বিভাগ সমূহ

বুধবার, ৬ মে, ২০২০

মিসওয়াকের ফযীলত ও মিসওয়াক করার পদ্ধতি


কখন মিসওয়াকের সাওয়াব পাওয়া যাবে না!

প্রত্যেক আমল তার নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল: ভাল নিয়্যত না হলে তার সাওয়াব পাওয়া যায় না। সুতরাং মিসওয়াক করার সময় এরূপ নিয়্যত করে নিন: “সুন্নাতের সাওয়াব অর্জনের জন্য মিসওয়াক করবো এবং এর দ্বারা যিকির ও দরূদ এবং কোরআন তিলাওয়াত করার জন্য মুখ পরিষ্কার করবো।”

মিসওয়াক সম্পর্কিত ১০টি হাদীস শরীফ

১: মিস্ওয়াক সহকারে দুই রাকাত নামায আদায় করা মিস্ওয়াক ছাড়া ৭০ রাকাতের চেয়ে উত্তম। (আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/১০২, হাদীস- ১৮)

২: মিসওয়াক সহকারে নামায আদায় করা, মিসওয়াক বিহীন নামায আদায় করার চেয়ে ৭০ গুণ বেশি উত্তম। (শুয়াবুল ঈমান, ৩/২৬, হাদীস- ২৭৭৪)
৩: চারটি জিনিস রাসূলদের সুন্নাত: (১) সুগন্ধি ব্যবহার করা (২) বিবাহ করা (৩) মিসওয়াক করা এবং (৪) লজ্জা করা। (মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল, ৯/১৪৭, হাদীস- ২৩৬৪১)
৪: মিসওয়াক করো! মিসওয়াক করো! আমার নিকট হলদে দাঁত নিয়ে আসিও না। (জমউল জাওয়ামে, ১/৩৮৯, হাদীস- ২৮৭৫)
৫: মিসওয়াকে মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের শিফা (আরোগ্য) রয়েছে। (জামে সগীর, ২৯৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪৮৪০)
৬: যদি আমার আপন উম্মতের কষ্ট ও সমস্যার চিন্তা না থাকতো, তবে আমি তাদের প্রতিবার অযুর সাথে মিসওয়াক করার আদেশ দিতাম। (বুখারী, ১/৬৩৭)
৭: মিস্ওয়াকের ব্যবহার নিজের জন্য আবশ্যক করে নাও। কেননা, এতে মুখের পরিচ্ছন্নতা এবং আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির মাধ্যম রয়েছে। (মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ২/৪৩৮, হাদীস- ৫৮৬৯)
৮: অযু হচ্ছে ঈমানের অধের্ক, আর মিসওয়াক হচ্ছে অযুর অধের্ক। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, ১/১৯৭, হাদীস- ২২)
৯: মানুষ যখন মিসওয়াক করে নেয়, অতঃপর নামায়ে দন্ডায়মান হয়, তখন ফিরিশতা তার পেছনে দাঁড়িয়ে কিরাত শ্রবণ করে, অতঃপর তার নিকটে আসে, এমনকি নিজের মুখ তার মুখের সাথে লাগিয়ে দেয়। (আল বাহরিজ যাখার, ২/২১৪, হাদীস- ৬০৩)
১০: যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করলো এবং মিসওয়াক করলো, সুগন্ধি লাগালো, উত্তম কাপড় পরিধান করে, অতঃপর মসজিদে আসে এবং লোকদের গর্দানের উপর দিয়ে লাফিয়ে যায় না, বরং নামায আদায় করলো এবং ইমাম আসার পর (অর্থাৎ খুতবা এবং) নামায ক্ষেত্রে অবসর হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকলো, তবে আল্লাহ্ তাআলা তার সমস্ত গুনাহ যা তার দ্বারা পুরো সপ্তাহে (সংগঠিত) হয়েছে, সেগুলো ক্ষমা করে দেন। (মুসনদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ৪/১৬২, হাদীস- ১১৭৬৮)

মিসওয়াক করার দ্বারা স্মরণশক্তি তীক্ষ্ম হয়ে থাকে

আমীরুল মু’মিনীন, হযরত মাওলায়ে কায়েনাত, আলীউল মুরতাদা শেরে খোদা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন: তিনটি জিনিস স্মরণশক্তিকে তীক্ষ্ম করে এবং কফ দূর করে: ১: মিসওয়াক ২: রোযা এবং ৩: কোরআনে করীমের তিলাওয়াত। (ইহইয়াউল উলুম, ১/৩৬৪)

মৃত্যুর সময় কলেমা নসীব হবে

দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কতর্কৃ প্রক্রাশিত কিতাব “বাহারে শরীয়াত” এর প্রথম খন্ডের ২৮৮ পৃষ্ঠায় রয়েছে: মাশায়েখে কিরামগণ رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِم   বলেন: “যে ব্যক্তি মিস্ওয়াকে অভ্যস্থ হয়, মৃত্যুর সময় তার কলেমা পড়া নসীব হবে এবং যে আফিম (এক প্রকার নেশার বস্তু) খায়, মৃত্যুর সময় তার কলেমা নসীব হবে না।”

জ্ঞান বৃদ্ধিকারী আমল

হযরত সায়্যিদুনা ইমাম শাফেয়ী. رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: চারটি জিনিস জ্ঞান বৃদ্ধি করে: ১: অনর্থক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা, ২: মিসওয়াকের ব্যবহার, ৩: নেককার লোকদের সংস্পর্শ এবং ৪: নিজের জ্ঞানের উপর আমল করা। (হায়াতুল হায়ওয়ান লিত দামিরী, ২/১৬৬)


হুযুর পুরনূর ﷺ  কখন কখন মিসওয়াক করতেন! 

প্রত্যেক নামাযের জন্য মিসওয়াক

হযরত সায়্যিদুনা যায়েদ বিন খালিদ জুহনী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন: রাসূলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আপন ঘর থেকে কোন নামাযের জন্য ততক্ষন পর্যন্ত বাইরে তাশরীফ নিয়ে যেতেন না, যতক্ষন মিসওয়াক করে না নিতেন। (মু’জামুল কাবীর লিত তাবারানী, ৫/২৫৪, হাদীস- ৫২৬১)

ঘুম থেকে উঠে মিসওয়াক করা সুন্নাত

হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا থেকে বর্ণিত, হুযুর পূরনূর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর নিকটে রাতে অযুর পানি এবং মিসওয়াক রাখা হত, যখন হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم রাতে ঘুম থেকে উঠতেন, তখন প্রথমেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতেন অতঃপর মিসওয়াক করতেন। (আবু দাউদ, ২য় খন্ড, হাদীস- ৫৬) হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا থেকে বণির্ত যে, নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم যখনই রাত বা দিনে ঘুম থেকে জাগ্রত হতেন, তখন অযু করার পূর্বে মিসওয়াক করতেন। (আবু দাউদ, ২য় খন্ড, হাদীস- ৫৭)

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর মিসওয়াক করা সুন্নাত, ঘুমন্ত অবস্থায় আমাদের পেট দূর্গন্ধময় বাতাস মূখের দিকে উঠে আসে, যার কারণে মুখ দূগর্ন্ধময় এবং স্বাদ পরিবতর্ন হয়ে যায়। এই সুন্নাতের বরকতে মুখ পরিষ্কার হয়ে যায়।

ঘরে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম কাজ

হযরত শুরাইহ বিন হানি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন; আমি হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا কে জিজ্ঞাসা করলাম: হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم যখন ঘরে প্রবেশ করতেন তখন সর্বপ্রথম কোন কাজটি করতেন? তিনি বললেন: মিসওয়াক। (মুসলিম, ১৫২ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৫৩)

রোযাবস্থায় মিসওয়াক

হযরত সায়্যিদুনা আমের ইবনে রবীয়া رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত; “আমি অসংখ্যবার মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে রোযাবস্থায় মিসওয়াক করতে দেখেছি।” (তিরমিযী, ২/১৭৬, হাদীস নং-৭২৫)

রোযাবস্থায় মিসওয়াক করার কিছু মাদানী ফুল

“বাহারে শরীয়াত” ১ম খন্ডের ৯৯৭ পৃষ্ঠায় বণির্ত রয়েছে: রোযাবস্থায় মিসওয়াক করা মাকরূহ নয় বরং যেমন অন্যান্য দিনে সুন্নাত তেমনি রোযাবস্থায়ও সুন্নাত। মিসওয়াক শুষ্ক হোক বা ভিজা, যদিও পানি দ্বারা ভিজানো হয়েছে, দ্বি-প্রহরের পূর্বে করুক বা পরে, কোন সময়েই মাকরূহ নয়। অধিকাংশ লোকের নিকট (এটা) প্রসিদ্ধ যে, দ্বি-প্রহরের পর রোযাদারের জন্য মিসওয়াক করা মাকরূহ, এটা আমাদের হানাফী মাযহাবের পরিপন্থী (বাহারে শরীয়াত, ১/৯৯৭)।  যদি মিসওয়াক চিবানোর কারণে আঁশ ছিড়ে যায় বা স্বাদ অনুভব হয় তবে এমন মিসওয়াক রোযাবস্থায় ব্যবহার না করা উচিৎ। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংশোধিত), ১০/৫১১)

দুনিয়া থেকে পর্দা করার পূর্বে মিসওয়াক

হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا বলেন: হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم দুনিয়া থেকে পর্দা করার সময়ে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার (صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم) জন্য কি মিসওয়াক নিবো? তখন হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم পবিত্র মাথা মুবারক নেঁড়ে ইশারা করলেন: “হ্যাঁ।” সুতরাং আমি (আমার আপন ভাই) হযরত আব্দুর রহমান رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে মিসওয়াক নিয়ে হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে পেশ করলাম। হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ব্যবহার করতে চাইলেন, কিন্তু মিসওয়াক শক্ত ছিলো, এজন্য আমি আরয করলাম: নরম করে দিবো? হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم পবিত্র মাথা মুবারক নেঁড়ে ইশারা করলেন:“হ্যাঁ।” অতঃপর আমি আমার দাঁত দিয়ে চিবিয়ে নরম করে হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে পেশ করলাম। হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তা দাঁতে ঘষতে (ঘুরাতে) শুরু করলেন। (বুখারী, ১ম ও ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১৫৭, ৩০৮, হাদীস- ৮৯০, ৪৪৪৯)

মুসাফিরের জন্য ৮টি জিনিস নিজের সাথে রাখা সুন্নাত

আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমাম আহমদ রযা খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর শ্রদ্ধেয় আব্বাজান রইসুল মুতাকাল্লিমিন হযরত মাওলানা নকী আলী খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ লিখেন: নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّمসফরে ১: মিসওয়াক, ২: সুরমাদানী ৩: আয়না ৪: চিরুনী ৫: কাঁচি ৬: সূঁই  ৭: সুতা নিজের সাথে রাখতেন। (আনওয়ারে জামালে মুস্তফা, ৯৬০ পৃষ্ঠা) অপর এক বর্ণনায় ৮: “তেল” শব্দটিও উল্লেখ রয়েছে। (সুবুলুল হুদা, ৭/৩৪৭)

খাওয়ার পূর্বে মিসওয়াক

হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ বিন ওমর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا খাবার খাওয়ার পূর্বে মিসওয়াক করে নিতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, ১/১৯৭)

দাঁতের হলদে ভাব দূর করার ব্যবস্থাপত্র

হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন: “খাবারের পর মিসওয়াক করা দ্বারা দাঁতের হলদে ভাব দূরীভূত হয়।” (আল কামিল ফি দা’ফায়ির রিজাল, ৪/১২৩)

শতকরা ৮০ ভাগ রোগের কারণ

বিশেষজ্ঞদের গবেষণা অনুযায়ী “শতকরা ৮০ ভাগ রোগ পেটের পীড়া ও দাঁতের সমস্যার কারণেই সৃষ্টি হয়ে থাকে।” সাধারণত দাঁত পরিষ্কারের দিকে সজাগ না থাকার কারণে মাঁড়িতে বিভিন্ন ধরণের জীবানু সৃষ্টি হতে থাকে, অতঃপর তা পেটে গিয়ে বিভিন্ন ধরণের রোগের কারণ হয়ে থাকে ।

মিসওয়াকের ঔষধী গুণাগুণ

۞ আমেরিকার এক প্রসিদ্ধ কোম্পানির গবেষণা অনুযায়ী মিসওয়াকের মধ্যে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার ক্ষমতা অন্যান্য যেকোন পদ্ধতির তুলনায় ২০ ভাগ বেশি রযেছে। ۞ সুইডেনের বিজ্ঞানীদের এক গবেষণা অনুযায়ী মিসওয়াকের আঁশ ব্যাকটেরিয়াকে স্পর্শ না করেই সরাসরি (Direct)  ধ্বংস করে দেয় এবং দাঁতকে অনেক রোগ থেকে বাঁচায়। ۞ ইউ এস ন্যাশনাল লাইব্রেরী অফ মেডিসিন (U.S National Library of Medicine) এর প্রকাশিত গবেষণায় এটা বলা হয়েছে যে, যদি মিসওয়াক সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় তবে তা দাঁত এবং মুখকে পরিস্কার করে এমনকি তা মাঁড়ি ঠিক থাকার সর্বোত্তম মাধ্যম। ۞ এক গবেষণা অনুযায়ী যে সব লোক মিসওয়াকে অভ্যস্থ তাদের মাঁড়ি থেকে রক্ত বের হওয়ার অভিযোগ অনেক কম হয়ে থাকে। ۞ আমেরিকার আটলান্টায় দাঁত সম্পর্কিত এক অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে যে, মিসওয়াকে এমন এক পদার্থ (Substances) থাকে, যা দাঁতকে দূর্বল হওয়া থেকে বাঁচায় এবং ঐ সকল ঔষধ যা দাঁত পরিস্কার করার কাজে ব্যবহৃত হয়, সেই সব ঔষধ থেকে বেশি উপকারী হলো মিসওয়াক।  ۞   মিসওয়াক দাঁতের জমে থাকা ময়লা দূর করে। ۞ মিসওয়াক দাঁতকে ভেঙ্গে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। ۞ স্থায়ী সর্দি ও কাঁশির এমন রোগী যার কফ বের হয়না, যখন সে মিসওয়াক করে তখন কফ বের হতে থাকে এবং রোগীর মস্তিষ্ক হালকা হতে থাকে। ۞ প্যাথোলজিষ্টের (Pathologists) অভিজ্ঞতা ও গবেষণায় এই কথা প্রমানিত হয়েছে যে, স্থায়ী সর্দি- কাশির জন্য মিসওয়াক সর্বোত্তম চিকিৎসা স্বরূপ।

মিসওয়াক দ্বারা পেটের গ্যাস ও মুখের ফোসকার চিকিৎসা

মুখে অনেক ধরনের ফোসকা, পেটের উষ্ণতা ও গ্যাসের কারনেই হয়ে থাকে। এর একটি ধরন এমনও রয়েছে, যার জীবানু ছড়িয়ে পড়ে, এর জন্য তাজা মিসওয়াক মুখে মালিশ করুন এবং এর দ্বারা যে লালা বের হয় তাও মুখের ভিতর ভালভাবে নড়াছড়া করুন। اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ রোগ দূর হয়ে যাবে। কতিপয় লোক অভিযোগ করে যে, দাঁত হলদে হয়ে গেছে বা দাঁতের ধবধবে সাদা ভাব নষ্ট হয়ে গেছে। এমন লোকদের জন্য মিসওয়াকের নতুন আঁশ খুবই উপকারী, তাছাড়া দাঁতের হলদেভাব দূর করার জন্যও খুবই উপকারী। মিসওয়াক দূর্গন্ধকে দূর করে এবং জীবানূ নিঃশেষ করে, যার দ্বারা মানুষ অসংখ্য রোগ থেকে বাঁচতে পারে।

মিসওয়াকের দোয়া

কিছু ওলামায়ে কিরাম   رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِمْ বলেন: মিসওয়াক করার সময় এই দোয়া পাঠ করুন।
اَللّهُمَّ بَيِّضْ بِه اَسْنَانِىْ وَشُدَّ بِه لِثَاتِى، وَثَبِّتْ بِه لَهَاتِيْ، وَبَارِكْ لِىْ فِيْهِ يَا اَرْحَمَ الرّاحِمِيْن

অনুবাদ: অর্থাৎ হে আল্লাহ! এর দ্বারা আমার দাঁতকে সাদা, মাঁড়িকে মজবুত এবং গলায় শক্তি দান করুন, এবং আমার জন্য এতে বরকত দান করুন, হে সবচেয়ে বড় দয়াবান। (শরহূল মুহায্যাবী লিন নববী, ১/২৮৩)

اَللّهُمَّ طَهِّرْ فَمِىْ، وَنَوِّرْ قَلْبِىْ، وَطَهِّرْ بَدَنِىْ، وَحَرِّمْ جَسَدِىْ عَلَى النَّارِ، وَاَدْخِلْنِىْ بِرَحْمَتِكَ فِىْ عِبَادِكَ الصّلِحِيْنَ

অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমার মুখ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, অন্তরকে আলোকিত, শরীরকে পবিত্র এবং আমার শরীরকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দাও এবং আমাকে তোমার রহমতে তোমারই নেককার বান্দাদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করো।

মাদানী ফুল: চাইলে দু’টি দোয়াই পাঠ করুন বা যে কোন একটি পাঠ করে নিন।

মিসওয়াকের ১৪টি মাদানী ফুল

۞ মিসওয়াক পিলু অথবা যয়তুন বা নিম ইত্যাদি তিক্ত গাছের হওয়া চাই। ۞ মিসওয়াক মোটা হতে হবে কনিষ্ঠা আঙ্গুল পরিমাণ। ۞ মিসওয়াক যেন এক বিঘত অপেক্ষা লম্বা না হয়, কেননা এর উপর শয়তান বসে। ۞ মিসওয়াকের আঁশগুলো যেন নরম হয়, কারণ শক্ত আঁশ দাঁত ও মাঁড়ির মধ্যে ফাঁক সৃষ্টির কারণ হয়। ۞ মিসওয়াক তাজা হলে তো ভাল নতুবা কিছুক্ষণ পানির গ্লাসে ভিজিয়ে নরম করে নিন। ۞ চিকিৎসকদের পরামর্শ হচ্ছে, এর আঁশগুলো দৈনিক কাটতে থাকুন

মিসওয়াক করার পদ্ধতি

۞ দাঁতের প্রস্থে মিসওয়াক করুন। ۞ যখনই মিসওয়াক করবেন কমপক্ষে তিনবার করবেন, প্রতিবারই মিসওয়াক ধুয়ে নিন। ۞ মিসওয়াক ডান হাতে এইভাবে ধরবেন যেন কনিষ্ঠা আঙ্গুল নিচে, মাঝখানের তিন আঙ্গুল উপরে এবং বৃদ্ধাঙ্গুল মিসওয়াকের মাথায় থাকে, প্রথমে ডান দিকের উপরের দাঁত সমূহে, তারপর বাম দিকের উপরের দাঁত সমূহে অতঃপর ডান দিকের নিচের অংশে, তারপর বাম দিকের নিচের দাঁত সমূহে মিসওয়াক করুন। ۞ মুষ্টিবদ্ধ করে মিসওয়াক করলে অর্শ্বরোগ হওয়ার আশংকা থাকে। ۞ মিসওয়াক সুন্নাতে কাবলিয়া (অর্থাৎ মিসওয়াক অযুর পূর্বেকার সুন্নাত, অযুর মধ্যকার সুন্নাত নয়, সুতরাং অযু শুরু করার পূর্বে মিসওয়াক করুন অতঃপর তিনবার করে উভয় হাত ধুয়ে নিন এবং পদ্ধতি অনুযায়ী অযু সম্পন্ন করুন) তবে মিসওয়াক করা তখনই সুন্নাতে মুয়াক্কাদা যখন মুখে দুর্গন্ধ থাকে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১ম খন্ড, ৮৩৭ পৃষ্ঠা)


মহিলাদের জন্য মিসওয়াক করা বিবি আয়েশার সুন্নাত

۞ “মলফুযাতে আ’লা হযরত”এ বর্ণিত রয়েছে: “মহিলাদের জন্য মিসওয়াক করা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا এর সুন্নাত। কিন্তু যদি তারা না করে তবে কোন অসুবিদা নেই। তাদের দাঁত ও মাঁড়ি পুরুষের তুলনায় দূর্বল হয়ে থাকে, (তাদের জন্য) মিস্সী (অর্থাৎ- মহিলাদের মিসওয়াক) দাঁতের মাজনই যথেষ্ট।” (মলফুযাতে আ’লা হযরত, ৩৫৭ পৃষ্ঠা)

যখন মিসওয়াক ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে যায়

۞ যখন মিসওয়াক ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে যায় তখন যেখানে সেখানে ফেলে দিবেন না, কারণ এটা সুন্নাত আদায় করার উপকরণ। কোন স্থানে সাবধানে রেখে দিন অথবা দাফন করে ফেলুন, অন্যথায় পাথর ইত্যাদির সাথে বেধে সমুদ্রে ডুবিয়ে দিন। (বিস্তারিত জানতে মাকতাবাতুল মদীনা কতর্কৃ প্রকাশিত বাহারে শরীয়াত ১ম খন্ডের ২৯৪ থেকে ২৯৫ পৃষ্ঠা অধ্যয়ন করুন)

আপনি কি মিসওয়াক করতে জানেন?

হতে পারে আপনার অন্তরে এই ধারণা আসছে যে, আমি তো অনেকদিন ধরে মিসওয়াক ব্যবহার করছি, কিন্তু আমার তো দাঁত এবং পেট দু’টিরই অবস্থা খারাপ! হে আমার সহজ সরল ইসলামী ভাই! এতে মিসওয়াকে নয়, আপনার নিজেরই অপূর্ণতা রয়েছে। আমি এই ফলাফলে পৌঁছেছি যে, সম্ভবত হাজারের মাঝে এক আধজন এমন রয়েছে, যে সঠিক পদ্ধতিতে মিসওয়াক ব্যবহার করে থাকে, আমরা সচরাচর তাড়াতাড়ি দাঁতে মিসওয়াক মালিশ করে অযু করে চলে যাই অর্থাৎ এমন বলুন যে, আমরা মিসওয়াক নয় বরং “মিসওয়াকের রীতি” আদায় করছি!

মিসওয়াকের আশিকের ১০টি ঘটনা, বর্ণনা সমূহ

১: বাকা মিসওয়াক 

নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এক স্থান থেকে দু’টি মিসওয়াক নিলেন, যাতে একটি কিছুটা বাঁকা ছিলো এবং অপরটি সোজা। হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সোজা মিসওয়াকটি নিজের সঙ্গী সাহাবীকে দিয়ে দিলেন এবং বাঁকাটি নিজের জন্য রেখে দিলেন। ঐ সাহাবীটি আরয করলেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আল্লাহর শপথ! আপনি صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সোজা মিসওয়াকেরই বেশি হকদার। ইরশাদ করলেন: “যখনই কোন ব্যক্তি কারো সঙ্গ অবলম্বন করে, যদিও দিনের এক মুহুর্তের জন্যও হয়, তবে কিয়ামতের দিন সেই সাক্ষাৎ (সঙ্গ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।” (কুতুল কুলুব, ২/৩৮৭, ইহইয়াউল উলুম, ২/২১৮)

২: মিসওয়াক চুষা কেমন?

“দুররে মুখতার” এর ইবারত: “মিসওয়াক চুষার ফলে অন্ধত্ব সৃষ্টি হয়”, এর আলোকে “ফতোওয়ায়ে শামী”তে বর্ণিত রয়েছে: না চুষে লালা বের করা সম্পর্কে হাকীম তিরমিযী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: “মিসওয়াক করার সময় প্রথমের দিকে বের হওয়া লালা গিলে ফেলুন, কেননা এটা কুষ্ঠ ও ধবল (অর্থাৎ রক্ত নষ্ট হওয়া জনিত রোগ) এবং মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের জন্য উপকারী।” (রদ্দুল মুহতার, ১/২৫২)

৩: পাগড়ী শরীফে মিসওয়াক

“ফতোওয়ায়ে শামী”তে বর্ণিত রয়েছে: কিছু কিছু সাহাবায়ে কিরাম পাগড়ী শরীফের প্যাচেও মিসওয়াক রাখতেন। (রদ্দুল মুহতার, ১/২৫১)

৪: কানের উপর মিসওয়াক

হযরত সায়্যিদুনা যায়িদ বিন খালিদ জুহনী رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ মসজিদে নামাযের জন্য তাশরীফ নিয়ে আসার সময় মিসওয়াক তাঁর কানের উপর এমন ভাবে রাখা থাকতো যেমন লিখকের কানের উপর কলম রাখা থাকে। (তিরমিযী, ১/১০০, হাদীস নং-২৩)

৫: ঘাড়ে মিসওয়াক

দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ৫১৮ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “ইমামা কে ফাযায়িল” এর ৪০২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে: হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আব্দুল ওয়াহাব শারানী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: আমাদের নিকট থেকে ওয়াদা নেয়া হয়েছে যে, অযু এবং প্রত্যেক নামাযের পূর্বে নিয়মিত মিসওয়াক করবো, যদিওবা আমাদের মধ্য থেকে অধিকাংশেরই (মিসওয়াক যেন হারিয়ে না যায়, সেজন্য) নিজেদের ঘাড়ে দড়ি দিয়ে মিসওয়াক বেঁধে রাখতে হতো বা পাগড়ীর সাথে বেঁধে রাখতাম, আর পাগড়ী যদি শুধু সারবন্দ দ্বারা হতো এবং যদি শুধু টুপি হতো, তবে এর উপর শক্ত করে পাগড়ী বাঁধতাম এবং মিসওয়াককে বাম দিকের কানের দিকে পাগড়ীর সাথে আটকে রাখতাম। (লাওয়াকেহেল আনওয়ার, ১/১৬)

ফিতনার আশংকা থাকলে মুস্তাহাব ত্যাগ করতে হবে

সাহাবায়ে কিরাম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এবং বুযুর্গানে দ্বীনদের رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِم  মিসওয়াকের প্রতি ভালবাসার মারহাবা! এবং তাঁদের প্রিয় অভ্যাসের প্রতি শত কোটি মারহাবা! এটা মনে রাখবেন, আজকাল মিসওয়াক কানে রেখে বা গলায় ঝুলিয়ে অথবা পাগড়ী শরীফে রেখে কেউ যদি ঘর থেকে বের হয়, তবে সম্ভবত লোকেরা হাসি-ঠাট্টা করবে, সুতরাং সর্বসাধারণের সামনে এরূপ না করা চাই। আমার আক্বা আ’লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর খিদমতে একটি বিশেষ মুস্তাহাব কাজ করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, (অর্থাৎ ফতোওয়া চাওয়া হলো) যেহেতু সেই মুস্তাহাব কাজটির উপর আমল করাতে ভারতে ফিতনা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো, সুতরাং তিনি رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বললেন: “যেখানে তার প্রচলন রয়েছে সেখানে মুস্তাহাব, (কিন্তু) ভারতের শহরে এর নাম নিশানাও নেই, যদি কেউ করে তবে অজ্ঞ লোকেরা হাসি-ঠাট্টা করবে এবং শরীয়াতের মাসআলার প্রতি হাসি-ঠাট্টা করা নিজের দ্বীনকে ধ্বংস করা, তাই এর উপর আমল করার প্রয়োজন নেই। একটি মুস্তাহাব আমল করা এবং মুসলমানকে এমন কঠিন বিপদে (অর্থাৎ শরীয়াতের মাসআলার প্রতি হাসি-ঠাট্টা করার বিপদ) ফেলা পছন্দনীয় নয়।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২২/৬০৩)

কানে কলম রাখা

লিখকের কানে কলম রাখা ভাল, যেমনটি হযরত সায়্যিদুনা যায়িদ বিন সাবিত رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন যে, আমি নবী করীম, নূরে মুজাস্সাম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর খিদমতে উপস্থিত হলাম এবং তাঁর সামনে কাতেব (অর্থাৎ একজন লিখক) ছিলো, আমি হুযুরে আনওয়ার صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে ইরশাদ করতে শুনেছি যে, কলম তোমার কানে রাখো। কেননা, এটা ফলাফলকে অনেক বেশি স্মরণ করিয়ে দেয়। (তিরমিযী, ৪/৩২৭, হাদীস নং-২৭২৩)

প্রসিদ্ধ মুফাসিসর, হাকিমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এই হাদীসে পাকের আলোকে বলেন: যদি কাতেব (অর্থাৎ লিখক) কলম কানের সাথে লাগিয়ে রাখে তবে তার সেই উদ্দেশ্য স্মরণে থাকবে যা তাকে লিখতে হবে। উত্তম হচ্ছে যে, কলম ডান কানে রাখা। আল্লাহ্ তাআলা প্রত্যেকটি জিনিষে কোন না কোন প্রভাব রেখেছেন, কলম কানের সাথে লাগানোতে এই প্রভাব হয় যে, তার (অর্থাৎ কানে কলম রাখা ব্যক্তির) রচনার বিষয়টি স্মরণে থাকে। (মিরাতুল মানাযিহ, ৬/৩৩৪) আর এর দ্বারা উদ্দেশ্য মনস্তাত্বিক প্রভাবও হতে পারে।

মিসওয়াক রাখার জন্য বিশেষ পকেট বানিয়ে নিন

সম্ভব হলে নিজের জামার বুকের ডানে বামে দু’টি পকেট বানিয়ে নিন এবং হৃদয়ের পাশে (অর্থাৎ বাম দিকে) মিসওয়াক রাখার জন্য ছোট একটি পকেট বানিয়ে নিন। আর এভাবেই প্রিয় আকা মাদানী মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর প্রিয় প্রিয় সুন্নাত মিসওয়াক শরীফ বুক এবং হৃদয়ের সাথে লেগে থাকবে।

৬: স্বর্ণ মুদ্রার বিনিময়ে মিসওয়াক কিনে নিলেন(ঘটনা)

হযরত সায়্যিদুনা আবদুল ওয়াহাব শারানী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বণর্না করেন: একবার হযরত সায়্যিদুনা আবু বকর শিবলী বাগদাদী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর অযুর সময় মিস্ওয়াকের প্রয়োজন হয়। অনুসন্ধান করলেন, কিন্তু পেলেন না। এজন্য এক দীনারের (অর্থাৎ একটি স্বর্ণের মুদ্রা) বিনিময়ে মিস্ওয়াক কিনে ব্যবহার করলেন। কিছু লোক বলল: এটা তো আপনি অনেক বেশি খরচ করে ফেলেছেন! কেউ এত বেশি দাম দিয়ে কি মিসওয়াক কিনে? হযরত আবু বকর শিবলী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বললেন: নিঃসন্দেহে এই দুনিয়া এবং এর সমস্ত বস্তু আল্লাহ্ তাআলার নিকট মশার ডানার সমপরিমাণও মূল্য রাখেনা। যদি কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাআলা আমাকে জিজ্ঞাসা করেন তবে আমি কি উত্তর দেব, “তুমি আমার প্রিয় হাবীব صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর সুন্নাত (মিসওয়াক) কেন ছেড়ে দিলে?” যে ধন সম্পদ আামি তোমাকে দিয়েছিলাম তা আসলে তো, আমার নিকট মশার ডানার সমপরিমাণও মূল্য ছিলো না। আর এ তুচ্ছ সম্পদ এই মহান সুন্নাতকে (মিস্ওয়াক) পালনের জন্য কেন খরচ করলেনা? তখন কি জবাব দিবো। (লাওয়াকিহুল আনওয়ার থেকে সংক্ষেপিত, ৩৮ পৃষ্ঠা) তাঁর উপর আল্লাহ্ তাআলার রহমত বষির্ত হোক এবং তাঁর সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক। হে আশিকানে রাসূল! আপনারা দেখলেন তো? আমাদের পূর্ববর্তী বুযুগর্রা সুন্নাতকে কিরূপ ভালবাসতেন? হযরত সায়্যিদুনা আবু বকর শিবলী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এক দিনার (অর্থাৎ স্বণের্র আশরাফী) প্রিয় আক্বা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর সুন্নাত মিসওয়াকের জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছেন।

৭: চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো!(ঘটনা)

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! প্রতিটি সুন্নাতই হিকমতের ধনভান্ডার, মিসওয়াকের কথায় ধরুন! এই সুন্নাতের বরকত সম্পর্কেই-বা কি বলবো! এক ব্যবসায়ীর বর্ণনা হচ্ছে: সুইজারল্যান্ডে এক নওমুসলিমের সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো, আমি তাকে উপহার স্বরূপ মিসওয়াক দিলাম, সে খুশিমনে তা নিল এবং চুমু খেয়ে চোখের সাথে লাগালো আর তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো! সে পকেট থেকে একটি রুমাল বের করে ভাঁজ খুললে তা থেকে প্রায় দুই ইঞ্চির ছোট একটি মিসওয়াকের টুকরো বের হলো। বলতে লাগলো: আমি ইসলাম গ্রহণ করার সময় মুসলমানরা আমাকে এই উপহারটি দিয়েছিলো। আমি খুবই স্ব-যত্নে তা ব্যবহার করছিলাম, এটি শেষ হয়ে যাচ্ছিলো এবং আমি চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম যে, এখন আমি মিসওয়াক কোথায় পাবো! ব্যস! আল্লাহ্ তাআলা দয়া করেছেন এবং আপনি আমাকে মিসওয়াক প্রদান করলেন। অতঃপর সে আমাকে বললো যে, অনেক দিন ধরে আমি দাঁত ও মাঁড়ির ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলাম, আমাদের এখানকার দাঁতের ডাক্তার দ্বারা এর চিকিৎসা হচ্ছিলো না। আমি এই মিসওয়াকের ব্যবহার শুরু করলাম, اَلْحَمْدُ لله عَزَّوَجَلّ কিছুদিনের মধ্যেই আমি সুস্থ্য হয়ে গেলাম। অতঃপর আমি যখন ডাক্তারের নিকট গেলাম তখন তারাও আশ্চার্য হয়ে গেলো এবং বলতে লাগলো: আমার ঔষধে তো তোমার এই রোগ এত তাড়াতাড়ি ভাল হতে পারে না, ভেবে দেখো অন্য কোন কারণ হতে পারে। আমি যখন ভালভাবে মনে করলাম তখন স্মরণ আসলো, আমি মুসলমান হয়েছি এবং এই সব কিছুর বরকত মিসওয়াকের কারণেই। যখন আমি ডাক্তারকে মিসওয়াক দেখালাম তখন আশ্চার্য হয়ে তাকিয়ে রইলো।

৮: মিসওয়াক দ্বারা গলা ব্যথা এবং ঘাঁড় ফোলার চিকিৎসা

এক ব্যক্তির গলায় এবং ঘাঁড়ে ব্যথা ছিলো আর ঘাঁড়ে ফোলাও ছিলো। গলার রোগের কারণে তার আওয়াজও খারাপ ছিলো। ঘাঁড়ের ব্যথা ও ফোলার কারণে তার মাথাও ঘুরতো, যার কারণে তার স্মরণশক্তি দূর্বল হয়ে গিয়েছিলো। সেই ব্যক্তি ডাক্তারের চিকিৎসাধীন ছিলো কিন্তু সব নিষ্ফল সাব্যস্ত হলো। কেউ তাকে মিসওয়াক ব্যবহার করার পরামর্শ দিলে সে নিয়মিত মিসওয়াক করতে থাকে। এর পাশাপাশি মিসওয়াককে দু’টুকরো করে পানিতে সিদ্ধ করতো আর সেই পানি দিয়ে গড়গড়া করতো। তাছাড়া যেখানে ফোলা ছিলো সেখানে কিছু ঔষধও লাগাতে থাকলো। এই চিকিৎসা খুবই উপকারী সাব্যস্ত হলো। এর উপর যখন পরীক্ষা চালানো হলো তখন তার ডান পাশের গ্রন্থির এক তৃতীয়াংশ প্রভাবিত ছিলো, যার প্রভাব পুরো শরীরেই পড়েছিলো। এই মিসওয়াকের চিকিৎসায় তার এই রোগ দূর হয়ে গেলো এবং সুস্থ হয়ে গেলো।

৯: মিসওয়াক এবং গলার গ্রন্থি (মাংস)

এক ব্যক্তি গলার গ্রন্থি (মাসং) বাড়ার কারণে দুশ্চিন্তায় ছিলো। তাকে (শাহতুত) এক প্রকার ফলের শরবত পান করতে দেয়া হলো এবং তাজা মিসওয়াক ব্যবহার করানো হলে রোগী খুবই তাড়াতাড়ি সুস্থতা অনুভব করলো।

১০: মিসওয়াকের ২৫টি বরকত

হযরত আল্লামা সায়্যিদ আহমদ তাহতাভী হানাফী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ “হাশিয়াতুত তাহতাভী”তে মিসওয়াক এর উপকারীতা ও ফযীলত মিসওয়াক শরীফকে আবশ্যক করে নাও না। তা সবর্দা করতো থাকো কেননা এতে নহিত রয়েছে সর্বদা মিসওয়াক করতে এবং বরকত হয়ে থাকে মাথা ব্যথা দূর দৃষ্টি শক্তি প্রখর করে পাকস্থলী ঠিকাগায় স্মরণশক্তি প্রখর করে এবং জ্ঞান পরিচ্ছন্ন করে নেকী বৃদ্ধি পায় ।মিসয়াক শয়তানকে অসন্তুষ্ট করে দেয় করে । সন্তান জন্মদানে বৃদ্ধি লাভ করে। পেটকে শক্তিশালী করে । শরীরের জন্য শক্তি জোগায়। মৃত্যুর যন্ত্রণা সহজ এবং কালেমা শাহাদাত স্মরণ করিয়ে দেয়। কিয়ামতে আমল সিরাতে বিদ্যুতের ন্যায় দ্রুত গতিতে পারে তাকে সাহায্য করে। কবরে শান্তি ও তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়। পবিত্র হয়ে বিদায় নেয়। সবচেয়ে বড় উপকারীতা হলো, এতে আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি রয়েছে। (হাশিয়াতুত তাহতাভী আলা মারাকিল ফালাহ, পৃষ্ঠা ৬৮,৬৯, সংক্ষেপিত)

মাদানী কাফেলা

আশিকানে রাসূলের মাদানী কাফেলায় সুন্নাত প্রশিক্ষনের জন্য সফর এবং প্রতিদিন “ফিকরে মদীনা করার মাধ্যমে মাদানী ইনআমাতের রিসালা পূরণ করে পবিত্র ইসলামী মাসের প্রথম তারিখ নিজের এলাকার যিম্মাদারের নিকট জমা করানোর অভ্যাস গড়ে নিন। এর বরকতে মিসওয়াকের সুন্নাতের উপরও আমল করার মানসিকতা সৃষ্টি হবে।

ইয়া রব্বে মুস্তফা! আমাদেরকে তোমার প্রিয় হাবীব, প্রিয় মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর সদকায় মিসওয়াকের সুন্নাতের উপর নিয়মিত ভাবে আমল করার তৌফিক দান করো।
মদীনার ভালবাসা, জান্নাতুল বাক্বী, ক্ষমা ও বিনা হিসাবে জান্নাতুল ফিরদাউসে প্রিয় আক্বা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর প্রতিবেশী হওয়ার প্রত্যাশী।
--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত ২৬ পৃষ্ঠা সম্বলিত "মিসওয়াকের ফযীলত" নামক রিসালার ২-২১ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই রিসালাটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন। অন্যকে উপহার দিন। 
যারা মোবাইলে (পিডিএফ) রিসালাটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন ।
ইসলামীক বাংলা বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন
মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks for supporting.