প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আজকাল তো মামলাই উল্টা নজরে পড়ছে বরং এখনতো বাস্তবিক অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে, যখন কেউ কারো সাথে ঝগড়া করে বসে, তখন গর্জে ওঠে এমনি বলে ফেলে, “চুপ হয়ে যা! নতুবা মনে রাখিশ! আমি রোযাদার। আর এ রোযার ইফতার তোকে দিয়েই করবো।” অর্থাৎ তোকে খেয়ে ফেলবো। আল্লাহর পানাহ! তওবা!! তওবা!!! এ ধরণের কথা কখনো মুখ থেকে বের না হওয়া চাই; বরং বিনয়ই প্রকাশ করা চাই। এসব বিপদ থেকে আমরা শুধু তখনই বাঁচতে পারবো, যখন নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে নিয়মিতভাবে রোযা পালনের চেষ্টা করাবো।
বাকী পর্ব পড়তে ক্লিক করুন- প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব
বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের রোযা |
অঙ্গ প্রত্যঙ্গের রোযার সংজ্ঞা
সুতরাং এখন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রোযা অর্থাৎ দেহের সমস্ত অঙ্গকে গুনাহ্ থেকে রক্ষা করা’ এটা শুধু রোযার জন্য নির্দিষ্ট নয়, বরং গোটা জীবনই ওইসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে গুনাহ্ থেকে বিরত রাখা জরুরী। আর এটা তখনই সম্ভব, যখন আমাদের অন্তর গুলোতে আল্লাহর ভয় পাকাপোক্ত হয়ে যাবে। আহ! কিয়ামতের ওই বেহুঁশকারী দৃশ্য স্মরণ করুন, যখন চতুর্দিকে নফসী নফসী’ এর অবস্থা হবে, সূর্য-আগুন বর্ষণ করবে, জিহ্বাগুলো পিপাসার তীব্রতার কারণে মুখ থেকে বের হয়ে পড়বে, স্ত্রী স্বামী থেকে, মা তার কলিজার টুকরা সন্তান থেকে, পিতা আপন পুত্র, আপন চোখের মণি থেকে পালাবে, অপরাধী-পাপীদেরকে ধরে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে, তাদের মুখের উপর মোহর চেপে দেয়া হবে এবং তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাদের গুনাহসমুহের তালিকা শুনাতে থাকবে, যা কুরআন পাকের সূরা ‘ইয়াসীন’-এ এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে-
الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَىٰ أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ-
আজ আমি তাদের মুখগুলোর উপর মোহর করে দেবো। আর তাদের হাতগুলো আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পাগুলো তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে। (পারা-২৩, ইয়াসিন, আয়াত-৬৫)
হায়! দূর্বল ও অক্ষম মানুষ! কিয়ামতের ওই কঠিন সময় সম্পর্কে নিজের হৃদয়কে সতর্ক করুন। সর্বদা নিজের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টায় অব্যাহত রাখুন। এখন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রোযার বিস্তারিত বর্নণা পেশ করা হচ্ছে-
চোখের রোযা
চোখের রোযা এভাবে রাখতে হবে যে, চোখ যখনই দৃষ্টিপাত করবে তখন শুধু বৈধ বিষয়াদির প্রতি করবে। চোখ দ্বারা মসজিদ দেখুন! কুরআন মজীদ দেখুন! আউলিয়া কিরাম رَحِمَهُمُ الله تَعَالٰى এর মাযারগুলোর যিয়ারত করুন! সম্মানিত ওলিগণ (আল্লাহ তাঁদের উপর রহমত বর্ষণ করুন) ও নেকবান্দাদের দীদার করুন! (আল্লাহ দেখালে) কাবা-ই-মুআযযামার زادهالله شرفا وتعظيما আলোকময় পরিবেশ দেখুন! মক্কা মুকাররমার زادهالله شرفا وتعظيما সুবাসিত গলিগুলো ও সেখানকার উপত্যকা এবং পাহাড়গুলো দেখুন! সোনালী জালিগুলোর আলোর ছড়াছড়ি দেখুন! জান্নাতের প্রিয় বাগানের বাহার দেখুন! খুশবুদার মদীনার ঘরবাড়ী ও দেয়ালগুলো দেখুন! সবুজ সবুজ গম্বুজ ও মিনারগুলো দেখুন! প্রিয় মদীনার ময়দান ও বাগান দেখুন!
প্রিয় রোযাদাররা! চোখের রোযা রাখুন! অবশ্যই রাখুন! বরং রোযাতো চব্বিশ ঘন্টা, ত্রিশ দিন ও বার মাসই রাখা চাই। আল্লাহর প্রদত্ত পবিত্র চোখগুলো দিয়ে কখনোই ফিল্ম দেখবেন না, নাটক দেখবেন না, না-মুহরিম নারী(পরনারী) দের দিকে তাকাবেন না। যৌন প্রবৃত্তি সহকারে ‘আমরাদ’ অর্থাৎ দাড়ি গজায়নি এমন বালকদের দিকে তাকাবেন না। কারো বিবস্ত্র লজ্জাস্থানের দিকে দেখবেন না। আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন করে দেয় এমন খেলাধুলা ও তামাশা, যেমন-প্রতিযোগীতা, বানরের নাচ ইত্যাদি দেখবেন না। (সেগুলোকে নাচানো ও নাচ দেখা উভয়ই অবৈধ)। ক্রিকেট, কাবাডী, ফুটবল, হকি, তাস, দাবা, ভিডিও গেমস, টেবিল-টেনিস, ইত্যাদি খেলা দেখবেন না। (যখন দেখারই অনুমতি নেই তখন খেলার কিভাবে অনুমতি থাকবে?) তাছাড়া, ওগুলোর মধ্যে কিছু খেলাতো এমনই রয়েছে, যা যৎসামান্য কাপড় কিংবা হাফ পেন্ট পরে খেলা হয়। যার ফলে হাঁটু, বরং (আল্লাহর পানাহ্!) রান পর্যন্ত খোলা থাকে। বস্তুত: এভাবে অপরের সামনে রান ও হাঁটু খোলা রাখা গুনাহ্! অন্য কাউকে এমতাবস্থায় দেখাও গুনাহ্! কারো ঘরে বিনা অনুমতিতে উঁকি মেরে দেখা, কারো চিঠি (উভয় পক্ষের অনুমতি ব্যতীত) দেখবেন না। কারো ডায়েরীর লিখা অনুমতি ছাড়া দেখবেন না। আর মনে রাখবেন! হাদীসে পাকে বর্ণিত হয়েছে, “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের চিঠি বিনা অনুমতিতে দেখে, সে যেনো আগুনই দেখে।” (হাকিম কৃত মুস্তাদরাক, খন্ড-৫ম, পৃ-৩৮৪, হাদীস নং-৭৭৭৯)
কানের রোযা
কানের রোযা হচ্ছে, শুধু আর শুধু বৈধ কথাবার্তা শুনবেন। যেমন কান দ্বারা তিলাওয়াত ও না’তগুলো শুনবেন। সুন্নতে ভরা বয়ান শুনবেন। আযান ও ইকামত শুনবেন ও জবাব দিবেন। কিরাত শুনবেন। ভালো ভালো কথা শুনবেন। গান-বাজনাদি, অনর্থক কিংবা অশ্লীল গল্প শুনবেন না। কারো গীবত (পরনিন্দা) চুগলখোরী শুনবেন না। কারো দোষচর্চা কখনো শুনবেন না। দু’জন লোক পৃথক হয়ে গোপনে আলাপ করছে, সেগুলো কান লাগিয়ে শুনবেন না। হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর বাণী হচ্ছে, যে ব্যক্তি কোন দলের কথা কান লাগিয়ে শুনে এবং ঐ দল তা অপছন্দ করে তবে কিয়ামতের দিনে তার কানে গলিত গরম শিশা ঢেলে দেয়া হবে। (আল মুজামিল কবীর, খন্ড-১১, পৃ-১৯৮)
জিহ্বার রোযা
জিহ্বার রোযা হচ্ছে জিহ্বা শুধু ভালো ও বৈধ কথা বার্তার জন্যই নড়াচাড়া করবে। যেমন-জিহ্বা দ্বারা কুরআন তিলাওয়াত করুন। যিকর ও দুরূদ পড়ুন, না’ত শরীফ পড়ুন, দরস দিন, সুন্নতে ভরা বয়ান করুন! নেকীর দা’ওয়াত দিন! ভালো ভালো ও প্রিয় প্রিয় ধর্মীয় কথাবার্তা বলুন! খবরদার! গালি-গালাজ, মিথ্যা, গীবত, চোগলখোরী, অনর্থক বক বক ইত্যাদি দ্বারা যেনো মুখ নাপাক না হয়। চামচ যদি আবর্জ্জনায় ফেলে দেয়া হয়, তাহলে দু-এক গ্লাস পানি দ্বারা ধুয়ে নিলে পবিত্র হয়ে যাবে; কিন্তু জিহ্বা অশ্লীলতা দ্বারা নাপাক হয়ে গেলে সাতসমুদ্রের পানি দ্বারাও পবিত্র করতে পারবে না।
জিহ্বাকে হেফাজত না করার ক্ষতি
হযরত সায়্যিদুনা আনাস رضى الله عنه থেকে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মদ ﷺ সাহাবায়ে কিরাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمْ কে একদিন রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন, আর ইরশাদ করলেন, “যতক্ষণ আমি তোমাদেরকে অনুমতি না দেই, ততক্ষণ পর্যন্ত ইফতার করবে না।” সাহাবায়ে কিরাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمْ রোযা রাখলেন যখন সন্ধ্যা হলো, তখন সমস্ত সম্মানিত সাহাবী একেকজন করে মহান বরকতময় দরবারে হাযির হয়ে আরয করতে থাকেন, “হে আল্লাহর রসূল ﷺ! আমি রোযা রেখেছি। এখন আমাকে ইফতার করার অনুমতি দিন!” হুযুর ﷺ তাঁকে অনুমতি দিতেন। একজন সাহাবী رضى الله عنه হাযির হয়ে আরয করলেন, “ইয়া নবীয়াল্লাহ ﷺ! আমার পরিবারে দু’জন যুবতী কন্যাও রয়েছে, যারা রোযা রেখেছে এবং আপনার ﷺ মহান দরবারে আসতে লজ্জাবোধ করছে। তাদেরকে ইফতার করার অনুমতি দিন, যাতে তারাও ইফতার করতে পারে। আল্লাহর মাহবুব অদৃশ্যের সংবাদদাতা নবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ তাঁর দিক থেকে নূরানী চেহারা ফিরিয়ে নিলেন। সাহাবী দ্বিতীয়বার আরয করলেন। হুযুর পুনরায় চেহারায়ে আনওয়ার ফিরিয়ে নিলেন। অতঃপর সাহাবী তৃতীয়বার যখন কথাটার পুনরাবৃত্তি করলেন, তখন অদৃশ্যের সংবাদদাতা রসূল হযরত মুহাম্মদ ﷺ ইরশাদ করলেন, “ওই কন্যাদ্বয় রোযা রাখেনি। তারা কেমন রোযাদার? তারা সারা দিন মানুষের গোস্ত খেয়েছে। যাও! তাদের দুজনকে নির্দেশ দাও, তারা যদি রোযা রাখে তবে যেনো বমি করে দেয়।” ওই সাহাবী তাদের নিকট গেলেন এবং তাদেরকে শাহে মদীনা হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর বাণী শুনালেন। তারা উভয়ে বমি করলো। বমি হতে রক্ত ও মাংসের টুকরা বের হলো। ওই সাহাবী হুযুর এর বরকতময় দরবারে ফিরে আসলেন এবং সে অবস্থা আরয করলেন। মাদানী আকা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা ﷺ ইরশাদ করলেন, “ওই সত্তার শপথ! যাঁর কুদরতের মুঠোয় আমার প্রাণ, যদি এতটুকু এদের পেটের মধ্যে থেকে যেতো, তাহলে তারা উভয়কে আগুন গ্রাস করতো।” (কেননা তারা গীবত করেছিলো।) (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, খন্ড-৩য়, পৃ-৩২৮, হাদীস নং-১৫)
অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, যখন হযরত মুহাম্মদ ﷺ ওই সাহাবী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে চেহারা মুবারক ফিরিয়ে দিলেন, তখন তিনি সামনে আসলেন এবং আরয করলেন, “হে আল্লাহর রসূল ﷺ! তারা উভয়ে মারা গেছে।” কিংবা বললেন, “তারা উভয়ে মুমূর্ষ অবস্থায়।” তখন হযরত মুহাম্মদ ﷺ ইরশাদ করলেন, “তাঁদের দুজনকে আমার নিকট নিয়ে আস! তারা উভয়ে হাযির হলো। সরকারে আলী ওয়াকার হযরত মুহাম্মদ ﷺ একটা পাত্র আনালেন। আর তাদের একজনকে নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ করলেন, “এর মধ্যে বমি করো!” সে রক্ত ও পুঁজ বমি করলো, শেষ পর্যন্ত পাত্রটি ভরে গেলো। তারপর হুযুর ﷺ অপর জনকে নির্দেশ দিলেন। তুমিও এর মধ্যে বমি করো।” সেও এভাবে বমি করলো। আল্লাহর মাহবুব হযরত মুহাম্মদ ﷺ ইরশাদ করলেন, “এরা উভয়ে আল্লাহর হালাল কৃত বস্তু গুলো (অর্থাৎ খাদ্য ও পানীয় ইত্যাদি) থেকে রোযা (বিরত) ছিল, কিন্তু যেসব কাজকে আল্লাহ রোযা ছাড়া অন্য সময়েও হারাম করেছেন ওইসব হারাম বস্তু দ্বারা রোযা ভঙ্গ করে ফেলেছে। ফলে এমনি হয়েছে যে, এক জন অপর জনের সাথে বসে, উভয়ে মিলে মানুষের গোস্ত খেতে আরম্ভ করেছে।” (অর্থাৎ লোকজনের গীবতে লিপ্ত হয়েছে।) (আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, খন্ড-২য়, পৃ-৯৫, হাদীস নং-০৮)
হুযুর মুস্তফা ﷺ এর ইলমে গায়েব (অদৃশ্য জ্ঞান)
এ ঘটনা থেকে সুস্পষ্ট হলো যে, আল্লাহর দানক্রমে আমাদের প্রিয় আকা হযরত মুহাম্মদ ﷺ আপন গোলামদের (উম্মত) সমস্ত ঘটনা সম্পর্কে জানেন। এ কারণেই তো ওই কন্যা দুটি সম্পর্কে মসজিদ শরীফে বসে বসে অদৃশ্যের সংবাদগুলো বলে দিলেন। এ ঘটনা থেকে একথাও জানা গেলো যে, গীবত ও অন্যান্য গুনাহ্ সম্পন্ন করলে সরাসরি সেটার প্রভাব রোযার উপরও পড়তে পারে। যার কারণে রোযার কষ্ট বৃথা যেতে পারে। যে কোন অবস্থায়, রোযা হোক কিংবা না-ই হোক উভয় অবস্থায় জিহ্বাকে আয়ত্বে রাখতে হবে। যদি এই তিন মূলনীতিকে সামনে রাখা হয়, তবে اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلَّ বড় উপকার হবে।
(১) মন্দ কথা বলা সর্বাবস্থায়ই মন্দ,
(২) অনর্থক কথার চেয়ে চুপ থাকা উত্তম এবং
(৩) ভাল কথা নিশ্চুপ থাকা অপেক্ষা উত্তম।
দু’হাতের রোযা
হাতের রোযা হচ্ছে- যখনই হাত ওঠবে, তখন যেন সৎকার্যাদির জন্য ওঠে। যেমন হাতে কুরআন মজীদ স্পর্শ করবেন। সৎ লোকদের সাথে করমর্দন (মুসাফাহ) করবেন। হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর বাণী হচ্ছে, “আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পরস্পর ভালবাসা পোষণকারী যখন একত্রিত হয়, মুসাফাহা করে এবং নবী ﷺ এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করে, তাহলে তাদের পৃথক হওয়ার পূর্বেই তাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুনাহ্ সমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।” (মুসনাদে আবি ইয়ালা, খন্ড-৩য়, পৃষ্ঠা-৯৫, হাদীস নং-২৯৫১) সম্ভব হলে কোন এতিমের মাথায় স্নেহভরে হাত বুঝিয়ে দেবেন। ফলে, হাতের নিচে যতো চুল আছে প্রত্যেক চুলের পরিবর্তে একেকটা নেকী পাওয়া যাবে। (ছেলে কিংবা মেয়ে) তখন পর্যন্ত এতিম থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত না-বালেগ থাকে, যখনই বালেগ হয়ে যায়, তখন থেকে এতিম থাকবে না। ছেলে ১২ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে বালেগ আর মেয়ে নয় বছর থেকে ১৫ বছরের মধ্যে বালেগা হয়।) খবরদার! কারো উপর যেনো জুলুমবশতঃ হাত না ওঠে। ঘুষ লেনদেন করার জন্য হাত উঠাবেন না। কারো মাল চুরি করবেন না, তাস খেলবেন না, কোন পর নারীর সাথে করমর্দন করবেন না। (বরং কামভাবের আশংকা থাকলে ‘আমরাদ’ (দাড়ি গজায়নি এমন বালক) এর সাথে হাত মিলাবেন না। তারা যাতে মনে কষ্ট না পায়, সেভাবে সুকৌশলে তাদের থেকে পাশ কাটিয়ে চলবেন।)
পায়ের রোযা
পায়ের রোযা হচ্ছে- পা ওঠালে শুধু নেক কাজের জন্যই ওঠাবেন। যেমন পা চালালে মসজিদের দিকে চালাবেন। আউলিয়া কিরামের رَحِمَهُمُ الله تَعَالٰى মাযারগুলোর দিকে চালাবেন। সুন্নাতে ভরা ইজতিমার দিকে চালাবেন। নেকীর দাওয়াত দেয়ার জন্য মাদানী কাফিলাগুলোতে সফর করার জন্য চালাবেন। নেক লোকদের সঙ্গের দিকে চলবেন। কারো সাহায্যের জন্য যাবেন। আহা! সম্ভব হলে মক্কায়ে মুকাররামা زادهالله شرفا وتعظيما ও মদীনা মুনাওয়ারার زادهالله شرفا وتعظيما দিকে যাবেন। মিনা, আরাফাত ও মুযদালিফার দিকে যাবেন। তাওয়াফ ও সাঈতে চলবেন। কখনো সিনেমা হলের দিকে যাবেন না। দাবা, লুডু, তাস, ক্রিকেট, ফুটবল, ভিডিও গেমস ও টেবিল-টেনিস ইত্যাদি খেলাধুলার দিকে যাবেন না। আহা! পা যদি কখনো এমনিভাবেও চলতো যে, ব্যস, মুখে মদীনা-ই-মদীনা হবে, আর সফরও হবে মদীনার দিকে। বাস্তবিকই রোযার বরকত সেই সময়ই পাওয়া যাবে যখন আমরা শরীরের সমস্ত অংশের রোযা পালন করবো। অন্যথায় ক্ষুধা ও তৃষ্ণা ছাড়া অন্য কিছু অর্জন হবে না। যেমন হযরত আবু হুরায়রা رضى الله عنه থেকে বর্ণিত যে হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর ইরশাদ হচ্ছে, “অনেক রোযাদার এরকম আছে যে, তাদেরকে তাদের রোযা ক্ষুধা তৃষ্ণা ছাড়া অন্য কিছুই দেয়না এবং অনেক দাঁড়ানো (তাহাজ্জুদ গুজার) ব্যক্তি এমন যে, তাকে তার এই জাগরণ দাঁড়ানো ছাড়া অন্যকিছুই দেয় না। (সুনানে ইবনে মাজা, খন্ড-২য়, পৃ-৩২০, হাদীস নং-১৬৯০) অর্থাৎ কিছু কিছু লোক আছে যারা রোযা রাখে কিন্তু নিজ অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে যেহেতু মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে না তাই তারা রোযার নূরানিয়্যাত ও তার মূল স্বাদ থেকে বঞ্চিত থাকে। সাথে সাথে যে সমস্ত লোক শুধু শুধু গল্প গুজব করে রাত অতিবাহিত করে, তাদের সময় নষ্ট ও আখিরাতের ক্ষতি ছাড়া কিছুই হয় না।
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত রযমান মাসের বিস্তারিত মাসাইল সম্পর্কিত “রমযানের ফযিলত” নামক কিতাবের ৯৬-১০৪ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। কিতাবটি নিজে কিনুন, অন্যকে উপহার দিন।
---------
যারা মোবাইলে (পিডিএফ) কিতাবটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড দিন
বাকী পর্ব পড়তে ক্লিক করুন- প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব