৮টি হাদীস শরীফ
(১) “আল্লাহ্ তা’আলা নেক মুসলমানের সদকায়/ খাতিরে তাঁর আশেপাশের ১০০টি ঘর থেকে বিপদাপদ দূরীভূত করে দেন। অতঃপর তিনি صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এই আয়াতে করীমা তিলাওয়াত করেন:
وَلَوْلَا دَفْعُ اللهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْأَرْضُ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: ”আর যদি আল্লাহ্ মানুষের মধ্য থেকে একজনকে অন্যের দ্বারা প্রতিহত না করেন, তবে অবশ্যই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে।” (৩য় পারা, সূরা বাক্বারা, আয়াত- ২৫১) (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৮ম খন্ড, ২৯৯ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৩৫৩৩)
(২) “আল্লাহ্ তা’আলার নিকট সর্বোত্তম প্রতিবেশী হল- যে আপন প্রতিবেশীর কল্যাণকামী হয়ে থাকে।” (তিরমিযী, ৩য় খন্ড, ৩৭৯ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৯৫১)
(৩) “ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার দুষ্টামী থেকে প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।” (মুসলিম, ৪৩ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪৬)
(৪) “ঐ ব্যক্তি মুমীন নয়, যে নিজে পেট ভরে আহার করেছে, আর তার প্রতিবেশী অনাহারে রয়েছে।”(শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ২২৫ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৩৮৯) অর্থাৎ- সে পূর্ণঙ্গ মুমীন নয়।
(৫) “যে আপন প্রতিবেশীকে কষ্ট দিল, সে আমাকে কষ্ট দিল। আর যে আমাকে কষ্ট দিল, সে যেন আল্লাহ্ তা’আলাকে কষ্ট দিল।”(আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, ৩য় খন্ড, ২৪১ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৩)
(৬) “হযরত জিব্রাঈল عَلَيْهِ السَّلَام আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে ওসীয়ত করতে থাকেন,এমনকি আমার ধারণা হচ্ছিল যেন প্রতিবেশীকে মীরাসের (সম্পদের উত্তরাধীকারের) হকদার করে দেয়া হবে।” (বুখারী, ৪র্থ খন্ড, ১০৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৬০১৪)
(৭) “যে ব্যক্তি আল্লাহ্ এবং কিয়ামত দিবসের উপর ঈমান রাখে, তার উচিত আপন প্রতিবেশীর সাথে সুন্দর আচরণ প্রদর্শন করা।” (মুসলিম, ৪৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪৮)
(৮) “আশেপাশের চল্লিশ ঘর প্রতিবেশীদের অন্তর্ভূক্ত।” (মারাসিলে আবু দাউদ, ১৬ পৃষ্ঠা) হযরত সায়্যিদুনা ইমাম যুহরী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেছেন: ঘরের চতুর্দিকে চল্লিশ চল্লিশ ঘর উদ্দেশ্য। (মারাসিলে আবু দাউদ, ১৬ পৃষ্ঠা) “নুজহাতুল ক্বারী” কিতাবে বর্ণিত আছে: প্রতিবেশী কারা, এটিকে প্রত্যেক ব্যক্তি আপন প্রচলন এবং কার্যাবলীর দ্বারা বুঝে নেয়। (নুজহাতুল ক্বারী, ৫ম খন্ড, ৫৮৬ পৃষ্ঠা)
۞হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: প্রতিবেশীর অধিকারের মধ্যে/ প্রতি কর্তব্য সমূহের মধ্যে এগুলো রয়েছে যে; তাকে প্রথমে সালাম করবে, তার সাথে দীর্ঘ আলাপ না করা, তার অবস্থাদির সম্পর্কে অতিরিক্ত জিজ্ঞাসাবাদ না করা। যখন অসুস্থ হয়, তখন তার সেবা করা। বিপদের সময় তার সমবেদনা জ্ঞাপন করা, আর তাকে সাহায্য করা। খুশির সময় তাকে ধন্যবাদ/ মোবারকবাদ দেয়া, তার খুশিতে খুশি প্রকাশ করা। তার ভুলত্রুটিকে ক্ষমা করে দেয়া। ছাদ থেকে তার ঘরের দিকে উকি না মারা। তার ঘরের রাস্তা ছোট করে না দেয়া। সে নিজের ঘরে যা কিছু নিয়ে যাচ্ছে, তার প্রতি দেখার চেষ্টা না করা। যদি সে কোন দুর্ঘটনা বা কষ্টের শিকার হয়, তবে তাড়াতাড়ি তাকে সাহায্য করা, যখন সে ঘরে বিদ্যমান থাকবে না, তার ঘরের হিফাজত করা থেকে অলস না হওয়া। তার বিরুদ্ধে কোন কথা না শুনা এবং তার ঘরের অধিবাসীদের থেকে নিজের দৃষ্টিকে নিচু রাখা। তার বাচ্চাদের সাথে নম্র আচরণ করা। তার ধর্মীয় ও দুনিয়াবী যে কোন বিষয়ে যদি জ্ঞান না থাকে, এর সম্পর্কে তার পথনির্দেশনা করা। (ইহ্ইয়াউল উলুম, ২য় খন্ড, ২৬৭ পৃষ্ঠা)
۞হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর নিকট এক ব্যক্তি এসে আরয করলো: আমার এক প্রতিবেশী আমাকে কষ্ট দেয়, গালি দেয় ও বিরক্ত করে।তিনি বললেন: সে যদি তোমার ক্ষেত্রে আল্লাহর নাফরমানী করে, তবে তুমি তার ক্ষেত্রে আল্লাহর আনুগত্য করো। (ইহ্ইয়াউল উলুম, ২য় খন্ড, ২৬৬ পৃষ্ঠা)
۞কোন এক বুযুর্গের ঘরে ইঁদুরের প্রচুর উপদ্রব ছিলো। কেউ তাঁকে একটা বিড়াল রাখার পরামর্শ দিলেন। ঐ বুযুর্গ জবাবে বললেন: আমার আশংকা হচ্ছে যে, ইঁদুরগুলো বিড়ালের আওয়াজ শুনে ভীত হয়ে পালিয়ে প্রতিবেশীদের ঘরে গিয়ে ঢুকে পড়বে। তখন আমি ঐ লোকটির মতো হয়ে যাবো, যে ব্যক্তি কোন একটি কষ্ট পছন্দ করে না, অথচ ঐ কষ্ট অপরকে পৌঁছাতে চায়। (ইহ্ইয়াউল উলুম, ২য় খন্ড, ২৬৮ পৃষ্ঠা)
۞বর্ণিত আছে: কিয়ামতের দিন গরীব প্রতিবেশী ধনী প্রতিবেশীকে ধরে নিয়ে আল্লাহ্ তা’আলার দরবারে অভিযোগ করে বলবে; হে আমার প্রতিপালক! তাকে জিজ্ঞাসা করো, সে আমাকে তার সদ্ব্যবহার থেকে কেন বঞ্চিত করেছে এবং আমার জন্য তার দরজা কেন বন্ধ রেখেছে? (ইহ্ইয়াউল উলুম, ২য় খন্ড, ২৬৮ পৃষ্ঠা)
۞এক ব্যক্তি আরয করল: ইয়া রাসুলাল্লাহ্ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ! অমুক নারী নামায ও রোযা এবং সদকা প্রচুর পরিমাণে করে থাকে, কিন্তু তার মধ্যে এই দোষটি আছে যে, সে মুখে প্রতিবেশীদেরকে কষ্ট দেয়। হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “সে জাহান্নামের মধ্যে রয়েছে।” লোকটি পুনরায় আরয করলেন: হে আল্লাহর রাসুল صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم! অমুক নারী সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে। সে নামায, রোযা ও সদকা বেশী আদায় করে না, সে পনীরের টুকরো সদকা করে মাত্র। কন্তিু সে প্রতিবেশীদেরকে কষ্ট দেয় না। ইরশাদ করলেন: “ঐ নারী জান্নাতে রয়েছে।” (মুসনদে ইমাম আহমদ, ৩য় খন্ড, ৪৪১ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৯৬৮১)
۞ তাজেদারে মদীনা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “প্রতিবেশী তিন ধরণের রয়েছে: কারো প্রতি তিনিটি কর্তব্য রয়েছে, কারো প্রতি দু’টি, আর কারো প্রতি একটি কর্তব্য রয়েছে। যেই প্রতিবেশী মুসলমান হবার সাথে সাথে নিকটাত্মীয়ও হয়, তার প্রতি তিনটি কর্তব্য রয়েছে: প্রতিবেশী হিসেবে ও মুসলমান হিসেবে এবং নিকটাত্মীয় হিসেবে। মুসলমান প্রতিবেশীর প্রতি দু’টি কর্তব্য রয়েছে: প্রতিবেশী হিসেবে ও মুসলমান হিসেবে এবং কাফির প্রতিবেশীর প্রতি মাত্র একটি কর্তব্য, তা হচ্ছে প্রতিবেশী হিসেবে।” (শুয়াবুল ঈমান, ৭ম খন্ড, ৮৩ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৯৫৬০)
۞হযরত সয়্যিদুনা বায়েযিদ বোস্তামী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর অগ্নিপূজারী প্রতিবেশী ছিল। ইহুদী প্রতিবেশী সফরে গেল। তার পরিবার পরিজন ঘরে রেখে যায়। রাতে ইহুদীর ছোট বাচ্চা কান্না করত। তিনিرَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ জিজ্ঞাসা করলেন: বাচ্চা কান্না করে কেন? ইহুদীর স্ত্রী বলল: ঘরে চেরাগ/ প্রদীপ/ বাতি নেই, বাচ্চা অন্ধকারে ভয় পেয়ে থাকে। ঐ দিন থেকে তিনি প্রত্যহ চেরাগে ভালভাবে তেল ভর্তি করে চেরাগ জ্বালিয়ে ইহুদীর ঘরে পাঠিয়ে দিতেন। যখন ইহুদী লোকটি ফিরে আসল তখন তার স্ত্রী এ ঘটনা শুনায়। ইহুদী বলল: যে ঘরে বায়েযিদের চেরাগ এসে গেছে সেখানে অন্ধকার কেন থাকবে! তারা সকলে মুসলমান হয়ে যায়। (মিরআত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৫৭৩ পৃষ্ঠা। তাযকিরাতুল আউলিয়া, ১ম অংশ, ১৩২ পৃষ্ঠা)
অসংখ্য সুন্নাত শিখার জন্য মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ২টি কিতাব (১) ৩১২ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “বাহারে শরীয়াত” ১৬তম খন্ড (২) ১২০ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব ‘সুন্নাত ও আদব’ হাদিয়া দিয়ে সংগ্রহ করে পাঠ করুন। সুন্নাত প্রশিক্ষনের একটি সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলা সমূহতে আশেকানে রাসুলদের সাথে সুন্নাতে ভরা সফর করা।
লুটুটনে রহমতে কাফিলে মে চলো, শিখনে সুন্নাতে কাফিলে মে চলো।
হোগি হাল মুশুশকিলে কাফিলে মে চলো, খতম হো শামতে, কাফিলে মে চলো।
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা “মুহাম্মদ ইলয়াস আত্তার” কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত ৪০ পৃষ্ঠা সম্বলিত "কিয়ামতের পরীক্ষা" নামক রিসালার ৩৩-৩৬ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই রিসালাটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন। অন্যকে উপহার দিন।
ইসলামীক বাংলা বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন