বিভাগ সমূহ

রবিবার, ১০ মে, ২০২০

গরম থেকে বেঁচে থাকার মাদানী ফুল

গ্রীষ্মকাল একটি নেয়ামত

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ! গ্রীষ্মকালও আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে নেয়ামত স্বরূপ আর এর মধ্যে অসংখ্য হিকমত রয়েছে। গরমের তীব্রতা যখন বেড়ে যায়, তখন ধৈর্য ধারণ করা উচিত। ঠান্ডা ও গরমকে মন্দ বলা বড়ই দোষনীয় ব্যাপার। গরমের মৌসুমের ব্যাপারে অভিযোগকারী বস্তুত গরম সৃষ্টিকারীর প্রতি অভিযোগ করছে আর যেন বলছে, দেখো! আল্লাহ্ তাআলা গরমের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন!

আগুন দেখে অজ্ঞান হয়ে গেলো! (ঘটনা)

মু’মিন বান্দাকে গরমের তীব্রতা থেকে শিক্ষা গ্রহন করা উচিত। দুনিয়াবী গরমের মাধ্যমে কিয়ামতের দিনের গরমের তীব্রতা এবং জাহান্নামের বিভীষিকাময় আগুনের কথা স্মরণ করা উচিত। আজকে যখন দুনিয়ার সামান্য এই গরম সহ্য করা যাচ্ছে না, তবে কাল কিয়ামতের দিনের বিভীষিকাময় গরম ও আগুনের তাপ কিভাবে সহ্য করতে পারবে!
দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ৬২৫ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “আল্লাহ্ ওয়ালাদের বাণী”এর ২য় খন্ডের ১৭৭-১৭৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে: হযরত সায়্যিদুনা বকর বিন মাঈজ رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বর্ণনা করেন:
একদা তাবেয়ী বুযুর্গ হযরত সায়্যিদুনা রবি বিন খুছাইম رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এবং সাহাবীয়ে রাসূল হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ফোরাত নদীর তীরবর্তী রাস্তা দিয়ে গমন করছিলেন, যখন কামারের দোকান অতিক্রম করছিলেন, তখন হযরত সায়্যিদুনা রবি বিন খুছাইম رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ চুল্লীর আগুন দেখতেই (জাহান্নামের বিভীষিকাময় আগুনের কথা তাঁর স্মরণে এসে গেলো) অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। (আমরা তাঁকে ধরে তাঁর ঘরে নিয়ে আসি) হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ তাঁর দিকে ফিরে তাঁকে উচ্চস্বরে ডাকলেন, কিন্তু তিনি কোন উত্তর দেননি। তিনি رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ চলে গেলেন এবং আসরের নামাযের ইমামতি করে পূণরায় তাশরীফ রাখলেন, অতঃপর তাঁকে উচ্চস্বরে ডাকলেন, কিন্তু জবাব পেলেন না। অতঃপর তিনি চলে গেলেন আর মাগরিব নামাযের ইমামতি করে পূনরায় এসে আওয়াজ দিলেন। কিন্তু তখনও রবি বিন খুছাইম رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর পক্ষ থেকে কোন জবাব পেলেন না। (অতঃপর চলে গেলেন, ইশার নামায পড়িয়ে এসে পূনরায় ডাক দিলেন কিন্তু তাঁর رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ পক্ষ থেকে কোন সাড়া পেলেন না।) দীর্ঘক্ষণ পরে সেহেরীর সময়ে ঠান্ডার কারণে জ্ঞান ফিরে আসলো। (আয যুহুদ লিল ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ৩৩২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ১৯৩। হিলয়াতুল আউলিয়া, ২য় খন্ড, ১২৯ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।
اٰمِين بِجا   هِ  النَّبِىِّ   الْاَمين     صَلَّی   اللہُ   تَعَالٰی  عَلَیْہِ   وَاٰلِہٖ وَسَلَّم

৪৮০০ জনের মৃত্যু

আমরা দুনিয়া ও আখিরাতের বিভীষীকাময় গরম থেকে আল্লাহ্ তাআলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, শুধু নিরাপত্তা, নিরাপত্তা এবং নিরাপত্তা চাই। ১৪৩৬ হিজরী মোতাবেক ২০১৫ সালে পাকিস্তানে প্রচন্ড গরম পড়ছিলো, এর মধ্যেই রমযানুল মোবারক মাস আগমণ করে। একটি পরিসংখ্যান মোতাবেক শুধুমাত্র বাবুল মদীনা করাচীতে ঐ দিনগুলোতে গরমের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে প্রায় চার হাজার আটশত মানুষ মারা যায়। তাদের মধ্যে যারা মুসলিম ছিলেন, আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে বিনা হিসাবে ক্ষমা করুক।
اٰمِين بِجا   هِ  النَّبِىِّ   الْاَمين     صَلَّی   اللہُ   تَعَالٰی  عَلَیْہِ   وَاٰلِہٖ وَسَلَّم

>>Donate Us<< ⬅ Click For More...



হীট স্ট্রোক বা গরম বাতাস লাগার ১২টি আলামাত

❃ মাথা ব্যথা, মাথা চক্কর দেয়া।
❃ প্রচন্ড পিপাসা অনুভূত হওয়া।
❃ দূর্বলতা ও পেশীতে (Muscles) টান অনুভব হওয়া।
❃ চর্ম (Skin) লাল ও
❃ শুকিয়ে যাওয়া।
❃ হঠাৎ ভীষণ জ্বর আসা।
❃ বমি ও বমি-বমি ভাব আসা।
❃ জ্ঞান হারানো বা ধাক্কা লাগা।
❃ নাক দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হওয়া
❃ বড় বড় ও লম্বা নিঃশ্বাস নেয়া
❃ B.P একে বারে নিম্নে (Low) চলে আসা
❃ তন্দ্রাভাব হওয়া।

প্রাথমিক চিকিৎসার সাতটি মাদানী ফুল

❃ যার গরম (লু) বাতাস লেগেছে, তাকে পানিও স্যালাইন পান করান,
❃ তাড়াতাড়ি ঠান্ডা জায়গায় স্থানান্তরিত করুন,
❃ অপ্রয়োজনীয় কাপড় খুলে নিন,
❃ কোন বালিশ ব্যতিত শয়ন করিয়ে হাটু থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত অংশ কোন কিছুর মাধ্যমে উচু করে রাখুন,
❃ বরফ বা ঠান্ডা পানির পাট্টি বিশেষত, পিঠ, বগল, ঘাঁড়, এবং রানের উপর রাখুন,
❃ ঠান্ডা পানি দ্বারা ভিজানো তাওয়েল (Towel) শরীরের উপর হালকাভাবে মালিশ করুন,
❃ তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যান।

গরমের তীব্রতা যাদের জন্য বেশি বিপদজনক

❃ বাচ্চা ❃ বৃদ্ধ ❃ ঘর বিহীন মানুষ ❃ সূর্যের তাপে মজদুরীকারী লোক ❃ নেশাগ্রস্থ ব্যক্তি ❃ দীর্ঘ মেয়াদী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বা দীর্ঘ দিন হতে যে হার্টের বা শ্বাস-কষ্টের রোগে ভুগছে ❃ পশু ও পাখি।

প্রচন্ড গরমের সময়ের দোয়ার ফযীলত

দুনিয়ার গরমের তীব্রতার সময় আখিরাতের প্রখর রৌদ এবং অস্থিরকারী পিপাসা এমনকি জাহান্নামের বিভীষিকাময় আগুনের কথা স্মরণ করে আল্লাহ্ তাআলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করুন।

ফরমানে মুস্তফা صَلَّی اللهُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم: “যখন প্রচন্ড গরম পড়ে তখন বান্দা বলে: لَآ اِلٰهَ اِلَّا الله  আজ খুব গরম পড়ছে! اَللّٰهُمَّ اَجِرْنِىْ مِنْ حَرِّ جَهَنَّمَ অর্থাৎ হে আল্লাহ্! আমাকে জাহান্ননামর গরম থেকে মুক্তি দাও। আল্লাহ্ তাআলা দোযখকে ইরশাদ করেন: আমার বান্দা আমার নিকট তোমার গরম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছে, আমি তোমাকে সাক্ষী করছি যে, আমি তাকে তোমার গরম থেকে মুক্তি দিলাম। আর যখন ভীষণ ঠান্ডা অনুভব হয় তখন বান্দা বলে: لَآ اِلٰهَ اِلَّا الله আজ খুব ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে! اَللّٰهُمَّ اَجِرْنِىْ مِنْ زَمْهَرِيْرِ جَهَنَّمَ অর্থাৎ হে আল্লাহ্! আমাকে জাহান্নামের জামহারির থেকে রক্ষা করো। আল্লাহ্ তাআলা  জাহান্নামকে ইরশাদ করেন: আমার বান্দা আমার নিকট তোমার জামহারির থেকে মুক্তি চাচ্ছে এবং আমি তোমার জামহারির থেকে তাকে মুক্তি দিলাম।” সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন: জাহান্নামের জামহারির কি? রাসূলুল্লাহ্ صَلَّی اللهُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “এটি হলো একটি গর্ত, যার মধ্যে কাফেরদের নিক্ষেপ করা হবে, আর প্রচন্ড ঠান্ডায় তাদের শরীর টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।” (আল বুদুরুস সাফেরাহ, ৪১৮ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১৩৯৫)
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد

শরয়ী ওযর ব্যতীত একটি মাত্র রোযা ত্যাগকারীও জাহান্নামী

যতক্ষণ শরয়ী অনুমতি পাওয়া যাবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রচন্ড গরম সত্ত্বেও রোযা ছাড়া (ত্যাগ করা) বৈধ নয়। মনে রাখবেন! জেনে শুনে যে ব্যক্তি রমযানের একটি রোযা ও ছেড়ে দিলো, সে জাহান্নামের কঠিন আযাবের হকদার হবে। ফতোওয়ায়ে রযবীয়া ২০তম খন্ডের ২২৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে: যদি প্রচন্ড রৌদ্রে কাজ করার সাথে রোযা রাখা সম্ভব হয় এবং যদি ঐ ব্যক্তি মুকিম (স্থায়ী বাসিন্দা) হয়, মুসাফির না হয়, তবে তার উপর রোযা রাখা ফরয। আর যদি এমন প্রচন্ড গরমে কাজ করে রোযা রাখা সম্ভব না হয় এবং রোযা রাখার কারণে অসুস্থ হয়ে যায়, তবে মুকিম ব্যক্তি এমন সূর্যের তাপে প্রচন্ড গরমে কাজ করা হারাম। (বিস্তারিত জানার জন্য ফয়যানে সুন্নাত ১ম খন্ডের ফয়যানে রমযান শীর্ষক অধ্যায়টি পাঠ করুন)

প্রচন্ড গরমে রোযা রাখতেন (কাহিনী)

আমাদের আক্বা আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা খাঁন ফতোওয়ায়ে রযবীয়ার ৩০তম খন্ডের ২৯৬ পৃষ্ঠায় একটি কাহিনী বর্ণনা করেছেন: হিজরতের উদ্দেশ্যে যাত্রাকালে তিনি (সাহাবীয়ায়ে রাসূল হযরত সায়্যিদাতুনা উম্মে আয়মন    পিপাসার্থ হলেন, আসমান থেকে নূরানী রশির মাধ্যমে একটি বালতি নামলো এবং তিনি তৃপ্তি সহকারে পান করলেন। তাঁর আর কখনো পিপাসা অনুভব হয়নি। প্রচন্ড গরমে রোযা রাখতেন, কিন্তু তৃষ্ণার্থ হতেন না। (তবকাতে ইবনে সাদ, ৮ম খন্ড, ১৭৯ পৃষ্ঠা, সংক্ষেপিত) এখন তিনটি রূহানী চিকিৎসা বর্ণনা করা হবে, যা পালন করলে اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ প্রচন্ড গরমে রোযা রাখা সহজতর হবে।

প্রচন্ড তৃষ্ণার তিনটি রূহানী চিকিৎসা

(১) ফজরের নামাযের পর তাআউজ ও بِسْمِ الله সহকারে শুধুমাত্র একবার সুরা কাউসার পাঠ করে হাতে ফুঁক দিয়ে চেহারার উপর বুলিয়ে নিন, اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ রোযা অবস্থায় প্রচন্ড পিপাসা থেকে সুরক্ষিত থাকবে।
(২) প্রচন্ড গরমে সময়ে সময়ে يَا مَجِيْدُ   পড়তে থাকুন, اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ পিপাসা থেকে নিরাপত্তা অর্জিত হবে।
(৩) গ্রীষ্মকালে লেবুর পানি ইত্যাদিতে ১০বার يَا مَاجِدُ  পড়ে ফুঁক দিয়ে পান করুন, اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকবে।

রোযা অবস্থায় প্রচন্ড পিপাসা থেকে মুক্তির জন্য

সেহেরীর সময় খাবার গ্রহণের পর একটি খেজুর চিবিয়ে ও এক চুমুক পানি মুখে নিয়ে মিক্স (Mix) করে গিলে ফেলুন। এভাবে একই পদ্ধতিতে তিনটি খেজুর খেয়ে নিন, اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ রোযা অবস্থায় সারাদিন পিপাসা থেকে সুরক্ষিত থাকবেন।

লু (গরম) বাতাস থেকে রক্ষা পাওয়ার ৬টি ঘরোয়া চিকিৎসা

❃ সূর্যের আলোতে বের হওয়ার পূর্বে কাঁচা পিয়াজ ঘষে নখের উপর লাগান (মনে রাখবেন! কাঁচা পিয়াজ কিংবা কোন প্রকার দূর্গন্ধ সহকারে মসজিদে প্রবেশ করা হারাম)। ❃ কাঁচা আমের খোসা প্রলেপ বানিয়ে পায়ের তালুতে মালিশ করুন। ❃ ২৫০ গ্রাম বেশনে (অর্থাৎ চনার ডালের আটা) ১০ গ্রাম কাপুর মিশিয়ে পানিতে মিশ্রিত করে শরীরে মালিশ করলে ঠান্ডা অনুভূত হয় এবং ঘাঁমাচিও হয় না (যদি কাপুর মিশ্রণ না করে তবুও উপকার হবে, তবে কম)। ❃ টমেটোর চাটনি বা নারিকেল খেয়ে নিন। ❃ গরমে খাবার খাওয়ার পরে গুড় খেলে (শরীরে) লু (গরম) বাতাস লাগে না। ❃ রৌদ থেকে আসার পর পিয়াজের সামান্য রস মধুর সাথে মিশিয়ে সেবন করলে লু-বাতাস শরীরে লাগার সম্ভাবনা কম থাকে।

খাবারে ঠান্ডা মসলা ব্যবহার করুন

(১) গ্রীষ্মকালে গরম মসলা ব্যবহারের পরিবর্তে, ঠান্ডা মসলা যেমন হলুদ, শুকনা ধনিয়া, সাদা জিরা, এলাচী, দারুচিনি, টমেটো, লেবু, দই, আলু বখরা, তেঁতুল, কাঁচা ধনিয়া, পুদিনা ইত্যাদি খাবারে ব্যবহার করা উত্তম। যদি গরম মসলা প্রয়োজন বশতঃ ব্যবহার করতে হয়, তবে কালো মরিচ, কাঁচা মরিচ, লাল মরিচের গুড়াঁ ইত্যাদি সামান্য পরিমাণে ব্যবহার করা যেতে পারে।

ঠান্ডা প্রভাব সৃষ্টিকারী আতর ব্যবহার করুন

(২) গ্রীষ্মকালে ভালো ভালো নিয়্যত সহকারে ঠান্ডা প্রভাব সৃষ্টিকারী আতর যেমন শামামাতুল আম্বর, হেনা, গোলাপ, চন্দন, কাঁচা বেলী, সুগন্ধি, কেউড়া, চম্পা প্রভৃতি কাপড়ে ব্যবহার করা উপকারী। মুশক, কস্তুরী, উদ, আম্বর, জাফরান, প্রভৃতি আতর গরম প্রভাব সৃষ্টিকারী। এগুলো শীতকালে ব্যবহার করা যেতে পারে। মনে রাখবেন! এসব প্রভাব শুধুমাত্র আসল আতরে বিদ্যমান থাকে। কেমিক্যাল মিশানোর দ্বারা আতরের প্রভাব অনেকাংশে কমে যায়। (ইসলামী বোনেরা সুগন্ধি ছড়ায় এমন আতর ব্যবহার করবে না)

রমযানুল মোবারক সুস্থতা সহকারে অতিবাহিত করার ব্যবস্থাপত্র

সেহেরীর সময় মাঝারী পরিমাণের রুটি অর্ধেক (যদি ঘরের রুটি চাপাটি হয়) তবে প্রয়োজন সাপেক্ষে একটি কিংবা দুটি এবং সামান্য পরিমাণ চিনি দিয়ে দই সেবন করা যেতে পারে এবং উত্তম হলো, বাদামী রঙের চিনি ব্যবহার করা। যদি সম্ভব হয় তবে অবশ্যই আধা কেজি দই খেয়ে নিন। ইফতারের সময় কমপক্ষে তিনটি খেজুর ও সামান্য ফল, মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে নরমাল সবজি সহকারে সেহেরীর ন্যায় রুটি খাওয়া যেতে পারে।اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ পুরো রমযানুল মোবারক সুস্থতার সাথে অতিবাহিত করা যাবে এবং তারাবীর নামায, তিলাওয়াত ও ইবাদতে মন (বসবে) তথা মনযোগ দিয়ে আদায় করা যাবে।

গ্রীষ্মকালে ভাত খাওয়ার উপকারীতা

ভাত (ডাক্তারী হিসাব মতে) ঠান্ডা জাতীয় খাবার। গরমে প্রতিদিন ভাত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। গরমে ভাতের সাথে সবজি জাতীয় খাবার খাওয়া উপকারী। দই খিচুড়ী হলো গরমের দিনের উত্তম খাবার। মনে রাখবেন! গরম মসলা মিশ্রিত সুস্বাদু বিরিয়ানী শরীরের জন্য শত্রু। পানিতে সিদ্ধ করা চাউল খাওয়া উত্তম।

প্রচন্ড গরম ও লু (গরম) বাতাস থেকে বেঁচে থাকার সুস্বাদু শরবত

প্রয়োজন মতো কাঁচা আম নিয়ে খোসা ফেলে দিয়ে পানিতে ঢেলে চুলায় তুলে দিন। দু’চারবার সিদ্ধ হওয়ার পর কাঁচা আম গলে যাবে, টিপে আঁটি বের করে ফেলুন আর সম্পূর্ণ আমকে ব্লেন্ডারে মিশ্রণ করে নিন। অতঃপর গাঢ় শরবতে পরিণত হবে। দ্বিগুণ পরিমাণ চিনি (উত্তম হলো বাদামী চিনি) মিশিয়ে পূনরায় চুলায় তুলে দিয়ে ভালভাবে জোশ দিন যেন চিনি মিশে যায়। ঠান্ডা হওয়ার পর বোতলে নিয়ে নিরাপদ স্থানে রাখুন। রমযানুল মোবারকে সেহেরী ও ইফতারের সময় প্রয়োজনানুসারে পানি মিশিয়ে এই সুস্বাদু শরবত পান করুন। اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ গরমের তীব্রতা ও লু (গরম) বাতাস থেকে নিরাপদ থাকবেন।

শারীরিক দূর্বলতা দূর করার ব্যবস্থাপত্র

দুই চামচ চিনি (উত্তম হচ্ছে বাদামী চিনি) ও এক চামচ সাদা লবণ, আধা লিটার পানিতে ঢেলে সিদ্ধ করুন। ঠান্ডা হওয়ার পর ইফতারের সময় এক গ্লাস পান করুন। اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ শরীরের পানি শূন্যতা ও শারীরিক দূর্বলতা দূর হয়ে যাবে। রোগীদের দূর্বলতা দূর করতে এই পানি খুবই উপকারী। (তবে ডায়বেটিক এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করবে)

ঘামাচির চিকিৎসা

যদি ঘাঁমাচি কষ্ট দেয়, তবে নিমগাছের ১১টি কচি পাতা সাত দিন পর্যন্ত কিংবা বেশি কষ্ট দিলে ৪০ দিন খাওয়ার পূর্বে খালি পেটে পানি সহ সেবন করুন। اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ ঘাঁমাচি, খোস-পাঁচড়া ইত্যাদি দূর হয়ে যাবে। আর যদি গ্রীষ্মকাল শুরু হওয়ার পূর্বেই ত্রিশদিন পর্যন্ত এ কোর্স করে নেন, তবে اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ ঘামাচি ইত্যাদি দেখাই দিবে না। (ঘরোয়া চিকিৎসা, ৪০ পৃষ্ঠা)

হায়েজ বন্ধ হওয়ার চিকিৎসা

যদি গরম কিংবা শুষ্কতার কারণে মহিলাদের হায়েজ বন্দ হয়ে যায়, তবে এক কাপ মিষ্টি জিরা গোলাপজলে ছোট এক চামচ তরমুজের বীজের মগজ ও এক চামচ মধু মিশিয়ে সকাল-সন্ধ্যা পান করলে اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ অনেক উপকার হবে। বেশি পরিমাণে পানি পান করবে সম্ভব হলে দৈনিক ১২ গ্লাস পানি পান করবে। (ঘরোয়া চিকিৎসা, ১০২ পৃষ্ঠা)

গরম থেকে বেঁচে থাকার জন্য ২৫টি মাদানী ফুল

(১) যতটুকু সম্ভব নিজের চোখের ভ্রুকে (Eyebrow) পানি দ্বারা সিক্ত রাখুন। এর দ্বারা লু (গরম) বাতাস, প্রচন্ড পিপাসা, মানসিক চাপ, প্রচন্ড মাথা ব্যথা  প্রভৃতি থেকে মুক্ত থাকবেন।

(২) চুলা ইত্যাদির ব্যবহার কম করবেন।

(৩) সাদা বা হালকা রংয়ের সুতির (Cotton) ঢিলে-ঢালা কাপড় পরিধান করবেন। (সৌভাগ্য হবে! যদি ইসলামী ভাইয়েরা সুন্নাতে ভরা সাদা পোশাক পরিধান করেন)

(৪) সর্বদা ছোট একটি তোয়ালে (Towel) সাথে রাখুন, যখন বেশি গরম অনুভব হবে। তখন যেন ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে মাথার উপর রাখতে পারেন

(৫) কষ্টদায়ক কাজ থেকে বিরত থাকা উত্তম। অতি প্রয়োজনে করা যেতে পারে।

(৬) দৈনিক দুইবার গোসল করা উপকারী।

(৭) রোদে বের হলে সান গ্লাস ব্যবহার চোখকে গরমের প্রভাব থেকে বাঁচায়।

(৮) ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পিয়াজের টুকরা হাত কিংবা পকেটে রাখুন। বাচ্চাদের গলায় লটকিয়ে দিন, লু বাতাস থেকে নিরাপদ থাকবেন।

(৯) নিজের মাথার উপর যেন সরাসরি রৌদ না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন। বিশেষত দিনের বেলা প্রচন্ড গরমের সময়ে ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এ সময়ে ছায়ায় অবস্থান করুন। اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ লু-বাতাস থেকে মুক্তি পাবেন। যোহরের নামাযের জন্য রৌদ্রে যে সমস্ত ইসলামী ভাইয়েরা বের হয়, তারা যেন মাথা এবং ঘাঁড় ঢেকে সম্ভব হলে ছাতা নিয়ে বের হয়। পাগড়ী শরীফের সুন্নাত আদায়কারীদের মাথা ঢাকা থাকে এবং ঘাঁড় ও ঢেকে যায়, মাথার উপর সাদা চাদর থাকলে আরো বেশি উপকার পাওয়া যায়।)

(১০) লোডশেডিং এর সময় মাথায় ভিজা তোয়ালে রাখুন, হাত পাখা ব্যবহার করুন এবং শরীরের উপর পানি ঢালুন।

(১১) পিপাসার্থ হোন কিংবা না হোন প্রতিদিন কমপক্ষে ১২/ ১৪ গ্লাস পানি পান করুন। (এর মধ্যে খাওয়ার সময় যে পানি পান করেন, তাও গন্য হবে। উদাহরণ স্বরূপ: ১০ গ্লাস পানি পান করা ব্যতীত ফল-মূল ও অন্যান্য খাবারের মাধ্যমে দুই গ্লাস যতটুকু পানি পেটে গেলো সব মিলে ১২ গ্লাস হলো)

(১২) শরীরের পানি ও লবণ এর ভারসাম্য ঠিক রাখতে ওরস্যালাইন সেবন করুন। (হাই ব্লাড প্রেসার রোগীগণ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আমল করবেন)

(১৩) ছাতুর শরবত, খীরার জুস, ডাবের পানি, আখের বিশুদ্ধ রস, মধু মিশ্রিত পানি, লেবুর পানি, লবন মিশ্রিত লাচ্ছি সেবন করুন।

(১৪) লাচ্ছিতে কালো লবণ ও উগ্রগন্দী লতা বিশেষের গুড়াঁ মিশ্রিত করে সেবন করলে গরম কম লাগে এবং ওজন কমে যায়।

(১৫) চা, কফি, সিদ্ধ ডিম, বেশি মিষ্টি শরবত, বেশি মিষ্টি খাবার, ঠান্ডা পানীয়, বেশি ঘি-তেল যুক্ত খাবারও দেরীতে হজম হয় এমন খাবার, ক্যাফিন (Caffeine) যুক্ত বস্তু যেমন চকলেট প্রভৃতি কম থেকে কম ব্যবহার করুন।

(১৬) বাজারের শরবত ও বিভিন্ন রকমের শরবত পান করা আর টাকা দিয়ে রোগ ক্রয় করা একই কথা।

(১৭) প্রখর রৌদ থেকে এসে ঘামযুক্ত শরীরে ঠান্ডা শরবত পান করা ক্ষতিকর।

(১৮) কদু শরীফ, বেগুন, বীট চিনি, মূলা প্রভৃতি সবজীর ব্যবহার বাড়িয়ে দিন।

(১৯) সেহেরী ও ইফতারে পানি ও দই বেশি পরিমাণে ব্যবহার করুন।

(২০) আম, আডু (বিশেষ ফল) খুবানি, পেয়ারা, বাঙ্গী, তরমুজ প্রভৃতি শরীরে সতেজতা ও শক্তি প্রদানের সাথে সাথে পাকস্থলীর উষ্ণতা দূর করে। এছাড়া মৌসুমের অন্যান্য ফলও ব্যবহার করবেন।

(২১) সাদাসিধে হালকা খাবার খান। পরটা, কাবাব, সমুছা, পিয়াজু প্রভৃতি তৈল যুক্ত খাবার কম সেবন করুন। বরং এগুলো থেকে দূরে থাকুন। اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ আপনি নিজেই এর উপকার দেখতে পাবেন। আর রমযানুল মোবারকের রোযা ও অন্যান্য ইবাদত বান্দেগী অনেক সহজে করতে পারবেন।

(২২) সেহেরী ও ইফতারের মধ্যে কম খাবার গ্রহণ করুন।

(২৩) ফোমের গদিতে শয়ন করা থেকে বিরত থাকুন।

(২৪) ছোট শিশু ও বয়ষ্কদের গরম থেকে বাঁচিয়ে রাখা অতিব জরুরী।

(২৫) দয়া করে নিজের গৃহপালিত জন্তু ও মুরগী ইত্যাদিকেও গরম থেকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করুন।
--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত ২৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত "গরম থেকে বেঁচে থাকার মাদানী ফুল" নামক রিসালার ২-১৫ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই রিসালাটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন। অন্যকে উপহার দিন। 
যারা মোবাইলে (পিডিএফ) রিসালাটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন ।
ইসলামিক বাংলা বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন
মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks for supporting.