বিভাগ সমূহ

বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৭

হজ্বের মাসাইল: পর্ব ৭- জেনে নিন দোআ কবুলের স্থান ও হজ্বের প্রকার

দোআ কবুল হওয়ার ২৯টি স্থান

সম্মানিত হাজীরা! এমনিতো হারামাঈন শরীফাঈনের প্রত্যেক স্থানে নূর সমুহ ও তাজল্লিয়াতের (কুদরতি ঝলক) বৃষ্টিপাত সর্বদা বর্ষণ হচ্ছে। তারপরও “আহছানুল বিয়া লি আদাবিদ দোআ” নামক কিতাব থেকে কিছু দোআ কবুল হওয়ার বিশেষ স্থান সমূহের উল্লেখ করা হচ্ছে। যেন আপনারা সেসব স্থানে খুব আন্তরিকতা ও আগ্রহের সাথে দোআ করতে পারেন।

মক্কা শরীফের স্থান সমূহ এই, 

﴾১﴿ মাতাফ 
﴾২﴿ মুলতাজম 
﴾৩ ﴿ মুসতাজার 
﴾৪ ﴿ বাইতুল্লাহর ভিতরে 
﴾৫﴿ মিজাবে রহমতের নিচে 
﴾৬﴿ হাতীম 
﴾৭ ﴿ হাজরে আসওয়াদ 
﴾৮﴿ রুকনে ইয়ামানী, বিশেষত যখন তাওয়াফ কালীন সেদিক দিয়ে গমন করবে 
﴾৯﴿ মকামে ইবরাহীমের পিছনে 
﴾১০﴿ যমযম কুপের নিকটে 
﴾১১﴿ সাফা
হজ্ব ও ওমরা পদ্ধতি, দোআ ও মাসআলা
﴾১২﴿ মারওয়া 
﴾১৩﴿ মাসআ বিশেষত সবুজ নিশানা সমুহের মধ্যবর্তী স্থানে 
﴾১৪﴿ আরাফাতে, বিশেষত নবীয়ে পাক صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর মওকিফের নিকটে। 
﴾১৫﴿ মুজদালিফা বিশেষত মাশআরুল হারামে 
﴾১৬﴿ মীনা 
﴾১৭﴿ তিনটি জামরাতের নিকটে 
﴾১৮﴿ যখনই কা’বা শরীফে দৃষ্টি পড়ে। আর মদীনা শরীফের স্থান সমূহ এই 
﴾১৯﴿ মসজিদে নববী  عَلٰی صَاحِبِہَا الصَّلٰوۃُ وَالسَّلَام 
﴾২০﴿ মুয়াজাহা শরীফ। ইমাম ইবনুল জজরী رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেছেন: দোআ এখানে কবুল না হলে, কোথায় কবুল হবে! (হিসনে হাসীন, ৩১ পৃষ্ঠা) 
﴾২১﴿ মিম্বরে আত্‌হার এর নিকটে। 
﴾২২﴿ মসজিদে নববী শরীফের পিলারের নিকটে। 
﴾২৩﴿ মসজিদে কূবা শরীফে 
﴾২৪﴿ ‘মসজিদুল ফাতহে’ বিশেষত বুধবারের জোহর ও আছরের মধ্যবর্তী সময়ে 
﴾২৫﴿ অন্যান্য মাসাজিদে তাইয়্যেবার যেগুলোর সাথে ছরকারে মদীনা صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর সাথে বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। (যেমন মসজিদে গামামা, মসজিদে ক্বিবলাতাঈন ইত্যাদি) 
﴾২৬﴿ ঐ সকল মোবারক কুপে যেগুলোর সাথে সরওয়ারে কাউনাইন صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর সম্পর্ক রয়েছে 
﴾২৭﴿ জবলে উহুদ শরীফে। 
﴾২৮﴿ মাশাহাদে মোবারাকাতে 
﴾২৯﴿ মাজারাতে বাক্বীতে। 

ঐতিহাসিক বর্ণনা মতে, জান্নাতুল বাক্বীতে প্রায় দশ হাজার সাহাবায়ে কেরাম عَلَیۡہِمُ الرِّضۡوَان আরাম করছেন। আফসোস! ১৯২৬ইং সনে জান্নাতুল বাক্বীর মাযার সমূহকে শহীদ করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে স্থানে স্থানে মোবারক কবর সমূহ ধ্বংস করে ওখানে সড়ক তৈরী করে দেয়া হয়েছে। তাই এখনো আমার ‘সগে মদীনা’ عُفِىَ عَنْهُ (লিখক) জান্নাতুল বাক্বীর ভিতরে প্রবেশ করার সাহস হয়নি। যেন কখনো আবার কোন নূরানী মাযার শরীফের উপর আমার পা পড়ে না যায়, আর মাসআলাও এটাই যে, কোন মুসলমানের কবরে পা রাখা, এর উপর বসা ইত্যাদি সকল কিছুই হারাম। দা’ওয়াতে ইসলামী’র প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘মাকতাবাতুল মদীনা’ কর্তৃক প্রকাশিত ৪৮ পৃষ্ঠা সম্বলিত “কবরবাসীদের ২৫টি ঘটনা” নামক রিসালার ৩৪ পৃষ্ঠায় রয়েছে: (কবরস্থানের কবরকে নিশ্চিহ্ন করে) যেমন; নতুন রাস্তা তৈরী করা হয়েছে, তার উপর দিয়ে চলাফেরা করা হারাম। (রদ্দুল মুহতার, ১ম খন্ড, ৬১২ পৃষ্ঠা) বরং শুধুমাত্র অন্তরে যদি নতুন রাস্তার ধারণাও আসে সে অবস্থায়ও তার উপর চলাচল করা না জায়েজ।(দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ১৮৩ পৃষ্ঠা) সুতরাং আশেকানে রাসুলদের প্রতি আমার আকুল আবেদন; তারা যেন বাইরে দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করে। জান্নাতুল বাক্বী শরীফের মূল দরজায় দাঁড়িয়ে সালাম আরজ করতে হবে তা জরুরী নয়। বিশুদ্ধ নিয়ম হচ্ছে, কবরস্থানের বাইরে এমন স্থানে দাঁড়াবেন, যেখানে আপনার পিঠের দিকে থাকবে ক্বিবলা আর এভাবে বাক্বী শরীফে কবরস্থ ব্যক্তিদের চেহারার দিকে আপনার মুখ থাকবে। 
-------------------
মশাহিদ হল “মশ হদুন” এর বহুবচন। আর তার অর্থ হল হাজির হওয়ার স্থান। আর এখানে উদ্দেশ্য হল এই, যে স্থানে প্রিয় নবী, রাসুলে আরবী, হুযুর صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তাশরিফ নিয়ে গিয়েছিলেন ওখানে অবশ্যই দোয়া কবুল হয়। আর বিশেষত মক্কা শরীফে ও মদীনা শরীফে অনেক স্থানে صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তাশরিফ নিয়ে গিয়ে ছিলেন। যেমন: হযরত সায়্যিদুনা সালমান ফারসী رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ এর মুকাদ্দাস বাগান ইত্যাদি)
-------------------
হে মাআচি হদছে বাহার ফির ভি যাহেদ গম নেহী
রহমতে আলম কি উম্মত, বান্দা হো গাফ্‌ফার কা। (সামানে বখশিশ)


হজ্বের প্রকার সমূহ

হজ্ব তিন প্রকার: ﴾১﴿ কিরান ﴾২﴿ তামাত্তু ﴾৩﴿ ইফরাদ।

﴾১﴿ কিরান:- ইহা সকল প্রকার থেকে উত্তম, আর এই হজ্ব আদায় কারীকে ‘কারিন্তু বলা হয়। আর এই প্রকারে হজ্ব ও ওমরা উভয়ের একসাথে ইহরাম বাঁধতে হয়। তবে ওমরা করার পর কিরান কারী ‘হলক’ কিংবা ‘ক্বসর’ করতে পারবে না। বরং তাকে নিয়মমত ইহরাম অবস্থায় থাকতে হবে। জুলহিজ্জার দশম কিংবা একাদশ কিংবা দ্বাদশ তারিখে কোরবানী করার পরে ‘হলক’ কিংবা ক্বসর করিয়ে ইহরাম খুলবে। 

﴾২﴿ তামাত্তু:- এই প্রকার হজ্ব আদায় কারীকে ‘মুতামাত্তি’বলা হয়। ইহা হজ্বের মাস সমূহে মিকাত এর বাহির থেকে আগতদের জন্য আদায় করার সুযোগ রয়েছে। যেমন; পাকিস্তান কিংবা হিন্দুস্তান অথবা বাংলাদেশ থেকে আগত ব্যক্তিরা সাধারণত হজ্বে তামাত্তু করে থাকে। ইহাতে সহজতা হল, ওমরাতো হয়ে যায়। আর ওমরা আদায় করে নেয়ার পর ‘হলক’ কিংবা ‘ক্বসর’ করার পর ইহরাম খুলে ফেলা হয়। অতঃপর জুলহিজ্জার ৮ তারিখ অথবা তার পূর্বে হজ্বের জন্য ইহরাম পরিধান করতে হয়। 

﴾৩﴿ ইফরাদ:- ইফরাদকারী হাজীকে ‘মুফরিদ’বলা হয়। আর এই হজ্বে ওমরা অন্তর্ভূক্ত থাকে না। তাতে শুধু হজ্বেরই ইহরাম পরিধান করতে হয়। মক্কাবাসী এবং হিল্লী অর্থাৎ মীকাত ও হারামের সীমানার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান কারী ব্যক্তিদের জন্য (যেমন- জিদ্দা শরীফের বাসিন্দাগণ) হজ্বে ইফরাদ করে থাকে। কিরান অথবা তামাত্তু হজ্ব করলে তাদের উপর দম ওয়াজিব হবে। মিকাতের বাইরের হাজীরা অর্থাৎ আফাকীরা চাইলে হজ্বে ইফরাদ’ও করতে পারবে।

صَلُّوْا عَلَی الۡحَبِیۡب! صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد

♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥
লিখাটি আমিরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত হজ্ব ও ওমরা সম্পর্কিত  রফিকুল হারামাঈন (হজ্ব ও ওমরার পদ্ধতি ও দোআ সমূহ) এর ৫৩-৫৫ পৃষ্ঠা থেকে সংগৃহীত। রফিকুল হারামাঈন হজ্ব ও ওমরা বিষয়ে এক পূর্ণাঙ্গ এনসাইক্লোপিডিয়া ও মাসআলার কিতাব। কিতাবটির এন্ড্রয়েড অ্যাপ ও পিডিএফ বই ইন্সটল ও ডাউনলোড করুন। 
  • এন্ড্রয়েড অ্যাপ ইন্সটল লিংক
  • পিডিএফ বই ডাউনলোড লিংক
আমাদের এই প্রয়াসকে এগিয়ে নিতে অবশ্যই পাশে থাকবেন, নিচের শেয়ার বাটনগুলো থেকে অন্তত একটি সোস্যাল সাইটে শেয়ার করুন। কপি করে রিপোস্ট করুন হোয়াটসেপ বা ফেসবুকে। কমেন্ট করে জানান অভিমত। আশা করি আবার আসবেন আমাদের এই সাইটে। ভাল থাকুন সুস্থ্য থাকুন।

দাওয়াতে ইসলামীর সকল বাংলা ইসলামীক বইয়ের পিডিএফ লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন 

মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks for supporting.