বিভাগ সমূহ

রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

জানাযা নামাযের পদ্ধতি ও গায়েবানা জানাযার বিধান (পর্ব ২)

জানাযার নামাযের পদ্ধতি (হানাফী) 

মুক্তাদী  এভাবে   নিয়্যত  করবে:    আমি   আল্লাহর  ওয়াস্তে  এই  ইমামের  পিছনে  এই  মৃত  ব্যক্তির  দোয়ার জন্য  এই  জানাযার  নামাযের  নিয়্যত    করছি।    (ফতোওয়ায়ে    তাতারখানিয়্যাহ,    ২য়  খন্ড,  ১৫৩  পৃষ্ঠা) এবার      মুক্তাদী  ও      ইমাম উভয়ে প্রথমে কান পর্যন্ত হাত উঠাবেন এবং اَللهُ اَكْبَرُ বলে দ্রুত নিয়মানুযায়ী নাভীর নিচে  হাত বেঁধে নিবেন এবং সানা পড়বেন। সানা পড়ার সময় وَ تَعَالٰى جَدُّكَ এরপর وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَ لَآ اِلٰهَ غَيْرُكَ ط পড়বেন। অতঃপর হাত উঠানো ব্যতীত   اَللهُ   اَكْبَرُ   বলবেন,   অতঃপর   দুরূদে  ইবরাহীম পড়বেন,    এরপর    হাত   না   উঠিয়ে আবার   اَللهُ   اَكْبَرُ    বলবেন    এবং   দোয়া   পাঠ করবেন   (ইমাম    সাহেব  তাকবীর   সমূহ    উচ্চ আওয়াজে  বলবেন    আর  মুক্তাদীগণ   নিম্নস্বরে। বাকী  দোয়া, যিকির  আযকার ইত্যাদি ইমাম ও মুক্তাদী সকলেই নিম্নস্বরে পাঠ করবেন।) দোয়া পাঠ  শেষে  পুনরায়  اَللهُ  اَكْبَرُ     বলবেন এবং  হাত     ছেড়ে    দিবেন,     অতঃপর     উভয়    দিকে সালাম            ফিরাবেন।সালামে            মৃত            ব্যক্তি ফেরেশতাগণ             এবং             নামাযে             উপস্থিত ব্যক্তিবর্গদের   নিয়্যত  করবেন।    ঐভাবে  যেমন অন্যান্য নামাযের   সালামে   নিয়্যত   করা    হয়,  এখানে  এতটুকু  কথা      বেশি  যে  মৃত  ব্যক্তিরও নিয়্যত  করবেন। (বাহারে  শরীয়াত,  ১ম  খন্ড,  ৮২৯, ৮৩৫ পৃষ্ঠা) 

বালিগ (প্রাপ্ত বয়স্ক)  পুরুষ  ও মহিলার জানাযার দোয়া


اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَ مَيِّتِنَا وَ  شَاهِدِنَا وَ غَآئِبِنَا وَ صَغِيْرِنَا  وَ  كَبِيْرِنَا   وَ  ذَكَرِنَا    وَ  اُنْثٰنَا  ط  اَللّٰهُمَّ  مَنْ  اَحْيَيْتَهٗ مِنَّا فَاَ حْيِهٖ عَلَى الْاِسْلَامِ وَ  مَنْ تَوَفَّيْتَهٗ  مِنَّا فَتَوَفَّهٗ عَلَى الْاِيْمَان

অনুবাদ: হে  আল্লাহ! ক্ষমা   করে দাও আমাদের প্রত্যেক       জীবিতকে      ও      আমাদের      প্রত্যেক  মৃতকে,     আমাদের     প্রত্যেক        উপস্থিতকে      ও প্রত্যেক অনুপস্থিতকে, আমাদের ছোটদেরকে ও আমাদের  বড়দেরকে,  আমাদের  পুরুষদেরকে  ও   আমাদের   নারীদেরকে।    হে   আল্লাহ!    তুমি  আমাদের   মধ্যে   যাকে    জীবিত   রাখবে    তাকে ইসলামের   উপর  জীবিত রাখো।আর আমাদের  মধ্যে   যাকে  মৃত্যু দান করবে, তাকে    ঈমানের উপর মৃত্যু দান করো। (আল মুসতাদরাক লিল  হাকিম, ১ম খন্ড, ৬৮৪ পৃষ্ঠা, হাদীস-১৩৬৬)
জানাযা নামাযের পদ্ধতি ও গায়েবানা জানাযার বিধান

নাবালিগ (অপ্রাপ্ত বয়স্ক) ছেলের দোয়া


اَللّٰهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرَطًا وَّ اجْعَلْهُ لَنَآ اَجْرًا وَّ ذُخْرًا  وَّ اجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَّ مُشَفَّعًا ط

অনুবাদ: হে  আল্লাহ! এই (ছেলে) কে আমাদের জন্য আগে গিয়ে সামগ্রী সঞ্চয়কারী করে দাও! তাকে   আমাদের  জন্য   প্রতিদান    (এর  মাধ্যম)  এবং সময় মতো   কাজে আসার উপযোগী করে দাও। আর তাকে আমাদের  জন্য সুপারিশকারী বানিয়ে দাও এবং তেমনই করো, যার সুপারিশ গ্রহণযোগ্য   হয়ে    থাকে।   (কানযুদ    দাকায়িক, ৫২ পৃষ্ঠা) 

নাবালিগ (অপ্রাপ্ত বয়স্ক) মেয়ের দোয়া


اَللّٰهُمَّ    اجْعَلْهَا  لَنَا  فَرَطًا  وَّ  اجْعَلْهَا  لَنَآ    اَجْرًا  وَّ  ذُخْرًا وَّ اجْعَلْهَا لَنَا شَافِعَةً وَّ مُشَفَّعَةً ط

অনুবাদ: হে আল্লাহ!   এই (মেয়ে) কে আমাদের জন্য   আগে   গিয়ে   সামগ্রী   সঞ্চয়কারীনী   করে  দাও! তাকে    আমাদের    জন্য     প্রতিদান    (এর মাধ্যম)    এবং    সময়    মতো    উপকারে    আসার উপযোগী   করো,  তাকে  আমাদের জন্য  কারো সুপারিশকারীনী     এবং    এমনই    যার    সুপারিশ  গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে।


জুতার উপর  দাঁড়িয়ে  জানাযার  নামায  আদায় করা

জুতা   পরিহিত   অবস্থায়    যদি    জানাযার   নামায আদায় করা হয়, তাহলে জুতা এবং মাটি দুটোই পবিত্র হওয়া আবশ্যক, আর জুতা খুলে যদি এর উপর দাঁড়িয়ে পড়ে, তাহলে জুতার তলা এবং মাটি পবিত্র হওয়া আবশ্যক নয়। আমার আক্বা, আ’লা    হযরত,  ইমামে  আহ্লে   সুন্নাত  মাওলানা শাহ্   ইমাম আহমদ  রযা  খাঁন  رَحْمَۃُ  اللّٰہِ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ     ইত্যাদিতে    নাপাকী    ছিলো।    অথবা   ঐ জুতার  তলায়   নাপাকী ছিলো এবং ঐ    অবস্থায় জুতা  পরিধান  করে  নামায  আদায়  করে,  তার  নামায   হবে   না।   সাবধানতা   যে,      জুতা খুলে এটার   উপর   পা   রেখে   নামায   পড়বে।   তবে  মাটি ও  তলা যদি নাপাক  হয়,  তাহলে  নামাযে বিঘ্নতা     আসবে     না।     (ফতোওয়ায়ে     রযবীয়া  (সংশোধিত) , ৯ম খন্ড, ১৮৮ পৃষ্ঠা)


গায়েবানা জানাযার নামায হতে পারে না

জানাযার   নামাযে   মৃত   ব্যক্তি   সামনে   থাকাটা  আবশ্যক। গায়েবানা (অর্থাৎ-লাশের অনুপস্থিতিতে) জানাযার  নামায   কখনো   হতে  পারে   না।   (দুররে   মুখতার,   ৩য়   খন্ড,   ১২৩,  ১৩৪  পৃষ্ঠা)  মুস্তাহাব  হচ্ছে,   ইমাম   সাহেব  মৃত ব্যক্তির সীনা (বুক) বরাবর দাঁড়াবেন।


কয়েকটি     জানাযার    একত্রে    নামায   আদায়ের পদ্ধতি

কয়েকটি   জানাযাকে   একত্র   করে    এক   সাথে  নামায    আদায়    করা       যাবে।    এক্ষেত্রে    এটার অনুমতি রয়েছে যে, সবগুলোকে সামনে পিছনে করে   রাখবে   যেন    সব   জানাযার    সীনা   (বুক) ইমামের সোজা সামনে      থাকে।       অথবা কাতারবন্দী         করে         রাখবে।         অর্থাৎ-একটি জানাযার   সোজা   পা    বরাবর অপরটির     মাথা রাখবে   এবং   দ্বিতীয়টির  পা    বরাবর  তৃতীয়টির মাথা    রাখবে।   وَعَلٰى   هٰذَا    الْقِيَاس   (অর্থাৎ-এই নিয়মের উপরই পরবর্তীগুলোর অনুমান করুন।) (আলমগিরী,   ১ম   খন্ড,     ১৬৫    পৃষ্ঠা।    বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮৩৯ পৃষ্ঠা) 

জানাযায় কতটি সারি (কাতার) হবে?

উত্তম   হলো,  জানাযায়   তিনটি  কাতার  হওয়া। যেহেতু হাদীসে পাকে রয়েছে: “যার (জানাযার) নামায  তিন কাতারে আদায়  করা হয়েছে   তার  গুনাহ্    সমূহ   ক্ষমা    হয়ে    যাবে।”যদি    উপস্থিত সর্বমোট সাতজন  লোক   হয়    তাহলে  একজন ইমাম হবেন  আর এখন প্রথম কাতারে তিনজন দাঁড়াবে, দ্বিতীয় কাতারে দুই জন এবং   তৃতীয় কাতারে    একজন      দাঁড়াবে।    (গুনিয়া,    ৫৮৮ পৃষ্ঠা)   জানাযার  নামাযে পিছনের   কাতার  সব  কাতারের   চেয়ে   উত্তম।   (দুররে   মুখতার,   ৩য়  খন্ড, ১৩১ পৃষ্ঠা) 


জানাযার  নামাযের  সম্পূর্ণ  জামাআত না   পেলে তবে?

মাসবূক    (অর্থাৎ-যার   কয়েকটি   তাকবীর   ছুটে গেছে  সে)   নিজের   ছুটে যাওয়া   অবশিষ্ট তাকবীরগুলো ইমামের   সালাম  ফিরানোর   পর বলবে      আর      যদি      এরূপ      ধারণা      হয়      যে, (তাকবীরের       সাথে        সাথে)      দোয়া      ইত্যাদি পড়লে  তা পূর্ণ করার পূর্বেই লোকেরা জানাযা কাঁধ      পর্যন্ত      তুলে      নিবে      তাহলে      সে শুধু  তাকবীরগুলো বলবে এবং দোয়া ইত্যাদি পড়া বাদ দিবে। ইমামের ৪র্থ তাকবীর বলার পর যে ব্যক্তি আসল সে (যতক্ষণ পর্যন্ত ইমাম সালাম না ফেরান)   জামাআতে    শরীক     হয়ে   যাবে   এবং  ইমামের সালাম   ফিরানোর   পর    তিনবার   اَللهُ اَكْبَرُ     বলবে।     অতঃপর        সালাম     ফিরাবে।  (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ১৩৬ পৃষ্ঠা) 


পাগল অথবা আত্মহত্যাকারীর জানাযা

যে জন্মগত পাগল অথবা বালিগ হওয়ার পূর্বেই পাগল  হয়ে   গেছে  এবং এই  পাগলাবস্থায় তার মৃত্যু   হলে  তার   জানাযার  নামাযে  নাবালিগের দোয়াটি     পড়বেন।    (জওহারা,      ১৩৮    পৃষ্ঠা। গুনিয়া, ৫৮৭ পৃষ্ঠা) যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছে তার জানাযার নামায আদায় করা যাবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ১২৭ পৃষ্ঠা)

মৃত বাচ্চাদের জানাযার বিধান

মুসলমানদের        বাচ্চা       জীবিত       জন্ম       হলো,  অর্থাৎ-শরীরের    অধিকাংশ   অংশ  বাহির  হওয়া পর্যন্ত জীবিত ছিলো অতঃপর মারা গেলো, তবে তার  গোসল  ও  কাফন  দিতে   হবে   এবং    তার জানাযার  নামায আদায় করতে হবে। আর যদি শরীরে    অধিকাংশ   অংশ     বের   হওয়ার   পূর্বেই মারা যায়  তবে তাকে ঐ অবস্থায় গোসল  দিয়ে  একটি   কাপড়ে   জড়িয়ে   দাফন  করে  দিবে।   তার   জন্য সুন্নাত  মোতাবেক গোসল ও  কাফন নেই  এবং নামাযও পড়া হবে না। মাথার দিক  থেকে    অধিকাংশের    সীমা হচ্ছে;মাথা     থেকে  সীনা (বুক) পর্যন্ত। অতএব  যদি  তার মাথা বের হয়েছিল এবং চিৎকার করে কান্না করলো কিন্তু সীনা   পর্যন্ত   বের   হওয়ার   পূর্বেই   মারা   গেলো  তবে    তার    জানাযা     আদায়     করা    যাবে না। পায়ের দিক  থেকে অধিকাংশের সীমা হচ্ছে পা থেকে কোমর  পর্যন্ত।   বাচ্চা   জীবিত  জন্ম হোক বা  মৃত  বা  অপূর্ণাঙ্গ   অবস্থায়  প্রসব  হোক   তার নাম  রাখতে হবে  এবং তাকে  কিয়ামতের  দিন  উঠানো হবে। (দুররে  মুখতার,  রদ্দুল  মুহতার,  ৩য়  খন্ড,  ১৫২,  ১৫৪  পৃষ্ঠা।বাহারে  শরীয়াত,  ১ম খন্ড, ৮৪১ পৃষ্ঠা) 

জানাযার লাশবাহী খাট কাঁধে নেয়ার সাওয়াব

হাদীসে   পাকে  রয়েছে:  “যে   ব্যক্তি  জানাযাকে নিয়ে চল্লিশ  কদম  চলবে  তার চল্লিশটি  কবীরা   গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া    হবে।” হাদীস    শরীফে এটাও    রয়েছে:    “যে    ব্যক্তি    জানাযার    চারটি  পায়াকে   কাঁধে নিবে   আল্লাহ্     তাআলা   তাকে পরিপূর্ণ   (অর্থাৎ-   স্থায়ী)    ক্ষমা   করে    দিবেন।” (আল  জাওহারাতুন নায়্যারাহ্,  ১ম খন্ড,   ১৩৯ পৃষ্ঠা।   দুররে   মুখাতার,  ৩য়   খন্ড,   ১৫৮-১৫৯  পৃষ্ঠা। বাহারে  শরীয়াত,   ১ম   খন্ড, ৮২৩ পৃষ্ঠা) 

জানাযার লাশবাহী খাট কাঁধে নেওয়ার পদ্ধতি

জানাযা  কাঁধে    নেওয়া  ইবাদত।   সুন্নাত  হচ্ছে: একের  পর   এক      চারটি  পায়াকে   কাঁধে  নেয়া এবং প্রতিবারে দশ কদম করে চলা। পূর্ণ সুন্নাত হচ্ছে:  প্রথমে  মাথার   দিকের  ডান    পাশ  কাঁধে নিবে  এরপর  ডান  পায়ের   দিকের    ডান  পাশ,  অতঃপর       মাথার      দিকের      বাম      পাশ      এবং  সর্বশেষে   পায়ের দিকের বাম পাশ কাঁধে   বহন করবে  এবং    দশ     কদম    করে  চলবে  তাহলে মোট চল্লিশ কদম  হবে। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৬২    পৃষ্ঠা। বাহারে    শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮২২ পৃষ্ঠা)  অনেকেই  জানাযার শোভাযাত্রায় ঘোষণা করে  থাকে     যে,  দুই   কদম    করে   করে  চলুন! তাদের উচিত হচ্ছে এভাবে ঘোষণা করা: “দশ কদম করে চলুন।”

বাচ্চার জানাযা বহন করার পদ্ধতি

ছোট   বাচ্চার জানাযাকে  যদি  এক ব্যক্তি হাতে  করে নিয়ে পথ চলে, এতে কোন  অসুবিধা নেই আর তাই এক জনের পর   অন্যজন করে  হাতে নিয়ে পথ চলতে থাকুন। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৬২  পৃষ্ঠা) মহিলাগণ  (ছোট    হোক  বা     বড়, কারো)   জানাযার   সাথে   যাওয়া   না-জায়িয   ও  নিষিদ্ধ। (দুররে মুখতার,   ৩য় খন্ড, ১৬২ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৮২৩ পৃষ্ঠা) 

জানাযার নামাযের পর ফিরে আসার মাসয়ালা

যে   ব্যক্তি    জানাযার   সাথে   রয়েছে   তার    জন্য জানাযার  নামায   আদায়   না  করে  ফিরে   আসা উচিত নয়।       নামাযের       পর       মৃত       ব্যক্তির  অভিভাবকদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ফিরে আসতে   পারবে আর   দাফনের   পর   অনুমতির  প্রয়োজন   নেই।  (আলমগীরী,  ১ম    খন্ড,  ১৬৫  পৃষ্ঠা) 

স্বামী    কি   তার    স্ত্রীর    জানাযার   লাশবাহী   খাট কাঁধে নিতে পারবে?

স্বামী   তার   স্ত্রীর  জানাযা  কাঁধে   নিতে  পারবে,   কবরে     নেমে    রাখতেও    পারবে       এবং    মুখও দেখতে পারবে।   শুধুমাত্র   গোসল   দেয়া    এবং  বিনা পর্দায় (আবরণ ব্যতীত) শরীর স্পর্শ করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা   রয়েছে।   স্ত্রী   তার    স্বামীকে  গোসল  দিতে  পারবে।   (বাহারে  শরীয়াত,   ১ম খন্ড, ৮১২, ৮১৩ পৃষ্ঠা) 

মুরতাদের জানাযার নামাযের শরয়ী হুকুম

মুরতাদ    এবং    কাফিরের     জানাযার     নামাযের একই   হুকুম।   ধর্ম  পরিবর্তন  করে  খ্রীষ্টান  হয়ে যাওয়া ব্যক্তির জানাযার নামায আদায়কারীদের ব্যাপারে  কৃত  এক  প্রশ্নের  উত্তর  প্রদান  করতে  গিয়ে   সায়্যিদী আ’লা হযরত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত   হযরত    আল্লামা    মাওলানা  শাহ্  ইমাম আহমদ     রযা      খাঁন رَحْمَۃُ       اللّٰہِ     تَعَالٰی     عَلَیْہِ ফতোওয়ায়ে      রযবীয়ার      ৯ম      খন্ডের      ১৭০  পৃষ্ঠাতে বলেন: যদি শরয়ী দলীল দ্বারা প্রমাণিত হয়  মৃত    ব্যক্তি  (আল্লাহ্র  পানাহ)  ধর্ম  পরিবর্তন করে খ্রীষ্টান হয়ে গিয়েছেন, তবে অবশ্যই তার জানাযার  নামায  এবং   মুসলমানদের  মত   তার কাফন-দাফন করা সব  অকাট্য হারাম। আল্লাহ্  তাআলা ইরশাদ করেন:

وَ  لَا تُصَلِّ عَلٰۤی  اَحَدٍ  مِّنۡہُمۡ مَّاتَ اَبَدًا وَّ  لَا    تَقُمۡ   عَلٰی قَبۡرِہٖ ؕ

কানযুল   ঈমান   থেকে     অনুবাদ:    আর   তাদের মধ্যে  কারো  মৃতের  উপর  কখনো    (জানাযার) নামায পড়বেন না এবং না তার কবরের পাশে দাঁড়াবেন।       (পারা:         ১০,        সূরা-        তাওবা, আয়াত-৮৪) 

কিন্তু নামায আদায়কারীরা যদি তার খ্রীষ্টান হয়ে যাওয়ার     কথা    না   জানে   আগের    জানা   মতে তাকে মুসলমান    মনে    করত।     তার    (মৃতের) কাফন-দাফন   ও নামায পর্যন্ত ঐ ব্যক্তির নিকট তার খ্রীষ্টান হয়ে যাওয়ার প্রমাণিত হয়নি। তবে এই   সব   কর্মকান্ডে  সে  এখনও  অপারগ   এবং নির্দোষ। কেননা  তার জানা মতে সে মুসলমান  ছিলো।         এসব        কর্মকান্ড        সম্পাদন         করা এমনিতেই তার উপর আবশ্যক ছিলো। হ্যাঁ যদি সেও    তার   খ্রীষ্টান   হওয়ার  ব্যাপারে  জানতো। এতদসত্ত্বেও সে জানাযার নামায, কাফন-দাফন ইত্যাদিতে     অংশগ্রহণ      করে,      অকাট্য     ভাবে মারাত্মক গুনাহ এবং কঠিন আযাবে লিপ্ত হলো। যতক্ষণ    পর্যন্ত  তাওবা  করবে  না,   তার  পিছনে নামায  আদায়  করা  মাকরূহ।   কিন্তু   মুরতাদের কর্মকান্ড এর পরেও পরীক্ষা  করা   জায়েয নয়, কেননা  এসব   লোকও এই  গুনাহ দ্বারা কাফির  হবে না। আমাদের পবিত্র  শরীয়াত  সহজ সরল পথ। শরীয়াতের কোন বিষয়ে অতিরঞ্জিত  করা বা     কমিয়ে  ফেলা পছন্দ  করে না।  অবশ্য যদি প্রমাণিত হয়ে যায় যে, সে  তাকে  খ্রীষ্টান  জেনে না শুধু  বরং অজানা  ও  অজ্ঞতার  কারণে  কোন দুনিয়াবী  উদ্দেশ্য  এমনকি নিজে তাকে  খ্রীষ্টান   হওয়ার          কারণে          সম্মানের পাত্র          এবং  কাফন-দাফন এবং জানাযার নামাযের উপযুক্ত  মনে করে তবে যাদের এরকম ধারণা হবে তারা সকলে  কাফির   ও   মুরতাদ  হয়ে   গেলো।   আর তাদের সাথে ঐ সকল আচরণ করা ওয়াজীব যা মুরতাদের     সাথে      করা     হয়।      (ফতোওয়ায়ে  রযবীয়া) 

আল্লাহ  তাআলা   ১০   পারার  সূরাতুত   তাওবার ৮৪ নং আয়াতে ইরশাদ করেন:

وَ  لَا تُصَلِّ  عَلٰۤی   اَحَدٍ  مِّنۡہُمۡ  مَّاتَ   اَبَدًا وَّ لَا  تَقُمۡ عَلٰی قَبۡرِہٖ  ؕ  اِنَّہُمۡ  کَفَرُوۡا  بِاللّٰہِ  وَ  رَسُوۡلِہٖ    وَ  مَا  تُوۡا  وَ  ہُمۡ    فٰسِقُوۡنَ ﴿۸۴﴾

কানযুল   ঈমান    থেকে   অনুবাদ:     আর   তাদের মধ্যে  কারো  মৃতের  উপর  কখনো    (জানাযার) নামায পড়বেন না এবং না তার কবরের পাশে দাঁড়াবেন।   নিশ্চয়  তারা  আল্লাহ্   ও    রাসুলকে অস্বীকার করেছে  এবং   নির্দেশ    অমান্য  করার ফাসিকী     (কুফরীর)     মধ্যেই     তারা     মৃত্যুমুখে  পতিত     হয়েছে।     (পারা:  ১০,      সূরা-তাওবা, আয়াত- ৮৪) 

সদরুল     আফাযিল    হযরত    আল্লামা     মাওলানা সায়্যিদ  মুহাম্মদ  নঈমউদ্দিন  মুরাদাবাদী  رَحْمَۃُ  اللّٰہِ   تَعَالٰی  عَلَیْہِ  এই আয়াতের ব্যাখ্যায়  বলেন: অত্র আয়াত দ্বারা  প্রমাণিত হলো  যে; কাফিরের জানাযার   নামায   কোন   অবস্থায়     জায়েয   নেই এবং   কাফিরের   কবরে   দাফন     ও    যিয়ারতের জন্য   দাঁড়ানো   নিষিদ্ধ।   (খাযায়িনুল  ইরফান,  ৩৭৬    পৃষ্ঠা)    হযরত     সায়্যিদুনা     জাবির      বিন  আবদুল্লাহ رَضِیَ اللہُ  تَعَالٰی   عَنۡہُمَا থেকে  বর্ণিত;  প্রিয়  নবী,  রাসুলে  আরবী,  হুযুর  صَلَّی  اللّٰہُ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ   وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم  ইরশাদ   করেছেন:  “সে    যদি   অসুস্থ হয়ে  যায় তবে তাকে  দেখতে   যেও   না।  মারা   গেলে   জানাযাতে   অংশগ্রহণ   করো   না।  (ইবনে  মাজাহ,    ১ম   খন্ড,    ৭০   পৃষ্ঠা,  হাদীস- ৯২) 

জানাযা সম্পর্কিত পাঁচটি মাদানী ফুল

“অমুক     আমার     জানাযার     নামায     পড়াবে”  এরকম ওসিয়তের হুকুম

(১)   মৃত  ব্যক্তি  ওসিয়ত   করেছিল    যে,  আমার জানাযার   নামায   অমুক   পড়াবে   বা   আমাকে  অমুক ব্যক্তি   গোসল   দিবে   তবে  এই  ওসিয়ত  বাতিল    হবে,   অর্থাৎ-এই     ওসিয়ত   দ্বারা   (মৃত ব্যক্তির) অভিভাবকের   অধিকার    বাতিল    হবে না।   হ্যাঁ!  অভিভাবকের    স্বাধীনতা  রয়েছে  যে, নিজে  না  পড়িয়ে তার   দ্বারা    পড়িয়ে   দিবে।  (বাহারে     শরীয়াত,     ১ম     খন্ড,     ৮৩৭     পৃষ্ঠা।  আলমগিরী,  ১ম  খন্ড,  ১৬৩ পৃষ্ঠা)    যদি   কোন মুত্তাকী বুযুর্গ   বা আলিম সম্পর্কে ওসিয়ত করে   থাকে  তবে   উত্তরাধিকারীদের   উচিত  যে,    এর উপর আমল করা।

ইমাম মৃত ব্যক্তির বুক বরাবর দাঁড়াবে

 (২)   মুস্তাহাব     হচ্ছে;মৃত   ব্যক্তির   বুক     বরাবর  ইমাম দাঁড়াবে আর মৃত ব্যক্তি থেকে দূরে হবে না।  মৃত ব্যক্তি   পুরুষ   হোক    বা   মহিলা,    প্রাপ্ত বয়স্ক হোক   বা   না-বালিগ। এটি  ঐ সময় হবে   যখন,  একজন মৃত   ব্যক্তির  জানাযা   পড়ানো হয়। আর যদি কিছু সংখ্যক হয়, তবে যে কোন একটির সীনা  তথা বুক বরাবর এবং কাছাকাছি দাঁড়াবে। (দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ১৩৪ পৃষ্ঠা) 


জানাযার  নামায  আদায়  না  করে    দাফন  করে দিলো তবে?

(৩)  মৃত  ব্যক্তিকে  জানাযার  নামায  আদায়  না  করে  দাফন করে দিল এবং মাটিও   দেয়া হলো তবে এখন তার কবরে জানাযার নামায পড়বে যতক্ষণ ফেটে যাওয়ার ধারণা না হয়। আর মাটি দেয়া না হলে বের করে নামাযে জানাযা আদায় করে দাফন করবে।   আর কবরে নামায  আদায় করার  সময় সীমা কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট নেই  যে, কতদিন পর্যন্ত আদায় করা  যাবে।  এটা মৌসুম, জমিন,  এবং  মৃত ব্যক্তির   শরীর    ও  অসুস্থতার  ভিন্নতার   কারণে   বিভিন্ন   ধরণের   হয়ে   থাকে।  গরমের মৌসুমে তাড়াতাড়ি ফেটে যাবে  এবং শীতকালে    দেরীতে    ও  বর্ষাকালে  বা   লবণাক্ত ভূমিতে তাড়াতাড়ি, শুকনো এবং লবণাক্ত নয় এমন     জমিতে    দেরীতে     ফাটে    মোটা    শরীর   তাড়াতাড়ি    হালকা-পাতলা     শরীর     দেরীতে  ফাটে।

ঘরে চাপা পড়া মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায

(৪)   কূপে  পড়ে    গিয়ে   মারা   গেলো  বা   তার  উপর ঘর ভেঙ্গে পড়ল আর মৃত লাশ বের করা যাচ্ছে    না   তবে     ঐ    জায়গায়    তার   জানাযার  নামায  আদায় করে  নিবে।  সমূদ্রে  ডুবে  গেলো আর    তাকে    পাওয়া     গেলো     না     তবে     তার   জানাযার নামায হতে পারে না কেননা মৃত লাশ নামায   আদায়কারীদের   সামনে   থাকা   পাওয়া  যাচ্ছে না। (রদ্দে মুহতার, ৩য় খন্ড, ১৪৭ পৃষ্ঠা) 

জানাযার নামাযে  লোকসংখ্যা  বাড়ানোর জন্য দেরী করা

(৫) জুমার দিন কারো ইন্তিকাল হলো তবে যদি জুমার    আগে   কাফন-দাফন   হতে    পারে   তবে প্রথমে  করে   নিবেন,  এই ধারণায় বিরত   থাকা যে, জুমার পরে লোক সমাগম বেশি হবে,  তবে তা  মাকরূহ। (রদ্দুল   মুহতার,  ৩য়  খন্ড,  ১৭৩  পৃষ্ঠা। বাহারে  শরীয়াত, ১ম খন্ড,   ৮৪০ পৃষ্ঠা)   

সালাতুত তাসবীহ

এ নামাযের অফুরন্ত সাওয়াব রয়েছে। হুযুর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی   عَلَیْہِ   وَاٰلِہٖ   وَسَلَّم  আপন  চাচা  হযরত সায়্যিদুনা    আব্বাস    رَضِیَ   اللہُ    تَعَالٰی      عَنۡہُ   কে ইরশাদ করলেন: “হে আমার চাচা!   যদি সামর্থ  রাখেন তাহলে প্রতিদিন একবার করে সালাতুত তাসবীহের  নামায  আদায়  করুন।যদি  প্রতিদিন  না      পারেন,     তাহলে     প্রত্যেক     জুমার      দিনে  একবার,    আর     এটাও    না    হলে      প্রতি    মাসে একবার  আদায়   করুন।  তাও   না  হলে  বৎসরে একবার    আদায়    করুন     এবং    তাও    না    হলে  জীবনে  একবার  আদায়   করে   নিন।”   (সুনানে আবি       দাউদ,       ২য়       খন্ড,       ৪৪-৪৫       পৃষ্ঠা,  হাদীস-১২৯৭)
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত নামায বিষয়ের এনসাইক্লোপিডিয়া ও মাসাইল সম্পর্কিত “নামাযের আহকাম” নামক কিতাবের ২৫২-২৬২ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। কিতাবটি নিজে কিনুন, অন্যকে উপহার দিন।

যারা মোবাইলে (পিডিএফ) কিতাবটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন অথবা প্লে স্টোর থেকে এই কিতাবের অ্যাপ ফ্রি ইন্সটল করুন

দাওয়াতে ইসলামীর সকল বাংলা ইসলামীক বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন 
নামায বিষয়ক আরো পড়ুন- প্রথম পর্ব

মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন