বিভাগ সমূহ

শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

প্রশ্নোত্তর (বয়ান করা, ওয়াজ নসীহত করা ও মহিলাদের ব্যক্তিগত বিষয়ে)

আলেম নন এমন কারো পক্ষে বয়ান করা হারাম

প্রশ্ন: কোন ইসলামী বোন যদি আলিমা না হয়ে থাকেন, তিনি কি ইসলামী বোনদের সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় বয়ান করতে পারবেন?
উত্তর: যিনি যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন না, তিনি যেন দ্বীনি বয়ান না দেন। কেননা, আমার আক্বা আ’লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ ফতোওয়ায়ে রযবীয়ার ২৩তম খন্ডের ৩৭৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেন: ওয়াজ বলুন আর যে কোন ধরনের কথাবার্তাই বলুন- এতে সব চেয়ে প্রথম কথা হল আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর রাসুল صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم وَ عَزَّوَجَلّ এর অনুমতি। যে ব্যক্তি যথেষ্ট জ্ঞানের মালিক নন, তার পক্ষে ওয়াজ করা হারাম। সেই ব্যক্তির ওয়াজ শোনাও জায়েয নেই। কেউ যদি مَعَاذَ الله عَزَّوَجَل বদ-মাযহাবী হয়ে থাকে, তাহলে সে তো শয়তানেরই প্রতিনিধি। তার কথা শোনা তো জঘন্য ধরনের হারাম। (মসজিদে বয়ান দেবার ক্ষেত্রে তাকে বাধাঁ প্রদান করতে হবে)। আবার কারো বয়ান দ্বারা যদি ফিতনা সৃষ্টি হয়ে থাকে, তাহলে তাকেও ইমাম সাহেব সহ মসজিদের উপস্থিত লোকজন বাধাঁ দেবার হক রাখেন। আর যদি বিশুদ্ধ আকীদাসম্পন্ন পরিপূর্ণ সুন্নী আলেমে দ্বীন ওয়াজ করে থাকেন, তাহলে তাঁকে বাধাঁ দেবার অধিকার কেউ রাখে না। যেমন: মহান আল্লাহ তাআলা দ্বিতীয় পারার সূরা বাকারায় ১১৪ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেছেন:

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللهِ أَن يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُہٗ

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: কোন্ ব্যক্তি তার চেয়ে অধিক অত্যাচারী যে আল্লাহর মসজিদ সমূহে তাঁর নাম নেওয়ায় বাধাঁ প্রদান করে। (পারা: ২, সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ১১৪) (ফতোওয়ায়ে রজবীয়া, ২৩তম খন্ড, ৩৭৮ পৃষ্ঠা)

আলিমের পরিচয়

প্রশ্ন: তাহলে কি মুবাল্লিগ হবার জন্য দরসে নেজামী (অর্থাৎ আলিম কোর্স) সম্পন্ন করতে হবে?
উত্তর: আলিম হবার জন্য যেমন দরসে নেজামী শর্ত নয়, তেমন কেবল সার্টিফিকেট থাকাও যথেষ্ট নয়; বরং জ্ঞান থাকাই বাঞ্ছনীয়। আমার আক্বা আ’লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেছেন: আলিমের পরিচয় এই যে, তাঁকে আক্বীদা সম্পর্কে পরিপূর্ণ রূপে ধারণা রাখতে হবে, অটল ও স্বাধীনচেতা হতে হবে এবং নিজের প্রয়োজনের বিষয়াদি অন্য কারো সাহায্য ব্যতিরেকে নিজে নিজে কিতাবাদি থেকে বের করার যোগ্যতা থাকতে হবে। কিতাবাদি অধ্যয়ন করে এবং আলিমদের নিকট শুনে শুনেও ইলম হাসিল করা যায়। (আহকামে শরীয়াত থেকে গৃহীত, ২য় খন্ড। ২৩১ পৃষ্ঠা) বুঝা গেল, আলিম হবার জন্য দরসে নেজামীর সার্টিফিকেট যেমন জরুরি ও যথেষ্ট নয়, তেমনি আরবি, ফার্সী ইত্যাদি জানাও শর্ত নয়; বরং জ্ঞান থাকা জরুরী।
যথা, আমার আক্বা আ’লা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেছেন: সার্টিফিকেট কোন বিষয়ই নয়। এমন অনেকই রয়েছে, যাদের সার্টিফিকেট আছে কিন্তু বিন্দুমাত্র ইলমে দ্বীন নেই। অথচ এমন অনেক রয়েছেন যাঁদের সার্টিফিকেট বলতেই নেই, কিন্তু অনেকে সার্টিফিকেটধারী তাঁদের ছাত্র হওয়ার যোগ্যতাও রাখে না। মোটকথা, ইলম (জ্ঞান) থাকাই জরুরী। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৩তম খন্ড, ৬৮৩ পৃষ্ঠা) اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ عَزَّوَجَلّ ফতোওয়ায়ে রযবীয়া শরীফ, বাহারে শরীয়াত, কানূনে শরীয়াত, নিসাবে শরীয়াত, মিরআতুল মানাজীহ্, ইলমুল কুরআন, তাফসীরে নঈমী, (অনুদিত) ইহ্ইয়াউল উলুম সহ এ ধরনের অসংখ্য উর্দু কিতাব রয়েছে যেগুলো অধ্যয়ন করে করে, বুঝে বুঝে, ওলামায়ে কেরামদের নিকট হতে জিজ্ঞাসা করে করেও যথা প্রয়োজন আক্বীদার মাস্আলাগুলো সম্পর্কে ইলম হাসিল করে ‘আলিম’ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করা যেতে পারে। আর যদি সেই সাথে ‘দরসে নেজামী’ কোর্স সম্পন্ন করার সুযোগও হয়ে যায় তা হলে তো সোনায় সোহাগা।

আলিম নন, এমন ব্যক্তির বয়ানের পদ্ধতি

প্রশ্ন: আলিম নন, এমন ব্যক্তির পক্ষেও বয়ান দেয়ার কোন পদ্ধতি আছে কি?
উত্তর: আলিম নন, এমন ব্যক্তির পক্ষে বয়ান দেওয়ার সহজ উপায় হল, ওলামায়ে আহলে সুন্নাতের কিতাবাদি থেকে প্রয়োজন মত ফটোকপি করিয়ে নিয়ে সেগুলোর কাটিংগুলো নিজের ডায়েরীতে লাগিয়ে নিবেন এবং তা থেকে পড়ে পড়ে শুনাবেন। নিজ থেকে কিছুই বলবেন না। নিজের মতামত থেকে পবিত্র কুরআনের কোন আয়াতের কিংবা হাদিস শরীফের কোন ব্যাখ্যা প্রদান করবেন না। কেননা, ‘তাফসীর বির রায়’** বা নিজের মন থেকে তাফসীর করা হারাম। নিজের অনুমান ও ধারণা করে কুরআনের আয়াত থেকে দলিল গ্রহণ করা কিংবা হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা করা গেলেও শরীয়াতে সেটির অনুমতি নেই। নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও কুরআন শরীফের তাফসীর বা ব্যাখ্যা করে সে যেন নিজের ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়।” (তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ৪৩৯ পৃষ্ঠা, হাদিস: ২৯৫৯) আলিম নন, এমন ব্যক্তির বয়ানের ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দিতে গিয়ে আমার আক্বায়ে নেয়ামত, আ’লা হযরত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিলাত মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেছেন: কেবল উর্দু জানা কোন জ্ঞানহীন লোক যদি নিজের পক্ষ থেকে কিছু না বলে বরং কোন আলিমের লেখা থেকে পড়ে শোনায় তাহলে তাতে কোন বাধাঁ নেই। (প্রকাশিত ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৩ খন্ড, ৪০৯ পৃষ্ঠা)
(**সেই ব্যক্তিকেই ‘তাফসীর বির রায়’-কারী বলা হয়, যে পবিত্র কুরআনের তাফসীর করে নিজেরই জ্ঞান-বুদ্ধি, অনুমান ও ধারণা থেকে। যার সাথে নকলের বা শরীয়াত ভিত্তির প্রমাণাদির কোনই মিল থাকে না।)

মুবাল্লিগদের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা

প্রশ্ন: দা’ওয়াতে ইসলামীর কতিপয় মুবাল্লিগ ও মুবাল্লিগা না পড়ে নিজের মুখ থেকেও বয়ান ইত্যাদি করে থাকেন, তাঁদের উদ্দেশ্যে আপনার পক্ষ থেকে কি কোন নির্দেশনা পেতে পারি?
উত্তর: তারা যদি আলিম হয়ে থাকেন, তা হলে তো কোন বাধাঁ অবশ্যই নেই। অন্যথায় আলিম নন, এমন মুবাল্লিগ কিংবা মুবাল্লিগাদের জন্য নির্দেশনা হচ্ছে, তাঁরা শুধু আলিমদের লেখাগুলো পড়ে পড়েই বয়ান করবেন। আলিম নন, এমন কাউকে যদি সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় নিজের মুখ থেকে না পড়ে বয়ান করতে দেখে থাকেন, তা হলে দা’ওয়াতে ইসলামীর যিম্মাদারগণ তাঁকে বসিয়ে দিবেন। আলিম নন, এমন মুবাল্লিগ বা মুবাল্লিগা সহ যে কোন বক্তারই উচিত, তারা যেন দ্বীনি কোন বয়ান বা ভাষণ নিজের মুখ থেকে প্রদান না করেন। আমার আক্বা আ’লা হযরত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খান رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেছেন: কেবল উর্দু জানা কোন জ্ঞানহীন লোক যদি নিজের পক্ষ থেকে কিছু না বলে বরং কোন আলিমের লেখা থেকে পড়ে শোনায় তা হলে তাতে কোন বাধাঁ নেই। তিনি আরো বলেছেন: কোন মুর্খ ব্যক্তি যদি নিজে থেকে কিছু বয়ান করার জন্য দাঁড়িয়ে যায়, তা হলে সেটিকে ওয়াজ বলা হারাম। সেই ওয়াজ শোনাও হারাম। আর মুসলমানদের এই অধিকার রয়েছে বরং দায়িত্বই হচ্ছে যে, তাকে মিম্বর থেকে নামিয়ে দিবেন। এই কাজটি হচ্ছে ‘নাহি আনিল মুনকার’ অর্থাৎ অসৎকাজে বাধাঁ প্রদান। আর এই ‘নাহি আনিল মুনকার’ করা ওয়াজিব। আল্লাহ্ তাআলাই ভাল জানেন। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৩তম খন্ড, ৪০৯ পৃষ্ঠা)

মহিলারা কি VCD-তে মুবাল্লিগদের বয়ান শুনতে পারবেন?

প্রশ্ন: ইসলামী বোনেরা কি VCD বা মাদানী চ্যানেলে না-মুহরিম মুবাল্লিগের বয়ান শুনতে পারবেন? এ কাজটি কি বেহায়াপনা হিসাবে গণ্য হবে না?
উত্তর: বেহায়াপনা এক বিষয়, আর VCD তে না-মুহরিমদের বয়ান দেখা ও শোনা অন্য বিষয়। ইসলামী বোনদের জন্য পর্দার প্রতি যত্নবান থাকা সহ কতিপয় শরীয়াত ভিত্তিক পাবন্দি বজায় রাখার পাশাপাশি না-মুহরিম পুরুষদের দেখার ব্যাপারে কিছু শৈথিল্য অবশ্য রয়েছে। মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত বাহারে শরীয়াতের ১৬তম খন্ডের ৮৬ পৃষ্ঠায় ফতোওয়ায়ে আলমগিরীর বরাত দিয়ে উল্লেখ রয়েছে: কোন মহিলা কর্তৃক না-মুহরিম কোন পুরুষের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার হুকুম এটাই যা পুরুষ পুরুষের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার হুকুম রয়েছে। এই বিষয়টি তখনই প্রযোজ্য হবে, যখন মহিলা দৃঢ়তার সাথে মনে করবে যে, ঐ লোকটির প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার কারণে কামভাব সৃষ্টি হবে না। পক্ষান্তরে কামভাবের সন্দেহ থাকলে কখনো দৃষ্টি দিতে পারবে না। (আলমগিরী, ৫ম খন্ড, ৩২৭ পৃষ্ঠা) হ্যাঁ, আল্লাহ্ না করুন, বয়ানের VCD কিংবা মাদানী চ্যানেল দেখার সময়ও যদি গুনাহের দিকে ঝুকে পড়ে, তাহলে তাওবা ও ইস্তিগফার করে যত দ্রুত সম্ভব সেখান থেকে সরে যাবেন। আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ হচ্ছে, যুবক-বৃদ্ধ উভয় ধরনের ব্যক্তিকে দেখা যথাসম্ভব পরিহার করে চলবেন। কেননা, বড়ই নাজুক যুগ চলছে। তবে, বয়োবৃদ্ধ আলিম কিংবা অনাকর্ষণীয় বৃদ্ধ অথবা আধ-বয়সী পীর ও মুর্শিদকে (যদি কাছে কোন না-মুহরিম না থাকে) দেখাতে কোন বাধাঁ নেই। এতে ফিতনার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। তা সত্ত্বেও যদি দৃষ্টি দান কালে শয়তান কোন রূপ আকর্ষণ সৃষ্টি করে দেয়, তা হলে তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি সরিয়ে নিবেন আর সেখান থেকে চলে যাবেন।

মহিলারা কি না’ত-পড়ুয়াদের VCD দেখতে পারবেন?

প্রশ্ন: মাদানী চ্যানেল কিংবা VCD তে ইসলামী বোনেরা কি যুবক না’ত-পড়ুয়াদেরকেও দেখতে এবং শুনতে পারবেন?
উত্তর: না’ত-পড়ুয়া ব্যক্তি তিনিও তো একজন যুবক পুরুষ। তদুপরি হাত ইত্যাদি নড়াছড়া করার বিশেষ ভঙ্গিও রয়েছে। তাছাড়া আবৃত্তির সুর ও টোনের মধ্যে এমনিতেই তো এক ধরনের যাদু থাকে। এসব কিছু যেখানে বিদ্যমান, সেখানে কোন ‘মহিলা ওলী’ও কি এ ধরনের যুবক না’ত-পড়ুয়া দেখে নিজেকে গুনাহ থেকে বাঁচাতে পারবেন! দেখা তো দূরের কথা মাদানী ইসলামী বোনদেরকে তো আমি এই পরামর্শই দিব যে, তারা যেন কোন যুবকের অডিও ক্যাসেটও না শোনেন। কেননা, তার চমৎকার আওয়াজে মহিলাটি ফিতনায় নিপতিত হয়ে যেতে পারেন। সহীহ্ বোখারী শরীফে রয়েছে: ছরকারে মদীনা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর এক জন ‘হুদী-পড়ুয়া’ (উটকে দ্রুত হাঁকাবার উদ্দেশ্যে বিভোর করে তোলা শের পাঠক) ছিলেন। তিনি হচ্ছেন হযরত আনজাশাহ্ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ তাঁর অত্যন্ত মোহনীয় কন্ঠস্বর ছিল। (কোন সফরে মহিলারাও সাথে ছিলেন। এদিকে সায়্যিদুনা আনজাশাহ্ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ শের পাঠ করছিলেন)। ছরকারে মদীনা صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তাঁকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ করেন: “হে আনজাশাহ্! আস্তে; নাজুক কাঁচগুলো ভেঙ্গে দিও না”। (বোখারী, ৪র্থ খন্ড, ১৫৮ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৬২১১)

হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান উক্ত হাদীস শরীফটির টীকায় লিখেছেন: “অর্থাৎ এই সফরে আমার সাথে মহিলারাও রয়েছে। যাদের হৃদয় নাজুক কাঁচের মতই কোমল। মোহনীয় কণ্ঠ তাদের হৃদয়ে তাড়াতাড়ি প্রভাব সৃষ্টি করে। আর তারা লোকদের গানের কারণে গুনাহের দিকে ধাবিত হতে পারে। তাই তোমার গান বন্ধ করে দাও।” (মিরআত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৪৪৩ পৃষ্ঠা) অবশ্য মৃত কোন নাত- পড়ুয়ার অডিও ক্যাসেটে তেমন কোন আশঙ্কা নেই। তা সত্ত্বেও শয়তান যদি মনের ভাবকে ‘গুনাহে’র দিকে ঘুরিয়ে দেয়, তাহলে তাওবা ও ইস্তেগফার করতঃ তৎক্ষণাৎ টেপ রেকর্ডারটি বন্ধ করে দিবেন।

পর্দা বিষয়ে গুরুত্বপুর্ণ মাদানী ফুল

খালাত ভাই, মামাত ভাই, ফুফাত ভাই, চাচাত ভাই, জেঠাত ভাই, তালত ভাই, দেবর, ভাসুর, খালু, ফুফা, ভগ্নিপতি বরং নিজের না-মুহরিম পীর ও মুর্শিদদের থেকেও পর্দা করে চলবেন। অনুরূপ পুরুষদের জন্যও মামী, চাচী, জেঠী, ভাবী ও শালী জাতীয় সম্পর্কের মহিলাদের থেকে পর্দা করতে হবে। মুখে ডাকা ভাই ও বোন, মুখে ডাকা মা ও পুত্র আর মুখে ডাকা পিতা ও কন্যাদের জন্যও পর্দা করতে হবে। এমনকি পালক পুত্রের (নারী-পুরুষদের যৌন বিষয়াদির জ্ঞান সৃষ্টি হলে) বেলায়ও পর্দা করতে হবে। অবশ্য দুধের সাথে সম্পর্ক রয়েছে এমন কারো সাথে পর্দা করতে হবে না। যেমন: দুধ পান করিয়েছে এমন মাতা ও সেই পুত্রের এবং দুগ্ধ পান জনিত ভাই-বোনদের মাঝে পর্দা করতে হবে না। অতএব, পালিত পুত্র ও পালিত কন্যা ইত্যাদিকে হিজরী বৎসর অনুযায়ী দুই বৎসর বয়সের মধ্যে মহিলারা নিজের কিংবা সহোদর বোনের কিংবা নিজ কন্যার কিংবা নিজের আপন ভাগিনীর দুধ এক বার হলেও পান করিয়ে দিবেন। এমন ভাবে পান করাবেন যেন দুধ শিশুটির কণ্ঠনালী অতিক্রম করে নিচে চলে যায়। এভাবে যাদের সাথে দুধের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হয়ে গেল, তাদের সাথে পর্দা করা আর ওয়াজিব রইল না। আলা হযরত رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِ বলেছেন: আর ভরা যৌবন কালে কিংবা ফিতনার ভয় থাকলে পর্দা করাই উচিত । কেননা, সাধারণ লোকদের মনে এই দুধের সম্পর্কটির গুরুত্ব তেমন নেই বললেই চলে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া থেকে গৃহীত, ২২ তম খন্ড, ২৩৫ পৃষ্ঠা, রযা ফাউন্ডেশন, মারকাযুল আউলিয়া, লাহোর) 
মনে রাখবেন! হিজরী সন অনুযায়ী দুই বৎসরের পর কোন (পুরুষ বা মেয়ে) শিশুকে দুধ পান করানো হারাম। তবু কেউ যদি আড়াই বৎসরের মধ্যে দুধ পান করিয়ে থাকে, তা হলেও দুধের সম্পর্ক সাব্যস্ত হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য বাহারে শরীয়াত, ৭ম খন্ড থেকে ‘দুধের সম্পর্কের’ শীর্ষক বয়ান পাঠ করতে পারেন। তাছাড়া (৩২ পৃষ্ঠার) ‘আহত সাপ’ নামক রিসালাটি অবশ্যই পাঠ করে নিবেন। গৃহবাসী সকল সদস্যদের প্রতি আমার মাদানী সালাম জানিয়ে আমি গুনাহ্গারদের সর্দারের জন্য মদীনার, জান্নাতুল বাক্বীর ও বিনা হিসাব মাগফিরাতের মাদানী অনুরোধ করবেন। একই দোআয় আল্লাহ তাআলা আপনাকেও সর্বদা শামিল করুন।
اَلسَّلَامُ مَعَ الْاِكْرَام  (রিসালার লিখক)

৮টি মাদানী কাজ (ইসলামী বোনদের জন্য)

-মারকাযে মজলিসে শূরার পক্ষ থেকে-
﴾১﴿ ইনফিরাদী কৌশিশ।
﴾২﴿ ঘর দরস।
﴾৩﴿ ক্যাসেট বয়ান।
﴾৪﴿ মাদরাসাতুল মদীনা (বয়ষ্কা মহিলাদের)।
﴾৫﴿ সুন্নাতে ভরা সাপ্তাহিক ইজতিমা।
﴾৬﴿ নেকীর দাওয়াতের উদ্দেশ্যে এলাকায়ী দাওরা। ﴾
৭﴿ সাপ্তাহিক তারবিয়াতী হালকা। ﴾
৮﴿ মাদানী ইন্আমাত।

﴾১﴿ ইনফিরাদী কৌশিশ: নতুন নতুন ইসলামী বোনদের প্রতি ইনফিরাদী কৌশিশ করার মাধ্যমে মাদানী মাহলের সাথে তাদের সম্পৃক্ত করিয়ে নিবেন। তাদেরকে মুয়াল্লিমা, মুবাল্লিগা ও মুদাররিসা বানিয়ে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজের পরিধি বিস্তৃত করুন। যেসব ইসলামী বোনেরা প্রথমে আসতেন, বর্তমানে আসেন না বিশেষ করে তাঁদেরকে ইনফিরাদী কৌশিশ করে পুনরায় মাদানী মাহলের সাথে সম্পৃক্ত করিয়ে নিবেন। শায়খে তরিকত, আমীরে আহলে সুন্নাত, দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা, হযরত আল্লামা মাওলানা আবু বিলাল মুহাম্মদ ইলিয়াস আত্তার কাদেরী রযবী যিয়ায়ী বলেছেন: দা’ওয়াতে ইসলামীর শতকরা ৯৯% কাজ ইনফিরাদী কৌশিশের মাধ্যমেই সম্ভব।

﴾২﴿ ঘর দরস: ঘরের মধ্যে মাদানী মাহল তৈরি করার জন্য দৈনিক কম করে হলেও এক বার ফয়যানে সুন্নাত থেকে দরস দেবার বা শোনার ব্যবস্থা করবেন। (এতে কোন না-মুহরিম যেন না থাকে)। আমীরে আহলে সুন্নাত কর্তৃক প্রকাশিত কিতাবাদি থেকেও স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী দরস দেওয়া যেতে পারে। (প্রতিদিন সময়কাল ৭ মিনিট) (ফয়যানে সুন্নাতের দরসের পদ্ধতি ফয়যানে সুন্নাত কিতাবের প্রথম থেকে দেখে নিবেন)।

(৩﴿ ক্যাসেট বয়ান: সকল ইসলামী বোনেরা প্রতি দিন ইনফিরাদী ভাবে অথবা সকল গৃহবাসীদের সাথে নিয়ে (না-মুহরিম যেন না থাকে) শায়খে তরিকত, আমীরে আহলে সুন্নাত এর সুন্নাতে ভরা বয়ানসমূহ সহ মাদানী মুযাকারা সমূহ এবং ‘মাকতাবাতুল মদীনা’ কর্তৃক প্রচারিত অপরাপর মুবাল্লিগদের সুন্নাতে ভরা বয়ানসমূহ অবশ্যই শুনবেন।সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমা ও তারবিয়াতী হালকাগুলোতে প্রতি মাসে, (মহিলা প্রাপ্ত বয়ষ্কা) মাদরাসাতুল মদীনায় প্রতি সপ্তাহে এবং জামেয়াতুল মদীনায় দৈনিক ভাবে ‘ক্যাসেট ইজতিমা’ করবেন। (সুন্নাতে ভরা বয়ান কিংবা মাদানী মুযাকারা সমূহ কেবল একটি মাত্র ক্যাসেটও যারা প্রতিদিন শুনে থাকেন, তাঁদের কথা ভেবে আমার মন আনন্দিত হয়ে যায়)।

﴾৪﴿ মাদরাসাতুল মদীনা (প্রাপ্ত বয়স্কা ইসলামী বোন): প্রত্যেক যাইলী হালকায় অন্ততঃ একটি করে হলেও (প্রাপ্ত বয়স্কা ইসলামী বোন) মাদরাসাতুল মদীনার ব্যবস্থা করবেন। মাদরাসাতুল মদীনায় মহিলা শিক্ষার্থীনিদের হাদফ কমপক্ষে ১২ জন। (সময় সীমা সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা ১২ মিনিট)। সকাল ৮:০০ ঘটিকা থেকে আসরের আজানের পূর্ব পর্যন্ত যে কোন সময়ে (পর্দাওয়ালা স্থানে) ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। বিশুদ্ধ কুরআন শরীফ পাঠ শিখানোর পাশাপাশি গোসল, অযু, নামাজ, সুন্নাত, দোআ সহ মহিলাদের শরয়ী মাস্আলা মাসায়িল ইত্যাদি মৌখিক ভাবে নয়, বরং মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ‘ইসলামী বোনদের নামাজ’, ‘জান্নাতী জেওর’, নামাজের আহকামসমূহ’ ইত্যাদি কিতাবাদি থেকে দেখে দেখে শিখাবেন। মাদরাসাতুল মদীনা (প্রাপ্ত বয়স্কা ইসলামী বোনদের) ‘মাদানী ফুল’ মোতাবেক প্রতিষ্ঠা করবেন।

﴾৫﴿ সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমা: ইসলামী ভাইদের ‘শহর মজলিসে মুশাওয়ারাত’-এর অনুমতি সাপেক্ষে সপ্তাহের যে কোন দিন নির্ধারণ করে যাইলী হালকা, হালকা, এলাকা কিংবা শহর ভিত্তিক পর্দাওয়ালা স্থানে সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমা করবেন। দিন ও সময় নির্ধারিত করে রাখবেন। অংশগ্রহণকারীদের হাদফ কমপক্ষে ১২ জন: প্রতিটি যাইলী হালকায় থাকবেন কমপক্ষে ১২ জন। (সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টার এই) সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমাটি ‘মাদানী ফুল’(অর্থাৎ মারকাযী মজলিসে শূরা (দা’ওয়াতে ইসলামী)র পক্ষ থেকে প্রদত্ত নীতিমালা।) মোতাবেকই করবেন। ইসলামী বোনদের পক্ষে মাইক, ম্যাগাফোন, সিডি প্লেয়ার ও ইকোসাউন্ড ইত্যাদি ব্যবহার করার অনুমতি নেই।

﴾৬﴿ নেকীর দাওয়াতের উদ্দেশ্যে এলাকায়ী দাওরা: সপ্তাহের যে কোন দিন পূর্ব থেকে নির্ধারণ করতঃ আজ এই স্থানে কাল ঐ স্থানে করে ‘নেকীর দাওয়াতের এলাকায়ী দাওরা’র সৌভাগ্য অর্জন করবেন। অন্ততঃ পক্ষে ৭ জন ইসলামী বোন (যাদের মাঝে একজন বয়োজ্যেষ্ঠ অবশ্যই থাকবেন) নিজের যাইলী হালকা কিংবা হালকার এলাকায় (পর্দার প্রতি যত্নবান থেকে) ঘরে ঘরে গিয়ে ৩০ মিনিট ‘নেকীর দাওয়াতের এলাকায়ী দাওরা’ করার ব্যবস্থা করবেন। এর পর পূর্ব নির্ধারিত স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে মাদানী মারকায কর্তৃক প্রদত্ত কর্মপদ্ধতি মোতাবেক এলাকায়ী দাওরার ইজতিমার ব্যবস্থা করবেন। (সময় কাল ৬৩ মিনিট)। সকল ইসলামী বোনেরা নিজেদের সকল ধরনের মাদানী কাজকর্ম থেকে অবসর হয়ে মাগরিবের আজানের আগে আগেই ঘরে পৌঁছে যাবেন।

﴾৭﴿ সাপ্তাহিক তারবিয়াতী হালকা: ইসলামী ভাইদের ‘শহর মজলিশে মুশাওয়ারাতে’র অনুমতি সাপেক্ষে সপ্তাহের যে কোন দিন পূর্ব থেকে নির্ধারণ করতঃ হালকা, এলাকা কিংবা শহর ভিত্তিক তারবিয়াতী হালকার ব্যবস্থা করবেন। (সর্বোচ্চ সময়কাল হবে ২ ঘণ্টা)। তারবিয়াতী হালকার জন্য পর্দাওয়ালা স্থান, দিন ও সময় পূর্ব থেকে নির্ধারণ করে রাখবেন। মাদানী মারকায কর্তৃক প্রদত্ত কর্মপদ্ধতি মোতাবেক গোসল, অযু, নামাজ, সুন্নাত, দোআ, মহিলাদের শরয়ী মাস্আলা-মাসায়িল, দরস ও বয়ানের পদ্ধতি এবং দা’ওয়াতে ইসলামীর পরিভাষাগুলো সহ বিশুদ্ধ উচ্চারণ শিক্ষা দিবেন। তাছাড়া শাজরায়ে আত্তারিয়ার ওয়াজিফা সমূহ মুখস্থ করাবেন। আর ইনফিরাদী কৌশিশের মাধ্যমে অধিক হারে মাদানী কাজ করার মন-মানসিকতা সৃষ্টি করে দিবেন। ৮টি মাদানী কাজের কথা বুঝিয়ে দেওয়ার পর মার্জিত ও গ্রহণযোগ্য উপায়ে কোন দায়িত্ব সোপর্দ করবেন। তাছাড়া আমীরে আহলে সুন্নাত دَامَتْ بَرَكَاتُهُمُ العَالِيَه মারকাযী মজলিসে শূরার পক্ষ থেকে প্রচারিত ‘মাদানী ফুল’ মোতাবেক ইসলামী বোনদের তারবিয়াত করবেন। প্রতিটি যাইলী হালকায় যোগদানকারীনি ইসলামী বোনের হাদফ কমপক্ষে ৭ জন।

﴾৮﴿ মাদানী ইনআমাত: আমীরে আহলে সুন্নাত دَامَتْ بَرَكَاتُهُمُ العَالِيَه কর্তৃক প্রদত্ত ৬৩টি মাদানী ইন্আমাত নেককার হওয়ার সেরা উপায় হিসাবে সাব্যস্ত। অতএব, পূর্ব থেকে সময় নির্ধারণ করতঃ প্রতি দিনই ফিকরে মদীনা করবেন। (অর্থাৎ ভেবে দেখবেন যে, মাদানী ইন্আমাত অনুযায়ী আজকের দিনে কতটুকু আমল করা হল)। রিসালায় প্রদত্ত খালি ঘর পূরণ করে প্রতি মাদানী মাসের প্রথম দশ দিনের মধ্যে আপনার এলাকার যিম্মাদার ইসলামী বোনের নিকট জমা করিয়ে দিবেন। তাছাড়া মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ‘মাদানী তোহফা’র মাধ্যমে অপরাপর ইসলামী বোনদেরকেও ‘মাদানী ইন্আমাত’ অনুযায়ী আমল করার তারগীব দিবেন। ইসলামী বোনদের প্রত্যেকেই এই প্রচেষ্টায় থাকবেন তিনি যেন আত্তারের আজমিরী, বাগদাদী, মক্কী ও মাদানী কন্যা হিসাবে তৈরি হবার মর্যাদা লাভ করতে পারেন(এর বিস্তারিত মাদানী ইন্আমাত রিসালায় দেখুন।) 
ইনফিরাদী কৌশিশকারী ইসলামী বোনেরা ‘মাদানী ইন্আমাত’ অনুযায়ী আমল করতঃ প্রতি মাসে মাদানী ইনআমাতের অন্ততঃ ২৬টি রিসালা বন্টন করে পরের মাসে সেগুলো সংগ্রহ করার চেষ্টা করবেন। প্রতি যাইলী হালকার হাদফ হচ্ছে কমপক্ষে ১২টি রিসালা।

বিশেষ তাকিদ: যে কোন ধরনের বয়ান করবেন ‘মাদানী ফুল’ মোতাবেক ডায়েরী থেকে পাঠ করে করেই। মুখে বলার কখনো অনুমতি নেই।

জাহাজের মুসাফির

হযরত সায়্যিদুনা নোমান বিন বশীর رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ হতে বর্ণিত, রাসূলগণের সর্দার, দোআলমের ছরওয়ার মালিক ও মোখতার, হুযুর নবী করীমصَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “আল্লাহ্ তাআলার বিধি-বিধান ও আদেশ-নিষেধে যারা অলস ও উদাসীন আর যারা তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে তাদের দৃষ্টান্ত সেসব লোকের ন্যায় যারা জাহাজে লটারী নিল। কেউ পেল নিচের অংশ, কেউ পেল উপরের। নিচের অংশের লোকদের পানির জন্য উপরের অংশের লোকদের নিকট যেতে হত। তাই তারা এটিকে শুধুশুধু দুর্ভোগ মনে করে একটি কুঠার নিয়ে কেউ জাহাজের নিচের অংশে একটি ছিদ্র করতে লাগল। উপরের অংশের লোকজন তার নিকট এসে জিজ্ঞাসা করল: তোমার কী হয়ে গেল? সে বলল: আমার কারণে তোমাদের কষ্ট হত, আমার পানি ছাড়া তো আর চলে না। এবার তারা যদি তার হাত ধরে ফেলে তা হলেই তাকে বাঁচাল, আর নিজেরাও বাঁচবে। যদি তাকে সেই অবস্থায় এড়িয়ে চলে তা হলে তাকে ধ্বংস করল এবং নিজেদের জীবনও ধ্বংস করবে।” [সহীহ বোখারী। খন্ড: ২। পৃষ্ঠা : ২০৮। হাদিস : ২৬৮৬]

গুনাহের ভয়াবহতা অন্যদেরকেও ঘিরে ফেলে

উক্ত হাদীসটির টীকায় মিরআতুল মানাজীহ্ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে: হাদীসটিতে একটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে অসৎকাজে বাধাঁ দেওয়ার এবং সৎকাজে আদেশ দেওয়ার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আরও বলা হয়েছে: اَمْرٌ بِالْمَعْرُوْفْ وَنَهْىٌ عَنِ الْمُنْكَر অর্থাৎ সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে বারণ করার মত গুরু দায়িত্বটিকে যদি এই মনে করে এড়িয়ে চলা হয় যে, অসৎকর্মশীলরা নিজেরাই ক্ষতির শিকার হবে, তাতে আমাদের কী আসে যায়, এই চিন্তা ভুল। এ কারণে যে, তার গুনাহের প্রভাব গোটা সমাজকে ঘিরে নিজ আশ্রয়ে নিয়ে নেয়, আর যদ্রূপ নৌকা ছিদ্রকারী লোকটি নিজেই ধ্বংসের শিকার হত না বরং সকল যাত্রীকেই ডুবাত তদ্রূপ অসৎকর্মশীল কিছু লোকের এই অপরাধ গোটা সমাজেই সংক্রমিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। [মিরআতুল মানাজীহ্। খন্ড: ৬। পৃষ্ঠা : ৫০৪]

গুনাহের পাঁচটি পার্থিব ক্ষতি

গুনাহের পার্থিব ক্ষতির বর্ণনা পেশ করতে গিয়ে দাওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ১৪৮ পৃষ্ঠা সম্বলিত ‘নেকীর প্রতিদান ও গুনাহের সাজা’ কিতাবের ৫১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে: হুজুর নবিয়ে পাক, ছাহিবে লাওলাক, সাইয়াহে আফলাক صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی عَلَیْهِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “হে লোক সকল! পাঁচটি বিষয় থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তোমরা পাঁচটি বিষয় থেকে বিরত থাকিও।
(১) যে জাতি ওজনে কম দেয়, আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে উর্ধ্বমূল্য ও শস্যস্বল্পতায় ফেলেন। 
(২) যে জাতি ওয়াদা খেলাফ করে, আল্লাহ্ তাআলা তাদের দুশমনদের তাদের উপর শাসক হিসাবে নিয়োজিত করে দেন। 
(৩) যে জাতি যাকাত আদায় করে না, আল্লাহ্ তাআলা তাদের উপর থেকে বৃষ্টির পানি রুখে থাকেন। চতুষ্পদ জন্তুরা যদি না থাকত, তাহলে তাদের ভাগ্যে এক ফোঁটা পানিও জুটত না। 
(৪) যে জাতির মধ্যে অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতা বিস্তার পাবে, আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে প্লেগ রোগে আক্রান্ত করিয়ে থাকেন। 
(৫) যে জাতি কুরআন অনুসরণ না করে বিচার করে, আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে সীমালঙ্ঘন (অর্থাৎ ভূল বিচার) করার স্বাদ ভোগ করিয়ে থাকেন, আর তাদের এককে অন্যের আতঙ্কে রাখেন।” [কুররাতুল উয়ূন। পৃষ্ঠা : ৩৯৬]

এই রিসালার বাকি লিখা এখানে
--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা “মুহাম্মদ ইলয়াস আত্তার” কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত ৩২ পৃষ্ঠা সম্বলিত "কারবালার রক্তিম দৃশ্য" নামক রিসালার ১৫-৩১ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই রিসালাটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন। অন্যকে উপহার দিন। 
যারা মোবাইলে (পিডিএফ) রিসালাটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন ।
ইসলামীক বাংলা বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন
মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন