হজ্বের ইহরাম বেঁধে নিন
যদি আপনি এখনও পর্যন্ত হজ্বের ইহরাম না বেঁধে থাকেন, তাহলে জুলহিজ্জা মাসের ৮ তারিখেও বাঁধাতে পারেন। কিন্তু ৭ তারিখে বেঁধে নিলেই সুবিধা হয়। কেননা ‘মুআল্লিম’ আপন আপন হাজীদেরকে ৭ তারিখ ইশার নামাযের পর থেকে মীনা শরীফ পৌঁছানো শুরু করে দেয়। মসজিদে হারামে মাকরূহ ওয়াক্ত ব্যতীত অন্য সময়ে ইহরামের দুই রাকাত নামায আদায় করে শব্দের অর্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে এভাবে হজ্জের নিয়্যত করুন:
اَللّٰھُمَّ اِنِّیْۤ اُرِیْدُ الْحَجَّ ط فَیَسِّرْہُ لِیْ وَتَقَبَّلْہُ مِنِّیْ ط وَاَعِنِّیْ عَلَیْہِ وَبَارِکْ لِیْ فِیْہِ ط نَوَیْتُ الْحَجَّ وَاَحْرَمْتُ بِہٖ لِلہِ تَعَالٰی ط
অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমি হজ্বের ইচ্ছা করেছি। অতঃপর উহা আমার জন্য সহজ করে দাও এবং উহা আমার পক্ষ থেকে কবুল কর এবং এতে আমাকে সাহায্য কর এবং ইহার মধ্যে আমার জন্য বরকত দান কর। আমি হজ্বের ইচ্ছা করেছি, আর ইহার ইহরামও বেঁধেছি আল্লাহর জন্য।
মীনা ও আরাফাতে অবস্থান ও দোআ সমূহ |
নিয়্যতের পরে ইসলামী ভাইয়েরা বড় আওয়াজে আর ইসলামী বোনেরা নিচু আওয়াজে তিনবার তিনবার “লাব্বায়িক” পড়বেন। এখন আবার আপনার উপর ইহরামের নিয়ম অনুসারে বাধ্যবাধকতা শুরু হয়ে গেল।
একটি উপকারী পরামর্শ
যদি আপনি চান তাহলে, একটি ‘নফল তাওয়াফে’হজ্বের ইজতিবা, রমল এবং সাঈ সম্পন্ন করে ফেলতে পারেন। এতে ‘তাওয়াফে জিয়ারতে’আপনার আর রমল এবং সাঈ করার প্রয়োজন অবশিষ্ট থাকবেনা। কিন্তু এ কথাটি স্মরণ রাখবেন যে, ৭ ও ৮ তারিখে প্রচন্ড ভিড় হয়। এমনকি ১০ তারিখে ‘তাওয়াফে যিয়ারতে’ও মারাত্মক ভিড় হয়। অবশ্য ১১ ও ১২ তারিখের ‘তাওয়াফে যিয়ারতে’ ভিড় ধীরে ধীরে হ্রাস পায়, আর সাঈ করার ক্ষেত্রেও খুব সহজতার সুযোগ থাকে।
মীনায় রওনা
আজ ৮ তারিখ রাত, ইশার নামাযের পর চারিদিকে ধুম পড়ে গেছে। সবার একই লক্ষ্য একই স্লোগান যে, মীনায় চল! আপনিও তৈরী হয়ে যান। নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন; তাসবীহ, জায়নামায, ক্বিবলা নির্ণয়ের যন্ত্র, গলায় ঝুলিয়ে নেয়া যায় এমন পানির বোতল, প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র, মোয়াল্লিমের ঠিকানা, আর এটাতো সব সময় সাথে থাকা আবশ্যক। কারণ রাস্তা ভুলে গেলে অথবা مَعَاذَ اللہ عَزَّوَجَلَّ কোন দূর্ঘটনা হলে, অথবা বেহুশ হয়ে কোথায় পড়ে গেলে কাজে আসবে। সাথে যদি মহিলা হাজী থাকে তাহলে সবুজ অথবা কোন উজ্জল রঙের কাপড়ের টুকরা তাদের মাথার পিছনের দিকে বোরকার সাথে সেলাই করে (অথবা বেঁধে) নিন, যাতে ভিড়ের মধ্যে চেনা যায়। রাস্তায় চলার সময় বিশেষ করে ভিড়ের মধ্যে তাদেরকে নিজের সামনে রাখবেন। যদি আপনি সামনে থাকেন আর এরা বেশী পিছনে রয়ে যায়, তাহলে হারিয়ে যেতে পারে। চুলা সাথে নিবেন না, কেননা সেখানে এটির নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। খাবার এবং কোরবানী ইত্যাদির জন্য প্রয়োজনীয় টাকা পয়সা সাথে নিতে ভুলে যাবেন না। যদি সম্ভব হয় তাহলে মীনা, আরাফাত মুজদালিফা ইত্যাদির সফর পায়ে হেঁটে করবেন। এতে করে মক্কা শরীফ ফিরে আসা পর্যন্ত প্রতি কদমে সাত কোটি করে নেকী মিলবে। وَاللهُ ذُوالْفَضْلِ الْعَظِيْمِ “আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহ পরায়ন।” সারা রাস্তায় লব্বায়কা, জিকির এবং দরূদ খুব বেশী বেশী পড়বেন। যখনই মীনা শরীফ দৃষ্টিতে পড়বে দরূদ শরীফ পড়ে এই দোআটি পড়বেন:
اَللّٰھُمَّ ھٰذِهٖ مِنًی فَامْنُنْ عَلَیَّ بِمَا مَنَنْتَ بِہٖ عَلٰی اَوْلِیَآئِکَ ط
অনুবাদ: হে আল্লাহ! ইহা মীনা, তুমি আমার উপর ঐ দয়া কর, যা তোমার আউলিয়াদের (বন্ধুদের) উপর করেছ।
এই দেখুন! আপনি এখন মীনা শরীফের সুন্দর সুন্দর উপত্যকায় প্রবেশ করেছেন। আপনাকে মোবারকবাদ! কতইনা মনোরম দৃশ্য। কি জমিন, কি পাহাড়, চারিদিকে শুধু তাবু আর তাবুরই বাহার আসছে। আপনিও নিজ মোয়াল্লিমের দেয়া তাবুতে অবস্থান করুন। ৮ তারিখে জোহর থেকে শুরু করে আগামীকাল ৯ তারিখের ফযর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামায আপনাকে মীনা শরীফে আদায় করতে হবে। কারণ আল্লাহর প্রিয় মাহবুব صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এরকমই করেছেন।
মীনা শরীফে ১ম দিন জায়গার জন্য ঝগড়া
মীনা শরীফে আজকের হাজেরী মহান ইবাদত, আর লক্ষ লক্ষ হাজীরা এই মহান ইবাদতের উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়েছে। এ কারণে শয়তানও কোমড় বেঁধে নেমেছে, আর কথায় কথায় হাজীদের রাগিয়ে তুলছে। এই রাগের বহিপ্রকাশ কিছুটা এভাবেও হয়ে থাকে যে, তাবুতে জায়গার জন্য অনেক হাজীরা ঝগড়া এবং শোর-চিৎকার ও গালিগালাজে ব্যস্ত। আপনি কিন্তু শয়তানের ফাঁদ থেকে সর্বদা হুশিয়ার থাকবেন। যদি কোন হাজী সাহেব আপনার (জন্য নির্ধারিত) জায়গা সত্যি সত্যি জবর দখল করে নেয় তাহলে করজোরে খুব নম্রভাবে তাকে বুঝান। এখন সে যদি না মানে আর আপনার কাছে অন্য কোন স্থানও নাই তখন ঝগড়া করার পরিবর্তে মুআল্লিমের লোকদের শরণাপন্ন হোন। اِنۡ شَآءَ اللہ عَزَّوَجَلّ আপনার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। সর্বোপরি আপনাকে সব সময় বড় মন মানসিকতা রাখতে হবে এবং আল্লাহ তাআলার মেহমানদের সাথে খুব নরম মেজাজে এবং ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি নিয়ে মিলেমিশে থাকতে হবে। আজকের দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন। হতে পারে অনেক লোক গল্পগুজবে ব্যস্ত। কিন্তু আপনি তাদের প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে নিজ ইবাদতে লিপ্ত থাকুন। সম্ভব হলে তাদেরকে নেকীর দাওয়াত দিন, কেননা এটাও একটি উচ্চস্তরের ইবাদত। আজকে আগমনকারী রাত হল, ‘আরাফাতের রাত’। যদি সম্ভব হয় তাহলে অবশ্যই এই রাত ইবাদতে অতিবাহিত করবেন। কারণ ঘুমানোর দিন অনেক পড়ে আছে, আর এই সুযোগ বারবার কখন, কবে ফিরে আসবে!
আরাফাতের রাতের দোআ
নবী করীম صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আরাফাতের রাতে এই দোআটি হাজার বার পড়বে, তবে সে যা কিছু আল্লাহ তাআলা থেকে চাইবে তা পাবে। যদি (দোআর মধ্যে) গুনাহ অথবা বন্ধন ছিন্ন করার আবেদন না করে থাকে।” দোআটি হল এই:
سُبْحٰنَ الَّذِیْ فِی السَّمَآءِ عَرْشُہٗ ط سُبْحٰنَ الَّذِیْ فِی الْاَرْضِ مَوْطِئُہٗ ط سُبْحٰنَ الَّذِیْ فِی الْبَحْرِ سَبِیْلُہٗ ط سُبْحٰنَ الَّذِیْ فِی النَّارِ سُلْطَانُہٗ ط سُبْحٰنَ الَّذِیْ فِی الْجَنَّۃِ رَحْمَتُہٗ ط سُبْحٰـنَ الَّذِیْ فِی الْقَـبْرِ قَضَائُہٗ ط سُبْحٰنَ الَّذِیْ فِی الْھَوَآءِ رُوْحُہٗ ط سُبْحٰنَ الَّذِیْ رَفَعَ السَّـمَآءَ ط سُبْحٰنَ الَّذِیْ وَضَعَ الْاَرْضَطسُبْحٰنَ الَّذِیْ لَامَلْجَـاءَ وَلَا مَنْجٰی مِنْہُ اِلَّا اِلَیْہِ ط
অনুবাদ: ঐ সত্তা পবিত্র যার আরশ সুউচ্চ। ঐ সত্তা পবিত্র যার রাজত্ব যমিনের মধ্যে। ঐ সত্তা পবিত্র যার রাস্তা সমুদ্রের মধ্যে। ঐ সত্তা পবিত্র যার বাদশাহী আগুনের মধ্যে। ঐ সত্তা পবিত্র যার দয়া বেহেস্তের মধ্যে। ঐ সত্তা পবিত্র যার হুকুম কবরের মধ্যে। ঐ সত্তার পবিত্র যার মালিকানায় ঐ প্রাণ যা বাতাসের মধ্যে আছে। ঐ সত্তা পবিত্র যিনি আসমানকে সুউচ্চ করেছেন। ঐ সত্তা পবিত্র যিনি জমিনকে বিস্তৃত করেছেন। ঐ সত্তা পবিত্র যার আযাব থেকে মুক্তি এবং আশ্রয় পাবার কোন স্থান নেই, তাঁর নিকট ব্যতীত।
৯ম তারিখের রাত মীনাতে কাটানো সুন্নাতে মুআক্কাদা
রাতেই মুআল্লিমদের বাস আরাফাত শরীফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যায়, আর ৯ম তারিখের রাত মীনাতে কাটানো সুন্নাতে মুআক্কাদাটি লক্ষ লক্ষ হাজীদের হাত ছাড়া হয়ে যায়। বাহারে শরীয়াতে রয়েছে: যদি রাতে মীনাতে থাকল কিন্তু সুবহে সাদিক হওয়ার পূর্বেই অথবা ফযরের নামাযের পূর্বে অথবা সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে আরাফাতে চলে গেল, তাহলে সে মন্দ (কাজ) করল। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১২০ পৃষ্ঠা) জ্ঞান না থাকার কারণে অসংখ্য হাজী সুবহে সাদিকের পূর্বে ফযরের নামায আদায় করে ফেলে! তাড়াহুড়া না করে হাজী সাহেবরা আপন আপন মুআল্লিমের সাথে সাক্ষাৎ করে মীনা শরীফে রাত কাটানোর ব্যবস্থা করে নিন। اِنۡ شَآءَ اللہ عَزَّوَجَلّ সকালে সূর্যোদয়ের পরে আপনার জন্য বাসের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
চলো আরাফাত চলতে হে ওয়াহা হাজী বনেগে হাম
গুনাহ ছে পাক হোগে লোট কে জিছ দম চলেগে হাম।
আরাফাত শরীফে রওয়ানা
আজ যুলহিজ্জার ৯ তারিখ। ফযরের নামায মুস্তাহাব সময়ে আদায় করে লাব্বায়িক এর যিকির ও দোআর মধ্যে মশগুল থাকুন, যতক্ষণ না সূর্য উদয় হয়ে মসজিদে খাইফ শরীফের সামনে ‘সাবির পাহাড়ের’ উপর চমকাবে, এখন আপনি কম্পমান অন্তরে আরাফাত শরীফের দিকে চলুন। সারা রাস্তায় লাব্বায়িকা ও যিকির এবং দরূদ শরীফ বেশী বেশী পড়তে থাকুন। অন্তরকে অন্য সব ধরনের খেয়াল থেকে পবিত্র করার চেষ্টা করুন। কেননা আজ ঐ দিন, যে দিন কিছু লোকের হজ্ব কবুল করা হবে, আর কিছুকে ঐ মকবুল হাজীদের সদকায় ক্ষমা করে দেয়া হবে। বঞ্চিত সেই যে আজকে বঞ্চিত থাকবে। যদি কুমন্ত্রণা আসে তাহলে তাদের সাথেও যুদ্ধে নামবেন না। কেননা এটাও শয়তানের এক প্রকারের বিজয় যে, সে আপনাকে অন্য এক কাজে লাগিয়ে দিয়েছে।
তাই ব্যস! আপনার একটাই যেন ধ্যান হয় যে, আমার সাথে আমার আল্লাহ তাআলার আজ কাজ রয়েছে। এভাবে (মনমানসিকতা তৈরী) করার দ্বারা اِنۡ شَآءَ اللہ عَزَّوَجَلّ শয়তান ব্যর্থ, পরাজীত এবং দূর হয়ে যাবে।
মুহাব্বত মে আপনি গুমা ইয়া ইলাহী!
না পাওঁ মেঁ আপনা পাতা ইয়া ইলাহী!
(ওয়াসায়িলে বখশিশ, ৭৮ পৃষ্ঠা)
আরাফাতের রাস্তার দোআ
(মীনা শরীফ থেকে বের হয়ে এই দোআ পড়ুন)
اَللّٰھُمَّ اجْعَلْھَا خَیْرَ غُدْوَۃٍ غَدَوْتُھَا قَطُّ وَ قَرِّبْھَا مِنْ رِضْوَانِکَ وَ اَبْعِدْھَا مِنْ سَخَطِکَ ط اَللّٰھُمَّ اِلَیْکَ تَوَجَّھْتُ وَ عَلَیْکَ تَوَکَّلْـتُ وَوَجْھَکَ اَرَدْتُّ فَاجْعَلْ ذَنْبِیْ مَغْفُوْرًا وَّحَجِّیْ مَبْرُوْرًا وَّارْحَمْنِیْ وَلَاتُخَیِّبْنِیْ وَبَارِکْ لِیْ فِیْ سَفَـرِیْ وَاقْضِ بِعَرَفَاتٍ حَاجَتِیْ اِنَّکَ عَلٰی کُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرٌ ط
অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমার এই সকালকে সমস্ত সকাল থেকে উত্তম বানিয়ে দাও এবং ইহাকে তোমার সন্তুষ্টির নিকটবর্তী করে দাও এবং তোমার অসন্তুষ্টি থেকে দূরবর্তী করে দাও। হে আল্লাহ! আমি তোমার প্রতি মনোনিবেশ করেছি। তোমার উপর নির্ভর করেছি এবং তোমার সম্মানিত মনোযোগ ইচ্ছা করেছি। সুতরাং আমার গুনাহ সমূহকে ক্ষমা করে দাও আমার হজ্বকে কবুল করে নাও। আমার উপর দয়া কর। আমাকে বঞ্চিত করো না। আমার সফরে আমার জন্য বরকত দান কর এবং আরাফাতে আমার প্রয়োজন পূর্ণ করে দাও। নিশ্চয় তুমি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
আরাফাত শরীফে প্রবেশ
এই দেখুন! এখন আপনি সম্মানিত আরাফাতের ময়দানের নিকটে এসে পৌঁছেছেন। কেঁপে উঠুন এবং চক্ষুকে অশ্রুসিক্ত হতে দিন। কারণ অতি সত্ত্বর আপনি ঐ সম্মানিত ময়দানে প্রবেশ করবেন, যেখানে আগমনকারী বঞ্চিত হয়ে ফিরে না। দৃষ্টি যখন ‘জবলে রহমতকে’ চুম্বন করবে তখন ‘লাব্বায়িক’এবং দোআর মধ্যে খুব বেশী করে মগ্ন হয়ে যান। কারণ এখানে যে দোআ করবেন,اِنۡ شَآءَ اللہ عَزَّوَجَلّ কবুল হবে। অন্তরকে সংযত রাখুন এবং দৃষ্টিকে নত করে লাব্বায়িক ধ্বনি অনবরত পড়তে পড়তে কেঁদে কেঁদে আরাফাতের পবিত্র ময়দানে প্রবেশ করুন। سُبۡحٰنَ اللہ عَزَّوَجَلَّ! ইহা ঐ পবিত্র স্থান, যেখানে আজ লক্ষ লক্ষ মুসলমান একই পোশাক (ইহরাম) পরিধান করে একত্রিত হয়েছেন। চারিদিকে লাব্বায়িক এর ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করুন, নিঃসন্দেহে অসংখ্য আউলিয়ায়ে কেরাম رَحِمَہُمُ اللہُ تَعَالیٰ এবং আল্লাহ এর দুইজন নবী হযরত সায়্যিদুনা খিজির এবং হযরত সায়্যিদুনা ইলিয়াছ عَلَیۡہِمَا السَّلَام আরাফাত দিবসে আরাফাত ময়দান মুবারকে উপস্থিত থাকেন। এখন আপনি খুব গভীরভাবে আজকের দিনের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন। হযরত সায়্যিদুনা ইমাম জাফর সাদিক رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ থেকে বর্ণিত: কিছু গুনাহ এমন আছে; যার কাফ্ফারা উকুফে আরাফায় (অর্থাৎ তা কেবল আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের মাধ্যমেই ক্ষমা হয়।) (কুতুল কুলুব, ২য় খন্ড, ১৯৯ পৃষ্ঠা)
আরাফাতের দিবসের দু’টি মহান ফযীলত
﴾১﴿ আরাফাতের দিনের চেয়ে বেশী অন্য কোন দিনে আল্লাহ তাআলা আপন বান্দাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন না। অতঃপর তাদের সাথে (নিয়ে) ফেরেশতাদের উপর গর্ব করেন। (মুসলিম, ৭০৩ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১৩৪৮)
﴾২﴿ আরাফাতের দিন ছাড়া অন্য কোন দিন শয়তানকে খুব বেশী তুচ্ছ, লাঞ্চিত, অপমানিত, আর খুব বেশী রাগে ভরপূর দেখা যায়নি, আর তার কারণ এটাই যে, ঐ দিনে রহমতের বর্ষণ এবং আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দাদের (অনেক) বড় বড় গুনাহকে ক্ষমা করে দেয়াটা শয়তান দেখে। (মুআত্তা ইমাম মালিক, ১ম খন্ড, ৩৮৬ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৯৮২)
কেউ যখন মহিলাদেরকে দেখল......
এক ব্যক্তি আরাফাতের দিনে মহিলাদের দিকে দৃষ্টি দিল, তখন রাসুলুল্লাহ صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “আজ ঐ দিন, (যে দিনে) কোন ব্যক্তি (আপন) কান, চোখ ও জিহ্বাকে আয়ত্তে (সংযত) রাখবে, তার ক্ষমা হয়ে যাবে।” (শুআবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ৪৬১ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৪০৭১)
ইয়া ইলাহী! হজ্ব করো তেরী রিজাকে ওয়াসিতে
কর কবুল ইছ কো মুহাম্মদ মুস্তফা কে ওয়াসিতে
اٰمِين بِجا هِ النَّبِيِّ الْاَمين صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم
আরাফাতের ময়দানে কংকর গুলোকে সাক্ষী বানানোর ঈমান তাজাকারী ঘটনা
হযরত সায়্যিদুনা ইবরাহীম ওয়াসিতী رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ হজ্বের সময় আরাফাতের ময়দানে ৭টি কংকর হাতে তুলে নিলেন আর তাদের (উদ্দেশ্য করে) বললেন: ওহে কংকরেরা! তোমরা সাক্ষী হয়ে যাও আমি বলছি: لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا اللہُ وَ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُہٗ وَرَسُوْلُہٗط অনুবাদ: ‘আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তাঁর বিশেষ বান্দা ও রাসুল।’ অতঃপর যখন (রাতে) ঘুমালেন তখন স্বপ্নে দেখলেন যে, কিয়ামত সংঘটিত হয়ে গেছে! হিসাব নিকাশ চলছে! ফয়সালা শুনিয়ে দেয়া হচ্ছে! এখন ফিরিশতারা (তাকে) জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যখন জাহান্নামের দরজায় পৌঁছেন তখন ঐ কংকর গুলো থেকে একটি কংকর দরজায় এসে বাধাঁ হয়ে দাঁড়ায়। অতঃপর দ্বিতীয় দরজায় পৌঁছলে অপর একটি কংকর একইভাবে দরজার সামনে এসে যায়। এমন (অবস্থা) জাহান্নামের সাতটি দরজায় ঘটল। এরপর ফিরিশতারা আরশে মুআল্লার সামনে নিয়ে উপস্থিত হলেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করলেন: ওহে ইবরাহীম! তুমি কংকরগুলোকে তোমার ঈমানের উপর সাক্ষী (বানিয়ে) রেখেছিলে, আর ঐ নিষ্প্রাণ পাথরগুলো তোমার হক নষ্ট করেনি, আমি কিভাবে তোমার সাক্ষীর হক বিনষ্ট করতে পারি! অতঃপর আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করলেন: একে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাও। সুতরাং যখন জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হল তখন জান্নাতের দরজা বন্ধ অবস্থায় পেল। (তখনই) কলেমা পাকের সাক্ষ্য আসল, আর তিনি رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ জান্নাতে প্রবেশ করলেন। (দুররাতুল নাসেহীন, ৩৭ পৃষ্ঠা)
সৌভাগ্যবান হাজী সাহেব-সাহেবাগণ
আপনিও আরাফাতের ময়দানে ৭টি কংকর তুলে নিয়ে উল্লেখিত কলেমা অথবা কলেমায়ে শাহাদাত পড়ে সেগুলোকে সাক্ষী বানিয়ে পুনরায় ঐ স্থানে রেখে দিন। এমনটি পৃথিবীর যেখানেই থাকুন না কেন সুযোগ পেলেই গাছপালা, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্রমালা, নদীনালা এবং বৃষ্টিমালা ইত্যাদি ইত্যাদিকে কলেমা শরীফ শুনিয়ে নিজ ঈমানের সাক্ষী বানাতে থাকুন।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করার ৯টি মাদানী ফুল
﴾১﴿ যখন দ্বিপ্রহর নিকটবর্তী হবে তখন গোসল করে নিন। ইহা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। যদি গোসল না করেন, তাহলে কমপক্ষে ওযু অবশ্যই করবেন। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১২৩ পৃষ্ঠা)
﴾২﴿ আজ অর্থাৎ ৯ই যুলহিজ্জা এর দ্বিপ্রহর ঢলে পড়া থেকে (অর্থাৎ যোহরের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হওয়া) শুরু করে ১০ তারিখের সুবহে সাদিক পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়টুকুতে যে কেউ ইহরামের সাথে এক মুহুর্তের জন্যও পবিত্র আরাফাতের ময়দানে প্রবেশ করল সে ‘হাজী’ হয়ে গেল। আজকের দিনে এখানে অবস্থান করাটা হজ্জের সবচেয়ে বড় রুকন।
﴾৩﴿ আরাফাত শরীফে যোহরের সময়ে যোহর ও আসরের নামাযকে মিলিয়ে এক সাথে পড়া হয়। কিন্তু এর কিছু শর্ত আছে। (আপনারা নিজ নিজ তাবুতে যোহরের নামায যোহরের সময়ে এবং আসরের নামায আসরের সময়ে জামাআতের সাথে আদায় করুন।)
﴾৪﴿ আজ হাজীদেরকে রোজা বিহীন অবস্থায় থাকা এবং সর্বদা ওযু অবস্থায় থাকা সুন্নাত।
﴾৫﴿ জবলে রহমতের নিকটে যেখানে কালো পাথরের কার্পেট রয়েছে সেখানে অবস্থান করা উত্তম।
﴾৬﴿ কিছু কিছু লোক ‘জবলে রহমতের’ একেবারে উপরে উঠে যায় এবং সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রুমাল নাড়াতে থাকে, আপনি এই রকম করবেন না এবং তাদের ব্যাপারেও অন্তরে খারাপ ধারণা আনবেন না। আজকের দিন অন্যের দোষ-ত্রুটি দেখার দিন নয় বরং নিজের দোষ-ত্রুটির উপর লজ্জিত হওয়া এবং কান্নাকাটি করার দিন।
﴾৭﴿ উকুফ তথা অবস্থানের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম। (অর্থাৎ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আরাফাতে অবস্থান করা উত্তম।) কিন্তু এটা শর্ত বা ওয়াজিব নয়। বসে থাকলেও উকুফ (অবস্থান) হয়ে যাবে। উকুফের ক্ষেত্রে নিয়্যত করা ও ক্বিবলামুখী হওয়া উত্তম।
﴾৮﴿ নামাযের পর পরই উকুফ (অবস্থান) করা সুন্নাত। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১২৪ পৃষ্ঠা)
﴾৯﴿ মওকিফে (অবস্থান স্থলে) সর্বপ্রকারের ছায়া থেকে এমনকি (ছায়া লাভের উদ্দেশ্যে) ছাতা লাগানো থেকেও বিরত থাকুন। হ্যাঁ যে একান্তভাবে অপারগ, বাস্তবে সে অক্ষমই। (প্রাগুক্ত, ১১২৮ পৃষ্ঠা) ছাতা লাগালে পুরুষেরা এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন, যেন মাথার সাথে স্পর্শ না হয়। অন্যথায় কাফ্ফারার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
ইমাম আহলে সুন্নাত رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর বিশেষ উপদেশ
কুদৃষ্টি সবসময় হারাম। ইহরাম অবস্থায়, মাওকিফে (হজ্বের অবস্থান স্থলে) কিংবা মসজিদে হারামে, কা’বার সামনে, বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফরত অবস্থায় জায়েয নয়। মূলত কখনও কোনো অবস্থায় কুদৃষ্টি দেয়া বৈধ নয়। ইহা আপনাদের পরীক্ষার স্থান। মহিলাদেরকে আদেশ করা হয়েছে যে, এখানে মুখ আবৃত করিওনা এবং আপনাদেরকে আদেশ করা হয়েছে যে, তাদের প্রতি দৃষ্টি দিওনা। দৃঢ়ভাবে জেনে রাখবেন, এরা বড় মর্যাদাবান বাদশার বাঁদি এবং এই সময় আপনারা এবং তারা সবাই (আল্লাহর) বিশেষ দরবারে উপস্থিত। নিঃসন্দেহে যার বগলের নিচে বাঘের বাচ্চা থাকে, ঐ সময় কে তার প্রতি দৃষ্টি উঠিয়ে কথা বলার সাহস রাখে? তাহলে একক মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলার বাদীরা তাঁর বিশেষ দরবারে উপস্থিত হয়েছেন, আর (এমতাবস্থায়) তাদের উপর কুদৃষ্টি দেয়ার শাস্তি কতইনা কঠিন হবে! وَلِلهِ المَثَلُ الْاَعْلٰي কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: “আর আল্লাহর জন্য রয়েছে উচ্চ মর্যাদা।” হ্যাঁ! হ্যাঁ! সাবধান! ঈমান কে বাঁচিয়ে, অন্তর ও দৃষ্টিকে সংযত করে (পথ চলুন)। হেরম (স্মরণ রাখবেন! আরাফাত হেরমের সীমানার বাইরে অবস্থিত।) ঐ জায়গা যেখানে গুনাহর ইচ্ছা করলেও পাকড়াও করা হবে, আর এখানে একটি গুনাহ লক্ষ গুনাহের সমান গণ্য করা হয়। আল্লাহ তাআলা (আমাদেরকে) কল্যাণের তাওফিক দান কর। اٰمِين بِجا هِ النَّبِيِّ الْاَمين صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১০ম খন্ড, ৭৫০ পৃষ্ঠা)
গুনাহো ছে মুঝকো বাঁচা ইয়া ইলাহী!
বুরী আদতী ভী ছুড়া ইয়া ইলাহী!
(ওয়াসায়িলে বখশিশ, ৭৯ পৃষ্ঠা)
আরাফাত শরীফের (আরবী) দোআ সমূহ
﴾১﴿ দ্বি-প্রহরের সময় মওকিফে অবস্থান কালীন সময়ে নিম্ন লিখিত কালেমায়ে তাওহীদ, সুরা ইখলাস শরীফ এবং এরপরে প্রদত্ত দরূদ শরীফ ১০০ বার করে পাঠকারীকে হাদীসের ভাষ্য মতে ক্ষমা করে দেয়া হয়। এমনকি যদি সে আরাফাত শরীফে অবস্থানকারী সকলের জন্য সুপারিশ করে (বসে) তাহলে তাও কবুল করে নেয়া হবে।
(ক) এই কালেমা তাওহীদ ১০০ বার পড়বেন:
لَااِلٰہَ اِلَّا اللہُ وَحْدَہٗ لَاشَرِیْکَ لَہٗ ط لَہُ الْمُلْکُ وَلَہُ الْحَمْدُ یُحْیِیْ وَیُمِیْتُ وَھُوَ عَلٰی کُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرٌ۔
অনুবাদ: আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তিনি একক তার কোন শরীক নেই। যাবতীয় রাজ্য তাঁরই জন্য এবং তাঁরই জন্য সমস্ত প্রশংসা। তিনি জীবন এবং মৃত্যু দান করেন। আর তিনি সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
(খ) সূরা ইখলাস শরীফ ১০০ বার পড়বেন।
(গ) এই দুরূদ শরীফ ১০০ বার পড়বেন:
اَللّٰھُمَّ صَلِّ عَلٰی (سَیِّدِنَا) مُحَمَّدٍکَمَا صَلَّىتَ عَلٰی (سَیِّدِنَا) اِبْرَاہِیْمَ وَعَلٰی اٰلِ (سَیِّدِنَا) اِبْرَاہِیْمَ اِنَّکَ حَمِیْدٌ مَّجِیْدٌ وَّعَلَیْنَا مَعَھُمْ ۔
অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমাদের সরদার হযরত মুহাম্মদ صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর উপর দরূদ প্রেরণ কর, যেভাবে তুমি দুরূদ প্রেরণ করেছ, আমাদের সরদার ইবরাহীম عَلَیۡہِ السَّلَام এর উপরে এবং আমাদের সরদার ইবরাহীম عَلَیۡہِ السَّلَام এর পরিবারের উপর, নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত মর্যাদাবান এবং তাদের সাথে আমাদের উপরেও।
﴾২﴿ اَللہُ اَکۡبرُ وَ لِلہِ الۡحَمۡدُ তিনবার। অতঃপর কালেমায়ে তাওহীদ একবার। এরপর এ দোআ তিনবার পড়বেন:
اَللّٰھُمَّ اھْدِنِیْ بِالْھُدٰی وَنَقِّنِیْ وَاعْصِمْنِیْ بِالتَّقْوٰی وَاغْفِـرْلِیْ فِی الْاٰخِـرَۃِ وَالْاُوْلٰـی ط
অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমাকে হেদায়াতের সাথে পথ প্রদর্শন কর এবং আমাকে পবিত্র কর, আর আমাকে খোদাভীতির সাথে গুনাহ থেকে হেফাজত কর এবং আমাকে দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষমা কর। এর পর একবার এই দোআটি পড়ুন:
اَللّٰھُمَّ اجْعَلْہُ حَجًّا مَّبْرُوْرًا وَّذَنْۢبًا مَّغْفُوْرًا ط اَللّٰھُمَّ لَکَ الْحَمْدُ کَالَّذِیْ نَقُوْلُ وَخَیْرًا مِّمَّا نَقُوْلُ ط اَللّٰھُمَّ لَکَ صَلَاتِیْ وَنُسُکِیْ وَمَحْیَایَ وَمَمَاتِیۡ وَاِلَیْکَ مَاٰبِیْ وَ لَکَ رَبِّ تُرَاثِیْ ط اَللّٰھُمَّ اَعُوْذُبِکَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَ وَسْوَسَۃِ الصَّدْرِ وَشَتَاتِ الْاَمْرِ ط اَللّٰھُمَّ اِنِّیْۤ اَسْئَلُکَ مِنْ خَیْرِ مَا تَجِۤیۡءُ بِہِ الرِّ یْحُ وَنَعُوْذُبِکَ مِنْ شَرِّ مَا تَجِۤیۡءُ بِہِ الرِّیْحُ ط اَللّٰھُمَّ اھْدِنَا بِالْھُدٰی وَزَیِّنَّا بِالتَّقْوٰی وَاغْفِرْلَنَا فِی الْاٰخِرَۃِ وَالْاُوْلٰی ط اَللّٰھُمَّ اِنِّیْۤ اَسْئَلُکَ رِزْقًا طَیِّبًا مُّبَارَکًاط اَللّٰھُمَّ اِنَّکَ اَمَـرْتَ بِالدُّعَآءِ وَ قَضَیْتَ عَلٰی نَفْسِکَ بِالْاِجَابَۃِ وَ اِنَّکَ لَاتُخْلِفُ الْمِیْعَادَ وَلَا تَنْکُثُ عَھْدَکَ ط اَللّٰھُمَّ مَااَحْبَبْتَ مِنْ خَیْرٍ فَحَبِّبْہُ اِلَیْنَا وَیَسِّرْہُ لَنَا وَمَا کَرِھْتَ مِنْ شَـرٍّ فَکَرِّھْہُ اِلَیْنَا وَجَنِّبْنَاہُ وَلَا تَنْزِعْ مِنَّا الْاِسْلَامَ بَعْدَ اِذْ ھَدَیْتَنَاطاَللّٰھُمَّ اِنَّکَ تَرٰی مَکَانِیْ وَ تَسْمَعُ کَلَامِیْ وَ تَعْلَمُ سِـرِّیْ وَ عَلَا نِیَتِیْ وَلَا یَخْفٰی عَلَیْکَ شَیْئٌ مِّنْ اَمْـرِیٓ اَنَا الْبَآئِسُ الْفَقِیْرُ الْمُسْتَغِیْثُ الْمُسْتَجِیْرُ الْوِجْلُ الْمُشْفِقُ الْمُقِرُّ الْمُعْتَرِفُ بِذَنْۢبِہٖٓ اَسْئَلُکَ مَسۡأَ لَۃَ الْمِسْکِیْنِ وَ اَبْتَھِلُ اِلَیْکَ اِبْتِھَالَ الْمُذْنِبِ الذَّلِیْلِ وَ اَدْعُوْکَ دُعَآءَ الْخَآئِفِ الْمُضْطَرِّ دُعَآءَ مَنْ خَضَعَتْ لَکَ رَقَبَتُہٗ وَ فَاضَتْ لَکَ عَیْنَاہُ وَ نَحِلَ لَکَ جَسَدُہٗ وَ رَغِمَ اَنْفُہٗ ط اَللّٰھُمَّ لَاتَجْعَلْنِیْ بِدُعَائِکَ رَبِّیْ شَقِیًّا وَّکُنْۢ بِیْ رَؤُوْفًا رَّحِیْمًا یَاخَیْرَ الْمَسْئُوۡلِیْنَ وَخَیْرَ الْمُعْطِیْنَط
অনুবাদ: হে আল্লাহ! এই হজ্বকে মাবরুর হজ্ব করে দাও এবং গুনাহ ক্ষমা করে দাও। হে মালিক! তোমার জন্য প্রশংসা, যেভাবে আমরা বলি এবং তা থেকে উত্তম যা আমরা বলি। হে আল্লাহ! আমার নামায, ইবাদত এবং আমার জীবন ও মৃত্যু তোমারই জন্য এবং তোমারই দিকে আমার প্রত্যাবর্তনস্থল। পরওয়ারদিগার! তুমি আমার ওয়ারিশ, হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট কবরের আযাব, অন্তরের কুমন্ত্রণা এবং কর্মের কঠোরতা থেকে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করি ঐ জিনিসের কল্যাণ যা বাতাসে নিয়ে আসে এবং তোমার নিকট আশ্রয় চাই ঐ জিনিসের অনিষ্ট থেকে যা বাতাসে নিয়ে আসে। হে আল্লাহ! হেদায়াতের প্রতি আমাদেরকে পথ প্রদর্শন কর এবং খোদাভীতি দ্বারা আমাদেরকে সৌন্দর্য্যমন্ডিত কর এবং ইহকাল ও পরকালে আমাদেরকে ক্ষমা কর। হে মালিক! আমি তোমার নিকট বরকতময় পবিত্র রিযিকের প্রার্থনা করি। ইলাহি! তুমি দোআ করার আদেশ করেছ এবং কবুল করার দায়িত্ব তুমি নিজেই নিয়েছ। নিশ্চয় তুমি ওয়াদা খেলাপ করনা এবং তুমি অঙ্গিকার ভঙ্গ করনা। হে মালিক! যে সকল কল্যাণ তুমি পছন্দ কর তা আমাদের নিকটও পছন্দনীয় করে দাও। তা আমাদের জন্য সহজ করে দাও এবং যে সকল খারাপ বিষয় তুমি অপছন্দ কর উহা আমাদের নিকটও অপছন্দনীয় করে দাও এবং আমাদেরকে উহা থেকে রক্ষা কর। ইসলামের প্রতি তুমি আমাদেরকে হেদায়াত করার পরে আমাদের থেকে উহা চিনিয়া নিও না। ইলাহী! তুমি আমার স্থানকে দেখেছ এবং আমার কথা শুনেছ, আর আমার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য বিষয় জান। আমার কর্ম হতে কোন জিনিসই তোমার নিকট গোপন নয়, আমি অভাবী মুখাপেক্ষী, প্রার্থনাকারী, আশ্রয় প্রার্থী, ভীত সন্ত্রস্ত, নিজের গুনাহের স্বীকৃতি ও পরিচয়দানকারী। মিসকিনের মত তোমার নিকট প্রার্থনা করি। লাঞ্চিত গুনাহগারের মিনতির মত তোমার নিকট মিনতি করি। ভীত অসহায় ব্যক্তির দোআর মত তোমার নিকট দোআ করি ঐ ব্যক্তির দোআর মত যার গর্দান তোমার জন্য অবনত হয়েছে এবং তোমার জন্য তার চক্ষু যুগল প্রবাহিত হয়েছে এবং তোমার জন্য তার শরীর দূর্বল হয়েছে ও তার নাক ধূলা মলিন হয়েছে। হে মালিক! তুমি তোমার হেদায়েত থেকে আমাকে বঞ্চিত করো না এবং আমার উপর অসীম দয়ালু ও করুনাময় হয়ে যাও। হে সর্বোত্তম প্রার্থনা কবুলকারী ও সর্বোত্তম দাতা।
﴾৩﴿ আমিরুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদুনা আলী মুরতাজা শেরে খোদা کَرَّمَ اللہُ تَعَالٰی وَجۡہَہُ الۡکَرِیۡم থেকে বর্ণিত আছে যে, সুলতানে দোজাহান, নবী করীম صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: আমার এবং অন্যান্য নবীদের আরাফাত দিবসের দোআ এটাই:
لَااِلٰہَ اِلَّا اللہُ وَحْدَہٗ لَاشَرِیْکَ لَہٗ ط لَہُ الْمُلْکُ وَلَہُ الْحَمْدُ یُحْیٖ وَیُمِیْتُ وَھُوَ عَلٰی کُلِّ شَيْءٍ قَدِیْرٌط اَللّٰھُمَّ اجْعَلْ فِیْ سَمْعِیْ نُوْرًا وَّفِیْ بَصَرِیْ نُوْرًا وَّفِیْ قَلْبِیْ نُوْرًاط اَللّٰھُمَّ اشْرَحْ لِیْ صَدْرِیْ وَیَسِّرْلِیْ اَمْرِیْ وَاَعُوْذُبِکَ مِنْ وَسَاوِسِ الصَّدْرِ وَتَشْتِیْتِ الْاَمْرِ وَعَذَابِ الْقَبْرِط اَللّٰھُمَّ اِنِّیْ اَعُوْذُبِکَ مِنْ شَرِّ مَا یَلِـجُ فِی اللَّیْلِ وَشَرِّ مَا یَلِـجُ فِی النَّھَارِ وَ شَرِّ مَا تَھُبُّ بِہِ الرِّیْحُ وَشَرِّ بَوَآئِقِ الدَّھْرِط
অনুবাদ: আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের উপযুক্ত আর কেউ নেই। তিনি একক এবং তাঁর অংশীদার নেই তাঁর জন্য যাবতীয় সাম্রাজ্য এবং সমস্ত প্রশংসা তারই জন্য। তিনি জীবিত ও কখনো মৃত্যু আসবেনা এবং তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। হে আল্লাহ! আমার শ্রবণ শক্তিকে আলোকিত কর। আমার দৃষ্টিশক্তিকেও আলোকিত কর এবং আমার অন্তরে আলো পরিপূর্ণ করে দাও। হে আল্লাহ! আমার বক্ষকে প্রসারিত কর এবং আমার কাজকে সহজ করে দাও এবং তোমার নিকট আশ্রয় চাই, বক্ষের কুমন্ত্রণা থেকে কাজের কঠোরতা থেকে এবং কবরের আযাব থেকে। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই ঐ অনিষ্ট থেকে, যা রাত্রি বেলায় প্রবিষ্ট হয় এবং ঐ অনিষ্ট থেকে যা দিনের বেলায় প্রবিষ্ট হয়, আর ঐ অনিষ্ট থেকে যাকে বাতাস প্রবাহিত করে এবং যুগের বিপদ আপদে অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।
মাদানী ফুল: সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা, হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আজমী رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ আরাফাতের ময়দানে পড়ার বেশ কিছু দোআ উদ্ধৃত করার পর বললেন: এই স্থানে পড়া যায় এমন অনেক দোআ কিতাবে রয়েছে। কিন্তু এতটুকুই যথেষ্ট, আর দরূদ শরীফ ও কোরআন মজীদের তিলাওয়াত সকল দোআ থেকে বেশী উপকারী। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১২৭ পৃষ্ঠা)
আরাফাত ময়দানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দোআ করা সু্ন্নাত
প্রিয় হাজী সাহেবানরা! একাগ্রতার সাথে সত্য অন্তরে নিজের সম্মানিত মালিকের প্রতি মনোনিবেশ করুন এবং কিয়ামতের দিনে আমলের হিসাবের জন্য তাঁর দরবারে হাজেরীর কল্পনা করুন। একান্ত বিনয় ও নম্রতার সাথে কম্পমান অবস্থায় ভয় এবং আশা মিশ্রিত জযবার (আবেগের) সাথে চক্ষু বন্ধ করে মাথা অবনত করে দোআর জন্য হাত আসমানের দিকে মাথার চেয়ে উপরে উঠিয়ে দিন। তাওবা এবং ইস্তিগফারে ডুবে যান। দোআর সময় কিছুক্ষণ পরপর ‘লাব্বায়িক’ বারবার পড়তে থাকুন। খুব বেশি কেঁদে কেঁদে নিজের এবং নিজের মা-বাবা, আর সমস্ত উম্মতের ক্ষমার জন্য দোআ প্রার্থনা করুন। চেষ্টা করুন যাতে এক আধ ফোঁটা অশ্রু চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে কারণ ইহা দোআ কবুল হওয়ার প্রমাণ। যদি কান্না না আসে তাহলে কান্নাার ভাব করুন। কারণ ভাল কাজের নকল করাও ভাল। তাজেদারে মদীনা صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সমস্ত নবীগণ عَلَیۡهِمُ السَّلَام এবং সমস্ত সাহাবায়ে কিরাম عَلَیۡہِمُ الرِّضۡوَان ও পবিত্র আহলে বাইতের ওসিলা আপন মাওলার দরবারে পেশ করুন। ছারকারে বাগদাদ হুযুরে গাউছে পাক, খাজা গরীবে নেওয়াজ এবং আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা رَحِمَہُمُ اللہُ تَعَالٰی এর ওসিলা পেশ করুন সমস্ত ওলী ও সকল আশেকে রাসুল এর সদকায় প্রার্থনা করুন। আজ রহমতের দরজা সমূহ খুলে গেছে, اِنۡ شَآءَ اللہ عَزَّوَجَلّ প্রার্থনাকারীরা বিফলে যাবে না। আল্লাহ তাআলার রহমতের বর্ষন বাধা ছিন্ন করে আসতেছে, রহমতের মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষিত হচ্ছে, সমগ্র আরাফাত শরীফ নূর, তাজাল্লী এবং রহমত ও বরকতে ডুবে গেছে! কখনও নিজের গুনাহ থেকে এবং আল্লাহ তাআলার গযব দানের ক্ষমতার প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং তাঁর আযাব হতে পরিত্রাণ চেয়ে সর্বদা দুলে এমন গাছের শাখার ন্যায় কেঁপে উঠুন। আবার কখনও এমন জযবা যেন হয় যে, তাঁর অফুরন্ত রহমতের আশায় আপনার মরু শুষ্ক হৃদয়ে নব প্রষ্ফুটিত ফুলের ন্যায় হেসে উঠে।
আদল করে তা থর থর কমবন উচ্ছিয়া শানা ওয়ালে
ফজলে করে তা বখশে জওয়ান মে জাহে মু কালে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for supporting.