প্রত্যেক দিনের কাযা হয় মাত্র ২০ রাকাত। ফজরের ২ রাকাত, জোহরের ৪ রাকাত, আছরের ৪ রাকাত, মাগরিবের ৩ রাকাত, ইশার ৪ রাকাত এবং বিতরের ৩ রাকাত মিলে মোট ২০ রাকাত। আর এভাবেই নিয়্যত করবে যে; “সর্বপ্রথম ফযরের যে নামায আমার উপর কাযা রয়েছে তা আমি আদায় করে দিচ্ছি।” প্রত্যেক নামাযে এভাবেই নিয়্যত করবে। আর যার যিম্মায় অধিক নামায কাযা রয়েছে সে সহজের জন্য এভাবে পড়লেও জায়েয হবে যে, প্রত্যেক রুকু ও সিজদাতে ৩+৩ বার سُبْحٰنَ رَبِّىَ الْعَظِيْم, سُبْحٰنَ رَبِّىَ الْاَ عْلٰى পড়ার পরিবর্তে মাত্র ১+১ বার পড়বে। কিন্তু সর্বদা এবং সব ধরণের নামাযে এটা খেয়াল রাখা বাঞ্চনীয় যে, রুকুতে পরিপূর্ণভাবে পৌঁছার পরেই “سُبْحٰنَ”এর সীন শুরু করবে (এর আগে নয়।) এবং “عَظِيْم” শব্দের মীম পড়া শেষ করেই রুকু থেকে মাথা উঠাবে। এরূপ সিজদাতেও করতে হবে। সহজতার এক পদ্ধতিতো এটা হলো। আর “দ্বিতীয় পদ্ধতি” এই যে, ফরয নামায সমূহের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতের মধ্যে اَلْحَمْدُ পড়ার পরিবর্তে শুধুমাত্র ৩ বার সুবহানাল্লাহ পড়ে রুকুতে চলে যাবে। কিন্তু বিতরের প্রত্যেক রাকাতেই اَلْحَمْدُ এবং সুরা অবশ্যই পড়তে হবে। আর “তৃতীয় সহজতর পদ্ধতি” এই যে, শেষ বৈঠকে তাশাহুদ অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাত এর পরে উভয় দরূদ শরীফ এবং দোয়ায়ে মাছুরার পরিবর্তে শুধু اَللّٰہُمَّ صَلِّ عَلٰی مُحَمَّدٍ وَّاٰلِهٖ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নিবে। আর “চতুর্থ সহজতর পদ্ধতি হলো, বিতরের ৩য় রাকাতের মধ্যে দোয়ায়ে কুনুত এর পরিবর্তে “اَللهُ اَکْبَرُ” বলে মাত্র একবার কিংবা তিনবার رَبِّ اغْفِرْ لِىْ পড়ে নিবে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া হতে সংগৃহীত, ৮ম খন্ড, ১৫৭ পৃষ্ঠা)
মনে রাখবেন! সহজতার এই পদ্ধতির অভ্যাস কখনো বানাবেন না। সামগ্রিক নামায সুন্নাত মোতাবেক আদায় করবেন এবং তাতে ফরয, ওয়াজীব সমূহের সাথে সাথে সুন্নাত ও মুস্তাহাব সমূহের ও খেয়াল রাখবেন।
কসর নামাযের কাযা
যদি সফর অবস্থায় কাযাকৃত নামায ইকামত (স্থায়ী বসবাসকালীন) অবস্থায় পড়ে দেয়ার ইচ্ছা করেন তাহলে কসরই পড়তে হবে। আর ইকামত অবস্থায় কাযাকৃত নামায সফরকালীন সময়ে আদায় করলে সম্পূর্ণ নামাযই পড়তে হবে। কসর পড়া যাবে না। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১২১ পৃষ্ঠা)
ধর্মদ্রোহীতা কালীন নামায
যে ব্যক্তি (আল্লাহর পানাহ) ধর্মদ্রোহী হয়ে গেছে অতঃপর পুনরায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে, তার উপর ধর্মদ্রোহীতা কালীন নামায সমূহ কাযা আদায় করা আবশ্যক নয়। তবে মুরতাদ হওয়ার পূর্বে ইসলাম ধর্মে থাকাকালীন সময়ে যে নামাযগুলো সে পড়েনি, তা (ওয়াজীব) অবশ্যই তাকে কাযা আদায় করে দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৬৪৭ পৃষ্ঠা)
সন্তান প্রসবকালীন সময়ের নামায
ধাত্রী নামায আদায় করতে গেলে যদি সন্তান মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে ধাত্রীর জন্য সে ওয়াক্তের নামায কাযা করা জায়িজ হবে এবং এটা তার জন্য নামায কাযা করার একটি গ্রহণযোগ্য কারণ হিসাবে বিবেচ্য হবে। সন্তানের মাথা বেরিয়ে আসল কিন্তু নিফাসের পূর্বেই নামাযের সময় শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হলে সন্তানের মাতার উপর সে ওয়াক্তের নামায আদায় করা ফরয হবে। নামায না পড়লে গুনাহগার হবে। এমতাবস্থায় সে কোন পাত্রে সন্তানের মাথা রেখে যাতে তার ক্ষতি না হয় নামায আদায় করে নিবে। আর যদি এ পদ্ধতিতেও সন্তান মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে তার জন্য নামায দেরী করে আদায় ক্ষমাযোগ্য হবে। নিফাস থেকে পবিত্র হয়ে সে উক্ত নামায কাযা পড়ে দিবে। (প্রাগুক্ত, ৬২৭ পৃষ্ঠা)
অসুস্থ ব্যক্তির জন্য নামায কখন ক্ষমাযোগ্য
এমন অসুস্থ ব্যক্তি যে ইশারায় নামায আদায় করতে পারছে না। তার এ অবস্থা যদি একাধারে ছয় ওয়াক্ত নামাযের সময় পর্যন্ত থাকে, তাহলে এমন অসুস্থ অবস্থায় তার যে সব নামায ছুটে গিয়েছে তার কাযা ওয়াজীব হবে না। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১২১ পৃষ্ঠা)
সারা জীবনের নামায পূনরায় আদায় করা
যার আদায়কৃত নামাযে ঘাটতি, অপূর্ণতা থাকে বলে ধারণা হয় সে যদি সারা জীবনের নামাযকে পূনরায় আদায় করে নেয়, তাহলে ভাল কথা। আর যদি কোন রকমের অপূর্ণতা না থাকে তাহলে এমন করার প্রয়োজন নেই। আর যদি ঐ নামায পূনরায় আদায় করে দিতে চায়, তাহলে ফযর ও আছরের পরে পড়বে না। আর সকল রাকাতগুলোতে (সূরা ফাতিহা’র সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়বে) আদায় করবে এবং বিতর নামাযে দোয়ায়ে কুনুত পড়ে তৃতীয় রাকাতের পরে কা’দা করে (বৈঠকে বসে) এর সাথে আরো অপর একটি রাকাত মিলিয়ে চার রাকাত পরিপূর্ণ করে নামায শেষ করবে (আর নামায কবুল হয়ে থাকলে যেন এ নামায নফল নামায হিসেবে গণ্য হয়। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১২৪ পৃষ্ঠা)
কাযা শব্দ উচ্চারণ করতে ভুলে যায় তখন কি করবে?
আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ আহমদ রযা খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: আমাদের মাযহাবের ওলামায়ে কিরাম স্পষ্ট বর্ণনা করেছেন: ‘কাযা’ নামায ‘আদা’ নামাযের নিয়্যত দ্বারা, অনুরূপ ‘আদা’ নামায ‘কাযা’ নামাযের নিয়্যত দ্বারা আদায় করলে উভয়ই সহীহ ও বিশুদ্ধ হবে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংশোধিত) , ৮ম খন্ড, ১৬১ পৃষ্ঠা)
কাযা নামায (আদায় করা) নফল নামায আদায় করা থেকে উত্তম
ফতোওয়ায়ে শামীতে বর্ণিত আছে: কাযা নামায আদায় করা নফল নামায আদায় করা থেকে উত্তম এবং গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, চাশতের নামায, সালাতুত তাসবীহ এবং ঐ নামায যেগুলোর ব্যাপারে হাদীসে মোবারকায় বর্ণিত আছে।যেমন- তাহাইয়াতুল মসজিদ, আসরের প্রথম চার রাকাত (সুন্নাতে গাইর মুয়াক্কাদা) এবং মাগরিবের পরে ছয় রাকাত আদায় করতে হবে। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৬৪৬ পৃষ্ঠা) মনে রাখবেন! অবশ্য সুন্নাতে গাইর মুয়াক্কাদা এবং হাদীস সমূহের মধ্যে বর্ণিত নির্দিষ্ট নফল সমূহ পড়লে, সাওয়াবের হকদার হবে কিন্তু ঐ সব নামায না পড়ার কারণে কোন গুনাহ নেই। চাই তার দায়িত্বে কাযা নামায থাকুক বা না থাকুক।
ফযর ও আছরের নামাযের পরে নফল নামায আদায় করা যাবে না
ফযর ও আছরের নামাযের পরে ঐ সকল নফল নামায আদায় করা মাকরূহে তাহরিমী হবে যা নিজ ইচ্ছাধীন হয়। যদিও তা তাহিয়্যাতুল মসজিদ এর নামায হয়। আর ঐ সকল নামাযও যা অন্য কাজের জন্য আবশ্যক হয়েছে যেমন- মান্নতের ও তাওয়াফের নফল নামায সমূহ, আর ঐ সকল নফল নামাযও যা শুরু করে ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। যদিও তা ফযর ও আছরের সুন্নাত ই হোক না কেন। (দুরের মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৪-৪৫ পৃষ্ঠা) কাযা নামায আদায়ের জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় সীমা নেই। যখনই আদায় করা হবে তখনই দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। কিন্তু সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও দ্বিপ্রহর এ তিন সময়ে নামায আদায় করা যাবে না। কেননা, উক্ত সময়গুলোর মধ্যে নামায আদায় করা জায়েয নেই। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ৫২ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭০২ পৃষ্ঠা)
জোহরের পূর্বের চার রাকাত সুন্নাত যদি আদায় করতে না পারেন তখন কি করবেন?
যদি জোহরের ফরয নামায আগে পড়ে নেন, তবে জোহরের পরের দুই রাকাত সুন্নাত আদায় করেই পূর্বেই চার রাকাত সুন্নাত পড়ে নিবেন। যেমন- আ’লা হযরত رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বর্ণনা করেন: জোহরের চার রাকাত সুন্নাত যদি ফরযের পূর্বে আদায় করা না হয়, তাহলে ফরযের পরে বরং গ্রহণযোগ্য মতানুসারে জোহরের পরের দুই রাকাত সুন্নাত আদায় করেই পূর্বের চার রাকাত সুন্নাত আদায় করতে হবে। তবে শর্ত হলো, তখনও জোহরের সময় অবশিষ্ট থাকতে হবে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংশোধিত) , ৮ম খন্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা)
ফজরের সুন্নাত যদি অবশিষ্ট থেকে যায় তখন কি করবেন?
সুন্নাত আদায় করতে গিয়ে যদি ফজরের জামাআত চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে সুন্নাত না পড়েই জামাআতে শরীক হয়ে যাবেন। কিন্তু ফরজের সালাম ফেরানোর পর পরই ঐ সুন্নাত সমুহ পড়ে দেয়া জায়েজ নেই। সুর্যোদয় হওয়ার কমপক্ষে বিশ মিনিট পর থেকে নিয়ে ‘দাহওয়ায়ে কুবরা’ দ্বিপ্রহর তথা সূর্য ঠিক সোজা স্থির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়ের যে কোন সময়ে আদায় করে নেয়া মুস্তাহাব। এর পরে মুস্তাহাবও নয়।
মাগরিবের সময় মূলতঃ কি খুব সংকীর্ণ কিনা?
মাগরিবের নামাযের সময় সূর্য ডুবে যাওয়ার পর থেকে ইশার সময়ের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত। তবে এ সময়টি স্থানকাল ভেদে কম-বেশি হয়। যেমন- বাবুল মদিনা করাচীতে নামাযের সময়সূচীর নকশা মোতাবেক মাগরিবের সময় কমপক্ষে ১ ঘন্টা ১৮ মিনিট।
ফোকাহায়ে কেরাম رَحِمَہُمُ اللہُ تَعَالٰی বলেন: “মেঘের দিন (যেদিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে) ব্যতীত সর্বদা মাগরিবের নামায তাড়াতাড়ি আদায় করা মুস্তাহাব। আর দুই রাকাত নামায আদায় করার সময়ের চেয়ে বেশী সময় পর্যন্ত মাগরীবকে বিলম্ব করলে নামায মাকরূহে তানযিহী হবে। আর সফর, অসুস্থতা ইত্যাদি কারণ ছাড়া অন্য কোন কারণে তারকা উদিত হওয়া পর্যন্ত মাগরিবকে বিলম্ব করলে নামায মাকরূহে তাহরিমী হবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৪৫৩ পৃষ্ঠা)
আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ আহমদ রযা খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: যতক্ষণ পর্যন্ত তারকারাজী স্পষ্টভাবে প্রকাশিত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত মাগরিবের মুস্তাহাব সময় থাকে। আর মাগরিবের নামায ততটুকু সময় পর্যন্ত বিলম্ব করে পড়া যে, বড় বড় তারকাগুলো তো বটে, এমন কি ছোট ছোট তারকাগুলোও উজ্জল হয়ে দেখা যায় তবে মাকরূহ হবে। (ফতোওয়ায়ে রযাবীয়া, ৫ম খন্ড, ১৫৩ পৃষ্ঠা) আর আছর ও ইশার পূর্বে যে রাকাত সমূহ রয়েছে তা হলো সুন্নাতে গাইরে মুয়াক্কাদা। এর কোন কাযা নেই।
নামাজে তারাবীহের কাযার বিধান কি?
যদি তারাবীহের নামায ছুটে যায়, তাহলে ঐ নামাযের কোন কাযা নেই। জামাআতের সাথে কিংবা একাকী কোনভাবে এর কাযা দিতে হবে না। আর যদি কেউ তারাবীহের কাযা আদায় করে থাকে তাহলে এটা আলাদা নফল নামায রূপে গণ্য হবে। তারাবীহের সাথে এর কোন সম্পর্ক থাকবে না। (তানবিরুল আবছার ওয়া দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৫৯৮ পৃষ্ঠা)
নামাযের ফিদিয়া
যাদের আত্মীয় স্বজন মারা গিয়েছে তারা অবশ্যই এ পর্বটি পড়ে নিবেনমৃত ব্যক্তির বয়স হিসাব করে তা থেকে মহিলার ক্ষেত্রে ৯ বছর আর পুরুষের ক্ষেত্রে ১২ বছর নাবালিগ সময় বাদ দিয়ে দিবে। এরপর যত বছর অবশিষ্ট থাকবে তা হিসাব করে দেখবে যে, কত বৎসর যাবৎ মৃত ব্যক্তি নামায আদায় করেনি বা রোযা রাখেনি, কিংবা সর্বাধিক কতদিনের নামায বা কতটি রোযা তার কাযা হয়েছিল তা ভালভাবে হিসাব করে দেখবে। আর ইচ্ছে করলে মৃত ব্যক্তির মোট বয়স থেকে না বালিগ কাল বাদ দিয়ে অবশিষ্ট সম্পূর্ণ বয়স হিসাব করে নিবে। অতঃপর প্রতি ওয়াক্ত নামাযের জন্য এক একটি (সদকায়ে ফিতর) আদায় করুন। প্রতিটি সদকায়ে ফিতরের পরিমাণ হবে আনুমানিক দুই কেজি থেকে ৮০ গ্রাম কম গম কিংবা তার আটা বা তার সমমূল্য টাকা। দৈনিক ছয় ওয়াক্ত নামায হিসাব করতে হবে। তন্মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয এবং এক ওয়াক্ত বিতর যা ওয়াজীব। যেমন ধরুন, দুই কেজি ৮০ গ্রাম গমের মূল্য ১২ টাকা। তাহলে এক দিনের নামাযের জন্য ফিদিয়া আসবে ৭২ টাকা। ৩০ দিনের নামাযের জন্য আসবে ২১৬০ টাকা। আর এক বৎসরের নামাযের জন্য আসবে প্রায় ২৫৯২০ টাকা। এভাবে কোন মৃত ব্যক্তি ৫০ বৎসর যাবৎ কাল নামায না পড়ে থাকলে, তার নামাযের জন্য ১২৯৬০০০ (বার লক্ষ ছিয়ানব্বই হাজার) টাকা ফিদিয়া দিতে হবে। স্পষ্টতঃ প্রত্যেক ব্যক্তি এ বিপুল পরিমাণ অর্থ ফিদিয়া স্বরূপ প্রদান করার সামর্থ্য রাখে না। তাই ওলামায়ে কিরামগণ رَحِمَہُمُ اللہُ تَعَالٰی ফিদিয়ার ক্ষেত্রে একটি শরীয়াত সম্মত হিলা উদ্ভাবন করেছেন। আর তা হলো;সে ৩০ দিনের নামাযের কাফ্ফারা হিসাবে ফিদিয়ার নিয়্যতে ২১৬০ টাকা কোন ফকীর (ফকীর ও মিসকীনের সংজ্ঞা পৃষ্ঠা নং ২৮-এ দেখুন) এর মালিকানায় দিয়ে দিবে। তাহলে এতে ৩০ দিনের নামাযের ফিদিয়া আদায় হয়ে গেলো। অতঃপর উক্ত ফকীর ব্যক্তি ঐ টাকা গুলো দাতাকে হিবা (উপহার) স্বরূপ দিয়ে দিবে। দাতা টাকাগুলো গ্রহণ করে আবার ৩০ দিনের নামাযের ফিদিয়ার নিয়্যতে পুনরায় উক্ত ফকীরকে দিয়ে দিবে। এভাবে আদান প্রদানের মাধ্যমে সকল নামাযের ফিদিয়া আদায় হয়ে যাবে। ত্রিশ দিনের টাকা দিয়ে যে হিলা করতে হবে তা বাধ্যতামূলক নয়। ইহা কেবলমাত্র বুঝানোর জন্য উদাহরণ স্বরূপ বলা হয়েছে। সুতরাং কারো হাতে যদি ৫০ বছরের ফিদিয়ার টাকা নগদ থাকে, তাহলে একবার প্রদান করার মাধ্যমেই ৫০ বছরের নামাযের ফিদিয়া আদায় হয়ে যাবে। আর ফিতরার টাকার হিসাব গমের বর্তমান বাজার দর দ্বারা নির্ধারণ করতে হবে। এভাবে প্রতিটি রোযার জন্যও একটি ফিতরা আদায় করতে হবে। নামাযের ফিদিয়া আদায় করার পর রোযার ফিদিয়াও একই পদ্ধতিতে আদায় করা যাবে। ধনী-গরীব সকলেই ফিদিয়া আদায়ের হিলা (পন্থা) অবলম্বন করতে পারেন। মৃতের ওয়ারিশরা যদি মৃত ব্যক্তির পক্ষে ফিদিয়া আদায়ের ক্ষেত্রে উপরোক্ত পন্থা অবলম্বন করে তাহলে তা মৃত ব্যক্তির জন্য বড়ই উপকার হবে। এতে মৃত ব্যক্তিও اِنْ شَآءَ اللّٰہ عَزَّوَجَلَّ ফরযের বোঝা থেকে মুক্তি লাভ করবে আর ওয়ারিশগণও অধিক সাওয়াবের ভাগী হবে। কিছু কিছু লোক মসজিদ মাদ্রাসা ইত্যাদিতে কুরআন শরীফের একটি কপি দান করে নিজেদের শান্তনা দিয়ে থাকে যে, আমরা মৃত ব্যক্তির সকল নামাযের ফিদিয়া আদায় করে দিয়েছি। কিন্তু এটা তাদের ভুল ধারণা মাত্র। (বিস্তারিত দেখুন: ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংশোধিত) , ৮ম খন্ড, ১৬৭ পৃষ্ঠা) মনে রাখবেন! মৃত ব্যক্তির নামাযের ফিদিয়া ছেলে এবং অন্যান্য ওয়ারিশদের মতো কোন সাধারণ মুসলমানও দিতে পারবে। (মিনহাতু খালিকি আলাল বাহরির রায়িক লিইবনে আবিদিন, ২য় খন্ড, ১৬০ পৃষ্ঠা)
মৃত মহিলার ফিদিয়া আদায়ের একটি মাসয়ালা
মহিলার হায়িয তথা মাসিক ঋতুস্রাব হওয়ার দিনগুলো যদি জানা থাকে তাহলে সে পরিমাণ দিন, আর জানা না থাকলে নয় বছরের পর থেকে প্রত্যেক মাস হতে তিন দিন করে বাদ দিয়ে অবশিষ্ট দিনগুলোর নামাযের ফিদিয়া আদায় করতে হবে। কিন্তু যতবারই ঐ মহিলা গর্ভবর্তী ছিলো গর্ভকালীন মাস সমূহ হতে হায়েজের দিনগুলো বাদ দেয়া যাবে না। কেননা, গর্ভকালীন সময়ে মহিলার মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ থাকে। অনুরূপ মহিলার নিফাসের দিনগুলো যদি জানা থাকে তাহলে প্রত্যেকবার সন্তান প্রসবের পর সে পরিমাণ দিন বাদ দিয়ে, আর জানা না থাকলে কোন দিন বাদ না দিয়ে মহিলার নামাযের ফিদিয়া আদায় করতে হবে। নিফাসের দিন জানা না থাকা অবস্থায় কোন দিন বাদ না দেয়ার কারণ হলো, নিফাসের সর্ব নি¤œ সময়সীমা শরীয়াত নির্ধারণ করেনি। যেভাবে হায়েজের ক্ষেত্রে তিনদিন নির্ধারণ করেছে। আর নিফাসের ক্ষেত্রে মাত্র এক মিনিট নিফাসের রক্ত বের হওয়ার পর পুনরায় তা বন্ধ হয়ে পবিত্র হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংশোধিত) , ৮ম খন্ড, ১৫৪ পৃষ্ঠা)
সায়্যিদ জাদাগণকে নামাযের ফিদিয়া দেয়া যাবে না
আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ কে সায়্যিদ জাদাগণ এবং অমুসলিমদেরকে নামাযের ফিদিয়া দেয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: এই সদকা (নামাযের ফিদিয়া) হযরত সা‘আদাতে কিরামের উপযুক্ত নয় এবং হিন্দু ও অপরাপর অমুসলিমরা এই সদকার উপযুক্ত নয়। এই দু’জনকে দেওয়ার ব্যাপারে প্রকৃতপক্ষে অনুমতি নেই। আর তাদেরকে দিলে আদায় হবে না। মুসলমান মিসকিন নিকটাত্মীয় হাশেমী ব্যতীত (অর্থাৎ মুসলমান আত্মীয়-স্বজন হাশেমী বংশ ব্যতীত) লোকদেরকে দেয়া দ্বিগুণ সাওয়াব। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংশোধিত) , ৮ম খন্ড, ১৬৬ পৃষ্ঠা)
১০০টি বেতের হিলা
শরয়ী হিলা তথা উপরোক্ত উপায় ও পদ্ধতি অবলম্বনের বৈধতা কুরআন হাদীস ও হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব সমূহ দ্বারা স্বীকৃত আছে। যেমন- হযরত সায়্যিদুনা আইয়ূব عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡہِ الصَّلٰوۃُ وَالسَّلَامএর অসুস্থ অবস্থায় তাঁর স্ত্রী মুহতরমা একদা তাঁর খিদমতে দেরীতে উপস্থিত হলে তিনি عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡہِ الصَّلٰوۃُ وَالسَّلَام শপথ করে বললেন: “আমি সুস্থ হলে তাঁকে ১০০টি চাবুক মারব। সুস্থ হওয়ার পর আল্লাহ্ তাআলা তাঁকে ১০০টি বেতযুক্ত একটি ঝাড়– নিয়ে মাত্র একবার প্রহার করার নির্দেশ প্রদান করেন। যেমন- আল্লাহ্ তাআলা পবিত্র কুরআনে ২৩তম পারায় সূরা সোআদ এর ৪৪নং আয়াতে ইরশাদ করেন:
وَ خُذۡ بِیَدِکَ ضِغۡثًا فَاضۡرِبۡ بِّہٖ وَ لَا تَحۡنَثۡ ؕ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন: তোমার হাতে একটি ঝাড়– নিয়ে তা দ্বারা প্রহার কর আর শপথ ভঙ্গ করিও না। (পারা-২৩, রুকু-১৩)
“ফতোওয়ায়ে আলমগিরীতে” হিলার একটি স্বতন্ত্র অধ্যায়ও রয়েছে, যার নাম “কিতাবুল হিয়ল”। ফতোওয়ায়ে আলমগীরী এর “কিতাবুল হিয়ল”এ বর্ণিত আছে, যে হিলা কারো হক নষ্ট করার জন্য বা তাতে সন্দেহ সৃষ্টি করার জন্য কিংবা বাতিল তথা অসত্য দ্বারা কাউকে ধোঁকা দেয়ার জন্য অবলম্বন করা হয়, সে হিলা মাকরূহ। আর যে হিলা মানুষ হারাম থেকে বাঁচার জন্য কিংবা হালাল বস্তুকে অর্জনের জন্য অবলম্বন করে থাকে তা ভাল ও বৈধ। এরূপ হিলা (পন্থা) অবলম্বনের বৈধতা মহান আল্লাহ্ তাআলার নিম্নোক্ত বাণীটি দ্বারা প্রমাণিত;
وَ خُذۡ بِیَدِکَ ضِغۡثًا فَاضۡرِبۡ بِّہٖ وَ لَا تَحۡنَثۡ ؕ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন: তোমার হাতে একটি ঝাড়– নিয়ে তা দ্বারা প্রহার কর আর শপথ ভঙ্গ করিও না। (পারা-২৩, ৪৪ পৃষ্ঠা) (আলমগিরী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৯০ পৃষ্ঠা)
কর্ণ ছেদনের প্রথা কখন থেকে শুরু হয়?
হিলার বৈধতার উপর আরেকটি দলিল দেখুন;হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُمَا থেকে বর্ণিত: একদা হযরত সায়্যিদাতুনা সারা ও হযরত সায়্যিদাতুনা হাজেরা رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہَا এর মাঝে সামান্য মনোমালিন্য হয়। এতে হযরত সায়্যিদাতুনা সারা رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہَا শপথ করে বললেন যে, আমি যদি সুযোগ পাই, তাহলে আমি হাজেরা رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہَا এর কোন অঙ্গ কেটে নেব। আল্লাহ্ তাআলা হযরত সায়্যিদুনা জিব্রাঈল عَلَیۡہِ السَّلَام কে হযরত সায়্যিদুনা ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡہِ الصَّلٰوۃُ وَالسَّلَام এর খিদমতে প্রেরণ করলেন যেন আপনি তারা উভয়ের মাঝে মীমাংসা করে দিন। হযরত সায়্যিদাতুনা সারা رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہَا আরয করলেন: مَاحِيْلَةُ يَمِيْنِىْ অর্থাৎ আমার শপথ থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কি? তখন হযরত সায়্যিদুনা ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡہِ الصَّلٰوۃُ وَالسَّلَام এর উপর ওহী অবতীর্ণ হয় যে, “আপনি হযরত সারা رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہَا কে নির্দেশ দিন যে, সে যেন হাজেরা رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہَا এর কর্ণ ছেদন করে দেয়।”তখন থেকে মহিলাদের কর্ণ ছেদনের প্রথার প্রচলন হয়। (গুমুজে উয়ুনুল বছায়ির লিল হামায়ী, ৩য় খন্ড, ২৯৫ পৃষ্ঠা)
গাভীর মাংসের হাদিয়া
উম্মুল মু’মিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہَا থেকে বর্ণিত; দো’জাহানের সুলতান, মাহবুবে রহমান, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর খেদমতে গাভীর মাংস হাজির করা হলে জনৈক ব্যক্তি আরয করলেন যে, এই মাংস গুলো হযরত সায়্যিদাতুনা বারিরাহ رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہَا এর উপর সদকা করা হয়েছে, তখন সায়্যিদুল মুরসালিন, হুযুর صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “هُوَ لَهَا صَدَقَةٌ وَلَنَا هَدِيَّةٌ অর্থাৎ ইহা বারিরাহ رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہَا এর জন্য সদকা ছিলো তবে আমাদের জন্য এটা হাদিয়া স্বরূপ।” (মুসলীম, ৫৪১ পৃষ্ঠা, হাদীস-১০৭৫)
যাকাতের শরয়ী হিলা
উপরোক্ত হাদিস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, হযরত সায়্যিদাতুনা বারিরাহ رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہَا যিনি সদকার হকদার ও যোগ্য ছিলেন, সদকা হিসাবে প্রাপ্ত গাভীর মাংস যদিও তাঁর رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہَا জন্য সদকা ছিলো, কিন্তু তিনি তা হাতে আসার পর যখন বারগাহে রিসালাতে পেশ করলেন, তখন তার হুকুম পরিবর্তন হয়ে গেলো এবং তা আর সদকা রইল না। অনুরূপ যাকাতের হকদার কোন ব্যক্তি যাকাত তার মালিকানায় নিয়ে নেয়ার পর উপহার হিসাবে যে কোন ব্যক্তিকে প্রদান করতে কিংবা মসজিদ ইত্যাদিতে দিতে পারবে। কেননা, উল্লেখিত যাকাতের হকদার ব্যক্তি যখন তা অপর ব্যক্তিকে উপহার হিসাবে দিয়ে দিল তখন তা আর যাকাত রইলনা, বরং তা হাদিয়া বা উপহার ইত্যাদিতে পরিণত হয়ে গেলো। ফোকাহায়ে কিরামগণ عَلَیۡہِمُ الرِّضۡوَان যাকাতের শরয়ী হিলার পদ্ধতি এভাবে বলেছেন: যাকাতের টাকা মৃত ব্যক্তির কাফন-দাফন কিংবা মসজিদ নির্মাণের কাজে ব্যয় করা যাবে না। কেননা, এতে ফকীরকে মালিক বানানো পাওয়া যাচ্ছে না। যদি কাফন দাফন কিংবা মসজিদ নির্মাণ ইত্যাদির কাজে যাকাতের টাকা ব্যয় করতে হয়, তাহলে এভাবে করতে হবে যে, প্রথমে যাকাতের টাকা কোন ফকীরের মালিকানায় দিয়ে দিতে হবে, এরপর ঐ ফকীর যাকাতের টাকা কাফন দাফন কিংবা মসজিদ নির্মাণ ইত্যাদি কাজে ব্যয় করবে। আর এভাবে তারা উভয়ই সাওয়াব পাবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮৯০ পৃষ্ঠা)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখেছেন! হিলায়ে শরয়ীর মাধ্যমে কাফন দাফন কিংবা মসজিদ নির্মাণের কাজেও যাকাতের টাকা ব্যবহার করা যাবে। কেননা, যাকাত মূলত: ফকীরদেরই হক ছিলো, ফকীর যখন তা গ্রহণ করল তখন সে তার মালিক হয়ে গেলো, এখন সে যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে। হিলায়ে শরয়ীর বরকতে দাতার যাকাতও আদায় হবে এবং ফকীরও মসজিদ ইত্যাদিতে দান করার কারণে সাওয়াবের ভাগী হবে। আর শরয়ী ফকীরকে হিলার মাসয়ালা অবশ্যই অবগত করাতে হবে।
ফকীরের সংজ্ঞা
ফকীর ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় (ক) যার কাছে কিছু না কিছু সম্পদ রয়েছে, কিন্তু তা নিসাবের সমপরিমাণ নয়। (খ) অথবা যার কাছে নিসাবের সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে, কিন্তু তা তার হাজতে আসলীয়া তথা প্রয়োজনীয় জীবন নির্বাহে ব্যয় হয়ে যায় (সেও ফকীর) ।যেমন-কারো কাছে থাকার বাসস্থান, ঘরের ব্যবহার্য আসবাবপত্র, আরোহণের জন্তু (স্কুটার কিংবা কার গাড়ি) কারিগরি যন্ত্রপাতি, পরিধানের কাপড়, সেবার চাকর-চাকরানী, শিক্ষা ও শিক্ষণের প্রয়োজনীয় ইসলামী বই পুস্তক আছে, কিন্তু তা তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত নয়। (গ) অনুরূপ ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি যার কাছে নিসাব পরিমাণ টাকা আছে ঠিক, কিন্তু ঋণ পরিশোধ করার পর তার কাছে আর নিসাব পরিমাণ সম্পদ অবশিষ্ট থাকে না, সেও ফকীর হিসাবে বিবেচিত হবে, যদিও তার কাছে একাধিক নিসাবের টাকা জমা থাকুক না কেন। (রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৩৩৩ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৯২৪ পৃষ্ঠা)
মিসকীনের সংজ্ঞা
মিসকীন ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, যার কাছে কিছুই নেই। এমন কি খাবার ও শরীর আবৃত করার জন্যও তাকে মানুষের নিকট হাত পাততে হয় এবং তার জন্য ভিক্ষা করা হালাল। ফকীরের জন্য (অর্থাৎ যার নিকট কমপক্ষে একদিনের খাবার ও পরিধানের ব্যবস্থা আছে) বিনা প্রয়োজনেও বিনা বাধ্যতায় ভিক্ষা করা হারাম। (ফতোওয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৮৭-১৮৮ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৯২৪ পৃষ্ঠা)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জানা গেলো, যে সমস্ত ভিক্ষুক উপার্জনে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও বিনা প্রয়োজনে ও বিনা বাধ্যতায় পেশা হিসাবে ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করেছে তারা অবশ্যই গুনাহগার হবে এবং জাহান্নামে যাওয়ার হকদার হবে। আর তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও যারা তাদেরকে দান খায়রাত করা বৈধ নয়।
--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত নামায বিষয়ের এনসাইক্লোপিডিয়া ও মাসাইল সম্পর্কিত “নামাযের আহকাম” নামক কিতাবের ২৩৩-২৪৫ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। কিতাবটি নিজে কিনুন, অন্যকে উপহার দিন।
যারা মোবাইলে (পিডিএফ) কিতাবটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন অথবা প্লে স্টোর থেকে এই কিতাবের অ্যাপ ফ্রি ইন্সটল করুন
ইসলামীক বাংলা বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন
কাযা নামায বিষয়ক আরো পড়ুন- প্রথম পর্ব, দ্বিতীয় পর্ব,
মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন