বিভাগ সমূহ

রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

সিজদায়ে সাহু ও তিলাওয়াতে সিজদার বর্ণনা

(১)    নামাযের ওয়াজীবগুলোর মধ্য  থেকে  যদি কোন  একটি   ওয়াজীব  ভুলে     বাদ   পড়ে   যায় অথবা     নামাযের     ফরয     ও     ওয়াজীব     সমূহে  ভুলক্রমে  দেরী   হয়ে  যায়   তবে  সিজদায়ে  সাহু ওয়াজীব।       (রদ্দুল       মুহতার      সম্বলিত      দুররে মুখতার,    ২য়     খন্ড,    ৬৫৫    পৃষ্ঠা)     
(২)     যদি   সিজদায়ে সাহু  ওয়াজীব   হওয়া  সত্ত্বেও করলো  না,       তবে     নামায    পুনরায়    পড়া     ওয়াজীব। (প্রাগুক্ত)   
(৩)  ইচ্ছাকৃত    ভাবে  ওয়াজীব   বর্জন করলো, তবে সিজদায়ে  সাহু   দিলে যথেষ্ট  হবে না।     পুনরায়     নামায       আদায়       করে     দেওয়া ওয়াজীব।    

সিজদায়ে সাহু ও তিলাওয়াতে সিজদার বর্ণনা
(৪)      এমন    কোন     ওয়াজীব     বাদ পড়লো, যা নামাযের ওয়াজীবগুলোর অন্তর্ভূক্ত নয়,    বরং   তা   ওয়াজীব    হওয়াটা    অন্য   কোন কারণেই       হয়েছে       তাহলে       সিজদায়ে       সাহু  ওয়াজীব     হবে      না।     যেমন       তরতীব     ছাড়া (ধারাবাহিকতাবিহীন)   কোরআনে   পাক   পড়া  মানে ওয়াজীব বর্জন করা, যা গুনাহ কিন্তু এটার সম্পর্ক    নামাযের   ওয়াজীবের   সাথে    নয়।   সে  কারণে  সিজদায়ে  সাহু  দিতে  হবে    না।  (তবে   অবশ্যই    এটা     থেকে    তাওবা    করতে     হবে।) (প্রাগুক্ত)   
(৫) ফরয বাদ পড়লে   নামায বিনষ্ট হয়ে যায়। সিজদায়ে সাহু   দ্বারা   এর  ক্ষতিপূরণ হয় না। সুতরাং এ  নামায পুনরায়   পড়ে দিতে হবে।   
(৬)   সুন্নাত    ও     মুস্তাহাব    সমূহ     যেমন- ‘সানা’,  ‘তাআউয’, ‘তাসমিয়াহ্’, ‘আমীন’, এক রুকন থেকে অন্য রুকনে যাওয়ার তাকবীর সমূহ ও  তাসবীহ   সমূহ   বর্জন   করলেও  সাহু  সিজদা ওয়াজীব   হবে  না। নামায হয়ে যাবে। (ফতহুল কাদীর,   ১ম   খন্ড,   ৪৩৮   পৃষ্ঠা)   তবে   পুনরায়  পড়ে দেয়া মুস্তাহাব। ভুলক্রমে    বর্জন হোক বা ইচ্ছাকৃতভাবে   হোক।  
(৭)  নামাযে  যদি   দশটি ওয়াজীবও    বাদ    পড়ে   যায়,    দু’টি   সিজদায়ে সাহুই  সবগুলোর জন্য যথেষ্ট।   (রদ্দুল মুহতার,   ২য়  খন্ড,  ৬৫৫  পৃষ্ঠা)  
(৮)  তা’দীলে  আরকান  করতে (যেমন- রুকূর পর সোজা হয়ে দাঁড়ানো অথবা    দু’সিজদার      মাঝখানে    একবার    ‘سُبْحٰنَ الله’বলার    সময়   পরিমাণ  সোজা    হয়ে  বসতে) ভুলে  গেলে   সিজদায়ে  সাহুও    ওয়াজীব    হবে। (আলমগিরী, ১ম   খন্ড, ১২৭ পৃষ্ঠা) 
(৯)  কুনূত   বা      কুনূতের     তাকবীর      বলতে     ভুলে     গেলে  সিজদায়ে     সাহু      ওয়াজীব।    (আলমগিরী,    ১ম খন্ড, ১২৮ পৃষ্ঠা)
(১০) কিরাত ইত্যাদি বা অন্য কোন স্থানে চিন্তা করতে  করতে তিনবার  ‘سُبْحٰنَ الله’   বলার   সময়    পরিমাণ   বিরতি   হয়ে  গেলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজীব  হবে।   (রদ্দুল মুহতার,  ২য়  খন্ড, ৬৫৫  পৃষ্ঠা)
(১১) সিজদায়ে সাহু এর পরে                পুনরায়               ‘আত্তাহিয়্যাত’              পড়া ওয়াজীব।‘আত্তাহিয়্যাত’পড়ে  সালাম    ফিরিয়ে নিবেন।   উত্তম    হচ্ছে;উভয়    কা’দা   বা   বৈঠকে (অর্থাৎ  সিজদায়ে   সাহু    এর  পূর্বে    এবং   পরে) দরূদ   শরীফও   পাঠ   করা।   (আলমগিরী,       ১ম খন্ড, ১২৫ পৃষ্ঠা)
(১২) ইমামের ভুল হলো এবং সিজদায়ে  সাহুও  করলো, এ  অবস্থায়  মুক্তাদীর জন্যও সিজদায়ে সাহু ওয়াজীব। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে   মুখতার, ২য়  খন্ড, ৬৫৮  পৃষ্ঠা) 
(১৩)  মুক্তাদীর   নিজের  ভুলের   জন্য    ইকতিদা অবস্থায়        সিজদায়ে        সাহু        ওয়াজীব         নয়।  (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১২৮ পৃষ্ঠা)  এবং নামায পুনরায় পড়ারও প্রয়োজন নেই।

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা

অধিকাংশ  ইসলামী ভাই অজ্ঞতাবশতঃ  নিজের  নামাযকে নষ্ট করে দেয়।  তাই  এই মাসয়ালাটি খুব মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
(১৪)   মাসবূক (অর্থাৎ    যে   ব্যক্তি   এক   বা   একাধিক   রাকাত   অতিবাহিত    হওয়ার   পর   জামাআতে     অন্তুর্ভূক্ত হয়) ইমামের সাথে সালাম ফিরানো উচিত নয়, যদি  ইচ্ছাকৃত   ভাবে ফিরায়  তবে  নামায বিনষ্ট  হয়ে    যাবে।    আর    ভুলবশতঃ    ইমামের    সাথে  বিরতি ছাড়াই তাৎক্ষণিকভাবে সালাম ফিরিয়ে নেয় তবে  কোন   ক্ষতি নেই।  এরকম খুব কমই হয়ে     থাকে।    আর     যদি     ভুলবশতঃ    ইমামের কিছুক্ষণ    পরে     সালাম     ফিরিয়ে    নেয়,    তবুও  দাঁড়িয়ে  যাবে  এবং  নিজের   নামায    পূর্ণ  করে সিজদায়ে সাহু   করবে। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত  দুররে   মুখতার,   ২য়   খন্ড,   ৬৫৯   পৃষ্ঠা)   
(১৫)  মাসবূক   ইমামের  সাথে  সিজদায়ে  সাহু  করবে   যদিও নামাযে শরীক হবার পূর্বেই ইমামের ভুল সম্পন্ন   হয়ে   থাকে,   আর   যদি   ইমামের   সাথে  সিজদায়ে  সাহু   না  করে  এবং  নিজের  অবশিষ্ট  নামায     আদায়     করার     জন্য     দাঁড়িয়ে    যায়,  তাহলে  শেষে  সিজদায়ে সাহু করবে। আর যদি ঐ মাসবূকের   নিজের নামাযেও   ভুল হয়ে   যায় তবে  শেষভাগের ঐ  সাহু সিজদা ইমামের এবং নিজের    ভিতরের    ভুলের      জন্য    যথেষ্ট     হবে। (আলমগিরী,  ১ম  খন্ড, ১২৮ পৃষ্ঠা)
(১৬) প্রথম  বৈঠকে তাশাহুদের পর কেউ اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّد পর্যন্ত পড়ে ফেলল     তবে তার উপর সিজদায়ে সাহু ওয়াজীব হয়ে যাবে।  তবে তার কারণ এই নয় যে,  সে দরূদ শরীফ পাঠ  করেছে  বরং এর কারণ হচ্ছে, সে তৃতীয় রাকাতে দাঁড়াতে দেরী করেছে। সুতরাং যদি এতটুকু সময় পরিমাণ চুপ থাকে তবে সিজদায়ে সাহু ওয়াজীব হবে।


কাহিনী

হযরত   সায়্যিদুনা  ইমামে  আযম   আবূ    হানীফা رَضِیَ    اللّٰہُ    تَعَالٰی     عَنْہُ    স্বপ্নে    একবার     নবীয়ে  রহমত, শফীয়ে উম্মত, মুস্তফা জানে রহমত صَلَّی اللّٰہُ    تَعَالٰی   عَلَیْہِ   وَاٰلِہٖ      وَسَلَّم   এর    দীদার   লাভ করেন।  তখন  হুযুরে  আনওয়ার  صَلَّی  اللّٰہُ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ     وَاٰلِہٖ    وَسَلَّم    জিজ্ঞাসা    করলেন:     “দরূদ  শরীফ    পাঠকারীর    উপর    তুমি    কেন      সিজদা ওয়াজীব      বলেছো?”     আরয      করলেন:      এই কারণে   যে,  সে  দরূদ শরীফ   ভুল করে (অর্থাৎ অলসতাবশতঃ) পাঠ  করেছে। হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ   وَاٰلِہٖ   وَسَلَّم তাঁর এ উত্তর  পছন্দ করলেন।       (রদ্দুল       মুহতার      সম্বলিত       দুররে  মুখতার,   ২য়    খন্ড,   ৬৫৭    পৃষ্ঠা)   (১৭)   কোন কা’দা   বা    বৈঠকে    ‘তাশাহুদ”এর     কিছু   অংশ  থেকে   গেলে,   সিজদায়ে   সাহু   ওয়াজীব   হবে।  নফল নামায   হোক বা ফরয। (আলমগিরী,  ১ম খন্ড, ১২৭ পৃষ্ঠা)


সিজদায়ে সাহুর পদ্ধতি

শেষ বৈঠকে ‘আত্তাহিয়াত’পাঠ  করে  বরং উত্তম হলো,   দরূদ   শরীফও   পাঠ    করে    ডান    দিকে সালাম   ফিরিয়ে   দু’টি   সিজদা    করা।   অতঃপর  পুনরায়  তাশাহুদ, দরূদ  শরীফ  ও দোয়া পড়ে সালাম           ফিরাবে।           (আলমগিরী           সম্বলিত  ফতোওয়ায়ে  কাজী খান, ১ম খন্ড,  ১২১ পৃষ্ঠা)


সিজদায়ে সাহু করতে ভুলে গেলে তখন....

সিজদায়ে সাহু করার কথা ছিলো কিন্তু ভুলে তা না  করে  সালাম  ফিরিয়ে  নিলো,   তবে  যতক্ষণ  পর্যন্ত মসজিদ  থেকে বের   না হবেন এ সময়ের  মধ্যে    করে      নিতে   পারবেন।    (রদ্দুল   মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য়   খন্ড,  ৫৫৬   পৃষ্ঠা) মাঠে হলে  যতক্ষণ পর্যন্ত কাতার সমূহ অতিক্রম না  করেন  বা  সামনের  দিকে  সিজদা  এর  স্থান  অতিক্রম     না      করে      থাকেন      ততক্ষণ     পর্যন্ত  সিজদায়ে সাহু করতে পারবেন।   তবে   যদি   যে সমস্ত  বিষয়  নামায  ভঙ্গের  কারণ  সে  সব  কিছু  (যেমন-   কথাবার্তা   বলা  বা  নামাযের  পরিপন্থী  অন্য  কোন  কাজ  করা)  সালামের  পর  পাওয়া   যায় তবে এখন আর সিজদায়ে সাহু করলে হবে না।    (নামায   পুনরায়   পড়তে  হবে)   ।  (রদ্দুল  মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৫৫৬ পৃষ্ঠা)


তিলাওয়াতের সিজদা ও শয়তানের দূর্ভাগ্য

প্রিয় নবী,  রাসূলে আরবী, মক্কী মাদানী হাশেমী صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “ মানুষ যখন  সিজদার আয়াত  পাঠ করে  সিজদা করে,  তখন  শয়তান  পালিয়ে  যায়  এবং  কান্না  করে বলতে থাকে: হায়!    আমার  ধ্বংস! আদম সন্তানকে    সিজদার    আদেশ  দেয়া   হয়েছে,  সে সিজদা করেছে, তার জন্য জান্নাত রয়েছে। আর আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছিল, আমি অস্বীকার করেছি,      যার      ফলে     আমার    জন্য    জাহান্নাম রয়েছে। (সহীহ মুসলিম, ১ম খন্ড, ৬১ পৃষ্ঠা)


اِنْ شَآءَ الله عَزَّوَجَلَّ
উদ্দেশ্য পূরণ হবে

যে   কোন   উদ্দেশ্যে   একই   মজলিসে   সিজদার  সবগুলো  (অর্থাৎ-১৪টি)  আয়াত  পড়ে  সিজদা  করলে আল্লাহ্ তাআলা তার উদ্দেশ্য পূরণ করে দিবেন। চাই  একটি   একটি আয়াত  পাঠ  করার পর একটি একটি সিজদা করবে কিংবা সবগুলো পাঠ     করে    সবশেষে    ১৪টি    সিজদা     করবে।   (গুনিয়াহ, দুররে মুখতার ইত্যাদি)


তিলাওয়াতে সিজদার ৮টি মাদানী ফুল

(১)   সিজদার    আয়াত     পড়া    বা    শুনার    দ্বারা সিজদা  ওয়াজীব  হয়ে যায়। পড়ার ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে,   এতটুকু   আওয়াজে    পড়া    যেন      কোন অক্ষমতা   বা    প্রতিবন্ধকতা    না    থাকলে    নিজে শুনতে  পায়।  শ্রবণকারীর  জন্য  এটি    আবশ্যক নয়     যে,     ইচ্ছাকৃত      ভাবে       শ্রবণ     করুক     বা  অনিচ্ছাকৃত   ভাবে,   উভয়   অবস্থায়   তার   উপর  সিজদা  ওয়াজীব  হয়ে  যায়।    (আলমগিরী,   ১ম খন্ড, ১৩২ পৃষ্ঠা)
(২) যে কোন ভাষায় সিজদার আয়াতের    অনুবাদ   পাঠকারী   এবং   শ্রবণকারী  উভয়ের    উপর    সিজদা    ওয়াজীব    হয়ে    যায়।  শ্রবণকারী এটা বুঝতে পারুক বা  না পারুক  যে, আয়াতে  সিজদার   অনুবাদ  পাঠ  করা    হয়েছে। অবশ্য  এটা  জরুরী  যে,  তার  জানা  না  থাকলে  জানিয়ে    দেয়া    যে,     এটা   সিজদার    আয়াতের তরজুমা  ছিলো। আর   (সিজদার) আয়াত পড়া হলে এটা জরুরী নয় যে,  শ্রবণকারীকে আয়াতে সিজদা        সম্পর্কে        অবগত        করিয়ে        দেয়া।  (আলমগিরী, খন্ড  ১ম, ১৩৩  পৃষ্ঠা)
(৩) সিজদা ওয়াজীব  হওয়ার  জন্য   সম্পূর্ণ   আয়াতটি  পড়া আবশ্যক কিন্তু পরবর্তী ওলামাগণের رَحِمَہُمُ اللہُ تَعَالٰی মতে,   যে  শব্দটিতে   সিজদার  মূল অংশটি পাওয়া যায় তার  সাথে পূর্বের বা  পরের    কোন শব্দ  মিলিয়ে   পাঠ   করলে  তিলাওয়াতে  সিজদা ওয়াজীব    হয়ে   যাবে।তাই    সাবধানতা    হলো,  উভয়      অবস্থায়      তিলাওয়াতে      সিজদা     করা। (ফতোওয়ায়ে  রযবীয়া, ৮ম  খন্ড, ২২৩, ২৩৩  পৃষ্ঠা)  
 (৪)   সিজদার   আয়াত   নামাযের   বাইরে  পড়া হলে  তৎক্ষণাৎ   সিজদা দেওয়া  ওয়াজীব নয়।  অবশ্য  অযু  থাকলে  দেরী  করা  মাকরূহে  তানযীহী।   (রদ্দুল   মুহতার   সম্বলিত   তানবীরুল  আবছার, ২য় খন্ড, ৫৮৩ পৃষ্ঠা)
(৫) নামায রত অবস্থায়   তিলাওয়াতে সিজদা তৎক্ষণিক আদায় করা   ওয়াজীব।    যদি    দেরী   করে   অর্থাৎ   তিন আয়াতের অতিরিক্ত পড়ে নেয় তবে গুনাহগার হবে   আর     যতক্ষণ   পর্যন্ত    নামাযে   থাকবে   ঐ  সময়ের    মধ্যে    মনে     পড়লে     কিংবা     সালাম ফিরানোর পর নামাযের পরিপন্থী কোন কাজ না করে  থাকলে  তবে  তিলাওয়াতে    সিজদা  করে  সিজদায়ে  সাহু  আদায়  করবে।  (রদ্দুল  মুহতার  সম্বলিত দুররে মুখতার,  ২য় খন্ড, ৫৮৪    পৃষ্ঠা) 

সাবধান! হুশিয়ার!

(৬) রমজানুল মোবারকে তারাবীহ বা শাবীনাহ (অর্থাৎ রাতে  পুরো কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করার মাহফিল) এর মধ্যে অংশগ্রহণ করেননি, নিজে     আলাদাভাবে   নামাযে   লিপ্ত    আছেন   এ অবস্থায়  সিজদার   আয়াত   শুনে  নিলে  আপনার উপরও    তিলাওয়াতে     সিজদা     ওয়াজীব    হয়ে  যাবে। কাফির   বা অপ্রাপ্ত বয়স্কদের  কাছ থেকে সিজদার          আয়াত          শ্রবণ          করলে          তবুও  তিলাওয়াতে      সিজদা     ওয়াজীব     হয়ে      যাবে। বালিগ   হওয়ার  পর    থেকে  যতবারই   সিজদার  আয়াত শুনে  আসছেন কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন সিজদা      করেননি,    এ     অবস্থায়    মনের     প্রবল  ধারণানুযায়ী হিসাব  করে অযু অবস্থায় সবগুলো তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করে নেয়া  উচিত।

তিলাওয়াতে সিজদার পদ্ধতি

(৭)       দাঁড়িয়ে       اَللهُ      اَكْبَرُ      বলতে      বলতে সিজদাতে   চলে যাবেন এবং  কমপক্ষে তিনবার سُبْحٰنَ  رَبِّىَ  الْاَعْلٰى  বলবেন,  অতঃপর  اَللهُ  اَكْبَرُ  বলতে বলতে দাঁড়িয়ে যাবেন। প্রথম ও   শেষে উভয়বার اَللهُ اَكْبَرُ বলা সুন্নাত এবং দাঁড়ানো থেকে      সিজদাতে      যাওয়া      ও      সিজদা     হতে দাঁড়ানো     উভয়বার     কিয়াম     করা     মুস্তাহাব।  (আলমগিরী,      ১ম      খন্ড,      ১৩৫      পৃষ্ঠা)     
 (৮)  তিলাওয়াতে  সিজদার   জন্য  اَللهُ   اَكْبَرُ   বলার সময়  হাত উঠাতে  হবে  না। এতে  তাশাহহুদও নাই     সালামও   নাই।   (রদ্দুল    মুহতার   সম্বলিত তানবীরুল আবছার, ২য় খন্ড, ৫৮০ পৃষ্ঠা)


সিজদায়ে শোকর এর বর্ণনা

সন্তান  ভূমিষ্ট   হলে   বা  ধন-সম্পদ  অর্জিত   হলে কিংবা হারানো বস্তু   ফিরে পাওয়া   গেলে অথবা রোগী   সুস্থতা  লাভ  করলে  বা    মুসাফির   বাড়ী ফিরে    আসলে,    মোটকথা    এ     ধরণের    সকল  নেয়ামত  প্রাপ্তির  ক্ষেত্রে শুকরিয়া    স্বরূপ সিজদা করা        মুস্তাহাব।        এর         পদ্ধতি        ওটাই         যা তিলাওয়াতে           সিজদার            মধ্যে            রয়েছে।  (আলমগিরী,    ১ম     খন্ড,     ১৩৬   পৃষ্ঠা)   এভাবে যখনই  কোন  সুসংবাদ  বা  নেয়ামত  অর্জন  হয়  তখন সিজদায়ে শোকর করা সাওয়াবের কাজ। যেমন-মদীনা  মুনাওয়ারার ভিসা   পাওয়া গেলে  ইনফিরাদী    কৌশিশ    করে    তাতে   সফল   হলে অর্থাৎ   যাকে   ইনফিরাদী  কৌশিশ  করলেন  সে সুন্নাতের প্রশিক্ষণের জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী   কাফেলাতে  সফরের   জন্য   প্রস্তুত  হয়ে গেলে, কোন  সুন্নী আমলদার  আলিমের সাক্ষাৎ হয়ে গেলে, বরকতময় স্বপ্ন দেখলে, ইলমে দ্বীন অর্জনকারী    ছাত্র   পরীক্ষাতে    সফলকাম    হলে, বিপদ দূর হয়ে গেলে বা কোন ইসলামের শত্রুর মৃত্যু হলে ইত্যাদি ক্ষেত্রে সিজদায়ে শোকর করা মুস্তাহাব।

নামাযীর     সামনে   দিয়ে   গমন   করা     মারাত্মক গুনাহ্

(১)  রহমতে   আলম,   নূরে    মুজাস্সাম,  রাসূলে আকরাম  صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ  করেন:“যদি   কেউ  জানত   যে,  আপন    নামাযী  ভাইয়ের সামনে দিয়ে পথ অতিক্রম করার মধ্যে কী রকম গুনাহ্    রয়েছে তাহলে  সে এক  কদম চলা    থেকে   একশত   বছর     সেখানে   দাঁড়িয়ে  থাকাটা   উত্তম   মনে    করতো।    (সুনানে   ইবনে মাজাহ, ১ম খন্ড, ৫০৬ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৯৪৬)
(২) হযরত সায়্যিদুনা  ইমাম  মালিক  رَحْمَۃُ  اللّٰہِ تَعَالٰی     عَلَیْہِ     বলেন;হযরত     সায়্যিদুনা     কাবুল  আহবার  رَضِیَ  اللہُ  تَعَالٰی  عَنۡہُ বলেন: “নামাযীর সামনে চলাচলকারী যদি জানতো যে এর মধ্যে কি পরিমাণ গুনাহ্ রয়েছে তবে সে জমিনে ধসে যাওয়াকে    অতিক্রম    করা    থেকে    উত্তম    মনে  করতো।   (মুআত্তায়ে  ইমাম  মালিক,   ১ম  খন্ড, ১৫৪    পৃষ্ঠা,    হাদীস-৩৭১)    (নামাযীর    সামনে  দিয়ে   অতিক্রমকারী     অবশ্যই    গুনাহগার   হবে এতে নামাযীর  কোন  গুনাহ্ হবে  না বা  নিজের নামাযের   কোন ক্ষতি হবে  না।)  (ফতোওয়ায়ে  রযবীয়া, ৭ম খন্ড, ২৫৪ পৃষ্ঠা)


নামাযীর  সামনে   দিয়ে  অতিক্রম  করা   সম্পর্কে ১৫টি বিধান

(১)   মাঠ ও   বড়   মসজিদে নামাযীর পা  থেকে সিজদার স্থান  পর্যন্ত জায়গা  দিয়ে গমন করা না জায়িয।    সিজদার     স্থান      দ্বারা     উদ্দেশ্য    হচ্ছে দাঁড়ানো  অবস্থায়  সিজদার  স্থানে  দৃষ্টি  রাখলে  যতদূর পর্যন্ত দৃষ্টি প্রসারিত হয় সেটাই সিজদার   স্থান, তার মাঝখান দিয়ে অতিক্রম করা জায়েয নেই।   (তাবঈনুল   হাকাইক,   ১ম      খন্ড,    ১৬০ পৃষ্ঠা)   সিজদার     স্থানের   দূরত্ব   আনুমানিক    পা হতে তিনগজ পর্যন্ত  ধার্য করা হয়েছে। (কানূনে শরীয়াত, প্রথম অংশ, ১৩১ পৃষ্ঠা) অতএব মাঠে নামাযীর   পা হতে তিনগজ   দূর  দিয়ে  অতিক্রম করাতে কোন   অসুবিধা  নেই।
(২) ঘর বা ছোট মসজিদে   নামাযীর   সামনে   যদি    কোন   সুতরা  (কোন    আড়াল)    না    থাকে    তবে    পা    থেকে  কিবলার  দিকের  দেওয়াল   পর্যন্ত   জায়গা  দিয়ে অতিক্রম  করা  জায়েয  নেই।  (আলমগিরী,  ১ম  খন্ড,   ১০৪   পৃষ্ঠা)   
(৩)   নামাযীর   সামনে   যদি  সুতরা    অর্থাৎ   কোন   আড়াল   থাকে   তবে   ঐ  সুতরার    বাহির   দিয়ে    অতিক্রম    করলে   কোন অসুবিধা  নেই।  (প্রাগুক্ত)   
(৪)  সুতরা  কমপক্ষে  এক      হাত      উঁচু       (অর্থাৎ       প্রায়       আধা      গজ সমপরিমাণ)  এবং  আঙ্গুল  বরাবর  মোটা  হওয়া  আবশ্যক।       (তাহতাবীর       পাদটিকা       সম্বলিত  মারাক্বিউল  ফালাহ,  ৩৬৫   পৃষ্ঠা)
 (৫)   ইমামের সুতরা মুক্তাদীর  জন্যও  যথেষ্ট। অর্থাৎ ইমামের  সামনে    সুতরা    থাকলে    যদি    কোন    মুক্তাদীর  সামনে    দিয়ে    কেউ    অতিক্রম    করে   তবে   সে গুনাহগার  হবে  না।  (রদ্দুল  মুহতার,  ২য়  খন্ড,  ৪৮৪     পৃষ্ঠা)     
(৬)     গাছ,     মানুষ     এবং     প্রাণী  ইত্যাদিও সুতরা হতে পারে। (আলমগিরী, খন্ড ১ম,    ১০৪  পৃষ্ঠা)  
(৭)  মানুষকে  এমন  অবস্থায়  সুতরা  বানানো যাবে  যখন তার   পিঠ  নামাযীর  দিকে  হয়।  (তাহতাবীর পাদটিকা,  ৩৬৫ পৃষ্ঠা। রদ্দুল   মুহতার,   ২য়   খন্ড,     ৪৯৬    পৃষ্ঠা)    কেউ নামায   আদায়কারীর   মুখোমুখী  হলে   নামাযীর জন্য   মাকরূহ    হবে   না,  যে   মুখ   করেছে  তার জন্যই  মাকরূহ  হবে।  সুতরাং  ইমাম  সাহেবের  সালাম   ফিরানোর   পর     পিছনে     ফিরে   দেখার ক্ষেত্রে        সকলের       সতর্কতা       অবলম্বন        করা আবশ্যক।  কেননা    তার    সরাসরি  পিছনে   যদি কেউ  অবশিষ্ট নামায আদায় করতে  থাকে আর এ  অবস্থায়   সে যদি   তার দিকে মুখ   করে  বসে তবে     সে    গুনাহগার   হবেন।   
(৮)   এক   ব্যক্তি  নামাযীর   সামনে দিয়ে অতিক্রম  করতে চাইলে যদি  দ্বিতীয়   ব্যক্তি  তাকে   আড়াল   করে    তার  চলার  নির্দিষ্ট গতি   অনুযায়ী তার   সাথে  সাথেই পথ   অতিক্রম করে চলে   যায় তবে প্রথম ব্যক্তি গুনাহগার হলো  এবং  দ্বিতীয় ব্যক্তির   জন্য এই প্রথম       ব্যক্তিই     সুতরা     হয়ে     গেলো।     (রদ্দুল মুহতার,  ২য় খন্ড, ৪৮৩  পৃষ্ঠা)  
(৯)  জামাআত বিশিষ্ট নামাযে প্রথম কাতারে স্থান থাকা সত্ত্বেও কেউ  পিছনে  নামায  আরম্ভ  করে   দিলো   তবে  নতুন  আগমনকারী   তার  গর্দানের  উপর   দিয়ে  লাফিয়ে     যেতে      পারবে     কেননা    সে    নিজেই নিজের    সম্মান   নষ্ট     করেছে।   (রদ্দুল    মুহতার  সম্বলিত দুররে  মুখতার, ২য়   খন্ড, ৪৮৩   পৃষ্ঠা)
(১০)  যদি কেউ  এমন উঁচু স্থানের উপর  নামায আদায়        করছে        যে,       তার       সামনে         দিয়ে অতিক্রমকারীর অঙ্গ নামাযীর সামনে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না, তাহলে  অতিক্রমকারী গুনাহগার হবে না।  (আলমগিরী,   ১ম  খন্ড,   ১০৪  পৃষ্ঠা)
 (১১) যদি   দু’ব্যক্তি   নামাযীর  সামনে   দিয়ে  অতিক্রম করতে চায় তবে তার পদ্ধতি হচ্ছে তাদের মধ্যে একজন    নামাযীর  সামনে   পিঠ  দিয়ে  দাঁড়িয়ে যাবে। এবার তাকে আড়াল করে দ্বিতীয় ব্যক্তি অতিক্রম   করে    চলে    যাবে।    অতঃপর    দ্বিতীয় ব্যক্তি       এসে      প্রথম     ব্যক্তির     পিঠের     পিছনে নামাযীর দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে যাবে। এবার প্রথমজন   চলে যাবে। অতঃপর দ্বিতীয়    ব্যক্তিও যেদিক   থেকে   এসেছিল  সেদিকে   সরে    যাবে। (প্রাগুক্ত)   
(১২)     কেউ   নামাযীর    সামনে   দিয়ে অতিক্রম    করতে    চাইলে   নামাযীর   জন্য   এটা অনুমতি    রয়েছে   যে,   সে    তাকে   বাঁধা     দিতে   পারবে।      চাই     ‘سُبْحٰنَ      الله’বলে     কিংবা      উচ্চ আওয়াজে   কিরাত   পাঠ   করে   বা   হাত   অথবা  মাথা কিংবা    চোখ  দ্বারা  ইশারার মাধ্যমে।  এর অতিরিক্ত        করার         অনুমতি         নেই।        যেমন অতিক্রমকারীর    কাপড়    ধরে    টান    দেয়া    বা  তাকে হাত দ্বারা  মারা বরং  যদি   আমলে কসীর হয়ে যায় তবে  নামাযই ভঙ্গ হয়ে  যাবে। (রদ্দুল মুহতার, দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৮৩   পৃষ্ঠা। তাহতাবীর        পাদটিকা        সম্বলিত       মারাকিউল ফালাহ,  ৩৬৭  পৃষ্ঠা)  
(১৩)  তাসবীহ   ও   ইঙ্গিত প্রদান  উভয়টি   বিনা   প্রয়োজনে   একত্রিত  করা মাকরূহ।       (রদ্দুল       মুহতার       সম্বলিত       দুররে  মুখতার,    ২য় খন্ড,  ৪৮৬ পৃষ্ঠা)
(১৪) ইসলামী বোনদের    সামনে  দিয়ে  কেউ  অতিক্রম  করলে তিনি     তাসফীক      এর        মাধ্যমে     বাঁধা      দিতে পারবেন।       (তাসফীক      হলো,      ডান       হাতের আঙ্গুলসমূহ বাম হাতের পিঠের উপর মারা। যদি পুরুষ তাসফীক করে এবং মহিলা তাসবীহ বলে নামায     ভঙ্গ     হবে     না      কিন্তু       এটা     সুন্নাতের পরিপন্থী।  (প্রাগুক্ত)
(১৫) তাওয়াফকারীর জন্য তাওয়াফ   করার  সময়    নামাযীর  সামনে   দিয়ে অতিক্রম    করা   জায়েয।    (রদ্দুল   মুহতার,   ২য়  খন্ড, ৪৮২ পৃষ্ঠা)

সাহিবে মাযারের ইনফিরাদী কৌশিশ

প্রিয়     ইসলামী    ভাইয়েরা!    اَلْحَمْدُ    لِلّٰہِ      عَزَّوَجَلَّ দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে বুযুর্গানে কিরামদের অনেক  সম্মান করা  হয়, বরং বাস্তব সত্য  এটাই  যে  আল্লাহ্  তাআলার  অনুগ্রহক্রমে  দা’ওয়াতে   ইসলামী,  ফয়যানে    আউলিয়া  তথা আউলিয়া       কিরামদের       ফয়যের      বদৌলতেই চলছে।        যেমন        এক          ইসলামী         ভাইয়ের  বর্ণনানুযায়ী এক সাহিবে মাযার رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ        কিভাবে        মাদানী         কাফেলার        জন্য  ইনফিরাদী    কৌশিশ     করেছেন     তারই     ঈমান তাজাকারী     একটি     ঘটনা    তিনি    তার    নিজস্ব  ভঙ্গিতে উপস্থাপন করছেন।

اَلْحَمْدُ    لِلّٰہ   عَزَّوَجَلَّ    আশিকানে   রসূলের   একটি মাদানী  কাফেলা চকওয়াল (পাঞ্জাব  পাকিস্তান) এর    মুযাফ্ফারাবাদ  এবং    তার   আশে  পাশের গ্রামসমূহে    সুন্নাতের   বাহার   ছড়াতে  ছড়াতে “আনওয়ার শরীফ” নামক স্থানে গিয়ে উপস্থিত হলেন।  সেখান থেকে হাতোহাত  চার ইসলামী  ভাই তিনদিনের জন্য মাদানী কাফেলাতে সফর করার   জন্য  আশিকানে  রাসূলের   সাথে  শরীক হয়ে গেলেন।  এ   চারজনের মধ্যে   “আনওয়ার শরীফের “সাহিবে মাযার” বুযুর্গ এর বংশধরের একছেলেও     তাতে     সম্পৃক্ত    ছিলেন।    মাদানী কাফেলা  জাঁকজমকের  সাথে  নেকীর  দাওয়াত  দিতে   দিতে “ঘড়ি  দো পাট্টা”  (এক  এলাকা)  পৌঁছলেন।   যখন   “আনওয়ার   শরীফবাসীদের  তিনদিন    পূর্ণ    হলো    তখন    সাহিবে    মাযারের  رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বংশধর  ছেলেটি বললেন: “আমি তো ভাই বাড়ী ফিরে যাবো না। কেননা আজ   রাতে   আমি   আপন   “হযরত”   কে   স্বপ্নে  দেখলাম। উনি    বলছিলেন:  “বৎস! ঘরে  ফিরে যেওনা,    মাদানী   কাফেলার   ইসলামী  ভাইদের সাথে    আরো    সফর    করতে    থাকো।    সাহিবে  মাযার   رَحْمَۃُ    اللّٰہِ  تَعَالٰی     عَلَیْہِ  এর  ইনফিরাদী কৌশিশ এর এ ঘটনা শুনে মাদানী কাফেলাতে আনন্দের         ঢেউ         খেলে           গেল;          সকলের উৎসাহ-উদ্দীপনাতে  মদীনার  ১২  চাঁদের  চমক  লেগে    গেলো    এবং   আনওয়ার     শরীফ   থেকে আগত   চার   ইসলামী  ভাই    পুনরায়  হাতোহাত মাদানী    কাফেলাতে    আরো    সফর    শুরু    করে  দিলেন।

আউলিয়ায়ে কিরাম উনকা ফয়যানে আম,    লৌটনে সব চলে কাফিলে মে চলো।
আউলিয়া কা করম তুম পে হো লা-জারাম,  মিলকে সব চল পড়ে কাফিলে মে চলো।


মা চৌকি থেকে উঠে দাঁড়ালেন

বাবুল  মদীনা   করাচীর  এক   ইসলামী  ভাইয়ের বর্ণনার       সারংশ;      আমার      আম্মাজান       কঠিন রোগের   কারণে     চৌকি   থেকে    উঠতে     অক্ষম ছিলেন     এবং   ডাক্তাররা   শেষ   জাওয়াব    দিয়ে দিলেন।    সৌভাগ্যক্রমে     একবার    আমি      শুনে ছিলাম       যে,       দা’ওয়াতে       ইসলামীর       সুন্নাত  প্রশিক্ষণের মাদানী  কাফেলা  সমূহে আশিকানে  রাসূলের  সাথে   সফর   করলে  দোয়া  কবুল  হয় এবং বিভিন্ন রোগ হতে আরোগ্য লাভ হয়। তাই আমিও অসুস্থ মায়ের কষ্টের কথা চিন্তা করে মন স্থির করলাম   এবং  নিয়্যত করলাম  যে, মাদানী কাফেলায়     সফর    করে    মায়ের      জন্য     দোয়া করব।এ    উদ্দেশ্য     নিয়ে    সুন্নাত    সমূহের     নূর বর্ষনকারী    দা’ওয়াতে    ইসলামীর    আন্তর্জাতিক  মাদানী      মারকায     ফয়যানে    মদীনার     ভিতরে স্থাপিত     “মাদানী    তরবিয়্যাহ    গাহ   এর   মধ্যে  উপস্থিত         হয়ে        তিনদিনের         জন্য        মাদানী কাফেলাতে সফর করার ইচ্ছা  প্রকাশ করলাম। ইসলামী   ভাইয়েরা    অত্যন্ত  আন্তরিকতার  সাথে আমাকে  হাতোহাত    তাদের  কাফেলাতে  গ্রহণ  করে        নিলেন।আশিকানে        রাসূলের        অর্থাৎ  আমাদের   মাদানী    কাফেলার   সফর    শুরু   হয়ে গেলো।  আমরা   বাবুল   ইসলাম   সিন্ধু  প্রদেশের সাহরায়ে   মদীনার  নিকটস্থ  এক   গ্রামে   পৌঁছে   গেলাম।    সফরের    মধ্যে    আশিকানে   রাসূলের খিদমতে    দোয়ার    জন্য    অনুরোধ   করে    আমি আমার      আম্মাজানের    মর্মান্তিক    অবস্থার    কথা বর্ণনা করলাম। তারা আমার আম্মাজানের জন্য পূর্ণ  ইখলাছের   সাথে  দোয়া  করলেন।   এরপর  আমাকে     মায়ের     আরোগ্যের   ব্যাপারে   যথেষ্ট আশ্বস্ত   করলেন।  তাদের  এ  রকম   আন্তরিকতা দেখে  আমি   খুবই  মুগ্ধ   হয়ে    গেলাম।  আমীরে কাফেলা (কাফেলার প্রধান) খুবই নম্রতার সাথে ইনফিরাদী  কৌশিশ  করে  আমাকে   আরো  ৩০  দিনের   মাদানী  কাফেলাতে   সফর  করার  জন্য উৎসাহ      যোগালেন,        আমিও       নিয়্যত      করে নিলাম। কাফেলার সমষ্টিগত দোয়া ছাড়া আমি নিজে নিজেও আম্মাজানের সুস্থতার জন্য বিনয়  সহকারে     আল্লাহ্     তাআলার     দরবারে     দোয়া  করতে        লাগলাম।       তিনদিনের      এ      মাদানী  কাফেলার    তৃতীয়    রাতে    আমার    এক   উজ্জল চেহারা   বিশিষ্ট   বুযুর্গের   যিয়ারত     লাভ   হলো। তিনি বললেন: “বৎস!   আম্মাজানের  জন্য চিন্তা করো  না,  اِنۡ   شَآءَ   اللہ  عَزَّوَجَلَّ  তিনি  সুস্থ  হয়ে যাবেন।”   তিনদিনের   মাদানী   কাফেলা   থেকে  বিদায়    নিয়ে     আমি   ঘরে   চলে   গেলাম।    ঘরে পৌঁছে দরজাতে আঘাত করলাম, দরজা খুললে আমি   আম্মাজানকে    দরজার   পাশে    দাঁড়ানো  দেখে অবাক হয়ে গেলাম। সেখানে নির্বাক হয়ে আমি       কিছুক্ষণ     দাঁড়িয়ে     রইলাম।     কেননা, আমার  ঐ  অসুস্থ  আম্মাজান  যিনি  চৌকি  থেকে  উঠতেই পারছিলেন না, তিনি আল্লাহ্ তাআলার মেহেরবানীতে আপন  পায়ে হেঁটে  এসে   দরজা  খুলে   দিলেন!   আমি   খুশিতে      আত্মহারা     হয়ে মায়ের  পায়ে  চুমু  খেতে   লাগলাম  এবং  তাকে  মাদানী কাফেলাতে দেখা স্বপ্নের কথা শুনালাম। এরপর   আম্মাজান  থেকে  অনুমতি নিয়ে  আরো ৩০    দিনের    জন্য   আশিকানে    রাসূলের   সাথে  মাদানী কাফেলায় সফরের জন্য রাওয়ানা হলে গেলাম।

মা জো বীমার হো কর্জ কা বা-র হো,  গম মত্ করে কাফেলে মে চলো।
রবকে দরপর ঝুঁকে ইলতিজায়ে করে, বাবে রহমত খুলে কাফেলে মে চলো।
দিল কি কালিক ধূলে মরজে ইছইয়া টলে, আ-ও সব চল পড়ে কাফেলে মে চলো।

صَلُّوْا عَلَی  الْحَبِیْب!                      صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত নামায বিষয়ের এনসাইক্লোপিডিয়া ও মাসাইল সম্পর্কিত “নামাযের আহকাম” নামক কিতাবের ১৯১-২০৩ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। কিতাবটি নিজে কিনুন, অন্যকে উপহার দিন।

যারা মোবাইলে (পিডিএফ) কিতাবটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন অথবা প্লে স্টোর থেকে এই কিতাবের অ্যাপ ফ্রি ইন্সটল করুন

দাওয়াতে ইসলামীর সকল বাংলা ইসলামীক বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন 
মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks for supporting.