রাশির ভাল-মন্দ প্রভাবের উপর বিশ্বাস করা কেমন?
নিজেকে জ্ঞানী বলে মনে করা অনেকে রাশির প্রভাবের উপর এমন ভাবে বিশ্বাস করে যে, বিয়ে ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও তারা নক্ষত্রের পরিভ্রমণ কিংবা অবস্থান অনুযায়ী করে থাকে। এ ধরনের লোক সহজেই জ্যোতিষী দাবীদারদের শিকারে পরিণত হয়, এদেরকে তারা বোকা বানিয়ে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। অনেক ক্ষেত্রে এমন হয় যে, ছেলে ও মেয়ের বিয়ের কথাবার্তা পাকাপোক্ত হয়ে গেছে, প্রয়োজনীয় দেখা-সাক্ষাৎ এবং পরস্পর তথ্য-উপাত্তের কাজও শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু এক পক্ষ এই বলে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিল যে, আমি খোঁজ নিলাম যে, ছেলে আর মেয়ে পরস্পর রাশিতে মিলছে না, তাই এই বিয়ে হতে পারে না। আমার আক্বা আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিলাø ত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হলো: আকাশের নক্ষত্ররাজির প্রভাব এবং সেগুলোর শুভ অশুভ প্রভাবে বিশ্বাস করা কেমন? আ’লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ উত্তর দিলেন: একজন আনুগত্যশীল মুসলমানের জন্য কোন বস্তুই অলক্ষুণে বা অশুভ নয়। অপরপক্ষে একজন কাফিরের জন্য কোন বস্তুই শুভ নয় এবং একজন গুনাহগার মুসলমানের জন্য তার ইসলামই শুভ, ইবাদত কেবল কবুল হওয়ার শর্তেই শুভ। গুনাহ করা বস্তুতই দুর্ভাগ্য। যদি রহমত এবং শাফায়াত তাকে সেই দুর্ভাগ্য থেকে বাঁচিয়ে নেয়, বরং দুর্ভাগ্যকে সৌভাগ্যে পরিণত করে দেয়, فَاُولٰئِكَ يُبَدِّلُ اللهُ سَيِّاٰتِهِمْ حَسَنٰتٍ (কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এমন লোকদের মন্দ কাজগুলোকে আল্লাহ সৎকর্মসমূহে পরিবর্তিত করে দেবেন;) (১৯তম পারা, আল ফুরকান, আয়াত ৭০) বরং কোন কোন সময় গুনাহ এভাবে সৌভাগ্য হয়ে যায় যে, বান্দা সেই গুনাহের কারণে ভীত ও সন্ত্রস্ত থাকে, তাওবা করে এবং নেক আমলের চেষ্টায় থাকে। তবে সেই গুনাহ দূরীভূত হয়ে গেছে এবং অনেক নেকী পেয়ে গেছে, বাকি রইল নক্ষত্রের বিষয়, সেগুলোতে শুভ অশুভ বলতে কিছুই নাই বরং কেউ যদি নক্ষত্রকে নিজস্ব গুণে প্রভাবশালী বলে মনে করে, তবে তা শিরক এবং সেগুলো থেকে সাহায্য চাওয়া হারাম, অন্যথায় সেগুলোর প্রতি মনোনিবেশ করা অবশ্যই তাওয়াক্কুলের বিপরীত। (ফতোয়ায়ে রযবীয়া, ২১/২২৩)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
কিছু মুমিন রইলো, কিছু কাফির হয়ে গেলো
হযরত সায়্যিদুনা যায়দ বিন খালিদ জুহনী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমাদেরকে হুদায়বিয়ার স্থানে বৃষ্টির পরে ফযরের নামায পড়ান। তিনি صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم যখন নামায থেকে অবসর হলেন, তখন লোকদের দিকে নূরানী চেহারা ফিরালেন। অতঃপর ইরশাদ করলেন: তোমরা কি জান যে, তোমাদের রব তায়ালা কী ইরশাদ করেছেন? সবাই বললেন: আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলই صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ভাল জানেন। প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন: আমার বান্দারা সকাল করেছে, তো কিছু মুমিন হয়েছে আর কিছু কাফির। যেই ব্যক্তি বললো: আল্লাহ তায়ালার দয়া ও অনুগ্রহে আমাদের উপর বৃষ্টি হয়েছে, সে আমার উপর ঈমান রাখে, নক্ষত্রের উপর বিশ্বাস করে না আর যারা বললো: অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে, তারা كَافِرٌ بِىْ مُؤمِنٌ بَالْكَوَاكَبِ অর্থাৎ আমাকে অস্বীকার করলো এবং নক্ষত্রকে বিশ্বাস করলো। (বুখারী, কিতাবুল আযান, বাবু ইয়াস্তাকবিলুল ইমামুন নাসা ইযা সাল্লামা, ১/২৯৫, হাদীস- ৮৪৬)
বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ প্রণেতা মুফতী মুহাম্মদ শরীফুল হক আমজাদী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ হাদীস শরীফটির ব্যাখ্যায় লিখেন: বিশ্বাস যদি এই হয় যে, নক্ষত্রই বৃষ্টি বর্ষণ করে, তবে এই বিশ্বাসটি হবে কুফর আর যদি এই বিশ্বাস হয় যে, বৃষ্টি হয় আল্লাহ তায়ালারই নির্দেশে, বিভিন্ন নক্ষত্রের উদয়-অস্ত তাঁর নিদর্শন স্বরূপ, তবে তাতে কোন অপরাধ নাই। তাই বলা যে, অমুক গ্রহের প্রভাবে বৃষ্টি হয়েছে, তা নিষেধ আর যদি বলে যে, অমুক গ্রহের অমুক অবস্থানের কারণে বৃষ্টি হয়েছে, জায়িয। (“ كَافِرٌ بِىْ مُؤمِنٌ بَالْكَوَاكَبِ” এর ব্যাখ্যায় মুফতী সাহেব লিখেন:) এখানে কুফর এবং ঈমানের আভিধানিক অর্থ উদ্দেশ্য অর্থাৎ তারা আমাকে অস্বীকার করলো এবং গ্রহের অবস্থানকে বিশ্বাস করলো। (নুযহাতুল কারী, ২/৪৯৫, ৪৯৬)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
যেকোন নক্ষত্রকে যেখানে ইচ্ছা পাঠিয়ে দেন
একদিন মাওলানা মুহাম্মদ হোসাইন মীরঠী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর আব্বাজান (যিনি জ্যোতির্বিদ্যায় অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন) আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর নিকট এলে তিনি তাঁর নিকট প্রশ্ন করেন: বলুন তো, বৃষ্টি সম্পর্কে আপনার কী ধারণা। কখন বৃষ্টি হবে? তিনি নক্ষত্রের অবস্থান ইত্যাদি থেকে হিসাব-নিকাশ করে বললেন: এই মাসে বৃষ্টি নাই, আগামী মাস থেকে বৃষ্টি হবে। এই বলে তিনি হিসাবটি আলা হযরতের দিকে ঠেলে দিলেন। আ’লা হযরত তা দেখে বললেন: সব কিছুর ক্ষমতা আল্লাহ তায়ালারই হাতে, তিনি ইচ্ছা করলে আজও বৃষ্টি হতে পারে। তিনি বললেন: তা কীভাবে হতে পারে, আপনি কি নক্ষত্রের অবস্থান দেখতে পাচ্ছেন না? আ’লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বললেন: আমি সব কিছু দেখতে পাচ্ছি, সেই সাথে নক্ষত্রকে যিনি পরিচালনা করেন তাঁর ক্ষমতাও দেখতে পাচ্ছি। তারপর আ’লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ সেই দুর্বোধ্য মাসআলাটি সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দিলেন, সামনে ঘড়ি লাগানো ছিলো, আ’লা হযরত তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন: ঘড়িতে এখন সময় কতো? তিনি বললেন: সোয়া এগারটা। আ’লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বললেন: বারটা বাজার আর কতো দেরী? শাহ সাহেব বললেন: ঠিক পৌনে এক ঘণ্টা। আ’লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বসা থেকে উঠে বড় কাঁটাটি ঘুরিয়ে দিলেন, তৎক্ষণাৎ ঠনঠন করে বারটা বাজার শব্দ শোনা গেলো। আ’লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বললেন: আপনি তো বলেছিলেন বারটা বাজার আরো পৌনে এক ঘণ্টা বাকি রয়েছে। শাহ সাহেব বললেন: আপনি যে কাঁটা ঘুড়িয়ে দিয়েছেন, না হয় নিজের গতিতে চলতে চলতে পৌনে এক ঘণ্টা পরেই বারটা বাজতো। আ’লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বললেন: এভাবে সব কিছুর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলেন আল্লাহ তায়ালা। অনুরূপভাবে যেই নক্ষত্রকে যখন যেখানে ইচ্ছা তিনিই পাঠিয়ে দেন। তিনি যদি ইচ্ছা করেন, এক মাস কী, এক দিন কী, এই মুহূর্তেই বৃষ্টি বর্ষণ করতে পারেন। তাঁর মুখ থেকে কথাটি শেষ হতে না হতেই, হঠাৎ চতুর্দিকে মেঘের ঘনঘটা দেখা গেলো এবং বৃষ্টি বর্ষণ হতে লাগলো।(তাজাল্লিয়াতে ইমাম আহমদ রযা, ১১৬ পৃষ্ঠা)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা “মুহাম্মদ ইলয়াস আত্তার” কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত ৯৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত "অশুভ প্রথা" নামক রিসালার ৪০- নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই রিসালাটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন। অন্যকে উপহার দিন।
ইসলামীক বাংলা বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন