বিভাগ সমূহ

মঙ্গলবার, ২৭ মার্চ, ২০১৮

জানাযার ১৫টি মাদানী ফুল

৪টি ফরমানে মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم 

১। যে (ব্যক্তি)কোন মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে মৃতের পরিবারের নিকট গিয়ে সমবেদনা প্রকাশ করলো, তবে আল্লাহ্ তাআলা তার জন্য এক ক্বিরাত সাওয়াব লিখে দিবেন, অতঃপর যদি মৃতের সাথে যায় তবে আল্লাহ্ তাআলা দুই ক্বিরাত প্রতিদান লিখেন, অতঃপর যদি মৃতের জানাযার নামায আদায় করে, তবে তিন ক্বিরাত, অতঃপর যদি কাফন-দাফনে উপস্থিত থাকে তবে চার ক্বিরাত আর প্রতি ক্বিরাত উহুদ পাহাড়ের সমান। (সংশোধিত ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৯ম খন্ড, ৪০১ পৃষ্ঠা। উম্দাতুল ক্বারী, ১ম খন্ড, ৪০০ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৪৭) 

২। মুসলমানের প্রতি অপর মুসলমানের ছয়টি হক রয়েছে, (তার মধ্যে একটি হলো) যখন মৃত্যু হবে তখন তার জানাযায় অংশ নেয়া। (মুসলিম, ১১৯২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৫ (২১৬২), সংক্ষেপিত) 

৩। “যখন কোন জান্নাতী ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে তখন আল্লাহ্ তাআলা ঐ সমস্ত লোকদের শাস্তি দিতে লজ্জাবোধ করেন যারা তার জানাযা নিয়ে চলে, যারা এর পেছনে চলে এবং যারা তার জানাযার নামায আদায় করে। (আল ফিরদাউস বিমাসুরিল খাত্তাব, ১০ম খন্ড, ২৮২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ১১০৮) 


৪। “মু’মিন বান্দার মৃত্যুর পর সর্বপ্রথম পুরস্কার হলো যে, তার জানাযায় অংশগ্রহণকারী সকলকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (মুসনাদুল বায্যার, ১১তম খন্ড, ৮৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৪৭৯৬ 

৫। হযরত সায়্যিদুনা দাউদ عَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام আল্লাহ্ তাআলার দরবারে আরয করলেন: ইয়া আল্লাহ্! যে শুধুমাত্র তোমার সন্তুষ্টির জন্য জানাযার সাথে ছিলো, তার প্রতিদান কি? আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করলেন: যেদিন সে মৃত্যুবরণ করবে, ফিরিশতা তার জানাযার সাথে থাকবে এবং আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো। (শরহুস সুদুর, ৯৭ পৃষ্ঠা) 

৬। হযরত সায়্যিদুনা মালিক বিন আনাস رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর ইন্তিকালের পর কেউ স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করলো: مَا فَعَلَ اللهُ بِكَ؟ অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলা আপনার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন? বললেন: একটি বাক্যের জন্য ক্ষমা করে দিয়েছেন, যা হযরত সায়্যিদুনা ওসমান গণী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ জানাযার লাশবাহী খাট দেখার পর বলতেন। (তা হলো:) سُبْحٰنَ الْحَىِّ الَّذِىْ لَايَمُوْتُঅর্থাৎ- ঐ পুতঃপবিত্র সত্তা যিনি জীবিত, যার কখনো মৃত্যু আসবে না।) সুতরাং আমিও জানাযার লাশবাহী খাট দেখে এরূপ বলতাম, আর এ বাক্য বলার কারণে আল্লাহ্ তাআলা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।” (ইহইয়াউল উলূম, ৫ম খন্ড,২৬৬ পৃষ্ঠা) 

৭। জানাযায় আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি, ফরয আদায়, মৃত ব্যক্তি ও তার আত্মীয়-স্বজনের অন্তর খুশী করা ইত্যাদি ভাল ভাল নিয়্যত সহকারে অংশগ্রহন করা উচিৎ। 

৮। জানাযার সাথে যাওয়ার সময় নিজের পরিণতির কথা ভাবতে থাকুন যে, আজকে যেমনিভাবে তাকে নিয়ে যাচ্ছে, তেমনিভাবে একদিন আমাকেও নিয়ে যাওয়া হবে, যেমনিভাবে একে কয়েক মণ মাটির নিচে দাফন করা হবে, ঠিক তেমনি আমাকেও দাফন করে দেওয়া হবে। এভাবে চিন্তা ভাবনা করা ইবাদত ও সাওয়াবের কাজ। 

৯। জানাযার লাশবাহী খাটকে কাঁধে নেয়া সাওয়াবের কাজ, আল্লাহর প্রিয় হাবীব, হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ্ صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم হযরত সায়্যিদুনা সা’আদ বিন মুয়ায رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর জানাযার লাশবাহী খাট কাঁধে উঠিয়েছিলেন। (তাবকাতুল কুবরা লিইবনে সা’আদ, ৩য় খন্ড, ৩২৯ পৃষ্ঠা। আল বিনায়া, ৩য় খন্ড, ৫১৭ পৃষ্ঠা) 

১০। হাদীসে পাকে বর্ণিত রয়েছে: “যে জানাযার লাশবাহী খাট নিয়ে চল্লিশ কদম চলবে তার চল্লিশটি কবীরা গুণাহ মোচন করে দেয়া হবে।” তাছাড়াও হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে:“যে জানাযার চার পায়া কাঁধে নেয় আল্লাহ্ তাআলা তাকে চিরস্থায়ী ক্ষমা করে দিবেন।” (জুহরা, ১৩৯ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ১৫৮,১৫৯ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮২৩ পৃষ্ঠা) 

১১। সুন্নাত হলো, একের পর এক চারো পায়া কাঁধে নেয়া এবং প্রতিবার দশ কদম চলা। পরিপূর্ণ সুন্নাত হচ্ছে, প্রথমে মাথার ডান পাশের পায়া কাঁধে নিবে অতঃপর ডান পায়ের দিকে, এরপর মাথার বাম পাশে অতঃপর বাম পায়ে এভাবে দশ কদম করে চলবে তবেই চল্লিশ কদম পূর্ণ হবে। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ১৬২ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮২২ পৃষ্ঠা) 

অনেকে জানাযার জুলুশে এভাবে বলে যে, প্রত্যেকে দু’দু’কদম করে চলুন! তাদের উচিৎ এভাবে ঘোষনা করা: “দশ দশ কদম করে চলুন’ 

১২। জানাযাকে কাঁধা দেয়ার সময় জেনে শুনে কষ্ট দেয়ার ভঙ্গিতে লোকদের ধাক্কা দেয়া, যেমন অনেকে বিশেষ ব্যক্তির জানাযায় এরূপ করে থাকে, এটা নাজায়িয এবং জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ। 

১৩। ছোট বাচ্চার জানাযা যদি একজনেই হাতে করে নিয়ে চলে তবে অসুবিধে নাই এবং একের পর একের হাতে নিতে থাকুন। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ১৬২ পৃষ্ঠা) মহিলাদের (বড় হোক বা ছোট) কোন প্রকার জানাযার সাথে যাওয়া নাজায়িয ও নিষেধ। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮২৩ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ১৬২ পৃষ্ঠা) 

১৪। স্বামী তার স্ত্রীর জানাযা কাঁধাও দিতে পারবে এবং কবরে নামাতেও পারবে এবং মুখও দেখতে পারবে। শুধুমাত্র গোসল দেয়া এবং সরাসরি শরীর স্পর্শ করা নিষেধ রয়েছে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮১২,৮১৩ পৃষ্ঠা) 

১৫। জানাযার সাথে উচ্চ আওয়াজে কালেমা তৈয়্যব বা কালেমা শাহাদত বা হামদ ও নাত ইত্যাদি পাঠ করা জায়িয। (দেখুন: ফতোওয়ায়ে রযবীয়্যা, ৯ম খন্ড, ১৩৯-১৫৮ পৃষ্ঠা) 

জানাযা আগে আগে কেহ রাহা হে এ্যয় জাহাঁ ওয়ালো! 
মেরে পিছে চলে আও তুমহারা রেহনুমা মে হোঁ 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد 

অসংখ্য সুন্নাত শিখার জন্য মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ২টি কিতাব (১) ৩১২ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “বাহারে শরীয়াত” ১৬তম খন্ড (২) ১২০ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব ‘সুন্নাত ও আদব’ হাদিয়া দিয়ে সংগ্রহ করে পাঠ করুন। সুন্নাত প্রশিক্ষনের একটি সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় আশিকানে রাসূলের সাথে সুন্নাতে ভরা সফর করা। 

লুটনে রহমতে কাফিলে মে চলো, শিখনে সুন্নাতে কাফিলে মে চলো। 
হোগি হাল মুশকিলে কাফিলে মে চলো, খতম হো শামতে, কাফিলে মে চলো। 

صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد

--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত ৪৮ পৃষ্ঠা সম্বলিত "মৃত ব্যক্তির অনুশোচনা" নামক রিসালার ৪২-৪৬ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই রিসালাটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন। অন্যকে উপহার দিন।

যারা মোবাইলে (পিডিএফ) রিসালাটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন ।
ইসলামীক বাংলা বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন
মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন