প্রিয় মাদানী মুন্না এবং মাদানী মুন্নীরা! (পূর্বের পোস্টে) ৬টি মু’জিযা পড়ার পর এখন আসুন! আরও ঘটনা শুনি:
(৭) আমার হাত পাত্রে ঘুরাঘুরি করতো
হযরত ওমর বিন আবি সালামা رضى الله عنه বলেন: আমি বাল্যকালে রাসূলে আকরাম, নূরে মুজাস্সাম, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর লালন-পালনে (তত্বাবধানে) ছিলাম। (খাবারের সময়) আমার হাত পাত্রে ঘুরাঘুরি করতো (অর্থাৎ চতুর্দিক থেকে খাবার খেতাম।) রাসূলুল্লাহ্ صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমাকে ইরশাদ করলেন: “হে বৎস! بِسْمِ الله পড়ো, ডান হাতে নিজের সামনে থেকে খাও। ” এর পর থেকে আমি সেভাবে (অর্থাৎ হুযুর صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর কথা মতো) খেয়ে থাকি। (বুখারী, ৩য় খন্ড, ৫২১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫৩৭৬)
প্রিয় মাদানী মুন্না এবং মাদানী মুন্নীরা! সর্বদা بِسۡمِ اللہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ পাঠ করে ডান হাতে নিজের সামনে থেকে খাবার গ্রহণ করুন। অবশ্য! যদি থালাতে (Platter) পৃথক পৃথক বস্তু থাকে, তাহলে এদিক সেদিক হতে খেতে পারবেন। যখন পানি পান করবেন, তখন বসে, আলোতে দেখে, - بِسۡمِ اللہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ পড়ে, ডান হাতে, চুষে চুষে তিন নিঃশ্বাসে পান করুন।
অসংখ্য সুন্নাত ও আদব শিখতে এবং এর উপর আমলের উৎসাহ পাওয়ার জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় আসুন এবং “মাদানী চ্যানেল” দেখতে থাকুন। (খাবারের সুন্নাত এবং আদব জানতে মাকতাবাতুল মদীনার কিতাব “ফয়যানে সুন্নাত (১ম খন্ড)” এর “খাবারের আদব” অধ্যয়ন করুন।)
(৮) বুদ্ধিমতী মাদানী মুন্নী!
আল্লাহ্ তাআলার একজন অত্যন্ত প্রিয় বান্দা হযরত ফুযাইল বিন আয়ায رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ ছোট কন্যার হাতের তালুতে ব্যথা ছিলো, যখন তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: কন্যা! তোমার হাতের তালুর ব্যথা এখন কেমন? (বুদ্বিমতী মাদানী মুন্নী) উত্তর দিলো: আব্বাজান! ভালো, যদি আল্লাহ্ তাআলা আমাকে সামান্য কষ্টে ফেললেও তবুও তিনি আমাকে তার চেয়েও অধিক আরাম (শান্তি) দিয়েছেন, সেটা এভাবে যে, শুধু আমার হাতের তালুতে ব্যথা ছিলো কিন্তু অবশিষ্ট শরীর (চোখ, কান, নাক, ঠোঁট এবং পা ইত্যাদি) তে কোন কষ্ট হয়নি, এর জন্য (আমি) আল্লাহ্ তাআলার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। এমন পছন্দনীয় উত্তর (Reply) শুনে তিনি বললেন: কন্যা! আমাকে তোমার হাতের তালু দেখাও”! যখন সে হাতের তালু দেখালো, তখন তিনি পরম ভালবাসায় তার হাতে চুমু দিলেন। (হায়াতুল হায়ওয়ান লিদ্দামিরী, ১ম খন্ড, ১৯৭ পৃষ্ঠা সংকলিত)
প্রিয় মাদানী মুন্না ও মাদানী মুন্নীরা! এ “বাস্তব ঘটনা” থেকে আমরা এ শিক্ষা পেলাম, আমাদের নিকট যখনই কোন বিপদ আসে তখন “হা হুতাশ” করার পরিবর্তে ধৈয্য ধারণ করা এবং আল্লাহ্ তাআলার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা উচিৎ। কেননা, তিনি আমাদেরকে বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। উদাহরণ স্বরূপ- কারো মাথা ব্যথা হলো, তাহলে সে এর উপর আল্লাহ্তা আলার শুকরিয়া আদায় করবে যে, তার জ্বর (Fever) হয়নি। বিনা প্রয়োজনে কাউকে নিজের কষ্টের কথা বলাও উচিৎ নয়। যাতে আমাদের ধৈয্যের সাওয়াব অজর্ন হয়। অবশ্য দোয়া করানোর জন্য কোন নেককার বান্দা অথবা চিকিৎসার জন্য আম্মু বা আব্বু বা ডাক্তার ইত্যাদিকে বললে অসুবিধা নেই। আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে ধৈর্য্য ও শুকরিয়া আদায়কারী বান্দা হিসেবে কবুল করুক। আমীন!
(৯) মাদানী মুন্না দ্বিগুন পেলো
আল্লাহ্ তাআলার প্রিয় নবী, রাসূলে আরবী صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর প্রিয় সাহাবী হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ্ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর বর্ণনা; সুলতানে মদীনা, হুযুর صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দরবারে হাদিয়া স্বরূপ এক পাত্র (থালা) হালুয়া পেশ করা হলো। তখন হুযুর পুরনূরصَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমাদের সবাইকে অল্প অল্প হালুয়া দিলেন, যখন আমার পালা আসলো, তখন আমাকে একবার দেওয়ার পর ইরশাদ করলেন: তোমাকে কি আরো দিবো? আমি বললাম: জ্বী, হ্যাঁ। তখন হুযুর পুরনূর صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমার অল্প বয়স হওয়ার কারণে আমাকে আরো অতিরিক্ত (বেশি) দিলেন, এর পর যে লোকেরা অবশিষ্ট রইল তাদেরকে তাদের অংশ দেয়া হলো। (শুয়াবুল ঈমান, ৫ম খন্ড, ৯৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৫ সংকলিত)
প্রিয় মাদানী মুন্না ও মাদানী মুন্নীরা! আমাদের প্রিয় নবী صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم শিশুদের প্রতি বড়ই স্নেহ প্রদর্শণ করতেন তাইতো হুযুর صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم হযরত জাবির رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কে অন্যদের থেকে বেশি দিলেন কেননা তিনি (ছোট্ট) শিশু ছিলেন। কিন্তু এ কথা স্বরণ রাখা উচিৎ যে, যখন কোন কিছু বন্টন করা হয় তখন আপনি কারো নিকট দ্বিগুণ চাইবেন না, অবশ্যই! যদি বন্টনকারী নিজেই আপনাকে বেশি দিয়ে দেন তাহলে গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই।
(১০) আল্লাহর যিকির করার অভ্যাস
হযরত দাউদ বিন আবু হিন্দ رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ যখন বাজারে (Market) আসা যাওয়া করতেন তখন নিজের জন্য এভাবেই নির্ধারণ করে নিতেন যে, অমুক জায়গা পর্যন্ত আল্লাহ্ তাআলার যিকির করতে থাকব, যখন সে জায়গায় (place) পৌছেঁ যেতেন তখন নিজের উপর আবশ্যক করে নিতেন যে, অমুক জায়গা পর্যন্ত আল্লাহ্ তাআলার যিকির করবো, আর এভাবে যিকির করতে করতে তিনি ঘরে পৌঁছে যেতেন। (হিলয়াতুল আউলিয়া, ৩য় খন্ড, ১১০ পৃষ্ঠা সংকলিত)
প্রিয় মাদানী মুন্না ও মাদানী মুন্নীরা! মুখে আল্লাহ্ আল্লাহ্ বলা, তিলাওয়াত করা, না’ত শরীফ পড়া এবং দোয়া করা ইত্যাদি সব আল্লাহর যিকির। এভাবে মনে মনে আল্লাহ্ তাআলার দেওয়া নেয়ামতের (Blessings) স্বরণ করা, নামাযে দাঁড়ানো, রুকু এবং সিজদা করাও আল্লাহ্ তাআলার যিকিরের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত।
(১১) অন্ধ মাদানী মুন্না দেখতে লাগলো!
হাদীস সমূহের প্রসিদ্ধ কিতাব “বুখারী শরীফ” এর সম্মানিত লিখক হযরত ইমাম মুহাম্মদ বিন ইসমাইল বুখারী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বাল্যকালে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, ডাক্তারদের থেকে চিকিৎসা করা হলো কিন্তু তার চোখের আলো ফিরে আসেনি। তাঁর আম্মাজান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْها মুস্তাযাবুদ্দা’ওয়াত (অথাৎ যার দোয়া কবুল হয়ে থাকে এমন মহিলা) ছিলেন, এক রাতে তিনি হযরত ইব্রাহিম عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام কে স্বপ্নে দেখলেন, হযরত ইব্রাহিম عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام বললেন: “আল্লাহ্ তাআলা তোমার দোয়া কবুল করেছেন, তোমার ছেলের চোখ ভাল করে দিয়েছেন।” সকালে যখন ইমাম বুখারী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ ঘুম হতে জাগ্রত হলেন তখন তার চোখ (সম্পূর্ণ) ভাল হয়ে গেলো এবং দেখতে লাগলেন। (মিরকাত ১ম খন্ড, ৫৩ পৃষ্ঠা। আশ্ আতুল লুম’আত, ১ম খন্ড, ৯ পৃষ্ঠা)
প্রিয় মাদানী মুন্না ও মাদানী মুন্নীরা! আপনার দেখলেনতো! মায়ের দোয়ায় কতইনা প্রভাব রয়েছে। সর্বদা নিজের মা বাবাকে সন্তুষ্ট রাখুন, তাঁদের কথা মেনে চলুন, আম্মাজান অথবা আব্বাজান আসলে তখন আদবের সাথে দাঁড়িয়ে যান, তাঁদের সামনে দৃষ্টি নত রাখুন, তাঁদের হাতে-পায়ে চুম্বন করুন। যে আপন মা বাবার কথা মেনে চলে না এবং তাদেরকে অসন্তুষ্ট করে এর শাস্তি তারা দুনিয়াতে ও পেয়ে যায় যেমন:
(১২) পা কেটে গেলো
যেমন- যামাখ্শরীর (মু’তাযালী সম্প্রদায়ের এক জন আলিম) এক পা কাটা ছিলো, লোকেরা তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে বললো: এটা আমার মায়ের অভিশাপের ফল। এভাবেই হলো যে, আমি বাল্য কালে একটা চড়–ই পাখি ধরলাম এবং সেটার পায়ে সুতা বেঁধে দিয়েছিলাম, হঠাৎ করে সেটা আমার হাত থেকে ছুটে গিয়ে একটি দেয়ালের ছিদ্রে ঢুকে গেলো, কিন্তু সুতা বাইরে লট্কানো ছিলো, আমি সুতা ধরে নির্দয় ভাবে টান দিলাম তখন চড়ুই পাখি পাখা ঝাড়া দিয়ে বের হয়ে গেলো, কিন্তু অসহায় পাখির পা সুতা দ্বারা কেটে গেলো, আমার মা এটা দেখে খুব অসন্তুষ্ট হন এবং তাঁর মূখ থেকে আমার জন্য অভিশাপ বের হয়ে গেলো: “যেভাবে তুমি এ বোবা প্রাণীর পা কেটে দিয়েছ, আল্লাহ্ তাআলা তোমার পা কেটে দিক। ” কথাটা বাস্তব হলো, কিছু দিন পর আমি জ্ঞান অর্জনের জন্য বুখারা শহরে সফর করলাম, পথে বাহন থেকে পড়ে গেলাম পায়ে খুব আঘাত লাগল, “বুখারা” পৌঁছে অনেক চিকিৎসা করলাম কিন্তু ব্যথা গেলো না এবং পা কাটতে হলো। (এবং এভাবেই মায়ের অভিশাপ পূর্ণ হলো) (হায়াতুল হায়ওয়ান, ২য় খন্ড, ১৬৩ পৃষ্ঠা)
প্রিয় মাদানী মুন্না ও মাদানী মুন্নীরা! এই “বাস্তব কাহিনী” দ্বারা আমরা এটাই জানতে পারলাম, মানুষ তো মানুষই আমাদের কোন প্রাণী কেও কষ্ট দেওয়া উচিত নয়। কিছু শিশু মুরগীর বাচ্চা, বিড়াল এবং ছাগলের বাচ্চা ইত্যাদিকে আঘাত করে থাকে, উঠিয়ে জমিতে নিক্ষেপ করে থাকে, তাদের কখনোই এমন কাজ করা উচিত নয়।
(১৩) পাখিকে তীর মারছিলো
হযরত আব্দুলাহ বিন ওমর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কুরাইশের কিছু যুবকদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যারা একটা পাখি (Bird) কে বেধেঁ তার উপর (তীর দ্বারা) নিশানা বাজী করছিল। যখন তারা আবদুল্লাহ্ বিন ওমর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا কে আসতে দেখলো, তখন তারা এদিক সেদিক পালিয়ে গেলো। তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ জিজ্ঞাসা করলেন: “এটা কে করেছে? এমন যে করেছে, তার উপর আল্লাহ্ তাআলা অভিশাপ, নিশ্চয়ই রাসূলে আকরাম صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কোন প্রাণিকে তীরান্দাজের নিশানা নির্ধারণকারীর উপর অভিশাপ দিয়েছেন”। (মুসলিম, ১০৮২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৯৫৮)
(১৪) গায়িকা শিশু কন্যা
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا একটি ছোট মেয়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যে গান করছিলো। তিনি বললেন: “যদি শয়তান কাউকে ছাড়তো, তাহলে অবশ্যই তাকে ছেড়ে দিতো। (শুয়াবুল ঈমান ৪র্থ খন্ড, ২৭৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৫১০২) উদ্দেশ্য হলো; যদি শয়তান কাউকে ছাড়তো তাহলে কমপক্ষে এই ছোট্ট বাচ্চা মেয়েকে ছেড়ে দিতো। এইজন্য ছোটদেরকেও শয়তানের কাছ থেকে সাবধান রাখা উচিৎ।
প্রিয় মাদানী মুন্না ও মাদানী মুন্নীরা! গান বাজনা শুনা এবং গান গাওয়া শয়তানী কাজ, আপনারা কখনো এই শয়তানী কাজ করবেন না। আল্লাহর দয়ায় কুরআন তিলাওয়াত শুনুন, নাত শরীফ এবং সুন্নাতে ভরা বয়ান শুনুন اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ আপনি অনেক সাওয়াব পাবেন।
(১৫) গাধার উপর আরোহী মাদানী মুন্না
(আগেকার যুগে মোটর সাইকেল এবং মোটর গাড়ী ছিলো না তাই) এক ব্যক্তি গাধার (Donkey) উপর আরোহন করে নিজের অসুস্থ বন্ধুর সেবা-শুশ্রূষার জন্য তার ঘরে গেলো, এবং তার গাধাকে দরজায় নিরাপত্তা মূলক ব্যবস্থা না করে ছেড়ে দিলো। যখন সে ফিরে আসল তখন দেখল যে, গাধার উপর এক শিশু বসে তার হিফাজত করছে, সে ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হয়ে জিজ্ঞাসা করলো: তুমি আমার অনুমতি ছাড়া কিভাবে এর উপর আরোহন করলে? শিশুটি বললো: আমার ভয় ছিলো যে, এটা কোথাও যেন পালিয়ে না যায় তাই আমি এর উপর আরোহণ করেছি। সে বললো: আমার নিকট এটা পালিয়ে যাওয়া এখানে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে উত্তম ছিলো। এটা শুনে শিশুটি উত্তর দিলো, যদি এমন কথা হয়, তাহলে এই গাধাটি আমাকে হাদিয়া স্বরূপ দিয়ে দিন এবং মনে করুন যে, গাধা পালিয়ে গেছে, আমি আপনার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবো। ঐ ব্যক্তি বললো: আমি এ শিশুর কথা শুনে নিরুত্তর হয়ে গেলাম। (কিতাবুল আযকিয়া লি ইবনে যাওযী, ২৪৮ পৃষ্ঠা)
প্রিয় মাদানী মুন্না ও মাদানী মুন্নীরা! নিজের জিনিস খেলনা, জুতো ইত্যাদি এদিক সেদিক না রেখে তা নির্দিষ্ট স্থানে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। অন্যথায় হারিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
এ পর্যন্ত ১৫টি ঘটনা বাস্তব ছিলো। এখন ২টি শিক্ষনীয় কাল্পনিক কাহিনী পেশ করা হচ্ছে। শুনুন:
এ পর্যন্ত ১৫টি ঘটনা বাস্তব ছিলো। এখন ২টি শিক্ষনীয় কাল্পনিক কাহিনী পেশ করা হচ্ছে। শুনুন:
(১৬) অধিক রাগ সম্পন্ন শিশুর অসাধারণ চিকিৎসা
এক শিশুর অনেক রাগ ছিলো, সে কথায় কথায় রাগান্বিত হয়ে অপরকে ভাল মন্দ বলত এবং ঝগড়া করত, তার পিতা-মাতা অনেক চেষ্টা করেছেন যে, কিভাবে সে তার রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করা শিখে যায়, কিন্তু সে অপারগ থাকে। একদা তার আব্বু একটা কৌশল বের করলেন, তিনি শিশুটিকে অনেক পেরেক দিলেন এবং ঘরের পিছনের অংশের দেওয়ালের (Wall) দিকে নিয়ে গেলেন এবং বললেন: বৎস! তুমি যখন কারো উপর রাগান্বিত হবে অথবা ঝগড়া করবে তখন এই দেয়ালে একটা পেরেক গেঁথে দিবে, প্রথম দিন সে ৩৭বার রাগ ও ঝগড়া করলো, তাই প্রথম দিন ৩৭টি পেরেক গেঁথে দিলো। কিছু দিনের মধ্যে সে ক্লান্ত হয়ে গেলো এবং বুঝতে পারল যে, রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ কিন্তু দেয়ালে পেরেক গাঁথা অনেক কঠিন কাজ। সে আব্বুকে নিজের পেরেশানির কথা বললো, তখন তিনি বললেন: এখন থেকে যখনই তোমার রাগ আসে এবং তুমি এর উপর নিয়ন্ত্রণ করতে পারো, তাহলে দেয়াল থেকে একটা পেরেক বের করে নাও। ছেলেটি সে ভাবেই করলো এবং খুব তাড়াতাড়ি দেয়ালে লাগানো পেরেক যার সংখ্যা ১০০টি হয়ে ছিলো সেগুলো বের করতে সফল হলো। এখন আব্বু তার হাত ধরলেন এবং দেয়ালের পাশে নিয়ে গিয়ে বললেন: বৎস! তুমি তোমার রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছো অনেক ভাল, কিন্তু এই দেয়ালকে একটু দেখো! এটা আগের মতো রইলো না, এতে ছিদ্র হয়ে কতইনা খারাপ দেখাচ্ছে। যখন তুমি রাগান্বিত হয়ে চিৎকার চেচামেছি করতে এবং উল্টা-সিদা কথা বলতে, তখন সেটা অপরের অন্তরে ছুরি ঢুকার মতো হতো, তার পর তুমি ক্ষমা চেয়ে নাও, তারপরও এর দ্বারা অন্তরের আঘাত তাড়াতাড়ি ঠিক হয় না। কেননা, মুখের আঘাত ছুরির আঘাতের চেয়ে ও অনেক গভীর হয়ে থাকে। এটা শুনে ছেলেটি অপরের অন্তরে আঘাত দেওয়া থেকে তাওবা করলো এবং ক্ষমাও চাইল। (রাগের অভ্যাস দূর করার জন্য মাকতাবাতুল মদীনার রিসালা “রাগের চিকিৎসা” পাঠ করুন)(১৭) অসৎ সঙ্গের প্রভাব
সৎ পরিবারের এক মাদানী মুন্না খারাপ বন্ধুদের সংস্পর্শে (Company) উঠা বসা করতে লাগল। তার আব্বু এই ব্যাপারে জানতে পারলেন। তখন তিনি তাকে বুঝালেন যে, অসৎ বন্ধুদের সংস্পর্শ তোমাকে যেন অসৎ বানিয়ে না দেয়। সে এটা বলে ফিরিয়ে (Avoid) দিলো যে, আব্বু! আপনি চিন্তা করবেন না, আমি তাদের মতো হব না। সম্মানিত পিতা তার ছেলেকে প্র্যাকটিকেল ভাবে বুঝানোর ইচ্ছা করলেন এবং একদিন ঘরে অনেক আলুবুখারা (Prunes) নিয়ে আসলেন, সেখান থেকে কিছু আলুবুখারা ঘরের সদস্যরা খেয়ে নিলেন, যখন অবশিষ্ট আলুবুখারা রাখতে লাগলো তখন ছেলে বললো: আব্বু! এতে একটা পচাঁ (Rutten) আলুবুখারা ও রয়েছে, সেটা ফেলে দিন, পিতা মহোদয় বললেন, এখন থাক, কাল দেখা যাবে। পরের দিন যখন পিতা ছেলে আলুবুখারা দেখলেন তখন পচাঁ আলুবুখারার পাশেরগুলোও নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। এখন পিতা মহোদয় ছেলেকে বুঝালেন: দেখেছো পুত্র! সংস্পর্শের কতইনা প্রভাব হয়ে থাকে! একটা পচাঁ আলুবুখারার সংস্পর্শে অন্য ভাল আলুবুখারাও নষ্ট হয়ে গেলো!
মাদানী মুন্নার বুঝে আসলো এবং সে অসৎ বন্ধুদের সংস্পর্শে বসা থেকে তাওবা করলো।
প্রিয় মাদানী মুন্না ও মাদানী মুন্নীরা! আপনি ও খারাপ বন্ধু থেকে বেচেঁ থাকুন এবং এমন বন্ধুদের সাথে কখনো উঠা বসা করবেন না যারা নামায ছেড়ে দেয়,ফিল্ম দেখে, গান শুনে, বড়দের সাথে বেয়াদবী করে, অন্যদের কষ্ট দেয়, এবং গালী দেয়। বরং যারা নামাযের অনুসারী, সুন্নাতের উপর আমলকারী, বড়দেরকে সম্মানকারী এবং নেকীর কথা বলে এমন ব্যক্তিদের সাথে বসুন, নেককারদের সংস্পর্শ আপনাকে আরো অধিক নেককার বানিয়ে দিবে
>>>বইয়ের বাকি অংশ পড়ুন: দুধ পানকারী মাদানী মুন্না (২), দুধ ও দুধ পান বিষয়ক আলোচনা।
--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা “মুহাম্মদ ইলয়াস আত্তার” কাদেরী রযভী কর্তৃক ছোটদের জন্য লিখিত ৫৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত "দুধ পানকারী মাদানী মুন্না" নামক রিসালার ১৩-৩৪ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই রিসালাটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন। অন্যকে উপহার দিন।
ইসলামীক বাংলা বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for supporting.