তাজেদারে রিসালত, শাহেনশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত, শময়ে বজ্মে হিদায়ত, নওশায়ে বজ্মে জান্নাত, নবী করীম ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে আমার সুন্নাতকে ভালবাসল, সে আমাকেই ভালবাসল। আর যে আমাকে ভালবাসল, সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। (মিশকাতুল মাছাবীহ্, ১ম খন্ড, ৫৫ পৃষ্ঠা, হাদিস- ১৭৫)
সীনা তেরি সুন্নাতো মদীনা বনে আক্বা,
জান্নাত মে পড়ূসী মুঝে তুম আপনা বনানা।
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
কবরস্থানে হাজির হওয়ার ১১টি মাদানী ফুল
(১) নবী করীম, রউফুর রহীম ﷺ ইরশাদ করেছেন: “আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করার জন্য নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা কবর যিয়ারত কর কেননা সেটা দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তির কারণ, আর আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়।” (সুনানে ইবনে মাযাহ্, ২য় খন্ড, ২৫২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৫৭১, দারুল মারিফাহ, বৈরুত)
(২) অলী আল্লাহর মাজার শরীফ বা কোন মুসলমানের কবর যিয়ারতের জন্য যেতে চাইলে মুস্তাহাব হচ্ছে, প্রথমে নিজের ঘরে (মাকরুহ ওয়াক্ত না হলে) দুই রাকাত নফল নামায পড়া, প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে একবার আয়াতুল কুরসী ও তিনবার সূরা ইখলাস পড়ে এ নামাযের সাওয়াব সাহিবে কবরকে পৌছিয়ে দিন। আল্লাহ তাআলা সেই মৃত ব্যক্তির কবরে নূর সৃষ্টি করবে আর এ (সাওয়াব প্রেরণকারী) ব্যক্তিকে অনেক বেশী সাওয়াব দান করা হবে। (ফতোওয়ায়ে আলমগীরি, ৫ম খন্ড, ৩৫০ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকর, বৈরুত)
৩) মাজার শরীফ বা কবর যিয়ারতের জন্য যাওয়ার সময় রাস্তায় অনর্থক কথায় মশগুল না হওয়া। (ফতোওয়ায়ে আলমগীরি, ৫ম খন্ড, ৩৫০ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকর, বৈরুত)
(৪) কবরস্থানের মধ্যে ঐ সাধারণ রাস্তা দিয়ে যাবেন, যেখানে পূর্বে কখনও মুসলমানদের কবর ছিল না, যে রাস্তা নতুন তৈরী করেছে সেটার উপর দিয়ে যাবেন না। “রদ্দুল মুহতার” এ রয়েছে (কবরস্থানের মধ্যে কবর প্রশস্ত করে) যে নতুন রাস্তা বের করা হয়েছে সেটার উপর চলাফেরা করা হারাম। (রদ্দুল মুহতার, ১ম খন্ড, ৬১২ পৃষ্ঠা) বরং নতুন রাস্তায় কেবল নিশ্চিত ধারনা হলেও সেটার উপর চলা ফেরা নাজায়িয ও গুনাহ। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ১৮৩ পৃষ্ঠা, দারুল মারিফা, বৈরুত)
(৫) কিছু অলীর মাজারে দেখা গিয়েছে যে, যিয়ারতকারীর সুবিধার জন্য মুসলমানদের কবরকে ভেঙ্গে প্রশস্ত করে দেওয়া হয়, এই রকম জায়গায় ঘুমানো, হাটা-চলা, দাঁড়ানো, তিলাওয়াত ও যিকির করার জন্য বসা হারাম, দূর থেকেই ফাতিহা পড়ে নিন।
(৬) কবর যিয়ারত মৃত ব্যক্তির চেহারার সামনে দাঁড়িয়ে করা, আর কবরবাসীর পায়ের দিক থেকে যাবেন কেননা তার দৃষ্টি সামনে থাকে, শিয়রের দিক থেকে আসবেন না, কারণ তাকে মাথা তুলে দেখতে হবে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৯ খন্ড, ৫৩২ পৃষ্ঠা, রযা ফাউন্ডেশন, মারকাযুল আউলিয়া লাহোর)
(৭) কবরস্থানে এভাবে দাঁড়ান ক্বিবলার দিকে পিঠ এবং কবরবাসীর চেহারার দিকে মূখমন্ডল হয়, এরপর বলুন:
اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا اَهْلَ الْقُبُرِ يَغْفِرُ اللهُ لَنَا وَلَكُمْ وَاَنْتُمْ لَنَا سَلَفٌ وَّنَحْنُ بِالْاَثَر
অনুবাদ: হে কবরবাসী তোমার উপর রহমত বর্ষিত হোক, আল্লাহ তাআলা আমাদের ও তোমাদের ক্ষমা করুন, তুমি আমাদের পূর্বে চলে এসেছ, আর আমরা তোমাদের পরে আগমনকারী। (ফতোওয়ায়ে আলমগীরি, ৫ম খন্ড, ৩৫০ পৃষ্ঠা)
(৮) যে কবরস্থানে প্রবেশ করে এটা বলবে:
اَللهُمَّ رَبَّ الْاجْسَادِ الْبَالِيَةِ وَالْعِظَامِ النَّخِرَةِ الَّتِىْ خَرَجَتْ مِنَ الدُّنْيَا وَهِىَ بِكَ مُؤْمِنَةٌ اَدْخِلْ عَلَيْهَا رَوْحََا مِّنْ عِنْدِكَ وَسَلَامََا مِّنِّىْ
অনুবাদ: “হে আল্লাহ! (হে) গলে যাওয়া শরীর ও পচনযুক্ত হাঁড়ের রব! যে দুনিয়া থেকে ঈমান সহকারে বিদায় হয়েছে তুমি তার উপর আপন রহমত এবং আমার সালাম পৌছিয়ে দিন।”
এতে হযরত সায়্যিদুনা আদম عَلَيْهِ السَلَام থেকে নিয়ে ঐ সময় পর্যন্ত যত মু’মিন মারা গিয়েছে সবাই তার (অর্থাৎ দোআ পাঠকারীর) ক্ষমা লাভের জন্য দোআ করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ১০ম খন্ড, ১৫ পৃষ্ঠা, দারুল ফিক্র, বৈরুত)
(৯) নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, মালিকে জান্নাত, কাসিমে নেয়ামত, হুযুর পুরনূর ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি কবরস্থানে প্রবেশ করল অতঃপর সে সূরা ফাতিহা, সূরা ইখলাস এবং সূরা তাকাসূর পড়ল তারপর এ দোআ করল; “হে আল্লাহ! আমি যা কিছু কুরআন পড়েছি তার সাওয়াব এ কবরস্থানের মু’মিন নর-নারীকে পৌছিয়ে দিন।”
তবে- সে সমস্ত মু’মিন কিয়ামতের দিন তার (অর্থাৎ ইছালে সাওয়াবকারীর) জন্য সুপারিশকারী হবে।” (শরহুস সুদুর, ৩১১ পৃষ্ঠা, মারকাজে আহলে সুন্নাত বরকত রযা, হিন্দ) হাদীস শরীফে রয়েছে: যে এগার বার সূরা ইখলাস পড়ে এর সাওয়াব মৃত ব্যক্তিকে পৌছাবে, তবে মৃত ব্যক্তির সমসংখ্যক পরিমান সাওয়াব সে (অর্থাৎ ইছালে সাওয়াব কারী) পাবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ১৮৩ পৃষ্ঠা)
(১০) কবরের উপর আগর বাতি জ্বালানো যাবে না। কেননা এটা বে-আদবী ও মন্দ কাজ (এবং এতে মৃত ব্যক্তির কষ্ট হয়) হ্যাঁ! যদি (উপস্থিতদেরকে) সুগন্ধ (পৌছানোর) জন্য (জ্বালাতে চাই তবে) কবরের পাশে খালি জায়গা থাকলে সেখানে জ্বালাবে, কেননা সুগন্ধি পৌছানো পছন্দনীয়। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া থেকে সংক্ষেপিত, ৯ খন্ড, ৪৮২, ৫২৫ পৃষ্ঠা)
আ’লা হযরত رحمة الله عليه অন্য জায়গায় বলেন: “সহীহ মুসলিম শরীফ”এ হযরত আমর বিন আস رضى الله عنه থেকে বর্ণিত; তিনি ওফাতের সময় নিজের সন্তান কে বলেছেন: যখন আমি মারা যাব তখন আমার সাথে না কোন বিলাপ কারী যাবে, না আগুন যাবে। (সহীহ মুসলিম, ৭৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৯২, দারু ইবনে হুজম, বৈরুত)
(১১) কবরের উপর চেরাগ বা মোম বাতি প্রভৃতি রাখবেন না। কারণ এটা আগুন, আর কবরের উপর আগুন রাখলে মৃত ব্যক্তির কষ্ট হয়, হ্যাঁ রাতে পথচারীর জন্য বাতি জ্বালানো উদ্দেশ্য হয়, তবে কবরের এক পার্শ্বে খালি জমিনের উপর মোমবাতি বা চেরাগ রখতে পারেন।
হাজারো সুন্নাত শিখার জন্য মাকতাবাতুল মদীনা থেকে প্রকাশিত কিতাব সমূহ
(১) ৩১২ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “বাহারে শরীয়ত” ১৬তম খন্ড এবং
(২) ১২০ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “সুন্নাতে অওর আদাব” হাদিয়া সহকারে সংগ্রহ করুন এবং পড়ুন । সুন্নাত প্রশিক্ষণের এক সর্বোত্তম মাধ্যম দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলাতে আশিকানে রাসুলদের সাথে সুন্নাতে ভরা সফর করা।
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
---------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত শাবান মাসের ফযিলত সম্পর্কিত “প্রিয় নবীর মাস” নামক রিসালার ২৮-৩১ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। রিসালাটি নিজে কিনুন, অন্যকে উপহার দিন।
যারা মোবাইলে (পিডিএফ) রিসালাটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড দিন
মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন