈমানকে বাচিঁয়ে নিন! নবী করীম, রউফুর রহীম, রাসুলে আমীন صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নূরানী হাতে একটি রেজিষ্টার ছিলো,যা আমি গুণাহগারকে দিলেন এবং মুচকি হেঁসে ইরশাদ করলেন:“ঈমানের উপর শেষ পরিণতিও হবে এবং সবকিছুই লাভ করবে।”
সরে বালী ইনহে রহমত কি আদা লায়ি হে,
হাল বিগড়া হে তো বিমার কি বন আয়ি হে।
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
কবরের আযাব থেকে মুক্তির জন্য
যে প্রতি রাতে সূরা মূলক পাঠ করবে, সে কবরের আযাব থেকে মুক্ত থাকবে। (সংক্ষেপিত শরহুস সুদুর, ১৪৯ পৃষ্ঠা)
কবর আলোকিত করার জন্য ‘
‘রউযুর রিয়াহীন” এ বর্ণিত রয়েছে; হযরত সায়্যিদুনা শকিক বলখী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: আমি পাঁচটি বিষয়কে পাঁচটির মধ্যে পেয়েছি (১) গুণাহের চিকিৎসা চাশতের নামাযের মধ্যে (২) কবর আলোকিত হওয়াকে তাহাজ্জুদের মধ্যে (৩) মুনকার নকিরের উত্তরকে কুরআন তিলাওয়াতের মধ্যে (৪) পুলসিরাত নিরাপদে অতিক্রম করাকে রোযা ও দান-খয়রাতের মধ্যে (৫) হাশরের মাঠে আরশের ছায়া পাওয়াকে নির্জনতা অবলম্বন করার মধ্যে। (সংক্ষেপিত শরহুস সুদুর, ১৪৬ পৃষ্ঠা)
কবরের সাহায্যকারী
হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন: যখন মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা হয়, তখন তার নেক আমল এসে তাকে ঘিরে নেয়। যদি আযাব তার মাথার দিক থেকে আসে তবে কুরআনের তিলাওয়াত তা আটকে দেয় আর যদি পায়ের দিক থেকে আসে, তবে নামাযে দাঁড়ানো তার পথরোধ করে, যদি হাতের দিক থেকে আসে তবে হাত বলে: আল্লাহ্ তাআলার কসম! সে আমাকে সদকা দেয়া এবং দোয়া করার জন্য প্রসারিত করতো, তুমি তার নিকট পৌঁছাতে পারবে না, যদি মুখের দিক থেকে আসে তবে যিকির ও রোযা সামনে এসে যাবে, এমনিভাবে একদিকে নামায ও ধৈর্য দাঁড়িয়ে যাবে এবং বলবে: আর যদি কোন দিক বাকী থাকে তবে আমরা উপস্থিত আছি। (ইহইয়াউল উলুম, ৫ম খন্ড, ২৫৯ পৃষ্ঠা)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সাহাবায়ে কিরাম ও আউলিয়ায়ে এজামের ভালবাসা ও সম্পর্কও কবরের আযাব থেকে বাচিঁয়ে নেয়। যেমনিভাবে; শরহুস সুদুরের দু’টি ঘটনা লক্ষ্য করুন:
(১) শায়খাইনদের প্রতি ভালোবাসা পোষণকারীদের মুক্তি
এক ব্যক্তিকে ইন্তিকালের পর স্বপ্নে দেখে কেউ জিজ্ঞাসা করলো: مَا فَعَلَ اللهُ بِكَ؟ অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলা আপনার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন? উত্তর দিলেন: আল্লাহ্ তাআলা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। জিজ্ঞাসা করা হলো: মুনকার নকিরের সাথে কিরূপ কাটলো? উত্তর দিলেন: আল্লাহ্ তাআলার দয়ায় আমি তাদের আরয করলাম: হযরত আবু বকর সিদ্দিক رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ও ওমর ফারুকে আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ দের ওসীলায় আমাকে ছেড়ে দিন। তখন তাদের মধ্যে একে অপরকে বললো: তিনি তো অনেক বড় বুযুর্গদের ওসীলা পেশ করেছেন সুতরাং তাকে ছেড়ে দাও। অতঃএব তারা আমাকে ছেড়ে দিলেন এবং চলে গেলেন। (সংক্ষেপিত শরহুস সুদুর, ১৪১ পৃষ্ঠা)
(২) আউলিয়ায়ে কিরাম এর প্রতি ভালোবাসা পোষণকারীর মুক্তি
এক নেককার ব্যক্তি যিনি হযরত সায়্যিদুনা বায়েজিদ বোস্তামী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর খাদিম ছিলেন। তার ইন্তিকাল হয়ে গেলো, দাফনের পর কবরের পাশে উপস্থিত অনেকেই শুনেছেন যে, সে মুনকার নকিরকে বলছেন:“আমাকে কেন প্রশ্ন করছেন, আমি তো বায়েজিদ বোস্তামীর খাদিমদের অন্তর্ভূক্ত ছিলাম।” সুতরাং মুনকার নকির তাঁকে ছেড়ে দিলেন এবং চলে গেলেন। (সংক্ষেপিত শরহুস সুদুর, ১৪২ পৃষ্ঠা)
দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য সফর এবং প্রতিদিন ফিকরে মদীনার মাধ্যমে মাদানী ইনআমাতের রিসালা পূরণ করে প্রতি মাসে নিজের এলাকার যেলী নিগরানকে জমা করানোর অভ্যাস গড়ুন। اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّএর বরকতে ঈমানের হিফাযত এবং সুন্নাতের উপর আমল করার মন-মানসিকতা সৃষ্টি হবে, তাছাড়া কবরের আযাব হতে বাঁচার মাধ্যম হবে।
দু’টি শিক্ষণীয় কাহিনী
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আজকাল কথায় কথায় মানুষ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়, সুতরাং পরস্পর ভালবাসার সম্পর্ক অটুট রাখার আগ্রহে ভাল নিয়্যত সহকারে সাওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে আত্মীয়দের সাথে উত্তম আচরণের প্রসঙ্গে দু’টি কাহিনী উপস্থাপন করছি।
(১) কাহিনী: হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ একবার হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর হাদীস শরীফ বর্ণনা করছিলেন,এমতাবস্থায় বললেন: সকল আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি আমাদের মাহফিল থেকে উঠে যান।এক যুবক উঠে গিয়ে তার ফুফুর নিকট গেলেন, যার সাথে তার কয়েক বৎসরের পুরাতন ঝগড়া ছিল। উভয়ে যখন একে অপরের উপর সন্তুষ্ট হয়ে গেলো, তখন ফুফু ঐ যুবককে বললেন: তুমি গিয়ে এর কারণ জিজ্ঞাসা করবে: কেন এরূপ হল? (অর্থাৎ সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর এই ঘোষণার উদ্দেশ্য কী?) যুবকটি (সেখানে) উপস্থিত হয়ে যখন জিজ্ঞাসা করলেন। তখন হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বললেন: আমি নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর কাছ থেকে এরূপ শুনেছি, “যে সম্প্রদায়ের মাঝে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী বিদ্যমান থাকে, সে সম্প্রদায়ের উপর আল্লাহ্ তাআলার রহমত নাযিল হয় না।” (আয যাওয়াজির আন ইকতিরাফিল কাবায়ির, ২য় খন্ড, ১৫৩ পৃষ্ঠা)
(২) কাহিনী: এক হাজী কোন এক দ্বীনদার ব্যক্তির নিকট মক্কায় মুকাররমায় এক হাজার দীনার আমানত স্বরূপ জমা রাখলেন। হজ্বের কার্যাবলী সম্পাদনের পর মক্কায়ে মুকাররমায় ফিরার পর জানতে পারলেন যে, সেই ব্যক্তি মারা গেছে। মৃত ব্যক্তির পরিবারের নিকট সেই আমানত সম্পর্কে খবরা-খবর নিলে তারা বললেন: আমরা জানি না। এক আল্লাহ্ তাআলার অলী এই হাজীকে বললেন: মাঝরাতে জমজম কূপের পাশে গিয়ে সেই ব্যক্তির নাম ধরে ডাকো, যদি সে জান্নাতি হয় তবে اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ উত্তর দেবে।সুতরাং সে গেলো এবং জমজম শরীফের কূপের পাশে গিয়ে ডাকলো কিন্তু কোন উত্তর আসলো না, তিনি যখন এই কথা সেই বুযুর্গকে জানালেন তখন তিনিÒاِنَّ لِلّٰهِ واِنَّ اِلَيْهِ رَاجِعُوْنÓ পাঠ করে বললেন: ভয় হচ্ছে যে, সে জাহান্নামী, ইয়ামেনে যাও, সেখানে বরহুত নামে একটি কূপ আছে, মাঝরাতে তাতে ঝুঁকে সেই ব্যক্তির নাম ধরে ডাকো, যদি সে জাহান্নামী হয় তবে উত্তর দেবে। সুতরাং সে এমনই করলো, সে উত্তর দিলো। তখন জিজ্ঞাসা করা হলো: আমার আমানত কোথায়? সে বললো: আমি আমার ঘরের অমুক জায়গায় পুতে রেখেছি, যাও গিয়ে খুঁড়ে তা নিয়ে নাও। জিজ্ঞাসা করা হলো: তুমি তো নেককার হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলে, তারপরও এই শাস্তি কেন? সে বললো: আমার এক গরীব বোন ছিলো, আমি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলাম, তার প্রতি দয়া করতাম না। আল্লাহ্ তাআলা বোনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণে আমাকে এই শাস্তি দিয়েছেন। (কিতাবুল কাবায়ির, ৫৩,৫৪ পৃষ্ঠা) প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ছেলে-মেয়ে, পিতা-মাতা, দাদা-দাদি, ভাই-বোন, খালা-মামা, চাচা-ফুফী ইত্যাদি আত্মীয়দের “যুল আরহাম” বলে। এদের সাথে শরীয়াতের বিনা অনুমতিতে সম্পর্ক ছিন্ন করাকে “আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা” বলে। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হারাম এবং জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ। যেমনিভাবে; আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ্ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: (আত্মীয়দের সাথে) সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে যাবেনা। (বুখারী শরীফ, ৪র্থ খন্ড, ৯৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৫৯৮৪) (তবে হ্যাঁ বদআকীদা সম্পন্ন আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক রাখবেন না)
১০টি চিন্তা-ভাবনা মূলক ফরমানে মুস্তফা
(১) তোমরা সবাই দায়িত্বশীল আর তোমাদের প্রত্যেককে নিজের অধীনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (আল মু’জামুস সগীর লিত তাবারানী, ১ম খন্ড, ১৬১ পৃষ্ঠা)
(২) যে দায়িত্ববান তার অধীনস্থদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, সে জাহান্নামে যাবে। (মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ৭ম খন্ড, ২৮৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ২০৩১১)
(৩) যে ব্যক্তিকে আল্লাহ্ তাআলা কোন সম্প্রদায়ের যিম্মাদার বানালেন অতঃপর সে তাদের মঙ্গলের প্রতি খেয়াল রাখলো না তবে সে জান্নাতে সুগন্ধিও পাবে না। (বুখারী, ৪র্থ খন্ড, ৪৫২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৭১৫১)
(৪) ন্যায় বিচারক কাযীর (শাসক) কিয়ামতের দিন একটি মূহুর্ত এমন আসবে যখন সে আকাঙ্খা করবে যে, আহ! সে দু’জনের মাঝে যদি একটি খেজুরের জন্যও সমাধান না করতো। (মজমুয়ায যাওয়ায়িদ, ৪র্থ খন্ড, ৩৪৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৬৯৮৬)
(৫) যে ব্যক্তি দশ ব্যক্তির উপরও যদি দায়িত্বশীল হয়, তবে কিয়ামতের দিন তাকে এমনভাবে নেয়া হবে যে, তার হাত তার ঘাড়ের সাথে বাঁধা থাকবে। এখন হয়তো তার ন্যায়পরায়নতা তাকে মুক্ত করবে অথবা তার অত্যাচার তাকে আযাবে নিপতিত করবে। (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, ৩য় খন্ড, ১৮৪ পৃষ্ঠা, হদীস নং-৫৩৪৫)
(৬) (হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দোয়া:) হে আল্লাহ্! যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোন বিষয়ের দায়িত্বশীল, অতঃপর সে তাদের উপর কঠোরতা প্রদর্শণ করে তবে তুমিও তার উপর কঠোরতা প্রদর্শণ করো। আর যদি তাদের সাথে নম্রতা প্রদর্শণ করে তবে তুমিও তার সাথে নম্রতা প্রদর্শণ করো। (মুসলিম, ১০১৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ১৮২৮)
(৭) আল্লাহ্ তাআলা যাকে মুসলমানের কাজ সমূহ হতে কোন কিছুর দায়িত্বশীল বানালো, অতঃপর সে তাদের চাহিদা, দারিদ্রতা ও অভাবের মাঝে কোন প্রতিবন্ধকতা দাঁড় করিয়ে দেয়, তবে আল্লাহ্ তাআলাও তার চাহিদা, দারিদ্রতা ও অভাবের মাঝে প্রতিবন্ধকতা দাঁড় করিয়ে দেবেন। (আবু দাউদ, ৩য় খন্ড, ১৮৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ২৯৪৮) (আহ! আহ!! আহ!!! যারা অধীনস্থদের চাহিদাকে উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে পূর্ণ করে না তবে আল্লাহ্ তাআলাও তাদের চাহিদা পূরণ করবে না।)
(৮) আল্লাহ্ তাআলা তার প্রতি দয়া করে না, যে লোকদের প্রতি দয়া করেনা। (বুখারী, ৪র্থ খন্ড, ৫৩২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৭৩৭৬)
(৯) “নিশ্চয় তোমরা অতি শীঘ্রই শাসনভারের আকাক্ষা করবে কিন্তু কিয়ামতের দিন তা অনুশোচনার কারণ হবে।” অপর এক বর্ণনায় রয়েছে: “আমি এই কাজের (অর্থাৎ শাসনভারের) জন্য এমন কোন ব্যক্তিকে নিযুক্ত করি না, যে এটা চায় বা এর প্রতি আকাঙ্খা রাখে।” (বুখারী, ৪র্থ খন্ড, ৪৫৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৭১৪৮,৭১৪৯) (যে মন্ত্রীত্ব, পদ এবং দায়িত্বের জন্য দৌড়াদৌড়ি করে এবং পদ না পাওয়ার কারণে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে তাদের জন্য এটি শিক্ষণীয় বিষয়।)
(১০) ন্যায় বিচারক শাসক নূরের মিম্বরে থাকবে, এরা হচ্ছে সেই লোক, যারা নিজের সিদ্ধান্ত সমূহ, পরিবারের সদস্য এবং যাদের উপর দায়িত্বশীল তাদের সাথে ন্যায় পরায়ণতার সাথে কাজ সম্পাদন করে। (সুনানে নাসায়ী, পৃষ্ঠা ৮৫১, হাদীস নং: ৫৩৮৯)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত ৪৮ পৃষ্ঠা সম্বলিত "মৃত ব্যক্তির অনুশোচনা" নামক রিসালার ৪-৪১ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই রিসালাটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন। অন্যকে উপহার দিন।
যারা মোবাইলে (পিডিএফ) রিসালাটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন ।
ইসলামীক বাংলা বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন