বিভাগ সমূহ

বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

আকিকা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর

(আকিকা বিষয়ে জানতে এই পোস্টের ৩২ টি প্রশ্নোত্তর সম্পূর্ণ পড়ে নিন। আকিকা বিষয়ে আপনার মনের অনেক প্রশ্নের উত্তর পাবেন এখানে- ইসলামী জীবন টিম।)

আকিকা শব্দের অর্থ

(১) প্রশ্ন: আকিকা শব্দের অর্থ কি?
উত্তর: আকিকা এর শাব্দিক অর্থ: আকিকা শব্দটি عَقٌّ থেকে নির্গত। এর অর্থ হচ্ছে কাটা, পৃথক করা। (মিরাত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২ পৃষ্ঠা)
আকিকার পারিভাষিক অর্থ: বাচ্চা জন্ম লাভের কৃতজ্ঞতা আদায়ার্থে যে পশু জবাই করা হয় তাকে আকিকা বলে। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ৩৫৫ পৃষ্ঠা)

বড় পরিসরে কাজ করার জন্য আমাদের পাশে দাঁড়ান...



(২) প্রশ্ন: আকিকা করার ক্ষেত্রে কি কি ভাল নিয়্যত করা উচিত?
উত্তর: সন্তান/ সন্ততি জন্ম লাভের খুশিতে আল্লাহ্ তাআলার নেয়ামত লাভের কৃতজ্ঞতা আদায়ার্থে, সুন্নাত পালনার্থে আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে, আকিকা করার সৌভাগ্য অর্জন করছি। তা ছাড়াও অবস্থা অনুযায়ী আরো নিয়্যত করা যায়। মনে রাখবেন! ভাল নিয়্যত ব্যতিত কোন নেক কাজের সাওয়াব পাওয়া যায় না। মূল কথা হচ্ছে, আকিকা করার সময় অন্তরে আকিকার নিয়্যতের সাথে সাথে যত ভাল ভাল নিয়্যত হবে তার সাওয়াবও ততবেশি হবে। নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: "نِيَّةُ الْمُؤْمِنِ خَيْرٌمِنْ عَمَمِه অর্থাৎ নিয়্যত তার আমল থেকে উত্তম।”(আল-মুজামুল কবীর লিত তাবারানি, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৮৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৫৯৪২)

আকিকা কি, আকিকা কখন করতে হয়, আকিকার নিয়ম, আকিকার পদ্ধতি, আকিকার পশু, আকিকার হুকুম, আকিকার বিধান, আকিকা কেন করতে হয়, আকিকা না করলে, আকিকা ছাড়া মারা গেলে, আকিকার বয়স, আকিকার গরু, আকিকার ছাগল
আকিকার মাসআলা


আকিকা আদায় করে না এমন ব্যক্তি কি গুনাহগার হবে?


(৩) প্রশ্ন: যে আকিকা আদায় করে না সে কি গুনাহগার হবে?
উত্তর: আকিকা ফরজ বা ওয়াজিব নয়, শুধুমাত্র পছন্দনীয় সুন্নাত। ছেড়ে দেওয়া গুনাহ নয়, (কেউ যদি সামর্থ্য রাখে তার অবশ্যই করা উচিত, না করলে গুনাহগার হবে না। অবশ্যই সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে) গরীব লোকদের জন্য সুদের উপর ঋণ নিয়ে আকিকা করা কখনো জায়েয নেই। (ইসলামী জিন্দেগী থেকে সংগৃহিত, ২৭ পৃষ্ঠা)


আকিকা বিহীন মৃত্যুবরণকারী বাচ্চা সুপারিশ করবে কিনা?


(৪) প্রশ্ন: এটা সঠিক কিনা, যে বাচ্চা আকিকা ছাড়া মৃত্যুবরণ করেছে সে তার মাতা-পিতার জন্য সুপারিশ করবে না?
উত্তর: জ্বি, হ্যাঁ! কিন্তু তার কিছু ধরণ রয়েছে: যে বাচ্চা আকিকার সময় পেয়েছে অর্থাৎ তার বয়স সাত দিন হয়েছে, কোন কারণ ছাড়া সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তার আকিকা করা হলো না, তখন সে বাচ্চা তার মাতা-পিতার জন্য সুপারিশ করবে না। হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে: اَلْغُلَامُ مُرْتَهَنٌ بِعَقِيْقَتِه অর্থাৎ সন্তান আপন আকিকার ব্যাপারে বন্ধক। (তিরমিযী, ৩য় খন্ড, ১৭৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৫২৭) আশ্ইয়াতুল লুমআত এর মধ্যে বর্ণিত রয়েছে: হযরত ইমাম আহমদ رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বর্ণনা করেন: বাচ্চার যতক্ষণ পর্যন্ত আকিকা করা না হয়, ততক্ষণ তার পিতা-মাতার ব্যাপারে সুপারিশ করার ক্ষেত্রে তাকে বাধা প্রদান করা হয়। (আশ্ইয়াতুল লুমআত, ৩য় খন্ড, ৫১২ পৃষ্ঠা)

সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা, হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতি আমজাদ আলী আযমী আহমদ رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ উক্ত হাদীসের ব্যাপারে বলেন: হাদীসে পাকে “বন্ধক হওয়ার” এটাই উদ্দেশ্য: যতক্ষণ পর্যন্ত কোন বাচ্চার আকিকা করা না হয়, ততক্ষণ তার থেকে পরিপূর্ণ উপকারীতা অর্জন হবে না। কতিপয় মুহাদ্দিসীনে কিরাম বলেন: বাচ্চার নিরাপত্তা, বেড়ে উঠা এবং উত্তম গুণাবলীর অধিকারী হওয়া ইত্যাদি আকিকার সাথে সম্পৃক্ত। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ৩৫৪ পৃষ্ঠা)

(৫) প্রশ্ন: যার আকিকা করা হয়নি, যৌবনে সে কি নিজের আকিকা করতে পারবে?
উত্তর: জ্বী, হ্যাঁ! যার আকিকা করা হয়নি সে যৌবনে বা বৃদ্ধাবস্থায়ও নিজের আকিকা করতে পারবে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২০তম খন্ড, ৫৮৮ পৃষ্ঠা) যেমনি ভাবে রাসুলুল্লাহ্ صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم নবুয়ত ঘোষণা করার পর নিজের আকিকা করেছেন। (মুসান্নিফে আব্দুর রাজ্জাক, ৪র্থ খন্ড, ২৫৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২১৭৪)

অপূর্ণাঙ্গ গর্ভপাত হওয়ার ফযীলত


(৬) প্রশ্ন: অপূর্ণাঙ্গ গর্ভপাত হওয়ার ক্ষেত্রে তার আকিকা করতে হবে কিনা?
উত্তর: না। অপূর্ণাঙ্গ গর্ভপাত হওয়ার কারণে সাধারণত মাতাপিতা অনেক পেরেশান হয়ে থাকে, তাদের সান্তনার জন্য অনুরোধ হলো, এ অবস্থায় ধৈর্য্যধারণ করে সাওয়াব অর্জনের সৌভাগ্য অর্জন করা উচিত, অপূর্ণাঙ্গ গর্ভপাত হওয়ার মধ্যে মাতা-পিতার অনেক উপকার রয়েছে। যেমনি ভাবে আল্লাহ্ তাআলার প্রিয় হাবীব, হাবীবে লবিব, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “নিশ্চয় অপূর্ণাঙ্গ বাচ্চা (অর্থাৎ মায়ের পেট হতে অপূর্ণাঙ্গ ভাবে গর্ভপাত হওয়া বাচ্চা) তার প্রতিপালকের সাথে ঐ সময় ঝগড়া করবে, যখন তার মাতা-পিতাকে (যারা ঈমানের উপর মৃত্যু বরণ করেছে, কিন্তু গুনাহের কারণে) আল্লাহ্ তাআলা দোযখে প্রবেশ করাবেন। হুকুম দেওয়া হবে: হে আপন প্রতিপালকের সাথে ঝগড়াকারী বাচ্চা! তোমার মাতা-পিতাকে জান্নাতে নিয়ে যাও, তখন সে নাভি(১) দ্বারা উভয়কে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবে। (ইবনে মাযাহ, ২য় খন্ড, ২৭৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৬০৮)

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ বর্ণনা থেকে ঈমান হিফাযতের গুরুত্ব ফুটে উঠেছে, শাফায়াতের মত মহান নেয়ামতের অধিকারী হওয়ার জন্য ঈমান হিফাযত থাকা জরুরী। তাই প্রত্যেককে ঈমান হিফাযতের জন্য চিন্তা করা উচিত। নিঃসন্দেহে ঈমান হিফাযত আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির মধ্যে লুকায়িত রয়েছে, আর আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি হলো তাঁর এবং তাঁর প্রিয় হাবীব صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর আনুগত্যের মধ্যে। আর ঈমানের ধ্বংস আল্লাহ্ তাআলার অসুন্তুষ্টির মধ্যে লুকায়িত রয়েছে, আর তাঁর এবং তাঁর প্রিয় হাবীব صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নাফরমানিতে আল্লাহ্ তাআলার অসন্তুষ্টি নিহীত। হে আল্লাহ্! তুমি আমাদেরকে ঈমান হিফাযতের তৌফিক দান করো। 

اٰمِين بِجا  هِ  النَّبِىِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم 

------------------------------
(১)অর্থাৎ- ঐ নাড়ী যা মাতৃগর্ভে পেটের সাথে সম্পৃক্ত থাকে এবং যেটাকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর কেটে পৃথক করা হয়।
                                         ------------------------------


মৃত বাচ্চার আকিকা


(৭) প্রশ্ন: যদি বাচ্চা জন্ম লাভের পর সাত দিনের আগে আগে ইন্তেকাল হয়ে যায়, তবে তার আকিকা করতে হবে কিনা? যদি মৃত্যুর পর আকিকা করা হয়, সে তার মাতা-পিতার জন্য সুপারিশ করবে কিনা?
উত্তর: এখন তার আকিকার প্রয়োজন নেই। এমন বাচ্চাও সুপারিশ করতে পারবে। আমার আক্বা আ‘লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: যে বাচ্চা মারা যায়, সে যে বয়সের হোক না কেন, তার আকিকা হতে পারেনা। যদি কোন বাচ্চা সপ্তম দিনের পূর্বে মৃত্যু বরণ করেছে, তবে তার আকিকা না করার ফলে মাতা-পিতার জন্য তার সুপারিশ ইত্যাদিতে কোন ধরণের প্রভাব পড়বে না, কেননা সে আকিকার সময় হওয়ার পূর্বেই মৃত্যু বরণ করেছে। ইসলামী শরীয়াতে আকিকার সময় হচ্ছে সপ্তম দিন। যে বাচ্চা নাবালেগ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে এবং তার আকিকা করা হয়েছিল অথবা আকিকা করার ক্ষমতা ছিলো না, অথবা সাত দিন হওয়ার পূর্বে মৃত্যু বরণ করেছে এ সকল অবস্থায় সে বাচ্চা মাতা-পিতার জন্য সুপারিশ করবে যদি সে (মাতা-পিতা) দুনিয়া থেকে ঈমান সহকারে মৃত্যু বরণ করে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২০তম খন্ড, ৫৯৬ ও ৫৯৭ পৃষ্ঠা)

(৮) প্রশ্ন: যদি কেউ সপ্তম দিনের পূর্বেই আকিকা করে তবে কি হুকুম?
উত্তর: যদিও আকিকার সময় সপ্তম দিন থেকে শুরু হয় এবং তা সুন্নাত ও উত্তম। সাত দিনের পূর্বেও যদি কোন বাচ্চার আকিকা করা হয় তা আদায় হয়ে যাবে।

বাচ্চার কানে কতবার আযান দিবে?


(৯) প্রশ্ন: ছেলে-মেয়ে জন্ম লাভের পর তার কানে কখন এবং কতবার আযান দিতে হবে? কোন দিন তার নাম রাখবে? এবং মাথার চুল কোন দিন মুন্ডাবে? দয়া করে জানাবেন?
উত্তর: যখন বাচ্চা জন্ম লাভ করে তখন মুস্তাহাব হচ্ছে তার কানে আযান এবং ইকামত দেয়া, আযান দেয়ার ফলে اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ বিপদ-আপদ দূরিভূত হয়ে যাবে। ইমামে আলী মকাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হোসাইন رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত; মদীনার সুলতান, রহমতে আলামিয়ান, মাহবুবে রহমান صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “কারো ঘরে সন্তান জন্মলাভ করলে তার ডান কানে আযান এবং বাম কানে ইকামত প্রদান করবে, যার ফলে সন্তান اُمُّ الصِّبْيَانْ (তথা মৃগী রোগ) থেকে সুরক্ষিত থাকবে। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৬৭৪৭)

”اُمُّ الصِّبْيَانْ" সম্পর্কে আশিকদের ইমাম, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, পরওয়ানায়ে শময়ে রিসালাত, আশিকে মাহে নবুয়্যত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِবলেন: ”اُمُّ الصِّبْيَانْ" তথা “মৃগী” খুব নিকৃষ্ট একটি কঠিন রোগ। যদি বাচ্চাদের হয় তাকে “اُمُّ الصِّبْيَانْ” বলে নতুবা মৃগী। (মলফুযাতে আ‘লা হযরত, ৪১৭ পৃষ্ঠা) নুজহাতিল ক্বারীতে বর্ণিত রয়েছে: “اُمُّ الصِّبْيَانْ” মৃগী অর্থ বেহুশ হয়ে পড়ে যাওয়া, এটা কখনো পিত্ত, রক্ত, কফ এবং রক্তের মত কালো কফের ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে। যাকে মৃগী বলা হয়, কখনো জ্বীন অথবা মন্দ শয়তান এর প্রভাবে হয়ে থাকে। (নুজহাতুল ক্বারী, ৫ম খন্ড, ৪৮৯ পৃষ্ঠা) আমার আক্বা আ‘লা হযরত ইমাম আহমদ রযা খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: সন্তান জন্ম গ্রহণ করার সাথে সাথে ডান কানে আযান বাম কানে ইকামত প্রদান করবেন যাতে সন্তান শয়তানের ধোকা এবং “اُمُّ الصِّبْيَانْ” থেকে রক্ষা পায়। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া শরীফ, ২৪তম খন্ড, ৪৫২ পৃষ্ঠা) উত্তম হচ্ছে, ডান কানে চারবার আযান এবং বাম কানে তিনবার ইকামত প্রদান করা। (আযান ও ইকামত একবার দিলেও কোন অসুবিধা নেই) সপ্তম দিন তার নাম রাখা, মাথা মুন্ডানো, মাথা মুন্ডানোর সময় আকিকা করা এবং চুল পরিমাণ স্বর্ণ অথবা রূপা সদকা করা যাবে। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ৩৫৫ পৃষ্ঠা)

তাড়াতাড়ি নাম রাখা কেমন?


(১০) প্রশ্ন: আপনি এখন বলেছেন যে, সপ্তম দিন নাম রাখতে হবে, যদি কেউ প্রথম অথবা দ্বিতীয় দিন নাম রাখে তাতে কোন অসুবিধা হবে কিনা?
উত্তর: কোন অসুবিধা নেই।

সন্তানের মাথায় জাফরান মালিশ করা


(১১) প্রশ্ন: আকিকার সময় বাচ্চার মাথা মুন্ডানোর পর জানতে পারল তার মাথার জাফরান মালিশ করা উচিত তখন কি করবে?
উত্তর: আপনি ঠিক শুনেছেন হযরত সায়্যিদুনা আবু বুরাইদা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُথেকে বর্ণিত জাহেলি যুগে যদি আমাদের কারো সন্তান জন্ম লাভ করতো তখন ছাগল জবাই করে তার রক্ত ঐ সন্তানের মাথায় মালিশ করা হতো। অতঃপর যখন ইসলামী যুগ আসলো, তখন আমরা ছাগল জবাই করি, আর বাচ্চার মাথা মুন্ডায় এবং মাথায় জাফরান মালিশ করি। (আবু দাউদ শরীফ, ৩য় খন্ড, ১৪৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৮৪৩)


মাথায় জাফরান লাগানোর পদ্ধতি

সামান্য জাফরান প্রয়োজন মত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন, যখন নরম হয়ে যাবে, তখন পানিতে ভালভাবে মিশিয়ে নিন এবং বাচ্চার মুন্ডানো মাথায় লাগিয়ে দিন।


সব বয়সের সপ্তম দিন বের করার পদ্ধতি

(১২) প্রশ্ন: সপ্তম দিবসে আকিকা করতে না পারলে তার কি হুকুম?
উত্তর: কোন গুনাহ নেই। আমার আক্বা আ‘লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা সুন্নাত এবং এটাই উত্তম। নতুবা চৌদ্দতম অথবা একুশতম দিনে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২০তম খন্ড, ৫৮৬ পৃষ্ঠা) সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা, হযরত আল্লামা মুফতি আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ আকিকার জন্য সপ্তম দিন উত্তম, যদি সপ্তম দিনে করতে না পারে তবে যখন চায় করতে পারবে, সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। কেউ এটা বলেছেন: সপ্তম, অথবা চৌদ্দতম, অথবা একুশতম যে দিন হোকনা কেন সাত দিনের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে, এটাই উত্তম। যদি স্মরণ না থাকে তাহলে যে দিন সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছে সে দিনটি স্মরণ রাখবে তার একদিন পূর্বের দিনটি যখন আসবে, তখন তা সপ্তম দিন হবে, উদাহরণ স্বরূপ যদি জুমার দিন (শুক্রবার) জন্ম হয় তাহলে পরের বৃহস্পতিবার এবং যদি শনিবার জন্ম হয়, তবে পরের জুমার দিন (শুক্রবার) হবে সপ্তম দিন। প্রথম পদ্ধতিতে বৃহস্পতিবার এবং দ্বিতীয় পদ্ধতিতে যেই জুমার দিন (শুক্রবার) আকিকা করবে, এতে এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে তাতে অবশ্যই সপ্তম দিনের সংখ্যা আসবে। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ৩৫৬ পৃষ্ঠা)


বিয়ের জন্য ক্রয়কৃত পশুতে আকিকার নিয়্যত করা কেমন?


(১৩) প্রশ্ন: বিবাহের পশুতে অনেকে বর অথবা অন্য কারো আকিকার নিয়্যত করে থাকে, এভাবে কি আকিকা হয়ে যাবে?
উত্তর: পশু যদি কুরবানির শর্ত অনুযায়ী হয় এবং কোন শরয়ী বাঁধা না থাকে তখন আকিকা হয়ে যাবে।

(১৪) প্রশ্ন: গরুতে কত জনের আকিকা করা যায়?
উত্তর: আকিকার বিধান কুরবানির মতো, তাই গরুতে সাতটি অংশ এবং এভাবে একটি গরুতে সাত জনেরও আকিকা হতে পারে।

(১৫) প্রশ্ন: কুরবানির গরুতে আকিকার অংশ দেওয়া যাবে কী?
উত্তর: জ্বি, হ্যাঁ!

(১৬) প্রশ্ন: বাচ্চার নাম রাখার ব্যাপারে কোন মাদানী ফুল প্রদান করুন।
উত্তর: সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা, হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতি আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: সন্তানের উত্তম নাম রাখা উচিত। হিন্দুস্তানে অনেক লোকের এমন নাম রয়েছে যার কোন অর্থ নেই, অথবা সেগুলোর খারাপ অর্থ হয়ে থাকে, এমন নাম পরিত্যাগ করা উচিত। আম্বিয়ায়ে কিরাম عَلَيْهِمُ السَّلَام এর পবিত্র নাম, সাহাবী, তাবেঈ ও বুজুর্গানে দ্বীনের নামে নাম রাখা উত্তম। আশা করা যায় তাদের বরকত ঐ বাচ্চার মাঝে অন্তর্ভূক্ত হবে। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ৩৫৬ পৃষ্ঠা)

উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا থেকে বর্ণিত; নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, শাহানশাহে নবুয়ত, তাজেদারে রিসালাত صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “নেক্কারদের নামের সাথে মিলিয়ে নাম রাখো এবং নিজের প্রয়োজনীয়তা নেককার (সুন্দর চেহারা বিশিষ্ট) বান্দাদের কাছ থেকে প্রার্থনা করো। (আল ফিরদৌস বিমাছুরিল খাত্তাব, ২য় খন্ড, ৫৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২৩২৯) সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা, হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন আব্দুল্লাহ এবং আব্দুর রহমান অনেক উত্তম নাম, কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ লোকেরা “আব্দুর রহমান” নামক ব্যক্তিকে শুধু রহমান বলে ডাকে, আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে রহমান ডাকা হারাম। এভাবে অনেক নামের সংক্ষিপ্ত রূপের ব্যবহার প্রচলন রয়েছে। অর্থাৎ নামকে এভাবে বিকৃত করা যার দ্বারা তুচ্ছ করা প্রকাশ পায়। আর এসব নামের ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্তকরণ কখনো করা যাবে না, তাই যেখানে নামের সংক্ষিপ্ত রূপের ব্যবহারের আশংঙ্কা রয়েছে, সেখানে এমন (ফযীলতপূর্ণ) নাম না রেখে অন্য নাম রাখবে। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ৩৫৬ পৃষ্ঠা)


মুহাম্মদ নাম রাখার চারটি ফযীলত

(১৭) প্রশ্ন: মুহাম্মদ নাম রাখার ফযীলত বর্ণনা করুন।
উত্তর: এ সম্পর্কে হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর চারটি বাণী পেশ করছি:

(১) “যার ছেলে সন্তান ভূমিষ্ট হলো, সে আমার মুহাব্বত এবং আমার নামের বরকত লাভের উদ্দেশ্যে ছেলের নাম মুহাম্মদ রাখে সে (ছেলের পিতা) এবং ঐ সন্তান জান্নাতে যাবে।” (কানযুল উম্মাল, ১৬ খন্ড, ১৭৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪৫২১৫) 

(২) কিয়ামতের দিন দুই ব্যক্তিকে আল্লাহ্ তাআলার সামনে দন্ডায়মান করা হবে, হুকুম হবে: তাদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাও। তারা উভয়ে বলবে: হে আল্লাহ্! আমরা কোন্ আমলের বিনিময়ে জান্নাতের অধিকারী হয়েছি? আমরা তো জান্নাতের কোন আমল করিনি! আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করবেন: জান্নাতে প্রবেশ করো। আমি শপথ করেছি যে, যার নাম আহমদ অথবা মুহাম্মদ হবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। (আল ফিরদৌস বিমাছুরিল খাত্তাব, ৫ম খন্ড, ৪৮৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৮৮৩৭ ও ফতোওয়ায়ে রযবীয়া শরীফ, ২৪ খন্ড, ৬৮৭ পৃষ্ঠা) 

(৩) তোমাদের মধ্যে কারো ক্ষতি কি (অর্থাৎ এটা খুব কল্যাণকর) যদি কারো ঘরে এক বা দুই অথবা তিনজন মুহাম্মদ থাকে। (আত্ তাবকাতুল কুবরা লি ইবনে সাদ, ৫ম খন্ড, ৪০ পৃষ্ঠা) 

(৪) যখন কোন ছেলের নাম মুহাম্মদ রাখো, তাকে সম্মান কারো, কোন অনুষ্ঠানে তার জন্য জায়গা প্রশস্থ করে দাও এবং তাকে কোন মন্দ বিষয়ের প্রতি সম্পর্কিত করো না। (আল জামেউছ ছগীর লিস্ সুয়ূতি, ৪৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭০৬)

মুহাম্মদ নাম রাখার দুটি নিয়্যত


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যদি ভালো নিয়্যত ছাড়া শুধু এমনি মুহাম্মদ নাম রাখেন, তাতে সাওয়াব পাওয়া যাবে না, কেননা সাওয়াব অর্জনের জন্য ভালো নিয়্যত হওয়া র্শত। 

পূর্বে উল্লেখিত প্রথম হাদীসে দুটি ভালো নিয়্যতের বর্ণনা এসেছে তাজেদারে রিসালাত صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর সাথে মুহাব্বত এবং তাঁর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নামে নাম রাখার বরকত অর্জনের নিয়্যতে মুহাম্মদ নাম রাখা সৌভাগ্যবান পিতা এবং মুহাম্মদ নামের ঐ ছেলের জন্য জান্নাতের শুভ-সংবাদ রয়েছে। আ‘লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ ফতোওয়ায়ে রযবীয়া শরীফের ২৪তম খন্ড, ৬৯১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন: উত্তম হচ্ছে, শুধু মুহাম্মদ অথবা আহমদ নাম রাখা এর সাথে জান অথবা অন্য কোন শব্দ মিলাবে না। কেননা ফযীলত শুধুমাত্র মুহাম্মদ নাম মোবারকের ক্ষেত্রে বর্ণিত আছে। বর্তমানে আল্লাহর পানাহ্! নাম বিকৃত করার সাধারণ প্রচলন হয়ে গেছে। মূলত এমন 

করা গুনাহ্‌ এবং মুহাম্মদ নাম বিকৃত করা অনেক বড় থেকে বড় অপরাধ। সে কারণে আকিকাতে মুহাম্মদ অথবা আহমদ নাম রাখবে, আর ডাকার জন্য উদাহরণ স্বরূপ বেলাল রযা, হেলাল রযা, জামাল রযা, কামাল রযা, যায়েদ রযা ইত্যাদি রাখা যাবে। এভাবে মেয়ে সন্তানের নামও মহিলা সাহাবী ও মহিলা ওলিদের নামের সাথে মিলিয়ে রাখা উপযোগী। যেমন- সকিনা, জরিনা, জামিলা, ফাতেমা, জয়নব, মাইমুনা, মরিয়াম ইত্যাদি। 


আকিকাতে কতটি পশু হওয়া উচিত?


(১৮) প্রশ্ন: ছেলে অথবা মেয়ে সন্তানের আকিকাতে পশুর সংখ্যার ব্যাপারে বর্ণনা দিন।
উত্তর: ছেলের জন্য দুটি ছাগল মেয়ের জন্য একটি। আমার আক্বা, আ‘লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত মাওলানা শাহ্ আহমদ রযা খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বর্ণনা করেন: (উভয়ের জন্য) কমপক্ষে একটি পশু (ছাগল) হতে হবে, আর ছেলের জন্য দুটি হওয়া উত্তম, যদি দুটি দেওয়ার উপর সক্ষম না হয় একটি যথেষ্ট। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া শরীফ, ২০তম খন্ড, ৫৮৬ পৃষ্ঠা) 

আকিকার পশু কেমন হওয়া চাই?


(১৯) প্রশ্ন: আকিকার পশু কেমন হওয়া উচিত?
উত্তর: এক কসাই হতে আকিকার পশু ক্রয় করা সম্পর্কে একটি প্রশ্নের উত্তরে আমার আক্বা আ‘লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: এই ক্ষেত্রে আকিকার বিধান কুরবানির মতো, তা হলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠিক থাকা। ছাগল বা ছাগী এক বৎসরের কম হলে জায়েয হবে না, ভেড়া, ভেড়ী ছয় মাসের হতে পারবে যদি এমন মোটাতাজা হয় যা দেখতে এক বছর পূর্ণ হয়েছে মনে হয়। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২০তম খন্ড, ৫৮৪ পৃষ্ঠা) আকিকার পশুর ব্যাপারে হযরত আল্লামা  শামী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “বাদায়ে” নামক কিতাবে বর্ণিত আছে; উত্তম কুরবানী হচ্ছে ভেড়া, চিত্র-বিচিত্র, শিং বিশিষ্ট, খাসী। (রদ্দুল মুখতার, ৯ম খন্ড, ৫৪৯ পৃষ্ঠা) 


পশুর বয়সে সন্দেহ হলে তবে? 


(২০) প্রশ্ন: আকিকা অথবা কুরবানির পশুর বয়সের মধ্যে সন্দেহ হলে কি করা উচিত?
উত্তর: বয়স কম হওয়ার সন্দেহ হলে সে পশু দিয়ে কুরবানী অথবা আকিকা করবে না। এ সম্পর্কে ফতোওয়ায়ে রযবীয়ার ২০তম খন্ড, ৫৮৩ ও ৫৮৪ পৃষ্ঠায় দুটি অংশ উল্লেখ করা হলো: (১) এক বছর থেকে কম বয়সী ছাগলের আকিকা অথবা কুরবানী হতে পারেনা, যদি এ ব্যাপারে সন্দেহ হয় তখনও একই হুকুম যখঝন দেখতে এক বৎসর হয়েছে মনে না হয়। لِاَنَّ عَدَمَ الْعِلْمِ بِتَحَقُّقِ الشِّرْطِ كَعِلْمِ الْعَدَمَ (কেননা শর্ত পাওয়া না যাওয়ার বিষয়টি মূলত সে জিনিসটি না থাকার মত।) 

(২) যদি বছর পূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে সন্দেহ হয় তখন তা দিয়ে আকিকা করবে না এবং পশু বিক্রেতার কথা এখানে যথেষ্ট নয়, কেননা পশু বিক্রি করতে পারলে তার লাভ রয়েছে এবং (এক বছরের পশু যেভাবে দাঁত ভেঙ্গে ফেলে এ পশুটি এখনো তা করেনি) এ প্রকাশ্য প্রমানটি বিক্রেতার কথাকে রহিত করছে। وَاللهُ تَعَالى اَعْلَمُ (সারকথা হলো; যদি ছাগলের এক বছর, গরু ইত্যাদি দুই বছরের কম হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ হলে এ অবস্থায় ঐ পশু দ্বারা আকিকা বা কুরবানী শুদ্ধ হতে পারেনা। 

আকিকার মাংস বন্টন করার মাসয়ালা 


(২১) প্রশ্ন: আকিকার মাংসের বন্টন কিভাবে করবে?
উত্তর: আমার আক্বা আ‘লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত, শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِবলেন: আকিকার মাংসও কুরবানীর মতো তিন ভাগ করা মুস্তাহাব। একভাগ নিজের, একভাগ আত্মীয়-স্বজন, একভাগ ফকির-মিসকিনের জন্য। ইচ্ছা করলে নিজে সব রেখে দিতে পারবে অথবা সম্পূর্ণ বন্টনও করে দিতে পারবে, কুরবানীর মতো। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২০তম খন্ড, ৫৮৪ পৃষ্ঠা) 


রান্না করে খাওয়াবে নাকি কাঁচা বন্টন করবে? 


(২২) প্রশ্ন: আকিকার মাংস রান্না করে খাওয়ানো উত্তম নাকি কাঁচা বন্টন করবে?
উত্তর: রান্না করে খাওয়ানো কাঁচা বন্টন করা থেকে উত্তম। 


আকিকার মাংস মাতা-পিতা খেতে পারবে কিনা? 


(২৩) প্রশ্ন: আকিকার মাংসের মধ্যে মাতা-পিতার অংশ আছে কিনা?
উত্তর: আকিকার মাংসে কারো কোন বিশেষ অংশ থাকা জরুরী নয়।। অবশ্য মুস্তাহাব বন্টন বর্ণিত হয়েছে। মাতা-পিতা খেতে পারবে না কথাটি প্রসিদ্ধ হয়ে গেছে, তা সম্পূর্ণ ভূল কথা। মাতাপিতা, দাদা-দাদি, নানা-নানি অন্যান্য সব মুসলমান (আকিকার) মাংস খেতে পারবে। 

কাফির ধাত্রী দ্বারা বাচ্চা প্রসব করানো হারাম 


(২৪) প্রশ্ন: কথিত আছে: আকিকার মাংস থেকে নাপিতকে মাথা এবং ধাত্রীকে রান দেওয়া উচিত, যদি এ ক্ষেত্রে ধাত্রী কাফির হয় তখন কি করবে?
উত্তর: আমার আক্বা আ‘লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ ফতোওয়ায়ে রযবীয়া ২০তম খন্ড, ৫৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন: নাপিতকে মাথা দেওয়ার ব্যাপারে কোন হুকুম নেই, কোন বাঁধাও নেই। এটা একটি প্রথা মাত্র (দেওয়াতে কোন অসুবিধা নেই) ধাত্রীকে রান দেওয়ার ব্যাপারে হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে, কিন্তু কাফির (বিধর্মী) মহিলা দ্বারা বাচ্চা প্রসব করানোর কাজ সম্পন্ন করা হারাম। কোন কাফির মহিলা (বিধর্মী) থেকে মুসলমান মহিলার পর্দার ব্যাপারে হুকুম হচ্ছে; পুরুষের ন্যায়। মুখমন্ডল এবং হাতের তালু ব্যতিত, পায়ের পাতার কিছু অংশও দেখাবে না এবং বাচ্চা প্রসব করানোর কোন কাজই বিধর্মী দ্বারা সম্পন্ন করবে না, বিশেষ করে প্রসবের কাজে। রদ্দুল মুখতারে বর্ণিত আছে: মুসলিম মহিলা কোন ইহুদী, খ্রীষ্টান অথবা মুশরিক মহিলাদের সামনে উলঙ্গ হওয়া জায়েয নেই। বাঁদীর ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য নয়। (রদ্দুল মুখতার, ৯ম খন্ড, ৬১৩ পৃষ্ঠা) কিন্তু বর্তমানে বাঁদীর প্রথা রহিত হয়ে গেছে। 

আ‘লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ আরো বর্ণনা করেন: নিজের বোকামীর কারণে (বিধর্মী দ্বারা ডেলিভারী করানো) গুনাহের কাজ, আর যদি তার মাধ্যমে কাজ করাতেই হয়, তখন ঐ (বিধর্মী) মহিলাকে রান ইত্যাদি দিবেন না, কাফিরদের জন্য সদকা ইত্যাদিতে কোন অধিকার নেই এবং তাদেরকে দেওয়া শরীয়াতের পক্ষ থেকে কোন অনুমতিও নেই। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২০তম খন্ড, ৫৮৮ ও ৫৮৯ পৃষ্ঠা) ৫৮৮ পৃষ্ঠার পরের ফতোওয়ায় তিনি رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বর্ণনা করেন: ঝাড়ুদার অথবা কোন কাফির মহিলাকে ধাত্রী নিয়োগ করা কঠোর হারাম। কোন কাফির (বিধর্মী) মহিলাকে পশুর রান ইত্যাদি দেওয়া যাবে না এবং বাচ্চার চুলের পরিমাপ করে যে রূপা (দেশীয় নিয়মানুযায়ী টাকাপয়সা) দেওয়া হয় তা ফকির-মিসকিনের হক, ধাত্রী যদি মিসকিন হয় তাহলে দেওয়াতে কোন অসুবিধা নেই। প্রকৃত হুকুম হচ্ছে; যারা এর বিপরীত করলো তথা ময়লা পরিস্কার কারিনী কে রান এবং ধনী নাপিতকে রূপা (তথা টাকা-পয়সা) প্রদান করে তা অনেক মন্দ কাজ  কিন্তু আকিকা হয়ে যাবে। وَاللهُ تَعَالى اَعْلَمُ 


আকিকার চামড়ার ব্যবহার 


(২৫) প্রশ্ন: আকিকার পশুর চামড়ার ব্যাপারে কি হুকুম?
উত্তর: কুরবানীর পশুর যে হুকুম, আকিকার পশুর মাংস ও চামড়ারও একই হুকুম, চায় নিজের কাছে রাখতে পারবে অথবা এমন জিনিসের পরিবর্তে বিনিময় করতে পারবে যা নিজের কাছে রেখে উপকৃত হওয়া যায়, চাই তা নিজের কাজে ব্যবহার করবে অথবা কোন মিসকিনকে দান করে দিবে অথবা কোন ভাল কাজ যেমন: মসজিদ অথবা মাদ্রাসায় ব্যয় করবে। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ৩৫৭ পৃষ্ঠা) 


চামড়া পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া কেমন? 


(২৬) প্রশ্ন: কসাইকে আকিকার পশুর চামড়া পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যাবে কিনা?
উত্তর: দিতে পারবে না। ((বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ৩১৬ পৃষ্ঠা) এভাবে নাপিতকে মাথা মুন্ডানোর বিনিময়ে অথবা ধাত্রীকে (যে মহিলা প্রসব কাজে সাহায্য করে) পশুর রান এ কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া শরীয়াতের মধ্যে অনুমতি নেই। 


(পশু) কে জবাই করবে? 


(২৭) প্রশ্ন: আকিকার পশু কে জবাই করবে?
উত্তর: আমার আক্বা আ‘লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: পিতা যদি উপস্থিত থাকে এবং জবাই করার ক্ষমতা রাখে তখন তার জবাই করা উত্তম। কারণ এটা নেয়ামতের শোকর আদায় করা, যে নেয়ামত প্রাপ্ত হয়েছে সে নিজের হাতে তার শুকরিয়া আদায় করা উচিত। তিনি যদি না থাকেন বা যদি তিনি জবাই করতে না পারেন তখন আরেকজনকে অনুমতি দিয়ে দিবেন। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২০তম খন্ড, ৫৮৫ পৃষ্ঠা) 


আকিকার দোয়া 

(২৮) প্রশ্ন: আকিকার দোয়া কে পড়বে? জবেহকারী না পিতা?
উত্তর: জবাইকারীই দোয়া পড়বে। যদি পিতা সন্তানের আকিকার পশু জবাই করে (জবাইয়ের পূর্বে) তখন এ দোয়া পড়বে: 

اَللّٰهُمَّ هٰذِهٖ عَقِيْقَةُ ابْنِيْ فُلَانٍ دَمُهَا بِدَمِهٖ وَلَحْمُهَا بِلَحْمِهٖ وَعَظْمُهَا بِعَظْمِهٖ وَجِلْدُهَا بِجِلْدِهٖ وَشَعْرُهَا بِشَعْرِهٖ ط  اَللّٰهُمَّ اجْعَلْهَا فِدَاءً لِابْنِىْ مِنَ النَّارط بِسْمِ اللهِ اَللهُ اَكْبَرْ- 

অর্থ:- হে আল্লাহ্! এটা আমার অমুক ছেলের আকিকা তার (পশুর) রক্ত, তার (ছেলের) রক্তের, তার মাংস ছেলের মাংসের, তার হাড় ছেলের হাড়ের, তার চামড়া ছেলের চামড়ার, তার চুল ছেলের চুলের বিনিময়ে কবুল করো। হে আল্লাহ্! এ পশুকে আমার ছেলের জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে ফিদিয়া বানিয়ে দাও। আল্লাহর নামে আরম্ভ, আল্লাহ্ মহান। (দোয়া শেষ করার সাথে সাথে দ্রুত জবেহ করে দিন) 

‘অমুক’ এর স্থানে এ সন্তানের যে নাম হয় তা হবে, আর মেয়ে সন্তান হলে উভয় স্থানে ابْنِيْ এর জায়গায় بِنْتِىْ হবে, এবং যেখানে هٖ আছে সেখানে هَا হবে। যদি (পিতা ছাড়া) অন্য ব্যক্তি জবাই করে তখন উভয় স্থানে ابْنِيْ فُلَانٍ অথবা فُلَانٍ بِنْتِىْ এর স্থানে ابْنِيْ فُلَانٍ فُلَانٍ অথবা فُلَانَه بِنْتِ قُلَانَه বলবে। সন্তানকে তার পিতার দিকে সম্পর্কিত করবে।  (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২০তম খন্ড, ৫৮৫ পৃষ্ঠা) উদাহরণ স্বরূপ: মুহাম্মদ রযা বিন মুহাম্মদ আলী। 


দোয়া পড়া কি জরুরী? 


(২৯) প্রশ্ন: দোয়া পড়া ছাড়া কি আকিকা শুদ্ধ হবে না?
উত্তর: দোয়া পড়া ছাড়া আকিকা শুদ্ধ হয়ে যাবে। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ৩৫৭ পৃষ্ঠা) 


আকিকার পশুর মাংসের হাঁড় ভাঙ্গা কেমন? 


(৩০) প্রশ্ন: আকিকার পশুর হাড় ভাঙ্গা যাবে না! এটা সঠিক কিনা?
উত্তর: উত্তম হচ্ছে; হাড় না ভাঙ্গা বরং হাড় থেকে মাংস ছাড়িয়ে নিবে, এটা বাচ্চার নিরাপত্তার ভাল লক্ষণ, আর হাড় ভেঙ্গে মাংসের সাথে যদি রান্না করা হয়, তাতেও কোন অসুবিধা নেই। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ৩৫৭ পৃষ্ঠা) 


মিষ্টি মাংস 


(৩১) প্রশ্ন: আকিকার মাংস রান্না করার কোন বিশেষ নিয়ম আছে কিনা?
উত্তর: সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা, হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: মাংস যে কোন ভাবেই রান্না করা যাবে, মিষ্টি করে রান্না করা হলে বাচ্চার চরিত্র ভাল হওয়ার লক্ষণ। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ৩৫৭ পৃষ্ঠা) 

মিষ্টি মাংস রান্নার পদ্ধতি দুইটি: (১) এক কেজি মাংসের সাথে আদা কেজি মিষ্টি দই, ছোট এলাচি সাতটি, ৫০ গ্রাম বাদাম, প্রয়োজন মত ঘি অথবা তেল মিশিয়ে রান্না করে নিন। রান্নার পর প্রয়োজন মতো চিনি মিশ্রিত পানি, সৌন্দর্য্যরে জন্য গাজর কুচি, কিসমিস আরো অন্যান্য জিনিস দেওয়া যেতে পারে। 

(২) এক কেজি মাংসের মধ্যে আদা কেজি চুকান্দার (একটি মিষ্টি সবজি) দিয়ে উল্লেখিত নিয়মে রান্না করে নিন । 

(৩২) প্রশ্ন: আকিকার অনুষ্ঠানে যে উপহার দেওয়া হয়, তার বিধান কি?
উত্তর: বর্তমানে সাধারণত আকিকা উপলক্ষ্যে খাবারের আয়োজন করে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে দাওয়াত দেয়া হয় যা খুব ভাল কাজ, দাওয়াতে আগত মেহমানগন বাচ্চার জন্য যে উপহার এনে থাকে তাও উত্তম কাজ। অবশ্যই এখানে কিছুটা ব্যাখ্যা রয়েছে, যদি মেহমান কোন উপহার না আনেন তবে অনেক সময় মেজবান দাতা অথবা ঘরের লোকেরা বিভিন্ন ব্যাপারে মন্দ কথা বলে গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায়। (যেখানে প্রবল ধারণা অনুযায়ী এমন অবস্থা হতে পারে বলে আশংকা করে, মেহমানের উচিত জোরাজোরী না করলে সে দাওয়াতে অংশগ্রহণ না করা।) যদি বিশেষ প্রয়োজনে যেতে হয় সেক্ষেত্রে কোন উপহার ইত্যাদি নিয়ে যাওয়াতে কোন অসুবিধা নেই। অবশ্যই মেজবান দাতা এ উদ্দেশ্যে মেজবান আয়োজন করল যে মেহমান যদি কোন উপহার সামগ্রী না আনে তাহলে মেজবান দাতা ঐ মেহমানকে মন্দ বলবে, অথবা এমন কোন নিয়্যত নেই কিন্তু ঐ মেজবান দাতার এমন মন্দ অভ্যাস মেহমানের এটা যদি তার প্রবল ধারণা হয়, কোন জিনিস না আনলে সে মেহমানের ব্যাপারে বিভিন্ন মন্দ বলে থাকে তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য মেহমানরা উপহার সামগ্রী নিয়ে আসেন এমতাবস্থায় মেজবান দাতা গুনাহগার ও জাহান্নামের আযাবের হকদার। আর এ উপহার তার জন্য ঘুষ হিসেবে গণ্য হবে। হ্যাঁ! যদি মন্দ বলার কোন উদ্দেশ্য না থাকে এবং তার এ রকম মন্দ অভ্যাসও নেই। তখন উপহার গ্রহণ করাতে কোন অসুবিধা নেই। 

--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা “মুহাম্মদ ইলয়াস আত্তার” কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত আকিকা বিষয়ক প্রশ্নোত্তর রিসালা “আকিকা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর” নামক ছোট রিসালার ৪-২৬ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। রিসালাটি নিজে কিনুন, অন্যকে উপহার দিন।

যারা মোবাইলে (পিডিএফ) রিসালাটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন এবং অন্যের সাথে শেয়ার করুন।

এমন সুন্দর সুন্দর বাংলা ইসলামীক বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন 
কুরবানী সম্পর্কিত মাসাআলা মাসাইল পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks for supporting.