۞আল্লাহ্ তাআলার বাণী:
أَلَمْ نَجْعَلِ الْأَرْضَ كِفَاتًا (25) أَحْيَاءً وَأَمْوَاتًا (26)
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আমি কি জমিনকে একত্রকারী করিনি। তোমাদের জীবিত ও মৃতদের। (পারা- ২৯, সূরা- মুরসালাত, আয়াত- ২৫, ২৬)
এ আয়াতে মোবারাকার ব্যাখ্যায় “নূরুল ইরফান” ৯২৭ পৃষ্ঠার বর্ণিত আছে; এভাবে যে, জীবিতরা যমীনের পৃষ্ঠের উপর আর মৃতরা যমীনের পেটে একত্রিত আছে।
۞মৃতকে দাফন করা ফরযে কিফায়া (অথার্ৎ একজনও দাফন করে দেয় তবে সবাই দায়মুক্ত হয়ে যাবে, নতুবা যার কাছে সংবাদ পৌঁছেছিল আর দাফন করাইনি গুনাহগার হবে) মৃতকে যমীনে রেখে চারিদিক থেকে দেয়াল দিয়ে বন্ধ করে দেয়া জায়েয নেই। (বাহারে শরীয়তে, ১ম খন্ড, ৮৪২ পৃষ্ঠা)
۞কবর সমুহ আল্লাহ্ তাআলার নেয়ামত। কেননা, এতে মৃতকে দাফন করে দেয়া হয়। যাতে পশু এবং অন্যান্য বস্তগুলো তার খেয়ানত না করে।
۞নেককারদের কাছাকাছি দাফন করা চাই কেননা তার বরকতে সে উপকার লাভ করে থাকে। যদি আল্লাহর পানাহ আযাবের হকদার ও হয়ে যায়, তখন তিনি সুপারিশ করে থাকেন। ঐ রহমত যা নেককারের উপর অবতীর্ণ হয় তাকে ও আবৃত করে নেয়। হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে; নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “নিজের মৃতদেরকে নেককার লোকদের নিকটবর্তী দাফন করো।”(হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৯০ পৃষ্ঠা,) (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৯ম খন্ড, ৩৮৫ পৃষ্ঠা)
۞রাতে দাফন করার মধ্যে কোন সমস্যা নেই। (জাওয়াহের, ১৪১ পৃষ্ঠা)
۞একটি কবরে একজন থেকে বেশী প্রয়োজন ব্যতিত দাফন করা জায়েয় নেই, আর প্রয়োজন হলে করতে পারে।(বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮৪৬ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৬৬ পৃষ্ঠা)
۞ জানাযার খাট কবর থেকে কিবলার দিকে রাখা মুস্তাহাব যেন মৃতকে কিবলার দিক থেকে নামানো হয়।
۞কবরের পায়ের দিকে রেখে মাথার দিকে আনবেন না।( (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮৪৪ পৃষ্ঠা)
۞প্রয়োজন সাপেক্ষ দু বা তিন আর উত্তম হলো, শক্তিশালী ও নেককার লোক কবরে নামবে।(আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৬৬ পৃষ্ঠা)
۞প্রয়োজনে মৃত মহিলা হলে মুহরিম কবরে নামবে আত্মীয় স্বজন আর এরা ও না থাকলে নেককার দের দ্বারা নামাবেন।
۞মৃত মহিলাকে কবরে নামানো থেকে তকতা লাগানোর পর্যন্ত কোন কাপড় দ্বারা ঘিরে রাখবেন।
۞কবরে নামানোর সময় এ দোয়া পাঠ করুন: بِسمِ اللهِ وَبِاللهِ وَعَلٰى مِلَّةِ رَسُوْلِ الله (তানভিরুল বাছার, ৩য় খন্ড, ১৬৬ পৃষ্ঠা)
۞মৃতকে ডান পার্শে¦ শুয়াবেন এবং কিবলার দিকে করে দিন এবং কাফনের বন্ধন খুলে দিন যে এখন আর প্রয়োজন নেই, না খুললেও কোন সমস্যা নেই।(আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৬৬ পৃষ্ঠা, জওহেরা, ১৪০ পৃষ্ঠা)
۞কাফনের গিরা যে খোলে সে খোলার সময় এ দোয়া পাঠ করবে: اَللّٰهُمَّ لَاتَحرِمْنَا اَجْرَہٗ وَلَاتَفْتِنَّا بَعْدَہٗ অনুবাদ: হে আল্লাহ্! আমাদের কে এর সওয়াব থেকে বঞ্চিত করোনা এবং আমাদের কে এরপর ফিতনায় ফেলিওনা। (হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মায়াকিল ফালাহ, ২০৯ পৃষ্ঠা)
۞কবর কাঁচা ইট (কবরের ভিতরের অংশ আগুনে পোড়া পাকা ইট লাগানো নিষেধ কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এখন সিমেন্টের দেয়াল এবং স্লেব এ প্রচলন রয়েছে এজন্য সিমেন্টের দেয়াল এবং সিমেন্টের তাক সমুহের ঐ অংশ যা ভিতরের দিকে রাখা হয় কাঁচা মাটির দ্বারা লিপে দিবেন। আল্লাহ্ তাআলা মুসলমানদের আগুনের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখুক। اٰمِين بِجا هِ النَّبِىِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم) দ্বারা বন্ধ করে দিবেন যদি মাটি নরম হয় তবে (লাকড়ীর) তকতা লাগানো জায়েয।(বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮৪৪ পৃষ্ঠা)
۞এখন মাটি দেয়া যাক, মুস্তাহাব হলো, মাথার দিক থেকে উভয় হাতে তিনবার মাটি দিবে। প্রথমবার বলবে: مِنْهَا خَلَقْنٰكُمْ (আমি মাটি থেকেই তোমাদের সৃষ্টি করেছি) দ্বিতীয়বার দেওয়ার সময় বলবে: وَفِيْهَا نُعِيْدُكُمْ (সেটার মধ্যেই তোমাদেরকে আবার নিয়ে যাবো) এবং তৃতীয়বার দেওয়ার সময় বলবে: وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً اُخرٰى (এবং সেটা থেকে পুনরায় তোমাদেরকে বের করবো।) । এখন বাকি (মাটি) কোদাল ইত্যাদি দ্বারা দিবেন।(জওহেরা, ১৪১ পৃষ্ঠা)
۞যতটুকু মাটি কবর থেকে বের হয়েছে তার বেশী দেয়া মাকরুহ।(আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৬৬ পৃষ্ঠা)
۞হাতে যে মাটি লেগেছে, সেগুলোকে ঝেড়ে দেয়া বা ধৌত করার স্বাধীনতা রয়েছে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮৪৬ পৃষ্ঠা)
۞কবর চার কোনাবিশিষ্ট বানাবেন না বরং এটি উটের কোহানের মতো ঢালু রাখবেন। (দাফনের পর) এর উপর পানি ছিটানো উত্তম। কবর এক বিঘত পরিমান উচু হওয়া বা একটু বেশী। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮৪৬ পৃষ্ঠা, আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৬৬ পৃষ্ঠা, রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ১৬৮ পৃষ্ঠা)
۞দাফনের পর কবরের উপর আযান দেয়া সাওয়াবের কাজ এবং মৃতের জন্য খুবই ফল দায়ক।(ফতোয়ায়ে রযবীয়া, ৫ম খন্ড, ২৭০ পৃষ্ঠা)।
۞মুস্তহাব হলো,দাফনের পর কবরের উপর সুরা বাকারার শুরু ও শেষ আয়াত তিলাওয়াত করা, শিয়রে (অর্থাৎ মাথার দিকে) الم থেকে مُفْلِحُوْنَ পর্যন্ত এবং পায়ের দিকে দাঁড়িয়ে اٰمَنَ الرَّسُوْلُ থেকে শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করা। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮৪৬ পৃষ্ঠা)
۞দাফন করার পর কবরের পাশে এতটুকু অবস্থান করা মুস্তাহাব, যতটুকু পরিমাণ সময়ে উট জবেহ করে মাংস বন্টন করে দেয়া যায়। কেননা, এরা থাকার দ্বারা মৃতের প্রশান্তি লাভ হয় এবং মুনকার-নকীর ফেরেস্তাদ্বয়ের প্রশ্নের জবাব দিতে ভয় হবে না, আর ততটুকু সময় কুরআন তিলাওয়াত এবং মৃতের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করবে এবং এ দোয়া করবে যেন মুনকারনকীরের প্রশ্নের জবাবে অটল থাকে।( বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮৪৬ পৃষ্ঠা)
۞শাজারা ও আহাদনামা কবরে দেয়া জায়েয,বরং “দুররে মুখতার” কিতাবে কাফনের উপর আহাদনামা লিখাকে জায়েয বলেছেন আর বলেন: এর দ্বারা মাগফিরাতের আশা করা যায় এবং মৃতের বুক এবং কপালের উপর بِسۡمِ اللہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ লিখা জায়েয। এক ব্যক্তি এটা লিখার ওসিয়ত করে ছিলো; ইন্তিকারের পর বুক এবং কপালের উপর যেন بِسۡمِ اللہِ শরীফ লিখে দেয়া হয়, কেউ তাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করলো। সে বললো: যখন আমাকে কবরে রাখা হলো আযাবের ফেরেশতা আসলো। ফেরেশতারা যখন কপালের উপর بِسۡمِ اللہِ শরীফ লিখা দেখলো তখন বললো: তুমি আযাব থেকে বেঁচে গেছো। (দুররে মুখতার, গুনিয়া) এমনও হতে পারে যে, কপালের উপর بِسۡمِ اللہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ লিখবে এবং বুকের উপর কলেমায়ে তায়্যিবা لَآ اِلٰهَ اِلَّا الله مُحَمَّدُ رَّسُوْلُ الله صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ,
কিন্তু গোসলের পর কাফন পরিধানের আগে শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা লিখবে, কালি দ্বারা লিখবে না।(বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮৪৮ পৃষ্ঠা, রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ১৮৬ পৃষ্ঠা।)
۞কবর থেকে মৃতের হাড্ডি সমূহ বাহিরে বেরিয়ে আসলে তখন ঐ হাড্ডি সমূহকে দাফন করা ওয়াজিব। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৯ম খন্ড, ৪০৬ পৃষ্ঠা)
অসংখ্য সুন্নাত শিখার জন্য মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ২টি কিতাব (১) ৩১২ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “বাহারে শরীয়াত” ১৬তম খন্ড ও (২) ১২০ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব ‘সুন্নাত ও আদব’ হাদিয়া দিয়ে সংগ্রহ করে পাঠ করুন। সুন্নাত প্রশিক্ষনের একটি সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় আশিকানে রাসূলের সাথে সুন্নাতে ভরা সফর করা।
লুটনে রহমতে কাফিলে মে চলো, শিখনে সুন্নাতে কাফিলে মে চলো।
হোগি হাল মুশকিলে কাফিলে মে চলো, খতম হো শামতে, কাফিলে মে চলো।
--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত ৩৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত "মৃত ব্যক্তির অসহায়ত্ব" নামক রিসালার ২৬-৩১ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই রিসালাটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন। অন্যকে উপহার দিন।
যারা মোবাইলে (পিডিএফ) রিসালাটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন ।
ইসলামীক বাংলা বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন