আশুরায় সংঘঠিত ৯টি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
﴾১﴿ আশুরার দিন (অর্থাৎ ১০ মুহাররামুল হারাম) হযরত সায়্যিদুনা নুহ عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام এর নৌকা জুদী পাহাড়ে ভিড়ে।
﴾২﴿ এই দিনেই হযরত সায়্যিদুনা আদম সফিয়্যুল্লাহ عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام এর অনিচ্ছাকৃত ভূলের তাওবা কবুল করা হয়েছে।
﴾৩﴿ এই দিনেই হযরত ইউনুস عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام এর সম্প্রদায়ের তাওবা কবুল করা হয়।
﴾৪﴿ এই দিনেই হযরত সায়্যিদুনা ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام জন্ম গ্রহণ করেন।
﴾৫﴿ এই দিনেই হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রুহুল্লাহ عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام কে সৃষ্টি করা হয়।(আল ফিরদাউস, ১ম খন্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৮৫৬।)
﴾৬﴿ এই দিনেই হযরত সায়্যিদুনা মূসা কলিমুল্লাহ عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام ও তারঁ সম্প্রদায়ের মুক্তি অর্জিত হয় এবং ফিরআউন নিজ গোত্রসহ ডুবে যায়।(বুখারী, ২য় খন্ড, ৪৩৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৩৯৭-৩৩৯৮।)
﴾৭﴿ এই দিন সায়্যিদুনা ইউছুফ عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام এর কয়েদখানা থেকে মুক্তি অর্জিত হয়।
﴾৮﴿ এই দিনেই হযরত সায়্যিদুনা ইউনুস عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام কে মাছের পেট থেকে বের করা হয়।(ফয়যুল কদীর, ৫ম খন্ড, ২৮৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭০৭৫।)
﴾৯﴿ সায়্যিদুনা ইমাম হুসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কে তাঁর শাহজাদা ও সঙ্গী সাথী সহ তিনদিন ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত রাখার পর এই আশুরার দিনেই কারবালার বুকে অবর্ণনীয় নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে শহীদ করা হয়।
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
মুহাররমুল হারাম ও আশুরার রোযার ৬টি ফযীলত
﴾১﴿ হুযুরে আকরাম, নূরে মুজাসসাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: রমযানের রোযার পর মুহাররমের রোযা উত্তম এবং ফরযের পর উত্তম নামায হলো ‘সালাতুল লায়ল’ (অর্থাৎ রাতের নফল নামায)।” (মুসলিম, ৫৯১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১১৬৩)
﴾২﴿ প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “মুহাররমের প্রতিদিনের রোযা এক মাসের রোযার সমান।” (মু’জামুস সগীর, ২য় খন্ড, ৭১ পৃষ্ঠা)
মূসা عَلَيْهِ السَّلَام দিবস
﴾৩﴿ হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا বলেন: রাসূলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم যখন মদীনা মুনাওয়ারায় زَادَهَا اللهُ شَرَفًا وَّ تَعْظِيْمًا তাশরীফ আনলেন, ইহুদীদেরকে আশুরার দিন রোযারত অবস্থায় দেখে ইরশাদ করলেন: এটা কোন দিন যে, তোমরা রোযা রাখছো? আরয করলো: এটি মহত্বপূর্ণ দিন, এতে মূসা عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام এবং তাঁর সম্প্রদায়কে আল্লাহ তায়ালা মুক্তি দিয়েছেন আর ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়কে ডুবিয়ে দিয়েছেন, সুতরাং মূসা عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এ দিনে রোযা রাখেন, তাই আমরাও রোযা রাখছি। ইরশাদ করলেন: মূসা عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام এর অনুসরন করার ক্ষেত্রে তোমাদের তুলনায় আমরা বেশি হকদার এবং বেশি নিকটতর। তখন হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم নিজেও রোযা রাখলেন এবং এর নির্দেশও দিলেন। (মুসলিম, ৫৭২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১১৩০)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ হাদীসে পাক থেকে জানা গেলো যে, যেদিন আল্লাহ তায়ালা কোন বিশেষ নেয়ামাত দান করেছেন, তার স্মৃতি বহন করা সঠিক ও পছন্দনীয়, কেননা এর মাধ্যমে ঐ মহান নেয়ামতের স্মরণ সতেজ হবে এবং এর কৃতজ্ঞতা আদায় করার উপায়ও হবে, স্বয়ং কোরআনে আযীমে ইরশাদ করেন:
وَذَكِّرْهُمْ بِاَيّٰمِ الله
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং তাদেরকে আল্লাহ তায়ালার দিন স্মরণ করিয়ে দাও! (পারা- ১৩, সূরা- ইব্রাহীম, আয়াত- ৫)
সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নাঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন যে, “بِاَيّٰمِ الله ” দ্বারা ঐ দিন উদ্দেশ্য, যাতে আল্লাহ তায়ালা আপন বান্দাদেরকে পুরস্কৃত করেছেন, যেমন; বনী ইস্রাইলের জন্য ‘মান্না ও সালওয়া’ অবতরণের দিন, হযরত সায়্যিদুনা মূসা عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام এর জন্য নদীতে রাস্তা বানানোর দিন। এসব দিনের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় নেয়ামতের দিন হচ্ছে, সায়্যিদে আলম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর বিলাদত শরীফ (পৃথিবীতে শুভাগমনের দিন) ও মিরাজ শরীফের দিনে তাঁর স্মৃতি ধারণ করাও এ আয়াতের বিধানভূক্ত। (খাযায়িনুল ইরফান থেকে সংক্ষেপিত, ৪৭৯ পৃষ্ঠা)
ঈদে মিলাদুন্নবী ﷺ ও দা’ওয়াতে ইসলামী
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! সুলতানে মদীনা মুনাওয়ারা, শাহানশাহে মক্কা মুকাররমা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর বিলাদত শরীফের দিনের চেয়ে মহান কোন দিনটি “পুরস্কারের দিন” হবে? নিশ্চয় সকল নেয়ামত তাঁরই সদকায় অর্জিত এবং তাঁর বিলাদতের দিন তো ঈদেরও ঈদ। اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ আশিকানে রাসূলের মাদানী সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে পৃথিবীর অগণিত স্থানে প্রতি বছর ঈদে মিলাদুন্নবী صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم জাঁকজমক সহকারে উদযাপন করা হয়। রবিউল আউয়াল শরীফের ১২তম রাতে আজিমুশ্মান ইজতিমায়ে মিলাদ এর আয়োজন করা হয় এবং বিশেষকরে আমার সুধারণা মতে ঐ রাতে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় “ইজতিমায়ে মিলাদ” বাবুল মদীনা করাচীতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে আর মাদানী চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ঈদে মিলাদের দিন “মারহাবা ইয়া মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم” শ্লোগানে মুখরিত করে অসংখ্য জুলুসে মিলাদ বের করা হয়, যাতে লক্ষ লক্ষ আশিকানে রাসূল অংশগ্রহণ করে থাকে।
ঈদে মিলাদুন্নবী তো ঈদ কি ভি ঈদ হে,
বিল ইয়াকিঁ হে ঈদে ঈদা ঈদে মিলাদুন্নবী।
(ওয়াসায়িলে বখশীশ, ৩৮০ পৃষ্ঠা)
আশুরার রোযা
﴾৪﴿ হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا বলেন: “আমি সুলতানে দোজাহান صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে কোন দিনের রোযাকে অন্য দিনের উপর প্রাধান্য দিয়ে উৎসাহ দিতে দেখিনি; কিন্তু আশুরার দিনের ও রমযান মাসের রোযা ব্যতীত।” (বুখারী, ১ম খন্ড, ৬৫৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২০০৬)
ইহুদীদের বিরোধীতা করো
﴾৫﴿ নবীয়ে রহমত, শফীয়ে উম্মত صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: আশুরার দিনের রোযা রাখো আর এতে ইহুদীদের বিরোধীতা করো, এর পূর্বে বা পরেও এক দিনের রোযা রাখো। (মুসনাদে ইমাম আহমদ, ১ম খন্ড, ৫১৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২১৫৪) আশুরার রোযা যখনই রাখবে, তখন এর সাথে ৯ কিংবা ১১ মুহাররামুল হারামের রোযাও রেখে নেয়া উত্তম।
﴾৬﴿ হযরত সায়্যিদুনা আবু কাতাদা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত; নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর ক্ষমামূলক ইরশাদ হচ্ছে: আমার আল্লাহ তায়ালার প্রতি ধারণা রয়েছে যে, আশুরার রোযা এক বছর পূর্বের গুনাহকে মিটিয়ে দেয়। (মুসলিম, ৫৯০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১১৬২)
সারা বছর ঘরে বরকত
দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ১৬৬ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “ইসলামী জিন্দেগী” এর ১৩১ পৃষ্ঠায় প্রসিদ্ধ মুফাসসীর, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: মুহাররমের ৯ ও ১০ তারিখ রোযা রাখলে অনেক সাওয়াব পাওয়া যাবে, সন্তান সন্তুতির জন্য ১০ মুহাররম ভাল ভাল খাবার রানড়বা করুন তবে اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ সারা বছর ঘরে বরকত থাকবে। উত্তম হচ্ছে যে, খিচুড়ী রান্না করে হযরত শহীদে কারবালা সায়্যিদুনা ইমাম হুসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর নামে ফাতিহা করা খুবই উপকারী, কার্যকর ও পরীক্ষিত। (ইসলামী জিন্দেগী, ১৩১ পৃষ্ঠা)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা “মুহাম্মদ ইলয়াস আত্তার” কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত ৫৪৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত "ফয়যানে রমযান" নামক কিতাবের ৩৮২-৩৮৬ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই কিতাবটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন। অন্যকে উপহার দিন।
ইসলামীক বাংলা বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন