কুসংস্কারের কোন বাস্তবতা নেই
বুখারী শরীফে হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বণির্ত , মদীনার তাজেদার, রাসূলদের সর্দার صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: সংক্রমণ বলতে কিছু নাই, না আছে কোন অশুভ ফাল তথা অশুভ ইঙ্গিত, আর নাই পেঁচা-ও, না শূন্য (খালি) ও কুষ্ঠ থেকে পালাবে, যেমনিভাবে বাঘ দেখে পালাও। (বুখারী, কিতাবুত তিব্ব, ৪/২৪, হাদীস- ৫৭০৭ ও ওমদাতুল কারী, কিতাবুত তিব্ব, ১৪/৬৯২, হাদীস- ৫৭০৭)
বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকারী মুফতী মুহাম্মদ শরীফুল হক আমজাদী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِহাদীস শরীফটির ব্যাখ্যায় বলেন: এই হাদীস শরীফটি থেকে প্রাপ্ত কিছু মাদানী ফুল উপস্থাপন করা হলো,
۞ জাহেলীয়তের যুগে মানুষের বিশ্বাস ছিলো যে, এমন কতগুলো রোগ রয়েছে যা অন্যের প্রতি সংক্রমিত হয়। যেমন: কুষ্ঠ, খোস পাঁচড়া, প্লেগ ইত্যাদি। হুযুরে পাক صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সেই বিশ্বাসকে নিশ্চিহ্ন করে দিলেন এবং নিষেধ করে দিলেন। একজন গ্রাম্য লোক এসে উপস্থিত হলো, সে বললো : আমার উটগুলো পরিস্কার- পরিচ্ছন্ন ও উন্নত হয়ে থাকে। তা থেকে একটি খোস-পাচঁড়া বিশিষ্ট উট এসে সবাইকে খোস-পাচঁড়া বিশিষ্ট করে দিচ্ছে। হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: প্রথমটিকে খোস-পাঁচড়া কে বানিয়েছিলো? সে বললো: আল্লাহ তায়ালা। ইরশাদ করলেন: এভাবে বাকিগুলোকেও আল্লাহ তায়ালাই খোস-পাঁচড়া বিশিষ্ট বানিয়েছেন।
۞ আরবদের অভ্যাস ছিলো, তারা যখন কোন সফরে গমন করতো, তখন যদি কোন পাখি তাদের ডান পাশ দিয়ে উড়তো, তখন সেই সফরকে তারা মঙ্গলময় মনে করতো আর যদি বাম দিক দিয়ে উড়তো তবে তারা তা অমঙ্গল মনে করতো। এ ধরনের আরো অনেক সন্দেহ তাদের মধ্যে প্রচলিত ছিলো। যা বর্তমানে আমাদের সমাজেও প্রচলিত রয়েছে। হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ঐসব সন্দেহকে দূরীভূত করে দেন।
۞ ‘হাম্মা’ একটি পাখির নাম, কারো মতে এটি হলো পেঁচা। জাহেলীয়তের যুগে মানুষের বিশ্বাস ছিলো যে, এই পাখিটি যদি কোন ঘরে বসে, তাহলে সেই ঘরে কোন না কোন বিপদ অবতীর্ণ হবে। বর্তমানেও মুর্খদের নিকট প্রসিদ্ধ রয়েছে যে, যে ঘরে পেঁচা ডাকে কিংবা যে ঘরের ছাদে পেঁচা ডাকে সেই ঘরে কোন বিপদ আসবে। আরেক উক্তি মতে, জাহেলীয়তের যুগে মানুষের বিশ্বাস ছিলো যে, মৃতদের হাঁড়গুলো ‘পেঁচা’ হয়ে উড়ে। এক উক্তি মতে, যেই মৃতের কিসাস (প্রতিশোধ) নেওয়া হয় না সে ‘পেঁচা’ হয়ে যায় আর সে বলতে থাকে, আমাকে পান করাও, আমাকে পান করাও। যখন তার কিসাস (প্রতিশোধ) নিয়ে নেওয়া হয়, তখন সে উড়ে যায়। এসব সন্দেহকে প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم দূর করে দিয়েছেন। ইরশাদ করেছেন: এসব কিছুই না। (নুযহাতুল কারী, ৫/ ৫০২)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
বুখারী শরীফে হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বণির্ত , মদীনার তাজেদার, রাসূলদের সর্দার صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: সংক্রমণ বলতে কিছু নাই, না আছে কোন অশুভ ফাল তথা অশুভ ইঙ্গিত, আর নাই পেঁচা-ও, না শূন্য (খালি) ও কুষ্ঠ থেকে পালাবে, যেমনিভাবে বাঘ দেখে পালাও। (বুখারী, কিতাবুত তিব্ব, ৪/২৪, হাদীস- ৫৭০৭ ও ওমদাতুল কারী, কিতাবুত তিব্ব, ১৪/৬৯২, হাদীস- ৫৭০৭)
বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকারী মুফতী মুহাম্মদ শরীফুল হক আমজাদী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِহাদীস শরীফটির ব্যাখ্যায় বলেন: এই হাদীস শরীফটি থেকে প্রাপ্ত কিছু মাদানী ফুল উপস্থাপন করা হলো,
۞ জাহেলীয়তের যুগে মানুষের বিশ্বাস ছিলো যে, এমন কতগুলো রোগ রয়েছে যা অন্যের প্রতি সংক্রমিত হয়। যেমন: কুষ্ঠ, খোস পাঁচড়া, প্লেগ ইত্যাদি। হুযুরে পাক صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সেই বিশ্বাসকে নিশ্চিহ্ন করে দিলেন এবং নিষেধ করে দিলেন। একজন গ্রাম্য লোক এসে উপস্থিত হলো, সে বললো : আমার উটগুলো পরিস্কার- পরিচ্ছন্ন ও উন্নত হয়ে থাকে। তা থেকে একটি খোস-পাচঁড়া বিশিষ্ট উট এসে সবাইকে খোস-পাচঁড়া বিশিষ্ট করে দিচ্ছে। হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: প্রথমটিকে খোস-পাঁচড়া কে বানিয়েছিলো? সে বললো: আল্লাহ তায়ালা। ইরশাদ করলেন: এভাবে বাকিগুলোকেও আল্লাহ তায়ালাই খোস-পাঁচড়া বিশিষ্ট বানিয়েছেন।
۞ আরবদের অভ্যাস ছিলো, তারা যখন কোন সফরে গমন করতো, তখন যদি কোন পাখি তাদের ডান পাশ দিয়ে উড়তো, তখন সেই সফরকে তারা মঙ্গলময় মনে করতো আর যদি বাম দিক দিয়ে উড়তো তবে তারা তা অমঙ্গল মনে করতো। এ ধরনের আরো অনেক সন্দেহ তাদের মধ্যে প্রচলিত ছিলো। যা বর্তমানে আমাদের সমাজেও প্রচলিত রয়েছে। হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ঐসব সন্দেহকে দূরীভূত করে দেন।
۞ ‘হাম্মা’ একটি পাখির নাম, কারো মতে এটি হলো পেঁচা। জাহেলীয়তের যুগে মানুষের বিশ্বাস ছিলো যে, এই পাখিটি যদি কোন ঘরে বসে, তাহলে সেই ঘরে কোন না কোন বিপদ অবতীর্ণ হবে। বর্তমানেও মুর্খদের নিকট প্রসিদ্ধ রয়েছে যে, যে ঘরে পেঁচা ডাকে কিংবা যে ঘরের ছাদে পেঁচা ডাকে সেই ঘরে কোন বিপদ আসবে। আরেক উক্তি মতে, জাহেলীয়তের যুগে মানুষের বিশ্বাস ছিলো যে, মৃতদের হাঁড়গুলো ‘পেঁচা’ হয়ে উড়ে। এক উক্তি মতে, যেই মৃতের কিসাস (প্রতিশোধ) নেওয়া হয় না সে ‘পেঁচা’ হয়ে যায় আর সে বলতে থাকে, আমাকে পান করাও, আমাকে পান করাও। যখন তার কিসাস (প্রতিশোধ) নিয়ে নেওয়া হয়, তখন সে উড়ে যায়। এসব সন্দেহকে প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم দূর করে দিয়েছেন। ইরশাদ করেছেন: এসব কিছুই না। (নুযহাতুল কারী, ৫/ ৫০২)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
ঘর পরিবর্তনে কি বরকত শেষ হয়ে যায়?
বণির্ত আছে, জনৈক ব্যক্তি নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দরবারে এসে আরয করলো: ইয়া রাসূলাল্লাহ !صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমরা এক ঘরে বসবাস করতাম, পরিবার পরিজন ও ধন-সম্পদ নিয়ে সেখানে আমি খুব ভালই ছিলাম, পরে আমি ঘরটি পরিবর্তন করে ফেললাম, এতে আমার ধন-সম্পদ ও সদস্য সংখ্যা কমে গেলো। তখন নবী করীমصَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: রাখো! এরূপ বলা খারাপ। (আদাবুদ দুনিয়া ওয়াদ দীন লিল মাওয়ারদী, ২৭৬ পৃষ্ঠা)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
বণির্ত আছে, জনৈক ব্যক্তি নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দরবারে এসে আরয করলো: ইয়া রাসূলাল্লাহ !صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমরা এক ঘরে বসবাস করতাম, পরিবার পরিজন ও ধন-সম্পদ নিয়ে সেখানে আমি খুব ভালই ছিলাম, পরে আমি ঘরটি পরিবর্তন করে ফেললাম, এতে আমার ধন-সম্পদ ও সদস্য সংখ্যা কমে গেলো। তখন নবী করীমصَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: রাখো! এরূপ বলা খারাপ। (আদাবুদ দুনিয়া ওয়াদ দীন লিল মাওয়ারদী, ২৭৬ পৃষ্ঠা)
কুসংস্কার মানাটা আমার সন্দেহ ছিলো
তাফসীরে রূহুল বয়ানে রয়েছে; জনৈক ব্যক্তি বলছে: একবার আমি এতোই অভাব-অনটনে পড়ে গেলাম যে, ক্ষুধা নিবারণের জন্য আমাকে মাটি খেতে হয়েছিলো। তারপরও ক্ষুধার জ্বালা মিটাতে পারিনি, আমি মনে মনে ভাবলাম, এমন কোন ব্যক্তি যদি পেয়ে যাই, যে আমাকে খাবার খাওয়াবে। খাবারের সন্ধানে আমি ইরানের আহওয়ায শহরের দিকে রওয়ানা দিলাম, অথচ শহরটি সম্বন্ধে আমার কোন ধারণাই ছিলোনা। আমি যখন নদীর নিকট গিয়ে পৌঁছলাম, দেখলাম সেখানে কোন নৌকা নাই। এটিকে আমি অশুভ লক্ষণ হিসাবে ধরে নিলাম, তারপর আমি একটি নৌকা দেখতে পেলাম, কিন্তু তাতে ছিদ্র ছিলো। এটি আমার দ্বিতীয় অশুভ লক্ষণ মনে হলো, মাঝির নাম জিজ্ঞাসা করলাম, সে তার নাম বললো ‘দীওযাদাহ’ (আরবিতে একে বলা হয় শয়তান)। এটা ছিলো আমার তৃতীয় অশুভ লক্ষণ। যাই হোক, আমি নৌকায় আরোহন করলাম, নৌকাটি যখন নদীর ওপারে গিয়ে পৌঁছলো, আমি তখন ডাক দিয়ে বললাম: হে কুলি! আমার মালামালগুলো উঠিয়ে নাও। তখন আমার নিকট একটি পুরানো তোষক ও কিছু প্রয়োজনীয় মালামাল ছিলো। আমার ডাকে যে মজুরটি এলো, সে ছিল কানা, এটিকে আমি চতুর্থ অশুভ লক্ষণ বলে মনে করলাম। আমার ধারণা হলো, এখান থেকে চলে যাওয়াই আমার জন্য শুভ হবে। তারপরও নিজের প্রয়োজনের কথা ভেবে ফিরে যাওয়ার মনোভাব ত্যাগ করলাম, আমি যখন মুসাফির খানায় গিয়ে পৌঁছলাম, তখনো এই কথাই ভাবছিলাম যে, করার কী আছে। এমন সময় কেউ এসে দরজায় করাঘাত করলো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: কে? উত্তরে সে বললো: আমি আপনার সাক্ষাতে এসেছি। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: তুমি কি আমাকে চিনো? সে বললো: হ্যাঁ। আমি মনে মনে ভেবেছি যে, এ হয় শত্রু হবে, অন্যথায় বাদশার পক্ষ থেকে দূত। আমি কিছুক্ষণ ভাবার পর দরজা খুলে দিলাম। লোকটি বললো: অমুক ব্যক্তি আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন। তিনি বার্তা পাঠিয়েছেন যে, আপনার সাথে আমার যদিও মতবৈষম্য রয়েছে, তবু আচার-আরচণগত হক তো অবশ্যই পালন করতে হবে, আমি আপনার অবস্থাদি শুনেছি, তাই আপনার প্রয়োজনাদি মিটানো আমার কর্তব্য, আপনি যদি এক দুই মাস আমার এখানে থাকেন, তবে আপনার সারা জীবনের জন্য দেখা শোনার একটি ব্যবস্থা হয়ে যাবে আর আপনি যদি এখান থেকে চলে যেতে চান, তাহলে এই ত্রিশটি দীনার নিন, প্রয়োজনে ব্যয় করবেন আর আপনি চলে যান, আমি আপনার সমস্যা বুঝতে পারছি। লোকটি বলল: আমি বিগত জীবনে কখনো ৩০ দীনারের মালিক হইনি। তাছাড়া আমি এও বুঝতে পেরেছি যে, কুসংস্কারের বাস্তবতা বলতে কিছুই নাই। (রূহুল বয়ান, ১/৩০৪)
তাফসীরে রূহুল বয়ানে রয়েছে; জনৈক ব্যক্তি বলছে: একবার আমি এতোই অভাব-অনটনে পড়ে গেলাম যে, ক্ষুধা নিবারণের জন্য আমাকে মাটি খেতে হয়েছিলো। তারপরও ক্ষুধার জ্বালা মিটাতে পারিনি, আমি মনে মনে ভাবলাম, এমন কোন ব্যক্তি যদি পেয়ে যাই, যে আমাকে খাবার খাওয়াবে। খাবারের সন্ধানে আমি ইরানের আহওয়ায শহরের দিকে রওয়ানা দিলাম, অথচ শহরটি সম্বন্ধে আমার কোন ধারণাই ছিলোনা। আমি যখন নদীর নিকট গিয়ে পৌঁছলাম, দেখলাম সেখানে কোন নৌকা নাই। এটিকে আমি অশুভ লক্ষণ হিসাবে ধরে নিলাম, তারপর আমি একটি নৌকা দেখতে পেলাম, কিন্তু তাতে ছিদ্র ছিলো। এটি আমার দ্বিতীয় অশুভ লক্ষণ মনে হলো, মাঝির নাম জিজ্ঞাসা করলাম, সে তার নাম বললো ‘দীওযাদাহ’ (আরবিতে একে বলা হয় শয়তান)। এটা ছিলো আমার তৃতীয় অশুভ লক্ষণ। যাই হোক, আমি নৌকায় আরোহন করলাম, নৌকাটি যখন নদীর ওপারে গিয়ে পৌঁছলো, আমি তখন ডাক দিয়ে বললাম: হে কুলি! আমার মালামালগুলো উঠিয়ে নাও। তখন আমার নিকট একটি পুরানো তোষক ও কিছু প্রয়োজনীয় মালামাল ছিলো। আমার ডাকে যে মজুরটি এলো, সে ছিল কানা, এটিকে আমি চতুর্থ অশুভ লক্ষণ বলে মনে করলাম। আমার ধারণা হলো, এখান থেকে চলে যাওয়াই আমার জন্য শুভ হবে। তারপরও নিজের প্রয়োজনের কথা ভেবে ফিরে যাওয়ার মনোভাব ত্যাগ করলাম, আমি যখন মুসাফির খানায় গিয়ে পৌঁছলাম, তখনো এই কথাই ভাবছিলাম যে, করার কী আছে। এমন সময় কেউ এসে দরজায় করাঘাত করলো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: কে? উত্তরে সে বললো: আমি আপনার সাক্ষাতে এসেছি। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: তুমি কি আমাকে চিনো? সে বললো: হ্যাঁ। আমি মনে মনে ভেবেছি যে, এ হয় শত্রু হবে, অন্যথায় বাদশার পক্ষ থেকে দূত। আমি কিছুক্ষণ ভাবার পর দরজা খুলে দিলাম। লোকটি বললো: অমুক ব্যক্তি আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন। তিনি বার্তা পাঠিয়েছেন যে, আপনার সাথে আমার যদিও মতবৈষম্য রয়েছে, তবু আচার-আরচণগত হক তো অবশ্যই পালন করতে হবে, আমি আপনার অবস্থাদি শুনেছি, তাই আপনার প্রয়োজনাদি মিটানো আমার কর্তব্য, আপনি যদি এক দুই মাস আমার এখানে থাকেন, তবে আপনার সারা জীবনের জন্য দেখা শোনার একটি ব্যবস্থা হয়ে যাবে আর আপনি যদি এখান থেকে চলে যেতে চান, তাহলে এই ত্রিশটি দীনার নিন, প্রয়োজনে ব্যয় করবেন আর আপনি চলে যান, আমি আপনার সমস্যা বুঝতে পারছি। লোকটি বলল: আমি বিগত জীবনে কখনো ৩০ দীনারের মালিক হইনি। তাছাড়া আমি এও বুঝতে পেরেছি যে, কুসংস্কারের বাস্তবতা বলতে কিছুই নাই। (রূহুল বয়ান, ১/৩০৪)
তীর নিক্ষেপ করে ভাগ্য নির্ণয় করিওনা
৬ষ্ট পারার সূরা মায়িদার ৯০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ اٰمَنُوْا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطٰنِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া, মূর্তি এবং ভাগ্য নির্ণায়ক তীর অপবিত্রই, শয়তানী কাজ। সুতরাং তা থেকে বেঁচে থাকো, যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করো। (৬ষ্ট পারা, সূরা মায়িদা, আয়াত ৯০)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
তীর নিক্ষেপ করে ভাগ্য নির্ণয় করা গুনাহের কাজ
৬ষ্ট পারায় সূরা মায়িদার ৩ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে:
وَأَن تَسْتَقْسِمُوْا بِالْأَزْلَامِ ۚ ذَٰلِكُمْ فِسْقٌ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং জুয়ার তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করা, এটি পাপ কাজ। (৬ষ্ট পারা, সূরা মায়িদা, আয়াত ৩)
সদরুল আফাজিল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ লিখেন: জাহেলীয়তের যুগে লোকদের যখন সফর, যুদ্ধ, ব্যবসা বা বিাবাহ-শাদি ইত্যাদি সামনে আসতো, তখন তারা তিনটি তীর নিক্ষেপ করে ভবিষ্যত বের করতো, অতঃপর সেই অনুযায়ী আমল করতো। একে তারা আল্লাহ তায়ালার আদেশ বলে মনে করতো। ইসলামে এসব কিছু নিষেধ করা হয়েছে। (খাযায়িনুল ইরফান, ২০৬ পৃষ্ঠা)
বরীকায়ে মাহমুদিয়া শরহে তরীকায়ে মুহাম্মদিয়ায় উল্লেখ রয়েছে: তিনটি তীরের একটিতে লেখা থাকতো “ اَمَرَنِىْ رَبِّى (আমার প্রতিপালক আমাকে নিদের্শ দিয়েছেন)”, দ্বিতীয়টিতে লেখা থাকতো “نَهَانِى رَبِّى (আমার প্রতিপালক আমাকে নিষেধ করেছেন)” এবং তৃতীয়টিতে কিছুই লেখা থাকতো না। যদি প্রথম তীরটি উঠতো, কাজটি করতো, যদি দ্বিতীয়টি উঠতো, কাজটি করা থেকে বিরত থাকতো আর যদি তৃতীয় তীরটি উঠতো, দ্বিতীয়বার ভাগ্য নিণর্য় করতে। এরূপ ভাগ্য নির্ণয় এবং এধরনের অপরাপর জিনিস ব্যবহার করা জায়িয নাই। (বরীকাতে মাহমুদিয়া শরহে তরীকায়ে মুহাম্মদিয়া, ২/৩৮৫)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ اٰمَنُوْا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطٰنِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া, মূর্তি এবং ভাগ্য নির্ণায়ক তীর অপবিত্রই, শয়তানী কাজ। সুতরাং তা থেকে বেঁচে থাকো, যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করো। (৬ষ্ট পারা, সূরা মায়িদা, আয়াত ৯০)
সদরুল আফাজিল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ লিখেন: জাহেলীয়তের যুগে লোকদের যখন সফর, যুদ্ধ, ব্যবসা বা বিাবাহ-শাদি ইত্যাদি সামনে আসতো, তখন তারা তিনটি তীর নিক্ষেপ করে ভবিষ্যত বের করতো, অতঃপর সেই অনুযায়ী আমল করতো। একে তারা আল্লাহ তায়ালার আদেশ বলে মনে করতো। ইসলামে এসব কিছু নিষেধ করা হয়েছে। (খাযায়িনুল ইরফান, ২০৬ পৃষ্ঠা)
বরীকায়ে মাহমুদিয়া শরহে তরীকায়ে মুহাম্মদিয়ায় উল্লেখ রয়েছে: তিনটি তীরের একটিতে লেখা থাকতো “ اَمَرَنِىْ رَبِّى (আমার প্রতিপালক আমাকে নিদের্শ দিয়েছেন)”, দ্বিতীয়টিতে লেখা থাকতো “نَهَانِى رَبِّى (আমার প্রতিপালক আমাকে নিষেধ করেছেন)” এবং তৃতীয়টিতে কিছুই লেখা থাকতো না। যদি প্রথম তীরটি উঠতো, কাজটি করতো, যদি দ্বিতীয়টি উঠতো, কাজটি করা থেকে বিরত থাকতো আর যদি তৃতীয় তীরটি উঠতো, দ্বিতীয়বার ভাগ্য নিণর্য় করতে। এরূপ ভাগ্য নির্ণয় এবং এধরনের অপরাপর জিনিস ব্যবহার করা জায়িয নাই। (বরীকাতে মাহমুদিয়া শরহে তরীকায়ে মুহাম্মদিয়া, ২/৩৮৫)
কোরআনী ফাল তথা ইঙ্গিত বের করা না-জায়িয
অনেকে কোরআন মজীদের যে কোন পৃষ্ঠা খুলে সেই পৃষ্ঠার সর্বপ্রথম আয়াতের অনুবাদ থেকে নিজের যে কোন কাজে মনের মত করে মর্মা র্থ নিয়ে ফাল তথা ইঙ্গিত বের করে থাকে, এ ধরনের ইঙ্গিত বের করা না-জায়িয। হাদীকা নদিয়ায় উল্লেখ রয়েছে: কোরআনী ফাল, ফালে দা’নিয়াল এবং অনুরূপ অন্যান্য ফাল যা বর্তমান যুগে প্রচলিত, সেগুলো নেক ফালের পর্যায়ভূক্ত নয় বরং তীর নিক্ষেপ করে ফাল বের করার যেই বিধান, এগুলোরও একই বিধান। সুতরাং এরূপ করাও না জায়িয। (হাদীকায়ে নদিয়া শরহে তরীকায়ে মুহাম্মদিয়া, ২/২৬) পক্ষান্তরে বরীকায়ে মাহমুদিয়াতে উল্লেখ আছে: পবিত্র কোরআন থেকে অশুভ ফাল তথা অশুভ ইঙ্গিত গ্রহণ করা মাকরূহে তাহরীমি। (বরীকায়ে মাহমুদিয়া শরহে তরীকায়ে মুহাম্মদিয়া, ২/৩৮৬)
একটি শিক্ষামূলক ঘটনা
একদিন ওয়ালিদ বিন ইয়াজিদ বিন আব্দুল মালিক কোরআন থেকে ফাল তথা ইঙ্গিত বের করলো। কোরআন পাক খোলার সাথে সাথে এই আয়াতটি এলো:
অনেকে কোরআন মজীদের যে কোন পৃষ্ঠা খুলে সেই পৃষ্ঠার সর্বপ্রথম আয়াতের অনুবাদ থেকে নিজের যে কোন কাজে মনের মত করে মর্মা র্থ নিয়ে ফাল তথা ইঙ্গিত বের করে থাকে, এ ধরনের ইঙ্গিত বের করা না-জায়িয। হাদীকা নদিয়ায় উল্লেখ রয়েছে: কোরআনী ফাল, ফালে দা’নিয়াল এবং অনুরূপ অন্যান্য ফাল যা বর্তমান যুগে প্রচলিত, সেগুলো নেক ফালের পর্যায়ভূক্ত নয় বরং তীর নিক্ষেপ করে ফাল বের করার যেই বিধান, এগুলোরও একই বিধান। সুতরাং এরূপ করাও না জায়িয। (হাদীকায়ে নদিয়া শরহে তরীকায়ে মুহাম্মদিয়া, ২/২৬) পক্ষান্তরে বরীকায়ে মাহমুদিয়াতে উল্লেখ আছে: পবিত্র কোরআন থেকে অশুভ ফাল তথা অশুভ ইঙ্গিত গ্রহণ করা মাকরূহে তাহরীমি। (বরীকায়ে মাহমুদিয়া শরহে তরীকায়ে মুহাম্মদিয়া, ২/৩৮৬)
একটি শিক্ষামূলক ঘটনা
একদিন ওয়ালিদ বিন ইয়াজিদ বিন আব্দুল মালিক কোরআন থেকে ফাল তথা ইঙ্গিত বের করলো। কোরআন পাক খোলার সাথে সাথে এই আয়াতটি এলো:
একটি শিক্ষামূলক ঘটনা
একদিন ওয়ালিদ বিন ইয়াজিদ বিন আব্দুল মালিক কোরআন থেকে ফাল তথা ইঙ্গিত বের করলো। কোরআন পাক খোলার সাথে সাথে এই আয়াতটি এলো:
وَاسْتَفْتَحُوا وَخَابَ كُلُّ جَبَّارٍ عَنِيدٍ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং তারা মীমাংসা চেয়েছে এবং প্রত্যেক অবাধ্য, হঠকারী ব্যর্থ মনোরথ হয়েছে । (পারা ১৩, সূরা ইব্রাহিম, আয়াত ১৫)
তখন ওয়ালিদ বিন ইয়াজিদ পবিত্র কোরআনটি (مَعَاذَ الله عَزَّوَجَل) শহীদ করে দিলো এবং এই পঙতিটি পাঠ করলো: যার অনুবাদ: তুমি কি সকল অবাধ্য আর গোঁয়ারকে হুমকি দিচ্ছো (مَعَاذَ الله عَزَّوَجَل), হ্যাঁ আমি হলাম সেই অবাধ্য আর গোঁয়ার। তুমি যখন কিয়ামতের দিন তোমার প্রতিপালকের নিকট উপস্থিত হবে, তখন বলে দিও, ওয়ালিদ আমাকে শহীদ করে দিয়েছিলো।
এই ঘটনাটির কিছুদিনের মধ্যেই কেউ ওয়ালিদকে অত্যন্ত নিমর্ম ভাবে হত্যা করেছিলো। তার মস্তকটিকে প্রথমে তারই ঘরের ছাদে এবং পরে নগরের দেওয়ালে ঝুলিয়ে রেখেছিলো। (আদাবুদ দুনিয়া ওয়াদ দ্বীন, ২৭৬ পৃষ্ঠা)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
তাঁরা কখনো ফাল গ্রহণের জন্য তীর নিক্ষেপ করেননি
হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم যখন বাইতুল্লায় ছবিসমূহ দেখতে পান, তখন প্রবেশ করেননি। যতক্ষণ পর্যন্ত না নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নির্দেশে সেগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়। নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم হযরত সায়্যিদুনা ইব্রাহীম ও হযরত ইসমাঈল عَلَيْهِمَا الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام এর ছবি দেখতে পান যে, তাঁদের হাতে ফাল গ্রহনের তীর ছিলো। তখন হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: আল্লাহ তায়ালা ঐসব লোকদের (অর্থাৎ ছবি নির্মাতাদের) ধ্বংস করুক। আল্লাহর শপথ! এই দু’জন নবী কখনো তীরের মাধ্যমে ভাগ্য নির্ণয় করেননি। (বুখারী, কিতাবু আহাদীসিল আম্বিয়া, ২/ ৪২১, হাদীস- ৩৩৫২)
ফাল গ্রহণের তীর কিরূপ?
বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকারী মুফতী মুহাম্মদ শরীফুল হক আমজাদী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِহাদীস শরীফটি সম্পর্কে লিখেন: মুশরিকরা ফাল গ্রহণের জন্য সাতটি তীর বানিয়ে নিতো। একটিতে লিখা থাকতো হ্যাঁ (نَعَمْ ), দ্বিতীয়টিতে না (لَا), তৃতীয়টিতে তন্মধ্য হতে ( مِنْهُمْ ), চতুর্থটিতে তন্মধ্য হতে নয় ( مِنْ غَيْرِهِم ), পঞ্চমটিতে সম্পৃক্ত হওয়া (مُلْصَق), ষষ্ঠটিতে দিয়্যাত ( اَلْعَقْل ), ১. দিয়্যাত ঐ সম্পদকে বলে, যা প্রাণের পরিবর্তে আবশ্যক হয়। (বাহারে শরীয়ত, ৩/৮৩০) সপ্তমটিতে অবশিষ্ট দিয়্যাত ( فَضْلُ الْعَقْل)। এসব তীর কাবার খাদেমের কাছে থাকতো। মুশরিকরা যখন কোথাও যাওয়ার কিংবা বিবাহ করবার ইচ্ছা করতো, কিংবা তারা যখন অন্য কোন প্রয়োজনের শিকার হতো, তখন খাদেম তীর নিক্ষেপ করতো। যদি ‘হাঁ’ (نَعَمْ ) উঠতো, তবে কাজটি করতো। যদি ‘না’ (َﻻ ) উঠতো, তবে কাজটি করতো না আর যদি কারো বংশ নিয়ে সন্দেহ হতো, তাহলে সেই তিনটি তীর নিক্ষেপ করতো, যেগুলোতে লেখা থাকতো ‘তন্মধ্য হতে’ (مِنْهُمْ ), ‘তন্মধ্য হতে নয়’ ( مِنْ غَيْرِهِم) এবং ‘সম্পৃক্ত হওয়া’ (مُلْصَق )। যদি (مِنْهُمْ ) ‘তন্মধ্য হতে’ উঠতো, তবে বলতো: তার বংশ সঠিক আছে আর যদি লটারীতে ( مِنْ غَيْرِهِم) ‘তন্মধ্য হতে নয়’ উঠতো, তখন বলতো: সে এই বংশের লোক নয়, সে এই বংশের মিত্র। আর যদি ( مُلْصَق ) ‘সম্পৃক্ত হওয়া’ উঠতো, তখন বলতো: সে এই বংশের সাথে না সম্পৃক্ত, না এর মিত্র।
আর কেউ যদি অপরাধ করতে এবং মতানৈক্য সৃষ্টি হতো যে, এর দিয়্যাত তথা ক্ষতিপূরণ কার উপর হবে। তখন অবশিষ্ট দু’টি তীর ব্যবহার করতো। একটি দলকে নির্দিষ্ট করে তীর নিক্ষেপ করতো। যদি তাদের নামে (الْعَقْل) দিয়্যাত উঠতো, তখন সেই দলটির উপর ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা আবশ্যিক করে দিতো এবং দ্বিতীয় দলকে নিরপরাধ বলে ছেড়ে দেওয়া হতো। তাদের পক্ষ থেকে যদি ক্ষতিপূরণের সম্পূর্ণ অর্থ আদায় না হতো এবং মতবৈষম্য হতো যে, কে আদায় করবে? তখন (فَضْلُ الْعَقْل) অবশিষ্ট দিয়্যাত নামের তীরটি নিক্ষেপ করা হতো। যাদের নামে পড়তো, তারা অবশিষ্ট ক্ষতিপূরণ আদায় করতো। এর ব্যাখ্যায় আরো কিছু বর্ণনা রয়েছে। তবে পরিচিতির জন্য আমি কেবল একটি আলোচনা করেছি। এটি ছিলো সন্দেহবাতিকতা। এ ছিলো অজ্ঞতা বরং বংশ এবং ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে অত্যাচার ছিলো। তাই ইসলাম সেটিকে কঠোরভাবে নিষেধ ঘোষণা দিয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে:
وَاَنْ تَسْتَقْسِمُوْا بَالْاَزْلَامِ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে, তীরের মাধ্যমে ভাগ্যলিপি নির্ণয় করা। (৬ষ্ট পারা, আল মায়িদা, আয়াত ৩) (নুযহাতুল কারী, ৩/১০৫)
গণকের ব্যাপারে আ’লা হযরতের ফতোয়া
আমার আক্বা আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর নিকট এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, যেই ব্যক্তি গণনা করে এবং লোকদের বলে: ‘তোমার কাজ হয়ে যাবে, অথবা হবে না কিংবা অমুক কাজটি তোমার জন্য ভাল হবে কিংবা খারাপ হবে, লাভ হবে, কিংবা লোকসান হবে? তখন আ’লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ উত্তর দিলেন:
১। তার এই ধরনের কথাগুলো যদি সে অকাট্য ও একান্ত নিভর্র যোগ্য বলে দাবী রেখে বলে থাকে, তবে সে তো মুসলমানই নয়। এগুলোকে যারা সত্য বলে বিশ্বাস করে তাদের ব্যাপারে সহীহ হাদীস শরীফে রয়েছে: فَقَدْ كَفَرَ بِمَا نُزِّلَ عَلٰى مُحَمَّد অর্থাৎ সে ওসব কিছুকে অস্বীকার করলো, যা মুহাম্মদصَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে (তিরমিযী, কিতাবুত তাহারাত,
বাবু মা’জা ফি কারাহিয়াতি ইতইয়ানি হাসায়িস, ১/১৮৫, হাদীস নং-১৩৫।) এবং
২। যদি সে অকাট্য রূপে না বলে থাকে, তবুও ফাল তথা ইঙ্গিত দেখার যে রীতিটি চালু রয়েছে, তা গুনাহ থেকে পৃথক নয়। (ফতোয়ায়ে রযবীয়া, ২৩/ ১০০)
গণকের পারিশ্রমিক নেওয়ার বিধান
প্রসিদ্ধ মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ তাফসীরে নঈমীতে লিখেন: গণনা করা, গণনার বিপরীতে বিনিময় গ্রহণ করা এবং প্রদান করা সবই হারাম। (নূরুল ইরফান, ৭ম পারা, আল মায়িদা, ৯০নং আয়াতের পাদটিকা)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
ইস্তেখারার শিক্ষা দিতেন
মদীনার তাজেদার, হুযুরে আনওয়ার صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم লোকদেরকে গণনার পরিবর্তে ইস্তেখারার শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বণির্ত , রাসূলে আকরম, নূরে মুজাসসাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কোরআনের সূরা শিক্ষা দেওয়ার ন্যায় আমাদেরকে যে কোন বিষয়ে ইস্তেখারা করার শিক্ষা দিতেন। (বুখারী, কিতাবুত তাহাজ্জুদ, বাবু মা’জা ফিত তাতউয়ি মাছনা মাছনা, ১/ ৩৯৩, হাদীস- ১১৬২)
প্রসিদ্ধ মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ হাদীস শরীফটির আলোকে লিখেন: ইস্তেখারা মানে হলো মঙ্গল কামনা করা বা কারো নিকট হতে ভাল পরামর্শ গ্রহণ করা। যেহেতু ইস্তেখারার নামাযে এবং দোয়ায় বান্দা যেনো স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার নিকট পরামর্শ চায় যে, অমুক কাজটি করবো কি করবো না! তাই একে ইস্তেখারা বলা হয়। (মিরাতুল মানাজীহ, ২/ ৩০১)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
যেই ব্যক্তি ইস্তেখারা করবে সে ক্ষতির শিকার হবে না
হুযূরে আকরাম, নূরে মুজাসসাম, শাফেয়ে বনী আদম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: مَا خَابَ مَنِ اسْتَخَارَ، وَلَا نَدِمَ مَنِ اسْتَشَارَ، وَلَا عَالَ مَنِ اقْتَصَدَ অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইস্তেখারা করবে, সে ব্যক্তি ক্ষতির শিকার হবে না। যে ব্যক্তি পরামর্শের মাধ্যমে কাজ করে, সে আক্ষেপের শিকার হবে না আর যে ব্যক্তি মধ্যম পন্থা অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি কখনো অভাবে পড়বে না। (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, কিতাবুস সালাত, বাবুল ইস্তেখারা, ২/ ৫৬৬, হাদীস- ৩৬৭০)
ইস্তেখারা না করার ক্ষতি
প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: مِنْ شِقَاوَةِ ابْنِ آدَمَ تَرْكُهُ اسْتِخَرَةَ اللهِ অর্থাৎ বান্দার দূর্ভাগ্যের মধ্যে একটি যে, আল্লাহ তায়ালার নিকট ইস্তেখারা না করা। (তিরমিযী, কিতাবুল কদর, বাবু মা’জা ফির রযা বিল কযা, ৪/ ৬০, হাদীস- ২১৫৮)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
নীল নদের নামে চিঠি
প্রতি বৎসর নীল নদ শুকিয়ে যেতো, তাই অজ্ঞতার কারণে সেখানে এই কু-প্রথা ছিলো যে, নদটি বলি চাইছে। অতএব তারা কোন এক কুমারী মেয়েকে উন্নত পোষাক আর অলঙ্কার দ্বারা সজ্জিত করে নীল নদে বলি দিতো, ফলে নদের পানি যথারীতি প্রবাহিত হয়ে যেতো, যখন মিসর জয় হলো, মিসরবাসীরা এসে একদা হযরত সায়্যিদুনা আমর বিন আস رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُএর নিকট আবেদন করলো: ‘হে আমাদের আমীর! আমাদের নীল নদের একটি নিয়ম প্রচলিত আছে, যতক্ষণ তা পালন করা হবে না, ততক্ষণ নদীও প্রবাহিত হয় না।’ তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ সেই নিয়মটি সম্পর্কে জানতে চাইলেন। তারা বললো: আমরা একজন কুমারী মেয়েকে তার মা-বাবার নিকট থেকে চেয়ে নিয়ে উন্নত পোষাক আর অলঙ্কার দ্বারা সজ্জিত করে নীল নদে বলি দিয়ে থাকি। হযরত সায়্যিদুনা আমর বিন আস رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বললেন: ইসলামে কখনো তা হতে পারে না, পুরোনো সব অশুভ প্রথাকে ইসলাম ধূলিসাৎ করেছে, সুতরাং সেই কু-প্রথাকে আটকে রাখা হলো, তাই পানিও কমে যেতে থাকলো, এমনকি এক পর্যায়ে লোকজন সেখান থেকে অন্যত্র চলে যাবার জন্য তৈরি হতে লাগলো। এই অবস্থা দেখে হযরত সায়্যিদুনা আমর বিন আস رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ দ্বিতীয় খলীফা আমীরুল মুমিনীন হযরত ওমর ফারূক رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর নিকট সব ঘটনা লিখে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি উত্তরে লিখলেন: ‘আপনি ঠিকই করেছেন, ইসলাম নিশ্চয় এসব অশুভ প্রথাকে দূরীভূত করে, এই চিঠির সাথে একটি চিরকুটও রয়েছে, তা নীল নদে ফেলে দেবেন।’ যখন হযরত সায়্যিদুনা আমর বিন আস رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর নিকট আমিরুল মুমিনীনের পত্রখানি পৌঁছলো, তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ চিরকুটটি বের করলেন। চিরকুটটিতে লেখা ছিলো: “হে নীল নদ! তুমি যদি নিজ থেকে প্রবাহিত হয়ে থাকো, তবে তুমি আর প্রবাহিত হইও না। তোমাকে যদি আল্লাহ তায়ালা প্রবাহিত করেন, তবে আল্লাহ তায়ালার নিকট আবেদন করছি, তিনি যেনো তোমাকে প্রবাগিত করে দেন।” হযরত সায়্যিদুনা আমর বিন আস চিরকুটটি নীল নদে ফেললেন। ফলে রাতারাতি ১৬ গজ পানি বেড়ে গেলো আর এই অশুভ প্রথাটি মিসর থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো। (আল আযমাতু লি আবিশ শায়খ আল ইসবাহানী, বাবু ছিফতিন নীল ওয়া মুনতাহাহু, ৩১৮ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৯৪০)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
দুঃখজনক অবস্থা
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! নীল নদকে প্রবাহমান রাখার জন্য মিসরবাসীদের মাঝে যেভাবে ভুল বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত অশুভ প্রথা প্রচলিত ছিলো, অনুরূপ বর্তমান যুগেও বহু ভুল ও ভিত্তিহীন বিশ্বাস, সন্দেহ ও না-জায়িয রীতি-নীতি দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেতে দেখা যাচ্ছে। এগুলো মূলতঃ কুসংস্কারের কারণেই হয়ে থাকে, তন্মধ্য হতে কতিপয় নিচে উল্লেখ করা হচ্ছে :
(১) সফর মাসকে অলক্ষুনে মনে করা
যারা কুসংস্কারের সন্দেহবাতিকতার শিকার, তারা সফর মাসকে বিপদ-আপদ অবতীর্ণ হওয়ার মাস বলে মনে করে। বিশেষ করে মাসটির প্রথম দিকের তেরটি দিন যেগুলোকে ‘তেরা তেযী’ বলা হয়ে থাকে, সেগুলোকে অত্যন্ত অলক্ষুনে বলে জানে। সন্দেহবাতিকদের মনে এই বিষয়টি ঢুকে আছে যে, সফর মাসে নতুনভাবে ব্যবসা- বাণিজ্যের সূচনা করা যাবে না, এতে ক্ষতির আশঙ্কা বেশী, কোথাও যাত্রাও করা যাবে না, এক্সিডেন্টের আশঙ্কা রয়েছে, বিয়ে শাদী করা যাবে না, কন্যা বিদায় করা যাবে না, তবে পরিবার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয়, অনুরূপভাবে এই মাসটিতে বড় ধরনের ব্যবসায়িক লেনদেন ইত্যাদিও করে না। ঘরের বাইরে যাতায়াতও কমিয়ে দেয় এই ধারণায় যে, বিপদাপদ অবতীর্ণ হচ্ছে। ঘরের প্রতিটি বাসন-কোসন ভালভাবে ঝাড়া- মোছা করে। অনুরূপভাবে এই মাসটিতে যদি কোন পরিবারে কেউ মারা যায়, সেই পরিবারকে অলক্ষুনে বলে মনে করে, সেই পরিবারের সাথে যদি নিজের পুত্র কিংবা কন্যার সম্বন্ধের কথা পাকাপাকি হয়, তাও ভেঙ্গে দেয়। ‘তেরা তেযী’ নামে সাদা ছোলার নিয়াযও দিয়ে থাকে। ফাতেহা নিয়ায করা মুস্তাহাব ও সাওয়াবের কাজ এবং সব ধরনের হালাল রিযিক দ্বারা যে কোন মাসের যে কোন দিনে এই ফাতেহা ও নিয়ায করা যায়। কিন্তু এই কথা মনে করা যে, ‘তেরা তেযী’র ফাতেহা যদি দেওয়া না হয় এবং সাদা ছোলা ভেজে যদি বন্টন করা না হয়, তবে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের রুজি-রোজগারে বরকত কমে যাবে, এ ধরনের কাজ ও ধারণা একেবারেই ভিত্তিহীন।
আরবদের মাঝে সফর মাসকে অলক্ষুনে বলে মনে করা হতো
জাহেলীয়তের যুগে অর্থাৎ ইসলামের পূর্বেও সফর মাসকে নিয়ে লোকজন এই ধরনের অশুভ প্রথামূলক মনোভাব পোষণ করতো যে, এই মাসে বিপদ-আপদ অধিকহারে অবতীর্ণ হয়ে থাকে, তাই তারা এই মাসটির আগমনকে অলক্ষুনে বলে মনে করতো। (ওমদাতুল কারী, ৭০/১১০)
সম্মানিত হওয়ার কারণে আরবরা তিনটি মাস যিলকাদ, যিলহজ্জ ও মুহাররমে যুদ্ধ-বিগ্রহ আর লুটতরাজ থেকে বিরত থাকতো, তারা অপেক্ষা করে থাকতো, এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে যাক, তারপর তারা বের হবে, লুটতরাজ করবে, তাই সফর মাস শুরু হওয়ার সাথে সাথেই লুটতরাজ, রাহাজানি, যুদ্ধ-বিগ্রহের উদ্দেশ্যে তারা যখন ঘর থেকে বেরিয়ে পড়তো, তখন তাদের ঘর মানবশূন্য হয়ে পড়তো, তাই বলা হতো صَفَرَ المَكَانِ ঘর শূন্য হয়ে গেছে। আরবরা যখন দেখলো যে, এই মাসে মানুষ খুন হচ্ছে, পরিবার-পরিজন মারা যাচ্ছে কিংবা শূন্য হয়ে যাচ্ছে, তখন তারা তা থেকে এই অশুভ প্রথাটি গ্রহণ করলো যে, এই মাসটি তাদের জন্য অলক্ষুণে মাস। এই ভেবে তারা তাদের পরিবার-পরিজন মারা যাওয়ার কিংবা ধ্বংস হওয়ার মূল কারণে মনোযোগ দিলো না, নিজেদের গহির্ত ও মন্দ কর্মগুলো উপলব্দি করলো না। যুদ্ধ-বিগ্রহ ও কলহ ইত্যাদি থেকে নিজেদের বিরতও রাখলো না। সেই স্থলে তারা মাসটিকেই অলক্ষুণে বলে দিলো।
সফর মাস কিছুই না
আমাদের মক্কী মাদানী আকা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সফর মাসকে নিয়ে অশুভ প্রথাগত মনোভাবকে রহিত ঘোষণা করতে গিয়ে ইরশাদ করেন: لَا صَفَرَ “সফর কিছুই না”।(বুখারী, কিতাবুত তিব্ব, বাবুল জুযাম, ৪/২৪, হাদীস- ৫৭০৭) হযরত আল্লামা মাওলানা শাহ আব্দলু হক মুহাদ্দিস দেহলবী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ হাদীস শরীফটির ব্যাখ্যায় লিখেন: সাধারণ লোকেরা এই সফর মাসটিকে বালা-মুসিবত ও বিপদাপদ অবতীর্ণ হওয়ার মাস বলে মনে করে, এই মনোভাব ভুল ও রহিত, এর কোন বাস্তবতা নাই। (আশিআতুল লুমআত (ফার্সি), ৩/৬৬৪)
সদরুশ শরীয়ত, বদরুত তরিকত হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ লিখেন: মানুষ সফর মাসকে অলক্ষুণে হিসাবে জানে, এই মাসে তারা বিয়ে শাদী করেনা, কন্যাদান করেনা, এ ধরনের আরো অনেক কাজ তারা করেনা, কোথাও সফর করেনা, বিশেষ করে সফর মাসের প্রথম তেরটি দিনকে অনেক বেশি অলক্ষুণে বলে মনে করতো এসব হলো অজ্ঞতাজনিত কথা। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে: ‘সফর কোন কিছুই না’, অর্থাৎ এটিকে অলক্ষুণে বলে মনে করা মানুষের ভুল। অনুরূপভাবে যিলকাদ মাসকেও অনেক মানুষ খারাপ মনে করে থাকে, এটিকে বলে শূন্যের মাস, এটিও ভুল এবং প্রতি মাসের ৩, ১৩, ২৩, ৮, ১৮, ২৮ তারিখগুলোকে অনর্থক মনে করে। এ রূপ মনে করাও অনর্থক। (বাহারে শরীয়ত, ৩/৬৫৯)
অপয়া নয় কোন দিন?
আল্লামা সায়্যিদ মুহাম্মদ আমীন বিন ওমর বিন আব্দুল আযীয শামী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ লিখেন; আল্লামা হামেদ আফান্দী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হলো: কিছু কিছু তারিখ কি অলক্ষুণে এবং কিছু কিছু তারিখ কি বরকতময় হয়ে থাকে? যা সফর করা এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করার জন্য উপযুক্ত নয়? তিনি উত্তর দিলেন: ‘যেই ব্যক্তি এই প্রশ্ন করে যে, কিছু কিছু তারিখ কি অলক্ষুণে, তাকে সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে না, তার কাজটিকে অজ্ঞতা বলা হবে, তার নিন্দাবাদ করতে হবে, এমন মনে করা ইহুদীদেরই পদ্ধতি, এসব মুসলমানদের নিয়ম নয়, যারা আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভরসা করে চলে। (তানকীহুল ফাতাওয়া আল হামেদিয়া, ২/৩৬৭)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! কিছু কিছু সময় অবশ্যই বরকতময় এবং মহৎ হতেই পারে। যেমন; রমযান, রবিউল আউয়াল, জুমা মোবারকের দিন ইত্যাদি। কিন্তু কোন মাস বা দিন কখনো অলক্ষুণে হতে পারে না। মিরাতুল মানাজীহ কিতাবে উল্লেখ আছে; ইসলামে কোন মাস, কোন দিন কিংবা কোন মুহূর্ত অলক্ষুণে নয়। তবে কিছু কিছু দিন বরকতময়। (মিরাতুল মানাজীহ, ৫/৪৮৪) তাফসীরে রূহুল বয়ানে উল্লেখ রয়েছে: সফর ইত্যাদি কোন মাস কিংবা বিশেষ সময়কে অলক্ষুণে মনে করা সঠিক নয়, সকল মুহূর্ত ও সময় আল্লাহ তায়ালারই বানানো এবং সেগুলোতে মানুষের কাজকর্ম সংঘটিত হয়, যেই সময়ে মুমিন বান্দা আল্লাহ তায়ালার ইবাদত-বন্দেগীতে ব্যস্ত হয়ে যায়, সেই সময়টি বরকতময় হয়ে যায় এবং যেই সময়টিতে আল্লাহ তায়ালার অবাধ্যতা করা হয়, সেই সময়টি সেই বান্দাটির জন্য অলক্ষুণে। মূলতঃ ধ্বংস তো গুনাহের মধ্যেই নিহিত।(তাফসীরে রূহুল বয়ান, ৩/৪২৮)
সফর মাসও অন্যান্য মাসগুলোর ন্যায় একটি মাস। অন্যান্য মাসগুলোতে যেমন আল্লাহ তায়ালার দয়া ও অনুগ্রহের বৃষ্টি বর্ষিত হয়, এই মাসটিতেও তা হতে পারে। এই মাসটিকে তো ‘সফরুল মুযাফফর’ই বলা হয়ে থাকে অর্থাৎ সাফল্যের মাস। এই মাস কীভাবে অলক্ষুণে হতে পারে? যদি কোন ব্যক্তি এই মাসটিতে শরীয়তের নিয়ম-নীতি অনুযায়ী চলে, নেক আমল করে, গুনাহ থেকে বিরত থাকে, তবে এই মাসটি তার জন্য অবশ্যই বরকতময়। পক্ষান্তরে খারাপ কোন কাজের মাধ্যমে যদি মাসটি অতিবাহিত করে, জায়িয না-জায়িয ও হারাম-হালালের পার্থক্য না করে, তবে তো সেই ব্যক্তির ধ্বংসের জন্য তার গুনাহের ভয়াবহতাই যথেষ্ট। চাই তা সফর মাসই হোক, বা অন্য যে কোন মাসের যে কোন সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা হোক। তার উপর যদি কোন ধরনের বিপদ অবতীর্ণ হয়, তবে তো তা তার এই মন্দ আমলেরই ফলাফল।
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
(২) সফরুল মুযাফফরের শেষ বুধবার পালন করা
সদরুশ শরীয়ত, বদরুত তরিকত হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ লিখেন: সফর মাসের শেষ বুধবার ভারত উপমাহদেশে অধিকহারে পালন করা হয়, লোকেরা নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়, আনন্দ ভ্রমণ ও শিকারে বের হয়, পুরি বানায়, গোসল করে, আনন্দ উদযাপন করে, আর বলে: হুযুরে আকদস صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এই দিনে সুস্থতার গোসল করেছিলেন এবং মদীনা শরীফের বাইরে সফরে গিয়েছিলেন, এসব কথা ভিত্তিহীন বরং এই দিনগুলোতে হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর রোগ প্রচন্ড ছিলো, এসব কথা বাস্তবতা বিরুদ্ধ। কেউ কেউ বলে থাকে: এই দিনে বালা-মুসিবত অবতীর্ণ হয়, এ ধরনের আরো অনেক কথা বলা হয়ে থাকে, সবই ভিত্তিহীন। (বাহারে শরীয়ত, ৩/৬৫৯)
সফর মাসে সংঘটিত হওয়া বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা
۞ প্রথম হিজরী সনের সফরুল মুযাফফর মাসে হযরত সায়্যিদুনা আলী মুরতাদা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর সাথে খাতুনে জান্নাত হযরত সায়্যিদাতুনা ফাতেমাতুয যাহরা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا এর শাদী মোবারক অনুষ্ঠিত হয়। (আল কামিলু ফিত তারীখ, ২/১২)
۞ সপ্তম হিজরী সনের সফরুল মুযাফফর মাসে মুসলমানদের হাতে খাইবার বিজয় হয়। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৩/৩৯২)
۞ سَيْفُ الله হযরত সায়্যিদুনা খালিদ বিন ওয়ালীদ, হযরত সায়্যিদুনা আমর বিন আস এবং হযরত সায়্যিদুনা ওসমান বিন তালহা আবদরী عَلَيْهِمُ الرِّضْوَان অষ্টম হিজরীর সফরুল মুযাফফর মাসে রাসূলূল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দরবারে উপস্থিত হয়ে ইসলাম কবুল করেন।(আল কামিলু ফিত তারীখ, ২/১০৯)
۞ মাদায়িন (যেখানে কিসরার প্রাসাদ ছিলো) বিজয় হয় ষোড়শ হিজরীর সফরুল মুযাফফর মাসেই।করেন।(আল কামিলু ফিত তারীখ, ২/৩৫৭)
এখনও কি আপনারা সফর মাসকে অলক্ষুণে বলে মনে করবেন? অবশ্যই না।
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
(৩) হাঁচিকেও অশুভ মনে করা
কেউ কেউ হাঁচিকে অশুভ বলে মনে করে, কোন কাজে যাওয়ার সময় যদি নিজের কিংবা অন্য কারো হাঁচি আসে, তবে এরূপ অশুভ প্রথাটি প্রচলিত যে, কাজটি হবে না। এরূপ করা একেবারে অজ্ঞতা ও মুর্খতারই প্রমাণ বহন করে। আ’লা হযরত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত শাহ ইমাম আহমদ রযা খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: হাঁচি ভাল জিনিস, এটিকে অশুভ মনে করা ভারতের মুশরিকদেরই অপবিত্র অন্ধ বিশ্বাস। হাদীস শরীফে(এটি হযরত ওমর ফারুকে رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর উক্তি) তো বলা হয়েছে لَعَطْسَةٌ واحِدَةٌ عِنْدَ حَدِيْثٍ اَحَبُّ اَلَيَّ مِنْ شَاهِدٍ عَدْلٍ অর্থাৎ কথা বলার সময় হাঁচি আসা এক ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী* স্বরূপ।(নাওয়াদিরুল উসূল, ২/৭৭৪, হাদীস- ১০৬৪।) অর্থাৎ যা কিছু বর্ণনা করা হচ্ছে তা সত্য কি মিথ্যা তা বলা যাচ্ছিলো না এবং এমন সময় কারো হাঁচি এলো, তবে তা এই কথার সত্যতার প্রমাণ বহন করে(কানযুল উম্মাল, ৯/৬৯, হাদীস- ২৫৫৩৩।) আর এও বর্ণিত আছে যে, দোয়ার সময় হাঁচি আসা কবুল হওয়ার দলিল(আল মু’জামুল কবীর, ২২/৩৩৬, হাদীস- ৮৪৩)। মোটকথা, হাঁচি হলো একটি পছন্দনীয় জিনিস। তবে যে হাঁচি নামাযে আসে, সেটির ব্যাপারে হাদীস শরীফে শয়তানের পক্ষ থেকে বলে গণ্য করা হয়েছে (তিরমিযী, কিতাবুল আদব, বাবু মা’জা আন্নাল উতাস, ৪/৩৪৪, হাদীস- ২৭৫৭) (মালফূযাত, ৩১৯, ৩২২ পৃষ্ঠা)
*আল্লামা আব্দুল মুস্তফা আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ লিখেন: এখন একবার ভেবে দেখুন, প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم যেখানে হাঁচিকে “ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী” বলে উপাধি দিয়েছেন, সেখানে এহেন উত্তম একটি হাঁচি কীভাবে অশুভ ইঙ্গিতের উপলক্ষ হতে পারে? তাই যারা এই ধরনের বিশ্বাস রাখে যে, হাঁচি একটি অশুভ ইঙ্গিত এবং অলক্ষুণে জিনিস, তাদের তাওবা করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদেরকে সুন্নাতের অনুসারী হওয়ার এবং শরীয়তের অনুসরন করার তৌফিক দান করুন। আমীন! (জান্নাতী জেওর)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
(৪)শাওয়াল মাসে বিয়ে শাদী না করা
শরীয়ত কোন মাস বা ঋতুতে বিয়ে করা নিষেধ করেনি, কিন্তু কিছু অজ্ঞ লোক বিশেষ কতগুলো মাস বা দিনে বিয়ে করাকে অমঙ্গল বলে মনে করে। তারা সন্দেহ করে যে, এসব মাসে বা দিনে যেসব বিয়ে হয়, সেগুলোতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক ভাল হয় না। তাদের মধ্যে সেই ধরনের পেম্র -প্রীতি ও ভালবাসা জন্ম নেয় না, যা একটি আদর্শ পরিবারে থাকা দরকার। কোন কোন জায়গায় শাওয়াল মাসকেও এ ধরনের মাস হিসাবে গণ্য করা হয়। জাহেলিয়্যতের যুগে লোকেরা শাওয়াল মাসে বিয়ে করা কিংবা কন্যাদান করাকে অমঙ্গল বলে মনে করতো, তারা বলতো: এই মাসটিতে বিয়ে করা ভাল নয়। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে একতা-ভালবাসা হয় না। এর একটি কারণ এও বলা হয়ে থাকে যে, কোন যুগে শাওয়াল মাসে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়েছিলো। এই রোগে অনেক গৃহবধূ মারা যায়, তাই শাওয়াল মাসে বিয়ে হওয়াকে লোকেরা অশুভ বলে মনে করে। অথচ পবিত্র শরীয়ত এই অশুভ প্রথাটিকে রহিত করে দিয়েছে। উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا বলেন: নবী করীম, রউফুর রহীম, রাসুলে আমীন صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমাকেও বিয়ে করেছেন শাওয়াল মাসেই এবং এই মাসেই আমাকে বিদায় দেয়া হয়েছিলো, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّمএর নিকট আমার চাইতে অধিক প্রিয় কোন বিবিই ছিলেন না। (তাফসীরে রূহুল বয়ান, ৩/৪২৮)
বিশেষ তারিখে বিয়ে না করা নিয়ে প্রশ্নোত্তর
আমার আক্বা আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর নিকট প্রশ্ন করা হলো: অধিকাংশ লোক ৩, ১৩ কিংবা ২৩, ৮, ১৮, ২৮ তারিখ এবং বৃহস্পতিবার, রবিবার, বুধবার ইত্যাদিতে বিয়ে করে না। তাদের বিশ্বাস যে, তাতে খুবই ক্ষতি সাধিত হবে। তাদের ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কী?
আ’লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ উত্তরে বললেন: এসব কিছু রহিত ও ভিত্তিহীন। وَاللهُ تَعَالى اَعْلَمُ (ফতোয়ায়ে রযবীয়া, ২৩/২৭২)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা “মুহাম্মদ ইলয়াস আত্তার” কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত ৯৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত "অশুভ প্রথা" নামক রিসালার ২২-৩০ এবং ৩৬-৪৩ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই রিসালাটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন। অন্যকে উপহার দিন।
ইসলামীক বাংলা বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন