বিভাগ সমূহ

মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৭

হজ্বের মাসাইল: পর্ব ৩ মদীনার মুসাফিরকে নবী করীম ﷺ এর সাহায্য

اَلۡحَمۡدُ لِلہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ وَالصَّلٰوۃُ وَالسَّلَامُ عَلٰی سَیِّدِ الۡمُرۡسَلِیۡنَ - اَمَّا بَعۡدُ فَاَعُوۡذُ بِا للہِ مِنَ الشَّیۡطٰنِ الرَّجِیۡمِ ط بِسۡمِ اللہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ ط


এক যুবক কাবা শরীফ তাওয়াফ করার সময় শুধু দরূদ শরীফই পড়ছিল। কেউ তাকে বলল: তোমার কি তাওয়াফের আর কোন দোআ জানা নেই নাকি এর ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য রয়েছে? সে বলল: দোআ তো আমার জানা আছে কিন্তু আসল ব্যাপার হচ্ছে যে, আমি আর আমার পিতা উভয়ে হজ্বের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলাম। পিতা মহোদয় পথিমধ্যে রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। তাঁর চেহারা একেবারে কালো হয়ে গেল। চোখ উল্টে গেল এবং পেট ফুলে যায়! আমি খুবই কান্নাকাটি করলাম এবং বললাম: اِنَّا لِلّٰہِ وَاِنَّآ اِلَیْہِ رٰجِعُوْن যখন গভীর রাত হল তখন আমার চোখে ঘুম এসে গেল। আমি শুয়ে গেলাম তখন আমি স্বপ্নে সাদা পোষাক পরিহিত সুগন্ধিময় ও হাসোজ্জ্বল এক অসাধারণ ব্যক্তিত্বের জিয়ারত লাভ করলাম। তিনি আমার মরহুম পিতার লাশের পাশে তাশরীফ নিয়ে গেলেন, আর আপন নূরানী হাত আমার পিতার চেহারা ও পেটের উপর বুলিয়ে দিলেন। দেখতে দেখতেই আমার মরহুম পিতার চেহারা দুধের চেয়েও বেশী সাদা এবং উজ্জ্বল হয়ে যায়, আর পেটও পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। যখন ঐ বুজুর্গ ব্যক্তিটি ফিরে যাচ্ছিলেন তখন আমি তাঁর পবিত্র দামান আকঁড়ে ধরি আর আরজ করি: ইয়া সায়্যিদি! (অর্থাৎ হে আমার সরদার) আপনাকে ঐ স্বত্তার কসম, যিনি আপনাকে এই জঙ্গলে আমার মরহুম পিতার জন্য রহমত হিসাবে পাঠিয়েছেন। আপনি কে? ইরশাদ করলেন: “তুমি আমাকে চিন না? আমি তো মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم! তোমার পিতা খুবই গুনাহগার ছিল কিন্তু আমার প্রতি খুব বেশী দরূদ শরীফ পাঠ করত। যখন তার উপর এই মুসিবত অবতীর্ণ হল, তখন সে আমার নিকট সাহায্য চাইল। সুতরাং আমি তার ফরিয়াদ কবুল করলাম, আর আমি প্রত্যেক ঐ সকল ব্যক্তির ফরিয়াদে সাড়া দিয়ে থাকি, যে দুনিয়াতে আমার উপর বেশী পরিমাণে দরূদ শরীফ পাঠ করে।” (রওযুর রায়াহীন, ১২৫ পৃষ্ঠা)

হজ্ব ও ওমরা পদ্ধতি, দোআ ও মাসআলা
ফরইয়াদে উম্মতি যো করে হালে যার মে
মুমকিন নেহী কে খায়রে বশর কো খবর না হো। (হাদায়িকে বখশিশ)

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد

হাজীদের জন্য মূল্যবান ১৬টি মাদানী  ফুল

❁ আল্লাহ তাআলা ও রাসুল صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর সন্তুষ্টির প্রত্যাশী প্রিয় হাজী সাহেবগণ! আপনার হজ্বের সফর ও মদীনা শরীফের জিয়ারত খুব বেশী মোবারক হোক। সফরের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রওয়ানা হওয়ার ৩/৪ দিন আগে থেকে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করে নিন। আর কোন অভিজ্ঞ হাজী সাহেবের সাথেও পরামর্শ করে নিন।
 নিজ দেশ হতে ফল কিংবা রান্নার ডেক্সী, মিষ্টি জাতীয় ইত্যাদি খাদ্য বস্তু নিয়ে যাওয়াতে হাজীদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
 মক্কায়ে মোকাররমায় زَادَہَا للہُ شَرَفًا وَّ تَعۡظِیۡمًا আপনার আবাসিক বিশ্রামাগার থেকে মসজিদে হারামে পায়ে হেঁটে যেতে হবে। এই পথ এবং তাওয়াফ ও সাঈতে সব মিলিয়ে প্রায় ৭কি:মি: পথ হয়। এমনকি মীনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় অনেক দূর পথ পায়ে চলতে হবে। তাই হজ্বের অনেকদিন আগে থেকে প্রতিদিন পৌনে ১ ঘন্টা করে পায়ে হাঁটার অভ্যাস গড়ুন। (এই অভ্যাস যদি সব সময়ের জন্য করে নেয়া যায় তাহলে স্বাস্থের জন্য اِنۡ شَآءَ اللہ عَزَّوَجَلّ খুবই উপকার হবে।) অন্যথায় হঠাৎ করে অনেক পথ পায়ে চলার কারণে হজ্বে আপনি খুবই পরীক্ষার সম্মুখীন হতে পারেন।
 কম খাওয়ার অভ্যাস গড়ুন। সুফল না পেলে তখন বলবেন! বিশেষ করে হজ্বের ১ম থেকে ৫ম দিন পর্যন্ত খুব হালকা পাতলা খাবারের উপরে তুষ্ট থাকুন, যাতে বার বার ইস্তিঞ্জায় যাওয়ার প্রয়োজন না পড়ে। বিশেষ করে মীনা, মুজদালিফা ও আরাফাতে ইস্তিঞ্জাখানায় লম্বা লম্বা লাইন লেগে থাকে।
 ইসলামী বোনেরা কাঁচের চুড়ি পরিধান করে তাওয়াফ করবেন না। ভিড়ের মধ্যে যদি তা ভেঙ্গে যায়, তবে আপনি নিজে এবং অন্যরাও আহত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
 ইসলামী বোনেরা উঁচু হিল বিশিষ্ট সেন্ডেল পরিধান করবেন না। এতে রাস্তায় পায়ে চলার ক্ষেত্রে খুব সমস্যা হবে।❁ হেরম শরীফের আবাসিক বিল্ডিংয়ের টয়লেটে ‘ইংলিশ কমোড’হয়ে থাকে। নিজ দেশে তার ব্যবহার শিখে নিন, অন্যথায় কাপড় পবিত্র রাখা অত্যন্ত কষ্টকর হবে।
 কারো দেয়া “প্যাকেট” বা ব্যাগ খুলে চেক করা ব্যতিত কখনো সাথে নিবেন না। যদি চেক করার সময় কোন নিষিদ্ধ বস্তু পাওয়া যায়, তবে বিমান বন্দরে সমস্যায় পড়তে পারেন।
 উড়োজাহাজে আপনার প্রয়োজনীয় ঔষধাদি সহ ডাক্তারী সনদ আপনার গলায় ঝুলানো ব্যাগের মধ্যে রাখুন। যাতে জরুরী অবস্থায় সহজে কাজে আসে।
 জিহ্বা এবং চোখের কুফ্‌লে মদীনা লাগাবেন। যদি বিনা প্রয়োজনে কথা বলার অভ্যাস থাকে তাহলে গীবত, অপবাদ দেয়া এবং মানুষের মনে কষ্ট দেয়ার মত ইত্যাদি গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা খুবই কষ্টকর হবে। অনুরূপ ভাবে যদি চোখের হিফাযত এবং অধিকাংশ সময় দৃষ্টিকে নত রাখার তরকীব না হয়, তাহলে কুদৃষ্টি দেয়া থেকে বেঁচে থাকা খুবই কঠিন হবে। হেরম শরীফে একটি নেকী এক লক্ষ নেকীর বরাবর, আর একটি গুনাহ এক লক্ষ গুনাহের সমপরিমান। হেরম শরীফ বলতে শুধু মসজিদে হেরম উদ্দেশ্য নয় বরং সম্পূর্ণ হেরমের সীমানা অন্তর্ভুক্ত।
 নামাযরত অবস্থায় মুহরিম ব্যক্তির সীনা অথবা পেটের কিছু অংশ অনাবৃত হয়ে যায়। এতে কোন প্রকারের অসুবিধা নেই। কেননা ইহরাম অবস্থায় এ ধরণের হওয়াটা অভ্যাসের পরিপন্থি নয়, আর এ ব্যাপারে খেয়াল রাখাটা খুবই কঠিন।
 কাফনের কাপড়কে জমজম কূপের পানিতে চুবিয়ে নেয়া খুবই উত্তম। অনুরূপভাবে মক্কা মদীনার বাতাসও একে চুমু দিবে, কিন্তু ঐ কাপড় নিংড়ানোর ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করাটা যুক্তিযুক্ত যে, এই পবিত্র পানির এক ফোটাও যেন গড়িয়ে নালা, নর্দমা ইত্যাদিতে না যায়। কোন চারা গাছ ইত্যাদির গোড়ায় ঢেলে দেয়া উচিত। (জমজমের পানি নিজ দেশেও ছিটাতে পারেন।)
 অনেক সময় তাওয়াফ ও সাঈ করার সময় হজ্বের কিতাবাদির পৃষ্ঠা ফ্লোরের নিচে পতিত অবস্থায় দৃষ্টিগোচর হয়, সম্ভবপর অবস্থায় তা উঠিয়ে নিন, কিন্তু তাওয়াফ কালে কা’বা শরীফের দিকে যেন পিঠ বা সীনা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। অবশ্য কারো পড়ে যাওয়া টাকা পয়সা অথবা থলে ইত্যাদি উঠাবেন না। (কয়েক বছর পূর্বে এক পাকিস্তানি হাজী তাওয়াফ করার সময় সহানুভূতি দেখাতে দিয়ে অন্য এক হাজীর পড়ে যাওয়া টাকা তুলে নিলেন। টাকার মালিক ভূল বুঝে বসল, আর ঐ সহানুভূতিশীল হাজীকে পুলিশে দিয়ে দিল, আর এই বেচারাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য জেলখানায় ঢুকিয়ে দেয়া হল।)
 পবিত্র হেজায ভূমিতে খালি পায়ে থাকা ভাল কিন্তু ঘর এবং মসজিদের গোসলখানায় ও রাস্তার ময়লা ইত্যাদি জায়গায় চলার সময় সেন্ডেল পড়ে নিন। এভাবে ময়লা, ধূলাবালি যুক্ত পায়ে মসজিদাঈনে করিমাঈনে এমনকি কোন মসজিদেও প্রবেশ করবেন না। যদি পা যুগলকে পরিষ্কার রাখতে সক্ষম না হন, তবে সেন্ডেল ছাড়া খালি পায়ে থাকবেন না।
 ব্যবহৃত সেন্ডেল পরিধান করে বেসিনে ওযু করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন। কারণ নিচে অধিকাংশ সময় পানি ছড়িয়ে পড়ে, তাই যদি সেন্ডেল নাপাক হয়ে থাকে তবে পানির ছিটা লাফিয়ে আপনার পোষাক ইত্যাদিতে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। (এটা স্মরণে রাখবেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত সেন্ডেল বা পানি অথবা কোন বস্তুর ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে নাপাক হওয়ার জ্ঞান অর্জিত হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তা পাক।)
 মীনা শরীফের ইস্তিঞ্জাখানার নলের পানি সাধারণত খুব জোর গতিতে নির্গত হয়। তাই খুব আসতে আসতে খুলবেন যাতে আপনি ছিটা থেকে বাঁচতে পারেন।

প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র আপনার সাথে নিয়ে যান

মাদানী পাঞ্জে সূরা, নিজ পীর ও মুরশিদের শাজরা, ‘বাহারে শরীয়াত’নামক কিতাবের ৬ষ্ঠ খন্ড এবং ১২ কপি ‘রফিকুল হারামাঈন, নিজে পড়ুন এবং হাজীদের মাঝে বন্টন করে খুব বেশী সাওয়াব অর্জন করুন, কলম ও প্যাড, ডায়েরী, ক্বিবলা নুমা (কিবলা নির্ধারনী) ইহা হেজাযে মুকাদ্দাসে গিয়ে ক্রয় করবেন, মীনা, আরাফাত ইত্যাদি স্থানে ক্বিবলা নির্ধারনে অনেক সাহায্য করবে, কিতাব সমুহ, পাসপোর্ট, টিকেট, ট্রাভেল চেক, হেল্‌থ সার্টিফিকেট ইত্যাদি রাখার জন্য নিজ গলাতে ঝুলিয়ে রাখার জন্য একটি ছোট ব্যাগ, ইহরামের কাপড়গুলো ইহরামের লুঙ্গির উপরে বাঁধার জন্য পকেট বিশিষ্ট নাইলেন অথবা চামড়ার একটি বেল্ট, আতর, জায়- নামায, তাসবীহ, চার জোড়া কাপড়, গেঞ্জি, সুয়েটার ইত্যাদি পরিধানের প্রয়োজনীয় কাপড় (মৌসুম অনুযায়ী), (শরীর) আবৃত করার জন্য কম্বল কিংবা চাদর। বাতাস ভর্তি করা যায় এমন বালিশ, টুপি, ইমামা শরীফ ও সেরবন্দ, বিছানোর জন্য চাটাই কিংবা চাদর, আয়না, তৈল, চিরুনী, মিস্‌ওয়াক, সুরমা, সুঁই- সূতা, কাঁচি, সফরে সঙ্গে নেয়া সুন্নাত, নেইল কাটার, জিনিস পত্রে নাম, ঠিকানা লিখার জন্য মোটা মারকার কলম, তোয়ালে, রুমাল, ব্যবহার করে থাকলে চোখের চশমা ২টি, সাবান, মাজন, সেপটি রেজার, বদনা, গ্লাস, প্লেইট, পেয়ালা, দস্তর খানা, গলায় লটকানো পানির বোতল, চামচ, ছুরি, মাথার ব্যথা এবং সর্দি কাঁশি ইত্যাদির জন্য ট্যাবলেট, সাথে প্রয়োজনীয় ঔষধাদি, গরম কালে নিজের উপর পানি ছিটানোর জন্য স্প্রে। (মীনা ও আরাফাত শরীফে এর মূল্যায়ণ হবে), প্রয়োজন মত খাবার তৈরীর থালা।

মালপত্রের ব্যাগের জন্য ৫টি মাদানী ফুল

﴾১﴿ হাতের জিনিসের জন্য মজবুত একটি হাত ব্যাগ।
﴾২﴿ কাউন্টারে মালামাল যাচাই ও পারাপার করানোর জন্য একটি বড় ব্যাগ নিন। (যাতে বড় মারকার কলম দ্বারা নাম, ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার ইত্যাদি লিখে নিন। এমনকি কোন চিহ্ন লাগিয়ে নিন। যেমন: স্টার (তারকা চিহ্ন।) আপনার ব্যাগে লোহার গোলাকৃতি ইত্যাদিতে রঙ্গিন কাপড়ের টুকরা অথবা ফিতার ছোট পট্টি দেখা যায় মত করে বেধেঁ দিন।
﴾৩﴿ ব্যাগে তালা লাগিয়ে নিন, কিন্তু ১টি চাবি ইহরামের বেল্টের পকেটে আর অপর ১টি হাত ব্যাগে রাখুন। অন্যথায় চাবি হারিয়ে যাওয়া অবস্থায় জেদ্দা কাষ্টমে “বড় বড় কাঁচি” দ্বারা কেটে ব্যাগ খুলতে হবে। এরকম হলে আপনি চিন্তায় পড়ে যাবেন।
﴾৪﴿ হাত ব্যাগের মধ্যেও নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি তথ্য সম্বলিত একটি ছোট কাগজের টুকরো ফেলে দিন। 
﴾৫﴿ উভয় ট্রলি ব্যাগ যদি চাকা বিশিষ্ট হয়, তাহলে সহজতর হবে اِنۡ شَآءَ اللہ عَزَّوَجَلّ

হেলথ্‌ সার্টিফিকেট এর মাদানী ফুল

সকল হাজী সাহেবগণ আইন অনুযায়ী সফরের সকল কাগজপত্র অনেক আগে থেকে প্রস্তুত করে নিবেন, যেমন- “হেল্‌থ সার্টিফিকেট”(সুস্থ্যতার সনদ) এটা আপনাকে হাজ্বী ক্যাম্পে মারাত্মক জ্বর, জন্ডিস, এবং পোলিও ভ্যাকসিন ইত্যাদি রোগের টিকা দেয়ার পর প্রদান করা হবে। আর এতে কোন ঘাটতি হলে আপনাকে বিমানে আরোহন করা থেকে বাঁধা প্রদান করা যেতে পারে। নতুবা জিদ্দা শরীফের বিমান বন্দরেও আপনার বাঁধা আসতে পারে। 
 প্রতিরক্ষা টিকা হজ্বে যাওয়ার ২/৪ দিন পূর্বে দেওয়াটা বিশেষ কোন উপকার সাধন করেনা। ১৫ দিন পূর্বে দেওয়াটা খুবই উপকারী। নতুবা বরকতময় সফরের তড়িঘড়িতে খুব মারাত্মক বরং জীবন বিনাশী রোগের সম্ভাবনা রয়েছে’। 
 সরকারীভাবে বাধ্য না করলেও নিউমোনিয়া ও হেপাটাইটিস রোগের টিকা দিয়ে যাওয়াটা খুবই উত্তম। এই ডাক্তারী ব্যবস্থাপনাকে বোঝা মনে করবেন না। এতে আপনারই কল্যাণ রয়েছে। 
 অধিকাংশ ট্রাভেল এজেন্টরা অথবা হজ্বের ব্যবস্থাপকরা কোন প্রকারের ডাক্তারি ব্যবস্থাপনা ছাড়া ঘরে বসেই “হেলথ্‌ সার্টিফিকেট” ফরম দিয়ে দেয়। যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর হওয়ার সাথে সাথে এক প্রকারের ধোঁকা, হারাম কাজ এবং জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মত কাজ। ঐ সকল ট্রাভেল এজেন্ট, ইচ্ছাকৃতভাবে ফরমে স্বাক্ষরকারী ডাক্তার এবং জেনে বুঝে ঐ মিথ্যা সার্টিফিকেট গ্রহণকারী হাজী (অথবা ওমরাকারী) সকলই গুনাহগার এবং জাহান্নামের আগুনের হকদার হবেন। যারা এ সমস্ত কাজ করেছেন, তারা সবাই সত্যিকার তাওবা করে নিন।

বিমানে হজ্ব পালণকারীরা কখন ইহরাম পরিধান করবে ?

বাংলাদেশ থেকে জিদ্দা শরীফ পর্যন্ত বিমানে প্রায় ছয় ঘন্টার সময়ের সফর (দুনিয়া মধ্যে যে কোন জায়গা থেকে সফর করে), আর বিমানে আরোহণ অবস্থায় মীকাতের ঠিকানা পাওয়া যায় না। তাই নিজ ঘর থেকে তৈরী হয়ে রওয়ানা হবেন। যদি মাকরূহ সময় না হয়, তাহলে ইহরামের নফল নামাজও নিজ ঘরে আদায় করে নিন, আর ইহরামের চাদরও নিজের ঘর থেকে পরিধান করে নিন। তবে ঘর থেকে ইহরামের নিয়্যত করবেন না। বিমানে নিয়্যত করে নিবেন। কেননা নিয়্যত করার পর لَبَّیۡکَ পাঠ করার সাথে সাথে আপনি ‘মুহরিম’ (অর্থাৎ ইহরামকারী) হয়ে যাবেন এবং বাধ্যবাধকতা শুরু হয়ে যাবে। হতে পারে কোন কারণে আরোহণে দেরী হয়ে যাবে। “মুহরিম” এয়ারপোর্টে সুগন্ধিময় ফুলের মালাও পরিধান করতে পারবেন না। *তাই বাংলাদেশ থেকে সফরকারীরা এরকম ও করতে পারেন যে, ইহরামের চাদর সমূহ পরিধান করতঃ অথবা সারাদিনের স্বাভাবিক পোষাকে এয়ারপোর্টে তাশরীফ নিয়ে আসবেন। এয়ারপোর্টেও গোসলখানা, ওজুখানা এবং জায়নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে ইহরামের তরকীব (ব্যবস্থা) করে নিন। তবে সহজ উপায় এই যে, যখন বিমান আকাশে উড়তে থাকবে তখনই নিয়্যত ও لَبَّیۡکَ এর তারকীব করুন। হ্যাঁ! যে জ্ঞান রাখে ও ইহরামের বাধ্যবাধকতা নিয়মানুবতির্তা সম্পাদন করতে পারবে সে যত তাড়াতাড়ি “মুহরিম” হয়ে যাবে তত তাড়াতাড়ি ইহরামের সাওয়াব পাওয়া শুরু হয়ে যাবে। (নিয়্যত ও মীকাতের বিস্তারিত বর্ণনা সামনে আসবে)
---------------
*ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধির ব্যবহারের বিধিবিধানের বিস্তারিত বর্ণনা প্রশ্নোত্তর আকারে সামনে আসছে। হ্যাঁ, ইহরামের চাদর যদি পড়ে নিয়ে থাকেন কিন্তু এখনও নিয়্যত করে لَبَّیۡکَ বলেননি, তখন সুগন্ধি লাগানো এবং সুগন্ধময় ফুলের মালা পরিধান করা সব জায়েয।
---------------
বিমানে সুগন্ধিযুক্ত টিস্যু পেপার
সাবধান! উড়োজাহাজে অধিকাংশ সময় সুগন্ধিভরা টিস্যু পেপারের ছোট প্যাকেট দিয়ে থাকে। ইহরাম পরিধানকারীরা ওটা কখনো খুলবেন না। যদি হাতে সুগন্ধির স্যাতস্যাতে ভাব বেশি লেগে যায় তবে দম ওয়াজিব হয়ে যাবে। কম লাগলে তবে সদকা করতে হবে। যদি সুগন্ধির ভেজা অংশ না লাগে শুধু হাত সুগন্ধিময় হয়ে যায়, তবে এমতাবস্থায় কিছু হবে না।
♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥
লিখাটি আমিরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত হজ্ব ও ওমরা সম্পর্কিত  রফিকুল হারামাঈন (হজ্ব ও ওমরার পদ্ধতি ও দোআ সমূহ) এর ২৩-২৯ পৃষ্ঠা থেকে সংগৃহীত।রফিকুল হারামাঈন হজ্ব ও ওমরা বিষয়ে এক পূর্ণাঙ্গ এনসাইক্লোপিডিয়া ও মাসআলার কিতাব। কিতাবটির এন্ড্রয়েড অ্যাপ ও পিডিএফ বই ইন্সটল ও ডাউনলোড করুন। 
  • এন্ড্রয়েড অ্যাপ ইন্সটল লিংক
  • পিডিএফ বই ডাউনলোড লিংক
দাওয়াতে ইসলামীর সকল বাংলা ইসলামীক বইয়ের পিডিএফ লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন 

মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন