প্রথম অংশ
হাদীসে পাকে রয়েছে, “যে ব্যক্তি স্বীয় রাগকে দমন করবে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা সে ব্যক্তি থেকে তার আযাব কে থামিয়ে দিবেন।” (শুয়ুবুল ঈমান, খন্ড-৬ষ্ঠ, পৃষ্ঠা-৩১৫, হাদীস-৩১১)
জবাব দানে শয়তানের আগমন
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! কেউ যদি আমাদের উত্তেজিত করতে চায় অথবা ভালমন্দ বলে এমতাবস্থায় চুপ থাকার মধ্যে আমাদের জন্য নিরাপত্তা রয়েছে। যদি শয়তান আপনাকে লাখো কু-মন্ত্রণা দেয় যে, তুমিও তাকে জবাব দাও, না হলে মানুষ তোমাকে কাপুরুষ বলবে। মিয়া! ভদ্রতার যুগ এখন নেই। এভাবে নিশ্চুপ থাকলে তো মানুষ তোমাকে বাঁচতে দিবেনা। আমি একটি হাদিস শরীফ বর্ণনা করছি, তা আপনারা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করুন, তার পর আপনাদের ধারণা হবে যে, কেউ মন্দ বলার সময় চুপ থাকা ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার রহমতের কত নিকটে চলে যায়।
মসনদে ইমাম আহমদ এর মধ্যে বর্নিত আছে, প্রিয় নবী, হুযুর পূরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর উপস্থিতিতে এক ব্যক্তি হযরত আবু বকর ছিদ্দিক رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কে মন্দ বলল। সে যখন অতিরিক্ত মন্দ কথা বলা শুরু করল তখন তিনি তার কিছু কথার জবাব দিলেন। (অথচ তাঁর জবাব মন্দ বলা থেকে মুক্ত ছিল) মদীনার তাজেদার, হুযুরে আনওয়ার, রাসূলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সেখান থেকে উঠে গেলেন। হযরত সায়্যিদুনা আবু বকর ছিদ্দিক رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ হুজুরে আকরাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর পিছনে পৌঁছলেন এবং আরজ করলেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ! সে আমাকে মন্দ বলছিল তখন আপনি তশরীফ রেখেছিলেন। যখন আমি তার মন্দ কথার জবাব দিলাম তখন আপনি উঠে চলে আসলেন। তিনি صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “তোমার সাথে ফিরিশতা ছিল যে তার কথার জবাব দিচ্ছিল অতঃপর যখন তুমি নিজেই তার জবাব দেয়া শুরু করলে, তখন শয়তান মধ্যখানে এসে গেল।”(মসনদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, খন্ড-৩, পৃ-৪৩৪, হাদীস-৯৬৩০)
মসনদে ইমাম আহমদ এর মধ্যে বর্নিত আছে, প্রিয় নবী, হুযুর পূরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর উপস্থিতিতে এক ব্যক্তি হযরত আবু বকর ছিদ্দিক رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ কে মন্দ বলল। সে যখন অতিরিক্ত মন্দ কথা বলা শুরু করল তখন তিনি তার কিছু কথার জবাব দিলেন। (অথচ তাঁর জবাব মন্দ বলা থেকে মুক্ত ছিল) মদীনার তাজেদার, হুযুরে আনওয়ার, রাসূলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সেখান থেকে উঠে গেলেন। হযরত সায়্যিদুনা আবু বকর ছিদ্দিক رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ হুজুরে আকরাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর পিছনে পৌঁছলেন এবং আরজ করলেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ! সে আমাকে মন্দ বলছিল তখন আপনি তশরীফ রেখেছিলেন। যখন আমি তার মন্দ কথার জবাব দিলাম তখন আপনি উঠে চলে আসলেন। তিনি صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “তোমার সাথে ফিরিশতা ছিল যে তার কথার জবাব দিচ্ছিল অতঃপর যখন তুমি নিজেই তার জবাব দেয়া শুরু করলে, তখন শয়তান মধ্যখানে এসে গেল।”(মসনদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, খন্ড-৩, পৃ-৪৩৪, হাদীস-৯৬৩০)
যে চুপ রইল সে মুক্তি পেল
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! হয়তো আপনাকে কথা বলার কারণে অনেক সময় আফসোস করতে হয়েছে কিন্তু চুপ থাকার কারণে কখনো লজ্জা পেতে হয়নি। তিরমিজি শরীফে রয়েছে, অর্থাৎ “যে চুপ রইল, সে মুক্তি পেল।(সুনানে তিরমিযি , খন্ড-২য়, পৃষ্ঠা-২২৫, হাদীস-২৫০৯) এ প্রবাদ বাক্যটি প্রসিদ্ধ যে, “এক চুপ, শত সুখ।”
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
সৎ কাজ কর, ভাল ফলাফল পাবে
হযরত শেখ সা'দী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ ‘বুস্তানে সা'দী নামক কিতাবে নকল করেন যে, এক সৎ ব্যক্তি তা নিজের শত্রুর আলোচনাও খারাপ ভাবে করত না। যখন কারো কথা আরম্ভ করতেন তখন মুখ দিয়ে ভাল কথাই বের করতেন। মৃত্যুর পর তাকে স্বপ্নে দেখে কেউ জিজ্ঞাসা করল, অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তোমার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন? এই প্রশ্ন শুনে তিনি মুচকি হাসলেন এবং বুলবুলির মত মিষ্টি স্বরে বললেন, “দুনিয়ার মধ্যে আমার এই চেষ্টা ছিল যে কারো সম্পর্কে কোন মন্দ কথা যাতে আমার মুখ থেকে বের না হয়। ফলে মুনকার নকীরও আমার থেকে কোনো কঠিন প্রশ্ন করেনি। আর এখানে আমার অবস্থা খুবই কল্যাণকর ও সুখকর। (বুস্তানে সা'দী, পৃষ্ঠা-১৪৪)
নম্রতা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা অবগত হয়েছেন যে, নম্রতা ও ক্ষমা প্রদর্শন করার কারণে আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত এর কি পরিমাণ দয়া হয়ে থাকে। হায়! যদি আমরাও স্বীয় অপমানকারী ও কষ্টদাতাদেরকে ক্ষমা প্রদর্শন করতাম। মুসলিম শরীফের মধ্যে রয়েছে, যে বস্তুর মধ্যে নম্রতা রয়েছে। তাকে সৌন্দর্যমন্ডিত করা হয়। আর যে বস্তু থেকে (নম্রতাকে) পৃথক করা হয়, তাকে ত্রুটিপূর্ণ বানিয়ে দেয়া হয়। (সহীহ মুসলিম, পৃ-১৩৯৮, হাদীস-২৫৯৪)
অগ্রীম ক্ষমা প্রদর্শন করার ফযীলত
ইহইয়াউল উলুম কিতাবে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি দুআ করছিল যে, হে আল্লাহ! আমার কাছে দান সদকা করার জন্য কোন সম্পদ নেই। তবে যে মুসলমান আমাকে অসম্মানী করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম" প্রিয় নবী, রাসূলে আরবী, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর উপর ওহী আসল “ আমিও ঐ বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম।"(ইহইয়াউল উলুম, খন্ড-৩য়, পৃষ্ঠা-২১৯)
রাগ দমনকারীর জন্য জান্নাতী হুর
আবু দাউদ শরীফের হাদিসে বর্ণিত আছে, যে রাগকে দমন করল অথচ তা প্রয়োগ করার ক্ষমতা ছিল। কিয়ামতের দিন আল্লাহ সকল সৃষ্টিকুলের সামনে ডাকবেন এবং ইখতিয়ার (স্বাধীনতা) দিবেন, (আর বলবেন) যে হুর কে চাও নিয়ে নাও। (সুনানে আবু দাউদ, খন্ড-৪র্থ, পৃ-৩২৫-৩২৬, হাদীস-৪৭৭৭)
হিসাব-নিকাশ সহজ হওয়ার তিনটি উপায়
হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বণির্ত আছে যে, “তিনটি জিনিস যে ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান থাকবে, আল্লাহ (কিয়ামতের দিন) তার হিসাব-নিকাশ খুবই সহজভাবে গ্রহণ করবেন এবং তাকে নিজ দয়ায় জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
১। যে তোমাকে বঞ্চিত করে, তুমি তাকে দান কর।
২। যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তুমি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখ।
৩। যে তোমার প্রতি জুলম করে, তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। (আল'মুজামুল আওসাত, খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৮, হাদীস-৫০৬৪)
গালিতে পূর্ণ চিঠির উপর আলা হযরত এর ধৈর্য্য
হায়! আমাদের মধ্যে যদি এই জযবা (আগ্রহ) সৃষ্টি হয়ে যেত যে, আগ্রহ দ্বারা আমরা নিজের ও নফসের জন্য রাগ করা ছেড়ে দিতাম। যে রকম আমাদের বুযুর্গদের رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِمْ জযবা ছিল যে, তাদের উপর কেউ যতই জুলুম করত এ হযরতগণ সে জালিমেরও সহানুভুতি প্রদর্শন করতেন। সুতরাং “হায়াতে আলা হযরত” নামক কিতাবে রয়েছে, আলা হযরত ইমামে আহলে সুন্নত মাওলানা শাহ আহমদ রেজা খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ এর খিদমতে একবার ডাক যোগে আসা চিঠি পেশ করল। উক্ত চিঠি গালি গালাজে ভরপুর ছিল।তাঁর ভক্তরা অসন্তুষ্ট হয়ে বলল আমরা ঐ লোকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করব। ইমামে আহলে সুন্নত মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রেজা খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন, যে লোকেরা প্রশংসা করে চিঠি পত্র প্রেরণ করেছে প্রথমে তাদেরকে (উপহার) বন্টন করে দাও তারপর গালিগালিজ পূর্ণ চিঠি প্রেরণকারীদের জন্য মামলা দায়ের করে দাও। (হায়াতে আলা হযরত, খন্ড-১ম, পৃষ্ঠা-১৪৩-১৪৪ হতে সংক্ষেপিত)
উদ্দেশ্য হল, যখন প্রশংসা কারীদেরকে পুরষ্কার দিবেনা অত:পর তবে দূর্নামকারীদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করবে কেন?
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
মালিক বিন দিনারের ধৈর্য্যের উজ্জল দৃষ্টান্ত
আমাদের পূর্ববর্তী বুযুর্গানে দ্বীন رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ জালিমদের জুলুম ও কাফিরদের নিপীড়নের উপর ধৈর্য্য ধারণ করতেন। আর কিভাবে তাঁরা রাগকে দমন করতেন তা এ ঘটনা থেকে অনুধাবন করার চেষ্টা করুন।যেমন, হযরত সায়্যিদুনা মালিক বিন দিনার رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ একটি ঘর ভাড়া নিলেন। উক্ত ঘরের পাশে সংযুক্ত একজন ইহুদীর ঘর ছিল। ঐ ইহুদী হিংসার বশবর্তী হয়ে নালার মাধ্যমে ময়লা পানি ও নাপাক বস্তু তার পবিত্র আঙ্গিনায় নিক্ষেপ করত। কিন্তু তিনি নিশ্চুপ থাকতেন। পরিশেষে একদিন সে নিজেই এসে আরজ করল, জনাব! আমার নালা দিয়ে আসা নাপাকির কারণে আপনার তো কোন অভিযোগতো নেই? তিনি رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ অত্যন্ত নম্র ভাষায় বললেন: নালা থেকে যে ময়লা আবর্জনা আসে তা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলি। ইহুদী বলল! আপনার এত কষ্ট হওয়ার পর ও আমার প্রতি রাগ আসে না? তিনি বললেন, রাগ তো আসে তবে তা আমি দমন করে ফেলি। কেননা পবিত্র কোরআনের ৪র্থ পারার সূরা আলে ইমরান, ১৩৪ নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন:
الَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ فِی السَّرَّآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ الۡکٰظِمِیۡنَ الۡغَیۡظَ وَ الۡعَافِیۡنَ عَنِ النَّاسِ ؕ وَ اللّٰہُ یُحِبُّ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۱۳۴﴾ۚ
কানযুল ঈমান অনুবাদ থেকে :“রাগ দমন কারীগণ এবং মানুষকে ক্ষমাকারীগণ এবং সৎলোকগণ আল্লাহর মাহবুব বা প্রিয় বান্দা। (পারা-৪র্থ, সুরা-আলে ইমরান, আয়াত নং-১৩৪)
এ জবাব শুনে ইহুদী মুসলমান হয়ে গেলেন। (তাযকেরাতুল আউলিয়া, পৃষ্ঠা-৫১)
নিগাহে ওলী মে ওহ তাছীর দেখিহ,
বদলতি হাজারো কি তাকদীর দেখিহ।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা!আপনারা দেখলেনতো! নম্রতার কেমন বরকত! নম্রতায় প্রভাবিত হয়ে ঐ ইহুদী মুসলমান হয়ে গেলেন।
নেককার বান্দা পিঁপড়াকেও কষ্ট দেয়না
আল্লাহ তা’আলার নেককার বান্দাদের একটি নিদর্শন হল যে, সে রাগান্বিত হয়ে মুসলমানদেরকে কষ্ট দেওয়াতো দূরের কথা পিঁপড়াকে পর্যন্ত কষ্ট দেওয়া থেকে তারা বিরত থাকে। সুতরাং হযরত সায়্যিদুনা খাজা হাসান বসরী رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেন,
اِنَّ الۡاَبۡرَارَ لَفِیۡ نَعِیۡمٍ ﴿ۙ۲۲﴾
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ : “নিশ্চয় সৎবান্দাগণ শান্তিতে থাকবে।”(পারা-৩০, সূরা মুতাফ্ফিফিন, আয়াত-২২)
আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় বলেন,অর্থাৎ নেক বান্দা হচ্ছে সে, যে পিঁপড়াকেও কষ্ট দেয়না। তাফসীরে হাসান বসরী, খন্ড-৫ম, পৃষ্ঠা-২৬৪)
রাগ করা কী হারাম?
সাধারণ মানুষদের মধ্যে একটি ভুল কথা প্রসিদ্ধ আছে যে, রাগ করা হারাম। রাগ হচ্ছে একটি অনিচ্ছাকৃত বিষয়। যা মানুষের মধ্যে চলে আসে। তাতে তার কোন দোষ নেই। রাগের অযথা ব্যবহার খারাপ। কোন কোন ক্ষেত্রে রাগ করাও প্রয়োজন। যেমন যুদ্ধের ময়দানে যদি রাগ না আসে, তাহলে আল্লাহ তাআলার দুশমনদের সাথে কিভাবে মোকাবিলা করবে। যা হোক, রাগ আসাটা সম্ভব। কিন্তু রাগের গতিকে অন্য দিকে ফিরিয়ে দিতে হবে। যেমন: কেউ দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে সম্পৃক্ত হওয়ার পূর্বে অসৎ সংস্পর্শে ছিল। রাগের অবস্থা এরূপ ছিল যে, কেউ যদি তার কথার সমর্থনে হ্যাঁ এর পরিবর্তে না বলত তাহলে তার উপর চড়াও হয়ে যেত, গালি-গালাজ আরম্ভ করে দিত। এমন কি কেউ বেয়াদবী করলে চড় মেরে দিত। মোট কথা কোন কাজ যদি তার স্বভাবের বিপরীত হত, তখন রাগ চলে আসত। ধৈর্য্য ধারণ করার বিপরীতে রাগ প্রয়োগ করত। আর যখন সৌভাগ্যক্রমে সে দাওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশে সম্পৃক্ত হল এবং সুন্নত প্রশিক্ষণের জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফিলায় সফর করল। তখন এর বরকত প্রকাশ পেল রাগের গতি ফিরে গেল। অর্থাৎ আগের মত (দাওয়াতে ইসলামীতে আসার পূর্বের মত) রাগ এখন ও তো বিদ্যমান আছে, কিন্তু সে রাগের গতি এভাবে পাল্টে গেল যে, আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم সাহাবায়ে কিরাম ও আওলিয়া কেরামদের দুশমন দের প্রতি তার তীব্র ঘৃণা সৃষ্টি হল। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে কেউ তাকে ভাল মন্দ বলুক না কেন তার রাগ চলে আসে তবে ধৈর্য্য ধারণ করে অন্যের উপর রাগ প্রয়োগ করার পরিবর্তে নিজ নফসের উপর রাগ করে বলে, হে নফস! তোমাকে আমি গুনাহে লিপ্ত হতে দিবনা। (মোট কথা, রাগ এখন আছে, তবে তার গতি পরিবর্তন হয়েছে যা পরকালের জন্য খুবই লাভজনক।)
অন্তরে ঈমানের নুর পাওয়ার উপায়
হাদিসে পাকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি রাগ প্রয়োগ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও দমন করল, আল্লাহ তার অন্তর কে ঈমান ও প্রশান্তি দ্বারা পূর্ণ করে দিবেন। (আল জামিউ ছগীর লিসসুয়ূতী, পৃষ্ঠা-৫৪১, হাদীস-৮৯৯৮) অর্থাৎ কারো পক্ষ থেকে কোন কষ্ট পাওয়ার দরুন রাগ এসে গেল, ইচ্ছা করলে সে প্রতিশোধ নিতে পারত। কিন্তু আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য রাগকে দমন করে নিয়েছে, তবে আল্লাহ তাআলা তাকে অন্তরের প্রশান্তি দান করবেন এবং তার অন্তরকে ঈমানের নুর দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিবেন। অতএব জানা গেল যে, কোন কোন সময় রাগ আসাটা উপকারী যখন সে রাগকে দমন করার সৌভাগ্য নছীব হবে।
রাগের অভ্যাস দূরীভুত করার চারটি ওজীফা
১। যাকে রাগ গুনাহে লিপ্ত করে, তার উচিত প্রত্যেক নামাজের পরে بِسۡمِ اللہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ ২১ বার পড়ে স্বীয় শরীরে ফুঁক দিবে এবং খানা খাওয়ার সময় তিনবার করে পাঠ করে খাবার ও পানির মধ্যে ও ফুঁক দিবে।
২। চলা-ফেরার সময় কখনো কখনো يَااللہُ يَارَحۡمٰنُ يَارَحِیۡمُ পাঠ করবেন।
৩। চলা-ফেরায় یَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْن পড়তে থাকবেন।
৪। কুরআনুল করীমের ৪র্থ পারার সুরা “আলে ইমরানের” ১৩৪ নং নিম্নোক্ত এ আয়াতাংশ টুকু প্রতিদিন সাত বার পাঠ করবে।
الَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ فِی السَّرَّآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ الۡکٰظِمِیۡنَ الۡغَیۡظَ وَ الۡعَافِیۡنَ عَنِ النَّاسِ ؕ وَ اللّٰہُ یُحِبُّ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۱۳۴﴾ۚ
রাগের ১৩ টি চিকিৎসা
যখন রাগ এসে যাবে তখন যেকোন একটি অথবা প্রয়োজনে সকল চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
১। اَعُوۡذُ بِا للہِ مِنَ الشَّیۡطٰنِ الرَّجِیۡمِ পাঠ করবেন।
২। وَلَا حَولَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّابِالله পাঠ করবেন।
৩। নিশ্চুপ থাকবেন।
৪। অযু করে নিবেন।
৫। নাকে পানি দিবেন।
৬। দাঁড়ানো অবস্থায় থাকলে বসে যাবেন।
৭। বসা অবস্থায় থাকলে শুয়ে যাবেন, মাটিকে জড়িয়ে ধরবেন।
৮। নিজের মুখমন্ডলকে মাটির সাথে লাগিয়ে দিবেন।(অযু থাকলে সিজদা করবেন)। যাতে একথা অনুভব হয় যে, আমি মাটি থেকে সৃষ্টি। এজন্য অন্যের উপর রাগ করা উচিত নয়। (ইহইয়াউল উলুম, খন্ড-৩য়, পৃষ্ঠা-১৮৮)
৯। যার উপর রাগ আসবে, তার সামনে থেকে সরে যাবেন।
১০। চিন্তা করুন যে, আমি যদি রাগ করি তাহলে অপরজন ও রাগ করবে এবং প্রতিশোধ গ্রহণ করবে। আর শক্রকে কখনো দূর্বল মনে করা উচিত নয়।
১১। যদি রাগের কারণে কাউকে ধমক ইত্যাদি মন্দ কথা বলে থাকেন, তাহলে বিশেষ গুরুত্বের সাথে সবার সামনে হাত জোড় করে তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিবেন। এর দ্বারা নফস অপমানিত হবে এবং ভবিষ্যতে রাগ প্রয়োগের সময় স্বীয় অপমানের কথা স্মরণ হবে। আশা করা যায় এভাবে রাগ থেকে মুক্তি লাভ করবেন।
১২। চিন্তা করুন! আজ মানুষের সামান্য ভূলের কারণে আমার রাগ এসে যায় আর আমি তাকে ক্ষমা করতেও প্রস্তুত নয়, অথচ আমার অসংখ্য ভুলভ্রান্তি রয়েছে যদি আল্লাহ রাগান্বিত হয়ে আমাকে ক্ষমা না করেন তাহলে এখন আমার কি অবস্থা হবে?
১৩। কেউ যদি বাড়াবাড়ি করে বা ভুল করে এবং তার উপর নফসের কারণে যদি রাগ এসে যায়, এমতাবস্থায় তাকে মাফ করে দেওয়া সাওয়াবের কাজ। সুতরাং রাগ আসার সময় এ মনমানসিকতা তৈরী করুন যে, কেনই বা আমি ক্ষমা করে সাওয়াবের অধিকারী হবনা? আর সেটা কেমন জবরদস্ত সাওয়াব যে, “কিয়ামতের দিন ঘোষণা করা হবে, আল্লাহ তাআলার কাছে যার প্রতিদান রয়েছে, সে দাঁড়িয়ে যাও, এ ঘোষণার পর ঐ সকল লোকেরা দাঁড়িয়ে যাবে যারা ক্ষমা প্রদর্শনকারী।”
১৩। কেউ যদি বাড়াবাড়ি করে বা ভুল করে এবং তার উপর নফসের কারণে যদি রাগ এসে যায়, এমতাবস্থায় তাকে মাফ করে দেওয়া সাওয়াবের কাজ। সুতরাং রাগ আসার সময় এ মনমানসিকতা তৈরী করুন যে, কেনই বা আমি ক্ষমা করে সাওয়াবের অধিকারী হবনা? আর সেটা কেমন জবরদস্ত সাওয়াব যে, “কিয়ামতের দিন ঘোষণা করা হবে, আল্লাহ তাআলার কাছে যার প্রতিদান রয়েছে, সে দাঁড়িয়ে যাও, এ ঘোষণার পর ঐ সকল লোকেরা দাঁড়িয়ে যাবে যারা ক্ষমা প্রদর্শনকারী।”
صَلُّوا عَلَى الحَبِيب ! صَلَّى اللهُ تَعَالَى عَلى مُحَمَّد
--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা “মুহাম্মদ ইলয়াস আত্তার” কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত ২৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত "রাগের চিকিৎসা" নামক রিসালার ১৪-২৩ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই রিসালাটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন। অন্যকে উপহার দিন।
ইসলামিক বাংলা বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for supporting.