হযরত আল্লামা আবুল ফারাজ আবদুর রহমান বিন জওযী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ উয়ূনুল হিকায়াতে বর্ণনা করেন: সিরিয়ার তিনজন ঘোড়সওয়ার সাহসী যুবক ভাই ইসলামী সৈন্যদের সাথে জিহাদে রওয়ানা হন। কিন্তু তাঁরা সৈন্যদের থেকে আলাদা হয়ে চলতেন। যতক্ষণ পর্যন্ত কাফেররা প্রথমে আক্রমণ না চালাত তাঁরা যুদ্ধে লিপ্ত হতেন না। একবার রোমদের একটি বড় সৈন্যদল মুসলমানদের উপর আক্রমণ চালাল এবং বেশ কিছু মুসলমানদের শহীদ করল ও অনেককে বন্দী করে ফেলল। তিন ভাই নিজেদের মধ্যে বলাবলি করলেন, মুসলমানদের উপর একটি বড় মুসিবত নাযিল হয়েছে, আমাদের উচিত নিজেদের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া। এ উদ্দেশ্যে তাঁরা সামনে অগ্রসর হলেন আর প্রাণে বেঁচে যাওয়া অবশিষ্ট মুসলমানদের বললেন: আপনারা আমাদের পিছনে চলে যান। এবং আমাদেরকে তাদের সাথে যুদ্ধ করতে দিন। আল্লাহ্ চাইলে আমরাই আপনাদের জন্য যথেষ্ট। অতঃপর তাঁরা রোম সৈন্যদের উপর এমন আক্রমণ চালাল যে, রোম সৈন্যরা পিছু হটতে বাধ্য হল। রোম সম্রাট (তিন যুবক ভাইয়ের বাহাদুরী অবলোকন করছিল) নিজের একজন সেনাপতিকে বলল: যে ব্যক্তি এই তিনজন ভাইদের মধ্য হতে যে কোন একজনকে গ্রেফতার করে আনতে পারবে, আমি তাকে আমার নিকটতম পদ দান করব আর সেনাপতি নিয়োজিত করব। রোম সৈন্যরা এই ঘোষণা শোনার সাথে সাথে প্রচন্ড লড়াইয়ে নিয়োজিত হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত তিন ভাইকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হল। রোম সম্রাট বলল: এই তিনজনকে গ্রেফতার করতে পারাই আমাদের জন্য সব চেয়ে বড় বিজয়। অতঃপর সে সেনাবাহিনীকে ফিরে আসার আদেশ দিল আর এ তিন ভাইকে নিজের সাথে রাজধানী কস্তান্তানিয়ায় নিয়ে আসল। এসে বলল: তোমরা যদি ইসলাম পরিত্যাগ কর, তা হলে আমি আমার কন্যাদের সাথে তোমাদের বিয়ে দিব আর ভবিষ্যৎ সাম্রাজ্যও তোমাদের হাতে ন্যস্ত করব। তিন ভাই ঈমানের উপর অবিচলতা প্রদর্শনপূর্বক তার এই প্রস্তাবনাকে নস্যাৎ করে দিল। তাঁরা সরকারে মদীনা, নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে আহ্বান করলেন। তাঁর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলেন। সম্রাট তার সভাসদের কাছে জিজ্ঞাসা করল: এরা কী বলছেন? সভাসদগণ জবাবে বলল: এঁরা তাঁদের নবীকে ডাকছেন। সম্রাট তিন সহোদরকে বলল: তোমরা যদি আমার কথা অমান্য কর, তা হলে আমি তিনটি কড়াইতে তেল গরম করে তোমাদের তিনজনকেই এক এক করে ঢেলে দেব।
সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
হোসাইনী দুলহা
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! বিগত দিনগুলোতে আমরা তো কারবালার মহান শহীদদের স্মৃতিচারণ করেছি। আসুন! আমি আপনাদেরকে কারবালার হোসাইনী দুল্হার হৃদয়-বিদারক করুন ঘটনা শোনাই। যেমন; সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈম উদ্দীন মুবাদাবাদী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘সাওয়ানিহে কারবালায়’ উল্লেখ করেছেন : হোসাইনী দুল্হা সায়্যিদুনা হযরত ওহাব ইবনে আবদুল্লাহ কালবী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বনী কল্ব গোত্রের একজন সদাচারী ও চরিত্রবান যুবক ছিলেন। তারুণ্য, উচ্ছ্বলতা ও যৌবনকাল ছিল তার। বিয়ে করেছেন মাত্র সতের দিন হল। তখনও যৌবনের তারুণ্যঘন যুগল-জীবনের পূর্ণ স্বাদে বিভোর ছিলেন। এমতাবস্থায় শ্রদ্ধেয় আম্মাজান এসে উপস্থিত হলেন। তিনি ছিলেন বিধবা। যার একমাত্র অবলম্বন ও ঘরের উজ্জল প্রদিপ ছিলেন এই একটি মাত্র পুত্র সন্তানই। স্নেহময়ী মা কান্না জুড়ে দিলেন। পুত্র আশ্চর্য হয়ে মাকে জিজ্ঞাসা করল: প্রাণপ্রিয় মা! আপনি কান্না করছেন কেন? আমার মনে পড়ছে না যে, জীবনে কখনো আপনার অবাধ্য হয়েছি, আগামীতেও আমি এমন হতে পারি না। আপনার আনুগত্য ও মান্যতা আমার জন্য ফরয। আমি সারা জীবন আপনার অনুগত হয়েই থাকব। মা! আপনার মনে কিসের দুঃখ? কোন দুঃখে আপনি কাঁদছেন? হে আমার প্রিয় মা! আমি আপনার আদেশে নিজের জীবনও উৎসর্গ করতে রাজি আছি। আপনি চিন্তিত হবেন না।
রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
ইমাম হোসাইন এর কারামত (৩)
ইয়াজিদের মর্মান্তিক মৃত্যু
হযরত সায়্যিদুনা হাসান বসরী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ থেকে মুরসাল ভাবে বর্ণিত আছে: حُبُّ الدُّنْيَا رَأْسُ كُلِّ خَطِيْئَةٍ অর্থাৎ দুনিয়ার ভালবাসাই সকল পাপের মূল। (আল জামেউস সাগীর লিস সুয়ূতী, ২২৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৩৬৬২, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ্, বৈরুত)
পাপাত্মা ইয়াজিদের মন সর্বদাই এ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার ভালবাসায় মত্ত ছিল। তাই সে দুনিয়ার লোভ লালসায় উন্মাদ হয়ে রাজত্ব, আধিপত্য, যশ-খ্যাতীর ফাঁদে আটকা পড়েছিল। সে নিজের করুন পরিণতির কথা ভুলে গিয়ে ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ও তাঁর সঙ্গীদের নির্দয়ভাবে হত্যা করে তাঁদের রক্ত দ্বারা নিজের হাত রঞ্জিত করেছিল। যে নেতৃত্ব ও আধিপত্যের জন্য সে কারবালাতে জুলুম নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের তান্ডবলীলা চালিয়েছিল, সে নেতৃত্ব আধিপত্যও বেশিদিন তার কাছে স্থায়ী হয়নি। বদ নসীব ইয়াজিদ মাত্র তিন বৎসর ছয়মাস ক্ষমতার আসনে বসে শাসনের নামে লাম্পট্য ও বদমায়েশি করে অবশেষে রবিউন নূর শরীফ, ৬৪ হিজরীতে শাম রাজ্যের হামস শহরে হুওয়ারিন অঞ্চলে ৩৯ বছর বয়সে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। (আল কামেল ফিত্ তারিখ, ৩য় খন্ড, ৪৬৪ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ্, বৈরুত)
পাপাত্মা ইয়াজিদের মৃত্যুর একটি কারণ এটাও বলা হয়ে থাকে, সে একজন রোমান বংশোদ্ভূত যুবতী মহিলার প্রেমের ফাঁদে আটকা পড়েছিল। কিন্তু সে মহিলা তাকে মনে-প্রাণে ঘৃণা করত। একদিন আমোদ-প্রমোদের বাহানা করে সে মহিলা ইয়াজিদকে একাকী সুদূর এক মরুভূমিতে নিয়ে গেল। সে মরুভূমির ঠান্ডা ও শীতল আবহাওয়া ইয়াজিদকে ক্লান্ত ও অবসন্ন করে ফেলল। তাই সে মাতালের মত মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। আর মহিলাও এ সুযোগ হাতছাড়া করল না। “যে পাপীষ্ট নিমক হারাম তার নবীর প্রিয় দৌহিত্রের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে কুণ্ঠিত হয়নি, সে আমার প্রতি কতটুকু ওফাদার হতে পারে।” এ বলে সে যুবতী মহিলা তার ধারালো ছুরি দ্বারা ইয়াজিদের অপবিত্র শরীর টুকরো টুকরো করে তা মরুভূমিতে ফেলে চলে আসল। কয়েকদিন যাবৎ তার মৃতদেহ চিল কাকের খোরাকে পরিণত ছিলো। অবশেষে খবর পেয়ে তার অনুচরেরা সেখানে পৌঁছে তার ক্ষতবিক্ষত লাশ একটি গর্তে মাটি চাপা দিয়ে চলে আসল। (আওরাকে গম, ৫৫০ পৃষ্ঠা)
ওহ তখত হে কিছ কবর মে ওহ তাজ কাঁহা হে
আয় খাক বাতা জুরে ইয়াজিদ আজ কাঁহা হে?
ইমাম হোসাইন এর কারামত (২)
মস্তক মোবারকের সমাধি যিয়ারত
হযরত সায়্যিদুনা আবদুল ফাত্তাহ্ বিন আবু বকর বিন আহমদ শাফেয়ী খালুতী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ তাঁর রচিত ‘নূরুল আইন’ রিসালাতে বর্ণনা করেন: শায়খুল ইসলাম শামসুদ্দিন লক্কানী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ যিনি তৎকালীন যুগে মালেকী মাযহাবের শিক্ষাগুরু ছিলেন,সর্বদা মাসহাদে হোসাইনীতে মস্তক মোবারকের যিয়ারতের জন্য গমন করতেন। তিনি বলতেন: হযরত ইমামে আলী মকাম, ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মস্তক মোবারক এখানে অবস্থিত। হযরত সায়্যিদুনা শায়খ শিহাব উদ্দীন হানাফী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ আমি ‘মাসহাদে হোসাইনী’ যিয়ারত করেছিলাম, কিন্তু আমার সন্দেহ জাগল সেখানে মস্তক মোবারক আছে কিনা? হঠাৎ আমার চোখে ঘুম চলে এল, আমি স্বপ্নে দেখলাম এক ব্যক্তি নকিবের আকৃতিতে মস্তক মোবারকের কাছ থেকে বের হয়ে হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর হুজরা মোবারকে গিয়ে উপস্থিত হলেন এবং হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে আরয করলেন: “ইয়া রাসূলাল্লাহ্ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم!আহমদ বিন খালবী ও আবদুল ওয়াহ্হাব আপনার শাহজাদা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মস্তক মোবারকের সমাধি যিয়ারত করেছেন। তখন নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “ اَللّٰهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْهُمَا وَاغْفِرْ لَهُمَا" অর্থাৎ- হে আল্লাহ্! তুমি তাঁরা উভয়ের যিয়ারত কবুল করো এবং তাদেরকে ক্ষমা করে দাও।”
হযরত সায়্যিদুনা শায়খ শিহাব উদ্দীন হানাফী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন; সেদিন থেকে আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে, হযরত ইমামে আলী মকাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মস্তক মোবারক এখানেই বিদ্যমান আছেন। অতঃপর আমি মৃত্যু পর্যন্ত সে মস্তক মোবারকের যিয়ারত করা ত্যাগ করিনি। (শামে কারবালা, ২৪৭ পৃষ্ঠা)
উন কি পাকী কা খোদায়ী পাক করতা হে বয়ান
আয়ায়ে তাথহীর ছে জাহের হে শানে আহলে বাইত।
শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
ইমাম হোসাইন এর কারামত (১)
এ রিসালা পাঠ করার ২১টি নিয়্যত
নবী করীম نِيَّةُ المُؤْمِنِ خَيْرٌ مِنْ عَمَلِه অর্থাৎ “মুসলমানের নিয়্যত তার আমলের চেয়ে উত্তম।” (তাবারানী, মুজামে কবীর, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৮৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫৯৪২)
দুইটি মাদানী ফুল
- ভাল নিয়্যত ব্যতীত কোন ভাল কাজের সাওয়াব অর্জিত হয় না।
- ভাল নিয়্যত যত বেশি হবে, সাওয়াবও তত বেশি হবে।
(২) দরূদ শরীফ,
(৩) তা’আউয়ূজ ও
(৪) তাসমিয়্যাহ দ্বারা রিসালাটি পাঠ করা শুরু করব। (এ পৃষ্ঠার উপরে প্রদত্ত আরবী ইবারতটুকু পাঠ করলে এ চারটি নিয়্যতের উপরই আমল হয়ে যাবে।)
(৫) আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে রিসালাটি শুরু থেকে শেষ পযন্ত সম্পূর্ণ পাঠ করব,
(৬) সামর্থ্য অনুযায়ী সম্ভব হলে ওযু সহকারে এবং,
(৭) কিবলামুখী হয়েই পাঠ করব,
(৮) কুরআনের আয়াত এবং
(৯) হাদীসে মোবারাকা মূল কিতাবের সাথে মিলিয়ে দেখব।
শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
মুহাররম ও আশুরার দিনের ফযীলত ও রোযা
আশুরার দিনের ২৫টি বৈশিষ্ট্য
(১) ১০ই মুহাররামুল হারাম আশুরার দিন হযরত সায়্যিদুনা আদম ছফিউল্লাহ عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام এর তাওবা কবুল হয়েছিল,
(২) সে দিনই আদম عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام কে সৃষ্টি করা হয়েছিল,
(৩) সে দিনই আদম عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام কে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল,
(৪) সেদিনই আরশ,
(৫) কুরসী,
(৬) আসমান,
(৭) জমিন,
(৮) সূর্য,
(৯) চন্দ্র,
(১০) নক্ষত্র ও
(১১) জান্নাত সৃষ্টি করা হয়েছিল,
বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
বসন্তের প্রভাত: মিলাদুন্নবী (০২)
দা’ওয়াতে ইসলামী ও জশ্নে বিলাদতে মুস্তফা
কুরআন ও সুন্নাত প্রচারের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন “দা’ওয়াতে ইসলামী”র জশনে বিলাদতে মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর উদযাপনে নিজেদের একটি নিজস্ব পন্থা রয়েছে। পৃথিবীর অগণিত দেশে দা’ওয়াতে ইসলামীর ব্যবস্থাপনায় ঈদে মিলাদুন্নবী صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم রাতে আজিমুশ্শান ইজতিমায়ে মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বিশাল ইজতিমায়ে মিলাদ এর মাহফিল বাবুল মদীনা করাচীতে অনুষ্ঠিত হয়। তার বরকতের কথা কি বলব! এখানে অংশগ্রহণকারীরা জানি না কত সৌভাগ্যবানদের জীবনে মাদানী ইনকিলাব (পরিবর্তন) হয়েছে। এতদ্প্রসঙ্গে চারটি মাদানী বাহার আপনাদের সামনে পেশ করছি।
(১) পাপের চিকিৎসা মিলে গেল
একজন নবী প্রেমিকের কিছুটা এরূপ বর্ণনা যে: “ঈদে মিলাদুন্নবী” صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর রাতে বাবুল মদীনা করাচী ‘কাকরী গ্রাউন্ডে’ অনুষ্ঠিত ইজতিমায়ে মিলাদ (১৪২৬ হিঃ) এ আমার পরিচিত একজন প্রসিদ্ধ বেনামাযী মডার্ণ যুবক অংশগ্রহণ করে। বসন্তের সকালের (১২ই রবিউল আউয়াল) আগমণের সময় দুরূদ সালামের আওয়াজ এবং মারহাবা ইয়া মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর সুললিত চিৎকারে তার অন্তরের জগতে পরিবর্তন এসে গেল। সৎকাজের প্রতি মুহাব্বত এবং অসৎ কাজে ঘৃণা চলে আসল। তিনি সাথে সাথেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পাবন্দী ও দাঁড়ি রাখার নিয়্যত করলেন, আর বাস্তবিকই শেষ পর্যন্ত তিনি নামাযী ও দাঁড়িওয়ালা হয়ে গেলেন। এছাড়াও তার ভিতর এমন এক মন্দ স্বভাব ছিল, যা এখানে আলোচনা করা আমি ভাল মনে করছি না। ইজতিমায়ে মিলাদের বরকতে اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ তার ঐ মন্দ অভ্যাসও দূর হয়ে গেল। অন্যভাবে যদি বলতে চান তাহলে এভাবে বলতে হয়, ইজতিমায়ে মিলাদে অংশগ্রহণের বদৌলতে পাপীদের গুণাহের চিকিৎসা মিলে যায়।
মাংলো মাংলো উনকা গম মাংলো, চশমে রহমত নিগাহে করম মাংলো।
মাসিয়ত কি দাওয়া লা জারাম মাংলো, মাংনে কা মজা আজ কি রাত হে।
মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
বসন্তের প্রভাত: ঈদে মিলাদুন্নবী
মাহে রবিউন্ নূর তথা রবিউল আউয়াল শরীফ আসতেই চতুর্দিকে বসন্তকাল আগমন করে। প্রিয় আক্বা, মক্কী মাদানী মুস্তফা ﷺ এর আশিকদের অন্তরে আনন্দের ঢেউ খেলে যায়। বৃদ্ধ হোক কিংবা যুবক, প্রত্যেক প্রকৃত মুসলমান যেন অন্তরের মুখ দিয়ে অন্তরের ভাষায় বলে উঠে:-
নিছার তেরী চেহেল পেহেল পর হাজার ঈদে রবিউল আউয়াল,
সিওয়ায়ে ইবলিস কে জাহা মে সবহি তো খুশিয়া মানা রহে হে।
যখন সমগ্র বিশ্ব কুফরী, শিরক, পশুত্ব, বর্বরতার ঘোর অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল ঠিক তখনি ১২ই রবিউন নুর এর রাতে মক্কায়ে মোকাররমায় হযরত সায়্যিদাতুনা মা আমিনা رضى الله عنها এর পবিত্র ঘর থেকে এমন এক নূরের জ্যোতি বিচ্ছুরিত হল, যা সমগ্র বিশ্ব জগতকে আলোকিত করে দিল। ভুলুণ্ঠিত মানবতা যার আগমনের প্রতীক্ষায় ব্যাকুল ছিল, তাজেদারে মদীনা, রহমতের খযিনা, আল্লাহর প্রিয় মাহবুব صلى الله عليه وسلم সমগ্র বিশ্ব জগতের জন্য রহমত হয়ে এই পৃথিবীতে শুভাগমণ করলেন।
মোবারক হো কেহ খাতামুল মুরসালিন তাশরিফ লে আয়ে,
জনাবে রাহমাতুল্লিল আলামিন তাশরিফ লে আয়ে।
শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
ইমাম আহমদ রযার সংক্ষিপ্ত জীবনী
শুভ জন্ম
আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, ওলীয়ে নেয়ামত, আযিমুল বারকাত, আযিমুল মারতাবাত, পারওয়ানায়ে শময়ে রিসালাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, হামিয়ে সুন্নাত, মাহিয়ে বিদ্আত, আলিমে শরীয়াত, পীরে তরীকত, বায়িছে খাইর ও বরকত, হযরত আল্লামা মাওলানা আল হাজ্ব, আল হাফিজ, আল ক্বারী, শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খান رحمة الله عليه ১০ ই শাওয়াল ১২৭২ হিজরী, ১৪ই জুন ১৮৫৬ ইং রোজ শনিবার যোহরের সময় বেরেলী শহরের যাচুলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্ম বৎসরের হিসাবে তাঁর ঐতিহাসিক নাম ‘আল মুখতার’ (১২৭২ হিঃ) (হায়াতে আ’লা হযরত, ১ম খন্ড, ৫৮ পৃষ্ঠা, মাকতাবাতুল মদীনা, বাবুল মদীনা, করাচী)
আ‘লা হযরতের জন্ম সাল
আমার আক্বা আ’লা হযরত رحمة الله عليه নিজের জন্ম সাল ২৮ পারার সূরাতুল মুজাদালার ২২ নং আয়াত থেকে বের করেন। এই আয়াতে করীমার ‘ইলমে আবজাদ’ মোতাবেক সংখ্যা ১২৭২ আর হিজরী সাল মোতাবেক এটাই তাঁর জন্ম সাল। যেমন: মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত “মলফুজাতে আ’লা হযরত” এর ৪১০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে: জন্মের তারিখ সমূহের আলোচনা ছিল এবং এর উপর (সায়্যিদী আ’লা হযরত বলেন: আল্লাহ তাআলার জন্য সকল প্রশংসা আমার জন্ম তারিখ এই আয়াতে করীমায় বিদ্যমান:
أُولَٰئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٍ مِّنْهُ :আয়াত
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ- “এরা ঐসব লোক যাদের অন্তরগুলোতে আল্লাহ ঈমান অংকিত করে দিয়েছেন এবং তাঁর নিকট থেকে রূহ দ্বারা তাঁদের সাহায্য করেছেন।”
তাঁর নাম মোবারক ছিল মুহাম্মদ। কিন্তু তাঁর পিতামহ তাঁকে আহমদ রযা বলে ডাকতেন বিধায় তিনি ঐ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন।
মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
২৮ টি কুফরী বাক্য
অভাব-অনটন, রোগ-শোক, মানসিক কষ্ট এবং আপন জনের মৃত্যুতে অনেক লোক আঘাতের আতিশয্যে কিংবা উত্তেজনায় এসে আল্লাহর পানাহ্! কুফরী বাক্য বলে থাকে। আল্লাহ তাআলার বিরুদ্ধে আপত্তি করা, তাঁকে অত্যাচারী, অভাবী, পর-মুখাপেক্ষী অথবা অপারগ মনে করা কিংবা বলা, এসবই প্রকাশ্য কুফরী বাক্য। স্মরণ রাখবেন! শরীয়াতের অনুমতি ছাড়া জেনে বুঝে যে প্রকাশ্য কুফরী বাক্য বলে এবং অর্থ জানা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি তাতে হ্যাঁ বলে বরং এর পক্ষে যে ব্যক্তি মাথা নেড়ে সায় দেয়, সেও কাফির হয়ে যায়। এর বিবাহ-বন্ধন ও বাইয়াত ভঙ্গ হয়ে যায় এবং জীবনের সমস্ত নেক আমল ধ্বংস হয়ে যায়। যদি হজ্ব আদায় করে থাকে, তবে তাও নষ্ট হয়ে যায়। এমতাবস্থায় ঈমান নবায়নের পর (অর্থাৎ পুনরায় নতুন ভাবে মুসলমান হওয়ার পর) সামর্থ্যবান হওয়া সাপেক্ষে নতুন সূত্রে হজ্ব ফরয হবে।
বিপদের সময় বলা হয়, এমন কতিপয় কুফরী বাক্যের উদাহরণ
(১) আপত্তি করে বলা: ঐ ব্যক্তি লোকদের সাথে যা কিছুই করুক, আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য পূর্ণ (FULL) স্বাধীনতা রয়েছে।
(২) এইভাবে আপত্তি করে বলা: কখনো আমরা অমুকের সাথে সামান্য কিছু করলে আল্লাহ তৎক্ষনাৎ আমাদের পাকড়াও করে ফেলেন।
(৩) আল্লাহ সর্বদা আমার শত্রুদের সহায়তা করেছেন।
(৪) সর্বদা সবকিছু আল্লাহর সমীপে সমর্পণ করেও দেখেছি, কিছুই হয়না।
(৫) আল্লাহ তাআলা আমার ভাগ্যকে এখনো পর্যন্ত সামান্য ভাল করলেন না।
কাফন-দাফনের নিয়মাবলী
পুরুষের সুন্নাত মোতাবেক কাফন
পুরুষের জন্য সুন্নাত মোতাবেক কাফন তিনটি। যথা-
(১) লিফাফাহ (চাদর) ,
(২) ইযার (তাহবন্দ) ও
(৩) কামীস (জামা) ।
(১) লিফাফাহ (চাদর) ,
(২) ইযার (তাহবন্দ) ও
(৩) কামীস (জামা) ।
মহিলাদের সুন্নাত মোতাবেক কাফন
মহিলাদের জন্য সুন্নাত মোতাবেক কাফন পাঁচটি। যথা-
(১) লিফাফাহ,
(২) ইযার,
(৩) কামীস,
(৪) সীনাবন্ধ ও
(৫) ওড়না।
(১) লিফাফাহ,
(২) ইযার,
(৩) কামীস,
(৪) সীনাবন্ধ ও
(৫) ওড়না।
হিজড়া অর্থাৎ মেয়েলি স্বভাবের পুরুষদেরকেও মহিলাদের অনুরূপ পাঁচটি কাফন পরাতে হবে।
রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
মাদানী অসিয়তনামা (কাফন-দাফনের আহকাম সম্বলিত)
اَلْحَمْدُ لِلّٰہِ عَزَّوَجَلَّ এখন ফযরের নামাযের পর মসজিদে নববী শরীফে عَلٰی صَاحِبِہَا الصَّلٰوۃُ وَالسَّلَام বসে “মদীনা মুনাওয়ারা থেকে চল্লিশখানা অসিয়ত” লিখার সৌভাগ্য অর্জন করছি। আফসোস! শত আফসোস! আজ আমার মদীনা মুনাওয়ারাতে উপস্থিতির শেষ সকাল। সূর্য প্রিয় মাহবুব صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর রওজা মোবারকে সালাম পেশ করার জন্য হাজির হতে চলেছে। আহ! আজ রাতেই যদি জান্নাতুল বাক্বীতে সমাহিত হওয়ার কোন ব্যবস্থা না হয়, তবে (আগামীকালই) মদীনা শরীফ ত্যাগ করতে হবে। চোখ অশ্রুসিক্ত, মন অস্থির হয়ে আছে। হায়!
আফসোস চন্দ ঘড়িয়া তয়্যবা কি রাহ গেয়ী হে,
দিল মে জুদায়ী কা গম তুফান মাচা রাহা হে।
আহ! মন ব্যথা বেদনায় নিমজ্জিত। মদীনার বিচ্ছেদের হৃদয় বিদারক চিন্তা আপাদমস্তক বেদনার প্রতিচ্ছবি বানিয়ে দিয়েছে। এমন মনে হচ্ছে যেন মুখের হাসি কেউ ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। আহ! শীঘ্রই মদীনা ছেড়ে যেতে হবে। তখন মন ভেঙ্গে যাবে। আহ! মদীনা থেকে স্বদেশের উদ্দেশ্যে রাওয়ানা হওয়ার মূহুর্তটি এমনি বেদনা দায়ক হয়ে থাকে যে, যেন কোন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে তার মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। আর সে খুবই আফসোস করে! কেঁদে কেঁদে বারবার মায়ের দিকে ফিরে দেখছে, হয়ত মা পুনরায় তাকে ডেকে নিবেন.....স্নেহ ভরে তাকে কোলে তুলে নিয়ে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরবে। আর শ্লোক শুনিয়ে আপন মায়াভরা কোলে মধুর ঘুম পাড়াবেন। হায়!
ইছালে সাওয়াবের পদ্ধতি
ইছালে সাওয়াব বা কারো জন্য সাওয়াব পৌঁছিয়ে দেবার জন্য অন্তরে নিয়্যত করে নেওয়াই যথেষ্ট। মনে করুন;আপনি কাউকে একটি টাকা দান করলেন কিংবা একবার দরূদ শরীফ পাঠ করলেন অথবা কাউকে একটি সুন্নাত শিখালেন নতুবা কাউকে ইন্ফিরাদি কৌশিশের মাধ্যমে নেকীর দাওয়াত দিলেন অথবা সুন্নাতে ভরা বয়ান করলেন। মোট কথা; যে কোন নেক কাজ করলেন, আপনি মনে মনে এভাবে নিয়্যত করে নিন: আমি এই মাত্র যে সুন্নাতটি শিক্ষা দিলাম, সেটির সাওয়াব তাজেদারে মদীনা, নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দরবারে পৌঁছে যাক। তবে اِنْ شَآءَ اللّٰہ عَزَّوَجَلَّ সাওয়াব পৌঁছে যাবে। তাছাড়া আরো যাদের জন্য নিয়্যত করবেন, তাদের কাছেও পৌঁছে যাবে। মনে মনে নিয়্যত করার সাথে সাথে মুখে উচ্চারণ করে নেওয়াও উত্তম। কেননা, এটি সাহাবীرَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ থেকে প্রমাণিত রয়েছে। যেমন;হযরত সা’আদ رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ এর হাদীস। তিনি কূপ খনন করে বলেছিলেন : هٰذِهٖ لِأُمِّ سَعد ‘অর্থাৎ এই কূপটি সা’আদের মায়ের জন্য’।
ফাতিহা ও ইছালে সাওয়াব কি?
মৃত আত্মীয়-স্বজনদেরকে স্বপ্নে দেখার উপায়
হযরত আল্লামা আবু আবদুল্লাহ্ মুহাম্মদ বিন আহমদ মালেকী কুরতুবী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বর্ণনা করেন: হযরত সায়্যিদুনা হাসান বসরী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِএর খিদমতে হাজির হয়ে এক মহিলা আবেদন করলো, আমার যুবতী মেয়ে মারা গেছে। এমন কোন আমল আছে কি? যা করলে আমি তাকে স্বপ্নে দেখতে পাব। তিনি رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ মহিলাটিকে ঐ আমল বলে দিলেন। মহিলাটি তার মরহুমা কন্যাটিকে স্বপ্নে তো দেখলেন, কিন্তু এমন অবস্থায় দেখলেন যে, তার সারা শরীরে আলকাতরার পোষাক ছিলো। তার ঘাড়ে শিকল, আর পায়ে লোহার বেড়ি ছিলো। ভয়ানক এই দৃশ্য দেখে মহিলাটি কেঁপে উঠল! পরের দিন সে এসে হযরত সায়্যিদুনা হাসান বসরী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ কে স্বপ্নের কথা বলল। স্বপ্নটি শুনে তিনি رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে গেলেন। কিছু দিন পর হযরত সায়্যিদুনা হাসান বসরী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এক মেয়েকে স্বপ্নে দেখলেন। মেয়েটি জান্নাতে একটি আসনে মাথায় তাজ পরে বসে আছে। তিনি رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ কে দেখে মেয়েটি বললো:আমি হলাম সেই মহিলাটিরই কন্যা, যিনি আপনাকে আমার অবস্থার কথা বলেছিলেন। তিনি رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বললেন: মহিলাটির কথা মত কন্যা তো আজাবে লিপ্ত ছিলো। তার এত বড় পরিবর্তন কীভাবে হলো? মরহুমা মেয়েটি বললো: কবরস্থানের পাশ দিয়ে একটি লোক যাচ্ছিলেন। লোকটি নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم র উপর দরূদ শরীফ পাঠ করেছিলেন। তাঁর সেই দরূদ শরীফ পাঠের বরকতে আল্লাহ তাআলা ৫৬০ জন কবরবাসীর উপর থেকে আযাব উঠিয়ে নিয়েছেন। (আত-তাযকিরাতু ফি আহওয়ালিল মাওতা ওয়া উমুরিল আখিরাতে, ১ম খন্ড, ৭৪ পৃষ্ঠা)
জানাযা নামাযের পদ্ধতি ও গায়েবানা জানাযার বিধান (পর্ব ২)
জানাযার নামাযের পদ্ধতি (হানাফী)
মুক্তাদী এভাবে নিয়্যত করবে: আমি আল্লাহর ওয়াস্তে এই ইমামের পিছনে এই মৃত ব্যক্তির দোয়ার জন্য এই জানাযার নামাযের নিয়্যত করছি। (ফতোওয়ায়ে তাতারখানিয়্যাহ, ২য় খন্ড, ১৫৩ পৃষ্ঠা) এবার মুক্তাদী ও ইমাম উভয়ে প্রথমে কান পর্যন্ত হাত উঠাবেন এবং اَللهُ اَكْبَرُ বলে দ্রুত নিয়মানুযায়ী নাভীর নিচে হাত বেঁধে নিবেন এবং সানা পড়বেন। সানা পড়ার সময় وَ تَعَالٰى جَدُّكَ এরপর وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَ لَآ اِلٰهَ غَيْرُكَ ط পড়বেন। অতঃপর হাত উঠানো ব্যতীত اَللهُ اَكْبَرُ বলবেন, অতঃপর দুরূদে ইবরাহীম পড়বেন, এরপর হাত না উঠিয়ে আবার اَللهُ اَكْبَرُ বলবেন এবং দোয়া পাঠ করবেন (ইমাম সাহেব তাকবীর সমূহ উচ্চ আওয়াজে বলবেন আর মুক্তাদীগণ নিম্নস্বরে। বাকী দোয়া, যিকির আযকার ইত্যাদি ইমাম ও মুক্তাদী সকলেই নিম্নস্বরে পাঠ করবেন।) দোয়া পাঠ শেষে পুনরায় اَللهُ اَكْبَرُ বলবেন এবং হাত ছেড়ে দিবেন, অতঃপর উভয় দিকে সালাম ফিরাবেন।সালামে মৃত ব্যক্তি ফেরেশতাগণ এবং নামাযে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গদের নিয়্যত করবেন। ঐভাবে যেমন অন্যান্য নামাযের সালামে নিয়্যত করা হয়, এখানে এতটুকু কথা বেশি যে মৃত ব্যক্তিরও নিয়্যত করবেন। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮২৯, ৮৩৫ পৃষ্ঠা)
বালিগ (প্রাপ্ত বয়স্ক) পুরুষ ও মহিলার জানাযার দোয়া
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَ مَيِّتِنَا وَ شَاهِدِنَا وَ غَآئِبِنَا وَ صَغِيْرِنَا وَ كَبِيْرِنَا وَ ذَكَرِنَا وَ اُنْثٰنَا ط اَللّٰهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهٗ مِنَّا فَاَ حْيِهٖ عَلَى الْاِسْلَامِ وَ مَنْ تَوَفَّيْتَهٗ مِنَّا فَتَوَفَّهٗ عَلَى الْاِيْمَان
অনুবাদ: হে আল্লাহ! ক্ষমা করে দাও আমাদের প্রত্যেক জীবিতকে ও আমাদের প্রত্যেক মৃতকে, আমাদের প্রত্যেক উপস্থিতকে ও প্রত্যেক অনুপস্থিতকে, আমাদের ছোটদেরকে ও আমাদের বড়দেরকে, আমাদের পুরুষদেরকে ও আমাদের নারীদেরকে। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের মধ্যে যাকে জীবিত রাখবে তাকে ইসলামের উপর জীবিত রাখো।আর আমাদের মধ্যে যাকে মৃত্যু দান করবে, তাকে ঈমানের উপর মৃত্যু দান করো। (আল মুসতাদরাক লিল হাকিম, ১ম খন্ড, ৬৮৪ পৃষ্ঠা, হাদীস-১৩৬৬)
জানাযা নামাযের বিধান ও মাসআলা (পর্ব ১)
আল্লাহর ওলীর জানাযায় অংশগ্রহণ করার বরকত
এক ব্যক্তি হযরত সায়্যিদুনা সারী সাকতী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর জানাযার নামাযে অংশগ্রহণ করলেন। রাতে ঐ ব্যক্তির স্বপ্নে হযরত সায়্যিদুনা সারী সাকতী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর যিয়ারত নসীব হলো। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: مَا فَعَلَ اللهُ بِكَ؟ অর্থাৎ-আল্লাহ্ তাআলা আপনার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন?
উত্তর দিলেন: আল্লাহ্ তাআলা আমাকে এবং আমার জানাযার নামাযে অংশগ্রহণকারী সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। ঐ ব্যক্তি আরয করলো: ইয়া সায়্যিদী! আমিওতো আপনার জানাযায় অংশগ্রহণ করে জানাযার নামায আদায় করেছিলাম। তখন তিনি رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ একটি তালিকা বের করলেন কিন্তু এতে ঐ ব্যক্তির নাম অন্তর্ভূক্ত ছিলো না, যখন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখলেন তখন দেখা গেলো, তার নাম তালিকার পার্শ্বটিকাতে ছিলো। (তারিখে দামেশক লিইবনে আসাকির, ২০তম খন্ড, ১৯৮ পৃষ্ঠা) আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক, আর তাঁর সদকায় আমাদের বিনা হিসেবে ক্ষমা হোক।
اٰمِين بِجا هِ النَّبِىِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
কাযায়ে ওমরী আদায় করার নিয়ম
প্রত্যেক দিনের কাযা হয় মাত্র ২০ রাকাত। ফজরের ২ রাকাত, জোহরের ৪ রাকাত, আছরের ৪ রাকাত, মাগরিবের ৩ রাকাত, ইশার ৪ রাকাত এবং বিতরের ৩ রাকাত মিলে মোট ২০ রাকাত। আর এভাবেই নিয়্যত করবে যে; “সর্বপ্রথম ফযরের যে নামায আমার উপর কাযা রয়েছে তা আমি আদায় করে দিচ্ছি।” প্রত্যেক নামাযে এভাবেই নিয়্যত করবে। আর যার যিম্মায় অধিক নামায কাযা রয়েছে সে সহজের জন্য এভাবে পড়লেও জায়েয হবে যে, প্রত্যেক রুকু ও সিজদাতে ৩+৩ বার سُبْحٰنَ رَبِّىَ الْعَظِيْم, سُبْحٰنَ رَبِّىَ الْاَ عْلٰى পড়ার পরিবর্তে মাত্র ১+১ বার পড়বে। কিন্তু সর্বদা এবং সব ধরণের নামাযে এটা খেয়াল রাখা বাঞ্চনীয় যে, রুকুতে পরিপূর্ণভাবে পৌঁছার পরেই “سُبْحٰنَ”এর সীন শুরু করবে (এর আগে নয়।) এবং “عَظِيْم” শব্দের মীম পড়া শেষ করেই রুকু থেকে মাথা উঠাবে। এরূপ সিজদাতেও করতে হবে। সহজতার এক পদ্ধতিতো এটা হলো। আর “দ্বিতীয় পদ্ধতি” এই যে, ফরয নামায সমূহের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতের মধ্যে اَلْحَمْدُ পড়ার পরিবর্তে শুধুমাত্র ৩ বার সুবহানাল্লাহ পড়ে রুকুতে চলে যাবে। কিন্তু বিতরের প্রত্যেক রাকাতেই اَلْحَمْدُ এবং সুরা অবশ্যই পড়তে হবে। আর “তৃতীয় সহজতর পদ্ধতি” এই যে, শেষ বৈঠকে তাশাহুদ অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাত এর পরে উভয় দরূদ শরীফ এবং দোয়ায়ে মাছুরার পরিবর্তে শুধু اَللّٰہُمَّ صَلِّ عَلٰی مُحَمَّدٍ وَّاٰلِهٖ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নিবে। আর “চতুর্থ সহজতর পদ্ধতি হলো, বিতরের ৩য় রাকাতের মধ্যে দোয়ায়ে কুনুত এর পরিবর্তে “اَللهُ اَکْبَرُ” বলে মাত্র একবার কিংবা তিনবার رَبِّ اغْفِرْ لِىْ পড়ে নিবে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া হতে সংগৃহীত, ৮ম খন্ড, ১৫৭ পৃষ্ঠা)
মনে রাখবেন! সহজতার এই পদ্ধতির অভ্যাস কখনো বানাবেন না। সামগ্রিক নামায সুন্নাত মোতাবেক আদায় করবেন এবং তাতে ফরয, ওয়াজীব সমূহের সাথে সাথে সুন্নাত ও মুস্তাহাব সমূহের ও খেয়াল রাখবেন।
তওবার পদ্ধতি ও কাযায়ে ওমরী আদায় করার পদ্ধতি
সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: তাওবার রুকন তিনটি। যথা-
(১) কৃত পাপ স্বীকার করা।
(২) এতে লজ্জিত হওয়া।
(৩) ঐ গুনাহের কাজ ছেড়ে দেয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। আর যদি ঐ গুনাহের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকে, তাহলে পরবর্তীতে যথাযথভাবে তা ক্ষতিপূরণ করে নেয়া আবশ্যক। যেমন- নামায ত্যাগকারী ব্যক্তির তাওবা শুদ্ধ হওয়ার জন্য ঐ নামায কাযা আদায় করে নেয়া জরুরী। (খাযায়েনুল ইরফান, ১২ পৃষ্ঠা)
(১) কৃত পাপ স্বীকার করা।
(২) এতে লজ্জিত হওয়া।
(৩) ঐ গুনাহের কাজ ছেড়ে দেয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। আর যদি ঐ গুনাহের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকে, তাহলে পরবর্তীতে যথাযথভাবে তা ক্ষতিপূরণ করে নেয়া আবশ্যক। যেমন- নামায ত্যাগকারী ব্যক্তির তাওবা শুদ্ধ হওয়ার জন্য ঐ নামায কাযা আদায় করে নেয়া জরুরী। (খাযায়েনুল ইরফান, ১২ পৃষ্ঠা)
ঘুমন্ত ব্যক্তিকে নামাযের জন্য জাগিয়ে দেয়া ওয়াজিব
কেউ ঘুমাচ্ছে কিংবা নামায আদায় করতে ভুলে গিয়েছে তবে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জ্ঞাত ব্যক্তির জন্য জরুরী হবে যে, ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগিয়ে দেয়া কিংবা ভুলে যাওয়া ব্যক্তিকে নামাযের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া। (বাহারে শরীয়াত, ১মখন্ড, ৭০১পৃষ্ঠা) (অন্যথায় সে গুনাহগার হবে।) মনে রাখবেন! জাগ্রত করা কিংবা স্মরণ করিয়ে দেয়া তখনই ওয়াজীব হবে, যখন আপনার প্রবল ধারণা হয় যে, এ ব্যক্তি অবশ্যই নামায পড়বে অন্যথায় ওয়াজীব নয়।
কাযা নামাযের পদ্ধতি
৩০ পারায় (সুরাতুল মাঊন) এর আয়াত নং ৪ ও ৫ এ ইরশাদ হচ্ছে:
فَوَیۡلٌ لِّلۡمُصَلِّیۡنَ ۙ﴿۴﴾ الَّذِیۡنَ ہُمۡ عَنۡ صَلَاتِہِمۡ سَاہُوۡنَ ۙ﴿۵﴾
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: সুতরাং ঐ সকল নামাযীদের জন্য অনিষ্ট রয়েছে, যারা আপন নামায থেকে ভুলে বসেছে।
প্রসিদ্ধ মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী ইয়ার খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ সূরা মাঊন এর ৫নং আয়াতের টীকায় বলেন: নামায থেকে ভুলে বসার কিছু ধরণ রয়েছে: কখনো না পড়া, নিয়মিত ভাবে নামায না পড়া, নির্ধারিত সময়ে নামায না পড়া, শুদ্ধভাবে নামায না পড়া, আগ্রহ ভরে না পড়া, বুঝে-শুনে নামায আদায় না করা, অলসতা ও বেপরোয়া ভাবে নামায আদায় করা। (নূরুল ইরফান, ৯৫৮ পৃষ্ঠা)
জাহান্নামের ভয়ানক উপত্যকা
সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: জাহান্নামে “ওয়াইল” নামের একটি ভয়ানক উপত্যকা রয়েছে, যার ভয়াবহতা থেকে স্বয়ং জাহান্নামও আশ্রয় প্রার্থনা করে। আর জেনে বুঝে নামায কাযা কারীরাই ঐ স্থানের যোগ্য। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৪৮ পৃষ্ঠা)
মুসাফিরের নামায
আল্লাহ তাআলা সূরা নিসার ১০১ নং আয়াতে ইরশাদ করেন:
وَ اِذَا ضَرَبۡتُمۡ فِی الۡاَرۡضِ فَلَیۡسَ عَلَیۡکُمۡ جُنَاحٌ اَنۡ تَقۡصُرُوۡا مِنَ الصَّلٰوۃِ ٭ۖ اِنۡ خِفۡتُمۡ اَنۡ یَّفۡتِنَکُمُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا ؕ اِنَّ الۡکٰفِرِیۡنَ کَانُوۡا لَکُمۡ عَدُوًّا مُّبِیۡنًا ﴿۱۰۱﴾
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং যখন তোমরা যমীনে সফর করো তখন তোমাদের এতে গুনাহ নেই যে, কোন কোন নামায ‘কসর’ করে পড়বে;যদি তোমাদের আশংকা হয় যে, কাফিররা তোমাদেরকে কষ্ট দেবে। নিশ্চয় কাফিরগণ তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (পারা-৫, সূরা-নিসা, আয়াত- ১০১)
সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: কাফিরদের ভয় কসরের জন্য শর্ত নয়, হযরত সায়্যিদুনা ইয়ালা ইবনে উমাইয়া হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُএর নিকট আরয করলেন: “আমরাতো নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছি, তারপরেও কেন আমরা কসর করবো?”বললেন: “এতে আমারও আশ্চর্যবোধ হয়েছিল তখন আমি রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নিকট বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলাম। হুযুরে আকরাম, নূরে মুজাস্সাম, শাহে বনী আদম, রাসূলে মুহতাশাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “তোমাদের জন্য এটা (কসর করা) আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে সদকা স্বরূপ, তোমরা তাঁর সদকা কবুল করে নাও।” (সহীহ মুসলিম, ১ম খন্ড, ২৩১ পৃষ্ঠা)
সিজদায়ে সাহু ও তিলাওয়াতে সিজদার বর্ণনা
(১) নামাযের ওয়াজীবগুলোর মধ্য থেকে যদি কোন একটি ওয়াজীব ভুলে বাদ পড়ে যায় অথবা নামাযের ফরয ও ওয়াজীব সমূহে ভুলক্রমে দেরী হয়ে যায় তবে সিজদায়ে সাহু ওয়াজীব। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৬৫৫ পৃষ্ঠা)
(২) যদি সিজদায়ে সাহু ওয়াজীব হওয়া সত্ত্বেও করলো না, তবে নামায পুনরায় পড়া ওয়াজীব। (প্রাগুক্ত)
(২) যদি সিজদায়ে সাহু ওয়াজীব হওয়া সত্ত্বেও করলো না, তবে নামায পুনরায় পড়া ওয়াজীব। (প্রাগুক্ত)
(৩) ইচ্ছাকৃত ভাবে ওয়াজীব বর্জন করলো, তবে সিজদায়ে সাহু দিলে যথেষ্ট হবে না। পুনরায় নামায আদায় করে দেওয়া ওয়াজীব।
ইমামত ও জামাআতের বর্ণনা
সুস্থ সবল ব্যক্তির ইমামের জন্য ছয়টি শর্ত
(১) বিশুদ্ধ আকীদা সম্পন্ন মুসলমান হওয়া,
(২) প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া,
(৩) বিবেকবান হওয়া,
(৪) পুরুষ হওয়া,
(৫) কিরাত বিশুদ্ধ হওয়া,
(৬) মা’যুর না হওয়া (শরয়ী ভাবে অক্ষম না হওয়া) । (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ২৮৪ পৃষ্ঠা)
(২) প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া,
(৩) বিবেকবান হওয়া,
(৪) পুরুষ হওয়া,
(৫) কিরাত বিশুদ্ধ হওয়া,
(৬) মা’যুর না হওয়া (শরয়ী ভাবে অক্ষম না হওয়া) । (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ২৮৪ পৃষ্ঠা)
ইমামের অনুসরণ করার ১৩টি শর্ত
(১) নিয়্যত করা
(২) ইক্তিদা করা আর ইক্তিদার নিয়্যত তাহরীমার সাথে হওয়া অথবা তাকবীরে তাহরীমার পূর্বে হওয়া তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো, নিয়্যত ও তাহরীমার মাঝখানে অন্য কোন বাহ্যিক কাজ দ্বারা যেন ব্যবধান সৃষ্টি না হয়)
(২) ইক্তিদা করা আর ইক্তিদার নিয়্যত তাহরীমার সাথে হওয়া অথবা তাকবীরে তাহরীমার পূর্বে হওয়া তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো, নিয়্যত ও তাহরীমার মাঝখানে অন্য কোন বাহ্যিক কাজ দ্বারা যেন ব্যবধান সৃষ্টি না হয়)
শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
নামাযের ৩৩টি মাকরূহে তানযীহী
(১) অন্য কাপড় থাকা সত্ত্বেও কাজ কর্মের পোষাকে নামায আদায় করা। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৩৩৭ পৃষ্ঠা) মুখে এমন কোন জিনিস রাখা যার দ্বারা কিরাতই পড়া সম্ভব হয় না কিংবা এমন শব্দাবলী বের হয়ে যায় যা কুরআনে পাকের নয় তাহলে নামাযই ভঙ্গ হয়ে যাবে। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার)
(২) অলসতাবশতঃ খালি মাথায় নামায আদায় করা। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১০৬ পৃষ্ঠা) নামাযরত অবস্থায় টুপি কিংবা ইমামা শরীফ পড়ে গেলে তা উঠিয়ে নেয়া উত্তম, যদি “আমলে কসীর” এর প্রয়োজন না হয়। “আমলে কসীর” করতে হলে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর বার বার উঠাতে হলে তবে তা পতিত অবস্থায় রেখে দিন। না উঠানোতে যদি একাগ্রতা ও বিনয় প্রকাশ উদ্দেশ্য হয় তাহলে না উঠানোই উত্তম। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৯১ পৃষ্ঠা) যদি কাউকে খালি মাথায় নামায আদায় করতে দেখা যায় বা তার টুপি পড়ে যায় তাহলে তাকে অপর ব্যক্তি টুপি পরিয়ে দেবেন না।
নামাযের ৩২টি মাকরূহে তাহরীমা
(১) নামাযরত অবস্থায় দাঁড়ি, শরীর কিংবা কাপড় ইত্যাদি নিয়ে খেলা করা। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১০৪ পৃষ্ঠা)
(২) কাপড় গুটিয়ে নেয়া (যেমন-আজকাল কিছু কিছু লোক সিজদাতে যাওয়ার সময় পায়জামা ইত্যাদি সামনে অথবা পিছনের দিকে উঠিয়ে নেয়। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৩৩৭ পৃষ্ঠা) হ্যাঁ! যদি কাপড় শরীরের সাথে লেগে যায় তবে এক হাতে ছাড়িয়ে নিলে কোন ক্ষতি নেই।
কাঁধের উপর চাদর ঝুলানো
(৩) সাদল অর্থাৎ কাপড় ঝুলানো। যেমন- মাথা অথবা কাঁধে এমনভাবে চাদর বা রুমাল ইত্যাদি রাখা যে উভয় পার্শ্ব ঝুলতে থাকে। অবশ্য যদি এক পার্শ্বকে অপর কাঁধের উপর তুলে দেয় এবং অপরটি ঝুলতে থাকে, তবে ক্ষতি নেই। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৮৮ পৃষ্ঠা)
(৪) আজকাল কিছু সংখ্যক লোক এক কাঁধের উপর এভাবে রুমাল রাখে যে, তার এক প্রান্ত পেটের উপর অপর প্রান্ত পিঠের উপর ঝুলতে থাকে এভাবে নামায আদায় করা মাকরূহে তাহরীমী। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় অংশ, ১৬৫ পৃষ্ঠা)
(৫) উভয় আস্তীন হতে একটি আস্তীনও যদি অর্ধ কব্জি অপেক্ষা বেশি উঠে থাকে তবে নামায মাকরূহে তাহরীমী হবে। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৯০ পৃষ্ঠা)
বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
নামায ভঙ্গকারী ২৯টি বিষয়
(১) কথাবার্তা বলা। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৪৫ পৃষ্ঠা)
(২) কাউকে সালাম করা
(৩) সালামের উত্তর দেয়া। (তাহতাবী পাদটিকা সম্বলিত মারাক্বিউল ফালাহ, ৩২২ পৃষ্ঠা)
(৪) হাঁচির উত্তর দেয়া। (নামাযে নিজের হাঁচি আসলে চুপ থাকবেন।) যদি “اَلْحَمْدُ لِلّٰه” বলেও ফেলেন তবু কোন অসুবিধা নেই আর যদি ঐ সময় তা না বলে থাকেন তবে নামায শেষ করে বলবেন (আলমগিরী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৯৮)
(৫) সুসংবাদ শুনে উত্তরে “اَلْحَمْدُ لِلّٰه”বলা। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৯৯)
(৬) খারাপ সংবাদ (যেমন কারো মৃত্যুর সংবাদ) শুনে اِنَّا لِلّٰهِ وَ اِنَّاۤ اِلَيْهِ رٰجِعُوْنَ বলা। (প্রাগুক্ত)
(৭) আযানের উত্তর দেয়া। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১০০)
(৮) আল্লাহ তাআলার নাম শুনে উত্তরে جَلَّ جَلَا لُه ٗ বলা। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৪২০ পৃষ্ঠা)
(৯) নবী করীম, রউফর রহীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর মহান নাম শুনে উত্তরে দরূদ শরীফ পড়া। (যেমন- صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم বলা) (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৯৯ পৃষ্ঠা) (অবশ্য যদি جَلَّ جَلَا لُه ٗ বা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এ কথা গুলো উত্তরের নিয়্যতে না বলে থাকলে নামায ভঙ্গ হবে না।)
নামাযে কান্না করা
নামাযের প্রায় ১৪টি মুস্তাহাব
(১) নিয়্যতের শব্দ সমূহ মুখে উচ্চারণ করা। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত তানবীরুল আবছার, ২য় খন্ড, ১১৩ পৃষ্ঠা) (এটা অর্থবহ তখনই হবে যখন অন্তরে নিয়্যত থাকে অন্যথায় নামাযই হবে না।)
(২) কিয়ামের মধ্যে উভয় পায়ের গোড়ালীর মধ্যভাগে চার আঙ্গুলের দূরত্ব থাকা। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৭৩ পৃষ্ঠা)
(৩) কিয়াম অবস্থায় সিজদার স্থানে
(৪) রুকূ অবস্থায় উভয় পায়ের পিঠের উপর
(৫) সিজদাতে নাকের দিকে
(৬) বৈঠকে কোলের উপর
(৭) প্রথম সালামে ডান কাঁধের দিকে এবং
(৮) দ্বিতীয় সালামে বাম কাঁধের দিকে দৃষ্টি রাখা। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত তানবীরুল আবছার, ২য় খন্ড, ২১৪ পৃষ্ঠা)
(৯) একাকী নামায আদায়কারী রুকূ ও সিজদার মধ্যে বিজোড় সংখ্যায় তিনবারের বেশি (যেমন- ৫, ৭, ৯ ইত্যাদি) তাসবীহ বলা। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ২৪২ পৃষ্ঠা)
(১০) হিলইয়া ও অন্যান্য কিতাবে রয়েছে, হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ প্রমুখ থেকে বর্ণিত আছে যে, ইমামের জন্য তাসবীহ পাঁচবার বলা মুস্তাহাব।
নামাযের ফযিলত ও কাযা করার শাস্তি
মদীনার তাজেদার, মাহবুবে গাফ্ফার, শাহানশাহে আবরার, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم নামাযের পর হামদ ও সানা অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলার প্রশংসা, গুণকীর্তন ও দরূদ শরীফ পাঠকারীকে ইরশাদ করেন: “দোয়া করো কবুল করা হবে, প্রার্থনা করো প্রদান করা হবে।” (সুনানে নাসাঈ, ১ম খন্ড, ১৮৯ পৃষ্ঠা)
صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! কুরআন ও হাদীসের মধ্যে নামায আদায় করার অগণীত ফযীলত এবং নামায বর্জন করার কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত রয়েছে। যেমন-পারা ২৮ ‘সূরা মুনাফিকুন’ এর আয়াত নং ৯ এর মধ্যে আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تُلۡہِکُمۡ اَمۡوَالُکُمۡ وَ لَاۤ اَوۡلَادُکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰہِ ۚ وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ ﴿۹﴾
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ধন সম্পদ, না তোমাদের সন্তান-সন্ততি কোন কিছুই যেন তোমাদের আল্লাহর যিকির (স্মরণ) থেকে উদাসীন না করে;এবং যে কেউ তেমন করে তবে ঐ সমস্ত লোক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।
আযান, ইকামত ও আযান-ইকামতের জবাব (পর্ব ৩)
আযান
اَللهُ اَكْبَرُ ط اَللهُ اَكْبَرُ ط
আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান,
اَللهُ اَكْبَرُ ط اَللهُ اَكْبَرُ ط
আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান,
اَشْهَدُ اَنْ لَّآ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ ط
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন মাবুদ নেই।
اَشْهَدُ اَنْ لَّآ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ ط
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন মাবুদ নেই
اَشْہَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ الله ط
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ ﷺ আল্লাহর রাসূল।
اَشْہَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ الله ط
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ ﷺ আল্লাহর রাসূল।
حَیَّ عَلَی الصَّلٰوۃ ط حَیَّ عَلَی الصَّلٰوۃ ط
নামাযের দিকে আসুন নামাযের দিকে আসুন
حَیَّ عَلَی الفَلَاح ط حَیَّ عَلَی الفَلَاح ط
মুক্তি পেতে আসুন মুক্তি পেতে আসুন
اَللهُ اَكْبَرُط اَللهُ اَكْبَرُط
আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান,
لَآ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ ط
আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন মাবুদ নেই।
আযান বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা (পর্ব ২)
কুমন্ত্রণা
সুলতানে মদীনা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর পার্থিব জীবনে এবং খোলাফায়ে রাশেদীন عَلَیۡہِمُ الرِّضۡوَان এর যুগে আযানের পূর্বে দরূদ শরীফ পাঠ করা হতো না সুতরাং এটা করা মন্দ বিদআত এবং গুনাহ। (আল্লাহ তাআলার পানাহ্)
কুমন্ত্রণার উত্তর
যদি এ নিয়ম মেনে নেয়া হয় যে, যে সমস্ত কাজ ঐ যুগে ছিলো না তা এখন করা মন্দ বিদআত ও গুনাহ্ তবে বর্তমান যুগের শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়ে যাবে, অগণিত উদাহরণ সমূহ হতে শুধুমাত্র ১২টি উদাহরণ উপস্থাপন করছি যে, এ সমস্ত কাজ ঐ বরকতময় যুগে ছিলো না অথচ তা বর্তমানে সবাই গ্রহণ করে নিয়েছে
ফয়যানে আযান: আযান বিষয়ক মাসআলা ও ফযিলত (পর্ব ১)
হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم একবার আযান দিয়েছিলেন
রাসুলে আকরাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সফরে একবার আযান দিয়েছিলেন এবং কালিমায়ে শাহাদাত এভাবে বলেন: اَشْهَدُاَنِّىْ رَسُوْلُ اللهِ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আল্লাহর রাসুল) । (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৫ম খন্ড, ৩৭৫ পৃষ্ঠা। তুহফাতুল মুহতাজ, ১ম খন্ড, ২০৯ পৃষ্ঠা)
آذَان নাকি اَذَان?
অনেক লোক آذَان বলে থাকে এটি ভুল উচ্চারণ। آذَان শব্দটি اُذْنٌ এর বহুবচন, আর اُذُنْ শব্দের অর্থ: কান। শুদ্ধ উচ্চারণ হলো اَذَان। اَذَان এর শাব্দিক অর্থ: সতর্ক করা।
বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
আকিকা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর
(আকিকা বিষয়ে জানতে এই পোস্টের ৩২ টি প্রশ্নোত্তর সম্পূর্ণ পড়ে নিন। আকিকা বিষয়ে আপনার মনের অনেক প্রশ্নের উত্তর পাবেন এখানে- ইসলামী জীবন টিম।)
আকিকা শব্দের অর্থ
(১) প্রশ্ন: আকিকা শব্দের অর্থ কি?
উত্তর: আকিকা এর শাব্দিক অর্থ: আকিকা শব্দটি عَقٌّ থেকে নির্গত। এর অর্থ হচ্ছে কাটা, পৃথক করা। (মিরাত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২ পৃষ্ঠা)
আকিকার পারিভাষিক অর্থ: বাচ্চা জন্ম লাভের কৃতজ্ঞতা আদায়ার্থে যে পশু জবাই করা হয় তাকে আকিকা বলে। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ৩৫৫ পৃষ্ঠা)
বড় পরিসরে কাজ করার জন্য আমাদের পাশে দাঁড়ান...
উত্তর: সন্তান/ সন্ততি জন্ম লাভের খুশিতে আল্লাহ্ তাআলার নেয়ামত লাভের কৃতজ্ঞতা আদায়ার্থে, সুন্নাত পালনার্থে আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে, আকিকা করার সৌভাগ্য অর্জন করছি। তা ছাড়াও অবস্থা অনুযায়ী আরো নিয়্যত করা যায়। মনে রাখবেন! ভাল নিয়্যত ব্যতিত কোন নেক কাজের সাওয়াব পাওয়া যায় না। মূল কথা হচ্ছে, আকিকা করার সময় অন্তরে আকিকার নিয়্যতের সাথে সাথে যত ভাল ভাল নিয়্যত হবে তার সাওয়াবও ততবেশি হবে। নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: "نِيَّةُ الْمُؤْمِنِ خَيْرٌمِنْ عَمَمِه অর্থাৎ নিয়্যত তার আমল থেকে উত্তম।”(আল-মুজামুল কবীর লিত তাবারানি, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৮৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫৯৪২)
আকিকার মাসআলা |
আকিকা আদায় করে না এমন ব্যক্তি কি গুনাহগার হবে?
শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
প্রসঙ্গ: ফয়যানে জুমা (পর্ব-৩)
দুই জুমার মধ্যবর্তী দিন সমূহে নূর
হযরত সায়্যিদুনা আবু সাঈদ رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ থেকে বর্ণিত; নবী করীম, রউফুর রহীম, রাসূলে আমীন صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন ‘সুরা কাহাফ’ পাঠ করবে, দুই জুমার মধ্যবর্তী দিন সমূহ তার জন্য নূর
দ্বারা আলোকিত থাকবে।” (আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, ৩য় খন্ড, ৩৫৩ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৫৯৯৬)
ফয়যানে জুমা: জুমার নামাযের ফযিলত ও মাসাইল |
কা’বা পর্যন্ত নূর
অপর বর্ণনায় রয়েছে;“যে ব্যক্তি জুমার রাতে (অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের মধ্যবর্তী রাতে) ‘সুরাতুল কাহাফ’ পাঠ করবে, তার জন্য সেখান থেকে কা’বা শরীফ পর্যন্ত নূর দ্বারা আলোকিত হবে।” (সুনানে দারমী, ২য় খন্ড, ৫৪৬ পৃষ্ঠা, হাদীস-৩৪০৭)
প্রসঙ্গ: ফয়যানে জুমা (পর্ব-২)
প্রত্যেক জুমার দিন ১ কোটি ৪৪ লক্ষ জাহান্নামীদের মুক্তি
সুলতানে মদীনা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “জুমার দিনের রাত-দিন ২৪ ঘন্টার মধ্যে এমন কোন ঘন্টা নেই, যার মধ্যে প্রতিনিয়ত ৬ লক্ষ দোযখীকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না, যাদের উপর জাহান্নাম ওয়াজীব হয়ে গেছে।” (মুসনাদে আবু ইয়ালা, ৩য় খন্ড, ২৯১, ২৩৫ পৃষ্ঠা, হাদীস-৩৪২১, ৩৪৭১)
কবরের আযাব থেকে মুক্ত
প্রিয় আক্বা, মক্কী মাদানী মুস্তফা, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন কিংবা জুমার রাতে মৃত্যুবরণ করবে, সে কবরের আযাব থেকে মুক্তি পাবে এবং কিয়ামতের দিন সে এমনভাবে উঠবে যে, তার উপর শহীদদের মোহর থাকবে।” (হিলআতুল আউলিয়া, ৩য় খন্ড, ১৮১ পৃষ্ঠা, হাদীস-৩৬২৯)
প্রসঙ্গ: ফয়যানে জুমা (পর্ব-১)
জুমার দিন দরূদ শরীফ পাঠের ফযীলত
নবীদের সুলতান, রহমতে আলামিয়ান, সরদারে দো-জাহান, মাহবুবে রহমানصَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর জুমার দিন দুইশত বার দরূদ শরীফ পাঠ করবে, তার দুইশত বছরের গুনাহ্ মাফ হয়ে যাবে।” (জমউল জাওয়ামেয় লিস সুয়ূতী, ৭ম খন্ড, ১৯৯ পৃষ্ঠা, হাদীস-২২৩৫৩)
صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আমরা কতই না সৌভাগ্যবান যে, আল্লাহ্ তাআলা তাঁর প্রিয় হাবীব صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর ওসিলায় আমাদেরকে বরকতময় জুমার নিয়ামত দ্বারা ধন্য করেছেন। আফসোস! আমরা অকৃতজ্ঞরা অন্যান্য দিনের মতো জুমার দিনটিকেও অলসতার মধ্যে অতিবাহিত করি। অথচ জুমার দিন ঈদের দিন, জুমার দিন সকল দিনের সরদার, জুমার দিনে জাহান্নামের আগুন প্রজ্বলিত করা হয় না, জুমার রাতে জাহান্নামের দরজা খোলা হয় না, জুমাকে কিয়ামতের দিন নববধূর মতো উঠানো হবে, জুমার দিনে মৃত্যুবরণকারী সৌভাগ্যবান মুসলমান শহীদের মর্যাদা লাভ করে এবং কবরের আযাব থেকে নিরাপদ হয়ে যায়। প্রসিদ্ধ মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত হযরত আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর বর্ণনা অনুসারে;“জুমার দিন হজ্ব হলে সেটার সাওয়াব সত্তরটি হজ্জের সাওয়াবের সমপরিমাণ হবে। জুমার দিনের একেকটি সৎকাজের সাওয়াব সত্তরগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। (যেহেতু জুমার দিনের মর্যাদা অনেক বেশি, তাই) জুমার দিনে গুনাহের শাস্তিও সত্তর গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। (মীরআত, ২য় খন্ড, ৩২৩, ৩২৫, ৩২৬ পৃষ্ঠা)
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)
পোস্ট শ্রেণি
অযু-গোসল-পবিত্রতা
(12)
আপডেট চলমান
(25)
আমাদের কথা ও অন্যান্য বিষয়াবলী
(6)
আমাদের প্রিয় নবী ﷺ
(5)
আরবি মাস ও ফযীলত
(11)
ইসলামী ইতিহাস ও শিক্ষনীয় ঘটনা
(6)
ইসলামী জীবন ও সুন্দর চরিত্র
(4)
ঈদ-কাযা-জানাযা-তারাবী-নফল ও অন্যান্য নামায
(5)
উত্তম আমল ও সাওয়াবের কাজ
(4)
কুরআন-তাফসীর ও হাদিস
(16)
কুরবানী
(6)
চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য কথন
(14)
জিকির-দোআ-দুরূদ ও ফযীলত
(8)
নবী-সাহাবী ও আওলিয়াদের জীবনী
(8)
নামায
(17)
পর্দা ও লজ্জাশীলতা
(16)
ফয়যানে জুমা
(3)
বদ আমল ও গুনাহের কাজ
(3)
মওত-কবর-হাশর ও আযাব
(12)
মাসআলা-মাসাইল ও প্রশ্নোত্তর
(15)
মাসাইল
(21)
যাকাত-ফিতরা ও সদক্বাহ'র বিধান
(1)
রোযা/রমযানের বিধান ও ফযীলত
(9)
সুন্নাত ও আদব/ মাদানী ফুল
(41)
হজ্ব-ওমরাহ ও যিয়ারতে মদিনা
(27)