বিভাগ সমূহ

মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৭

পর্দার মাসআলা (নবম পর্ব)

ইসলামী বোন ও নেকীর দাওয়াত 
প্রশ্ন:- ইসলামী বোনেরা নেকীর দাওয়াত দেয়ার জন্য নিজের প্রতিবেশী ইসলামী বোনের ঘরের দরজায় যেতে পারবে কিনা? 
উত্তর:- পরিপূর্ণ পর্দা সহকারে যেতে পারবে। কিন্তু এই অবস্থায় ইসলামী বোনকে অনেক সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে। 

আওয়াজ কিভাবে স্পষ্ট হলো! 
ইসলামী বোনেরা! দুনিয়া ও আখিরাতের অগণিত মঙ্গল লাভ করার জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন সাংগঠনিক পদ্ধতি অনুযায়ী নেকীর দাওয়াতের মাদানী দাওরায় অংশগ্রহণ করুন। নেকীর দাওয়াতের এলাকায়ে দাওরার বরকতের কথা কি বলবো! আপনাদের ঈমান সতেজ করার জন্য মাদানী কাফেলার একটি মনোরম ও সুগন্ধিত মাদানী বাহার উপস্থাপন করছি। পাঞ্জাবের এক ইসলামী বোনের লিখিত বর্ণনার সারাংশ হলো; আমাদের এলাকার একজন ইসলামী বোন গলার রোগে আক্রান্ত ছিলো। স্পষ্ট আওয়াজ বের হতো না এবং তা এমন ছিলো যে, তার একেবারে নিকটে বসা লোকও তার আওয়াজ ভালভাবে বুঝতে পারতো না। ডাক্তার অপারেশনের জন্য বললো এবং এটাও বললো যে, হয়তো আওয়াজ ভাল হবে অথবা একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে দা'ওয়াতে ইসলামীর একজন ইসলামী বোন তাকে নেকীর দাওয়াতের মাদানী দাওরায় অংশগ্রহণ করার উৎসাহ প্রদান করলো, তখন সে বিভিন্ন ঘরে পর্দাসহকারে প্রদান করা নেকীর দাওয়াতে অংশগ্রহণ করার জন্য তাদের সঙ্গ অবলম্বন করলো। যখন সেই ইসলামী বোন মাদানী দাওরা থেকে ফিরে এলো তখন আশ্চর্যজনক ঘটনা হলো যে, তার আওয়াজ পূর্বের তুলনায় অনেক ভাল হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর পরের দিনেই যখন সে দা'ওয়াতে ইসলামীর ইসলামী বোনদের সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় অংশগ্রহণ করলো, তখন তার আওয়াজ এমন ভাবে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, মনে হয় কখনোও বন্ধই হয়নি। এমনি ভাবে নেকীর দাওয়াতের মাদানী দাওরা ও সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় অংশগ্রহণ করার বরকতে সে এই রোগ থেকে মুক্তি পেলো। 

আমিনা কে লাল! সদকা ফাতেমা কে লাল কা, 
দুর আব তো শা'মতেঁ কর বে'কসু ও মজবুর কি। 
বেহরে শাহে করবালা হোঁ দূর আফাত ও বালা, 
এ্যায় এ হাবিবে রব্বে দাওয়ার বে'কসু ও মজবুর কি। 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 


ইসলামী বোনেরা! اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ নেকীর দাওয়াতের মাদানী  দাওরার অসংখ্য বরকত রয়েছে। নেকীর দাওয়াত দেওয়া ও কল্যাণমূলক কথা বলার প্রতিদান কে অনুমান করতে পারবে। ইমাম আবু নুয়াইম আহমদ বিন আব্দুল্লাহ্ আছফাহানি رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ “হিলয়াতুল আওলিয়া” কিতাবে উদ্বৃত করেন: “আল্লাহ্ তাআলা হযরত সায়্যিদুনা মুসা কালিমুল্লাহ্ عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام এর নিকট ওহী প্রেরণ করলেন: “কল্যানের কথা নিজে শেখো এবং অপরকেও শিক্ষা দাও, আমি কল্যাণ শিক্ষা অর্জনকারী ও শিক্ষাদাতার কবরকে আলোকিত করে দিব, যেন তার কোন প্রকারের ভয় না হয়।” (হিলইয়াতুল আওলিয়া, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৫ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৭৬২২) উক্ত বর্ণনা দ্বারা নেকীর বিষয়ে শিক্ষা অর্জন করার ও শিক্ষা দেওয়ার প্রতিদান ও সাওয়াবের ব্যাপারে জানা গেলো। নেকীর দাওয়াত প্রদান করা, সুন্নাতে ভরা বয়ান করা অথবা দরস দেয়া এবং শ্রবণকারী ও কারীনির তো ভাগ্যই পরিবর্তন হয়ে গেলো। اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ তাদের কবরের ভেতর আলোকিত থাকবে এবং তাদের কোন প্রকারের ভয় অনুভব হবে না। ইনফিরাদী কৌশিশ করে নেকীর দাওয়াতের মাধ্যমে কল্যাণমুলক বিষয় শিক্ষা অর্জন করা এবং শিক্ষাদানকারী ও কারীনিদের মাদানী কাফেলায় সফর এবং ফিকরে মদীনার মাধ্যমে মাদানী ইনআমাতের রিসালা পূরন করার জন্য উৎসাহ প্রদানকারী ও কারীনিদের এবং সুন্নাতে ভরা ইজতিমার দাওয়াত প্রদানকারী ও কারীনি, এছাড়া মুবাল্লিগদের নেকীর দাওয়াত শ্রবনকারী ও মুবাল্লিগাদের নেকীর দাওয়াত শ্রবণকারীনীদের কবরও اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ  প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নূরের উচিলায় নূরে ভরপুর হয়ে যাবে।  

কবর মে লেহরায়েঙ্গে থা হাশর চশমে নূর কে,
জলওয়া ফরমা হুগি জব ত্বলআত রসুলুল্লাহ্ কি। 
(হাদায়িকে বখশিশ শরীফ)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد


ইসলামী বোনদের মাদানী মাশওয়ারা
প্রশ্ন:- ইসলামী বোনেরা কী নেকীর দাওয়াতের মাদানী কাজকে উন্নতির লক্ষ্যে পরস্পর মিলিত হয়ে মাদানী মাশওয়ারার জন্য একত্রিত হতে পারবে?
উত্তর:- জ্বী হ্যাঁ! শরয়ী পর্দা ও অন্যান্য বিধিবিধান সহকারে মাদানী মাশাওয়ারার জন্য একত্রিত হতে পারবে।

ইদ্দত চলাকালীন সময়ে সুন্নাত শিখার জন্য বের হওয়া কেমন?
প্রশ্ন:- মৃত্যু অথবা তালাকের ইদ্দত চলাকালীন সময়ে ইসলামী বোনেরা সুন্নাত শেখা অথবা শিখানোর জন্য ঘর থেকে বের হতে পারবে কী না?
উত্তর:- পারবে না।

ইসলামী বোনদের ইজতিমা করা কেমন? 
প্রশ্ন:- ইসলামী বোনেরা পর্দার মধ্যে থেকে আল্লাহর যিকির, নাত পরিবেশেন, সুন্নাতে ভরা বয়ান এবং দোয়া ইত্যাদির সমন্বয়ে সুন্নাতে ভরা ইজতিমা করা কেমন? 
উত্তর:- ইসলামী বোনদের নিকট কোরআন ও সুন্নাতের বানী সমূহ পৌঁছানো আবশ্যক। যেন তারা ইসলামী জীবন অতিবাহিত করার পদ্ধতি জানতে পারে। এর বিভিন্ন অবস্থাবলী রয়েছে যেমন: তাদেরকে সুন্নাতে ভরা বয়ান সমূহের ক্যাসেট শুনতে দেয়া ও সঠিক উলামায়ে আহলে সুন্নাতের কিতাব সমূহ পড়ার জন্য দেয়া। এছাড়াও পর্দার প্রতি লক্ষ্য রেখে কোন স্থানে একত্রিত হয়ে ফরয ও সুন্নাত সমূহ শিখা। প্রসিদ্ধ মুফাস্সীর হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বর্ণনা করেন:“বর্তমান যুগে মহিলাদেরকে পর্দা সহকারে মসজিদে আসা ও আলাদা ভাবে বসা থেকে নিষেধ না করা উচিত। কেননা, বর্তমানে মহিলারা সিনেমা হলে ও বাজার সমূহে যেতে দ্বিধাবোধ করে না, মসজিদে এসে কিছু না কিছু দ্বীনের বিধিবিধান তো শিখতে পারবে।” (মিরআতুল মানাজিহ, ২য় খন্ড, ১৭০ পৃষ্ঠা) অন্য এক জায়গায় বলেন: “এদের (মহিলাদের) মধ্যে প্রচার কাজ হয়তো কিতাব ও রিসালার মাধ্যমে করতে হবে অথবা জ্ঞানী মহিলারা অজ্ঞ মহিলাদেরকে বিধিবিধান শেখাবে অথবা পরিপূর্ণ পর্দাসহকারে বক্তা (বর্ণনাকারী আলিম) থেকে দুরে একটি বাড়ি অথবা বড় পর্দার আড়ালে ওয়াজ ও বিধিবিধান শুনবে। কিন্তু তৃতীয় অবস্থায় অনেক বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। (ফতোওয়ায়ে নঈমিয়া, ৪৮ পৃষ্ঠা) 

আলিম নয় এমন ব্যক্তি বয়ান করা হারাম 
প্রশ্ন:- যে ইসলামী বোন আলিমা নয়, সে কি ইসলামী বোনদের সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় বয়ান করতে পারবে? 
উত্তর:- যার যথেষ্ট পরিমাণ জ্ঞান নেই, সে যেন দ্বীন সম্পর্কিত বয়ান না করে। আমার আক্বা আ'লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ “ফতোওয়ায়ে রযবীয়া”র ২৩তম খন্ডের ৩৭৮ পৃষ্ঠায় বলেন: “বয়ান ও প্রতিটি কথায় সর্ব প্রথম আল্লাহ্ তাআলা ও প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর অনুমতি দরকার। যে প্রয়োজনীয় জ্ঞান রাখে না, তার জন্য ওয়াজ করা হারাম এবং তার ওয়াজ শুনাও নাজায়েয। আর যদি কোন مَعَاذَ الله عَزَّوَجَل (আল্লাহর পানাহ! ) বদ মাযহাব হয়, তাহলে সে শয়তানের প্রতিনিধি, তার কথা শুনাও কঠোর হারাম। (তাকে মসজিদে বয়ান করা থেকে বাধা প্রদান করতে হবে) আর যদি কারো (আকিদা তো খারাপ নয় কিন্তু তার) বয়ান দ্বারা ফিতনা সৃষ্টি হয়, তখন তাকেও বাধা প্রদান করা ইমাম ও মসজিদের সদস্যদের দায়িত্ব এবং যদি আলিম পরিপূর্ণ সুন্নী আকিদা সম্পন্ন বয়ান করেন তবে তাকে বাধা প্রদান করার অধিকার কারো নেই। যেমনিভাবে আল্লাহ্ তাআলা ১ম পারা সূরা বাকারার ১১৪ আয়াতে ইরশাদ করেন: 
 وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللّٰہُ أَن يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُہٗ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং তার চেয়ে অধিক যালিম কে, যে আল্লাহর মসজিদগুলোতে বাধা দেয় সেগুলোতে আল্লাহর নামের চর্চা হওয়া থেকে; (পারা: ১, সূরা: বাকারা, আয়াত: ১১৪) 

আলিমের সংজ্ঞা 
প্রশ্ন:- তাহলে কি মুবাল্লিগ হওয়ার জন্য দরসে নিজামি অর্থাৎ আলিম কোর্স করা শর্ত? 
উত্তর:- আলিম হওয়ার জন্য না দরসে নিজামী শর্ত এবং না শুধুমাত্র সার্টিফিকেট যথেষ্ট, বরং জ্ঞান থাকাই শর্ত। আমার আক্বা আ'লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “আলিমের সংজ্ঞা হলো; আকিদার ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে অবগত হওয়া এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকা আর অন্য কারো সাহায্য ছাড়া কিতাব থেকে নিজের প্রয়োজনীয় মাসয়ালা বের করতে পারা। ইলম কিতাব পাঠ করে ও উলামাদের কাছ থেকে শুনে শুনেও অর্জন করা যায়।” (তালকিছ আয আহকামে শরীয়াত, ২য় খন্ড, ২৩১ পৃষ্ঠা) জানা গেলো, আলিম হওয়ার জন্য দরসে নিজামি শেষ করার সার্টিফিকেট হওয়া জরুরী নয়। আরবী ও ফারসী ইত্যাদি জানাও শর্ত নয়, বরং জ্ঞান থাকা জরুরী। আমার আক্বা আ'লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “সার্টিফিকেট কোন (আবশ্যক) জিনিস নয়, অনেক সার্টিফিকেট প্রাপ্ত জ্ঞান শুন্য (অর্থাৎ দ্বীনের জ্ঞান শুন্য) হয় এবং যারা সার্টিফিকেট গ্রহণ করেনি, তাদের ছাত্র হওয়ার যোগ্যতাও সেই সমস্ত সার্টিফিকেট প্রাপ্তদের মধ্যে থাকে না। ইলম (জ্ঞান) থাকা আবশ্যক।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৩তম খন্ড, ৬৮৩ পৃষ্ঠা) اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ ফতোওয়ায়ে রযবীয়া শরীফ, বাহারে শরীয়াত, কানুনে শরীয়াত, নিসাবে শরীয়াত, মিরাআতুল মানাজিহ, ইলমুল কোরআন, তাফসীরে নঈমী, ইহইয়াউল উলুম এবং এরকম আরো কিতাব রয়েছে, যা পাঠ করে, বুঝে ও উলামায়ে কিরামদের নিকট জিজ্ঞাসাবাদ করেও প্রয়োজনীয় আকিদার মাসয়ালা সম্পর্কে অবগত হয়ে “আলিম” হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করা যেতে পারে। আর যদি তার সাথে “দরসে নিজামি” করার সৌভাগ্য অর্জিত হয়ে যায়, তা হলো তো সোনায় সোহাগা। 

যারা আলিম নয় তাদের বয়ানের পদ্ধতি 
প্রশ্ন:- যে আলিম নয় তার বয়ান করারও কি কোন পদ্ধতি রয়েছে? 
উত্তর:- যে আলিম নয়, তার বয়ানের সহজ পদ্ধতি হলো; উলামায়ে আহলে সুন্নাতের কিতাব থেকে প্রয়োজনবশতঃ ফটোকপি করিয়ে তা নিজের ডায়রীতে সংযুক্ত করে এবং তা থেকে দেখে দেখে পড়ে শুনানো। মুখস্থ যেন কিছু না বলে, এছাড়া নিজের ইচ্ছানুযায়ী কখনোও কোন আয়াতে করীমার তাফসীর অথবা হাদীসে পাকের ব্যাখ্যা ইত্যাদী না করে। কেননা, নিজের ইচ্ছানুযায়ী তাফসীর করা( “তাফসীর বির রাঈ”কারী বলা হয়। যে কোরআনের তাফসীর নিজের জ্ঞান ও ধারনা (আন্দাজে) করে। যার নকলী অর্থাৎ শরয়ী দলীল ও সনদ না হয়। ) হারাম এবং নিজের জ্ঞান অনুযায়ী আয়াতে মোবারাকা থেকে যুক্তি প্রদর্শন করা অর্থাৎ দলিল বানানো এবং হাদীসে মোবারাকার ব্যাখা করা যদিও বা তা সঠিক হয় তারপরও শরীয়াতে তার অনুমতি নেই। ফরমানে মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم “যে না জেনে কোরআনের তফসির করলো, সে আপন ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নিলো।” (তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ৪৩৯ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২৯৫৯) যে আলিম নয় তার ব্যাপারে পথ প্রদর্শন করতে গিয়ে আমার আক্বা আ'লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দীদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “আলিম নয় এমন ব্যক্তি যদি নিজের পক্ষ থেকে কিছু না বলে বরং আলিমের লিখিত লিখনী পড়ে শুনায় তবে এতে কোন সমস্যা নেই।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া ২৩তম খন্ড, ৪০৯ পৃষ্ঠা)

মুবাল্লিগদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ 
প্রশ্ন:- দা'ওয়াতে ইসলামীর কিছু মুবাল্লিগ ও মুবাল্লিগা মুখস্থ বয়ানও করে থাকে, তাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে কী উপদেশ?
উত্তর:- যদি তারা আলিম অথবা আলিমা হয়, তাহলে তো কোন সমস্যা নেই। এছাড়া যারা আলিম নয় অথবা আলিমা নয়, সেই সমস্ত মুবাল্লিগ ও মুবাল্লিগাদের জন্য উপায় উপস্থাপন করা হয়েছে যে, তারা শুধুমাত্র উলামাদের লিখা সমূহ পড়েই বয়ান করবে, যদি কোন অজ্ঞকে সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় মুখস্থ বয়ান করতে দেখা যায় তবে দাওয়াতে ইসলামীর যিম্মাদারগণ তাকে বাঁধা প্রদান করবে। যে সমস্ত মুবাল্লিগ/ মুবাল্লিগা আলিম বা আলিমা নন এবং যে সমস্ত বক্তা আলিম নন তাদের উচিত, তারা যেন মুখস্থ ধর্মীয় বয়ান অথবা বক্তৃতা না দেয়। আমার আক্বা আ'লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দীদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “যিনি আলিম নন এমন ব্যক্তি যদি নিজের পক্ষ থেকে না বলে বরং আলিমের লিখিত কিতাব পড়ে শুনায় তবে এতে কোন সমস্যা নেই।” তিনি আরো বলেন: “মূর্খ ব্যক্তি যদি নিজের পক্ষ থেকে বয়ান করতে চায়, তবে তার জন্য বয়ান করা হারাম এবং তার বয়ান শ্রবণ করাও হারাম। আর মুসলমানের দায়িত্ব বরং মুসলমানদের উপর আবশ্যক হলো; তাকে যেন মিম্বর থেকে নামিয়ে দেয়। কেননা, এর দ্বারা মন্দ কাজে বাঁধা প্রদান করা হবে, আর মন্দ কাজে বাঁধা প্রদান করা ওয়াজিব।” وَاللهُ تَعَالى اَعْلَمُ

ইসলামী বোনেরা নাত শরীফ পড়বে কি পড়বে না?
প্রশ্ন:- ইসলামী বোনেরা ইসলামী বোনদের মাঝে নাত শরীফ পড়তে পারবে কি না?
উত্তর:- ইসলামী বোনেরা ইসলামী বোনদের মাঝে মাইক ব্যতিত এভাবে নাত শরীফ পড়বে যে, তার আওয়াজ যেন পর-পুরুষ পর্যন্ত না পৌছে। মাইক এজন্য নিষেধ করা হয়েছে যে, তাতে পড়া ও বয়ান করার দ্বারা পর-পুরুষ থেকে আওয়াজকে বাঁচানো অসম্ভবের কাছাকাছি। যদি কেউ মনকে হাজারো শান্তনা দেয় যে, আওয়াজ পেন্ডেল অথবা বাড়ির আঙ্গিনার বাইরে যাচ্ছে না, কিন্তু অভিজ্ঞতা হলো; লাউড স্পিকারের মাধ্যমে মহিলাদের আওয়াজ সাধারণত পর-পুরুষ পর্যন্ত পৌছে যায়। বরং বড় মাহফিলগুলোতে মাইকের পরিচালনাও তো অধিকাংশ পুরুষরাই করে থাকে। সগে মদীনাকে عُفِىَ عَنْهُ (আমীর আহলে সুন্নাত) একদা কেউ বললো: “অমুক স্থানের মাহফিলে একজন মহিলা মাইকে বয়ান করছিল, কিছু পুরুষের কানে যখন সেই মহিলার কণ্ঠ আর্কষন করলো, তখন তাদের মধ্যে থেকে এক নির্লজ্জ বলে উঠলো: আহ! কত সুন্দর কন্ঠ! যখন কণ্ঠ এতো সুন্দর, তাহলে নিজে (মেয়েটি) কত সুন্দরী হবে।” وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّابِالله

ইসলামী বোনেরা মাইক ব্যবহার করবেন না
মনে রাখবেন! দা'ওয়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অনুষ্ঠিত সুন্নাতে ভরা ইজতিমা সমূহে এবং ইজতিমায়ে যিকির ও নাতে ইসলামী বোনদের জন্য লাউড স্পিকার ব্যবহার করার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সুতরাং ইসলামী বোনেরা মনমানসিকতা তৈরী করুন যে, যাই হোক না কখনো লাউড স্পিকারে বয়ান করবো না এবং তাতে নাত শরীফও পড়বো না। মনে রাখবেন! পর-পুরুষ পর্যন্ত আওয়াজ পৌঁছা সত্বেও নির্ভিক ভাবে বয়ান কারীনী ও নাত পাঠকারীনী গুনাহগার এবং সাওয়াবের পরিবর্তে জাহান্নামের আগুনের হকদার হবে। আমার আক্বা আ'লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর কাছে আরয করা হলো: “কতিপয় মহিলা একত্রিত হয়ে ঘরের মধ্যে মিলাদ শরীফ পড়ে এবং তাদের আওয়াজ বাইরে শুনা যায়, অনূরূপভাবে মুহরম মাসে শাহাদাতের পুঁতি ইত্যাদি একত্রে কন্ঠ মিলিয়ে পড়ে, এরূপ করা জায়েয কি না?” তদুত্তরে আমার আক্বা আ'লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “নাজায়েয। কেননা, মহিলার কন্ঠও (গোপন করার বস্তু) এবং মহিলার সুন্দর কন্ঠ যদি অপরিচিত লোক শুনে তবে তা ফিতনার স্থান।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২২তম খন্ড, ২৪০ পৃষ্ঠা)

মহিলার গানের আওয়াজ
আমার আক্বা আ'লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ অপর একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেন: “মহিলা (নাত ইত্যাদি) সুন্দর কন্ঠে উচ্চ আওয়াজে এভাবে পড়া যে, পর-পুরুষের নিকট তার সুর মাধুর্যের (অর্থাৎ গান এবং কবিতার) আওয়াজ পৌছে, তবে তা হারাম।” “নাওয়াযিলে ফাকিহ আবু লাইছ সমরকন্দি” (رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ ) নামক কিতাবে বর্ণিত আছে: মহিলাদের মধুর কন্ঠে কিছু পড়া “আওরাত অর্থাৎ গোপনে রাখার পাত্র” “কাফি ইমাম আবুল বারকাত নসফি”তে রয়েছে: মহিলা উচ্চ আওয়াজে তালবিয়্যাহ (অর্থাৎ لَبَّيْكَ اَللّٰهُمَّ لَبَّيْك) পড়বে না, এজন্য যে, তার আওয়াজ ক্বাবিলে সিতর (অর্থাৎ গোপন রাখার যোগ্য জিনিস)। আল্লামা শামী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِবলেন: “মহিলাদের জন্য আওয়াজ উচ্চ করা, সেটাকে লম্বা করা ও দীর্ঘ করা, তাতে মন আকৃষ্টকারী ভাষা ব্যবহার করা ও তাতে ছন্দরীতি করা, কবিতার ন্যায় আওয়াজ বের করা, আমি এরূপ যাবতীয় কাজের অনুমতি দিই না। এজন্য যে, এই সমস্ত কাজগুলো দ্বারা পুরুষদের তার দিকে আকর্ষন করা পাওয়া যায় এবং সেই পুরুষদের মধ্যে উত্তেজনার মাত্রা বৃদ্ধি পায়, এই কারণেই মহিলাদের অনুমতি নেই যে, সে আযান দিবে।” وَاللهُ تَعَالى اَعْلَمُ (রুদ্দুল মুখতার, ২য় খন্ড, ৯৭ পৃষ্ঠা। ফতোওয়ায়ে রযবীয়া ২২তম খন্ড, ২৪২ পৃষ্ঠা)


আমার আওয়াজ কাঁপতো 
ইসলামী বোনেরা! প্রিয় মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর গোলামীই, তবলীগে কোরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপি অরাজনৈতিক সংগঠন দা'ওয়াতে ইসলামীর পরিচয় বহনকারী। এতে সম্পৃক্ত লোকদের উপরও আল্লাহ্ তাআলার এমন এমন পুরস্কারাদি রয়েছে যা শুনে অবিশ্বাস্য মনে হয়, যেমনিভাবে বাবুল মদীনা (করাচী) এর এক ইসলামী বোন কিছুটা এরকম বর্ণনা করেন যে, দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার পূর্বে আমি বিভিন্ন ধরনের গুনাহে লিপ্ত হয়ে নিজের অমূল্য জীবনের মূল্যবান মুহুর্তগুলো নষ্ট করে দিতাম, প্রায় ১২ বছর পূর্বে হঠাৎ আমার হার্ট এটাক হয় এবং আমি বেহুঁশ হয়ে যাই। জ্ঞান ফিরে আসার পর দেখা গেলো আমার আওয়াজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং আমি শুধু ইশারায় কথা বলতে পারতাম। ডাক্তারের চিকিৎসা দ্বারা কিছুটা সুস্থতা লাভ করেছিলাম, কিন্তু এতদসত্বেও কথা বলার সময় আওয়াজ কাপঁতো। ধোঁয়াময় জায়গাতে কাঁশি শুরু হয়ে যেতো, দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হতো এবং আওয়াজ বন্ধ হয়ে যেতো। এমতাবস্থায় প্রায় এক মাস অতিক্রম হয়ে গেলো। একদিন আমি আমার রোগের প্রতি নিরাশ হয়ে অনেক কাঁদলাম আর সেই অবস্থায় আমার চোখ দুটি বন্ধ হয়ে গেলো। اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ আমি স্বপ্নে একজন বুযুর্গের দীদার লাভ করলাম। তিনি কিছুটা এরূপ বললেন: “চিন্তা করোনা اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ অতি শীঘ্রই সুস্থ হয়ে যাবে এবং সুস্থ হওয়ার পর 'ফয়যানে মদীনা'য় অবশ্যই আসবে।” এই বরকতময় স্বপ্ন দেখার পর দিনে দিনে স্বাস্থ্যে উন্নতি হতে লাগলো। যখনই আমি বাইরে বের হওয়ার উপযুক্ত হলাম, তখনই একজন ইসলামী বোনের সাথে দা'ওয়াতে ইসলামীর আন্তজার্তিক মাদানী মারকায ফয়যানে মদীনায় অনুষ্ঠিত ইসলামী বোনদের সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় উপস্থিত হলাম, সেই ইজতিমা আমার জীবনকে পরিবর্তন করে দিলো। আমি মনে মনে একান্তভাবে নিয়্যত করে নিলাম যে, এখন থেকে আমার জীবন দা'ওয়াতে ইসলামীর জন্য ওয়াক্ফ করে দিলাম। আমি দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজকে নিজের জীবনের অংশ বানিয়ে নিলাম। اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ এটা মাদানী পরিবেশের বরকতে যে, এক সময় এমন ছিলো যখন কথা বলার সময় আমার আওয়াজ কাঁপতো এবং আজ আমি এলাকা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত ইসলামী বোনদের ইজতিমায়ে যিকির ও নাতে প্রিয় আক্বা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নাত পড়তে লাগলাম, এখন না আওয়াজ কাঁপে, না গলা বসে এবং না কাঁশি আসে। 

রহমত না কিস তারাহ হো গুনাহগার কি তরফ, 
রহমান খোদ হে মেরে তরফদার কি তরফ। 
দেখি জু বে কসি তু উনহে রহম আ গেয়া, 
ঘাবরাকে হো গেয়ে উহ গুনাহ্গার কি তরফ। 
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 


ইসলামী বোনেরা! আল্লাহ্ তাআলার রহমত বাহানা খুঁজে, অনেক সময় এভাবেও ব্যবস্থা হয়ে যায় অর্থাৎ “যে কাঁদে সে পায়” ইসলামী বোন যখন ব্যাথিত হৃদয়ে কান্না করলো (তখন আল্লাহর) রহমতে জোয়ার আসলো এবং কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলো! 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 

বারান্দা হতে একে অপরকে ডাকা কেমন? 
প্রশ্ন:- বারান্দা হতে ইসলামী বোনেরা প্রতিবেশির সাথে উচ্চ আওয়াজে কথাবার্তা বলা কেমন? এমনিভাবে ভবনের উপরে ও নিচে অবস্থান কারীনীদের একে অপরকে ডাকা, নিজেদের মধ্যে উচ্চস্বরে কথাবার্তা বলা কি ঠিক? 
উত্তর:- এটি খুবই অনুপযুক্ত কাজ। কেননা, এভাবে কথাবার্তা বলাতে পর-পুরুষ পর্যন্ত আওয়াজ পৌঁছার অনেক বেশি সম্ভাবনা থাকে। যদি আশেপাশের ইসলামী বোনদের সাথে কোন প্রয়োজনীয় কাজ থাকে, তবে তার জন্য একে অপরের সাথে টেলিফোন অথবা ইন্টারকমের মাধ্যমে কথা বলে নিবে। 

সন্তানকে ধমক দেয়ার আওয়াজ 
প্রশ্ন:- আচ্ছা এটা বলুন, সন্তানদেরকে ধমক দেয়ার সময় ইসলামী বোনের আওয়াজ উঁচু করা কেমন? 
উত্তর:- ইসলামী বোনের এভাবে ধমক দেয়ার আওয়াজ ঘরের বাহিরে যাওয়া খুবই অনুচিত ও উপহাসজনক। সন্তানদের প্রতি কথায় কথায় চেঁচামেচি করাও বোকামি। কেননা, এভাবে সন্তানরা আরও “তেন্দর” হয়ে যায়। সুতরাং বারবার ধমক দেয়ার পরিবর্তে অধিকাংশ সময় ভালবাসার মাধ্যমে কাজ চালানো উচিত। সবার সামনে সন্তারনদেরকে অপমানিত করার দ্বারা ধীরে ধীরে তার ছোট অন্তর বিদ্রোহী হয়ে যায়। সন্তানের উপস্থিতিতে কোন সম্মানিত ব্যক্তিকে তার ব্যাপারে এভাবে অভিযোগ করা, যেমন; একে বুঝান। সে অনেক বিরক্ত করে, অনেক দুষ্টামি করে, মা বাবার কথা শুনে না ইত্যাদি, এটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কেননা, এর দ্বারা সন্তানের সংশোধন তো দূরের কথা, হতে পারে তার বিপরীতে এই মানসিকতা সৃষ্টি হবে, আমার মা-বাবা আমাকে অমুকের সামনে অপমানিত করেছে! বর্তমানে সন্তান-সন্তুতির অবাধ্যতার অভিযোগ অনেক বেশি! তার কারণ শৈশবে পিতামাতা কথায় কথায় অনর্থক চিৎকার করা ও সন্তানকে বিভিন্ন সময়ে লজ্জিত ও অপমানিত করাও যদি গন্য করা হয় তবে ভুল হবে না। 

হে ফালাহ্ ও কামরানি নরমি ও আসানি মে, 
হার বানা কাম বিগড় জাতাহে নাদানি মে। 

মহিলারা নাতের ভিডিও ক্যাসেট দেখবে কিনা? 
প্রশ্ন:- ইসলামী বোনেরা কি নাতখাঁদের পরিবেশনকারীদের ভিডিও ক্যাসেট দেখতে পারবে? 
উত্তর:- আমার পরামর্শ হলো; কখনো না দেখা। কেননা, একে তো সুন্দর কন্ঠের অধিকারী, দ্বিতীয়ত: যুবক নাত পরিবেশনকারী (ষ্টুডিওতে প্রস্তুতকৃত উত্তম পোশাক, মেকআপ ও লাইটিং এর মাধ্যমে চেহারায় “নকল নূর” প্রবাহিত করার অপচেষ্টার) ছবি এবং তৃতীয়ত: তার হাত ইত্যাদি নাড়ানোর ভঙ্গির কারণে অনেক বেশি সম্ভাবনা থাকে যে, মহিলাদের অন্তর ঝুকে পড়ার এবং সাওয়াবের পরিবর্তে শাস্তির অধিকারী হওয়ার। 

মহিলারা নাতের অডিও ক্যাসেট শুনবে কিনা? 
প্রশ্ন:- তাহলে কি ইসলামী বোনেরা পর-পুরুষ নাত পরিবেশনকারীর কণ্ঠে নাত শরীফও শুনতে পারবে না? 
উত্তর:- নিশ্চয় নাত শরীফ শুনা ও শুনানো সাওয়াবের কাজ, তবে পরপুরুষ নাত পরিবেশনকারীর কন্ঠে মহিলারা নাত শরীফ শুনবেন না। কেননা, তার সুকণ্ঠের মাধ্যমে সে, ফিতনায় পড়তে পারে। “সহীহ বুখারী শরীফে” বর্ণিত আছে; “রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসূলে আকরাম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর এক হুদি পরিবেশনকারী (অর্থাৎ উটকে দ্রুত গতিতে চালানোর জন্য মন আকৃষ্টকারী কবিতা পাঠকারী) ছিলো। যার নাম ছিলো আনজাশাহ্ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ । যিনি অপরূপ সুন্দর কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন। (একটি সফর চলাকালীন সময়ে যেখানে মহিলারা সঙ্গে ছিলো এবং হযরত সায়্যিদুনা আনজাশাহ্ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কবিতার পংক্তি পড়েছিলেন) এতে প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তাকে ইরশাদ করলেন: “হে আনজাশাহ্! আস্তে আস্তে পড়ো, নাজুক কাঁচকে ভেঙ্গে দিও না।”(বুখারী, ৮ম খন্ড, ১৫৮ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৬২১১) প্রখ্যাত মুফাস্সীর হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ উপরোক্ত হাদীসে পাকের ব্যাখ্যায় বলেন: “অর্থাৎ সফরে আমার সাথে মহিলারাও রয়েছে, যাদের অন্তর নাজুক কাঁচের মতো দুর্বল, সুকণ্ঠ তাদের মাঝে খুব তাড়াতাড়ি প্রভাব ফেলে এবং তারা লোকদের গানে  গুনাহে লিপ্ত হতে পারে। তাই নিজের গান বন্ধ করো।” (মিরআত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৪৪৩ পৃষ্ঠা) 

ইসলামী বোনেরা নাত পরিবেশনকারীদের ক্যাসেট শুনবে না 
জানা গেলো, মহিলাদের অন্তর নাজুক কাঁচের মতো। তাদের সুকণ্ঠের অধিকারী পর-পুরুষের সুর সহকারে কবিতার পংক্তি শুনা উচিৎ নয়। সুরের মাঝে এক প্রকার যাদু থাকে এবং পুরুষ ও মহিলা একে অপরের সুর শুনে অতি শীঘ্রই ফিতনায় পড়ে যেতে পারে। এজন্যই সগে মদীনা عُفِىَ عَنْهُ (লিখক) পুরুষের কন্ঠে নাত শরীফ শুনা থেকে ইসলামী বোনদের পরামর্শ স্বরূপ নিষেধ করেছেন। এ জন্য ইসলামী বোনদের উচিত, তারা নাত পরিবেশনকারীর নাত শরীফ বরং তাদের অডিও ক্যাসেটও যেন না শুনে। এছাড়া পুরুষ নাত পরিবেশনকারীদের নাত পড়ার পদ্ধতিকেও যেন অনুসরন না করে। কেননা, এভাবে অন্তরে সেই নাত পরিবেশনকারীর প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হতে পারে। শয়তানের জন্য ফিতনায় ফেলতে সময় লাগে না। পুরুষ ও মহিলাদের প্রত্যেক সেই কাজ থেকে বেঁচে থাকা উচিত, যা দ্বারা একে অপরের আকর্ষনে পড়ে যায় এবং শয়তান পথভ্রষ্ট করে। 

ইসলামী বোনেরা কি মরহুম নাত পরিবেশনকারীদের নাতও শুনতে পারবে না? 
প্রশ্ন:- ইসলামী বোনেরা মৃত নাত পরিবেশনকারীদের ক্যাসেট শুনতে পারবে কী না? 
উত্তর:- মৃত নাত পরিবেশনকারীদের ক্যাসেট সমূহ শুনা অথবা তাদের পদ্ধতিকে অনুসরন করাতেও কোন সমস্যা নেই। কেননা, প্রকাশ্যভাবে এখন কোন ফিতনার আশংকা নেই। যেমনিভাবে- দা'ওয়াতে ইসলামীর মারকাযী মজলিশে শূরার মরহুম নিগরান সুকণ্ঠের অধিকারী নাত পরিবেশনকারী, বুলবুলে রওজায়ে রাসূল হাজী মুশতাক আত্তারী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর নাতের ক্যাসেট সমূহ শুনা এবং তার পদ্ধতিকে অনুসরন করাতে কোন সমস্যা নেই। তবে হ্যাঁ! মরহুম নাত পরিবেশেনকারীর কন্ঠ শুনাতেও যদি কোন ইসলামী বোনের অন্তরে শয়তান মন্দ কুমন্ত্রণা দেয়, তবে তাও শুনবে না। 

মাদানী চ্যানেল আমাকে মাদানী বোরকা পরিধান করিয়ে দিলো! 
ইসলামী বোনেরা! দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী চ্যানেলেরও কী অপরূপ শান। এর মাধ্যমেও অসংখ্য মুসলমানের সংশোধন হচ্ছে। বাবুল মদীনার (করাচীর) এক ইসলামী বোনের কিছুটা এরকম বর্ণনা: আগে আমি পর্দা করতাম না, ভাগ্যক্রমে দা'ওয়াতে ইসলামী আমাদেরকে মাদানী চ্যানেলের মতো সুমহান উপহার দান করলো। যা দেখার বরকতে আমি ও আমার সন্তানের পিতা নিয়মিত নামাযী হয়ে গেলাম। একদিন মাদানী চ্যানেলে “পর্দার গুরুত্ব” এই বিষয়ে সুন্নাতে ভরা বয়ান চলছিলো, আমার সন্তানের পিতা যখন সেই বয়ান শুনলো তখন তিনি এতো প্রভাবিত হলো যে, আমাকে মাদানী বোরকা পরিধানের উৎসাহ প্রদান করলো এবং অপ্রয়োজনে বাজারে যেতে নিষেধ করলো। اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী চ্যানেলের বরকতে আমার বেপর্দা হওয়া থেকে তাওবা নসীব হলো। এখন আমি কোন পর-পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণকারী مَعَاذَ الله عَزَّوَجَل (আল্লাহর পানাহ! ) খালি মাথাওয়ালা প্রচলিত বোরকা নয়, বরং শরয়ী পর্দানুযায়ী শুধুমাত্র মাদানী বোরকা পরিধান করি। 

মাদানী চ্যানেল সুন্নাতোঁ কি লায়ে গা ঘর ঘর বাহার, 
মাদানী চ্যানেল দেখনে ওয়ালে বণেঁ পরহেযগার। 
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 

ইসলামী বোনদের মাদানী চ্যানেল দেখার শরয়ী মাসয়ালা 
ইসলামী বোনেরা! মাদানী চ্যানেলের বাহারের কথা কি বলব! اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ মাদানী চ্যানেল দেখার বরকতে অনেক কাফিরের ঈমানের দৌলত নসীব হয়েছে। এছাড়াও না জানি কত বেনামাযি নামাযী হয়েছে, অসংখ্য লোক গুনাহ থেকে তাওবা করে সুন্নাতে ভরা জীবন শুরু করেছে। اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ মাদানী চ্যানেল ১০০% ইসলামী চ্যানেল, এতে না আছে কোন গান এবং না আছে কোন মহিলা। তবে কি আছে মাদানী চ্যানেলে? এতে আছে ফয়যানে কোরআন, ফয়যানে হাদীস, ফয়যানে আম্বিয়া, ফয়যানে সাহাবা এবং ফয়যানে আওলিয়া। এতে তিলাওয়াত, নাত, মানকাবাত রয়েছে, দোয়া ও মুনাজাতে বিনয় ও কান্না জড়িত অন্তর কাঁপানো এবং ইশকে রাসূলে কান্না করা, কান্না করানোর ও ছটফট করা হৃদয়বিদারক দৃশ্য রয়েছে। দারুল ইফতা আহলে সুন্নাত, শারীরিক রূহানী চিকিৎসা এবং সুন্নাতে ভরা মাদানী ফুল, আখিরাত সজ্জিত করার অনেক মাদানী বাহার রয়েছে। মোটকথা মাদানী চ্যানেল এমন একটি চ্যানেল, যার মাধ্যমে মানুষ ঘরে বসে প্রয়োজনীয় জ্ঞান শিখতে পারছে! তবে হ্যাঁ! ইসলামী বোনদের মাদানী চ্যানেল দেখার পূর্বে ১১২ বার ভেবে নেয়া উচিত। কেননা, মাদানী চ্যানেলে অধিকাংশ যুবকদের দৃশ্যাবলী হয়ে থাকে এবং মহিলারা তো নাজুক কাঁচের ন্যায় আর তাদের সামান্য পরিমাণ ধাক্কাই যথেষ্ট। তারা যেন مَعَاذَ الله عَزَّوَجَل (আল্লাহর পানাহ! ) কুদৃষ্টির গুনাহে পতিত হয়ে না যায়। সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত “বাহারে শরীয়াতে”র ১৬ তম অংশের ৮৬নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন: “মহিলাদের জন্য পর-পুরুষের দিকে দেখার সেই হুকুম, যা পুরুষ পুরুষের দিকে দেখার হুকুম আর এটা তখনই হবে যখন মহিলার দৃঢ় বিশ্বাস থাকে যে, তার দিকে দেখার দ্বারা যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হবে না। আর যদি এর আশংকা থাকে তবে কখনও দৃষ্টি দিবে না।” (আলমগিরী, ৫ম খন্ড, ৩২৭ পৃষ্ঠা) 

আক্বা কি হায়া সে জুকি রেহতি স্ত্রী নিগাহেঁ, 
আখোঁ পে মেরি বেহেন লাগা কুফ্লে মদীনা। 

মহিলারা ঝাড়-ফুঁককারী ব্যক্তির নিকট যাবে কিনা? 
প্রশ্ন:- ইসলামী বোনেরা ঝাড়-ফুঁককারীর নিকট তাবিয (সুতা পড়া) ইত্যাদির জন্য যাবে কিনা? 
উত্তর:- যদি ঘরে বসে চিকিৎসা করা সম্ভব না হয়, তবে কোন মাহরামের মাধ্যমে ব্যবস্থা করবে। যদি কোন মাহারিমও না থাকে তবে শরয়ী পর্দার সম্পূর্ণ শর্তাবলী পূরণ করে কোন ঝাড়ফুঁককারী (মহিলা) নিকট যাবে, যদি মহিলা ঝাড়-ফুঁককারীও পাওয়া না যায় অথবা তার দ্বারা সুস্থতা অর্জন না হয় তবে কোন বৃদ্ধ এবং নেক ঝাড়-ফুঁককারীর নিকট যাবে। যদি এটাও সম্ভব না হয় তবে যে কোন মুসলমান ঝাড়-ফুঁককারীর নিকট যাবে। তবে যখনই শরয়ী অনুমতিতে বাইরে বের হয় তবে বর্ণনাকৃত শরয়ী পর্দা ও তার বিধানবলীর দিকে লক্ষ্য রাখা আবশ্যক। ঝাড়ফুঁককারীর সাথে নম্র ভাষায় কথার্বাতা বলা, নিঃসংকোচ হওয়া বা একাকী কখনো হবে না। যে ঝাড়-ফুঁককারী মহিলাদের সাথে নিঃসংকোচ হয়, কথায় কথায় অট্টহাসি দেয়, অনেক হাসি-ঠাট্টা করে এবং নিজের সফলতা শুনিয়ে থাকে এমন ঝাড়-ফুঁককারীর  নিকট যাওয়া মারাত্মক বিপদজনক। আর ঝাড়-ফুঁককারীকে যদি মহিলার প্রতি বিশেষ আকর্ষন দিতে, ফোন ইত্যাদি দ্বারা নিজেই যোগাযোগ করতে এবং এরকম সংবাদ দিতে দেখা যায় যে, একা এসো! যেন ভাল করে চিকিৎসা করতে পারি, তবে এমন ঝাড়ফুঁককারীর ছায়া থেকেও দূরে থাকবে, তা না হলে সারা জীবন আফসোস করতে হতে পারে। 


মহিলাদের মেকআপ করা কেমন? 
প্রশ্ন:- মহিলাদের সাজসজ্জা করা, আঁটোসাঁটো অথবা পাতলা পোশাক পরিধান করা কেমন? 
উত্তর:- ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে শুধুমাত্র স্বামীর জন্য জায়েয পদ্ধতিতে মেকআপ করতে পারবে। শরীয়াতের অনুমতিক্রমে যেমন; মাহরামদের বাড়ীতে যাওয়ার সময়, ঘরের বাইরে বের হওয়ার জন্য পাউডার অথবা সুগন্ধি ইত্যাদি লাগানো এবং ফ্যাশনেবল পোশাক পরিধান করে مَعَاذَ الله عَزَّوَجَل (আল্লাহর পানাহ! ) পর-পুরুষের জন্য দৃষ্টিনন্দিত হওয়া যেমন আজকালকার প্রচলিত রীতি, এটা কঠোর নাজায়েয ও গুনাহ। পাতলা ওড়না যা দ্বারা চুলের রং প্রকাশ পায়, অথবা পাতলা কাপড়ের মৌজা যা দ্বারা পায়ের গোছা প্রকাশ পায় অথবা এমন আঁটোসাটোঁ পোশাক পরিধান করা যা দ্বারা শরীরের কোন অঙ্গ যেমন; বুকের উত্থান প্রকাশিত হয়, এমতাবস্থায় পর-পুরুষের সামনে চলাফেরা করা হারাম ও জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ। 

পোশাক পরিধান করা সত্ত্বেও উলঙ্গ 
হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত; রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم একটি হাদীসে পাকে এটাও ইরশাদ করেছেন: “দোযখবাসীদের মধ্যে দু'টি দল এমন হবে যাদেরকে আমি (আমার এই মোবারক যুগে) দেখিনি (অর্থাৎ আগামীতে জন্ম নিবে) তাদের মধ্যে একটি দল সেই মহিলাদের হবে, যারা পোশাক পরিধান করা সত্ত্বেও উলঙ্গ হবে। অন্যকে (নিজের কর্ম দ্বারা) পথভ্রষ্টকারীনী এবং নিজেও পথভ্রষ্টা হবে। তাদের মাথা বড় উটের এক দিকে নত হওয়া কুঁজের ন্যায় হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধিও পাবে না এবং এর সুগন্ধি অনেক দূর থেকেও পাওয়া যায়।” (সহীহ মুসলিম, ১১৭৭ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২১২৮ সংক্ষেপিত) 
প্রখ্যাত মুফাস্সীর হাকীমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বর্ণিত হাদীসে পাকের বাক্য “যারা পোশাক পরিধান করা সত্ত্বেও উলঙ্গ হবে” এর ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন: “অর্থাৎ দেহের কিছু অংশে পোশাক পরিধান করবে আর কিছু অংশ উলঙ্গ রাখবে অথবা এতো পাতলা পোশাক পরিধান করবে যা দ্বারা শরীর এমনিতেই দৃষ্টিগোচর হবে। এই দুটি নিন্দিত কাজ আজকাল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। হয়তো আল্লাহ্ তাআলার নেয়ামত দ্বারা পরিপূর্ণ হবে, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা থেকে উলঙ্গ অর্থাৎ শূন্য হবে, অথবা অলংকার দ্বারা ঢাকা থাকবে তবে তাকওয়ার ক্ষেত্রে উলঙ্গ (খালি) হবে।” এবং “কুজেঁর ন্যায় হবে” এর ব্যাখ্যায় বলেন: “এই বাক্য মোবারকের অনেক তাফসীর রয়েছে, তন্মধ্যে সর্বোত্তম ব্যাখা হলো; সেই মহিলা পথ চলার সময় লজ্জায় মাথা নত করবে না বরং নির্লজ্জ্বতার সাথে গর্দান উচুঁ করে মাথা উঠিয়ে চারিদিকে দেখবে, লোকদের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখে দেখে চলবে, যেমন: উটের পুরো দেহ থেকে কুজঁ উচুঁ হয়ে থাকে। তেমনিভাবে তাদের মাথাও উচুঁ করে রাখবে।”(মিরআত, ৫ম খন্ড, ২৫৫-২৫৬ পৃষ্ঠা) 

দেখানোর জন্য অলংকার পরিধান করা 
প্রশ্ন:- মহিলারা দেখানোর জন্য অলংকার পরিধান করা কেমন? 
উত্তর:- মহিলারা গর্ব ও অহংকার সহকারে দেখানোর জন্য অলংকার পরিধান করা শাস্তির যোগ্য। হুযুর আকরাম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “তোমাদের মধ্যে যে মহিলা স্বর্নের অলংকার পরিধান করে, যা প্রকাশ করবে (দেখাবে), তাকে সেই কারণে শাস্তি প্রদান করা হবে।” (সুনানে আবু দাউদ, ৪র্থ খন্ড, ১২৬ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৪২৩৭) 
প্রখ্যাত মুফাসসীর হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِএই হাদীসে পাকের বাক্য “দেখানোর জন্য” এর ব্যাখ্যায় বলেন: “অপরিচিত পুরুষদের সামনে এজন্য প্রকাশ করে যে, নিজের সৌন্দর্য্য ও অলংকার অন্যকে দেখাবে, অথবা সুনাম ও অহংকারের জন্য অন্যকে দেখায় বা গরীব মহিলাদের প্রতি গর্ব করে যে, দেখানোর মাধ্যমে তাদেরকে কষ্ট প্রদান করে। সর্বশেষ এই দুটি কারণই অধিক গ্রহণযোগ্য। কেননা, পর-পুরুষদেরকে রূপার অলংকার দেখানোও হারাম। মহিলারা স্বর্ণের অলংকার তাদের বান্ধবীদেরকে গর্ব করে দেখায়, তাদেরকে অপমানিত করার জন্য, এখানে এটাই উদ্দেশ্য।” এবং “শাস্তি প্রদান করা হবে” এই বাক্যটির ব্যাখ্যায় বলেন: “এই অহংকার দেখানোর কারণে শাস্তি প্রদান করা হবে। কিন্তু অলংকার পরিধান করার কারণে নয়।” (মিরআত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৩৮ পৃষ্ঠা) 

মহিলারা সুগন্ধি লাগাবে কিনা? 
প্রশ্ন:- ইসলামী বোনেরা কি সুগন্ধি লাগাতে পারবে? 
উত্তর:- লাগাতে পারবে। কিন্তু পর-পুরুষ পর্যন্ত সুগন্ধি যেন না পৌঁছে। হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত; রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “পুরুষের সুগন্ধি এরূপ, যাতে সুগন্ধি প্রকাশ পায় কিন্তু রং প্রকাশ পায় না এবং মহিলাদের সুগন্ধি হচ্ছে, যাতে রং প্রকাশ পায় কিন্তু সুগন্ধি প্রকাশ পায় না।” (শামাইলে মুহাম্মদীয়া, ১৩১ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২১০) প্রখ্যাত মুফাস্সীর হাকিমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এই হাদীসে পাকের বাক্য “মহিলাদের সুগন্ধি সেটা, যাতে রং প্রকাশ পায় কিন্তু সুগন্ধি প্রকাশ পায় না” এর ব্যাখ্যায় বলেন: “স্মরণ রাখবেন! মহিলারা যেন সুগন্ধিময় জিনিস ব্যবহার করে বাইরে বের না হয়। নিজের স্বামীর নিকট সুগন্ধি লাগাতে পারবে এতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।”(মিরআত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৬০ পৃষ্ঠা) 

মহিলারা সুগন্ধি লাগিয়ে বাইরে বের হবে না 
প্রশ্ন:- যদি কোন ইসলামী বোন সুগন্ধি লাগিয়ে ঘরের বাইরে বের হয়, তবে তার জন্য কি হুকুম? 
উত্তর:- ইসলামী বোন নিজ ঘরের চার দেয়ালের ভেতর যেখানে শুধুমাত্র স্বামী অথবা মাহরাম থাকে, সেখানে সব ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে। তবে হ্যাঁ! এই সাবধানতা অবলম্বন করা আবশ্যক যে, দেবর, ভাশুর ও অন্যান্য পর-পুরুষ পর্যন্ত যেন সুগন্ধ না পৌঁছে। বাইরে বের হওয়ার সময় যে মহিলা এমন সুগন্ধি ব্যবহার করে যা পর পুরুষকে আর্কষনের কারণ হয়, তবে তার ভয় করা উচিত, হযরত সায়্যিদুনা আবু মুসা আশআরী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত; “যখন কোন মহিলা সুগন্ধি লাগিয়ে লোকদের মাঝে বের হয় যেন, লোকেরা তার সুগন্ধি পায়, তবে সে (মহিলা) ব্যভিচারীনী।” (সুনানে নাসায়ী, ৮ম খন্ড, ১৫৩ পৃষ্ঠা)

সুগন্ধি ব্যবহারকারীনি মহিলার ঘটনা
আমীরুল মু'মিনীন হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযমرَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর পবিত্র যুগে একজন মহিলা পথ চলছিলো। যার সুগন্ধি তাঁর (হযরত ওমর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর) অনুভব হলো, তখন তিনি তাকে প্রহার করার জন্য চাবুক উঠালেন এবং বললেন: “তুমি কি এমন সুগন্ধি লাগিয়ে বের হও, যার ঘ্রাণ পুরুষদের অনুভব হয়।” (যদি প্রয়োজনবশত বের হতেও হয়) তবে সুগন্ধি লাগিয়ে বের হবে না। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, ৪র্থ খন্ড, ২৮৪ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৮১৩৭)

--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত ৩৪৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত “পর্দা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর“ নামক কিতাবের ১-১০ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই কিতাবটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন। অন্যকে উপহার দিন।

যারা মোবাইলে (পিডিএফ) কিতাবটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন ।
দাওয়াতে ইসলামীর সকল বাংলা ইসলামীক বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন

মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন