বিভাগ সমূহ

মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৭

পর্দার মাসআলা (অষ্টম পর্ব)

ইসলামী বোনেরা! আপনারা দেখলেন তো! সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় অংশগ্রহণ করার কেমন বরকত, এই কথাটি স্মরন রাখবেন! ইজতিমায় অংশগ্রহণ করার নিয়্যত যেন শুধুমাত্র দুনিয়াবী সমস্যা সমাধান হওয়ার কারণে না হয়। জ্ঞান অন্বেষন ও সাওয়াব অর্জনের নিয়্যতও অবশ্যই করে নেয়া উচিত। اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ ইসলামী বোনদের শরয়ী পর্দা সহকারে পাকিস্তান সহ বাংলাদেশের অসংখ্য শহর এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন স্থানে সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমা হয়ে থাকে। প্রত্যেক ইসলামী বোনের উচিত, দা'ওয়াতে ইসলামী ইজতিমায় শুধু নিজে অংশগ্রহণ করবেন না বরং অন্যান্য ইসলামী বোনদেরকেও মুহাব্বত সহকারে সাক্ষাত করে ইনফিরাদী কৌশিশ করে ইজতিমায় অংশগ্রহণের দাওয়াত দিতে থাকা। 

মাদানী ফুল: হযরত সায়্যিদুনা জাবির رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত; খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “প্রত্যেক নেকী সদকা স্বরূপ আর তোমাদের আপন ভাইয়ের সাথে উৎফুল্লতা সহকারে সাক্ষাত করাও নেকী, আর নিজের বালতি দ্বারা নিজের ভাইয়ের পাত্রে পানি ঢেলে দেয়াও নেকী।” (মুসনদে আহমদ বিন হাম্বল, ৫ম খন্ড, ১১১ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১৪৭১৫) 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 

পর্দা করতে সংকোচবোধ হলে... 
প্রশ্ন:- পরিবেশ খুবই আধুনিক এবং ফ্যাশন খুবই ছড়িয়ে পড়েছে, শরয়ী পর্দা করতে সংকোচবোধ হয়, এখন কি করা যায়? 
উত্তর:- শরয়ী পর্দা ত্যাগ করা যাবে না। কেননা, এটা উচ্চ পর্যায়ের নেকী। আর বেপর্দা হওয়া মারাত্মক গুনাহ। পর্দা করাতে যত বেশি কষ্ট অনুভব হবে, সাওয়াবও اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ তত বেশি অর্জিত হবে। কথিত আছে: اَفْضَلُ الْعِبَادَاتِ اَحْمَزُهَا অর্থাৎ “সর্বোত্তম ইবাদত সেটাই যাতে বেশি কষ্ট হয়।” (কাশফুল খিফা, ১ম খন্ড, ১৪১ পৃষ্ঠা) 

ইমাম শরফুদ্দিন নববী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “যদি ইবাদতে কষ্ট ও খরচ বেশি হয় তবে সাওয়াব ও ফযীলতও বেশি হয়ে যায়।” (শরহে সহীহ্ মুসলিম লিন নববী, ১ম খন্ড, ৩৯০ পৃষ্ঠা) হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আব্দুল আযিয رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন: “উত্তম ইবাদত সেটা, যার জন্য নফসকে অপারগ হতে হয়।” (ইত্তিহাফু সাদাত লিয যুবায়দী, ১১তম খন্ড, ১০ পৃষ্ঠা) হযরত সায়্যিদুনা ইব্রাহিম বিন আদহাম رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “যে আমল দুনিয়াতে যতটুকু কষ্টসাধ্য হবে, কিয়ামতের দিন তা (আমল) মিযানে (পরিমাপের পাল্লায়) ততটুকু ভারী হবে।” (তাযকিরাতুল আউলিয়া, ৯৫ পৃষ্ঠা সংকলিত) তবে হ্যাঁ! যদি কারো নিজের অন্তরই ভেজাল হয়, তখন আর কি বলব! প্রখ্যাত মুফাস্সীর হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ নূরুল ইরফানের ৩১৮ নং পৃষ্ঠায় বলেন: “যার জন্য গুনাহ করা সহজ ও নেক কাজ করা কষ্ট অনুভূত হয়, তবে মনে করো তার অন্তরে নিফাক রয়েছে।” আল্লাহ্ তাআলা রক্ষা করুন। 

اٰمِين بِجا  هِ  النَّبِىِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم 


বিবি ফাতেমার কাফনেরও পর্দা! 
প্রশ্ন:- বলা হয়ে থাকে; বিবি ফাতেমা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا এর এটাও পছন্দ ছিলোনা যে, পর-পুরুষের দৃষ্টি তার কাফনে পড়ুক । 
উত্তর:- অবশ্যই সুলতানে মদীনা, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর জাহেরী (প্রকাশ্য) ওফাতের পর খাতুনে জান্নাত, শাহাজাদীয়ে কওনাইন, হযরত সায়্যিদাতুনা ফাতেমাতুয যাহারা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا এর হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর বিরহ এমনভাবে পেয়ে বসেছিলো যে, তাঁর ঠোঁটে মুচকি হাসি পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো! তাঁর ওফাতের পূর্বে শুধুমাত্র একবারই মুচকি হাসতে দেখা গিয়েছিলো। এই ঘটনাটা কিছুটা এরূপ, হযরত সায়্যিদাতুনা খাতুনে জান্নাত رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا এর এই উদ্বেগ ছিলো যে, আমি তো সারা জীবন পর-পুরুষের দৃষ্টি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছি, এখন যদি মৃত্যুর পর আমার কাফন পরিহিত লাশে মানুষের দৃষ্টি পড়ে যায়! কোন এক সময় হযরত সায়্যিদাতুনা আসমা বিনতে উমাইস رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا বলেন: আমি হাবশায় দেখেছি যে, জানাযার সাথে গাছের ডাল বেঁধে দোলনার মতো বানিয়ে তার উপর পর্দা লাগিয়ে দেয়া হয়েছিলো। অতঃপর তিনি খেজুরের ডাল আনিয়ে, তা জুড়ে তার উপর কাপড় লাগিয়ে সায়্যিদা খাতুনে জান্নাত رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا কে দেখালেন। তিনি তা দেখে খুবই খুশি হলেন এবং ঠোঁটে মুচকি হাসি এসে গিয়েছিলো। ব্যাস! এই এক মুচকি হাসি ছিলো যা হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর জাহেরী ওফাতের পরদেখা গিয়েছিলো।” (জযবুল কুলুব (অনুদিত), ২৩১ পৃষ্ঠা) 

সায়্যিদা খাতুনে জান্নাত رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا এর পর্দারও কি অপরূপ শান, কেউ কতই না সুন্দর বলেছে: 

চু যাহরা বাশ আয মাখলুখ রোপুশ, 
কেহ দর আগোশ শাব্বিরে বেহ বেনি। 

অর্থাৎ হযরত ফাতেমা যাহরা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا এর মতো পরহেযগার ও পর্দানশীন হও, যেন কোলে হযরত সায়্যিদুনা শাব্বির নামক হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْه এর মতো সন্তান পাও। 

বিবি ফাতেমার পুলসিরাতের উপরও পর্দা 
প্রশ্ন:- হাশরবাসীরাও কি সায়্যিদা খাতুনে জান্নাত رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا কেপুলসিরাত অতিক্রম করাবস্থায় দেখবে না? 
উত্তর:- হযরত আল্লামা জালাল উদ্দীন সুয়ুতি শাফেয়ী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ আমীরুল মু'মিনীন হযরত মাওলায়ে কায়েনাত আলী মুরতাদ্বা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণনা করেন যে, খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যখন কিয়ামত কায়েম হবে, তখন একজন আহব্বানকারী আহ্বান করবে: “হে হাশরবাসীরা! আপন আপন মাথা নত করো, চক্ষুদ্বয় বন্ধ করো, হযরত ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم পুলসিরাত অতিক্রম করবেন।” (আল জামিউস সগীর, ৫৭ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৮২২) 

মিশুকতার বরকত 
আমাদের ইসলামী বোনদেরকেও খাতুনে জান্নাত, শাহজাদিয়ে কওনাঈন হযরত সায়্যিদা ফাতেমাতুয যাহরা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا এর পবিত্র জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। ইসলামী বোনেরা দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যান, নিজের এলাকায় অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় অংশগ্রহণ করতে থাকুন, মাদানী ইনআমাতের উপর আমল করে প্রতিদিন ফিকরে মদীনার মাধ্যমে মাদানী ইনআমাতের রিসালা পূরণ করে নিজ এলাকার যিম্মাদার ইসলামী বোনকে জমা করাতে থাকুন, তাহলে اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ সফলতা অর্জিত হবে। আপনাদের উৎসাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাদানী কাফেলার একটি বাহার উপস্থাপনা করছি, একজন ইসলামীবোনের বর্ণনার সারাংশ হলো; আমি নামাযের ব্যাপারে অলসতার শিকার ছিলাম এবং বিদেশী ফ্যাশনে মত্ত ছিলাম। সিনেমা-নাটক অনেক আগ্রহ সহকারে দেখতাম, একবার আমি দা'ওয়াতে ইসলামীর তিন দিনের আন্তর্জাতিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমার আখেরি নশিসতে (বিশেষ পর্ব) আমার এক বান্ধবীর সাথে অংশগ্রহণ করলাম, সেখানে দুজন ইসলামী বোন কোন পরিচয় ছাড়াই আমাদেরকে অনেক খাতিরযত্ন করলো, আমাদেরকে অনেক মুহাব্বত সহকারে হালকায় বসালো, সৌভাগ্যক্রমে তারা আমাদের এলাকা থেকেই এসেছিলো, তারা আমাদেরকে ইজতিমায় অংশগ্রহণ করার দাওয়াতও দিয়েছিলো কিন্তু আমরা এতটুকু গুরুত্ব দেইনি। এতদসত্ত্বেও তারা আমাদেরকে ঘরে দাওয়াত দেয়ার জন্য এসে গেলো। এবার আমার অন্তর একটু নরম হলো এবং ভদ্রতা সহকারে তার সম্মান রাখার জন্য রাজি হলাম, ভাবলাম এসেছে যখন একটি ইজতিমায় অংশগ্রহণ করেই নিই, পরে আর যাব না। কিন্তু দা'ওয়াতে ইসলামী ওয়ালীদের প্রবল আগ্রহ মারহাবা! তারা মন ভাঙ্গল না, আমার পরকালের সফলতার জন্য আমার পিছুও ছাড়ল না, স্নেহ ও ভালবাসা অব্যাহত রাখলো এবং মিশুকতার সহিত ইনফিরাদী কৌশিশ করতে রইলো, অবশেষে তাদের সুন্দর চরিত্র আমার পাথরের ন্যায় শক্ত মনকে মোমের মতো গলিয়ে দিলো এবং আমি ধীরে ধীরে মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেলাম। 

আলী কে ওয়াস্তে সুরয কো ফিরনে ওয়ালে, 
ইশারা কর দো কেহ মেরা ভি কাম হোজায়ে। 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 

মহিলাদের মাযারে হাজেরী দেয়া 
প্রশ্ন:- ইসলামী বোনেরা মাযারে ও কবরস্থানে যেতে পারবে কিনা? 
উত্তর:- কতিপয় উলামা মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারতকে জায়েয বলেছেন। দুররে মুখতারেও অনূরূপ ভাবে বর্ণিত আছে। কিন্তু প্রিয়জনদের কবরে যদি তারা যায়, তবে কান্নাকাটি করবে, এজন্য নিষেধ করা হয়েছে এবং নেক বান্দাদের رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِمْ কবরে বরকত অর্জন করার জন্য যাওয়া বৃদ্ধামহিলাদের জন্য সমস্যা নেই কিন্তু যুবতীদের জন্য নিষেধ। (রুদ্দুল মুখতার, ৩য় খন্ড, ১৭৮ পৃষ্ঠা) সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “আর নিরাপত্তামূলক পন্থা হলো; মহিলাদেরকে সাধারণভাবে নিষেধ করা। যেহেতু আপনজনদের কবর যিয়ারতে কান্নাকাটি করবে, তবে নেক বান্দাদের কবরে হয়তো সম্মানের সীমা অতিক্রম করবে অথবা বেয়াদবী করে বসবে। আর নারীদের মধ্যে এ দু'টি অভ্যাস অত্যধিক পাওয়া যায়।” (বাহারে শরীয়াত, ১ম অংশ, ৮৪৯ পৃষ্ঠা মাকতাবাতুল মদীনা) আমার আক্বা আ'লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ মহিলাদেরকে মাযারে যেতে বিভিন্নভাবে বারবার নিষেধ করেছেন। যেমনিভাবে- এক জায়গায় বলেন: “ইমাম কাযীকে رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ প্রশ্ন করা হলো যে, মহিলাদের কবরে যাওয়া জায়েয কিনা? তিনি বললেন: এমন জায়গায় যেন জায়েয নাজায়েযের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা না করে, এটা জিজ্ঞাসা করুন যে, সেখানে নারীদের উপর কত লানত বর্ষিত হয়? যখন (তারা) ঘর থেকে বের হয়ে কবরের দিকে যাওয়ার ইচ্ছা পোষন করে (তখন) আল্লাহ্ তাআলা ও তার ফিরিশতাদের অভিশাপ অবতীর্ন হয়, যখন ঘর থেকে বের হয়, তখন চারিদিক থেকে শয়তান তাকে ঘিরে নেয়, যখন কবরে উপস্থিত হয় তখন মৃতব্যক্তির রূহ তার উপর অভিশাপ দেয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত ঘরে ফিরে না আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্ তাআলার অভিশাপে থাকে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৯ম খন্ড, ৫৫৭ পৃষ্ঠা) 



মহিলারা জান্নাতুল বাক্বীতে উপস্থিত হবে কিনা? 
প্রশ্ন:- মদীনা শরীফে থাকাকালীন সময়ে ইসলামী বোন জান্নাতুল বাক্বী ও শুহাদায়ে উহুদ عَلَيْهِمُ الرِّضْوَان এর মাযারে হাজিরি দিতে পারবে কি না? 
উত্তর:- দিতে পারবে না। 

প্রশ্ন:- এই মাযার সমূহে কি বাহির থেকেও সালাম দিতে পারবে না? 
উত্তর:- ইসলামী বোনেরা যদি পায়ে হেটে বা যানবাহনে করে কোন কাজের জন্য বের হয় এবং মাযারে উপস্থিতির নিয়্যতই না থাকে, কিন্তু এখন হঠাৎ করে জাহান্নাতুল বাক্বী, জান্নাতু মা'আলা অথবা যে কোন মুসলমানদের কবরস্থান, বা কোন বুযুর্গের মাযার শরীফের কাছ দিয়ে অতিক্রম করা হয় এবং না থেমে দূর থেকেই সালাম দেয়, তবে কোন সমস্যা নেই। 

প্রিয় নবী ﷺ এর রওজায় নারীদের উপস্থিতি 
প্রশ্ন:- ইসলামী বোনেরা প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর রওজা শরীফে উপস্থিতির জন্য যেতে পারবে কি না? 
উত্তর:- প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর রওজা শরীফ ব্যতিত অন্য কোন মাযারে যাবার অনুমতি নেই। সেখানকার উপস্থিতি মহান সুন্নাত যা ওয়াজিবের নিকটবর্তী এবং কোরআনে পাকে এটাকে গুনাহ ক্ষমা করানোর উত্তম মাধ্যম বলে বর্ণনা করেছে। 

যেমনিভাবে পারা ৫, সূরা: নিসার ৬৪ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে: 

وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذ ظَّلَمُوا أَنفُسَهُمْ جَآءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللّٰہَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللّٰہَ تَوَّابًا رَّحِيمًا (৬৪) 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং যদি কখনো তারা নিজেদের আত্মার প্রতি যুলুম করে তখন, হে মাহবুব! (তারা) আপনার দরবারে হাযির হয় এবং অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, আর রাসূল তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন, তবে অবশ্যই আল্লাহ্কে অত্যন্ত তাওবা কবুলকারী, দয়ালু পাবে। (পারা: ৫, সূরা: নিসা, আয়াত: ৬৪) 

হাদীসে পাকে বর্ণিত আছে: “যে আমার কবরের যিয়ারত করবে তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে যাবে।” (দারে কুতনী, ২য় খন্ড, ৩৫১ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২৬৬৯) হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত; রাসূলূল্লাহ্ صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যে হজ্ব করলো অথচ আমার যিয়ারত করলো না, সে আমার উপর জুলুম করলো।” (আল কামিল ফি দোয়াফাউর রিজাল, ৮ম খন্ড, ২৪৮ পৃষ্ঠা) নিশ্চয় প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দরবারে উপস্থিত হওয়া ওয়াজিবের নিকটবর্তী, সেখানে তাওবা কবুল ও সুপারিশের মহান দৌলত অর্জিত হয়। এছাড়া সেখানে (যাওয়া) প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর উপর জুলুম করা থেকে বাঁচার একটি উপায়। এই উত্তম গুরুত্বপূর্ণ কাজটি এমন, যা সরওয়ারে মদীনা, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর সমস্ত গোলামদের ও সমস্ত দাসীদের উপর রওজা শরীফের মাটিকে চুম্বন করাকে আবশ্যক করে দিয়েছে, অন্য কবরগুলো ও মাযার সমূহের বিপরীতে। ঐ জায়গা সম্পর্কে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় নাই, কারণ এতে ফিতনার আশংকা রয়েছে। কেননা, যদি প্রিয়জনদের কবর হয়, তবে মহিলারা অধৈর্য হয়ে যাবে এবং যদি আওলিয়ায়ে কিরামের মাযার হয় তবে হয়তো বেয়াদবী করে বসবে অথবা মুর্খতার কারণে সম্মানে অতিরঞ্জিত করে বসবে, যেমনটি সচরাচর আমরা দেখে থাকি। একারণেই তাদের জন্য উত্তম পন্থা হলো; তারা যেন আওলিয়ায়ে কিরামের মাযার ও অন্যান্য কবরের যিয়ারত করা থেকে বিরত থাকে। 

আমার আক্বা আ'লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “নিকটাত্বীয়দের কবরে (যাওয়া) বিশেষ করে এই অবস্থায় যখন তার প্রিয়জনের মৃত্যুর বেশিদিন অতিক্রম না হয়, তাদের পুরোনো দুঃখকে তাজা করে দেয়। আর আওলিয়ায়ে কিরামদের মাযারে উপস্থিত হওয়া اِحْدَ الشَّنَا عَتَيْنِ (অর্থাৎ দুটি মন্দ কাজের মধ্যে থেকে একটি মন্দ কাজের) ১০০ ভাগ আশংকা থাকে। বেয়াদবী করা অথবা আদবের মধ্যে নাজায়িয ভাবে মাত্রাতিরিক্ত করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এ জন্য 'গুনিয়া' কিতাবে অপছন্দের বর্ণনা করেছেন। অতএব উপস্থিতি ও প্রিয় নবী, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর রওজা শরীফের মাটিকে চুম্বুন করা উত্তম মুস্তাহাব, বরং ওয়াজিবের নিকটবর্তী। এ কাজে বাধা প্রদান করা যাবে না, এবং তাদের সঠিক আদব শিক্ষা দিতে হবে।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৯ম খন্ড, ৫৩৮ পৃষ্ঠা) 

মহিলারা মদীনায় যিয়ারত করতে পারবে কিনা? 
প্রশ্ন:- মক্কা-মদীনা শরীফের উপস্থিতিকালীন সময়ে ইসলামী বোনেরা জন্মস্থান (বিলাদতগাহ্ শরীফ), হেরা গুহা, ছওর গুহা, জাবালে উহুদ শরীফ ইত্যাদি যিয়ারতের জন্য যেতে পারবে কিনা? 
উত্তর:- পুরুষের সাথে মেলামেশা থেকে বেঁচে, পুরোপুরি পর্দা সহকারে যেতে পারবে। উত্তম হলো; ঘরে থেকেই ইবাদত করা। কেননা, বিশেষ করে হজ্বের মৌসুমে পুরুষের সাথে মেলামেশা থেকে বাঁচা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যায়। যদিও যায় তবে গাড়ী থেকেই দূর থেকে যিয়ারত করে নিবে, এটাই উত্তম। 

মহিলারা মসজিদে নববী শরীফে ইতিকাফ করবে কিনা? 
প্রশ্ন:- হারামাঈন তাইয়েবাঈন এর সম্মানিত দুটি মসজিদে মহিলাদের জন্য নিদিষ্ট অংশে ইসলামী বোন শেষের দশদিন ইতিকাফ করতে পারবে কি না? 
উত্তর:- করতে পারবে না। 

প্রশ্ন:- তাহলে কি ভাড়াকৃত ঘরে ইসলামী বোন ইতিকাফ করে নিবে? 
উত্তর:- ভাড়াকৃত বাসায় নামাযের জন্য কোন অংশকে নিদিষ্ট করার নিয়্যত করে নিবে। অতএব এখন এইস্থান তার জন্য “মসজিদে বাইত” রূপান্তরিত হয়ে গেছে, সেখানে ইতিকাফ করতে পারবে। 

মহিলা সাহাবীয়াদের পর্দার অবস্থাদি 
প্রশ্ন:- মহিলা সাহাবীয়াদের رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُنَّ পর্দার অবস্থাদির উপর কয়েকটি হাদীসে মোবারক বর্ণনা করুন। 
উত্তর:- মহিলা সাহাবীয়াদের পর্দা সম্পর্কিত ৯টি বর্ণনা লক্ষ্য করুন। 

(১) ইহরাম অবস্থায়ও চেহারার পর্দা 
উম্মুল মু'মিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا বর্ণনা করেন: “আমরা রাসূলে করীম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর সাথে হজ্বের সফরে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম, যখন আমাদের নিকট দিয়ে কোন আরোহী অতিক্রম করতো, তখন আমরা আমাদের চাদরকে আপন মাথা থেকে ঝুলিয়ে চেহারার সামনে করে নিতাম এবং যখন লোকেরা চলে যেতো তখন আমরা চেহারা খুলে নিতাম।” (আবু দাউদ, ২য় খন্ড, ২৪১ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১৮৩৩) আপনারা দেখলেন তো! ইহরাম অবস্থায় যেখানে চেহারায় কাপড় স্পর্শ (Touch) করা নিষেধ, সেই অবস্থায়ও সাহাবীয়াগণ عَلَيْهِمُ الرِّضْوَان আপন চেহারাকে অপরিচিত পুরুষ থেকে গোপন রাখার ব্যবস্থা করতেন, স্মরণ রাখবেন! ইহরাম অবস্থায় চেহারায় কাপড় স্পর্শ করা হারাম, সুতরাং তাঁরা এই সর্তকতার সাথে চেহারা ঢাকতেন যেন কাপড় চেহারাতে না লাগে। এ জায়গায় একথাটাও স্বরণ রাখার প্রয়োজন যে, সাহাবীয়াগণ عَلَيْهِمُ الرِّضْوَان সাধারণ অবস্থায়ও আপন চেহারাকে গোপন রাখতেন এবং অনেক কঠোর পর্দা করতেন, এই জন্যই তো হাদীসে পাকে ইহরাম অবস্থায় চেহারাকে গোপন না করার আদেশ দেয়া হয়েছে। 

“বুখারী শরীফে” বর্ণিত আছে; তাজদারে মদীনা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّمইরশাদ করেছেন: وَلَا تَنْتَقِبِ الْمَرْأَةُ الْمُحْرِمَةُ وَلَاتَلْبَسِ الْقُفَّازَيْنِ অর্থাৎ ইহরাম অবস্থায় কোন মহিলা চেহারায় পর্দা করবে না এবং হাত মৌজাও পরিধান করবে না।” (বুখারী, ১ম খন্ড, ৬০৭ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১৮৩৮) 

(২) মহিলা আনসারীর কালো চাদর 
উম্মুল মু'মিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা উম্মে সালমা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا বর্ণনা করেন; “যখন কোরআনে মাজীদের এই আয়াতটি অবর্তীন হলো: يُدْنِيْنَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيْبِهِنَّ (কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: যেন তারা নিজেদের চাদরের একাংশ নিজের মুখের উপর ঝুলিয়ে রাখে;) তখন আনছারদের মহিলাগন নিজের ঘর থেকে বের হওয়ার সময় কালো চাদর দ্বারা নিজেকে গোপন করে নিতেন, তাদের দূর থেকে দেখে মনে হতো যে, সম্ভবত তাদের মাথার উপর কাঁক বসে আছে।” (সুনানে আবু দাউদ, ৪র্থ খন্ড, ৮৪ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৪১০১) 

(৩) লুঙ্গি ছিড়ে ওড়না বানিয়ে নিলেন 
উম্মুল মু'মিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا বর্ণনা করেন: যখন এই আয়াতে কারীমা অবতীর্ণ হলো: وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلٰى جُيُوْبِهِنَّ (কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং সে ওড়না নিজের কাঁধের উপর ঝুলিয়ে রাখবে;) তখন নারীরা আপন লুঙ্গির চাদরগুলোকে কিনারা থেকে টুকরো টুকরো করলেন এবং তা দ্বারা নিজেদের চেহারা গোপন করলেন। (বুখারী, ৩য় খন্ড, ২৯০ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৪৭৫৯) 

(৪) পর্দার সাবধানতা! سُبْحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَل 
আবুল কুয়াইছের স্ত্রী, উম্মুল মু'মিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا কে বাল্যকালে দুধপান করিয়েছিলেন, এ কারণে আবুল কুয়াইছ হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা ছিদ্দিকা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا এর দুধপিতা এবং আবুল কুয়াইছের ভাই আফলাহ হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا এর দুধ চাচা। যখন পর্দার ব্যাপারে আয়াত অবতীর্ণ হলো তখন আফলাহ হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا এর নিকট আসতে চাইলে তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا পর্দার সাবধানতা অবলম্বন করে নিষেধ করে দিলেন, সুতরাং “বুখারী শরীফে” বর্ণিত আছে: “হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا বলেন: প্রথমে আমি সরওয়ারে মদীনা মুনাওয়ারা, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নিকট জিজ্ঞাসা করে নিই যে, দুধের সম্পর্কের কারণে আফলাহর সাথে আমার পর্দা রয়েছে কিনা। কেননা, আমি এটা মনে করি যে, দুধ তো আমি আবুল কুয়াইছের স্ত্রী থেকে পান করেছি, আফলাহর সাথে কিসের সম্পর্ক? তার উত্তরে রাসূলে আকরাম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّمইরশাদ করলেন: হে আয়েশা! আফলাহকে অনুমতি দিয়ে দাও, সে তোমার দুধ চাচা।”(প্রাগুক্ত, ৩০৬ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৪৭৯৬) 

(৫) ওড়না যেন পাতলা না হয় 
হযরত সায়্যিদুনা দিহয়া বিন খলিফা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন: রাসূলে আকরাম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর রহমতময় খিদমতে একবার মিসরের সাদা রঙ্গের পাতলা কাপড় নিয়ে আসা হলে প্রিয় নবী, রাসূলে আরবী صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তা থেকে একটি কাপড় আমাকে দান করলেন আর ইরশাদ করলেন: এটাকে দু'টুকরো করে একটি দিয়ে নিজের জামা ও অপরটি তোমার স্ত্রীকে দিবে, যা দ্বারা সে তার ওড়না বানিয়ে নিবে। বর্ণনাকারী বলেন: যখন আমি যেতে লাগলাম তখন রহমতে আলম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমাকে এই কথার উপর গুরুত্ব আরোপ করে ইরশাদ করলেন: তোমার স্ত্রীকে বলবে যে, তার নিচে যেন অন্য একটি কাপড় লাগিয়ে নেয়, যেন ওড়নার নিচে কিছু দেখা না যায়। (সুনানে আবু দাউদ, ৪র্থ খন্ড, ৮৮ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৪১১৬) 

(৬) পাতলা ওড়না ছিড়ে ফেললেন 
একদা উম্মুল মু'মিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا এর সম্মানিত খেদমতে তার ভাই হযরত সায়্যিদুনা আব্দুর রহমান رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর কন্যা সায়্যিদাতুনা হাফসা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا উপস্থিত হলেন এবং তিনি পাতলা ওড়না পরিহিত অবস্থায় ছিলেন, হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا এই (পাতলা) ওড়নাকে ছিড়ে ফেললেন এবং তাকে মোটা ওড়না পরিয়ে দিলেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, ২য় খন্ড, ৪১০ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১৭৩৯) 

প্রসিদ্ধ মুফাস্সীর, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বর্ণিত হাদীসে পাকের টীকায় বলেন: “অর্থাৎ ওড়নাকে ছিড়ে দুটি রুমাল বানিয়ে দিলেন যেন ওড়নার উপযোগী না থাকে, রুমালের কাজে আসে। সুতরাং এতে এই আপত্তি নেই যে, তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا এই সম্পদকে কেন নষ্ট করলেন?” তিনি رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ আরো বলেন: “এটা হলো আমলী প্রচার এবং মেয়েদের সঠিক প্রশিক্ষন ও শিক্ষা। এই ওড়না দ্বারা মাথার চুল দেখা যাচ্ছিল, পর্দা অর্জিত হচ্ছিল না, এজন্য এই কাজটি করলেন।” (মিরআত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১২৪ পৃষ্ঠা)

প্রিয় নবী ﷺ এর যুগে পর্দা স্বাধীন মুসলমান নারীদের নিদর্শন ছিলো 
হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন: নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم খায়বর (একটি জায়গার নাম) ও মদীনা শরীফের মধ্যবর্তী স্থানে তিন দিন অবস্থান করলেন। সেই মুহুর্তে হযরত সাফিয়া رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا কে আপন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেন। অতঃপর সফর চলাকালীন সময়ে তিনি صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সাহাবায়ে কিরামদের عَلَيْهِمُ الرِّضْوَان ওলীমার দাওয়াত করলেন, তাতে রুটি ও মাংসের কোন ব্যবস্থা ছিলো না, অথচ তিনি দস্তরখানা বিছানোর নির্দেশ দিলেন এবং তাতে খেজুর, পনির ও ঘি রাখা হলো, এ সবকিছুই ওলীমা ছিলো, কিন্তু তখন সাহাবায়ে কিরামদের عَلَيْهِمُ الرِّضْوَان নিকট একথাটি স্পষ্ট ছিলো না যে, হযরত সাফিয়াকে হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কি নিজের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ব করলেন নাকি দাসী বানালেন (কেননা তিনি খায়বরের যুদ্ধোপরাধীর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত ছিলেন) তারা তাদের এই সমস্যাকে সমাধান করার জন্য সিদ্বান্ত নিলেন যে, যদি প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তাকে পর্দা করতে বলেন, তাহলে বুঝবো যে, তিনি তাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। আর যদি পর্দা না করান তবে বুঝবো যে, দাসী বানিয়েছেন। যখন কাফেলা রওয়ানা হলো তখন হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم নিজের পিছনে হযরত সাফিয়া رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا এর জন্য স্থান নির্ধারন করলেন এবং তাঁরও লোকদের মধ্যখানে পর্দার অন্তরাল করে দিলেন। (বুখারী, ৩য় খন্ড, ৪৫০ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৫১৫৯) 

(৮) সর্বাবস্থায় পর্দা 
হযরত সায়্যিদাতুনা উম্মে খাল্লাদ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا এর সন্তান যুদ্ধে শহীদ হলো, তখন তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا এ ব্যাপারে জানার জন্য ঘোমটা দিয়ে পর্দা সহকারে হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দরবারে উপস্থিত হলেন, এতে কেউ আশ্চর্য হয়ে বললো: এইঅবস্থায়ও আপনি ঘোমটা দিয়ে রেখেছেন? তিনি বললেন: “নিশ্চয় আমি সন্তান হারিয়েছি কিন্তু লজ্জা তো হারায়নি।” (সুনানে আবু দাউদ, ৩য় খন্ড, ৯ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২৪৮৮) 

(৯) স্ত্রী ঘর থেকে কেন বের হলো! 
হযরত সায়্যিদুনা আবু সাঈদ খুদরী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন: একজন নওজোয়ান সাহাবী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর নতুন বিয়ে হয়েছিল। একদা তিনি যখন বাহির হতে ঘরে তাশরীফ আনলেন, তখন দেখলেন যে, তাঁর স্ত্রী ঘরের বাইরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। তিনি খুবই অসন্তুষ্ট অবস্থায় তার স্ত্রীর দিকে তেঁড়ে আসলেন, স্ত্রী ভয়ে পিছিয়ে গেলো এবং ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠে বললো: “হে আমার মাথার মুকুট! আমাকে প্রহার করবেন না। আমি নির্দোষ! ঘরে প্রবেশ করে দেখুন, আসলে আমাকে কোন জিনিসটি দরজায় আসতে বাধ্য করেছে! ” এরপর তিনি ঘরে প্রবেশ করলেন। গিয়ে দেখলেন: একটি ভয়ংকর বিষাক্ত সাপ কুন্ডলী পাকিয়ে বিছানায় বসে আছে। তিনি অস্থির হয়ে বর্শার আঘাত করে সেটাকে বর্শাতে বিদ্ধ করলেন। সাপটি আঘাত খেয়ে তাঁর দিকে তেড়ে আসলো আর তাঁকে দংশন করে বসলো। আহত সাপটি ছটফট করতে করতে মারা গেলো আর সেই আত্মমর্যাদা সম্পন্ন সাহাবীও رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ সাপের বিষের প্রভাবে শাহাদাতের অমিয় সূধা পান করলেন । (সহীহ্ মুসলিম, ২২৮ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২৩৬) 

নারীকে উত্যক্ত করায় যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো 
সেই পবিত্র যুগের মুসলমানদের ঈমানের গভীরতার অবস্থা এই ঘটনা থেকেও অনুমান করতে পারেন, যা আল্লামা ইবনে হিশাম رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ “আসসিরাতুন নববীয়া” নামক কিতাবে উল্লেখ করেন। তিনি লিখেন: “প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর যুগে একজন মুসলমান নারী ঘোমটা দিয়ে নিজের কিছু জিনিস পত্র বিক্রি করার জন্য “বনি কায়নুকা"র বাজারে গেলো। সে তার জিনিস পত্র বিক্রি করে এক ইহুদি স্বর্নকারের দোকানে এসে বসলো। ইহুদি তার কথার মাধ্যমে অনেক চেষ্টা করলো যে, সেই মহিলা যেন চেহারা থেকে ঘোমটা সরিয়ে নেয়। কিন্তু সেই মহিলা তাতে অস্বীকার করলো। অতঃপর ইহুদি সেই মহিলার সাথে খারাপ আচরণ করতে লাগলো, তা দেখে ইহুদিরা অট্টহাসি দিতে লাগলো। সেই মহিলা উচ্চ আওয়াজে ফরিয়াদ করলো। তখন একজন মুসলমান সেই ইহুদির উপর ঝাপিয়ে পড়লো এবং তাকে মৃত্যুর ঘাট পার করিয়ে দিলো। বাজারের ইহুদিরা একত্রিত হয়ে গেলো এবং সেই মুলমানকে শহীদ করে দিলো এবং সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসলমান ও ইহুদিদের মধ্যে একটি বিরাট যুদ্ধ সংঘঠিত হয়েছিলো। যাকে “বনু কায়নুকার যুদ্ধ” নামে স্মরণ করা হয়।” (আসসিরাতুন নববীয়া লিইবনি হাশশাম, ৩য় খন্ড, ৪৪ পৃষ্ঠা) 

ইহুদ ও নাসারা কো মাগলোব কর দে, 
হো খতম উন কা জোর ও সিতম ইয়া ইলাহী! 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 

মহিলা ও শপিং সেন্টার 
প্রশ্ন:- ইসলামী বোনেরা কেনাকাটা করার জন্য শপিং সেন্টারে যেতে পারবে কিনা? 
উত্তর:- আজকাল শপিং সেন্টারগুলোর অধিকাংশই নির্লজ্জতায় ভরা গুনাহের পরিবেশ হয়ে থাকে, আর মহিলারা হলো স্পর্শকাতর। তাদের জন্য সেখান থেকে দূর থাকাতেই মঙ্গল রয়েছে, আমার আক্বা আ'লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “মহিলারা হলো মোমের মতো বরং আলকাতরার পুটলী বা বারুদের শিশি, আগুনের সামান্য স্পর্শ পেলেই ভয়ঙ্কর হতে পারে। তারা জ্ঞানেও অসম্পূর্ণ এবং মূলে বাঁকা আর যৌন উত্তেজনায় পুরুষের তুলনায় একশো গুন বেশি হয়ে থাকে।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়াহ, ২২ তম খন্ড, ২১২ পৃষ্ঠা) 

মহিলাদেরকে ঘরের মধ্যে বন্দী করে রাখো! 
ইমাম মুহাম্মদ বিন আহমদ যাহাবী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ (ওফাত ৭৪৮ হিঃ) লিখেন: “কথিত আছে; নারী হলো, লুকানোর বস্তু সুতরাং তাকে ঘরে বন্দী করে রাখো। কেননা, নারী যদি কোথাও বের হয় তখন তাকে তার পরিবারের সদস্যরা জিজ্ঞাসা করে: কোথায় যাচ্ছো? সে উত্তর দেয়: আমি রোগীর শশ্রুষা করতে যাচ্ছি, তখন শয়তান সর্বদা তার সাথে লেগে থাকে, যতক্ষণ না সে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। আর মহিলাদের (রোগীর শুশ্রুষা ইত্যাদি কোন নেক কাজই) আল্লাহ্ তাআলার সেই সন্তুষ্টি অর্জন হতে পারে না, যা সে ঘরে বসে আল্লাহ্ তাআলার ইবাদত ও (জায়েয কার্যাদিতে) স্বামীর আনুগত্যের মাধ্যমে অর্জন করতে পারে।” (কিতাবুল কাবাইর, ২০৩ পৃষ্ঠা) 

ঘরের পণ্য সামগ্রী যেন পুরুষেরাই আনে 
প্রশ্ন:- আজকাল সাধারণত অধিকাংশ স্বামী বা মাহরাম ঘরের পণ্যসামগ্রী আনতে অলসতা করে এজন্য অধিকাংশ নারীরাই মাংস, মাছ, সবজি, কাপড় ইত্যাদি জীবনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করতে যায়, এটা কি জায়েয? স্বামী ও মাহারিমও এর দ্বারা গুনাহগার হবে কি না? 
উত্তর:- যদি পুরুষ শুধুমাত্র অলসতার কারণে ঘরের পণ্যসামগ্রী না আনে, তবে এটা অনেক মারাত্মক অসবধানতা। কেননা, এখন তার স্ত্রী অথবা মাহারামা অর্থাৎ মা, বোন অথবা কন্যা বাহিরে পর-পুরুষ থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ের জন্য ঘরের বাহিরে বের হবে, যদিওবা নারীদের জন্য বেচাকেনা করা নিষিদ্ধ নয়, তবে বর্তমানে নির্লজ্জতার যুগ চলছে এবং বর্তমানে বাজারের অবস্থা সম্পর্কে কেইবা অবগত নয়! বর্তমান যুগের বাজারে যদি পর্দানশীন নারীও যায় এবং কোন গুনাহ করা ব্যতিত ফিরে আসাটা খুবই কঠিন কাজ। আর যদি নারী বেপর্দা হয়ে অর্থাৎ মাথার চুল, কান, গলা ইত্যাদি সতরের কোন অংশ খুলে বাজারে যায় অথবা যুবতী নারী ফিতনা সৃষ্টিকারী তার বাহিরে বের হওয়াতে ফিতনা জন্ম দেবে এবং পুরুষ নিষেধ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নিষেধ না করে, তবে উভয় অবস্থায় এমন পুরুষ 'দাইয়্যুস' বলে গন্য হবে এবং সেই নারী 'ফাসিকা' (পাপিষ্টা) হিসিবে গন্য হবে। যদি হাজারো প্রচেষ্টা সত্ত্বেও পুরুষ না যায় এবং দৈনন্দিন পণ্যসামগ্রীর ব্যবস্থা করার অন্য কোন উপায় না থাকে উদাহরন স্বরূপ; কোন কুৎসিত বুড়ি অথবা ফোনের মাধ্যমেও এই কাজ না হয়, তাহলে এমতাবস্থায় মহিলা এই কাজের জন্য শরয়ী পর্দাসহকারে বের হবে। আমার আক্বা আ'লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দীদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ “ফতোওয়ায়ে রযবীয়া” এর ৬ষ্ঠ খন্ডের ৪৮৭ ও ৪৮৮ নং পৃষ্ঠায় বলেন: “যার স্ত্রী বেপর্দা হয়ে বাহিরে চলাফেরা করে যে, বাহু বা গলা অথবা পেট কিংবা মাথার চুল অথবা পায়ের গোড়ালী মোটকথা যেই অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো ঢেকে রাখা ফরয, তা খোলা থাকে অথবা এতো পাতলা কাপড় হয় যা দ্বারা শরীরের উজ্জ্বলতা প্রকাশ পায় এবং (পুরুষ) এই অবস্থাদির উপর অবগত থাকা সত্ত্বেও স্ত্রীকে (নারীকে) নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী বাঁধা না দেয় বা কোন ব্যবস্থা না করে, তাহলে সেও ফাসিক (পাপী) ও দাইয়্যুস বলে বিবেচিত হবে। রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (এক) মা বাবাকে কষ্ট প্রদানকারী, (দুই) দাইয়্যুস ও (তিন) পুরুষের আকৃতি ধারনকারী মহিলা।”(আল মুসতাদরিক, ১ম খন্ড, ২৫৩ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২৫২) দুররে মুখতারে বর্ণিত রয়েছে: “যে নিজের স্ত্রী অথবা নিজের কোন মাহরামকে পর্দার মধ্যে রাখে না, সে দাইয়্যুস।” (দুররে মুখতার, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১১৩ পৃষ্ঠা) আ'লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ আরো বলেন: “অনূরূপভাবে মহিলা যদি যুবতী ও ফিতনার পাত্রী হয় এবং তার বাইরে ঘুরাফেরা করার দ্বারা ফিতনা সৃষ্টি হয়। আর সে (স্বামী) অবগত হওয়ার পরেও বাঁধা প্রদান করে না, তাহলে তো প্রকাশ্য দাইয়্যুস, যদিওবা পুরো সতর ঢেকেই বাইরে বের হয়। এ সমস্ত লোকদের ইমাম বানানো গুনাহ ও তাদের পিছনে নামায আদায় করা মাকরূহে তাহরীমী, যা হারামের নিকটবর্তী , তাদের পিছনে নামায আদায় না করা উচিত। যদি আদায় করে নেয় তাহলে পুনরায় আদায় করা আবশ্যক। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৪৮৭, ৪৮৮ পৃষ্ঠা) 

মহিলাদের টেক্সিতে চলাফেরার ব্যাপারে প্রশ্নোত্তর 
প্রশ্ন:- ইসলামী বোনেরা না-মাহরাম ড্রাইভারের সাথে রিক্সা, কার, অথবা টেক্সিতে স্বামী ব্যতিত অথবা নির্ভরযোগ্য কোন মাহরাম ব্যতিত একা চলাফেরা করা কেমন? 
উত্তর:- এখানে দুটি কথা জানা খুবই জরুরী! প্রথমতঃ মহিলার জন্য পর-পুরুষের সাথে একাকী অবস্থান করা হারাম। 
খাতামুল মুরসালিন, রাহমাতুল্লিল আলামিন صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “সাবধান কোন পুরুষ যখন কোন পর-নারীর সাথে একাকী অবস্থান করে, তখন তৃতীয়জন শয়তান হয়ে থাকে।” (সুনানে তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ৬৭ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২১৭২) প্রসিদ্ধ মুফাস্সীর হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِউক্ত হাদীসে পাকের টীকায় “মিরআত” এর ৫ম খন্ডের ২১ নং পৃষ্ঠায় বলেন: “যখন কোন ব্যক্তি পর-নারীর সাথে একাকী অবস্থান করে, যদিওবা তারা পুতঃপবিত্র হয় ও কোন ভাল উদ্দেশ্যে একত্রিত হয় (কিন্তু) শয়তান তাদের উভয়কে অবশ্যই খারাপ কাজে উৎসাহিতকরবে এবং উভয়ের অন্তরে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি করবে। আশংকা রয়েছে যে, যিনা করিয়ে দেয়ার! এজন্য এমন একাকীত্বে সতর্ক থাকা উচিৎ, গুনাহের সম্ভাবনা থেকেও বেঁচে থাকা জরুরী। জ্বর কমানোর জন্য, সর্দি ও কাশিকেও বন্ধ করো।” (মিরআত) হযরত আল্লামা আব্দুর রউফ মানাবি رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ উক্ত হাদীসে পাকের টীকায় বলেন: “যখন মহিলা কোন পর-পুরুষের সাথে একাকি মিলিত হয়, তখন শয়তানের জন্য তা একটি সুবর্ণ সুযোগ। সে তাদের অন্তরে নোংরা কুমন্ত্রণা সৃষ্টি করে দেয়, তাদের উত্তেজনাকে প্রজ্জলিত করে তোলে, লজ্জা পরিত্যাগ করার ও গুনাহে লিপ্ত হওয়ার প্রতি উৎসাহিত করে।” (ফয়যুল কাদির শরহুল জামিউ সগির, ৩য় খন্ড, ১০২ পৃষ্ঠা, হাদীসের টীকা ২৭৯৫) জানা গেলো; পর-পুরুষ ও মহিলা কখনোও একাকী মিলিত হওয়া জায়েয নেই। এই অবস্থায় (শুধু) গুনাহের কুমন্ত্রণাই নয় অপবাদ লাগার বরং যা না হওয়ার, তাও সংগঠিত হওয়ার আশংকা থাকে। 

দ্বিতীয়ত: নিজেকে বিপদ ও ফিতনা থেকে বাচাঁনো ইসলামী বোনদের জন্য আবশ্যক। অতএব বিপদ ও ফিতনা সমূহের আশংকার কোন সীমা নেই। না মাহরাম তো দুরের কথা মাহরামের সাথেও বিপদের সম্ভাবনা থাকে। শুধু একাকীত্বেই নয় সমাগমের মাঝেও বিপদ সংগঠিত হয়ে যায়। ইসলামী বোনের জন্য পর-পুরুষ ড্রাইভারের সাথে টেক্সিতে একাকী বসাতে যদিওবা একাকী অবস্থান করার হুকুম কার্যকর হবে না, কিন্তু এই অবস্থাটিও একাকী অবস্থানের সাথে সাদৃশ্যতা অবশ্যই রাখে এবং টেক্সি ইত্যাদি আবদ্ধ গাড়িগুলোতে বিপদের আশংকা কিছুটা বেশি থাকে। ড্রাইভারদের মাধ্যমে টেক্সির যাত্রীদের অপহরন করার ঘটনাও হতে থাকে। যখন ড্রাইভারদের ব্যাপারে কোন জানাশুনা না থাকে যে, সে কে? কোথায় থাকে? এবং কেমন লোক? সাধারণতঃ বড় শহরগুলোতে ড্রাইভারদের সম্পর্কে জানাশুনা খুবই কম থাকে। প্রকৃতপক্ষে মহিলারা দুর্বলজাতি এবং সাধারণত পুরুষের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকে এবং আজকাল পরিস্থিতি এতো নাজুক হয়ে গেছে যে, অধিকাংশ লোক শুধুমাত্র এজন্যই গুনাহ করে না যে, তা তাদের ক্ষমতার মধ্যে নেই। নতুবা হলে যখনই সুযোগ হাতে আসে গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায়। এমন দুরাবস্থায় ইসলামী বোনদের করণীয় হলো; তারা যেন নিজেই সাবধানতা অবলম্বন করে আর সাবধানতা হলো যুবতী মহিলারা যেন কখনোও শহরের ভেতরেও রিক্সা, কার ও টেক্সিতে মাহরাম অথবা বিশ্বস্থ মহিলা ব্যতিত সফর না করে। এছাড়া ফিতনার আশংকা যত বৃদ্ধি পেতে থাকবে সাবধানতার প্রয়োজনীয়তাও তত বৃদ্ধি হতে থাকবে। 

প্রশ্ন:- যদি গাড়ি চালক কোন বিশ্বস্থ নিকটাত্মীয় হয়, তবে ইসলামী বোনেরা কী শহরের ভেতর টেক্সি অথবা কার যোগে তার সাথে প্রয়োজনবশতঃ কোথাও যেতে পারবে? 
উত্তর:- ইসলামী বোনের জন্য প্রয়োজনবশতঃ কোন বিশ্বস্থ না-মাহরাম নিকটাত্মীয়ের সাথে শহরের ভেতর টেক্সি অথবা কার যোগে একাকী সফর করা জায়িয। কিন্তু এমতাবস্থায় মহিলা যুবতী হলে, তবে তার অনেক সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। চেষ্টা করবে যে, না-মাহরাম নিকটাত্মীয়ের সাথেও যেন মাহরাম অথবা কোন বিশ্বস্থ মহিলা ব্যতিত না যায়। কিন্তু যদি নিকটাত্মীয় বিশ্বস্থ হয় এবং শহরের ভেতর প্রয়োজনবশতঃ যেতেও হয় তবে পুরিপূর্ণ পর্দা সহকারে যাবে এবং কখনোও অমনোযোগি হবে না। যদি কোন নিকটাত্মীয় এমন থাকে, যে লম্পট ধরনের, মেলামেশার অভ্যাস রাখে তাহলে তার সাথে কখনোও যাবে না। 

প্রশ্ন:- একাধিক পর্দানশীন ইসলামী বোন একত্রিত হয়ে পর-পুরুষ ড্রাইভারের সাথে টেক্সি ইত্যাদিতে চলাফেরা করতে পারবে কি না? 
উত্তর:- একাধিক ইসলামী বোন একত্রিত হয়ে এবং তাও শহরের ভেতরে সফর করতে বিপদের আশংকা নিশ্চয় কম থাকে। কিন্তু জনসমাগম ও নির্জন স্থান তাছাড়া এলাকার অবস্থার প্রেক্ষিতে বিপদের আশংকা কম বা বেশির পার্থক্য করা যায়। কিছু এলাকা এমন হয় যেখানে ইসলামী বোন তো দুরের কথা স্বয়ং ইসলামী ভাইও যাতায়াত করতে ভয় করে। এজন্যই ইসলামী বোনদেরকে একত্রিত হয়ে সফর করাতেও অনেক চিন্তা ভাবনা করে নেয়াউচিত। 

প্রশ্ন:- টেক্সিতে একজন ইসলামী বোনের সাথে তার স্বামী অথবা এক বা একাধিক মাহরাম হয় এবং অতিরিক্ত দু'একজন ইসলামী বোনও যদি সাথে যায় তাহলে? 
উত্তর:- সাথে যাওয়া ইসলামী বোন যদি পর্দার সকল বিধিবিধান সহকারে বের হয় এবং যেই ইসলামী বোনের সাথে যাবে, সে এবং তার স্বামী অথবা মাহরাম যদি বিশ্বস্থ হয়। তাদেরকে সেই ইসলামী বোন ও তার পরিবারের সদস্যরা ভাল ভাবে জানে এবং বিশ্বস্থ মনে করে। তবে শহরের ভেতর তাদের সাথে কার অথবা টেক্সি ইত্যাদিতে সফর করতে পারবে। কিন্তু বসার সময় এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখা আবশ্যক যে, ইসলামী বোন কোন পর-পুরুষের সাথে কখনোও বসবে না। এমতাবস্থায় হয়তো অপরিচিতইসলামী ভাইয়ের আসন আলাদা হবে অথবা মধ্যখানে অপরিচিত ইসলামী ভাইয়ের স্ত্রী কিংবা মাহারিমা বসবে। 
মহিলার ঘরের কর্মচারীর সাথে সংকোচহীনতার বিধান 
প্রশ্ন:- ঘরের কর্মচারী অথবা দারোয়ানের সাথে ইসলামী বোন হেসে হেসে নিঃসংকোচে কথা বলতে পারবে কি? ঘরের কর্মচারী অথবা ড্রাইভারের সাথে কী মহিলার পর্দা নেই? 
উত্তর:- ঘরের দারোয়ান, কর্মচারী, ড্রাইভার অথবা বাগানের মালি যদি পর-পুরুষ হয়, তবে তাদের সাথেও পর্দা রয়েছে। তাদের সাথে নিঃসংকোচে হেসে হেসে কথা বলা, তাদের থেকে শরয়ী পর্দা না করা হারাম ও জাহান্নামের নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ। যদি স্বামী জানে, কিন্তু তারপরও বাঁধা না দেয়, তাহলে সে “দাইয়্যুস” এবং জাহান্নামের আগুনের শাস্তির উপযোগী। যদি ঘরের কর্মচারী ১২ বছরের ছেলে হয় তখনও ইসলামী বোনদের তার সাথে পর্দা করা উচিত। কেননা, এখন সে বালিগের নিকটবর্তীর হুকুমে রয়েছে।

ইসলামী বোন ও আল্লাহর রাস্তায় সফর 
প্রশ্ন:- ইসলামী বোনেরা কি সুন্নাত প্রশিক্ষনের জন্য আল্লাহর রাস্তায় সফর করতে পারবে? 
উত্তর:- ইসলামী বোনেরা মাহরাম বা স্বামীর সাথে সফরে যেতে তো পারবে, কিন্তু আল্লাহর রাস্তায় সফরকালীন সময়ে অনেক বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা আবশ্যক। মহিলাকে সাথে নিয়ে চলাফেরা করার ব্যাপারে একটি প্রশ্নের উত্তরে আমার আক্বা আ'লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “একজন মহিলাকে সাথে নিয়ে চলাফেরা করা কথাটি খুবই জটিল। মহিলাটি কেমন, কেন সাথে নিয়ে ঘুরছে, সেবিকা হিসেবে, না স্ত্রী হিসেবে অথবা مَعَاذَ الله عَزَّوَجَل (আল্লাহর পানাহ! ) ভুল পদ্ধতিতে এবং সেবিকা হলে কি যুবতী নাকি কামভাবের সীমা অতিক্রমকারীনী বৃদ্ধা মহিলা এবং তার দ্বারা কি শুধু পাকানো ইত্যাদি সামান্যতম সেবা নেয় নাকি একাকী মিলিতও হয় এবং স্ত্রী হলে পর্দার মধ্যে রাখে নাকি বেপর্দা নিয়ে চলাফেরা করে? যদি কামভাবের বয়স অতিক্রান্ত হয়ে বৃদ্ধা হয় বা যুবতী হয় এবং তার দ্বারা সামান্য সেবা গ্রহণ করে এবং সাথে আরো লোকও আছে যে একাকী মিলিত হওয়ার সুযোগ নেই বা স্ত্রী এবং তাকে পর্দা সহকারে রাখে তবে সমস্যা নেই।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৩তম খন্ড, ৯৫ পৃষ্ঠা) 

সুতরাং যদি কোন ইসলামী বোন মাহরাম অথবা স্বামীর সাথে আল্লাহর রাস্তায় সফর করে, তবে কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরী, প্রথমটি হচ্ছে পর্দার ব্যাপারে, দ্বিতীয়টি হচ্ছে পর-পুরুষের সাথে একাকীত্বে অবস্থান না করার, তৃতীয়টি হচ্ছে সফররত অবস্থায় ইসলামী বোন যেন কোন পর-পুরুষের বাড়িতে অবস্থান না করে। অর্থাৎ সেখানে যেন কোন পর-পুরুষ না থাকে অথবা সেই বাড়ি যেন খালি হয় অথবা সেখানে কোন বিশস্ত নারী থাকে, তাহলে সেখানে থাকতে পারবে। 

মাদানী কাফেলার ৬টি বাহার 
ইসলামী বোনেরা! শরয়ী পর্দার উপর স্থায়ীত্ব পাওয়ার জন্য তাজেদারে মদীনা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর আশিকাদের ও মদীনার দিওয়ানীদের সাথে সুন্নাত প্রশিক্ষনের জন্য মাদানী কাফেলার সফর করার সৌভাগ্য অর্জন করুন। اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলার অসংখ্য বাহার রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ; ফ্যাশন পূঁজা, নির্লজ্জতা ও নগ্নতায় ভরা সমাজের উড়নচন্ডী অগণিত ইসলামী বোন গুনাহের গহ্বর থেকে বের হয়ে উম্মাহাতুল মু'মিনীন ও শাহাজাদীয়ে কাওনাঈন বিবি ফাতেমা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُنَّ দের ভক্ত হয়ে গেছে, যে বেনামাযী ছিলো, নামাযী হয়ে গেছে। গলায় চাদর ঝুলিয়ে শপিং সেন্টার ও র্পাকে ঘোরাঘুরিকারীনী, নাইট ক্লাব ও সিনেমা হলের সৌন্দর্য 

বর্ধনকারীনীদের কারবালার সম্মানিতা নারীদের رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُنَّ লজ্জাশীলতার সেই বরকত নসীব হয়েছে যে, মাদানী বোরকা তাদের পোশাকের অংশ হয়ে গেছে এবং তারা এই মাদানী উদ্দেশ্যকে আপন করে নিয়েছে যে, আমাকে নিজের এবং সারা দুনিয়ার মানুষের সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ অনেক সময় আল্লাহ্ তাআলার দানক্রমে ঈমান তাজাকারী বাহার প্রকাশ পায়। যেমন; অসুস্থদের আরোগ্য লাভ, সন্তানহীনদের সন্তান লাভ, বিপদ গ্রস্থদের মুক্তি লাভ ইত্যাদি। 

আপনাদের উৎসাহ বৃদ্ধির জন্য ৬টি মাদানী বাহার উপস্থাপন করছি; 

(১) কিডনীর ব্যথা দূর হয়ে গেলো 

হায়দারাবাদের (বাবুল ইসলাম সিন্ধু প্রদেশ) এক ইসলামী বোনের বর্ণনার সারাংশ হচ্ছে: আমার কিডনীতে এতো ব্যথা হতো যে, যতক্ষণ পর্যন্ত ২টি ইনজেকশন না দেওয়া হতো ব্যথা কমতো না। সৌভাগ্যবশতঃ আমাদের এলাকায় ইসলামী বোনদের একটি মাদানী কাফেলা আসলো। আল্লাহ্ তাআলার দয়ায় আমি তাদের সাথে সুন্নাত প্রশিক্ষণের মাদানী হালকায় অংশগ্রহণ করি। সেখানে আমার কিডনীর ব্যথা শুরু হয়ে গেলো এমনকি রাত হয়ে গেলো, যখন খাবার সামনে আনা হলো দেখলাম সেখানে ভাত, আমি ভয় পেয়ে গেলাম যে, যদি ভাত খাই তবে ব্যথা আরও বৃদ্ধি পেয়ে যাবে, অতঃপর আমি ভাবলাম বরকতের জন্য খেয়ে নিই, اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ কিছু হবে না। اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّখাবার খাওয়ার পর আমার ব্যথা বৃদ্ধি পাওয়ার পরিবর্তে একেবারে দূর হয়ে গেলো। 

দরদ গুরদে মে হে ইয়া মাছানে মে হে, 
উস কা গম মত করে কাফিলে মে চলো। 
মানফায়াত আখিরাত কে বানানে মে হে, 
ইয়াদ উসকো রাঁখে কাফিলে মে চলো। 



প্যারালাইসিস থেকে সাথে সাথেই আরোগ্য 

এ ব্যাপারে দা'ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ১১০৮ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “ফয়যানে সুন্নাত” এর ৩৯৭ নং পৃষ্ঠার রয়েছে: اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে রমযানুল মোবারকের শেষ দশদিনে সম্মিলিত ইতিকাফের ব্যবস্থা করা হয়। যাতে ইতিকাফ কারীদেরকে সুন্নাতে ভরা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সমাজের অনেক বিভ্রান্ত মানুষ ইতিকাফের সময় গুনাহ থেকে তাওবাকারী হয়ে নতুন পবিত্র জীবন শুরু করে। অনেক সময় রব্বে কায়িনাত এর দানে ঈমান তাজাকারী নিদর্শনও প্রকাশ পায়। যেমনিভাবে- ১৪২৫ হিজরী রমযানুল মোবারকের সম্মিলিত ইতিকাফে দা'ওয়াতে ইসলামীর আন্তর্জাতিক মাদানী মারকায ফয়যানে মদীনা, বাবুল মদীনা, করাচীতে প্রায় ২০০০ ইতিকাফকারী ছিলো। তাতে জেলা চাকওয়াল, পাঞ্জাব এর ৭৭ বছর বয়সী প্রবীণ হাফিয মুহাম্মদ আশরাফ সাহেবও ইতিকাফকারী হলেন। হাফিয সাহিবের হাত ও জিহ্বা প্যারালাইসিসে আক্রান্তছিলো ও শ্রবণ শক্তিও কম ছিলো। তিনি খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। তিনি একবারইফতার খাওয়ার সময় সুধারণার কারণে এক মুবাল্লিগ থেকে খাবারের অবশিষ্টাংশ নিয়ে খেলেন। তার কাছ থেকে ফুঁকও গ্রহণ করলেন। ব্যস, তাঁর সুধারণা কাজ করে দেখালো। আল্লাহ্ তাআলার রহমতের জোয়ার এলো। আল্লাহ্ তাআলা তাঁকে শিফা দান করলেন। اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ তাঁর প্যারালাইসিস দূর হয়ে গেলো। তিনি হাজার হাজার ইসলামী ভাইদের উপস্থিতিতে ফয়যানে মদীনার মেহরাবে দাঁড়িয়ে অপরিসীম বিশ্বাসে নিজের শরীর সুস্থতার দিকে যাওয়ার সুসংবাদ শুনালেন। এ প্রাণবন্ত সুসংবাদ শুনে চতুর্দিকে আল্লাহ্, আল্লাহ্, আল্লাহ্ এর ভাবাবেগপূর্ণ যিকির শুরু হলো। তখনকার দিনের কয়েকটি স্থানীয় পত্রিকায় এ আনন্দদায়ক খবরটি ছাপানো হয়। 

দা'ওয়াতে ইসলামী কি কায়্যুম, 
দো-নো জাহা মে মাচ্ যা-য়ে ধূম, 
ইছপে ফিদা হো বাচ্চা বাচ্চা, 
ইয়া আল্লাহ্! মেরি ঝোলি ভরদে। 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 

(২) ব্ল্যাড প্রেশারের রোগী সুস্থ হয়ে গেলো 
বাবুল মদীনার (করাচী) এক ইসলামী বোনের বর্ণনার সারাংশ হলো; আমার ব্লাড প্রেশার সর্বদা লো (Low) থাকতো, কিন্তু যখন থেকে ইসলামী বোনদের মাদনী কাফেলায় সফর করেছি। আমি এই রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছি। 

হাই B.P. হো গর ইয়াকে Low হো মাগার, 
ফিকর হি মত কর কাফিলে মে চলো। 
রব কে দর পর জুঁকে ইলতিজায়ে করে, 
বাবে রহমত খুলে কাফিলে মে চলো। 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 


১০০টি ঘর থেকে বিপদাপদ দূর হয়ে যায় 
ইসলামী বোনেরা! মাদানী কাফেলা তো মাদানী কাফেলাই, এতে উত্তম সঙ্গ এবং তার বরকতই বরকত। আল্লাহ্ তাআলার নেক বান্দেনীদের এবং মক্কী মাদানী মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এরআশিকাদের ও মদীনার দিওয়ানিদের নৈকট্যের কথা কি আর বলবো! নেককারদের নৈকট্য ও প্রতিবেশিত্ব অবশ্যই অনেক বড় সৌভাগ্যের বিষয়। তার বরকতে দুনিয়াবী বিপদাপদ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায় এবং আখিরাতের উপকারও অর্জিত হয়। সুন্দর চরিত্রের অধিকারী নবীদের সরদার, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর মনোমুগ্ধকর বাণী হচ্ছে: “আল্লাহ্ তাআলা নেক মুসলমানের কারণে তার প্রতিবেশীদের মধ্যে ১০০টি ঘর থেকে বিপদ দূর করে দেন।” (আল মু'জামুল আওসাত, ৩য় খন্ড, ১২৯ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৪০৮০) 



(৩) শান্তির ঘুম 
একজন ইসলামী বোনের (বয়স প্রায় ৫৫ বছর) বর্ণনা কিছুটা এরকম: আমার পায়ে ব্যথা করতো যার কারণে আমি পুরো রাত শান্তিতে ঘুমোতে পারতাম না। যদি একটু চোখ বন্ধ হতো তবে ভয়ংকর স্বপ্ন দেখতাম যার কারণে আমি অস্থির হয়ে উঠে বসে পড়তাম। اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ আমি ২০০৯ সালের র্মাচ মাসে ইসলামী বোনদের মাদানী কাফেলায় সফর করলাম, রাতে যখন বিশ্রামের বিরতি হলো তখন আমার এমন শান্তিময় নিদ্রা এলো যে, সম্ভবত এমন নিদ্রা গত কয়েক বছরেও আসেনি। এ সবকিছুই হলো; মাদানী কাফেলার বরকত। 

উসকি কিসমত পে ফিদা তকতে শাহি কি রাহাত, 
খাকে ত্বয়বা পে জেয়সে চেয়ন কি নিন্দ আয়ি হো। 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 

ইসলামী বোনেরা! আল্লাহ্ তাআলার স্মরণে অন্তরের প্রশান্তি রয়েছে, যেমন; ১৩ পারা সূরা রা'দ এর ২৮ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে: 
الَّذِينَ اٰمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّٰہُ ط أَلَا بِذِكْرِ اللّٰہُ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ (২৮) 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: ওই সব লোক, যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণে প্রশান্তি পায়; শুনে নাও, আল্লাহর স্মরণেই অন্তরের প্রশান্তি রয়েছে। (পারা: ১৩, সূরা: রা'দ, আয়াত: ২৮) 

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ মাদানী কাফেলায় অধিক পরিমাণে নেক বান্দাদের আলোচনা করা হয় এবং যেখানে সালেহীন ও সালেহাত অর্থাৎ বুযুর্গ ও পবিত্র রমনীদের আলোচনা করা হয়, সেখানে আল্লাহ্ তাআলার অগণিত রহমত বর্ষণ হয়। যেমনিভাবে- হযরত সায়্যিদুনা ইমাম সুফিয়ান বিন উয়াইনা رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِবর্ণনা করেন: “عِنْدَ ذِكْرِ الصّٰلِحِيْنَ تَنَزَّلُ الرَّحْمَةُ অর্থাৎ নেক বান্দাদের আলোচনার সময় আল্লাহ্ তাআলার রহমত বর্ষিত হয়।” (হিলইয়াতুল আওলিয়া, ৭ম খন্ড, ৩৩৫ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১০৭৫০) অতএব যেখানে রহমত অবতীর্ন হয় সেখানে শান্তি কেন পাওয়া যাবে না! যদি রহমতের বারিধারায় শান্তি ও আরাম পাওয়া না যায়, তবে কোথায় পাওয়া যাবে? বর্ণিত “মাদানী বাহার”এ ভয়ঙ্কর স্বপ্নেরও আলোচনা হয়েছে অতএব তার একটি মাদানী চিকিৎসা উপস্থাপন করছি। দা'ওয়াতে ইসলামী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ৩৮৬ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “মাদানী পাঞ্জেসূরা” এর ২৩৩ পৃষ্ঠায় রয়েছে: يَا مُتَكَبِّرُ প্রতিদিন ২১বার পড়ে নিন, ভীতিকর স্বপ্ন দেখলেও اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ ভয় পাবেন না। (চিকিৎসার মেয়াদ: সুস্থ হওয়া পর্যন্ত)। 

পাও মে দরদ হো যন হো ইয়া মরদ হো, কাফিলে মে চলে কাফিলে মে চলো। 
লুট লেঁ রহমতেঁ খুব লে বরকতেঁ, খোয়াব আচ্ছে দেখে কাফিলে মে চলো। 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 


(৪) ঘাড়ের ব্যথা দূর হয়ে গেলো 
গুটকি (বাবুল ইসলাম সিন্ধু প্রদেশ) এর এক ইসলামী বোনের বর্ণনা যে, দেড় মাস ধরে আমার ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যাথা, অনেক চিকিৎসা করিয়েছি, কিন্তু স্থায়ী সমাধান পাইনি। যখন আমি তবলীগে কোরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপি অরাজনৈতিক সংগঠন দা'ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত, প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর আশিকাদের ও মদীনার দিওয়ানিদের মাদানী কাফেলায় সফর করলাম তখন অন্যান্য বরকতের পাশাপাশি আমার ঘাড়ের ব্যথার দূর হয়ে গেলো। 

দরদ গর্দান মেঁ হো ইয়া কাঁহী তন মে হো, দরদ সারে মিটেঁ কাফিলে মে চলো। 
কর সফর আয়েঙ্গি তো সুধার জায়েনঙ্গি, আব না সুসতি না করে কাফিলে মে চলো। 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 


অন্ধ ছেলের বিস্ময়কর কাহিনী 
ইসলামী বোনেরা! মাদানী কাফেলার বরকত সমূহ মারহাবা! اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ যেখানে মাদানী কাফেলার মুসাফিরার ঘাড়ের ব্যথা দূর হয়ে যায়। এসখানে এ মাদানী ফুলটি সংরক্ষণ করার মতো আর তা হলো; ধরে নিন, এই মাদানী কাফেলায় কারো ব্যথা দূর হওয়ার পরিবর্তে আরো বৃদ্ধি পেয়ে যায়। যদি কারো সাথে এরূপ হয়ে থাকে তবে সে যেন শয়তানের কুমন্ত্রনায় পড়ে কখনোও মাদানী কাফেলার প্রতি নিরাশ না হয়। মু'মিনের সর্বদা আল্লাহ্ তাআলার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা উচিত। নিশ্চয় তার ইচ্ছা ও হিকমত আমাদের মধ্যে কেউ বুঝতে পারবে না। সুস্থতা দেয়ার মধ্যেও তার হিকমত, রোগ বৃদ্ধি হয়ে যাওয়াতে তার কল্যাণ। কাউকে চোখের আলো দান করাতেও তার রহস্য, কাউকে অন্ধ রাখার মধ্যে কল্যাণ। এ ব্যাপারে এক অন্ধ ছেলের বিস্ময়কর কাহিনী উপস্থাপন করছি। দা'ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ৩০০ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “আঁসুওয়োঁ কা দরিয়া” এর ২৫২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে; হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রুহুল্লাহ্ عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام একটি নদীর পাশ দিয়ে গমন করছিলেন, তখন কিছু ছেলেদেরকে সেখানে খেলতে দেখলেন, তাদের মধ্যে একটি অন্ধ ছেলেও ছিলো, যাকে তারা পানিতে ডুবিয়ে দিয়ে ডানে বামে পালিয়ে যেতো এবং সে তাদেরকে খুজঁতে থাকতো কিন্তু সফল হতো না। হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রুহুল্লাহ্ عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام তার সম্পর্কে ভাবতে লাগলেন, অতঃপর আল্লাহ্ তাআলার দরবারে এই ছেলেটির দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য দোয়া করলেন, আল্লাহ্ তাআলা সেই ছেলের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন। যখন সে চোখ খুললো এবং ছেলেদেরকে দেখলো তখনই একটি ছেলের কাছে গেলো এবং তাকে একেবারে ঝাপটে ধরলো। অতঃপর তাকে পানিতে এতক্ষন ডুবিয়ে রাখলো যে, সে মৃত্যুবরণ করলো। অতঃপর লাফ দিয়ে দ্বিতীয়জনকে ধরলো এবং তাকেও পানিতে এমনভাবে ডুবাতে লাগলো যে, শেষ পর্যন্ত মরেই গেলো! এ অবস্থা দেখে অবশিষ্ট ছেলেরা পালাতে লাগলো, হযরত সায়্যিদুনা ঈসা রুহুল্লাহ্ عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام এ অবস্থা দেখে খুবই হতভম্ব হয়ে গেলেন এবং আরয করলেন: “হে আল্লাহ্! হে আমার মালিক ও মওলা! তুমি তার জন্ম সম্পর্কে ভাল করে অবগত। এই ছেলেকে পুর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দাও।” তখন আল্লাহ্ তাআলা হযরত সায়্যিদুনা ঈসা عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام এর নিকট ওহী প্রেরন করলেন: “আমি তোমার চেয়ে অধিক জানি।” তখন হযরত সায়্যিদুনা ঈসা عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام সিজদায় পড়ে গেলেন। (আঁসুওয়োঁ কা দরীয়া, ২৫২ পৃষ্ঠা) 


(৫) আমার বমি হয়ে যেতো 
গুটকি (বাবুল ইসলাম সিন্ধু প্রদেশ) এর এক ইসলামী বোনের বর্ণনা কিছুটা এমন: আমার টাইফয়েড হয়েছিল। যার কারণে আমার হজম শক্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। যখনই আমি খাবার খেতাম সাথে সাথে বমি হয়ে যেতো। যখন আমি ইসলামী বোনদের সাথে দা'ওয়াতে ইসলামীর কাফেলার সফর করলাম এবং সুন্নাত অনুযায়ী খাবার খেলাম তখন না আমার বমি হলো, এবং না পেটে ব্যথা হলো। আমি এই বরকত দেখে নিয়্যত করলাম যে, আগামীতে নিজেও মাদানী কাফেলায় সফর করবো এবং ইনফিরাদী কৌশিশের মাধ্যমে অন্যান্য ইসলামী বোনকেও মাদানী কাফেলায় সফর করার উৎসাহ প্রদান করবো। 
গরহে দরদে শিকম মত করে উস কা গম, 
সাথ মাহরাম কো লে কফিলে মে চলো। 
তংদস্তি মিঠে দূর আ'ফত হটে, 
লেনে কো বরকঁতে কাফিলে মে চলো। 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 


ইসলামী বোনেরা! সুন্নাত তো সুন্নাতই। এতে বরকত হবেই না কেন! আর সুন্নাতও যখন সুন্নাতের প্রশিক্ষনের মাদানী কাফেলায়, প্রিয় আক্বা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর আশিকাদের ও মদীনার দিওয়ানিদের সংস্পর্শে থেকে আদায় করা হয়, তাহলে তো এর শানও অপরূপ হবে। আমদেরও যেন প্রতিটি কাজে সুন্নাতের উপর আমল করার উৎসাহ অর্জন হয়। 

মুহাম্মদ কি সুন্নাত কি উলফত আতা কর, 
মেঁ হো জাও উন পর ফিদা ইয়া ইলাহী! 
মে সুন্নাত কি ধূমেঁ মাচাতি রহো কাশ, 
তো দিওয়ানি এ্য'সি বানা ইয়া ইলাহী! 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 

(৬) হারানো স্বর্ণের কানফুল পাওয়া গেলো 
বাবুল মদীনা (করাচী) এর এক ইসলামী বোনের বর্ণনার সারাংশ হলো; আমার স্বর্ণের একটি কানফুল হারিয়ে গেলো। তিনদিনপর্যন্ত অনেক খুঁজলাম, কিন্তু পেলাম না। অতঃপর যখন আমাদের এলাকায় ইসলামী বোনদের মাদানী কাফেলা আগমন করলো, তখন আমি দোয়া করলাম: হে আল্লাহ্! মাদানী কাফেলার বরকতে আমার হারানো স্বর্ণের কানফুল ফিরিয়ে দাও, اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ এই দোয়ার ফলে আমার স্বর্ণের কানফুল অতি সহজে পাওয়া গেলো এবং আশ্চর্যজনক বিষয় হলো; যেখানে স্বর্নের কানফুলটি পেয়েছি, সে জায়গায় ইতিপূর্বে অনেকবার খুঁজেছি! এই বরকত দেখে আমি মাদানী কাফেলায় সফরের নিয়্যত করে নিলাম। 

খো গেয়ে জেওরাত আয়েঁ ফেলা কে হাত, আরয হক সে করে কাফিলে মে চলো। 
গম কে বাদল ছুঁটে দিল কি কালিয়াঁ খিলেঁ, দর করম কে খুলে কাফিলে মে চলো। 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 

জান্নাতেরও কি অপরূপ শান! 
ইসলামী বোনেরা! আপনারা দেখলেন তো! মাদানী কাফেলার বরকতে স্বর্ণের হারানো কানফুল পাওয়া গেলো! এটা তো দুনিয়ার একটি নগন্য বস্তু। اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ মাদানী কাফেলায় সফরকারী ও সফরকারীনীদের জান্নাতও অর্জিত হবে। আর سُبْحٰنَ اللهِ عَزَّوَجَل জান্নাতেরও কি অপরূপ শান! দা'ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ১৭৬ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “বেহেশতের কুঞ্জি” এর ১৫ থেকে ১৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে: “জান্নাতে মিষ্টি পানি, মধু, দুধ ও অমীয় সূধার নদী প্রবাহিত রয়েছে।” (তিরমিযী,৪র্থ খন্ড, ২৫৭ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২৫৮০) যখন জান্নাতিরা পানির নদী থেকে পানি পান করবে তখন এমন দীর্ঘায়ু অর্জিত হবে যে, তার কখনোও মৃত্যু আসবে না। আর যখন দুধের নদী থেকে পান করবে তখন তার দেহে এমন শক্তি অর্জিত হবে যে, সে কখনোও দুর্বল হবে না। আর যখন মধুর নদী থেকে পান করবে তখন তার এমন স্বাস্থ্য ও সুস্থতা অর্জিত হবে যে, সে কখনোও অসুস্থ হবে না। আর যখন অমীয় সূধার নদী থেকে পান করবে তখন এমন আনন্দ ও প্রফুল্লতা অর্জিত হবে যে, সে আর কখনোও চিন্তাগ্রস্থ হবে না। এ চারটি নদী একটি হাওযে গিয়ে যুক্ত হচ্ছে যার নাম হাওযে কাউসার। এটাই হুযুর আকরাম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর সেই হাওযে কাউসার, যা বর্তমানে জান্নাতের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে স্থানান্তরিত করা হবে। যেখানে হুযুর আকরাম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এই হাওয থেকেই আপন উম্মতদেরকে পরিতৃপ্ত করাবেন। (রহুল বয়ান, ১ম খন্ড, ৮২ ও ৮৩ পৃষ্ঠা)

--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত ৩৪৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত “পর্দা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর“ নামক কিতাবের ১-১০ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই কিতাবটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন। অন্যকে উপহার দিন।

যারা মোবাইলে (পিডিএফ) কিতাবটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন ।
দাওয়াতে ইসলামীর সকল বাংলা ইসলামীক বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন

মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন