জমজমাট বাজারে রেশমী কাপড়ের একটি দোকানে দোকানটির কর্মচারী আল্লাহ তাআলার কাছে জান্নাত চেয়ে দোআ করছিল। এ অবস্থা দেখে দোকানের মালিকের হৃদয় নরম হয়ে গেল। দু’চোখ থেকে এমনভাবে অশ্রু গড়াতে শুরু করল যে, তার উভয় কান ও কাঁধ কাঁপতে লাগল। দোকানের মালিক সাথে সাথে দোকান বন্ধ করার নিদের্শ দিলেন, নিজের মাথার উপর কাপড় মুড়িয়ে তাড়াতাড়ি উঠে গেলেন, আর বলতে লাগলেন: আফসোস! আমরা আল্লাহ তাআলার প্রতি কতই যে ভয়হীন হয়ে গেছি। আমাদের মধ্য থেকে কেবল একজন লোক নিজের মন থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে জান্নাত চেয়ে নিচ্ছে। (এ তো অনেক সাহসিকতার আবেদন)। আমাদের মত গুনাহ্গারদের উচিত, আল্লাহ তাআলার কাছে (নিজেদের গুনাহের) ক্ষমা প্রার্থনা করা। সে দোকানের মালিক আল্লাহর ভয়ে অত্যন্ত ভীত ছিলেন। রাতে নামাযের জন্য যখন দাঁড়াতেন, তাঁর চোখ থেকে এমনভাবে অশ্রু বের হত যে, চাটাইয়ের উপর টপ টপ করে চোখের পানির ফোঁটা পড়ার শব্দ শোনা যেত, আর এত বেশী কান্না করতেন যে, আশেপাশের লোকজনের মনে তার প্রতি দয়া সৃষ্টি হত। [আল খায়রাতুল হিসান লিল হায়তামী হতে সংক্ষেপিত, ৫০, ৫৪ পৃষ্ঠা]
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা জানেন, তিনি কে ছিলেন? এই দোকানের মালিক ছিলেন কোটি কোটি হানাফী মতাবলম্বীদের এক মহান ইমাম সিরাজুল উম্মাহ, কাশেফুল গুম্মাহ্, ইমামে আযম, ফকীহে আফখাম, হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আবু হানীফা নো’মান বিন সাবিত رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ।
না কিউ করে নায আহ্লে সুন্নাত,
কে তুম ছে চম্কা নসীবে উম্মত।
সিরাজে উম্মত মিলা জু তুম ছা,
ইমামে আযম আবু হানীফা।
[ওয়াসায়েলে বখশিশ, ২৮৩ পৃষ্ঠা]
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
চারজন ইমামই বরহক
হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আযম আবু হানীফা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর পবিত্র নাম হল নো’মান। সম্মানিত পিতার নাম সাবিত। কুনিয়াত বা উপনাম আবু হানীফা। তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ৭০ হিজরীতে ইরাকের প্রসিদ্ধ শহর কূফায় জন্মগ্রহণ করেন, আর ১৫০ হিজরীর ২রা শাবান ৮০ বৎসর বয়সে ইন্তিকাল করেন। [নুযহাতুল ক্বারী, খন্ড- ১, পৃষ্ঠা- ১৬৯, ২১৯] আজও তাঁর মাজার শরীফ বাগদাদে জ্যোতিঃ বিচ্চুরণকারী ও মুসলিম বিশ্বের পবিত্র জিয়ারতের স্থান হিসাবে বিদ্যমান আছে। আয়িম্মায়ে আরবা অর্থাৎ চার ইমামই (ইমাম আযম আবু হানীফা, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُم বরহক (সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত)। তাদের প্রতি ভাল আকীদা পোষনকারী মুকাল্লিদীনরা বা অনুসরনকারীরা একে অপরের ভাই। তাদের পরস্পরের মধ্যে মতানৈক্যের কোন কারণ নেই। সায়্যিদুনা ইমাম আযম আবু হানীফা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ চারজন ইমামের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তার একটি কারণ হল, এদের চারজনের মধ্যে শুধুমাত্র তিনিই তাবেঈ। ‘তাবেঈ’ বলা হয়, যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে কোন সাহাবী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُএর সাক্ষাত পেয়েছেন, আর ঈমানের সাথে মৃত্যু বরণ করেছেন। [আল খায়রাতুল হিসান, ৩৩ পৃষ্ঠা] বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কিছু সাহাবায়ে কেরামের عَلَيْهِمُ الرِّضْوَان সাক্ষাতের সৌভাগ্যও অর্জন করেন, আর কিছু সাহাবী….. হতে সরাসরি সরওয়ারে কায়েনাত, শফিয়ে উম্মত, রাসুলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّمএর বাণীও শ্রবণ করেন। যেমন: হযরত সায়্যিদুনা ওয়াছেলা ইবনে আসকা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُথেকে শ্রবন করে ইমাম আযম আবু হানীফা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এই রেওয়ায়তটি বর্ণনা করেন, আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবীবে লাবীব, নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন:“আপন ভাইয়ের বিপদে আনন্দ প্রকাশ করো না। কেননা, আল্লাহ তাআলা তার উপর দয়া করবেন আর তোমাকে তাতে লিপ্ত করে দিবেন। [সুনানে তিরমিযী, ১ খন্ড, ২২৭ পৃষ্ঠা, হাদিস- ২৫১৪]
হে নাম নো’মান ইবনে সাবিত,
আবু হানীফা হে উনকি কুনিয়ত।
পুকারতা হে ইয়ে কেহ কে আলম,
ইমাম আযম আবু হানীফা। [ওয়াসায়িলে বখশিশ, পৃষ্ঠা- ২৮৩]
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّدمَّد
হানাফীদের জন্য মাগফিরাতের সুসংবাদ
হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ জীবনে ৫৫ বার হজ্ব পালন করেন। যখন সর্বশেষ হজ্ব করার সৌভাগ্য অর্জন করেন, তখন কাবা শরীফের খাদেমরা তাঁর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ প্রবল ইচ্ছার করণে কাবা শরীফের দরজা খুলে দেন। তিনি অত্যন্ত বিনম্র সহকারে ভিতরে প্রবেশ করেন, আর বাইতুল্লাহর দুইটি স্তম্ভের মাঝখানে দন্ডায়মান হয়ে দুই রাকাত নামাযে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ খতম করেন। অতঃপর অনেকক্ষণ ধরে কাঁন্নাকাটি করে মুনাজাত করতে লাগলেন। তিনি দোআয় মগ্ন ছিলেন। এমতাবস্থায় বাইতুল্লাহর এক কোণা হতে আওয়াজ এল, ‘তুমি ভালভাবে আমার মারেফাত (পরিচিতি জ্ঞান) অর্জন করতে পেরেছ আর অত্যন্ত ইখলাসের সাথে খেদমত করছ। আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম আর কিয়ামত পর্যন্ত যারা তোমার মাযহাবের উপর অটল থাকবে (অর্থাৎ তোমার অনুসারী হবে) তাদেরকেও ক্ষমা করে দিলাম।’ [দুররে মুখতার, ১ম খন্ড, ১২৬, ১২৭ পৃষ্ঠা] اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ।আমরা কতই সৌভাগ্যবান যে, হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আযম আবু হানীফা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর দয়ার দামান আমাদের হাতেই রয়েছে।
মরো শাহা! যেরে সবজে গুম্বদ,
হো মেরা মাদ্ফন বকীয়ে গারকাদ
করম হো বাহরে রাসুলে আকরাম,
ইমামে আযম আবু হানীফা। [ওয়াসায়িলে বখশিশ, ২৮৩ পৃষ্ঠা]
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
শাহে আনাম, নবী করীম ﷺ এর পক্ষ হতে সালামের জবাব
আমাদের ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর উপর শাহানশাহে উমাম (উম্মতের বাদশাহ্), রাসুলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর অনেক দয়া ও বদান্যতা ছিল। মদীনা শরীফে زَادَهَا اللهُ شَرَفًا وَّتَعْظِيْمًا যখন তিনি ছরকারে নামদার, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নূরানী রওজায় উপস্থিত হয়ে এভাবে সালাম পেশ করলেন: اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا سَيِّدِ الْمُرسَلِيْن। তখন রওজায়ে আন্ওয়ার হতে আওয়াজ এল: وَعَلَيْكَ السَّلَامُ يَا اِمَامَ الْمُسلِمِيْن [তাজকিরাতুল আউলিয়া, ১৮২ পৃষ্ঠা]
তোমহারে দরবার কা গাদা হো,
মে সায়িলে ইশ্কে মুস্তফা হো,
করো করম বাহ্রে গাউছে আযম,
ইমামে আযম আবু হানীফা। [ওয়াসায়েলে বখশিশ, ২৮৩ পৃষ্ঠা]
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
তাজেদারে রিসালত ﷺ এর সুসংবাদ
হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আযম আবু হানীফা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ যখন ইলম অর্জন থেকে অবসর হলেন, তখন তিনি নির্জনতা অবলম্বনের ইচ্ছা পোষণ করলেন। তিনি এক রাত্রে স্বপ্নে নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দিদার লাভ করলেন। রাসুলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “হে আবু হানীফা! আল্লাহ তাআলা তোমাকে আমার সুন্নাতকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। তুমি কখনো নির্জনতা অবলম্বনের ইচ্ছা পোষণ করো না।” [তাজকিরাতুল আউলিয়া, ১৮৬ পৃষ্ঠা]
আতা হো ‘খওফে খোদা’ খোদারা,
দো উল্ফতে মুস্তফা খোদারা
করো আমল সুন্নাতো পে হার দম,
ইমামে আযম আবু হানীফা। [ওয়াসায়েলে বখশিশ, ২৮৩ পৃষ্ঠা]
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
দিন-রাতের আমলসমূহ
নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم স্বপ্নে তাশরিফ এনে হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কে উৎসাহ প্রদান করেন এবং সুন্নাত খেদমত আঞ্জাম দেবার জন্য আদেশ দেন। যার ফলশ্রুতিতে আমাদের ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُএর সুন্নাত খেদমতে আত্মনিয়োগ এবং ইবাদতের প্রতি নিজের আগ্রহের অবস্থা লক্ষ্যনীয়। যেমন: হযরত মিস’আর ইবনে কিদাম رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেছেন: একদা আমি ইমাম আযম আবু হানীফা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মসজিদে হাজির হলাম। দেখলাম, ফজরের নামায আদায় করার পর তিনি লোকজনকে কেবল নামাযের বিরতি ব্যতিত সারা দিন ইলমে দীন শিক্ষা দিচ্ছেন।ইশার নামাযের পর তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ আপন ঘরে ফিরে গেলেন। কিছুক্ষণ পর সাদা পোষাক পরিধান করে আতর লাগিয়ে সুগন্ধিতে চারদিক সুরভিত করে আপন নূরানী চেহারা নিয়ে ফিরে এসে মসজিদের এক কোণায় নফল নামাযে মশগুল হয়ে গেলেন। যখন সুবহে সাদেক হল তখন তিনি আপন ঘরে তাশরীফ নিয়ে গেলেন এবং পোষাক পরিবর্তন করে আবার আগমন করলেন। অতঃপর ফজরের নামায জামাত সহকারে আদায় করার পর গতকালের ন্যায় ইশা পর্যন্ত পাঠদান অব্যাহত রাখলেন। আমি ভাবলাম, তিনি অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে গেছেন। আজ রাতে অবশ্যই বিশ্রাম নিবেন। কিন্তু দ্বিতীয় রাতেও তাঁর একই আমল অব্যাহত ছিল। তৃতীয় দিন ও রাত একই অবস্থায় অতিবাহিত করলেন। আমি অবাক হয়ে খুবই প্রভাবিত হলাম। সিন্ধান্ত নিলাম যে, সারাজীবন তাঁর খিদমত করতে থাকব। অতএব আমি তাঁর মসজিদেই অবস্থান গ্রহণ করলাম। আমার অবস্থানকালে ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কে দিনে কখনও রোজাবিহীন আর রাতে কখনো ইবাদত ও নফল নামাযে উদাসীন অবস্থায় দেখিনি। অবশ্য তিনি জোহর নামাযের পূর্বে সামান্য বিশ্রাম নিতেন। [আল মানাকিব লিল মুয়াফ্ফাক, ১ম খন্ড, ২৩০ হতে ২৩১ পৃষ্ঠা] হযরত সায়্যিদুনা ইবনে আবু মুয়াজ رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বর্ণনা করেন: “মিস’আর বিন কিদাম رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ অত্যন্ত সৌভাগ্যবান ছিলেন। তাঁর ওফাত ইমাম আযম আবু হানীফা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মসজিদেই সিজদারত অবস্থায় হয়েছিল।” [আল মানাকিব লিল মুয়াফ্ফাক, ১ম খন্ড,, ২৩১ পৃষ্ঠা]
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক।
জো বে মিছাল আপ কা হে তাকওয়া,
তো বে মিছাল আপ কা হে ফাত্ওয়া
হে ইলম ও তাকওয়া কে আপ সন্গম,
ইমামে আযম আবু হানীফা। [ওয়াসায়েলে বখশিশ, ২৮ পৃষ্ঠা ৩]
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
ত্রিশ বছর ধরে বিরতিহীন রোজা
`আল খায়রাতুল হিসানে’ রয়েছে, তিনি বিরতিহীন ত্রিশ বছর ধরে রোজা রেখেছেন। ত্রিশ বছর যাবৎ এক রাকাত নামাযে সম্পূর্ণ কুরআন মজীদ খতম করতে থাকেন। চল্লিশ (বরং ৪৫) বৎসর পর্যন্ত ইশার ওযু দিয়ে ফজরের নামায আদায় করেছেন। যে স্থানে তাঁর ওফাত হয় সেই স্থানে তিনি সাত হাজার বার কুরআন পাক খতম করেছেন। হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর সামনে ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ সম্পর্কে কেউ সমালোচনা করলে তিনি رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: তুমি কি এমন একজন লোকের বিরুদ্ধে সমালোচনা করছ, যে ব্যক্তি ৪৫ বছর পর্যন্ত এক ওযু দিয়েই পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেছেন। যিনি একই রাকাতে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ খতম করে নিতেন, আর আমি ফিকাহ্ বিষয়ে যা কিছু জানি, সবই তাঁর কাছ থেকে শিখেছি।’ বর্ণিত আছে: শুরুতে তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ সারা রাত ইবাদত করতেন না। একদা তিনি কাউকে এই কথা বলতে শুনেছেন যে, ‘আবু হানীফা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ সারা রাত বিনিদ্র থাকেন। অতএব ঐ লোকটির সুধারণার সম্মান রাখতে গিয়ে তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ সারা রাত ধরে ইবাদত করা আরম্ভ করে দেন। [আল খায়রাতুল হিসান, ৫০ পৃষ্ঠা]
তেরি সাখাওয়াত কি ধূম মাচী হে,
মুরাদ মুহ্ মাঙ্গি মিল রহি হে,
আতা হো মুঝকো মদীনে কা গম,
ইমামে আযম আবু হানীফা। [ওয়াসায়েলে বখশিশ, ২৮৩ পৃষ্ঠা]
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
রমজান মাসে ৬২টি বার কুরআন খতম
ইমাম আবু ইউসুফ رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ রমজান মাসে ঈদের দিন সহ ৬২ বার কুরআন খতম আদায় করতেন। (দিনে এক খতম, রাতে এক খতম, তারাবীতে সারা মাসে এক খতম, ঈদের দিনে এক খতম)। তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ প্রচুর সম্পদ দান করতেন। ইলম্ শিক্ষাদানে খুবই ধৈর্য্যশীল ছিলেন। নিজের সম্পর্কে কৃত সমালোচনা কেবল শুনে থাকতেন; একটুও রাগ করতেন না। [আল খায়রাতুল হিসান, পৃষ্ঠা- ৫০]
আতা হো খওফে খোদা খোদারা,
দো উলফতে মুস্তফা খোদারা,
করো আমল সুন্নাতো পে হার দম,
ইমামে আযম আবু হানীফা। [ওয়াসায়েলে বখশিশ, পৃষ্ঠা- ২৮৩]
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
কখনও খালি মাথায় দেখিনি
‘তাজকিরাতুল আউলিয়া’ কিতাবে রয়েছে, হযরত সায়্যিদুনা দাঊদ তাঈ رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেছেন: আমি ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর খেদমতে বিশ বছর ছিলাম। একাকীত্বে কিংবা লোকসমক্ষে (অর্থাৎ একা অবস্থায় কিংবা লোকের সামনে) তাঁকে কখনো খালি মাথায় দেখিনি এবং কখনো পা প্রসারিত করা অবস্থায়ও দেখিনি। একবার আমি আরজ করলাম: হুজুর! একাকীত্বে তো আপনি একটু পা প্রসারিত করতে পারেন। তিনি বললেন:“জনসমক্ষে লোকজনের সম্মান করব, একাকীত্বে আল্লাহ তাআলার সম্মান করব না, তা আমার দ্বারা হতে পারে না।” [তাজকিরাতুল আউলিয়া, ১৮৮ পৃষ্ঠা]
ওস্তাদের ঘরের দিকে পা প্রসারিত করতেন না
‘আল খায়রাতুল হিসানে’ রয়েছে: তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ জীবনে কখনো নিজের শ্রদ্ধেয় উস্তাদ হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হাম্মাদ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর সম্মানিত ঘরের দিকে পা প্রসারিত করে ঘুমাননি। অথচ তাঁর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ঘর ও তাঁর সম্মানিত উস্তাদ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর ঘরের মধ্যে প্রায় সাতটি গলির ব্যবধান ছিল । [আল খায়রাতুল হিসান, ৮২ পৃষ্ঠা]
উস্তাদের চৌকাঠে মাথা রেখে শুয়ে যেতেন
سُبْحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَل! আমাদের ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কী পরিমাণ নিজের ওস্তাদের সম্মান করতেন। এজন্যে তো তিনি ইলমে দ্বীনের দৌলতে সমৃদ্ধ ও ধন্য ছিলেন। হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا নিজের সম্মানিত ওস্তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। যেমন, দাওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ৫৬১ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব ‘মালফূযাতে আলা হযরত’ এর ১৪৩ ও ১৪৪ পৃষ্ঠায় আমার আকা আলা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ ইরশাদ করেন: হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا বলেন: ইলমে দ্বীন অর্জনের উদ্দেশ্যে আমি যখন হযরত যায়দ বিন সাবিত رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর দরবারে যেতাম, আর যদি তিনি ঘরের ভিতরে থাকতেন, তখন আদবের কারণে আমি তাঁকে (অর্থাৎ সম্মানিত ওস্তাদকে) ডাকতাম না। তাঁর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ চৌকাঠে মাথা রেখে শুয়ে থাকতাম। বাতাস মাটি ও বালি উড়িয়ে আমার উপর ফেলত। অতঃপর যখন (স্বাভাবিক ভাবে ওস্তাদ) হযরত যায়দ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ঘর থেকে বের হতেন, তখন বলতেন: “হে আল্লাহর রাসূলের صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم চাচার সন্তান! আপনি আমাকে কেন ডাকলেন না?” আমি বলতাম: “আমার কোন সাধ্য নেই যে, আপনাকে ডাকতে পারি। ”আলা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এ কথা বলার পর বললেন: ‘এটা হল আদব’(শিষ্টাচার)। যার শিক্ষা পবিত্র কুরআন মজীদে রয়েছে:
إِنَّ الَّذِينَ يُنَادُوْنَكَ مِن وَّرَاءِ الْحُجُرٰتِ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ (4) وَلَوْ اَنَّهُمْ صَبَرُوْا حَتّٰى تَخْرُجَ إِلَيْهِمْ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ ط وَاللهُغَفُورٌ رَّحِيمٌ (5)
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: “নিশ্চয় ঐসব লোক, যারা আপনাকে হুজরা সমূহের (প্রকোষ্ঠ) বাইরে থেকে আহবান করে, তাদের মধ্যে অধিকাংশই নির্বোধ। আর যদি তারা ধৈর্য্যধারণ করতো যতক্ষণ না আপনি তাদের নিকট তাশরীফ আনয়ন করতেন, তবে তা তাদের জন্য উত্তম ছিলো এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।” [পারা- ২৬, সূরা- হুজরাত]
মুরতাদ ওস্তাদেরও কি সম্মান করতে হবে?
দ্বীনি ওস্তাদের সম্মানের ব্যাপারে যে বর্ণনা করা হল, তা কেবল বিশুদ্ধ আকীদা সম্পন্ন ফাসিক নয় এমন মুসলমান শিক্ষকের জন্যই। আল্লাহর পানাহ্! শিক্ষক যদি অমুসলিম কিংবা মুরতাদ হয়ে থাকে, তা হলে তার জন্য কোন সম্মান প্রদর্শন নেই। বরং এদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা, এদের সাহচর্যে থাকা নিজের ঈমানের জন্য বিপজ্জনকও বটে। মুরতাদ ওস্তাদের অধিকারের বিষয়ে আমার আকা আলা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর দরবারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: এ ধরনের ওস্তাদদের ছাত্রদের দায়িত্ব তা-ই, যা (ফেরেশতাদের সাবেক ওস্তাদ) অভিশপ্ত শয়তানের ব্যাপারে রয়েছে। ফেরেশতারা তার উপর লানত বা অভিশাপ দিতে থাকেন, আর কিয়ামতের দিন (নিজেদের ওস্তাদকে) ঘাঁড়-ধাক্কা দিতে দিতে দোযখে নিক্ষেপ করবে। [ফতোওয়ায়ে রযবীয়্যা, ২৩ খন্ড, ৭০৭ পৃষ্ঠা] অবশ্য বর্ণিত উভয় ঘটনায় বিশেষ করে সে সব শিক্ষার্থীরা যেন শিক্ষা গ্রহণ করে, যারা আপন মুসলমান দ্বীনি ওস্তাদের সম্মান করার স্থলে তাকে অসম্মান করে। আর তার অনুপস্থিতিতে ঠাট্টা করে। এমন ছাত্রের ইলমে দ্বীনের সত্যিকার রূহ কীভাবে অর্জন হতে পারে।
মাওলানা রূম رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেছেন:
আয় খোদা জোয়েম তৌফিকে আদব,
বে আদব মাহরূম মান্দ আয ফযলে রব।
বে-আদব তন্হা না খোদ রা দাশ্ত বদ,
বল্কেহ্ আতশ দর হামাহ্ আফাক যদ্।
(আমরা আল্লাহ তাআলার নিকট আদবের তৌফিক প্রার্থনা করি। কেননা বে-আদব আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। বে-আদব না কেবল নিজেকেই মন্দ অবস্থায় রাখে, বরং তার বে-আদবীর আগুন সারা দুনিয়াকে গ্রাস করে নেয়) [ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৩ খন্ড, ৭০৯ পৃষ্ঠা]
শিক্ষকের গীবতের ২২টি উদাহরণ
দাওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ৫০৫ পৃষ্ঠা সম্বলিত ‘গীবত কি তাবাহ্কারিয়া’ নামক কিতাবের ৪১৯ ও পরের পৃষ্ঠায় রয়েছে, ইলমে দ্বীন শিক্ষাদানকারী ওস্তাদগণ মর্যাদার অধিকারী ও পরম সম্মানিত হয়ে থাকেন। কিন্তু কিছু কিছু অজ্ঞ শিক্ষার্থী নিজেদের ওস্তাদগণের নাম পরিবর্তন করে থাকে, ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, অপবাদ দেয়, কু-ধারনা এবং গীবত করে থাকে। তাদের সংশোধনের উদ্দেশ্যে ওস্তাদের গীবতের ২২টি উদাহরণ পেশ করা হল।
۞ উস্তাদ সাহেব আজ মুডে আছেন। মনে হয় ঘরে কোন ঝগড়া করে এসেছেন।
۞ ইনি অমুক মাদরাসায় পড়াতেন।
۞ সেখানে বেতন কম ছিল, তাই বেশী বেতনের জন্য আমাদের মাদরাসায় এসেছেন।
۞ তাওবা! তাওবা! আমাদের ওস্তাদ (কিংবা ক্বারী ছাহেব) যুবতী মেয়েদেরকে পড়ানোর জন্য তাদের ঘরে যান।
۞ ওস্তাদ সাহেব পড়ানোর ক্ষেত্রে আমার মত গরীব ছাত্রদের প্রতি কম কিন্তু অমুক বড় লোকের ছেলের প্রতি একটু বেশি দৃষ্টি দিয়ে থাকেন।
۞ আমাদের শিক্ষক সাহেব যখনই দেখা হয়, আমাকে অপমানিত করতে থাকেন।
۞ ছাত্রদের প্রতি কঠোর আচরণ করেন।
۞ পড়াতেই পারেন না, ওস্তাদ সেজে বসে আছেন।
۞ দেখেছো! আজ উস্তাদ সাহেব আমার প্রশ্নের কীভাবে ফেঁসে গেলেন?
۞ উস্তাদ সাহেবকে কিতাবের হাশিয়া সংশ্লিষ্ট কোন প্রশ্ন করলে তিনি এদিক সেদিক দেখতে থাকেন।
۞ উস্তাদ সাহেব প্রশ্নটির জবাব ভুল দিয়েছেন, এসো আমি তোমাকে কিতাব দেখাচ্ছি।
۞ উস্তাদ সাহেব নিজে ইবারত পড়তে পারেন না, তাই আমাদের দিয়ে পড়িয়ে নেন।
۞ উস্তাদ সাহেব তো ভালমত অনুবাদও করতে পারেন না।
۞ উস্তাদ সাহেব অনর্থক সবককে লম্বা করেন।
۞ অমুক শিক্ষকের নিকট তো আমি বাধ্য হয়ে পড়ছি, কিছু দিনের মধ্যে অন্য কোন শিক্ষকের কাছে সবক পাল্টিয়ে দেব। না হয় তাকে মাদরাসা হতেই তাড়িয়ে দেব।
۞ অমুক শিক্ষকটি তো ঊর্দু শরাহ্। তিনি ঊর্দু ব্যাখ্যাগ্রন্থ থেকে প্রস্তুতি নিয়েই ক্লাসে আসেন।
۞ ঊর্দু শরাহ্ পড়ে না আসলে সবকও পড়াতে পারেন না।
۞ উস্তাদ সাহেব আজ সবকের প্রস্তুতি নিয়ে আসেন নি। তাই এদিক সেদিকের কথাবার্তা বলে সময় অতিবাহিত করে দিয়েছেন।
۞ ছাত্রজীবনে তিনি এতই দুর্বল ছিলেন যে, প্রতিদিনই তাকে শিক্ষকের গালমন্দ শুনতে হত।
۞ আমি অবাক হলাম, অমুক ছাত্র কীভাবে ভাল স্থানে এসে গেল। অবশ্যই শিক্ষক তাকে প্রশ্নগুলো জানিয়ে দিয়েছেন।
۞ অমুক ওস্তাদ (ক্বারী ছাহেব)-এর মাদানী যেহেন নেই। তিনি ক্লাসে কখনও মাদানী কাজ সম্পর্কে একটি কথাও বলেন নি।
۞ অমুক অমুক শিক্ষকের মধ্যে ভাল সর্ম্পক নেই। যখন দেখি তারা একে অপরের বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলে থাকে।
۞ আমাদের ওস্তাদ (অথবা ক্বারী ছাহেব) আজকাল অমুক আমরদ (দাঁড়ি, গোঁফ নেই এমন সুদর্শন কিশোর) ছেলেটির সাথে ভাল ভাব জমাচ্ছে।
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
দেওয়ালের ময়লা
হযরত সায়্যিদুনা ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন:একদা ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কোন এক কর্জ গ্রহীতা অগ্নিপুজারীর কাছে কর্জ উছুল করার জন্য তাশরীফ নিয়ে গেলেন। হঠাৎ তার ঘরের পাশে আসতেই তাঁর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ জুতা মোবারকে কাঁদা লেগে যায়। কাঁদা পরিষ্কার করার জন্য তিনি জুতা মোবারকগুলো ঝাড়লেন। এতে করে কিছু কাঁদা সেই অগ্নিপুজারীর ঘরের দেওয়ালে লেগে যায়। তিনি খুবই চিন্তিত হয়ে গেলেন যে, এখন কী করব। এদিকে কাঁদা পরিষ্কার করতে গেলে দেওয়ালের মাটিও উঠে যাবে, আর যদি পরিষ্কার না করি, তা হলে দেওয়াল অপরিষ্কারই থেকে যাবে।এমন কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় শেষ পর্যন্ত দরজায় করাঘাত করলেন। অগ্নিপুজারী বাইরে এসে যখন ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কে দেখলেন, তখন কর্জ পরিশোধ না করার ব্যাপারে বিভিন্ন আপত্তি পেশ করতে থাকে। ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ঋণের কথার পরিবর্তে দেওয়ালে কাঁদা লাগার কথা বলে নম্রসুরে ক্ষমা চেয়ে বললেন: “আমাকে বলুন, আপনার দেওয়ালটি কীভাবে পরিষ্কার করব?” বান্দার হকের ব্যাপারে ইমাম আযমের رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ অবিচলতা এবং পরম আল্লাহর-ভয় দেখে অগ্নিপুজারী অত্যন্ত প্রভাবিত হয়ে গেল। আর সে এভাবেই বলল: ‘হে মুসলিম জাতির ইমাম! দেওয়ালের কাঁদা তো পরেও পরিষ্কার করা যাবে, প্রথমে আপনি আমার হৃদয়ের কাঁদা পরিষ্কার করে আমাকে মুসলমান বানিয়ে নিন।’ এভাবে সেই অগ্নিপুজারী ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর খোদা-ভীতি দেখে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিলেন। [তাফসীরে কবীর, ১ম খন্ড, ২০৪ পৃষ্ঠা]
গুনাহুকি দলদল মে পাহ্স গেয়া হো,
গলে গলে তক মে ধাস গেয়া হো
নিকালিয়ে বাহরে নুহ ও আদম,
ইমামে আযম আবু হানীফা। [ওয়াসায়েলে বখশিশ, ২৮৩ পৃষ্ঠা]
পোস্টার লাগানোর মাস্আলা
ইমাম আযম আবু হানীফার رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ প্রেমে-মত্ত ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেনতো, আমাদের ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বান্দার হকের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাকে কীভাবে ভয় করতেন। এ ঘটনা থেকে ঐ সব লোকদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত, যারা লোকজনের দেওয়াল ও সিঁড়ির কোণায় পানের পিক ফেলে নোংরা করে দেয়।অনুরূপভাবে মালিকের অনুমতি ছাড়া বাসা ও দোকানের দেওয়ালগুলোতে, দরজাগুলোতে, সাইন বোর্ডগুলোতে, গাড়ীতে, বাসের বাইরে কি ভেতরে স্টিকার ও পোস্টার লাগানো ব্যক্তিরা, মালিকের অনুমতি ছাড়া দেওয়ালগুলোতে অংকন কারীরা শিক্ষা গ্রহণ করুন যে, এসব করলে মানুষের হক নষ্ট হয়। নিশ্চয় আল্লাহর হকই মহান (এতে কোন সন্দেহ নেই)। কিন্তু তাওবার সম্পৃক্ততার দিক থেকে মানুষের হক আল্লাহর হকের চেয়েও কঠোর। দুনিয়াতে কারো হক বিনষ্ট করলে, যদি তার নিকট থেকে ক্ষমা চাওয়ার ব্যবস্থা দুনিয়াতেই করা না হয়, তাহলে কিয়ামতের দিনে মজলুমকে নেকী দিয়ে দিতে হবে। আর যদি এভাবেও হক আদায় না হয়, তবে তার গুনাহ্ নিজের কাঁধে নিতে হবে। যেমন: শরীয়তের কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ছাড়া কাউকে আঘাত করল, কাউকে ভয়ের মধ্যে রাখল, মনে কষ্ট দিল, কাউকে মারল, কারো টাকা-পয়সা কেড়ে নিল, পিক, পোষ্টার কিংবা চিকা মেরে কারো দেওয়াল নোংরা করল, কারো বাসার সামনে কিংবা দোকানের সামনের জায়গা ঘিরে রেখে অনর্থক হয়রানী সৃষ্টি করল, কারো ভবনের পাশে অযথা জোর- জবরদস্তিমূলক ভবন তৈরি করে সেটির আলো ও বাতাস বন্ধ করে দিল, কারো স্কুটার বা কার গাড়ি ইত্যাদিতে নিজের গাড়ির পাশ লাগিয়ে দিয়ে পালিয়ে গেল, পালাতে না পারা অবস্থায় নিজের দোষ হওয়া সত্ত্বেও বাকচাতুর্য কিংবা প্রতিপত্তির প্রভাব দেখিয়ে উল্টা তাকে অপরাধী বানিয়ে তার হক নষ্ট করল, কুরবানীর ঈদ ইত্যাদি সময়ে ঘরের মালিককে অসন্তুষ্ট করে তার ঘরের সামনে জন্তু বেঁধে রেখে কিংবা জবাই করে তার ঘর থেকে বের হবার রাস্তায় গোবর, রক্ত বা ময়লা ইত্যাদি দ্বারা ভরপুর করে রেখে তার কষ্টের কারণ সৃষ্টি করল, কারো ঘর কিংবা দোকানের পাশে বা ঘরের ছাদে কিংবা ফ্লাটের উপর অসহ্য গন্ধময় কোন আবর্জনা জাতীয় বস্তু নিক্ষেপ করল, মোট কথা মানুষের হক নষ্টকারী লোক নামায, হজ্ব, ওমরা, দান-সদকা সহ বড় বড় নেকীও করুক না কেন,কিয়ামতের দিন তার সকল নেকী তারাই নিয়ে যাবে, সে দুনিয়াতে যাদের হকগুলো নষ্ট করেছিল অথবা শরীয়তের কোন কারণ ছাড়া যাদের মনে ব্যথা দিয়েছিল। সব নেকী দিয়ে দেওয়ার পরও যদি হক বাকী থেকে যায়, তবে তাদের সব গুনাহ্ সেই ‘নেক-নামাযী’কে দিয়ে দেওয়া হবে, আর এভাবেই মানুষের হক নষ্ট করার কারণে হাজী, নামাযী, রোজাদার ও তাহাজ্জুদ আদায়কারী হওয়া সত্ত্বেও তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। (আল্লাহর কাছে পানাহ চাই) হ্যাঁ, তবে আল্লাহ তাআলা যার জন্য চাইবেন, আপন অনুগ্রহ ও দয়া দ্বারা উভয়ের মাঝে মীমাংসা করিয়ে দিবেন। বিস্তারিত জানার জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকাতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত রিসালা ‘জুলুমের পরিণতি’ পড়ুন। বান্দার হকের আর একটি শিক্ষণীয় ঘটনা শুনুন। আর আল্লাহ তাআলার ভয়ে কেঁপে উঠুন।
কিয়ামতের ভয়ে বেহুঁশ হয়ে যান
সায়্যিদুনা মিস্’আর বিন কিদাম رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “একদা আমি ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর সাথে কোথাও যাচ্ছিলাম। ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ পা মোবারক একটি ছেলের পায়ের উপর গিয়ে লাগে। সে চিৎকার দিয়ে উঠে, আর তার মুখ দিয়ে তৎক্ষনাৎ বের হয়ে যায়: يَا شَيْخُ اَلَا تَخَافُ الْقِصَاصَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ! অর্থাৎ“জনাব! কিয়ামতের দিন আল্লাহ যে প্রতিশোধ নিবেন আপনি কি সে ব্যাপারে ভয় করেন না?” এ কথা শোনা মাত্র ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কাঁপতে আরম্ভ করলেন আর বেহুঁশ হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর যখন তিনি হুঁশ ফিরে পেলেন, তখন আমি আরজ করলাম: একটি ছোট ছেলের কথায় আপনি কেন এত আতঙ্কিত হলেন? তিনি বললেন: ‘কি জানি, ছেলেটির আওয়াজটা তো গায়েবী উপদেশও হতে পারে।’ [আল মানাকিবুল মুয়াফ্ফিক, ২য় খন্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠ]
শাহা আদু কা সিতম হে পয়হাম,
মদদ কো আও ইমামে আযম।
সিওয়া তোমহারে হে কওন হামদাম,
ইমামে আযম আবু হানীফা। [ওয়াসায়েলে বখশিশ, ২৮৩ পৃষ্ঠা]
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
অপরকে কষ্ট প্রদানকারীরা! সাবধান
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ কথা কল্পনাও করা যায় না যে, ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ জেনে শুনে কারো উপর অত্যাচার করবে আর ছেলেটির গায়ে আঘাত দিবে। অসাবধানতা বশত হয়ে যাওয়া বিষয়েও তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ আল্লাহর ভয়ে বেহুঁশ হয়ে যান আর অন্য দিকে আমাদের অবস্থা এই যে, জেনে বুঝে প্রতিদিন কত লোককে বিভিন্ন ধরনের কষ্ট দিচ্ছি। কিন্তু আফসোস! আমাদের এ বিষয়ে অনুভূতিও নেই যে, আল্লাহ তাআলা যদি কিয়ামতের দিন আমাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেন, তখন আমাদের কী অবস্থা হবে!
অহেতুক কথাবার্তায় ঘৃনা
একদা খলিফা হারুনুর রশীদ হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আবু ইউসুফ رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর কাছে আরজ করেন: হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আবু হানীফা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করুন। তিনি বলেন: ইমাম আযম আবু হানীফা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ অত্যন্ত পরহেজগার ছিলেন। শরীয়তের নিষিদ্ধ বিষয়াদি থেকে বিরত থাকতেন। দুনিয়াবী লোকদের থেকে দূরে থাকতেন। অহেতুক কথাবার্তা বলাকে অত্যন্ত ঘৃনা করতেন। বেশির ভাগ সময়ই নিশ্চুপ থেকে (দ্বীন ও আখিরাতের বিষয়ে) চিন্তা করতেন। যখনই কোন মাস্আলা জিজ্ঞাসা করা হত, জানা থাকলে জবাব দিয়ে দিতেন, না হলে চুপ থাকতেন। সব দিক থেকে নিজের দ্বীন ও ঈমানের হেফাজত করতেন। যে কোন মুসলমানের আলোচনা ভাল ভাবে করতেন। (অর্থাৎ কারো দোষ-ত্রুটি কিংবা গীবত করতেন না)। খলিফা হারুনুর রশীদ এ কথাগুলো শুনে বললেন: ছালেহীনদের তথা নেক বান্দাদের চরিত্র এমনই হয়ে থাকে। [আল খায়রাতুল হিসান, ৮২ পৃষ্ঠা]
ইমাম আযম কথাবার্তা আগে শুরু করা থেকে বিরত থাকতেন
হযরত সায়্যিদুনা ফজল বিন দুকাইন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেছেন: ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ অতিশয় গাম্ভীর্যপূর্ণ লোক ছিলেন। ( কথাবার্তা নিজ থেকে শুরু করতেন না)। যদি কোন কথা বলতেন: তবে তা কারো কথার জবাব দিতে গিয়েই বলতেন আর অনর্থক কোন কথা শুনতেনই না। এ রকম কথাবার্তায় তিনি মনোযোগ দিতেন না। [আল খায়রাতুল হিসান, ৫৫ পৃষ্ঠা]
কথাবার্তা আগে শুরু করাতে ক্ষতিসমূহ
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ প্রেমে কতাবার্তা শুরু না করার হিকমতের প্রতি মারহাবা। বাস্তবিক পক্ষে এই হিকতমপূর্ণ মাদানী ফুল’কে যদি নিজের মধ্যে নেওয়া যায়, তাহলে অনেক ক্ষতি থেকে বেঁচে যাওয়া সম্ভব হতে পারে। কেননা, বারংবার এমনই হয়ে থাকে যে, মানুষ কোন অপ্রয়োজনীয় সংবাদ প্রদান করে অথবা অনর্থক কোন কথা বলে যদিও সে নিশ্চুপ হয়ে যায়, কিন্তু তার প্রচারিত কথাগুলো বরাবরই চলতে থাকে। এমনকি চলমান সেই বিষয়টির ধারাবাহিকতা চলতে চলতে এক পর্যায়ে তা গুনাহের কূপে গিয়ে পড়ে। মানুষ যেন কোন কথা আগে থেকে না বলে, আর যেন বাচাল হিসেবে পরিগণিত না হয়।
ফযূল গুয়ী কি নিকলে আদত,
হো দুর বে জা হাঁসি কি খাছলত
দরূদ পড়তা রহো মে হরদম,
ইমামে আযম আবু হানীফা। [ওয়াসায়েলে বখশিশ, ২৮৩ পৃষ্ঠা]
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
মাদানী ইন্আমাত কার জন্য কতটি?
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ফিতনার এই যুগে সহজভাবে নেক আমল করার আর গুনাহ্ থেকে বাঁচার পদ্ধতি সম্বলিত শরীয়ত ও তরিকতের যৌথ সমন্বয় ‘মাদানী ইনআমাত’ প্রশ্নাবলি রূপে সাজানো হয়েছে। ইসলামী ভাইদের জন্য ৭২টি, ইসলামী বোনদের জন্য ৬৩টি, ইলমে দ্বীনী শিক্ষার্থী(ছাত্রদের) জন্য ৯২টি, মহিলা ইলমে দ্বীনী শিক্ষার্থীদের জন্য ৮৩টি,মাদানী মুন্না ও মাদানী মুন্নিদের জন্য ৪০টি, বিশেষ ইসলামী ভাইদের (অর্থাৎ প্রতিবন্ধীদের) জন্য ২৭টি মাদানী ইনআমাত রয়েছে। অসংখ্য ইসলামী ভাই-বোনেরা এবং ইলমে দ্বীন শিক্ষার্থীরা মাদানী ইনআমাত অনুযায়ী আমল করত: দৈনিক ঘুমানোর পূর্বে ‘ফিকরে মদীনা’ করে অর্থাৎ নিজের আমলের হিসাব করে ‘মাদানী ইনআমাতের’ পকেট সাইজ রিসালায় দেওয়া খালি ঘর পূরণ করে থাকেন। এসব মাদানী ইনআমাত গুলোকে ইখলাসের সাথে আমল করতে পারলে নেককার হবার ও গুনাহ্ থেকে বাঁচার পথে যে সব বাঁধা রয়েছে আল্লাহ তাআলার দয়া ও অনুগ্রহে দূর হয়ে যায়। اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ এর বরকতে সুন্নাত অনুসারী হওয়ার, গুনাহে প্রতি ঘৃনা আর ঈমান হিফাজতের মন-মানসিকতা সৃষ্টি হবে। সকলেরই উচিত, চরিত্রবান মুসলমান হওয়ার জন্য মাকাতাবাতুল মদীনার যে কোন শাখা থেকে মাদানী ইনআমাতের রিসালা সংগ্রহ করা,আর প্রত্যেক দিন ‘ফিকরে মদীনা’ করে এতে প্রদত্ত ঘরগুলো পূরণ করা, আর হিজরী সন অনুযায়ী প্রত্যেক মাদানী অর্থাৎ চন্দ্র মাসের প্রথম দশ দিনের মধ্যে নিজ এলাকার মাদানী ইনআমাতের যিম্মাদারের নিকট জমা দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
ওলী আপনা বানা তো উস্ কো রব্বে লাম ইয়াযাল
মাদানী ইন্আমাত পর করতা রহে জো ভি আমল।
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
মাদানী ইন্আমাতের উপর আমল কারীদের জন্য সুসংবাদ
মাদানী ইনআমাতের রিসালা পূরণকারী কী ধরনের সৌভাগ্যবান হয়ে থাকে, তা এ মাদানী বাহার থেকে অনুমান করুন। যেমন:হায়দারাবাদের (বাবুল ইসলাম সিন্ধুর) এক ইসলামী ভাইয়ের ঘটনা কিছু এভাবে বর্ণনা করেন; ১৪২৬ হিজরীর পবিত্র রজব মাসের কোন এক রাতে আমি মুস্তফা জানে রহমত, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে স্বপ্নে দেখার মহান সৌভাগ্য অর্জন করি। তাঁর পবিত্র ঠোঁট দুইটি নড়ে উঠল; যেন রহমতের ফুল ঝরছিল। তাঁর পবিত্র মিষ্টি জবানে যা ইরশাদ করেছিলেন: তা এ রকমই ছিল, “যে ব্যক্তি এই মাসে দৈনিক নিয়মিতভাবে মাদানী ইনআমাতের মাধ্যমে ‘ফিকরে মদীনা’ করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন।”
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
দুশমনের জন্য দোয়া
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আমাদের ইমাম আযমের رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ সাথে যে কেউ যতই খারাপ আচরণ করুক না কেন, তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ তার সাথে ভাল আচরণ করতেন। যেমন: এক বার কোন হিংসুক লোক ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কে কঠোর ভাবে গালমন্দ করল, খারাপ ভাষায় গালি দিল, গোমরাহ্ বলে এমনকি নাঊযু বিল্লাহ তাঁকে رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বেদ্বীনও বলল। ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ জবাবে বললেন: “আল্লাহ তাআলা আপনাকে ক্ষমা করুন। আল্লাহ তাআলা জানেন যে, আপনি যেসব কিছু আমার ব্যাপারে বলে যাচ্ছেন, আমি সে রকম নই।” এ কথা বলার পর তাঁর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। চোখ দিয়ে অশ্রু গড়াতে লাগল। তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলতে লাগলেন: আমি আল্লাহতাআলার কাছে আশা রাখি যে, তিনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। হায়! আল্লাহ তাআলার আযাবের ভয় আমাকে কাঁদাচ্ছে। আযাবের কথা মনে আসতেই কান্নাকাটি বৃদ্ধি পেল। আর কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। যখন হুঁশ ফিরে পেলেন, তখন দোআ করলেন: হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমার দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করল, তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। সে ব্যক্তিটি তাঁর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এই সুন্দর আচরণ দেখে খুবই প্রভাবিত হয়ে গেল আর ক্ষমা চাইতে লাগল। তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বললেন: “যে ব্যক্তি না জেনে আমার ব্যাপারে খারাপ কিছু বলে, তাকেও ক্ষমা করে দিলাম। হ্যাঁ, জেনে বুঝে যে ব্যক্তি আমার প্রতি অপবাদ দেয়, সে অপরাধী। কেননা, আলেমদের গীবত করা তাঁদের পরবর্তীতেও অবশিষ্ট থাকে।” [আল খায়রাতুল হিসান, ৫৫ পৃষ্ঠা]
না জীতে জী আয়ে কোয়ী আফত্,
মে কবর মে ভি রহো সালামত।
বরোজে হাশর ভি রাখ্না বে গম,
ইমামে আযম আবু হানীফা। [ওয়াসায়েলে বখশিশ, ২৮৩ পৃষ্ঠা]
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
থাপ্পড় মারা ব্যক্তিকে অসাধারণ উপহার
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপন বিরোধীদের প্রতি ইমাম আযমের رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ আরেকটি আশ্চর্যজনক ঘটনা শুনুন এবং আন্দোলিত হোন। আপনার মৌলিক দুশমনদের উপর লাখো ক্ষোভ সৃষ্টি হোক, তা ক্ষমা করে দেওয়ার অভ্যাস গড়ে নিয়ে কার্যত: ইমাম আযমের প্রতি নিজের গভীর ভালবাসা প্রদর্শন করুন। যেমন: একবার কোন হিংসুক ব্যাক্তি কোটি কোটি মুসলমানদের মুকুটবিহীন সম্রাট ইমাম আযমের رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ গাল মোবারকে (আল্লাহর পানাহ্!) খুব জোরে থাপ্পড় মারল। ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার অনুপম আদর্শ ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ অত্যন্ত নম্রতার সাথে বললেন: ভাইজান! আমিও আপনাকে থাপ্পড় মারতে পারি কিন্তু তা করব না। আপনার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করতে পারি। কিন্তু তাও করব না। আল্লাহ তাআলার দরবারে আপনার অত্যাচারের কথা আবেদন করতে পারি, কিন্তু করব না। আর কিয়ামতের দিন আপনার এই অত্যাচারের বদলা নিতে পারি, কিন্তু তাও করব না। আল্লাহ তাআলা যদি আমার উপর কিয়ামতের দিন বিশেষ কোন রহমত করে থাকেন, আর আপনার পক্ষে আমার সুপারিশ কবুল করে থাকেন, তা হলে আমি আপনাকে ছাড়া জান্নাতে যাব না।
হুয়ী শাহা ফারদে জুরম আয়েদ,
বাচা পাসা ওয়ার না আব মুকাল্লিদ।
ফিরিশতে লে কে চলে জাহান্নাম,
ইমামে আযম আবু হানীফা। [ওয়াসায়েলে বখশিশ, ২৮৩ পৃষ্ঠা]
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
ক্ষমাশীল ব্যক্তিরা কিয়ামতের দিন বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! নিঃসন্দেহে আমাদের ইমাম আযম আবু হানীফা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ধৈর্য্যরে পাহাড় ছিলেন। তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ধৈর্য্যরে ফযীলত সম্পর্কে অবহিত ছিলেন । হায়! আমরাও যদি আমাদের প্রতি অত্যাচারীদের উপর, ক্ষোভে বেসামাল হয়ে ঝগড়া-বিবাদ করা বাদ দিয়ে তাদের ক্ষমা করে দিয়ে সাওয়াবের ভান্ডার অর্জন করতে পারতাম। দাওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কতৃক প্রকাশিত ৫০৫ পৃষ্ঠা সম্বলিত ‘গীবত কি তাবাহ্কারিয়াহ্’ নামক কিতাবের ৪৭৯ ও ৪৮১ পৃষ্ঠায় প্রদত্ত দুইটি হাদীস পড়ুন ও আন্দোলিত হোন।
(১) “যে ব্যক্তি এটা পছন্দ করে যে, তার জন্য বেহেশতে মহল তৈরি করা হোক ও তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হোক, তার উচিত হচ্ছে, যে ব্যক্তি তার উপর অত্যাচার করে, সে যেন তাকে ক্ষমা করে দেয় আর যে তাকে বঞ্চিত করে, সে যেন তাকে দান করে এবং যে ব্যক্তি তার সাথে সর্ম্পক ছিন্ন করে, সে যেন তার সাথে সর্ম্পক রক্ষা করে।” [আল মুসতাদরিক লিল হাকিম, ৩ খন্ড, ১২ পৃষ্ঠা, হাদিস- ৩২১৫]
(২) “কিয়ামতের দিন ঘোষণা করা হবে, যে ব্যক্তির প্রতিদান আল্লাহর যিম্মায় রয়েছে তারা যেন উঠে জান্নাতে চলে যায়। জিজ্ঞাসা করা হবে: এ প্রতিদান কাদের জন্য? সে আহবানকারী বলবে: ঐ লোকদের জন্য যারা ক্ষমাশীল। তখন হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে যাবে আর বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [আল মু’’জামুল আওসত, ১ খন্ড, ৫৪২ পৃষ্ঠা, হাদিস- ১৯৯৮] এই বিষয়ের উপর মাকাতাবাতুল মদীনা থেকে প্রকাশিত ‘আফু ও দরগুজর কে ফজায়েল’ নামক রিসালাতেও বিস্তারিত রয়েছে, এ রিসালা ফয়যানে সুন্নাত ২য় খন্ড এর অধ্যায় ‘গীবত কি তাবাহ্কারিয়াহ্’ মধ্যেও ৪৭৮ থেকে ৪৯৩ পৃষ্ঠায় বিদ্যমান আছে।দা’ওয়াতে ইসলামীর ওয়েবসাইটে www.dawateislami.net-ও পড়তে পারেন এবং প্রিন্ট আউট করে নিতে পারেন।
নিজের যুগে সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী
আমাদের ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর ইলমে দ্বীনের অনেক পান্ডিত্য ছিল। আর তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ সর্বাধিক জ্ঞানী ছিলেন। ‘আল খায়রাতুল হিসানে’ রয়েছে: সায়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফেয়ী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন: ‘ইমাম আযম আবু হানীফার رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ মত জ্ঞানী ছেলে কোন মা জন্ম দেয়নি’। সায়্যিদুনা বকর বিন জাইশ رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: ‘ইমাম আযম আবু হানীফা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর জ্ঞানের সাথে যদি তাঁর সমসাময়িক সকল জ্ঞানীর জ্ঞানকে একত্রিত করা হয়, তবে ইমাম আযমের জ্ঞানই সবার উপর বিজয়ী হবে। [আল খায়রাতুল হিসান, ৬২ পৃষ্ঠা]। তাঁর বিশুদ্ধ জ্ঞান ও অসাধারণ বুঝানোর ক্ষমতার একটি ঈমান তাজাকারী ঘটনা শুনুন আর আন্দোলিত হোন।
ওসমান গনী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর প্রতি বেআদবী প্রদর্শকারীর উপর ইনফিরাদী কৌশিশ
কূফায় এক ব্যক্তি আমীরুল মুমিনীন, জামেউল কুরআন, হযরত সায়্যিদুনা ওসমান গনী যুননূরাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর শানে বিভিন্ন মন্দ কথা বলত, এমনকি আল্লাহর পানাহ্! হযরত ওসমান গণী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কে ইহুদী বলত। একবার সায়্যিদুনা ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ লোকটির নিকট গেলেন। তার উপর ইনফিরাদি কৌশিশের মাধ্যমে হিকমত সহকারে মাদানী ফুল ইরশাদ করলেন: আমি আপনার কন্যার জন্য একটি প্রস্তাব এনেছি। ছেলে এমন যে, সব সময় সে আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে। খুবই মুত্তাকী ও পরহেজগার। সারা রাত ইবাদত-বন্দেগীতে অতিবাহিত করে। ছেলের এসব প্রসংশা শুনে লোকটি বলল, খুব ভাল। এমন জামাতা তো আমাদের বংশের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বললেন: কিন্তু তার মধ্যে একটি দোষও রয়েছে আর তা হল ছেলেটি ইহুদী ধর্মের। কথাটি শোনা মাত্রই লোকটি পিছপা হয়ে গেল। গর্জে ওঠে বলল: আমি কি আমার কন্যার বিবাহ একজন ইহুদীর সাথে দিতে পারি? ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ অত্যন্ত কোমল সুরে বললেন: ভাই! আপনি নিজে তো আপনার মেয়েকে একজন ইহুদীর কাছে বিবাহ দিতে রাজী হচ্ছেন না, সে ক্ষেত্রে এটি কীভাবে সম্ভব হয় যে, আল্লাহর মাহবুব, অদৃশ্যের সংবাদ দাতা নবী, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আপন দুই দুইজন শাহজাদীকে একের পর এক কোন ইহুদীর সাথে বিবাহ দিতে পারেন! এ কথা শোনা মাত্র লোকটির বিবেকে আঘাত লাগল আর সে অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে গেল। আর সাথে সাথে জামেউল কুরআন হযরত সায়্যিদুনা ওসমান গনী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর বিরোধিতা করা থেকে তাওবা করল। [আল মানাকিবুল কিরদারী, ১ খন্ড, ১৬১ পৃষ্ঠা]
নূর কি ছারকার ছে পায়া দো শালা নূর কা
হো মোবারক তুম কো যুননূরাইন জোড়া নূর কা।
[হাদায়েকে বখশিশ শরীফ]
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
জীবন দিয়ে দিয়েছেন কিন্তু সরকারী পদ গ্রহণ করেন নি
আব্বাসীয় খলিফা মনসুর, ইমাম আযম আবু হানিফা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর কাছে আবেদন করলেন: আপনি আমার সরকারের প্রধান বিচারপতির পদ গ্রহণ করুন। উত্তরে তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বললেন: আমি এই পদের যোগ্য নই। মনসুর বললেন: আপনি মিথ্যা বলছেন। তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বললেন: আমি যদি মিথ্যা বলে থাকি, তা হলে আপনি নিজেই তো তার বিচার করে ফেললেন! মিথ্যুক ব্যক্তি তো বিচারক হওয়ার উপযুক্ত হতে পারে না। খলিফা মনসুর, ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর এই উক্তিকে নিজের জন্য অপমানজনক সাব্যস্ত করে তাঁকে জেলখানায় পাঠিয়ে দিলেন। তাঁর মাথা মোবারকে চাবুক দিয়ে দৈনিক দশটি করে আঘাত করা হত। যাতে তাঁর মাথা মোবারক থেকে রক্ত প্রবাহিত হয়ে পায়ের নীচে চলে আসত। এভাবে তাঁকে বাধ্য করা হচ্ছিল, তিনি যেন বিচারপতির পদ গ্রহণ করে নেন। কিন্তু কোনভাবেই তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ রাষ্ট্রীয় পদ গ্রহণ করতে রাজি হলেন না। এভাবে তাঁকে দৈনিক দশটি হিসাবে একশ দশটি চাবুকের আঘাত করা হল। ইমাম আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর সাথে জনসাধারণের সহানুভূতি ছিল। শেষ পর্যন্ত প্রতারণাপূর্বক তাঁর সামনে বিষের পেয়ালা পেশ করা হয়। কিন্তু মুমিনদের দূরদৃষ্টির মাধ্যমে তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ সে বিষ চিনে ফেলেন। তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ তা পান করতে অস্বীকার করলেন। তাই তাঁকে জোরপূর্বক মাটিতে শুইয়ে তাঁর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ গলদেশে বিষ ঢুকিয়ে দেওয়া হল। যখন বিষক্রিয়ায় আরম্ভ হল, তখন তিনি আল্লাহ তাআলার দরবারে সিজদায় অবনত হয়ে গেলেন, আর সেই সিজদারত অবস্থাতেই তিনি ১৫০ হিজরীতে শাহাদাত বরণ করেন। [আল খায়রাতুল হিসান, ৮৮, ৯২ পৃষ্ঠা]। তখন তাঁর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বয়স হয়েছিল ৮০ বৎসর। পবিত্র বাগদাদ নগরীতে তাঁর মাযার শরীফ এখনো নূর বিচ্চুরণকারী এবং যিয়ারতের পবিত্র স্থান হিসাবে বিদ্যমান রয়েছে।
পির আকা বাগদাদ মে বুলা কর,
ওয় রওযা দিখ্লায়িয়ে জাহা পর।
হে নূর কি বারিশে ছমাছম্,
ইমামে আযম আবু হানীফা। [ওয়সাইলে বখশিশ, ২৮৩ পৃষ্ঠা]
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
ইমাম আযমের মাযারের বরকতসমূহ
হিজাযের মুফতি শেখ শিহাব উদ্দীন আহমদ বিন হাজর হাইতমী মক্কী শাফেয়ী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ তার সুপ্রসিদ্ধ কিতাব ‘আল খায়রাতুল হিসান ফি মানাকিবিন নোমান’ এর ৩৫ নম্বর অধ্যায়ে ‘তাঁরرَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কবর শরীফের যিয়ারত উদ্দেশ্য সাধন হওয়ার জন্য খুবই উপকারী’ শীর্ষক লিখা রয়েছে। এতে তিনি লিখেছেন: জ্ঞাতব্য বিষয় যে, দ্বীনের আলেমরা সহ অপরাপর সকল হাজতমন্দ (দুরাবস্থাগ্রস্ত) লোক ধারাবাহিক ভাবে তাঁর মাযার শরীফের যিয়ারতে রত আছেন। আর তার নিকট এসে নিজেদের প্রয়োজনগুলোর ব্যাপারে তাঁকে ওসীলা বানিয়ে থাকেন। এতে তাঁরা সফলতাও পান। তাঁদের মধ্যে হযরত সায়্যিদুনা ইমাম শাফেয়ীও রয়েছেন। যখন তিনি رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বাগদাদে ছিলেন তখন তাঁর ব্যাপারে বর্ণিত রয়েছে, তিনি رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: আমি হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আবু হানীফা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বরকত হাছিল করে থাকি। যখনই আমার কোন প্রয়োজন হয়, সাথে সাথে দুই রাকাত নামায আদায় করার পর তাঁর নূরানী কবরের নিকট চলে আসি। আর তাঁর কাছে এসে আল্লাহ তাআলার দরবারে দোআ করি। এভাবে আমার প্রয়োজন তাড়াতাড়ি পূরণ হয়ে যায়। [আল খায়রাতুল হিসান, ৯৪ পৃষ্ঠা] আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক আর তাঁর সদকায় আমাদের গুনাহ্ ক্ষমা হোক।
জিগর ভি যখমী হে দিল ভি ঘায়িল,
হাযার ফিকরে হে সো মসায়েল
দুখোঁ কা আত্তার দো মরহাম,
ইমামে আযম আবু হানীফা। [ওয়াসায়েলে বখশিশ, ২৮৩ পৃষ্ঠা]
ফয়যানে মাদানী চ্যানেল জারি থাকবে
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সর্বদা সম্পৃক্ত থাকুন। সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য মাদানী কাফেলায় আশেকানে রাসুলদের সাথে সুন্নাতে ভরা সফর করুন। সফল জীবন এবং আখিরাতকে সুন্দর করার জন্য মাদানী মারকাযের পক্ষ থেকে দেয়া মাদানী ইন্আমাত অনুযায়ী আমল করে দৈনিক ফিকরে মদীনা করার মাধ্যমে মাদানী ইন্আমাতের রিসালা পূরণ করুন। আর প্রত্যেক মাদানী মাসের প্রথম দশ দিনের মধ্যে নিজ এলাকার যিম্মাদারের নিকট জমা করুন। আপনাদের উৎসাহের জন্য একটি মাদানী বাহার শুনানো হচ্ছে। যেমন: ১১ নম্বর মীরপুর (ঢাকা, বাংলাদেশ) মুবাল্লিগে দা’ওয়াতে ইসলামীর বর্ণনার সারমর্ম: আমি কুরআন-সুন্নাতহর বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর ‘মাদানী পরিবেশের’ অধীনে পরিচালিত মাদানী তরবিয়্যতি কোর্সের জন্য ‘ইনফিরাদী কৌশিশ’ করার উদ্দেশ্যে একটি এলাকায় যাই। যখন একজন ইসলামী ভাইকে মাদানী তরবিয়্যতী কোর্সের দাওয়াত পেশ করি, তখন তিনি বলে উঠলেন: আমার চেহরায় প্রিয় আকা, নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর ভালবাসার নিদর্শন অর্থাৎ দাঁড়ি শরীফ, যা আপনি দেখতে পাচ্ছেন, اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ তা দা’ওয়াতে ইসলামীর ‘মাদানী চ্যানেলের’ই বরকত। ‘মাদানী চ্যানেলে’ সুন্নাতে ভরা এক হৃদয়স্পর্শী বয়ান শুনে আমি নিয়মিত নামায আদায়কারী হয়েছি, দাঁড়ি রেখেছি আর কুরআন পাকের শিক্ষা গ্রহণ করা আরম্ভ করে দিয়েছি। اَلْحَمْدُ لِلله عَلٰى اِحْسَانِهٖ
মাদানী চ্যানেল সুন্নাতো কি লায়েগা ঘর ঘর বাহার,
মাদানী চ্যানেল ছে হামে কিউ ওয়ালিহানা হো না পিয়ার। [ওয়াসায়েলে বখশিশ, ২৩৮ পৃষ্ঠা
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
মাদানী চ্যানেলের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করুন
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! سُبْحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَل দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী চ্যানেল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সুন্নাতকে উজ্জীবিত করে রেখেছে। মাদানী চ্যানেলের মাধ্যমে নেক আমল বৃদ্ধি করার, জান্নাত পাওয়ার, গুনাহ্ মিটিয়ে দেওয়ার এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর মত প্রয়োজনীয় ইলমসমূহ শিক্ষা গ্রহণ করা যায়। প্রয়োজনীয় ইলম অর্জনের প্রতি উৎসাহ প্রদান করতে গিয়ে হযরত সায়্যিদুনা ইমাম বোরহানুদ্দীন ইবরাহীম যারনূজী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: اَفْضَلُ الْعِلْمِ عِلْمُ الْحَالِ وَاَفْضَلُ الْعَمَلِ حِفْظُ الْحَالِ অর্থাৎ “উত্তম জ্ঞান হচ্ছে উপস্থিত বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। আর উত্তম আমল হলো, নিজের বর্তমান অবস্থার হিফাজত করা।” সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানকে ঐ সব জ্ঞান সম্পর্কে জানা জরুরী, যেগুলো তার জীবনে প্রয়োজন হয়। সে যে কোন বিভাগের সাথেই সম্পৃক্ত থাকুক না কেন। [রাহে ইলম, ১৭ পৃষ্ঠা] । ঘরে বসে সুন্নাত সহ দৈনন্দিন বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ইলমে দ্বীন অর্জনের জন্য আপনিও মাদানী চ্যানেল দেখুন এবং অপরকেও দেখতে উৎসাহিত করুন।
মাদানী চ্যানেল মে নবী কি সুন্নাতো কি ধূম হে,
ইস্ লিয়ে শয়তানে লাঈন রন্জূর হে মাগমূম হে।
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত ৩৭ পৃষ্ঠা সম্বলিত "অশ্রুর বারিধারা" নামক রিসালার ৩-৩২ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই রিসালাটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন। অন্যকে উপহার দিন।
যারা মোবাইলে (পিডিএফ) রিসালাটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন ।
ইসলামিক বাংলা বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন