বিভাগ সমূহ

সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

তেল লাগানো ও চিরুনী ব্যবহার সম্পর্কিত ১৯টি মাদানী ফুল

﴾১﴿ হযরত সায়্যিদুনা আনাস رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন: আল্লাহর মাহবুব, হুযুর পুরনূর, নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم প্রায়ই আপন মাথা মোবারকে তেল ব্যবহার করতেন, আর দাঁড়ি মোবারক চিরুনী দিয়ে আঁচড়াতেন। মাথা মোবারকে প্রায়ই কাপড় রাখতেন। এমনকি কাপড়টি তেলে ভিজা থাকত। [ আশ শামায়িলুল মোহাম্মদীয়া লিত তিরমিযী, ৪র্থ পৃষ্ঠা] বুঝা গেল, ‘সারবন্দ’ ব্যবহার করা সুন্নাত। ইসলামী ভাইদের উচিত, যখনই মাথায় তেল লাগাবে, ছোট একটি কাপড় মাথায় বেঁধে নেবে। এতে করে اِنْ شَاءَ الله عَزَّوَجَلّ টুপি ও পাগড়ী মাথার তেল থেকে রক্ষা পাবে। اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَل সগে মদীনা عُفِىَ عَنْهُ (লিখক) অনেক বছর ধরে ‘সারবন্দ’ ব্যবহার করে আসছে।

﴾২﴿ নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যার চুল রয়েছে, সে যেন সেগুলোর সম্মান করে।” [সুনানে আবু দাঊদ, ৩ খন্ড, ১০৩ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪১৬৩]। অর্থাৎ সেগুলো ধৌত করবে, তেল লাগাবে, আর চিরুনী দিয়ে আঁচড়াবে। [আশি‘আতুল লুমআত, ৩ খন্ড, ৬১৭ পৃষ্ঠা]


﴾৩﴿ হযরত সায়্যিদুনা নাফে’ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ হতে বর্ণিত: হযরত সায়্যিদুনা ইবনে ওমর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ দিনে দুই বার মাথায় তেল লাগাতেন। [ মুসানাফে ইবনে আবি শায়বা, ৬ খন্ড, ১১৭ পৃষ্ঠা]। চুলে বেশি তেল ব্যবহার করা বিশেষ করে জ্ঞানী লোকদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কারণ, এতে মাথায় খুশ্কি হয় না। স্মরণ-শক্তি বৃদ্ধি পায়।

﴾৪﴿ নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যখন তোমাদের মধ্যে কেউ তেল লাগাবে, তখন ভ্রু থেকে আরম্ভ করবে । এতে মাথা-ব্যথা দূর হয়ে যায়।” [আল জামেউছ ছগীর লিস সুয়ূতী, ২৮ পৃষ্ঠা, হাদিস- ৩৬৯]

﴾৫﴿ ‘কানযুল উম্মালে’ রয়েছে: প্রিয় আক্বা, মক্কী মাদানী মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم যখন তেল ব্যবহার করতেন, প্রথমে বাম হাতের তালুতে তেল নিতেন। অতঃপর, প্রথমে উভয় ভ্রু তে তেল লাগাতেন। এরপর উভয় চোখ মোবারকে অতঃপর মাথা মোবারকে লাগাতেন। [ কানযুল উম্মাল, ৭ম খন্ড, ৪৬ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৮২৯৫] 

﴾৬﴿ তাবরানী শরীফের রেওয়ায়াত, মদীনার তাজেদার, রাসুলদের সরদার صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم যখন দাঁড়ি মোবারকে তেল লাগাতেন, তখন‘আনফাকা’ বা নিচের ঠোঁট ও থুতুনির মধ্যকার কেশগুলো থেকে শুরু করতেন। [আল মু’জামুল আওসত লিত তাবারানী, ৫ খন্ড, ৩৬৬ পৃষ্ঠা, হাদিস- ৭৬২৯]

﴾৭﴿ দাঁড়িতে চিরুনী দিয়ে আঁচড়ানো সুন্নাত। [আশি‘আতুল লুম‘আত, ৩ খন্ড, ২১৬ পৃষ্ঠা]

﴾ ৮ ﴿ بِسۡمِ اللہِ না বলে তেল লাগানো এবং তেল ব্যবহার না করে চুলগুলোকে শুকনো ও এলোমেলো করে রাখা সুন্নাত পরিপন্থী।

﴾৯﴿ হাদীস শরীফে রয়েছে: যে ব্যক্তি بِسۡمِ اللہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ না পড়ে তেল লাগায়, সে ব্যক্তির সাথে ৭০টি শয়তান শরীক হয়ে যায়। [আমলুল ইয়াউমি ওয়াল লাইলাতি লি ইবনিস সুন্নী, ১ খন্ড, ৩২৭ পৃষ্ঠা, হাদিস- ১৭৩]

﴾১০﴿ হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বর্ণনা করেন, হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ বলেন, একদা এক মুমিনের শয়তানের সাথে আরেক কাফেরের শয়তানের সাথে সাক্ষাত হয়। কাফেরের শয়তান খুবই মোটা-তাজা ও ভাল পোশাকে ছিল। এদিকে মুমিনের শয়তানটি দুর্বল, ক্ষীণকায়, এলোমেলো চুলগুলো ও উলঙ্গ ছিল। কাফিরের শয়তানটি মুমিনের শয়তানটিকে জিজ্ঞাসা করল, তুমি এত দুর্বল কেন? সে জবাবে বলল:আমি এমন এক মানুষের সাথে আছি, যে ব্যক্তি পানাহারের সময় بِسۡمِ اللہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ শরীফ পড়ে নেন। এতে করে আমি উপবাস ও পিপার্সাত থেকে যাই। যখন তেল লাগায়, بِسۡمِ اللہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ পড়ে নেয়। এতে করে আমার চুলগুলো তেল বিহীন ভাবে এলোমেলো থেকে যায়। এ কথা শুনে কাফেরের শয়তানটি বলল, আমি তো এমন একজনের সাথে রয়েছি, যে এসবের কিছুই করে না। সুতরাং আমি তার সাথে পানাহার, পোশাক-পরিচ্ছদে ও তেল লাগানোতে শরীক হয়ে যাই। [ইহই্ য়াউল উলূম, ৩ খন্ড, ৪৫ পৃষ্ঠা]

﴾১১﴿ তেল ঢালার পূর্বে بِسۡمِ اللہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ পড়ে তেলের বোতল ইত্যাদি হতে বাম হাতের তালুতে সামান্য তেল নিন। অতঃপর ডান চোখের ভ্রুতে তেল লাগান, এরপর বাম ভ্রুতে। তারপর ডান চোখের পলকে, পরে বাম চোখে। এবার মাথায় তেল দিন, আর যখন দাঁড়িতে তেল লাগাবেন, তখন নিচের ঠোঁট ও থুতুনির মাঝখানের কেশ থেকে আরম্ভ করবেন। 

﴾১২﴿ যারা সরিষার তেল ব্যবহার করে থাকেন, তাদের টুপি ও পাগড়ী খুললে, এক ধরনের দুর্গন্ধ বের হয়। সুতরাং সম্ভব হলে মাথায় উন্নত মানের সুগন্ধিযুক্ত তেল ব্যবহার করবেন। সুগন্ধি তেল তৈরি করার একটি সহজ পদ্ধতি হল, তেলের বোতলে নিজের পছন্দের আতর হতে কয়েক ফোঁটা ঢেলে দিন, সুগন্ধিময় তেল তৈরি হয়ে যাবে। মাথার চুল ও দাঁড়িগুলো সময়ে সময়ে সাবান ইত্যাদি দিয়ে ধুয়ে নেবেন। 

﴾১৩﴿ মহিলাদের উচিত, আঁচড়ানোর কারণে কিংবা মাথা ধৌত করার কারণে যে চুলগুলো উঠে আসে সেগুলোকে এমন কোন স্থানে গোপন করে ফেলা, যাতে করে কোন পরপুরুষের (যাদের সাথে বিবাহ হারাম নয় এমন লোক) চোখে না পড়ে। [বাহারে শরীয়ত, ১৬ খন্ড, ৯২ পৃষ্ঠা] 

﴾১৪﴿ খাতামুল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم প্রতিদিন চিরুনী ব্যবহারে নিষেধ করেছেন। [তিরমিযী, ৩ খন্ড, ২৯৩ পৃষ্ঠা, হাদিস- ১৭৬২]।এই নিষেধাজ্ঞা মাকরূহ তানযিহী। মূল কথা হল, পুরুষদের পরিপাটি নিয়ে ব্যস্ত থাকা অনুচিত। [বাহারে শরীফত, ১৬ খন্ড, ২৩৫ পৃষ্ঠা]। ইমাম মুনাদী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন: মাথায় চুল ঘন হওয়ার কারণে কারো যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে সাধারণ ভাবে প্রতিদিন চুল আঁচড়াতে পারবে। [ফয়জুল কদীর, খন্ড- ৬, পৃষ্ঠা- ৪০৪]

﴾১৫﴿ ‘বারগাহে রজভীয়াতে’ অর্থাৎ আ’লা হযরতের দরবারে হওয়া প্রশ্নোত্তর লক্ষ্য করুন। প্রশ্ন: দাঁড়ি কখন আঁচড়ানো যায়? উত্তর: আঁচড়ানোর জন্য শরীয়তে কোন সময় নির্ধারিত নেই। মধ্যমপন্থা অবলম্বনের নির্দেশ রয়েছে। এমন নয় যে, লোক তার চেহারাকে কুৎসিৎ করে রাখবে। আবার এমনও না যে, সর্বদা নিজেকে আঁচড়ানোতে ও সিঁথি কাটাতে ব্যস্ত রাখবে। [ফতোয়ায়ে রজভীয়া, খন্ড- ২৯, পৃষ্ঠা- ৯২, ৯৪]

﴾১৬﴿ আঁচড়াবার সময় ডান দিক থেকে শুরু করবেন। এ ব্যাপারে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا বলেন: ছরকারে দো’আলম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم যে কোন কাজ ডান দিক থেকে শুরু করা পছন্দ করতেন। এমনকি জুতো পরিধানে, চুল আঁচড়ানো এবং পবিত্রতা অর্জন ইত্যাদিতেও। [বোখারী, ১ম খন্ড, ৮১ পৃষ্ঠা, হাদিস- ১৬৮]। বোখারী শরীফের ব্যাখ্যাকারী হযরত আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এই হাদীসটির টীকায় লিখেছেন: এই তিনটি বিষয়ই উদাহরণ স্বরূপ বর্ণনা করা হয়েছে। না হয় প্রত্যেক সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ কাজ, ডান দিক থেকে শুরু করা মুস্তাহাব। যেমন: মসজিদে প্রবেশ করা, পোশাক পরিধান করা, মিসওয়াক করা, সুরমা লাগানো, নখ কাটা, গোঁফ কাটা, বগলের লোম পরিষ্কার করা, ওযু-গোসল করা এবং পায়খানা থেকে বের হওয়া ইত্যাদি। অন্য দিকে যে কাজগুলোতে এসব কথা নেই, যেমন মসজিদ হতে বের হওয়া, পায়খানায় প্রবেশ করা, নাক পরিষ্কার করা সহ সেলোয়ার ও কাপড় খোলা বাম দিক থেকে আরম্ভ করা মুস্তাহাব। [উমদাতুল ক্বারী, ২য় খন্ড, ৪৭৬ পৃষ্ঠা] 

﴾১৭﴿ জুমুআর নামাযের জন্য তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব। [বাহারে শরীয়ত, ১ম খন্ড, ৭৭৪ পৃষ্ঠা]

﴾১৮﴿ রোজা রাখা অবস্থায় দাঁড়ি ও গোঁফে তেল লাগানো মাকরূহ নয়। কিন্তু এই উদ্দেশ্যে তেল ব্যবহার করে যে, দাঁড়ি বেড়ে যাবে। অথচ তার এক মুষ্ঠি দাঁড়ি রয়েছে। এ তো রোজাহীন অবস্থায় ও মাকরূহ। রোজা রাখা অবস্থায় তো কথাই নেই। [বাহারে শরীয়ত, ১ম খন্ড, ৯৯৭ পৃষ্ঠা]

﴾১৯﴿ মৃত ব্যক্তির দাঁড়ি কিংবা মাথার চুলে চিরুনী লাগানো না জায়েয ও গুনাহ্।[দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ১০৪পৃষ্ঠা]

তেল কি বোন্দেঁ টপকতি নিহিঁ বালোঁ ছে রযা,
সুবহে আরেজ পে লুটাতে হেঁ সিতারে গেসো।

হাজার হাজার সুন্নাত শিখার জন্য মাকাতাবায়ে মদীনার প্রকাশিত দুইটি কিতাব (১) ৩১২ পৃষ্ঠা সম্বলিত ‘বাহারে শরীয়ত’, ১৬ খন্ড এবং (২) ১২০ পৃষ্ঠা সম্বলিত ‘সুন্নাত অওর আদাব’ হাদিয়া সহ সংগ্রহ করুন, আর পড়ুন– । সুন্নাত শিক্ষার এক অনন্য মাধ্যম দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলায় আশেকানে রাসুলদের সাথে সুন্নাতে ভরা সফরও করা।

লুটনে রাহমতেঁ কাফেলে মেঁ চলো,
সিখনে সুন্নাতেঁ কাফেলে মেঁ চলো।
হোঁঙ্গে হল্ মুশকিলেঁ কাফেলে মেঁ চলো,
খতম হোঁ শামতেঁ কাফেলে মেঁ চলো।

--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত ৩৭ পৃষ্ঠা সম্বলিত "অশ্রুর বারিধারা" নামক রিসালার ৩২-৩৬ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই রিসালাটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন। অন্যকে উপহার দিন।

যারা মোবাইলে (পিডিএফ) রিসালাটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন ।
ইসলামীক বাংলা বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন
মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন