বিভাগ সমূহ

শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৭

হজ্বের মাসাইল: পর্ব ১৮- তাওয়াফে জিয়ারত, রমী ও বিদায়ী তাওয়াফ

তাওয়াফে জিয়ারতের ১০টি মাদানী ফুল

﴾১﴿ তাওয়াফে জিয়ারতকে তাওয়াফে ইফাজা বলে। এটা হজ্বের আরেকটি রুকন। এর সময় ১০ই জুলহিজ্জার দিন সুবহে সাদিক থেকে শুরু হয়। এর পূর্বে (তা আদায়) হতে পারেনা। এতে ৪ চক্কর ফরজ এটা (৪ চক্কর) ছাড়া তাওয়াফ হবেই না এবং হজ্ব হবে না, আর ৭ চক্কর পূর্ণ করা ওয়াজিব।
তাওয়াফে জিয়ারত, রমী ও বিদায়ী তাওয়াফ
﴾২﴿ তাওয়াফে জিয়ারত জিলহজ্জ মাসের দশ তারিখ করা উত্তম। সুতরাং প্রথমে জামরাতুল আকাবার রমী অতঃপর কোরবানী এবং এরপর হলক অথবা তাকছীর হতে অবসর হয়ে যাবেন। এখন উত্তম হল যে, কোরবানীর কিছু মাংস খেয়ে পায়ে হেঁটে মক্কা মুকাররমায় উপস্থিত হোন। আর ইহাও উত্তম যে, বাবুস সালাম দিয়ে মসজিদে হারাম শরীফে প্রবেশ করবেন। 
﴾৩﴿ (এর) উত্তম সময় তো ১০ তারিখ কিন্তু তিন দিনের মধ্যে অর্থাৎ ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাওয়াফে জিয়ারত করতে পারবেন। কেননা ১০ তারিখ খুব বেশী পরিমাণে ভীড় হয়ে থাকে। তাই নিজের জন্য যেভাবে যখন সহজ হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখাই খুব উপকারী। এভাবে اِنۡ شَآءَ اللہ عَزَّوَجَلّ অনেক কষ্টদায়ক বস্তু এবং অনেক সময় অন্যদেরকে কষ্ট দেয়া, মহিলাদের সাথে (ভীড়ে) মিশে একাকার হয়ে যাওয়া, তাদের সাথে শরীর ঘর্ষণ হওয়া এবং নফস ও শয়তানের ধোঁকায় পড়ে যাওয়া অনেক গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবেন।
﴾৪﴿ অজু সহকারে এবং সতর ঢাকা অবস্থায় তাওয়াফ করুন। (অধিকাংশ ইসলামী বোনদের হাতের কব্‌জি (কব্‌জি থেকে কনুই পর্যন্ত) তাওয়াফের সময় খোলা থাকে। যদি তাওয়াফে জিয়ারতের চার চক্কর অথবা তার চেয়ে বেশী এরকম করে আদায় করে যে, হাতের কব্‌জির ৪ অংশের ১ অংশ অথবা মাথার ৪ অংশের ১ অংশের চুল খোলা ছিল তাহলে দম ওয়াজিব হয়ে যাবে। হ্যাঁ! যদি সতর ঢাকা অবস্থায় এ তাওয়াফ পুনরায় আদায় করে দেয় তাহলে ‘দম’ রহিত হয়ে যাবে।) 
﴾৫﴿ যদি কিরানকারী এবং হজ্বে ইফরাদ আদায়কারী তাওয়াফে কুদুমের মধ্যে আর তামাত্তুকারী হজ্বের ইহরাম বাঁধার পরে কোন নফল তাওয়াফের মধ্যে হজ্বের ‘রমল এবং সাঈ’থেকে অবসর হয়ে থাকে (অর্থাৎ তা এর মধ্যে আদায় করে থাকেন) তাহলে এখন তাওয়াফে জিয়ারতের মধ্যে উহার (আদায় করার আর) প্রয়োজন হবে না। 
﴾৬﴿ যদি রমল এবং সাঈ পূর্বে না করে থাকে, তাহলে এখন নিত্যদিনের পোষাকেই তা আদায় করে নিন। হ্যাঁ! তার এতে ইজতিবা করা সম্ভব হবে না। কেননা এখন আর এর সময় নেই। 
﴾৭﴿ যে ব্যক্তি (এই তাওয়াফ) ১১ তারিখ না করে থাকেন, তাহলে ১২ তারিখে করে নিন। এই সময়ের পর বিনা কারণে দেরী করা গুনাহ। জরিমানা হিসেবে একটি কোরবানী করতে হবে। হ্যাঁ! যেমন: মহিলার হায়েজ অথবা নেফাস শুরু হয়ে গেল তাহলে সে তা শেষ হওয়ার পরে তাওয়াফ করবে। কিন্তু হায়েজ অথবা নেফাস থেকে যদি এমন সময়ে পাক হয় যে, গোসল করে ১২ তারিখে সূর্য ডুবার পূর্বে ৪টি চক্কর করে নিতে পারবে তাহলে তা করে নেয়া ওয়াজিব। না করলে গুনাহগার হবে। এমনই ভাবে যদি এতটুকু সময় সে পেয়েছিল, যে তাওয়াফ করে নিতে পারত কিন্তু সে করল না, আর এ মুহুর্তে তার হায়েজ অথবা নেফাস চলে আসল তাহলে সে গুনাহগার হল। (প্রাগুক্ত, ১১৪৫ পৃষ্ঠা) 
﴾৮﴿ যদি তাওয়াফে জিয়ারত না করে থাকে তাহলে মহিলারা (ইহরাম হতে) হালাল হবে না। যদিওবা কয়েক বৎসর অতিবাহিত হয়ে যায়। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ২৩২ পৃষ্ঠা) 
﴾৯﴿ তাওয়াফ হতে অবসর হয়ে দুই রাকাত ‘ওয়াজিবুত তাওয়াফের’ নামায নিয়মানুযায়ী আদায় করবেন। এরপর মুলতাজিমেও হাজেরী দিবেন এবং জমজমের পানিও পেট ভরে পান করবেন। 
﴾১০﴿ اَلْحَمْدُ لِلّٰہ عَزَّوَجَلَّ! আপনাকে মোবারকবাদ যে, আপনার হজ্ব পরিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং মহিলারাও (স্ত্রীগণও) হালাল হয়ে গেছে।

صَلُّوْا عَلَی الۡحَبِیۡب! صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد

১১ এবং ১২ তারিখের রমী’র ১৮টি মাদানী ফুল

﴾১﴿ ১১ এবং ১২ জুলহিজ্জায় তিনটি শয়তানকেই কংকর নিক্ষেপ করতে হবে। উহার ধারাবাহিকতা হল নিম্নরূপ:-
প্রথমে জামরাতুল উলায় (অর্থাৎ ছোট শয়তান), অতঃপর জামরাতুল উসতায় (অর্থাৎ মধ্যম শয়তান) এবং সর্বশেষে জামরাতুল আকাবার (অর্থাৎ বড় শয়তান)। 
﴾২﴿ দ্বি প্রহরের পর জামরাতুল উলা (অর্থাৎ ছোট শয়তান) এর নিকট আসবেন এবং ক্বিবলার দিকে মুখ করে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবেন। (কংকর ধরার এবং নিক্ষেপ করার নিয়ম এই কিতাবে বর্ণিত আছে) কংকর সমূহ নিক্ষেপ করে জামরা হতে একটু আগে অগ্রসর হোন এবং বাম হাতের দিকে ফিরে ক্বিবলামূখী হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত এমনভাবে উঠান যেন হাতের তালু সমূহ আসমানের দিকে নয় বরং ক্বিবলার দিকে থাকে১৬। এখন দোআ ও ইস্তিগফারের মধ্যে কমপক্ষে ২০টি আয়াত তিলাওয়াত করার সমপরিমাণ সময় মশগুল থাকুন। 
﴾৩﴿ এখন জামরাতুল উসতা (অর্থাৎ মধ্যম শয়তানের) ক্ষেত্রেও এরকম করুন। 
﴾৪﴿ অতঃপর সর্বশেষে জামরাতুল আকাবা (অর্থাৎ বড় শয়তান) এর উপরও এ রকম রমী করুন, যেভাবে আপনি দশ তারিখে রমী করেছেন। স্মরণ রাখবেন যে, বড় শয়তানকে রমী করার পর আপনি সেখানে অবস্থান করবেন না। তৎক্ষণাৎ ফিরে আসবেন এবং ঐ সময়টুকুতে দোআ করে নিবেন। (বিশুদ্ধ নিয়ম এটাই কিন্তু বর্তমানে দ্রুত ফিরে আসা অসম্ভব ব্যাপার। তাই কংকর মেরে কিছুটা পথ সামনে গিয়ে ইউটার্ন দিয়ে আসার ব্যবস্থা করে নিন।) 
﴾৫﴿ ১২ তারিখেও এরকম তিনটি জামরাতে রমী করবেন। 
﴾৬﴿ এগার এবং বার তারিখের রমীর সময় সূর্য ঢলে পড়ার পর (অর্থাৎ যোহরের ওয়াক্তের শুরু) থেকে শুরু হয়। সুতরাং ১১ ও ১২ তারিখের রমী দ্বি প্রহরের পূর্বে কোনো ভাবেই শুদ্ধ হবে না। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৪৮ পৃষ্ঠা) 
﴾৭﴿ ১০, ১১ ও ১২ তারিখের রাত (অধিকাংশ অর্থাৎ প্রতিটি রাতের অর্ধেকের চেয়ে বেশী অংশ) মীনা শরীফে অতিবাহিত করা সুন্নাত। 
﴾৮﴿ ১২ তারিখে রমী করার পর আপনার ইখতিয়ার (অনুমতি) রয়েছে যে, সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে মক্কা মুকাররমার দিকে রওয়ানা হয়ে যেতে পারবেন। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর চলে যাওয়া আপনার জন্য দোষণীয়। এখন আপনাকে মীনার মধ্যেই অবস্থান করে ১৩ তারিখ দ্বিপ্রহর ঢলে পড়ার পরে নিয়মানুযায়ী তিনটি শয়তানকেই কংকর নিক্ষেপ করে মক্কা মুকাররমায় যেতে হবে ইহাই উত্তম। 
﴾৯﴿ যদি মীনা শরীফের সীমানার মধ্যেই ১৩ তারিখের সুবহে সাদিক হয়ে যায়, তাহলে রমী করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। যদি রমী করা ব্যতীত চলে যান, তাহলে দম ওয়াজিব হয়ে যাবে। 
﴾১০﴿ ১১ এবং ১২ তারিখের রমী করার সময় হল সূর্য ঢলে পড়া (অর্থাৎ যোহরের ওয়াক্ত আরম্ভ হওয়া) থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত। তবে কোন অপারগতা ব্যতীত সূর্য ডুবে যাওয়ার পরে রমী করা মাকরূহ। 
 ﴾১১﴿ ১৩ তারিখের রমী করার সময় হল, সুবহে সাদিক হতে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। কিন্তু সুবহে সাদিক হতে যোহরের সময় শুরু হওয়া পর্যন্ত সময়ে রমী করা মাকরূহে (তানযীহি)। যোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পরে রমী করা সুন্নাত। 
﴾১২﴿ যদি কোন দিনের রমী থেকে যায় বা আদায় করা না হয়, তাহলে তা দ্বিতীয় দিন কাযা আদায় করবে এবং দমও দিতে হবে। কাযা আদায় করার সর্বশেষ সময় হল ১৩ তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। 
﴾১৩﴿ এক দিনের রমী অনাদায়ী থেকে গেল, আর আপনি ১৩ তারিখের সূর্যাস্তের আগে আগেই কাযা করে নিলেন তারপরও এবং যদি কাযা আদায় না করেন তাহলেও, অথবা যদি একদিনের বেশী দিন সমূহের রমী অবশিষ্ট রয়ে যায় বরং যদি মোটেও রমী না করে থাকেন, তাহলে প্রত্যেক অবস্থায় শুধুমাত্র একটি দম ওয়াজিব হবে। 
﴾১৪﴿ অতিরিক্ত বেঁচে যাওয়া কংকর সমূহ যদি কারো প্রয়োজন হয় তাহলে তাকে দিয়ে দিন। অথবা কোন পবিত্র স্থানে ফেলে দিন। এগুলো জামরাতের উপর নিক্ষেপ করা মাকরূহ (তানযীহি)। 
﴾১৫﴿ আপনি কংকর নিক্ষেপ করেছেন, আর উহা কারো মাথা ইত্যাদিতে আঘাত করে জামরাতে লেগেছে। অথবা তিন হাতের দূরত্বে গিয়ে পড়েছে তাহলে জায়েয হয়ে যাবে। 
﴾১৬﴿ হ্যাঁ! যদি আপনার কংকর কারো উপর গিয়ে পড়ে, আর সে হাত ইত্যাদি নাড়া বা ঝাড়া দিল, আর এ কারণে যদি ঐ স্থান পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তাহলে উহার পরিবর্তে দ্বিতীয় আরেকটি মারবেন। 
﴾১৭﴿ উপরের স্থান হতে রমী করেছেন আর কংকর জামরায় চারপাশে তৈরীকৃত পেয়ালার মত প্রাচীর (অর্থাৎ সীমানার দেওয়াল) এর মধ্যে পড়েছে, তাহলে জায়েয হবে। কারণ প্রাচীর হতে গড়িয়ে হয়ত তা জামরাতে লাগবে অথবা তিন হাতের দূরত্বের অভ্যন্তরে গিয়ে পড়বে। 
﴾১৮﴿ যদি সন্দেহ হয় যে, কংকর যথাস্থানে পৌঁছেছে নাকি পৌঁছেনি, তাহলে আবার নিক্ষেপ করুন।(বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৪৬, ১১৪৮ পৃষ্ঠা)
-------------------
১৬রমীয়ে জামরা করার পর দোআ করার ক্ষেত্রে হাতের তালুদ্বয়কে ক্বিবলার দিকে করে রাখুন। হাজরে আসওয়াদ এর সামনে দাঁড়ানোর সময়ও হাতের তালুদ্বয়কে হাজরে আসওয়াদের দিকে করে রাখবেন, আর অবশিষ্ট সর্বক্ষেত্রে আসমানের দিকে করে রাখবেন।
-------------------

রমীর ১২টি মাকরূহ

(১নং ও ২নং উভয়টি সুন্নাতে মুআক্কাদা ছেড়ে দেয়ার কারণে দোষণীয়। না হয় অবশিষ্ট সবকটি মাকরুহে তানযিহী)

﴾১﴿ একান্ত অপারগতা ব্যতীত ১০ তারিখের রমী সূর্যাস্তের পরে করা সুন্নাতে মুআক্কাদার বিপরীত হওয়ার দরুণ নিন্দনীয়। 
﴾২﴿ জামরার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা ঠিক না রাখা। 
﴾৩﴿ ১০ তারিখের রমী যোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্বে করা। 
﴾৪﴿ বড় পাথর নিক্ষেপ করা। 
﴾৫﴿ বড় পাথর ভেঙ্গে কংকর সমূহ তৈরী করা। 
﴾৬﴿ মসজিদের কংকর সমূহ নিক্ষেপ করা। 
﴾৭﴿ জামরার নিচে যে সকল কংকর পড়ে থাকে উহাকে উঠিয়ে নিক্ষেপ করা (মাকরূহে তানযিহী)। কারণ এগুলো (আল্লাহর দরবারে) কবুল না হওয়া কংকর যেগুলো কবুল হয়ে থাকে সেগুলো অদৃশ্য ভাবে উঠিয়ে নেয়া হয় এবং কিয়ামতের দিন উহা নেকী সমূহের পাল্লায় রাখা হবে। 
﴾৮﴿ জেনেবুঝে ৭টির বেশী কংকর নিক্ষেপ করা। 
﴾৯﴿ অপবিত্র কংকর নিক্ষেপ করা। 
﴾১০﴿ রমী করার জন্য যে দিক নির্ধারণ করা হয়েছে তার বিপরীত করা। 
﴾১১﴿ জামরা সমূহ হতে ৫ হাতের কম দূরত্বে দাঁড়ানো। বেশী হলে কোন অসুবিধা নেই। (অবশ্য এটা জরুরী যে, খুবই নিকটে পৌঁছে গেলে তার পরও কংকর নিক্ষেপই করতে হবে, শুধুমাত্র রেখে দেয়ার মত করে মারলে হবে না)
﴾১২﴿ নিক্ষেপ করার পরিবর্তে কংকর জামরার নিকটে ঢেলে দেওয়া।(বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৪৮-১১৪৯ পৃষ্ঠা)

صَلُّوْا عَلَی الۡحَبِیۡب! صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
বিদায়ী তাওয়াফের ১৯টি মাদানী ফুল

﴾১﴿ যখন বিদায় নেওয়ার ইচ্ছা হবে, তখন বহিরাগত (মীকাতের বাইরের) হাজীর উপর বিদায়ী তাওয়াফ করা ওয়াজিব। ইহা আদায় না করলে দম ওয়াজিব হবে। এটাকে তাওয়াফে বিদা ও তাওয়াফে সদরও বলে থাকে। 
﴾২﴿ এর মধ্যে ইস্তেবা, রমল এবং সাঈ নেই।
﴾৩﴿ ওমরাকারীদের জন্য ওয়াজিব নয়। 
﴾৪﴿ হায়েজ ও নেফাসরত মহিলার যদি (ফিরার) সিট বুকিং করা থাকে (যা অতি সন্নিকটে) তাহলে চলে যেতে পারবে, এখন তার উপর এই তাওয়াফ ওয়াজিব নয় এবং দমও ওয়াজিব নয়। 
﴾৫﴿ বিদায়ী তাওয়াফে শুধুমাত্র তাওয়াফের নিয়্যতই যথেষ্ট। ওয়াজিব, আদা, বিদা (অর্থাৎ বিদায়) ইত্যাদি শব্দ সমূহ নিয়্যতের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করা আবশ্যক নয়। এমনকি নফল তাওয়াফের নিয়্যত করলেও ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। 
﴾৬﴿ সফরের (অর্থাৎ চলে যাওয়ার) ইচ্ছা ছিল, বিদায়ী তাওয়াফ করে নিল। অতঃপর কোন কারণে অবস্থান করতে হচ্ছে, যেমন গাড়ী ইত্যাদির ক্ষেত্রে সাধারণত বিলম্ব হয়ে যায়, আর এখন একামত তথা অবস্থানের নিয়্যত না করলে ঐ তাওয়াফই যথেষ্ট। দ্বিতীয়বার করার প্রয়োজন নেই এবং মসজিদুল হারামে নামায ইত্যাদির জন্য যেতেও কোন অসুবিধা নেই। তবে হ্যাঁ মুস্তাহাব হল যে, পুনরায় তাওয়াফ করে নেওয়া যাতে তাওয়াফই সর্বশেষ কাজ হয়। 
﴾৭﴿ তাওয়াফে জিয়ারতের পরে প্রথম যে তাওয়াফ করা হবে উহাই বিদায়ী তাওয়াফ। 
﴾৮﴿ যে তাওয়াফ ছাড়া বিদায় হয়ে গেল সে যদি মীকাত অতিক্রম না করে থাকে তাহলে আবার ফিরে আসবে এবং তাওয়াফ করে নিবে। 
﴾৯﴿ যদি মীকাত অতিক্রম করার পরে স্মরণ হয় তখন আবার ফিরে আসা আবশ্যক নয়। বরং দমের জন্য কোন পশু হেরমে পাঠিয়ে দিবে, আর যদি পুনরায় ফিরে আসে তাহলে ওমরার ইহরাম করে প্রবেশ করবে এবং ওমরা হতে অবসর হয়ে বিদায়ী তাওয়াফ করবে। এখন এই অবস্থায় তার থেকে পূর্বের দম রহিত হয়ে যাবে। 
﴾১০﴿ বিদায়ী তাওয়াফের যদি তিন চক্কর ছুটে যায়, তাহলে প্রতি চক্করের পরিবর্তে একটি করে সদকা দিবে, আর যদি চার চক্করের কম করে থাকে, তাহলে দম দিতে হবে। 
﴾১১﴿ যদি সম্ভব হয় তাহলে অস্থিরভাবে অঝোরনয়নে কেঁদে কেঁদে বিদায়ী তাওয়াফ আদায় করুন। কারণ আপনি তো জানেন না যে, আগামীতে এ সৌভাগ্য সহজে আর আসবে কিনা? 
﴾১২﴿ তাওয়াফের পরে নিয়মানুযায়ী দুই রাকাত ‘ওয়াজিবুত তাওয়াফ’ (তথা তাওয়াফের ওয়াজিব নামাজ) আদায় করুন। 
﴾১৩﴿ বিদায়ী তাওয়াফের পর নিয়ামানুযায়ী জমজম শরীফের পাশে উপস্থিত হয়ে জমজমের পানি পান করুন এবং শরীরের উপরও ঢালুন। 
﴾১৪﴿ অতঃপর কাবার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে যদি সম্ভব হয় তাহলে কাবার পবিত্র চৌকাটে চুম্বন দিন এবং হজ্ব ও জিয়ারত কবুল হওয়ার জন্য এবং বারবার উপস্থিত হওয়ার তৌফিক কামনা করে দোআ করুন, আর দোআয়ে জামে (অর্থাৎ رَبَّنَا اٰتِنَا....... শেষ পর্যন্ত) পড়ুন অথবা এই দোআটি পড়ুন:

اَلسَّآ ئِلُ بِبَابِکَ يَسْأَلُکَ مِنْ فَضْلِکَ وَ مَعْرُوْفِکَ وَ يَرْجُوْ رَحْمَتَکَ

অনুবাদ: তোমার দরজায় দাঁড়িয়ে ভিক্ষুক তোমার নিকট দয়া ও করুণা ভিক্ষা চাচ্ছে এবং তোমার রহমত কামনা করছে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৫২ পৃষ্ঠা) ﴾১৫﴿ মুলতাজিমে এসে কাবার গিলাফ জড়িয়ে ধরে পূর্বের নিয়মে আলিঙ্গন করুন এবং জিকির দরূদ ও দোআ বেশী বেশী করে করুন। ﴾১৬﴿ অতঃপর যদি সম্ভব হয় তাহলে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করুন এবং যে অশ্রু অবশিষ্ট আছে উহাও প্রবাহিত করুন। ﴾১৭﴿ অতঃপর কাবার দিকে মুখ করে উল্টো পায়ে অথবা নিয়মানুযায়ী চলতে চলতে বারবার ফিরে ফিরে কাবায়ে মুআজ্জমাকে বেদনার দৃষ্টিতে দেখে দেখে উহার বিচ্ছেদে অশ্রু প্রবাহিত অবস্থায় অথবা কমপক্ষে কান্নার আকৃতি ধারণ করে মসজিদে হারাম হতে নিয়মানুযায়ী বাম পা বাড়িয়ে বের হয়ে আসুন এবং বের হয়ে যাওয়ার দোয়া পড়ুন। ﴾১৮﴿ হায়েজ ও নেফাস বিশিষ্ট ইসলামী বোন মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে বেদনার দৃষ্টিতে কেঁদে কেঁদে কা’বা শরীফের জিয়ারত করুন এবং ক্রন্দনরত অবস্থায় দোয়া করতে করতে ফিরে আসুন। ﴾১৯﴿ অতঃপর সামর্থ অনুযায়ী মক্কায়ে মুআজ্জমার ফকীরদের মধ্যে ধন সম্পদ বন্টন করুন। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৫১-১১৫৩ পৃষ্ঠা)

ইয়া ইলাহী! হার বরছ হজ্ব কি সাআদাত হো নসিব
বাদ হজ্ব, জা কর করেঁ দিদার দরবারে হাবিব।

صَلُّوْا عَلَی الۡحَبِیۡب! صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks for supporting.