বিভাগ সমূহ

মঙ্গলবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৮

মৃত ব্যক্তির অসহায়ত্ব

লাশ এবং গোসলদাতা 
প্রখ্যাত আলিম ও মুহাদ্দিস এবং প্রসিদ্ধ তাবেয়ী বুযুর্গ হযরত সায়্যিদুনা সুফিয়ান ছওরী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ থেকে বর্ণিত; “মৃত ব্যক্তি সবকিছু জানতে পারে। এমনকি (সে) গোসলদাতাকে বলে: তোমাকে আল্লাহ্ তাআলার শপথ দিচ্ছি, তুমি গোসলদানে আমার সাথে নম্রতা প্রদর্শন করো। আর যখন তাকে খাটে রাখা হয়, তখন তাকে বলা হয়: “নিজের ব্যাপারে মানুষের মন্তব্যগুলো শুনো। (শরহুস্ সুদূর, ৯৫ পৃষ্ঠা) 

মৃত ব্যক্তি কি বলে? 
আমীরুল মু’মিনীন হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বর্ণনা করেন; মদীনার তাজেদার, উভয় জগতের সরদার, নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “মৃত ব্যক্তিকে যখন খাটে রাখা হয় এবং তাকে নিয়ে এখনোও তিন কদম পথ অতিক্রম করা হয়েছে মাত্র, তখন সে বলে, আর তার কথা মানুষ এবং জ্বীন ব্যতীত আল্লাহ্ তাআলা যাদের চান তাদেরকে শুনান। মৃত ব্যক্তি বলে: “হে আমার ভাইয়েরা! এবং হে আমার লাশ বহনকারীরা! তোমাদেরকে যেন দুনিয়া ধোকায় না ফেলে, যেভাবে আমাকে ধোঁকায় ফেলেছিল। আর সৃষ্টি যেন তোমাদেরকে খেলায় (মগ্ন) না রাখে। যেভাবে সে আমাকে মগ্ন রেখেছিল। আমি যা কিছু উপার্জন করেছি তা নিজের ওয়ারিশদের জন্য রেখে যাচ্ছি। আল্লাহ্ তাআলা কিয়ামতের দিন আমার কাছ থেকে হিসাব নিবেন। আর আমাকে পাকড়াও করবেন। অথচ (আজ) তোমরা আমাকে বিদায় জানাচ্ছ এবং আমাকে আহবান করছো (অর্থাৎ আমার জন্য কান্নাকাটি করছ)। (শরহুস সুদুর, ৯৩ পৃষ্ঠা, কিতাবুল কুবুর মাআ মাওসুআতে ইবনে আবিদ দুনিয়া, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৬১ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৫) 


জিতনে দুনিয়া সেকান্দর থাহ্ চলা, জব গিয়া দুনিয়া ছে খালি হাত থাহ্। 

সারা জীবনের ব্যস্ততা 
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ঐ সময় কেমন একাকীত্ব হবে, যখন রুহ শরীর থেকে পৃথক হয়ে যাবে। আর ঐ সময় কি রকম নিঃসঙ্গতা হবে, যখন শরীর থেকে দামী কাপড়গুলো খুলে নেয়া হবে, গোসলদাতা গোসল করাবে সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করিয়ে দেওয়া হবে। (আর তখন) কেমন কঠিন দুঃখের ব্যাপার হবে যখন লাশ কাঁধে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। হায়!হায়! “এই দুনিয়া” যাকে সাজানোর জন্য সারা জীবন ব্যস্ততায় কাটিয়ে ছিলাম, যার জন্য রাতের ঘুম ত্যাগ করেছি। নানা রকম বিপদের সম্মুখীন হয়েছি। হিংসুকদের শত বাঁধা উপেক্ষা করে নিজের জীবনবাজী রেখে সম্পদ উপার্জন করেছি। খুব বেশি ধন-সম্পদ জমা করতে ব্যস্ত ছিলাম। যে ঘরকে মজবুত করে নির্মাণ করেছিলাম, তাকে নানা রকম ফার্নিচার দ্বারা সজ্জিত করেছি। আজ এসব কিছু ত্যাগ করে বিদায় নিতে হচ্ছে। আহ্! দামী পোষাকগুলো হ্যাংগারে টাঙ্গানোই থেকে যাবে। আর গাড়ী থাকলে গ্যারেজেই থেকে যাবে। খেলাধুলার সামগ্রী, জীবনযাপনের সামগ্রী এবং নানারকমের জিনিসপত্র যেখানে যা আছে সেখানেই পড়ে থাকবে। আর মৃত ব্যক্তির অসহায়ত্ব ঠিক তখনই আরো চরম পর্যায়ে পৌঁছবে, যখন তাকে উজ্জল ঝিলিমিলি আলো থেকে “অস্থায়ী আনন্দ ও খুশিতে মাতোয়ারার স্থান”এ ধ্বংসশীল ঘর থেকে বের করে অন্ধকার কবরে রেখে দেওয়ার জন্য তার খাট বহনকারীরা তাকে কাঁধে নিয়ে কবরস্থানের দিকে পথ চলতে থাকবে। 

আ-লমে ইনকিলাব হে দুনিয়া, চন্দ লামহো কা খাওয়াব হে দুনিয়া। 
ফখর কিউ দিল লাগায়ে ইছ ছে, নেহী আচ্ছি, খারাব হে দুনিয়া। 

কবরের অন্তর জাগ্রতকারী কাহিনী 
হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আব্দুল আযিয رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ একটি জানাযার সাথে কবরস্থানে তাশরীফ নিয়ে গেলেন। (তিনি) সেখানে একটি কবরের নিকট বসে গভীর চিন্তা-ভাবনায় মগ্ন হয়ে গেলেন। কেউ (তাঁকে) জিজ্ঞাসা করল: হে আমীরুল মু’মিনীন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ! আপনি এখানে একাকী কেন বসে আছেন? বললেন: “এখনই একটি কবর আমাকে চিৎকার দিয়ে আহ্বান করলো এবং বললো: হে ওমর বিন আব্দুল আযিয رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ আমার কাছ থেকে কেন জিজ্ঞাসা করছেন না যে, আমি আমার ভিতরে আসা ব্যক্তির সাথে কি রকম আচরণ করে থাকি? আমি সে কবরকে বললাম: “আমাকে অবশ্যই বলো, সে বলতে লাগলো: যখন কেউ আমার ভিতর আসে তখন আমি তার কাফনকে ছিন্ন ভিন্ন করে শরীরকে টুকরো টুকরো করে দিই। অতঃপর তার মাংস খেয়ে ফেলি। আপনি কি আমার নিকট একথাও জিজ্ঞাসা করবেন না যে, আমি তার জোড়াগুলোর সাথে কেমন আচরণ করি?” আমি বললাম: “এটাও বলো?” সে বলতে লাগলো: হাতদ্বয়কে কব্জী থেকে, হাঁটুকে পায়ের গোড়ালী থেকে, আর পায়ের টাখনুকে পা থেকে পৃথক করে দিই।” এতটুকু বলার পর, হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আব্দুল আযিয رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ অঝোর নয়নে কাঁদতে শুরু করলেন। যখন তার কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসল তখন এভাবে শিক্ষণীয় মাদানী ফুল বিতরন করতে রইলেন। হে ইসলামী ভাইয়েরা! এই দুনিয়াতে আমাদেরকে অতি স্বল্প সময় থাকতে হবে। যারা এ দুনিয়ায় ক্ষমতা সম্পন্ন রয়েছে, তারা পরকালে খুবই লাঞ্চিত ও অপমানিত হবে। আর যারা এ জগতে ধনী রয়েছে, তারা পরকালে নিঃস্ব ফকির হয়ে যাবে। (আখিরাতে) যুবক বৃদ্ধ হয়ে যাবে, আর যারা জীবিত আছে, তারা মৃত্যু বরণ করবে। দুনিয়া যখন তোমার দিকে আসবে তখন সে যেন তোমাকে ধোকায় নিমজ্জিত না করে। কেননা, তুমি জান যে, এটি অতি শ্রীঘ্রই বিদায় নিয়ে যাবে। কুরআন শরীফ তিলাওয়াতকারীরা কোথায় গিয়েছে? বায়তুল্লাহ্ শরীফের হজ্ব পালনকারীরা কোথায় গিয়েছে? রমজান শরীফের রোযা আদায়কারীগণ কোথায় গিয়েছে? কবরের মাটি তাদের শরীরকে কি অবস্থা করেছে? কবরের কীটপতঙ্গ তাদের মাংসের কি পরিণতি করেছে? তাদের হাঁড় ও জোড়াগুলোর সাথে কি অবস্থা হয়েছে? আল্লাহ্ তাআলার শপথ! (যে বেআমল) দুনিয়াতে আরামের নরম বিছানায় থাকতো, কিন্তু এখন নিজের পরিবার পরিজন ও (ঘর, বাড়ী) দেশ ছেড়ে আরামের পর সংকীর্ণ (কবরের বাসিন্দা) হয়ে গেছেন। আর তাদের পুত্ররা অলি গলিতে এদিক সেদিক ঘুরাফিরা করছে। কেননা, তাদের বিধবা স্ত্রীরা অন্য স্বামী গ্রহণ করে পুনরায় সংসার করছে। তাদের আত্মীয়-স্বজনরা তাদের ঘর-বাড়ীগুলো দখল করে নিয়েছে এবং সম্পদগুলো নিজেদের মাঝে বন্টন করে নিয়েছে। আল্লাহ্ তাআলার শপথ! তাদের মাঝে কতেক সৌভাগ্যবান এমনও রয়েছে। যারা কবরে (নানা ধরণের) নেয়ামতের স্বাদ উপভোগ করছেন। আর কেউ কেউ এমনও আছে যারা কবরে আযাবের মধ্যে গ্রেফতার রয়েছে। আফসোস! শত হাজার আফসোস! ওহে বোকা! যে আজ মৃত্যুর সময় নিজের পিতার, কখনো নিজ পুত্রের আবার কখনো আপন ভাইয়ের চোখ বন্ধ করছে, তাদের মধ্যে কাউকে গোসলও করিয়েছে, কাউকে কাফনও পরিধান করিয়েছে, (আবার) কারো জানাযার খাটও বহন করেছে এবং কাউকে কবরের সংকীর্ণ অন্ধকারময় গর্তে দাফন করেছে। (স্মরণ রাখুন!) কাল এসব কিছু আপনার সাথেও কার্যকর হবে। হায়! আমার যদি জানা থাকতো, কোন্ অঙ্গটি (কবরে) সর্বপ্রথম নষ্ট হয়ে যাবে। অতঃপর হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আব্দুল আযিয رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কাঁদতেই রইলেন এবং কাঁদতে কাঁদতে শেষ পর্যন্ত বেহুশ হয়ে গেলেন এবং এক সপ্তাহ পরেই দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিলেন। (আররাওজাতুল ফায়িক, ১৩৮ পৃষ্ঠা) হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ “ইহ্ইয়াউল উলুম” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন: “হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আব্দুল আযিয رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর (পবিত্র) মুখ দিয়ে এই আয়াতে কারীমা জারি ছিলো: 

تِلْكَ الدَّارُ الْاٰخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوًّا فِي الْأَرْضِ وَلَا فَسَادًا ۚ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এই পরকালের ঘর আমি ঐ সকল ব্যক্তিদের জন্য তৈরী করে রেখেছি যারা জমিনে অহংকার করে না। ফ্যাসাদ সৃষ্টি করতে চায় না। আর ভাল পরিনাম রয়েছে খোদাভীতি অর্জনকারীদের জন্য। (পারা- ২০, সুরা- কাসাস, আয়াত- ৮৩) (ইহ্ইয়াউল উলুম, ৫ম খন্ড, ২৩০ পৃষ্ঠা) 

রাজকীয় মৃত্যু 
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আব্দুল আযিয رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর হৃদয় বিদারক ঘটনাটিতে বিবেকবানদের জন্য উৎকৃষ্ট শিক্ষণীয় উপদেশ রয়েছে। রাজকীয় মৃত্যুর আরেকটি ঘটনা শুনুন। যেমন হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ “ইহ্ইয়াউল উলূম” গ্রন্থে বর্ণনা করেন; মৃত্যুর সময় কেউ খলিফা আব্দুল মালিক বিন মরওয়ান থেকে জিজ্ঞাসা করলো: “এই সময় আপনি নিজেকে কেমন পাচ্ছেন?” তিনি উত্তর দিলেন। “হুবহু ঐরূপ যেমনটি কুরআন মজীদের সপ্তম পারায় সুরাতুল আনআম এর ৯৪ নং আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেছেন: 

وَلَقَدْ جِئْتُمُونَا فُرَادٰى كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَّتَرَكْتُم مَّا خَوَّلْنَاكُمْ وَرَاءَ ظُهُورِكُمْ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: “এবং নিশ্চয় তোমরা আমার নিকট একাই আসবে যেভাবে আমি তোমাদেরকে একাই সৃষ্টি করেছিলাম এবং যে ধন-সম্পদ আমি তোমাদেরকে দান করেছি অবশ্যই তা পিছনে ত্যাগ করে আসবে”। (পারা- ৭, সূরা- আনআম, আয়াত- ৯৪) (ইহ্ইয়াউল উলূম, ৫ম খন্ড, ২৩০ পৃষ্ঠা) 

রাজত্ব কাজে আসলো না 
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ “ইহ্ইয়াউল উলূম” গ্রন্থে বর্ণনা করেন:“প্রসিদ্ধ আব্বাসীয় খলিফা হারুনূর রশিদ رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ তখন তিনি নিজের কাফনকে বার বার উলট পালট করে দুঃখ নিয়ে দেখতে রইলেন এবং ২৯ পারার সুরাতুল হা-ক্কাহ্ এর এ আয়াত শরীফগুলো পড়তে রইলেন: 

مَا أَغْنَىٰ عَنِّي مَالِيَهْ ۜ (28) هَلَكَ عَنِّي سُلْطَانِيَهْ (29)

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: “আমার সম্পদ আমার কোন কাজে আসল না। আমার সকল ক্ষমতা ধ্বংস হয়েই গেলো।“ (পারা-২৯, সূরা- হা-ক্কাহ্, আয়াত- ২৮-২৯) (ইয়াহ্ইয়াউল উলূম, ৫ম খন্ড, ২৩১ পৃষ্ঠা) 


দুনিয়াতে আসার উদ্দেশ্য 
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! বাস্তব কথা এই যে, এই দুনিয়াতে এসে আমরা কঠিন পরীক্ষায় জড়িয়ে পড়েছি। আমাদের আগমনের উদ্দেশ্য অন্য রকম ছিলো এবং (আমরা) হয়ত তার বিপরীত অন্য কিছু বুঝতে শুরু করেছি। আমাদের জীবন যাপনের ধরণ এ কথা প্রমাণ করে যে, আল্লাহ্ তাআলার পানাহ! আমাদেরকে কখনো মৃত্যু বরণ করতে হবে না। মনে রাখবেন! আমরা এখানে স্থায়ীভাবে থাকতে পারবো না। এই দুনিয়াতে আসার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র সম্পদ উপার্জন করা বা দুনিয়াবী জ্ঞান ও বিজ্ঞান এর বিষয়ে ডিগ্রী অর্জন করা এবং শুধু দুনিয়ার উন্নতি অর্জন করাও নয়, ১৮ পারার সূরাতুল মু’মিনুন-এর আয়াত- ১১৫-তে ইরশাদ হচ্ছে: 

أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُونَ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: ”তোমরা কি এ ধারণা করে নিয়েছ যে আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি। আর তোমাদেরকে আমার নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে না?” (পারা- ১৮, সূরা- মু’মিনুন, আয়াত- ১১৫) 

ইয়াদ রাখ হার আন আখির মওত হে, বনতু মাত আনজান আখির মওত হে। 
মরতে জাতে হে হাজারো আদমী, আকেল ও নাদান আখির মওত হে। 
কিয়া খুশি হো দিল কো চান্দে জিসত ছে, গমজদা হে জান আখির মওত হে। 
মুলকে ফানি মে ফানা হার শায়কো হে, ছুন লাগা কর কান আখির মওত হে, 
বারহা ইলমি তুঝে ছামঝা চুকে, মান ইয়া মত মান আখির মওত হে। 

মন্ত্রীত্ব কাজে আসবে না 
আল্লাহ্ তাআলা মানুষকে তাঁর ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। সে যদি নিজের জীবনের উদ্দেশ্য পূরণ করার কাজে সফলতা অর্জন না করে এবং কিয়ামতের দিন গুনাহের পাহাড় নিয়ে পরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলার দরবারে উপস্থিত হয়, তখন আল্লাহ্ তাআলার অসন্তুষ্টি অবস্থায় তাঁর দুনিয়ার অগণিত সম্পদও তাকে আপন প্রতিপালতের গযব ও শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না। দুনিয়াবী জ্ঞান ও বিজ্ঞান, কারখানা, হাতিয়ার, দুনিয়ার উৎস, উচ্চ পদমর্যাদা, মন্ত্রীত্ব, দুনিয়ার আরাম-আয়েশ, সুনাম, শক্তি, দুনিয়ার সম্মান আল্লাহ্ তাআলার দরবারে কৃতকার্য করতে পারবে না। নেতৃত্বের নেশায় পাগল হয়ে একে অপরের দোষত্রুটিকে প্রকাশকারীরা, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড- উত্তপ্তকারীরা, আর মুসলমানদের হক সমুহ নষ্টকারীদের জন্য চিন্তার বিষয় যে, যদি গুনাহের কারণে আল্লাহ্ তাআলা নারাজ হয়ে যায়, আর তাঁর প্রিয় হাবীব صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ও অসন্তুষ্ট হয়ে যায় এবং ঈমান ও নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে ঐ সকল কঠিন বিপদ সমূহ তার নিকট উপস্থিত হবে যা কখনো সমাধান হবে না। আল্লাহ্ তাআলা ৩০ পারায় সূরাতুল হুমাযাহ তে ইরশাদ করেন: 

بِسۡمِ اللہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ -وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ (1) الَّذِي جَمَعَ مَالًا وَعَدَّدَهُ (2) يَحْسَبُ أَنَّ مَالَهُ أَخْلَدَهُ (3) كَلَّا ۖ لَيُنبَذَنَّ فِي الْحُطَمَةِ (4) وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ(5) نَارُ اللَّهِ الْمُوقَدَةُ (6) الَّتِي تَطَّلِعُ عَلَى الْأَفْئِدَةِ (7) إِنَّهَا عَلَيْهِم مُّؤْصَدَةٌ (8) فِي عَمَدٍ مُّمَدَّدَةٍ (9) 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: ”আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি, যিনি পরম দয়ালু ও করুনাময়। (১) ধ্বংস ঐ ব্যক্তির জন্য যে লোক সম্মুখে বদনামী করে এবং অগোচরে পাপাচার করে। (২) যে ব্যক্তি সম্পদ সঞ্চয় করেছে এবং গুনে গুনে রেখেছে (৩) সে কি একথা বুঝে নিয়েছে যে, তার সম্পদগুলোই তাকে এ দুনিয়াতে চিরস্থায়ী করে রাখবে। (৪) তা কখনোই নয়। বরং তাকে পদদলিত করার মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে। (৫) আপনি কি জানেন ঐ পদদলিতকারী কি? (৬) তা হলো আল্লাহর প্রজ্জলিত আগুন। (৭) যা অন্তর সমূহকে তীরের মতই ভেদ করে দিবে। (৯) নিশ্চয় তাকে তাদের উপরই সুনির্দিষ্ট করা হবে(১০) লম্বা লম্বা খুঁটিতে। (পারা- ৩০, সূরা- হুমাযা) 



ভিত্তিহীন চারটি দাবী 
হযরত সায়্যিদুনা শকিক বলখী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বর্ণনা করেন: “মানুষ চারটি বিষয় দাবী করে কিন্তু তাদের আমল তাদের দাবীর পরিপন্থী। যথা- (১) তারা মুখে বলে, আমরা আল্লাহ্ তাআলার বান্দা। কিন্তু তাদের আমল বা কার্যকলাপ স্বাধীন ব্যক্তির মতো। (২) তারা বলে: আল্লাহ্ তাআলা একমাত্র আমাদেরকে রিযিক দেওয়ার মালিক। কিন্তু তারা অনেক ধন-সম্পদ একত্রিত করে নেওয়ার পরেও মনে প্রাণে সন্তুষ্ট হতে পারে না।(৩) তারা আরো বলে: “দুনিয়া থেকে আখিরাত উত্তম।” কিন্তু তারা শুধুমাত্র দুনিয়ার উন্নতি অর্জনেই সচেষ্ট রয়েছে। (৪) তারা বলে থাকে; “আমাদেরকে অবশ্যই একদিন মৃত্যুবরণ করতে হবে। কিন্তু তাদের জীবন ধারণের নমুনা এমন যে, কখনো তাদেরকে মরতে হবে না।” (উয়ূনুল হিকায়াত, ৭৫ পৃষ্ঠা) 

প্রথম দাবী “আমি আল্লাহ্ তাআলার বান্দা” 
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! বাস্তবিকই চিন্তার বিষয় যে, নিঃসন্দেহে প্রত্যেক মুসলমান একথা স্বীকার করে, আমি আল্লাহ্ তাআলার বান্দা। আর প্রতীয়মান রয়েছে, “বান্দা” অনুগত হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ মুসলমানের কাজ-কর্ম স্বাধীন ব্যক্তির মতো। দেখুন! যে অপরের কর্মচারী হয়, সে তার মালিকের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করে। নিঃসন্দেহে আমরা আল্লাহ্ তাআলার বান্দা। আর তার দেওয়া রিযিকই খাচ্ছি। কিন্তু আফসোসের বিষয়, আমাদের কাজ (কামিল) পরিপূর্ণ বান্দাদের মতো নয়। তাঁর হুকুম হচ্ছে; “নামায পড়ো” কিন্তু আমরা তাতে অলসতা করি। রমযানের রোযা পালনের হুকুম রয়েছে কিন্তু আমাদের একটা অংশ তা পালন করে না। এভাবে আল্লাহ্ তাআলার অন্যান্য আদেশ পালনেও (আমাদের) অনেক অলসতা রয়েছে। 

দ্বিতীয় দাবী “আল্লাহ্ তাআলা একমাত্র রিযিকদাতা” 
নিঃসন্দেহে একমাত্র আল্লাহ্ তাআলাই রিযিকের যিম্মাদার। কিন্তু তার পরেও রিযিক অর্জনের ধরণ খুবই আশ্চর্যজনক। আল্লাহ্ তাআলাকে রায্যাক (রিযিক দাতা) মেনে এবং রিযিক দাতা হিসেবে স্বীকার করার পরও জানিনা কেন মানুষেরা সূদের লেনদেন করে।সূদে ঋন নিয়ে ফ্যাক্টরী চালায় এবং ঘর বাড়ি নির্মাণ করে। যখন আল্লাহ্ তাআলাকে রিযিকদাতা হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছেন, তখন কোন্ বিষয়টি ঘুষ নেওয়ার জন্য বাধ্য করছে? কি কারণে ভেজাল দ্রব্য ধোঁকাবাজি করে বিক্রি করা হচ্ছে? কেন চুরি ডাকাতি ও লুটতরাজের ধারাবাহিকতা বহাল রয়েছে? রিযিকের এই হারাম পন্থাগুলো শেষ পর্যন্ত কেন আপন করে রেখেছেন? 

তৃতীয় দাবী “ইহকাল থেকে পরকাল উত্তম” 
নিঃসন্দেহে ইহকাল থেকে পরকাল অধিক উত্তম। একথা দাবী করার পরেও শত কোটি আফসোস! আমাদের কর্মকান্ড হচ্ছে শুধুমাত্র দুনিয়াকে উত্তম ও উজ্জল করা। কেবল দুনিয়ার সম্পদ সঞ্চয় করার কাজেই ব্যস্ত রয়েছি। অধিকাংশ মানুষ দুনিয়ার সম্পদে বিভোর দেখা যাচ্ছে এবং তাদের জীবন ধারণের অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে, দুনিয়া থেকে কখনো বিদায় নিবে না। 

চর্তুথ দাবী “অবশ্যই একদিন মরতে হবে” 
নিঃসন্দেহে “আমাদেরকে একদিন অবশ্যই মরতে হবে।” একথা স্বীকার করার পরেও আফসোস! শত কোটি আফসোস! জীবন যাপনের ধরণ এরকম যেন কখনো মরতেই হবে না। দেখুননা হযরত সায়্যিদুনা হাসান বসরী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ ‘আমাদেরকে অবশ্যই একদিন মরতে হবে’ এ দাবীর বাস্তব প্রতিচ্ছবি ছিলেন। তার জীবন যাপনের অবস্থা এই ছিলো, সর্বদা এমনভাবে ভীত থাকতেন, যেন তাকে মৃত্যুর সংবাদ শুনিয়ে দেওয়া হয়েছে। (ইহ্ইয়াউল উলুম, ৪র্থ খন্ড, ২৩১ পৃষ্ঠা থেকে সংক্ষেপিত)যাকে বর্তমানে “গ্রেফতারী পরওয়ানা” বলা হয়। অথচ এই অর্থে প্রত্যেকের জন্য গ্রেফতারী পরওয়ানা জারী হয়ে গেল কারণ যেই জন্ম লাভ করেছে, তাকে অবশ্যই মৃত্যুবরণ করতে হবে। প্রত্যেক প্রাণী সৃষ্টি হওয়ার পূর্বেই যেন “চুড়ান্ত তালিকায়” এসে গেছে। অর্থাৎ জন্ম লাভ করার পূর্বেই তার রিযিক, বয়স নির্ধারিত হয়ে গেছে। বরং তার দাফন হওয়ার স্থানও নির্ধারিত হয়ে গেছে। মায়ের পেটে মানুষের আকৃতির নমুনা তৈরীর জন্য ফিরিস্তা, জমিনের সেই অংশ থেকে মাটি সংগ্রহ করে যেখানে ঐ বান্দা জীবন অতিবাহিত করার পর মৃত্যুবরণ করে দাফন হবে। শুনুন! শুনুন! বান্দা নিজের নির্ধারিত রিযিক গ্রহণ করে জীবন অতিবাহিত করার পর মানুষের কাধেঁর উপর খাটের মধ্যে আরোহণ করে যখন কবরস্থানের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন কি বলে। যেমন

মৃত ব্যক্তির আহ্বান 
মদীনার তাজেদার, হাবীবে পরওয়ারদিগার, হুযুরে আনওয়ার صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “ঐ সত্ত্বার শপথ! যার কুদরতী হাতে আমার প্রাণ, যদি মানুষেরা মৃত ব্যক্তির ঠিকানা দেখে নিতো এবং তার কথা শুনতে পেতো তখন তারা মৃত ব্যক্তিকে ভুলে গিয়ে নিজেদের জন্য কান্না করতো। (আর) যখন মৃত ব্যক্তিকে খাটের উপরে রেখে উঠানো হয়, তখন তার রূহ নড়াচড়া করে খাটের উপর বসে আহ্বান করতে থাকে: “হে আমার পরিবার পরিজন! দুনিয়া তোমাদের সাথে (যেন) এমন ভাবে না খেলে, যেমন ভাবে সে আমার সাথে খেলেছে, আমি হালাল এবং হারাম সম্পদ জমা করেছিলাম এবং আবার ঐ সম্পদ অপরের জন্য রেখেও এসেছি।এর উপকার তারাই ভোগ করবে, আর এর ক্ষতি আমাকে ভোগ করতে হবে। তাই যা কিছু আমার উপর ঘটেছে তাকে (তোমরা) ভয় করো। (অর্থাৎ শিক্ষা গ্রহণ করো।) (আত তাযকিরাতু লিল কুরতুবী, ৭৬ পৃষ্ঠা) 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! খুবই চিন্তার বিষয়, বাস্তবিকই প্রত্যেক জানাযা বিশেষ মুবাল্লিগ স্বরূপ (প্রচারক)। সে যেন আমাদেরকে আহ্বান করে বলছে: হে আমার পরে (দুনিয়াতে) বসবাসকারী লোকেরা! যেভাবে আমি আজ দুনিয়া ত্যাগ করে চলে যাচ্ছি। অচিরেই তোমাদেরকেও আমার পিছনে পিছনে চলে আসতে হবে। অর্থাৎ জানাযা যেন আমাদেরকে পথ প্রদর্শন করে যাচ্ছে। 

জানাযা আগে বাড়কে কেহ রাহা হে আয় জাহা ওয়ালো, 
মেরে পিছে চলে আও তোমহারা রেহনুমা মে হো। 

মৃত ব্যক্তির সাথে কথাবার্তা 
শরহুস সুদূর কিতাবে বর্ণিত রয়েছে; হযরত সায়্যিদুনা সায়িদ বিন মুসাইয়্যব رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেছেন: “একদা আমরা হযরত সায়্যিদুনা আলী মুরতাজা শেরে খোদা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর সঙ্গে মদীনা শরীফ এর একটি কবরস্থানে গেলাম। হযরত মাওলা আলী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কবরবাসীদেরকে সালাম করলেন এবং বললেন: “হে কবরবাসীরা! তোমরা কি নিজেদের সংবাদ শুনাবে, নাকি আমরা শুনাবো? সায়্যিদুনা সায়িদ বিন মুসাইয়্যব رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বললেন: “আমরা সকলেই কবর থেকে এর আওয়াজ শুনতে পেলাম।আর কেউ একজন বলছেন: “হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনিই সংবাদ প্রদান করুন, আমাদের মৃত্যুর পর কি হয়েছে? হযরত মাওলা আলী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বললেন: “শুনে নাও! তোমাদের (রেখে যাওয়া) সম্পদ বন্টন হয়ে গেছে। তোমাদের স্ত্রীরা অন্য স্বামী গ্রহণ করে নিয়েছে, তোমাদের সন্তানেরা ইয়াতিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেছে। (আর) যে ঘরকে তোমরা অনেক মজবুত করে তৈরী করেছিলে সেখানে আজ তোমাদের শত্রুরা বসবাস করছে।” এখন তোমরা তোমাদের অবস্থা শুনাও! এ কথা শুনার পর একটি কবর থেকে আওয়াজ আসলো: “হে আমীরুল মু’মিনীন! (আমাদের) কাফন ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে, (আমাদের) চুলগুলো ঝড়ে পড়ে এদিক সেদিক হয়ে গেছে, আমাদের শরীরের চামড়া টুকরা টুকরা হয়ে গেছে। আমাদের চোখ দুটি বেয়ে চেহারায় এসে গেছে এবং আমাদের নাকের ছিদ্র থেকে পুঁজ বের হচ্ছে আর আমরা যা কিছু আগে পাঠিয়েছিলাম (অর্থাৎ যা আমল করেছি) তা আমরা পেয়েছি। যা কিছু পিছনে রেখে এসেছি তা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি।( শরহুস সুদূর, ২০৯ পৃষ্ঠা। ইবনে আসাকির, ২য় খন্ড, ৩৯৫ পৃষ্ঠা) 

T.V রেখে মৃত্যুবরণ করায় কবরে শাস্তি 
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! মৃত্যুর পরে কি রেখে যাচ্ছি, তার উপরও মানুষের গভীর চিন্তা করা উচিত। অবৈধ ব্যবসা বা জুয়ার আসর অথবা মদের দোকান কিংবা মিউজিক সেন্টার বা ফ্লিম ইন্ডাসট্রি অথবা সিনেমা ঘর কিংবা নাট্যমঞ্চ বা গুনাহের সরঞ্জাম ইত্যাদি রেখে মারা গেলে, তখন তার পরিণাম খুবই ভয়াবহ ও কষ্ঠদায়ক হবে। একটি শিক্ষণীয় ঘটনা শুনুন:একজন ইসলামী ভাই লন্ডন থেকে একটি চিঠি পাঠিয়ে ছিলো, যার সারাংশ নিজের ভাষায় বর্ণনা করার চেষ্টা করছি: বাবুল ইসলাম (সিন্ধু প্রদেশে) বসবাসকারী একজন বুযুর্গ বলেছেন: “এক রাতে আমি কবরস্থানের ভিতরে (গিয়ে) একটি তাজা কবরের পাশে বসে গেলাম, যাতে শিক্ষা অর্জন হয়। বসে বসে আমার ঘুম এসে গেল এবং কবরের অবস্থা আমার কাছে প্রকাশ হয়ে গেলো। দেখতে পেলাম ঐ কবরবাসী আগুনে জ্বলছে এবং চিৎকার করে করে সে আমাকে বলছে: “আমাকে বাঁচাও! আমাকে বাঁচাও।” আমি বললাম: “আমি কিভাবে বাঁচাতে পারি? সে বললো: কিছুদিন আগেই আমার মৃত্যু হয়েছে। আমার যুবক ছেলে এসময় টিভি তে সিনেমা দেখছে। যখনই সে এমন করে, তখন আমার উপর কঠিন আযাব শুরু হয়ে যায়। আল্লাহর দোহাই আমার যুবক ছেলেকে বুঝাবেন যাতে বিলাসীতা পূর্ণ জীবন ধারণ করা ছেড়ে দেয়, সে যেন এ টিভি না দেখে। কেননা, সেটা আমি ক্রয় করেছিলাম, আর এখন এর কারণে আযাবে ফেঁসে গেছি। আফসোস! আমি সন্তানদেরকে দুনিয়াবী শিক্ষা দিয়েছি, কিন্তু ইসলামী শিক্ষা দিইনি। তাদেরকে গুনাহ থেকে বিরত রাখিনি এবং কবর ও আখিরাতের ব্যাপারে সাবধান করিনি। কবরবাসী নিজের নাম ও ঠিকানা বলে দিলেন। সুতরাং আমি সকালে পার্শ্ববর্তী গ্রামে অবস্থিত মরহুমের ঘরে গেলাম। যুবক তখন ঐ রাতে টিভিতে সিনেমা দেখার (কথা) স্বীকার করলেন। আমি যখন তাকে আমার স্বপ্ন শুনালাম তখন মর্মাহত হয়ে কাঁদতে লাগলেন এবং নিজ ঘর থেকে টিভি বের করে দিলেন। 

প্রিয় নবী ﷺ এর মোবারকবাদ 
একজন মেজরের বর্ণনা; আমি তখন ‘মংগলা ডেম’ স্থানে অবস্থান করতাম “জাহলাম” এর ইসলামী ভাইয়েরা সুন্নাতেভরা বয়ানের কয়েকটি ক্যাসেট আমাকে উপহার স্বরূপ প্রদান করে। আর সে ক্যাসেটগুলো ঘরে চালানো হলো। তাতে বাবুল ইসলাম সিন্ধু প্রদেশের ঐ বুজুর্গ ব্যক্তির ঘটনাও ছিলো। এ ঘটনা শুনে আমরা সবাই আল্লাহ্ তাআলার আযাবে ভয় পেয়ে গেলাম এবং সর্ব সম্মতিক্রমে টিভিকে ঘর থেকে বের করে দিলাম। আল্লাহর শপথ! টিভি ঘর থেকে বের করে দেয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পর আমার সন্তানের মা (আমার স্ত্রী) স্বপ্নে অদৃশের সংবাদ দাতা, মদীনার তাজেদার, হুযুরে আনওয়ার صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দীদার লাভে ধন্য হলেন এবং প্রিয় আক্বা, দোজাহানের বাদশাহ, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করছেন: “মোবারক হোক। কেননা, তোমাদের ঘর থেকে টিভি বের করে দেয়ার আমলটি আল্লাহ্ তাআলার দরবারে কবুল হয়ে গেছে।” এগুলো ঐ সময়ের ঘটনাবলী যখন দা’ওয়াতে ইসলামী মহিলা এবং গান-বাজনা ইত্যাদি থেকে পবিত্র ১০০% ইসলামী “মাদানী চ্যানেল” এর যাত্রা শুরু করেনি। “মাদানী চ্যানেল” ব্যতীত দুনিয়া ব্যাপী এটা লিখা পর্যন্ত আমার জানা মতে এখনও কোন বিশুদ্ধ শরয়ী চ্যানেল নেই। তাই বর্ণিত ঘটনাবলী ঐ সময়ের প্রেক্ষাপটে একেবারে সঠিক। কেননা, ঐসব লোকেরা গুনাহে ভরা অনুষ্ঠান দেখতো। এখনো বিভিন্ন চ্যানেলে গুনাহে ভরা অনুষ্ঠান দেখে এমন ব্যক্তিদের জন্য এটাই অনুরোধ যে, T.V কে ঘর থেকে বের করে দিবেন এবং এর মাধ্যমে যতো গুনাহ করেছে, সেগুলো থেকে তাওবাও করবে।হ্যাঁ! যদি দেখতেই হয় বরং অবশ্যই দেখুন এবং এজন্য এমন ব্যবস্থা করুন যে, যেন আপনার T.V তে শুধু মাদানী চ্যানেলই চলে। কুরআন তিলাওয়াত, নাত শরীফ, সুন্নাতে ভরা বয়ান সমূহ এবং রং বেরঙ্গের মাদানী ফুলের বরকতে আপনার ঘর শান্তির নীড়ে পরিণত হবে। অন্যান্য চ্যানেল বন্ধ করার তিনটি পদ্ধতি লক্ষ্য করুন: মেনুইল টিউনের মাধ্যমে নিজের কাঙ্কীত চ্যানেলকে অন্যান্য সকল চ্যানেলের উপর সেট (SET) করে দিন। টিভিতে প্রদত্ত ব্লক সিস্টেমের মাধ্যমে অন্যান্য চ্যানেল ব্লক করে দিন। আজকাল নতুন ডিভাইসের মধ্যে নির্দিষ্ট চ্যানেলের পাসওয়ার্ড লাগাতে পারেন। 

বাহানা করিও না 
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এবার দেখুন! কোন সৌভাগ্যবান এমন রয়েছে, যে নিজের ঘর থেকে T.V বের করে বা শুধুমাত্র এতে মাদানী চ্যানেলের জন্য নির্দিষ্ট করে নেয়। আর আল্লাহর পানাহ! কোন দূর্ভাগা এমন রয়েছে, যে গুনাহে ভরা অনুষ্ঠান সহ T.V রেখে মারা যায় এবং আল্লাহ্ না করুক! আল্লাহ্ না করুক! আল্লাহ্ না করুক! কবরে গিয়ে ফেঁসে যায়! হয়তঃ শয়তান আপনাকে এই কুমন্ত্রনা দিতে পারে যে, বুঝতে পারছিনা, দাওয়াতে ইসলামী ওয়ালারা কোথা থেকে এরকম “ঘটনাবলী” সংগ্রহ করে আনে, T.V তো মাদানী চ্যানেলের পূর্বেও অমুক অমুকের ঘরে বিদ্যমান ছিলো। দেখুন! আমাকে সন্তুষ্ট করার জন্য এই দলীল যথেষ্ট নয়। আপনি আমার বর্ণনাকৃত ঘটনাবলী বিশ্বাস করুন বা না করুন কিন্তু আল্লাহকে ভয়কারী ব্যক্তির অন্তর চিৎকার করে করে বলবে যে, এটা (টিভি) সাধারণত গুনাহের মিটারকে খুব দ্রুত পরিচালনাকারী।এর অনর্থক অনুষ্ঠান সমূহ সমাজকে নষ্ট ও ধ্বংস করে দিয়েছে, চরিত্র খারাপ করে দিয়েছে। লজ্জাহীনতা, পর্দাহীনতা এই টিভির কারণেই অনেক বেশি ব্যাপক হয়েছে এবং কিছু স্বল্পতা ছিলো তা ডিস-এন্টিনা পরিপূর্ণ করে দিয়েছে। T.V ই একমাত্র আমাদের স্ত্রী-কন্যাকে নতুন নতুন খারাপ খারাপ ফ্যাশন শিখিয়েছে। আমাদের যুবক ছেলে সন্তানদেরকে দুঃশ্চরিত্র প্রেমে পরিপূর্ণ নাটক দেখিয়ে যুবতীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদের জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আর এই কৌশলে আমাদের কন্যাদেরকেও নষ্ট করে দিয়েছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের অবস্থা এমন করে দিয়েছে যে, তারা সঙ্গীতের তালে পায়ের টাখনু নাড়তে ও নাচতে দেখা যায়, এরপর যদিও আংশিক অসম্পূর্ণতা ছিলো তা ইন্টারনেট এর মাধ্যমে পূর্ণ করতে লাগলো। মুসলমান ধ্বংসের অতল গভীরে তলিয়ে যাচ্ছে। ইসলামের শত্রুদের শক্তি এ পর্যায়ে শোচনীয়ভাবে পিছনেই পড়ে গেছে এবং তারা (মুসলমানদের) এত বেশি বিলাসিতাপূর্ণ ও প্রমোদ প্রেমিক এর অভ্যস্থ করে দিয়েছে যে, আল্লাহর পানাহ! এখন মুসলমানরা অমুসলিমদের পূর্ণরূপে মুখাপেক্ষী হয়ে গেছে। অথচ এমন একটি সময় ছিলো, শুধুমাত্র ৩১৩ জন মুসলমান বদর ময়দানে এসে দুষ্ট কাফিরদের ১ হাজার সৈন্যকে লাঞ্চিতভাবে পরাজিত করেছিল এবং তাদের শান এমন ছিলো যে, 

গোলামানে মুহাম্মদ জান দেনে ছে নেহী ডরতে, 
ইয়ে ছরকাট জায়ে ইয়া রেহ জায়ে ওহ পরওয়া নেহী করতে। 

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! নিজের গুনাহ থেকে সত্যিকার তাওবা করুন এবং এটাও অঙ্গিকার করুন: “আগামীতে গুনাহ থেকে বেঁচে সৎকাজ করবো।” ভীত হয়ে তাওবা করার দিকে ধাবিত হওয়ার জন্য আসুন কয়েকটি গুনাহের শাস্তি শ্রবন করি:

ভয়ানক উপত্যকা 
জাহান্নামে ‘গাই’ নামক একটি ভয়ানক উপত্যকা রয়েছে। যার উত্তপ্ততা থেকে জাহান্নামের অন্যান্য উপত্যকাগুলো আশ্রয় চায়। এই উপত্যকা ব্যাভিচারী, মদপান কারী, সূদখোর, মিথ্যা সাক্ষী দাতা, মাতাপিতার অবাধ্য ও বেনামাযীর জন্য রয়েছে। (রুহুল বয়ান, ৫ম খন্ড, ৩৪৫ পৃষ্ঠা) 

টাক ওয়ালা সাপ 
হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত; মদীনার তাজেদার, উভয় জগতের সরদার, হুযুরে আনওয়ার صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যাকে আল্লাহ্ তাআলা সম্পদ দান করেছেন এবং সে ঐ সম্পদের যাকাত প্রদান করলো না, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে একটি টাক ওয়ালা সাপের আকৃতিতে পরিণত করা হবে। আর ঐ সাপটির দুইটি তিলক থাকবে (যা তার মারাত্মক বিষাক্ত হওয়ারই নমুনা) এবং সে সাপটিকে ঐ ব্যক্তির গলার হার বানিয়ে দেয়া হবে যেটা নিজের চোয়াল দিয়ে ঐ ব্যক্তিকে দংশন করতে থাকবে আর বলবে: আমি হচ্ছি তোমার সম্পদ, তোমার ধন ভান্ডার।” (সহীহ বোখারী, ১ম খন্ড, ৪৭৪ পৃষ্ঠা, হাদীস-১৪০৩) 

চল্লিশ দিন পর্যন্ত নামায কবুল হবে না 
মদ পানকারীরা কান লাগিয়ে শুনুন এবং থর থর করে কেঁপে উঠুন: রাসূলুল্লাহ্ صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে মদ পান করবে চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামায কবুল হবে না। যদি সে তাওবা করে আল্লাহ্ তাআলা তার তাওবা কবুল করবেন। অতঃপর যদি ২য় বার পুনরায় মদ পান করে তবে পুনরায় পরবর্তী চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামায কবুল হবে না।সে যদি তাওবা করে, তবে আল্লাহ্ তাআলা তার তাওবা কবুল করবেন। অতঃপর যদি ৩য় বার মদ পান করে তখনও পুনরায় পরবর্তী চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামায কবুল হবে না। যদি সে তাওবা করে তবে আল্লাহ্ তাআলা তার তাওবা কবুল করবেন। পুনরায় যদি সে ৪র্থ বার মদ পান করে তখনও পরবর্তী চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামায কবুল হবে না। এরপর সে যদি তাওবা করে আল্লাহ্ তাআলা তার তাওবা কবুল করবেন না এবং তাকে নাহরে খাবাল (অর্থাৎ দোযখীদের পূঁজের নদী) থেকে পান করানো হবে।” (তিরমিযী, ৩য় খন্ড, ৩৪১ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৮৬৯) 

শেরে খোদা আলী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর মদের প্রতি ঘৃণা 
আমীরুল মু’মিনীন হযরত সায়্যিদুনা আলী মুরতাজা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ,শেরে খোদা মদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন: “যদি কোন কুপে মদের একটি ফোটা পড়ে এবং তার উপর মিনার নির্মাণ করা হয়, তবে আমি ঐ মিনারে আযান দেবনা। আর যদি কোন সাগরে মদের একটি ফোটা পড়ে অতঃপর ঐ সাগরটি শুকিয়ে যায় এবং তাতে ঘাঁস জন্মায়, তবে ঐ ঘাসে আমি আমার পশু চরাবো না। (রুহুল বয়ান, ১ম খন্ড, ৩৪০ পৃষ্ঠা) 

অত্যাচারী পিতা-মাতারও আনুগত্য 
পিতা-মাতার অবাধ্যদেরকে ভয়ে তাওবা করে নেওয়া এবং মাতা পিতার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে তাদেরকে সন্তুষ্ট করে নেয়া প্রয়োজন নতুবা অবস্থা করুণ হবে।মদীনার তাজেদার, মাহবুবে পরওয়ারদিগার, রাসূলদের সরদার صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তির সকাল আপন মাতা-পিতার আনুগত্য করা অবস্থায় হয়, তার জন্য সকালেই জান্নাতের দুইটি দরজা খুলে যায়। আর মাতা পিতার মধ্য থেকে একজনও (জীবিত) থাকে, তবে একটি দরজা খুলে যায়। আর (যদি) যে ব্যক্তি মাতা পিতার ব্যাপারে আল্লাহর নাফরমানী করে সন্ধ্যা (অতিবাহিত) করলো, তার জন্য সকালেই জাহান্নামের দুইটি দরজা খুলে যায়। আর মাতা-পিতা থেকে (যদি) একজনই (জীবিত) থাকে, তবে একটি দরজা খুলে যায়। এক ব্যক্তি আরয করলো: “যদিও মাতা-পিতা তার উপর জুলুম করে।” ইরশাদ করলেন: যদিও জুলুম করে, যদিও জুলুম করে, যদিও জুলুম করে।” (শুয়াবুল ঈমান, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২০৬ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৭৯১৬) 

ওয়াদা ভঙ্গকারীর শাস্তি 
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যদি মাতা পিতা শরীয়াত বিরোধী আদেশ দেয় তখন সে ব্যাপারে তার কথার আনুগত্য করা যাবে না। যেমন- হারাম সম্পদ উপার্জন করে আনা অথবা দাঁড়ি মুড়ানোর নির্দেশ দেয় তখন তার এ কথা মানা যাবে না। গুনাহের কথায় বা কাজে মাতা পিতার আনুগত্যকারী গুনাহগার এবং জাহান্নামের হকদার হবে। যে কথায় কথায় ওয়াদা করে নেয় কিন্তু শরীয়াত সম্মত কারণ ছাড়া পূর্ণ করে না, তার জন্য খুবই চিন্তার বিষয়। যেমন- মক্কা মদীনার সুলতান, প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে কোন মুসলমানের সাথে ওয়াদা ভঙ্গ করে তার উপর আল্লাহ্ তাআলা ও ফিরিস্তাগণ এবং সকল মুসলমানের লানত বর্ষিত হয়। আর তার কোন ফরয ও নফল (ইবাদত) কবুল হবে না। (বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড, ৬১৬ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৮৭০) 

পেটের মধ্যে সাপ 
মদীনার তাজেদার, সকল নবীদের সরদার, হুযুরে আনওয়ার صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “মেরাজের রাতে আমাকে এমন একটি গোত্রের নিকট ভ্রমণ করানো হয়েছে, যাদের পেট ছোট কক্ষের মত ছিলো তাতে সাপে ভরা ছিলো, যা পেটের বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিল আমি জিজ্ঞাসা করলাম: “হে জিব্রাঈল! এরা কোন লোক? তখন তিনি বললেন:“এরা ঐসব লোক যারা সূদ খেতো।” (ইবনে মাজাহ্, ৩য় খন্ড, ৭১ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২২৭৩) 

৩৬ বার যিনার চেয়েও জঘন্য 
আল্লাহ্ তাআলার মাহবুব, প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّمইরশাদ করেছেন: “সূদের একটি দিরহাম (টাকা) জেনে বুঝে খাওয়া ৩৬ বার যিনা (ব্যভিচার) করা থেকেও বেশি মারাত্মক এবং কঠিন গুনাহ্।” (সুনানে দারুল কুতনী, ৩য় খন্ড, ১৯ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৮১৯ 

জাহান্নামের পাথেয় 
হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত;“বান্দা যা হারাম সম্পদ উপার্জন করবে যদি (তা) খরচ করে তাতে কোন বরকত হবে না। আর যদি সদকা বা দান খয়রাত করে তা কবুল হবে না এবং যদি ঐ সম্পদ নিজের অবর্তমানে রেখে মারা যায়, তবে সেটা তার জন্য জাহান্নামের পাথেয় হিসাবে পরিণত হবে।” (মুসনাদে ইমাম আহমদ, ২য় খন্ড, ৩৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৬৭২) সূদের ধ্বংসলীলা এবং তা থেকে বেঁচে ব্যবসা ইত্যাদি করার পদ্ধতি সমূহের উপর জ্ঞান অর্জন করার জন্য মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ৯২ পৃষ্ঠা সম্বলিত রিসালা “সূদ ও এর প্রতিকার” অবশ্যই অধ্যয়ন করুন। আপনার চক্ষুদ্বয় খুলে যাবে। 

সুন্নাতের বাহার 
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! হুশে আসুন! উদাসীনতা থেকে জাগ্রত হোন! তাড়াতাড়ি গুনাহ থেকে তাওবা করে নিন। পশ্চিমা সভ্যতা থেকে দূরে থাকুন। প্রিয় আক্বা, মক্কী মাদানী মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর প্রিয় সুন্নাত সমূহ আঁকড়ে ধরুন। নিজের সংশোধনের সাথে সাথে অন্যান্যদের সংশোধনেরও মনমানসিকতা তৈরী করুন। নেকীর দাওয়াতের জন্য নিজেকে বিলীন করার আগ্রহ সৃষ্টি করুন। জান, মাল এবং সময় সবকিছু সুন্নাত জীবিত করার জন্য উৎসর্গ করার আগ্রহ বৃদ্ধি করুন এবং নিয়্যত করুন যে, “আমাকে নিজের এবং সারা দুনিয়ার মানুষের সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে ।” নিজের সংশোধনের জন্য মাদানী ইন্আমাতের উপর আমল এবং সারা দুনিয়ার মানুষের সংশোধনের জন্য মাদানী কাফেলায় সফর করা। তাবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর সুবাসিত মাদানী পরিবেশে অসংখ্য সুন্নাত শিখা এবং শিখানো হয়। প্রত্যেক বৃহস্পতিবার ইশার নামাযের পর আপনার শহরে অনুষ্ঠিত দা’ওয়াতে ইসলামীর সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় সারা রাত অতিবাহিত করার মাদানী অনুরোধ। আশিকানে রাসূলের মাদানী কাফেলায় সুন্নাত প্রশিক্ষণের জন্য সফর এবং দৈনন্দিন “ফিকরে মদীনা” করার মাধ্যমে মাদানী ইন্আমাতের রিসালা পূরণ করে আপনার এলাকার যিম্মাদারকে জমা করানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। এর বরকতে সুন্নাতের অনুসারী হওয়া, গুনাহের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হওয়া এবং ঈমান হিফাযতের জন্য চিন্তাভাবনা করার মনমানসিকতা সৃষ্টি হবে।প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! বয়ানের শেষে সুন্নাতের ফযীলত এবং কিছু সুন্নাত ও আদব বর্ণনার সৌভাগ্য অর্জন করছি। তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যে (ব্যক্তি) আমার সুন্নাতকে ভালবাসলো সে (মূলত) আমাকে ভালবাসলো, আর যে আমাকে ভালবাসলো সে জান্নাতে আমার সাথে থাকবে।” (ইবনে আসাকির, ৯ম খন্ড, ৩৪৩ পৃষ্ঠা)

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد

--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত ৩৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত "মৃত ব্যক্তির অসহায়ত্ব" নামক রিসালার ৩-২৬ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই রিসালাটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন। অন্যকে উপহার দিন।

যারা মোবাইলে (পিডিএফ) রিসালাটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন ।
ইসলামীক বাংলা বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন
মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন