দুই জুমার মধ্যবর্তী দিন সমূহে নূর
হযরত সায়্যিদুনা আবু সাঈদ رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ থেকে বর্ণিত; নবী করীম, রউফুর রহীম, রাসূলে আমীন صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন ‘সুরা কাহাফ’ পাঠ করবে, দুই জুমার মধ্যবর্তী দিন সমূহ তার জন্য নূর
দ্বারা আলোকিত থাকবে।” (আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, ৩য় খন্ড, ৩৫৩ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৫৯৯৬)
ফয়যানে জুমা: জুমার নামাযের ফযিলত ও মাসাইল |
কা’বা পর্যন্ত নূর
অপর বর্ণনায় রয়েছে;“যে ব্যক্তি জুমার রাতে (অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের মধ্যবর্তী রাতে) ‘সুরাতুল কাহাফ’ পাঠ করবে, তার জন্য সেখান থেকে কা’বা শরীফ পর্যন্ত নূর দ্বারা আলোকিত হবে।” (সুনানে দারমী, ২য় খন্ড, ৫৪৬ পৃষ্ঠা, হাদীস-৩৪০৭)
সূরা হা-মীম আদ্ দুখান এর ফযীলত
হযরত সায়্যিদুনা আবু উমামা رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ থেকে বর্ণিত; রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, শাহে বনী আদম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন কিংবা জুমার রাতে সূরা হা-মীম আদ্ দুখান পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন।” (আল মুজামুল কবীর লিত্ তাবরানী, ৮ম খন্ড, ২৬৪পৃষ্ঠা, হাদীস-৮০২৬) অপর বর্ণনায় রয়েছে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। (তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ৪০৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৮৯৮)
৭০ হাজার ফিরিশতার ক্ষমা প্রার্থনা
নবী করীম, রউফুর রহীম, রহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি জুমার রাতে ‘সূরা হা-মীম আদ দুখান’ পাঠ করবে, তার জন্য সত্তর হাজার ফিরিশতা সকাল পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করবে।” (সুনানে তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ৪০৬ পৃষ্ঠা, হাদীস-২৮৯৭)
সমস্ত গুনাহের ক্ষমা
হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ থেকে বর্ণিত;প্রিয় আক্বা, উভয় জগতের দাতা, মাদানী মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি জুমার দিন ফযরের নামাযের পূর্বে তিনবার-اَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ وَاَتُوْبُ اِلَيْهِ পাঠ করবে তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। যদিও তা সমুদ্রের ফেনার চেয়েও অধিক হয়। (আল মু’জামুল আউসাত লিত তাবারানী, ৫ম খন্ড, ৩৯২ পৃষ্ঠা, হাদীস-৭৭১৭)
জুমার নামাযের পর
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের ২৮ তম পারার সূরা জুমার দশম আয়াতে ইরশাদ করেন:
فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰہِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰہَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿۱۰﴾
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: অতঃপর যখন নামায শেষ হলো, তখন ভূ-পৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো আর আল্লাহ্কে খুব স্মরণ করো! এ আশায় যে, সাফল্য লাভ করবে।
সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদীرَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে খাযাইনুল ইরফানের মধ্যে বলেন:‘জুমার নামাযের পর জীবিকা অর্জনের কাজে লিপ্ত হওয়া, কিংবা জ্ঞানার্জন, রোগীর সমবেদনা, জানাযায় অংশগ্রহণ, আলিম ওলামাদের সাক্ষাৎ ও অনুরূপ সৎকাজের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হয়ে পূণ্য অর্জন করো।’
ইলমে দ্বীনের মজলিশে শরীক হওয়া
জুমার নামাযের পর ইলম চর্চার মজলিসে অংশগ্রহণ করা মুস্তাহাব। যেমনিভাবে- হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ এর বাণী হচ্ছে: “এই আয়াতে শুধুমাত্র বেচা-কেনা এবং দুনিয়াবী উপার্জন উদ্দেশ্য নয় বরং জ্ঞান অর্জন করা, আপন ভাইদের সাথে সাক্ষাত করা, রোগীদের সেবা করা, জানাযায় অংশগ্রহণ করা এবং এই ধারণের অন্যান্য সৎকাজ।” (কিমিআয়ে সাআদাত, ১ম খন্ড, ১৯১ পৃষ্ঠা)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জুমার নামায আদায় করা ওয়াজীব হওয়ার জন্য ১১টি শর্ত রয়েছে। সেখান থেকে একটিও বাদ পড়লে জুমার নামায ফরয হবে না। এরপরও যদি কেউ জুমার নামায আদায় করে তাহলে হয়ে যাবে। প্রত্যেক বিবেকবান, সুস্থ বিবেক সম্পন্ন, প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের জন্য জুমার নামায আদায় করা উত্তম। অপ্রাপ্ত বয়স্ক জুমার নামায আদায় করলে তা নফল হিসাবে গণ্য হবে কেননা তার উপর জুমা ফরয নয়। (রদ্দুল মুহতার ও দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩০ পৃষ্ঠা)
জুমা আদায় করা ফরয হওয়ার জন্য ১১টি শর্ত
❁ শহরে মুকীম হওয়া।
❁ সুস্থ হওয়া, অসুস্থের উপর জুমা ফরয নয়। অসুস্থ দ্বারা এটাই উদ্দেশ্য যে, জুমা মসজিদ পর্যন্ত যেতে অক্ষম অথবা মসজিদে গেলে রোগ বৃদ্ধির কিংবা দেরীতে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অতিশয় বৃদ্ধ ব্যক্তি অসুস্থ ব্যক্তির হুকুমের অন্তুর্ভূক্ত।
রাসুলুল্লাহ্ ﷺইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি আমার উপর সারাদিনে ৫০বার দরূদ শরীফ পড়ে, আমি কিয়ামতের দিন তার সাথে মুসাফাহা করবো।” (আল কওলুল বদী)
❁স্বাধীন হওয়া, গোলামের উপর জুমা ফরয নয়। তার মুনিব তাকে (জুমা আদায়ে) বাধা দিতে পারবে।
❁পুরুষ হওয়া,
❁ প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া,
❁বিবেকবান হওয়া, এই দু’টি শর্ত জুমার জন্য নির্দিষ্ট নয় বরং প্রত্যেক ইবাদত ফরয হওয়ার জন্য বিবেকবান ও প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া শর্ত।
❁দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন হওয়া,
❁ হাটতে সক্ষম হওয়া,
❁ বন্দী না হওয়া,
❁ বাদশা (শাসক) অথবা চোর, ডাকাত ইত্যাদি কোন প্রকারের জালিমের ভয়ের আশংকা না থাকা।❁ঝড়, তুফান, শিলাবৃষ্টি ও ঠান্ডা ইত্যাদির ক্ষতির সম্ভাবনা হতে মুক্ত হওয়া অর্থাৎ তা এতটুকু পরিমাণ হওয়া যাতে ক্ষতি হওয়ার সত্যিই সম্ভাবনা রয়েছে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৭০-৭৭২ পৃষ্ঠা) যার উপর নামায ফরয কিন্তু কোন শরয়ী ওযরের কারণে জুমার নামায ফরয হয়নি, তাকে অবশ্যই জুমার দিন যোহরের নামায আদায় করে দিতে হবে। কেননা, জুমার দিন জুমার নামায আদায় করতে না পারলে, কিংবা শর্ত পাওয়া না যাওয়ার কারণে জুমার নামায ফরয না হলে, যোহরের নামায মাফ হবে না। তা অবশ্যই আদায় করতে হবে।
জুমার সুন্নাত সমূহ
জুমার নামাযের জন্য প্রথম ওয়াক্তে যাওয়া, মিসওয়াক করা, উত্তম (ভাল) ও সাদা কাপড় পরিধান করা, তৈল ও সুগন্ধি লাগানো এবং প্রথম কাতারে বসা মুস্তাহাব আর জুমার দিন গোসল করা সুন্নাত। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৪৯ পৃষ্ঠা। গুনিয়া, ৫৫৯ পৃষ্ঠা)
জুমার দিন গোসল করার সময়
প্রখ্যাত মুফাস্সীর, হাকীমূল উম্মত, হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: কতিপয় ওলামায়ে কিরাম বলেন; জুমার দিন গোসল করা জুমার নামাযের জন্য সুন্নাত। জুমার দিনের জন্য নয়। সুতরাং যার উপর জুমা ফরয নয়, তার জন্য জুমার দিন গোসল করাও সুন্নাত নয়। কিছু কিছু ওলামায়ে কিরাম বলেন: জুমার দিনের গোসল জুমার নামাযের এতটুকু আগে করা উচিত, যেন ঐ গোসলের ওযু দ্বারা নামায আদায় করা যায়। তবে সঠিক এটাই যে, জুমার দিন গোসল করার সময় ফযর উদয় হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়। (মীরআত, ২য় খন্ড, ৩৩৪ পৃষ্ঠা) জানা গেলো, নারী, মুসাফির ইত্যাদি যাদের উপর জুমার নামায ফরয নয়, তাদের জন্য জুমার দিন গোসল করাও সুন্নাত নয়।
জুমার গোসল সুন্নাতে যায়িদা
হযরত আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: জুমার নামাযের জন্য গোসল করা সুন্নাতে যায়িদা। এটা ত্যাগ করলে কোন অসুবিধা নেই। (রদ্দুল মুহতার, ১ম খন্ড, ৩৩৯ পৃষ্ঠা)
খোৎবার সময় কাছাকাছি থাকার ফযীলত
হযরত সায়্যিদুনা সামুরা ইবনে জুনদুব رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ থেকে বর্ণিত;নবী করীম, রউফুর রহীমصَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “তোমরা খোৎবা পাঠের সময় উপস্থিত থাকো এবং ইমামের কাছাকাছি থেকেই তা শ্রবণ করো। কেননা খোৎবা পাঠের সময় যে ইমাম থেকে যতটুকু পরিমাণ দূরত্বে থাকবে, সে জান্নাতেও ততটুকু পরিমাণ পিছনে থাকবে।যদিও সে (অর্থাৎ মুসলমান) নিশ্চিত জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সুনানে আবু দাউদ, ১ম খন্ড, ৪১০ পৃষ্ঠা, হাদীস-১১০৮)
তখন জুমার নামাযের সাওয়াব পাওয়া যাবে না
তাজেদারে রিসালাত, নবীয়ে রহমত, শফীয়ে উম্মত صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি, ইমাম জুমার খোৎবা দেয়ার সময় কথা বলে, তার উদাহরণ ঐ গাধার মতো, যে কিতাব বহন করে। আর ঐ সময় যে কেউ তার সাথীকে এরূপ বলল যে, “চুপ থাক” বলে সে জুমার সাওয়াব পাবে না।” (মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন্ হাম্বল, ১ম খন্ড, ৪৯৪ পৃষ্ঠা, হাদীস-২০৩৩)
নিরবে খোৎবা শুনা ফরয
যে সমস্ত কাজ নামাযের মধ্যে হারাম যেমন-পানাহার করা, সালাম ও সালামের জবাব দেওয়া ইত্যাদি তা খোৎবার সময়ও হারাম। এমনকি নেকীর দা’ওয়াত দেয়াও হারাম। তবে খতিব সাহেব নেকীর দাওয়াত দিতে পারবেন। যখন খোৎবা পাঠ করা হয় তখন খোৎবা শুনা এবং নিরব থাকা উপস্থিত সকল মুসল্লীদের উপর ফরয। আর যে সমস্ত লোক ইমাম থেকে দূরে এবং খোৎবার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে না তাদের উপরও নিরব থাকা ওয়াজীব। খোৎবা পাঠের সময় কাউকে কোন খারাপ কথা বলতে দেখলে তাকে হাত বা মাথার ইশারা দ্বারা নিষেধ করতে পারবে। মুখ দ্বারা নাজায়িয। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৭৪ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৯ পৃষ্ঠা)
খোৎবা শ্রবণকারী দরূদ শরীফ পড়তে পারবে না
খতিব সাহেব খোৎবাতে সুলতানে মদীনা, হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নাম মোবারক উচ্চারণ করার সময় উপস্থিত মুসল্লীরা মনে মনে দরূদ শরীফ পাঠ করবে। খোৎবা পাঠের সময় মুখে দরূদ শরীফ পড়ার অনুমতি নেই। অনুরূপ সাহাবায়ে কিরামগণের عَلَیۡہِمُ الرِّضۡوَان নাম উচ্চারণ করার সময়ও মুখে رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ বলার অনুমতি নেই। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৭৫ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৪০ পৃষ্ঠা)
বিয়ের খোৎবা শুনা ওয়াজীব
জুমার খোৎবা ছাড়াও অন্যান্য খোৎবা ও শ্রবণ করা ওয়াজীব। যেমন-দুই ঈদের খোৎবা ও বিয়ের খোৎবা ইত্যাদি। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৪০ পৃষ্ঠা)
প্রথম আযানের সাথে সাথেই কাজ কর্মও নাজায়িয হয়ে যায়
প্রথম আযান হওয়ার সাথে সাথেই জুমার নামাযে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করা ওয়াজীব। ক্রয় বিক্রয় ইত্যাদি যা জুমায় যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তা পরিত্যাগ করা ওয়াজীব। এমন কি জুমার নামাযের জন্য রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ও ক্রয়-বিক্রয় করা জায়িয নেই। আর মসজিদে ক্রয় বিক্রয় করা জঘন্যতম গুনাহ। খাবার গ্রহণ করার সময় যদি জুমার আযান শুনা যায় এবং খাবার শেষ করতে গেলে যদি জুমার নামায ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকে, তাহলে খাবার শেষ না করেই জুমার নামাযের জন্য চলে যেতে হবে। ধীর-স্থির ও শান্তভাবে জুমার নামাযের জন্য যাবে। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৪৯ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৭৫ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৪২ পৃষ্ঠা) বর্তমানে ইলমে দ্বীন থেকে দূরত্বের সময় মানুষ অন্যান্য ইবাদতের ন্যায় খোৎবা শুনার মতো এক মহান ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতেও বিভিন্ন ধরণের ভুল-ভ্রান্তিু করে অনেক গুনাহে লিপ্ত হচ্ছে। তাই খতিব সাহিবের প্রতি আমার মাদানী অনুরোধ তিনি যেন অসংখ্য নেকী অর্জনের জন্য প্রত্যেক জুমাতে খোৎবার আযানের পূর্বে মিম্বরে উঠার আগে এ ঘোষণা দেন।
খোৎবার ৭টি মাদানী ফুল
❁হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে: “যে ব্যক্তি জুমার দিন মানুষের গর্দান টপকিয়ে টপকিয়ে সামনে যায়, সে যেন জাহান্নামের দিকে পুল তৈরী করল।” (তিরমিযী, ২য় খন্ড, ৪৮ পৃষ্ঠা, হাদীস-৫১৩) জাহান্নামের দিকে পুল তৈরী করার অর্থ হলো, তার উপর আরোহণ করে মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৬১-৭৬২ পৃষ্ঠা)
❁ খতিবের দিকে মুখ করে বসা সাহাবীদের সুন্নাত। (মিশকাত শরীফ হতে সংকলিত, ১২৩ পৃষ্ঠা)
❁বুজুর্গানে দ্বীন رَحِمَہُمُ اللہُ تَعَالٰی বলেন: দু’জানু হয়ে বসে খোৎবা শ্রবণ করুন। প্রথম খোৎবায় (নামাযের মত) হাত বেঁধে এবং দ্বিতীয় খোৎবায় উরুর উপর হাত রেখে খোৎবা শুনলে اِنۡ شَآءَ اللہ عَزَّوَجَلَّ দুই রাকাআত নামাযের সাওয়াব পাওয়া যাবে। (মিরাতুল মানাজীহ, ২য় খন্ড, ৩৩৮ পৃষ্ঠা) ❁আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “খোৎবার মধ্যে হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নাম মোবারক শুনলে মনে মনে দরূদ শরীফ পড়তে হবে।কেননা, খোৎবা পাঠের সময় চুপ থাকা ফরয।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৮ম খন্ড, ৩৬৫ পৃষ্ঠা)
❁ “দুররে মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে; খোৎবার সময় পানাহার করা, কথা বলা যদিও سُبۡحٰنَ اللہ বলুক না কেন, সালাম ও সালামের জবাব দেয়া, সৎকাজের কথা বলা ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে হারাম। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৩৯ পৃষ্ঠা)
❁আ’লা হযরত رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: খোৎবা পাঠের সময় মসজিদে হাটাহাটি করা হারাম। ওলামায়ে কিরামগণ رَحِمَہُمُ اللہُ السَّلَامবলেন:খোৎবা চলাকালীন সময়ে কেউ মসজিদে আসলে মসজিদের যে পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে সেখানেই বসে যাবে, সামনে অগ্রসর হবে না। অগ্রসর হলেই তা কাজে পরিগণিত হবে। আর খোৎবা চলাকালীন সময়ে কোন কাজ বৈধ নয়। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৮ম খন্ড, ৩৩৩ পৃষ্ঠা)
❁আ’লা হযরত رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ আরো বর্ণনা করেন, “খোৎবা পাঠের সময় কোন দিকে ঘাঁড় ফিরিয়ে দেখাও হারাম।” (প্রাগুক্ত, ৩৩৪ পৃষ্ঠা)
জুমার ইমামতির গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা
একটি অতীব জরুরী বিষয়, যার প্রতি সাধারণ মানুষের মোটেও মনযোগ নেই। আর তা হলো, তারা জুমার নামাযকে অন্যান্য নামাযের মতো মনে করে। যার ইচ্ছা সে জুমা কায়েম করে ফেলে, আর যার ইচ্ছা সে জুমার নামায পড়িয়ে দেয়। অথচ এটা নাজায়েয। কেননা, জুমা কায়েম করা ইসলামী সাম্রাজ্যের বাদশা অথবা তাঁর প্রতিনিধিরই কাজ। যেখানে ইসলামী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত নেই সেখানে সবচেয়ে বড় ফকীহ্ই সুন্নী আলিম বিশুদ্ধ আকীদা পোষণকারী শরীয়াতের বিধি বিধান বাস্তবায়নে মুসলিম বাদশাহের স্থলাভিষিক্ত হবেন এবং তিনিই জুমা কায়েম করবেন। তাঁর অনুমতি ব্যতীত জুমা অনুষ্ঠিত হতে পারে না। আর এরূপ ফকীহ না থাকলে সাধারণ মানুষ যাকে ইমাম নিযুক্ত করবেন তিনিই জুমা কায়েম করতে পারবেন। আর আলিম বিদ্যমান থাকা অবস্থায় সাধারণ জনগণ কাউকে নিজেদের ইচ্ছামত ইমাম নিযুক্ত করতে পারবে না।
এটাও হতে পারে না যে, দু’চারজন লোক মিলে কাউকে ইমাম নিযুক্ত করলো এ ধরণের জুমার কোথাও প্রমাণ নেই। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭৬৪ পৃষ্ঠা)
صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত নামায বিষয়ের এনসাইক্লোপিডিয়া ও মাসাইল সম্পর্কিত “নামাযের আহকাম” নামক কিতাবের ১৫৯-১৬৭ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। কিতাবটি নিজে কিনুন, অন্যকে উপহার দিন।
যারা মোবাইলে (পিডিএফ) কিতাবটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন অথবা প্লে স্টোর থেকে এই কিতাবের অ্যাপ ফ্রি ইন্সটল করুন
বাংলা ইসলামীক বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন
ফয়যানে জুমা বিষয়ে বাকী পর্ব-প্রথম পর্ব, দ্বিতীয় পর্ব,
মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন