ইস্তেখারার শিক্ষা দিতেন
মদীনার তাজেদার, হুযুরে আনওয়ার صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم লোকদেরকে গণনার পরিবর্তে ইস্তেখারার শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বণির্ত , রাসূলে আকরম, নূরে মুজাসসাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কোরআনের সূরা শিক্ষা দেওয়ার ন্যায় আমাদেরকে যে কোন বিষয়ে ইস্তেখারা করার শিক্ষা দিতেন। (বুখারী, কিতাবুত তাহাজ্জুদ, বাবু মা’জা ফিত তাতউয়ি মাছনা মাছনা, ১/ ৩৯৩, হাদীস- ১১৬২)
প্রসিদ্ধ মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ হাদীস শরীফটির আলোকে লিখেন: ইস্তেখারা মানে হলো মঙ্গল কামনা করা বা কারো নিকট হতে ভাল পরামর্শ গ্রহণ করা। যেহেতু ইস্তেখারার নামাযে এবং দোয়ায় বান্দা যেনো স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার নিকট পরামর্শ চায় যে, অমুক কাজটি করবো কি করবো না! তাই একে ইস্তেখারা বলা হয়। (মিরাতুল মানাজীহ, ২/ ৩০১)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
যেই ব্যক্তি ইস্তেখারা করবে সে ক্ষতির শিকার হবে না
হুযূরে আকরাম, নূরে মুজাসসাম, শাফেয়ে বনী আদম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: مَا خَابَ مَنِ اسْتَخَارَ، وَلَا نَدِمَ مَنِ اسْتَشَارَ، وَلَا عَالَ مَنِ اقْتَصَدَ অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইস্তেখারা করবে, সে ব্যক্তি ক্ষতির শিকার হবে না। যে ব্যক্তি পরামর্শের মাধ্যমে কাজ করে, সে আক্ষেপের শিকার হবে না আর যে ব্যক্তি মধ্যম পন্থা অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি কখনো অভাবে পড়বে না। (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, কিতাবুস সালাত, বাবুল ইস্তেখারা, ২/ ৫৬৬, হাদীস- ৩৬৭০)
ইস্তেখারা না করার ক্ষতি
প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: مِنْ شِقَاوَةِ ابْنِ آدَمَ تَرْكُهُ اسْتِخَرَةَ اللهِ অর্থাৎ বান্দার দূর্ভাগ্যের মধ্যে একটি যে, আল্লাহ তায়ালার নিকট ইস্তেখারা না করা। (তিরমিযী, কিতাবুল কদর, বাবু মা’জা ফির রযা বিল কযা, ৪/ ৬০, হাদীস- ২১৫৮)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
কোন কোন কাজে ইস্তেখারা করা যায়?
কেবল ঐসব কাজের জন্য ইস্তেখারা হতে পারে, যা মুসলমানের রায়ের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন; ব্যবসায় বা চাকুরি থেকে কোনটি বেছে নিলে ভাল হয়? সফরের জন্য কোন দিনটি কিংবা কোন মাধ্যমটি বাছাই ভাল হবে? দোকান বা বাড়ি বেঁচাকেনা করলে ভাল হবে না কি ক্ষতি হবে? কোন জায়গায় বসবাস করা উত্তম হবে। বিয়ে শাদী কোথা থেকে করলে ভাল হবে? ইত্যাদি। যেসব কাজের ব্যাপারে শরীয়ত প্রকাশ্য বিধান দিয়ে দিয়েছে, সেসব কাজে ইস্তেখারা করা যাবে না। যেমন; পাঁচ ওয়াক্ত নামায, ধনী হওয়া সাপেক্ষে যাকাত আদায় করা, রমযান মাসের রোযা রাখা ইত্যাদি নিয়ে ইস্তেখারা করা যাবে না যে, আমি নামায পড়বো কি পড়বো না? যাকাত দিবো কি দিবো না? অনুরূপ মিথ্যা বলা, কারো অধিকার বিনষ্ট করা ইত্যাদি যেসব কাজে শরীয়ত নিষেধ করে দিয়েছে, সেগুলো করবো কি করবো না? বরং এ ধরনের সব কাজে শরীয়তের বিধান মেনে চলা আবশ্যক। তাছাড়া ইস্তেখারার জন্য এটাও শর্ত যে, সেই কাজটি জায়িয হতে হবে। নাজায়িয ব্যবসা ইত্যাদির জন্য ইস্তেখারা করা যাবে না।
হাকীমুল উম্মত, মাওলানা মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ ইস্তেখারা সম্পর্কে হাদীস পাকের ব্যাখ্যা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: শর্ত হলো, কাজটি হারামও হতে পারবে না, ফরযও না, ওয়াজিবও না, দৈনন্দিন কাজও না। অতএব, নামায পড়া না পড়া নিয়ে, হজ্ব করা না করা নিয়ে, আহার করা না করা নিয়ে, পানি পান করা না করা নিয়ে কোন ইস্তেখারা করা যাবে না। (মিরাতুল মানাজীহ, ২/৩০১)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
কাজটি করার ইচ্ছা দৃঢ় না হওয়া
ইস্তেখারার আদবের মধ্যে এটাও রয়েছে যে, ইস্তেখারা এমন কাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে, যা করার ব্যাপারে মনের মধ্যে পরিপূর্ণ সিদ্ধান্ত না হওয়া। কেননা যে কোন দিকে যদি মনের টান চলে যায়, তাহলে ইস্তেখারার মাধ্যমে বিশুদ্ধ ফলাফল লাভ করা বড়ই দুরূহ হয়ে যাবে। (ফতহুল বারী, ১২/১৫৫)
সদরুশ শরীয়ত, বদরুত তরিকত হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বাহারে শরীয়ত ১ম খন্ডের ৬৮৩ পৃষ্ঠায় লিখেন: ইস্তেখারার সময় ততক্ষণ পর্যন্ত থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত এক পক্ষের প্রতি নিজের মনের ভাব পূর্ণ ভাবে স্থির হয়ে না যায়। (বাহারে শরীয়ত, ১/৬৮৩)
প্রসিদ্ধ মুফাসসির হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ লিখেন: আবশ্যক যে, সেই কাজের পুরোপুরি সিদ্ধান্ত না নেওয়া। কেবল মনোভাব সৃষ্টি হওয়া। যেমন; কোন ব্যবসা-বাণিজ্য, বিয়ে শাদী, ঘরের ভিত্তি স্থাপন ইত্যাদির সাধারণ ইচ্ছা সৃষ্টি হওয়া এবং মনে মনে সন্দেহ থাকে যে, এতে কি ভাল হবে, না কি মন্দ হবে। তবেই ইস্তেখারা করবে। (মিরাতুল মানাজীহ, ২/৩০১)
ইস্তেখারার উদ্দেশ্য হলো মঙ্গল কামনা করা। তাই ইস্তেখারা করে নেওয়ার পর সেই অনুযায়ী কাজ করা উত্তম। তবে হ্যাঁ! কোন কারণে যদি কাজ করা না হয়, তবু গুনাহগার হবে না।
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
ইস্তেখারার বিভিন্ন পদ্ধতি
যেহেতু ইস্তেখারা হলো রব তায়ালার নিকট মঙ্গল কামনা করা কিংবা কারো কাছ থেকে মঙ্গলের জন্য পরামর্শ করারই নাম, তাই বিভিন্ন দোয়ার মাধ্যমে মহান প্রতিপালকের নিকট ইস্তেখারা করা হয়ে থাকে। এর মধ্য থেকে একটি দোয়া নামাযের পরে করা হয়ে থাকে। তাই সেই নামাযকে ইস্তেখারার নামায বলা হয়।
ইস্তেখারার নামাযের পদ্ধতি
কেউ যদি কোন কাজ করার ইচ্ছা করে, তবে দুই রাকাত নফল নামায পড়বে। তারপর দোয়া করবে:
اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ وَاَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَاَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيْمِ فَاِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا اَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلَا اَعْلَمُ وَاَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ اَللّٰهُمَّ اِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ اَنَّ هٰذَا الْاَمْرَ خَيْرٌ لِّىْ فِىْ دِيْنِىْ وَمَعَاشِىْ وَعَاقِبَةِ اَمْرِىْ اَوْ قَالَ عَاجِلِ اَمْرِىْ وَاٰجِلِهٖ فَاقْدِرْهُ لِىْ وَيَسِّرْهُ لِىْ ثُمَّ بَارِكْ لِىْ فِيْهِ وَاِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ اَنَّ هٰذَا الْاَمْرَ شَرٌّ لِّىْ فِىْ دِيْنِىْ ومَعَاشِىْ وَعَاقِبَةِ اَمْرِىْ اَوْ قَالَ عَاجِلِ اَمْرِىْ وَاٰجِلِهٖ فَاصْرِفْهُ عَنِّىْ وَاصْرِفْنِىْ عَنْهُ وَاقْدِرْلِىَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ رَضِّنِىْ بِهٖ
হে আল্লাহ! আমি তোমার জ্ঞানের মাধ্যমে তোমার নিকট মঙ্গল কামনা করছি এবং তোমার ক্ষমতার মাধ্যমে ক্ষমতা প্রার্থনা করছি এবং তোমার নিকট তোমার মহান করুণা প্রার্থনা করছি, কেননা তুমিই ক্ষমতার একক মালিক। আমি কোন ক্ষমতাই রাখি না। তুমিই সব কিছু জ্ঞাত, আমি কিছুই জানি না। তুমিই গোপন বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখো। হে আল্লাহ! তোমার জানা মতে, এই কাজটিতে (যেই কাজের ইচ্ছা আমি করেছি) যদি আমার দ্বীন, ঈমান, জীবন এবং স্বপক্ষে ফলাফল স্বরূপ দুনিয়া ও আখিরাতে আমার জন্য উত্তম হয়ে থাকে, তবে একে আমার জন্য লিখে দাও এবং আমার জন্য সহজতর করে দাও, এতে আমার জন্য বরকত দাও। হে আল্লাহ! তোমার জ্ঞান অনুযায়ী কাজটি যদি আমার পক্ষে আমার দ্বীন, ঈমান, জীবন এবং স্বপক্ষে ফলাফল স্বরূপ দুনিয়া ও আখিরাতে মন্দ হয়ে থাকে, তবে তুমি তা আমার থেকে এবং আমাকে তা থেকে দূরে সরিয়ে দাও এবং যা আমার জন্য ভাল হয়, সেটিকে আমার ভাগ্যে জুটিয়ে দাও এবং আমাকে এতে করে দাও। (বুখারী, কিতাবুত তাহাজ্জুদ, ১/৩৯৩, হাদীস- ১১৬২ ও রদ্দুল মুহতার, কিতাবুস সালাত, ২/৫৬৯)
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: হাদীস শরীফে বর্ণিত এই দোয়াটিতে ‘هٰذَا الْاَمْرَ’ এর স্থলে ইচ্ছা হলে আপনার চাহিদার নাম নিতে পারেন, কিংবা এর পরে। অর্থাৎ আরবি জানা থাকলে এই স্থলে নিজের চাহিদার কথা উল্লেখ করবে। (রদ্দুল মুহতার, ২/৫৭০) অর্থাৎ আরবি জানা থাকলে এই স্থলে নিজের চাহিদার কথা উল্লেখ করবে। তার মানে ‘ هٰذَا الْاَمْرَ ’ এর স্থলে নিজের চাহিদা উল্লেখ করবে। যেমন; ‘ هذَاا لسَّفر ’ বা ‘ هٰذَاالنِّکَاح ’ কিংবা ‘ هٰذَا التِجَارَة ’ বা ‘هٰذَاالْبَيْعَ ’ বলবে আর যদি আরবি জানা না থাকে, তবে ‘هٰذَا الْاَمْرَ’ বলে মনে মনে নিজের সেই কাজটির খেয়াল করবে যার জন্য ইস্তেখারা করা হচ্ছে।
ইস্তেখারার নামাযে কোন কোন সূরা পাঠ করবে
মুস্তাহাব হলো এই দোয়াটির আগে পরে اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ এবং দরূদ শরীফ পাঠ করা। প্রথম রাকাতে সূরা কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পাঠ করবে। কোন কোন মাশায়িখ বলেন: প্রথম রাকাতে
وَرَبُّكَ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ وَيَخْتَارُ ط مَا كَانَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ ط سُبْحٰنَ اللَّهِ وَتَعٰلٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ (68) وَرَبُّكَ يَعْلَمُ مَا تُكِنُّ صُدُورُهُمْ وَمَا يُعْلِنُونَ (69)
(২০তম পারা, আল কাসাস, ৬৮ও ৬৯)
এবং দ্বিতীয় রাকাতে
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُولُہٗ أَمْرًا أَن يَّكُوْنَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ط وَمَن يَعْصِ اللهَ وَرَسُولَہٗ فَقَدْ ضَلَّ ضَلٰلًا مُّبِينًا (36)
(২২ তম পারা, আল আহযাব, আয়াত ৩৬) পাঠ করবে। (রদ্দুল মুহতার, ২/৫৭০)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
ইঙ্গিত কীভাবে পাবে
কোন কোন মাশায়িখ থেকে বর্ণিত রয়েছে, উক্ত দোয়াটি পাঠ করে ওযু সহকারে কিবলামুখি হয়ে ঘুমিয়ে পড়বে। স্বপ্নে যদি সাদা কিংবা সবুজ কিছু দেখে তবে কাজটি উত্তম হবে। পক্ষান্তরে কালো বা লাল দেখলে খারাপ হবে, কাজটি পরিহার করবে। (রদ্দুল মুহতার, ২/৫৭০)
প্রসিদ্ধ মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত, হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এই মাসআলাটির বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন: কোন কোন সূফী বলেন: ঘুমাবার সময় যদি দুই রাকাত নামায পড়ে এই দোয়াটি পাঠ করে, তারপর ওযু সহকারে কিবলামুখি হয়ে ঘুমিয়ে যায়, তবে স্বপ্নে যদি সাদা বা সবুজ প্রবাহিত পানি বা আলো দেখে, তবে সাফল্যের নিদর্শন। পক্ষান্তরে যদি কাদাযুক্ত পানি কিংবা অন্ধকার দেখে তবে বিফল ও ব্যর্থ হওয়ার নিদর্শন, এই আমলটি সাত দিন করবে। اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ এই সময়ের মধ্যে স্বপ্নের মাধ্যমে ইঙ্গিত পেয়ে যাবে। (মিরাতুল মানাজীহ, ২/৩০২)
ইস্তেখারা সাতবার করা উত্তম
উত্তম হলো সাতবার ইস্তেখারা করা। একটি হাদীস শরীফে উল্লেখ রয়েছে, “হে আনাস! তুমি যখন কোন কাজের ইচ্ছা করবে, তোমার প্রতিপালকের নিকট তা নিয়ে সাতবার ইস্তেখারা করবে। তারপর তোমার হৃদয়ের মধ্যে দৃষ্টি দিয়ে দেখবে, সেখানকার কী অবস্থা। নিঃসন্দেহে এতে অত্যন্ত মঙ্গল রয়েছে।” (রদ্দুল মুহতার, কিতাবুস সালাত, ২/৫৭০ ও আমলুল ইয়াউমি ওয়াল লাইলি লিইবনি সুন্নী, ৫৫০ পৃষ্ঠা)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
যদি ইঙ্গিত পাওয়া না যায় তবে ...?
ইস্তেখারা করার পর স্বপ্নে যদি কোন ইঙ্গিত পাওয়া না যায়, তবে নিজের অন্তরের দিকে ধ্যান করতে হবে। অন্তরে যদি কোন পাকা-পোক্ত ইচ্ছা স্থির হয়ে যায়, অথবা কোন কাজ করা বা না করার ব্যাপারে নিজে থেকে মনোভাব পাল্টে যায়, তখন একেই ইস্তেখারার ফল বলে মনে করতে হবে এবং অন্তরের সমাধিক অগ্রাধিকার অনুযায়ী আমল করতে হবে।
কেবল দোয়ার মাধ্যমেও ইস্তেখারা করা যেতে পারে
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ ফতোওয়ায়ে শামীতে লিখেন: وَلَوْ تَعَذَّرَتْ عَلَيْهِ الصَّلٰوةُ اِسْتَخَارَ بِالدُّعَاءِ অর্থাৎ এবং কারো পক্ষে যদি ইস্তেখারার নামায পড়া কষ্টসাধ্য হয়ে যায়, সে যেনো কেবল দোয়ার মাধ্যমেই ইস্তেখারা করে নেয়। (রদ্দুল মুহতার, কিতাবুস সালাত, মতলব ফি রাকাতাইল ইস্তেখারা, ২/৫৭০)
ইস্তেখারার সংক্ষিপ্ত দোয়াসমূহ
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস হযরত আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ মিরকাতুল মাফাতীহ কিতাবে লিখেন: কারো যদি কাজের তাড়া থাকে, সে যেনো কেবল এটি বলে নেয়; (১) اَللّٰهُمَّ خِرْلِىْ وَاخْتِرْلِىْ وَاجْعَلْ لِىِ الْخِيَرَةَ অর্থাৎ (আল্লাহ! আমার কাজটি তুমি উত্তম হে করে দাও, আমার জন্য দুইটি কাজের মধ্য থেকে উত্তমটিকে নির্বাচন করে তাতে আমার জন্য মঙ্গল রেখে দাও)। অথবা বলবে; (২) اَللّٰهُمَّ خِرْلِىْ وَاخْتِرْلِىْ وَلَا تَكِلْنِىْ اِلٰى اِخْتِيَارِىْ অর্থাৎ (হে আল্লাহ! আমার কাজটি তুমি উত্তম করে দাও, আমার জন্য দুইটি কাজের মধ্য থেকে উত্তমটিকে নির্বাচন করে দাও আর আমাকে আমার পছন্দের উপর ছেড়ে দিও না)। (মিরকাত মাফাতিহ, কিতাবুস সালাত, বাবুত তাতউয়ি, ৩/৪০৬)
বুযুর্গানে দ্বীনদের رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِمْ পক্ষ থেকে ইস্তেখারা করার আরো কতিপয় পদ্ধতী ও ওযিফা বর্ণিত রয়েছে, যেমন; তাসবীহর মাধ্যমে ইস্তেখারা করা, যা সংক্ষিপ্ত সময়ে সম্পন্ন হয়ে যায়।
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
ইস্তেখারা করার পরও যদি ক্ষতির শিকার হতে হয়?
অনেক সময় মানুষ আল্লাহ তায়ালার নিকট ইস্তেখারা করে যে, তার জন্য যে কাজটিতে ভাল হবে, সেটি যেনো হয়ে যায়, তখন আল্লাহ তায়ালা তার জন্য সেই কাজটি দান করেন, যা তার পক্ষে উত্তম। কিন্তু বাহ্যিক দৃষ্টিতে কাজটি সম্পর্কে সে বুঝতে পারে না, তখন তার মনের মধ্যে এমন একটি ভাব আসে যে, আমি তো আল্লাহ তায়ালার নিকট সেই কাজটিই চেয়েছিলাম, যা আমার পক্ষে উত্তম হয়, কিন্তু যে কাজটির ইঙ্গিত পেলাম, তা তো উত্তম বলে মনে হচ্ছে না। এই কাজটিতে আমার জন্য ক্ষতি আর দুঃখই দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু কিছু দিনের ব্যবধানে সব ধরনের পরিণতি যখন চোখের সামনে উদ্ভাসিত হতে থাকে, তখন সে বুঝতে পারে যে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য যে কাজটি নির্বাচন করেছিলেন, বাস্তবে সেটিই তার জন্য উত্তম। হযরত সায়্যিদুনা মাকহূল আযদী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বর্ণনা করেন: আমি হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا কে বলতে শুনেছি: মানুষ আল্লাহ তায়ালার নিকট ইস্তেখারা করে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য কোন একটি কাজ পছন্দ করেন, পরে লোকটি আপন প্রতিপালকের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যায়, কিন্তু লোকটি যখন তার ফলাফলের দিকে দৃষ্টিপাত করে, তখন বুঝতে পারে যে, এই কাজটিই তার জন্য উত্তম। (কিতাবুর যুহদ লি ইবনি মোবারক, মা রওয়াহু নাঈম বিন হাম্মাদ, বাবুন ফির রযা বিল কযা, ৩২ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১২৮)
এর একটি উদাহরণ লক্ষ্য করুন, কোন শিশু মায়ের সামনে জ্বরে ছটফট করছে, সে বলছে: আমি এটি খাবো, সেটি খাবো। মা-বাবা জানে যে, এই সময়ে সেই বস্তু তার জন্য ক্ষতিকর, তাই তারা তাকে সেই বস্তু খেতে দেয়না বরং তিক্ত ঔষধই খেতে দেয়, সন্তান কিন্তু তার জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে এটা মনে করে যে, তার মা-বাবা তার প্রতি অত্যাচার করেছে। আমি যা চেয়েছিলাম, তা আমাকে দেওয়া হয়নি, তার পরিবর্তে আমাকে তিক্ত ঔষধ খাইয়েছে। শিশুটি নিজের জন্য তিক্ত ঔষধকে উত্তম বলে মনে করছে না, কিন্তু বড় হওয়ার পর শিশুটির যখন জ্ঞান-বুদ্ধি হবে, তখন সে বুঝতে পারবে যে, সে তো মৃত্যুই চেয়েছিলো। অথচ তার মা-বাবা তার জন্য সুস্থ জীবনের পথ খুঁজছিলো। আমাদের মহান প্রতিপালক তো আপন বান্দাদের জন্য তাদের মা-বাবার চাইতেও অতুলনীয় দয়াময়। তাই আল্লাহ তায়ালা তাঁর মুসলমান বান্দাকে সেই জিনিসটিই দান করেন, যা ফলাফলের দিক থেকে তার জন্য উত্তম হয়। কখনো কখনো সেটি যে উত্তম, তা দুনিয়াতেও বুঝে আসে আর কতগুলো বুঝা যাবে আখিরাতে।
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
এই রিসালার বাকী লিখাগুলো পড়ুন এখানে
--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা “মুহাম্মদ ইলয়াস আত্তার” কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত ৯৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত "অশুভ প্রথা" নামক রিসালার ২৯-৩৬ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই রিসালাটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন। অন্যকে উপহার দিন।
ইসলামীক বাংলা বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন