“ফয়যানে সুন্নাত” ১ম খন্ডের ৪০৫-৪০৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে: আমার আক্বা আ‘লা হযরত, ইমামে আহমদ রযা খাঁন رحمة الله عليه বলেন: হালাল পশুর সব অংশই হালাল কিন্তু কিছু অংশ আছে যা খাওয়া হারাম, নিষিদ্ধ অথবা মাকরূহ। যেমন: (১) রগের রক্ত (২) পিত্ত (৩) মূত্রথলি (৪, ৫) পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ (৬) অন্ডকোষ (৭) জোড়া, শরীরের গাঁট (৮) হারাম মজ্জা (৯) ঘাড়ের দো পাট্টা, যা কাঁধ পর্যন্ত টানা থাকে (১০) কলিজার রক্ত (১১) তিলির রক্ত (১২) মাংসের রক্ত, যা যবেহ করার পর মাংস থেকে বের হয় (১৩) হৃদপিন্ডের রক্ত (১৪) পিত্ত অর্থাৎ ঐ হলদে পানি যা পিত্তের মধ্যে থাকে (১৫) নাকের আর্দ্রতা (ভেড়া-ভেড়ীর মধ্যে অধিক হারে থাকে) (১৬) পায়খানার রাস্তা (১৭) পাকস্থলি (১৮) নাড়িভূড়ি (১৯) বীর্য (২০) ঐ বীর্য, যা রক্ত হয়ে গেছে (২১) ঐ বীর্য, যা মাংসের টুকরো হয়ে গেছে (২২) ঐ বীর্য, যা পূর্ণ জানোয়ার হয়ে গেছে এবং মৃত অবস্থায় বের হয়েছে অথবা জবেহ করা ছাড়া মারা গেছে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২০তম খন্ড, ২৪০-২৪১ পৃষ্ঠা)
বিবেকবান কসাইরা এসব হারাম বস্তু বের করে ফেলে দিয়ে থাকে কিন্তু অনেকের তা জানা থাকে না কিংবা অসাবধানতাবশতঃ এরকম করে থাকে। তাই আজকাল প্রায় অজ্ঞাতবশতঃ যেসব জিনিস তরকারীর সাথে রান্না করা হয়, সেগুলোর পরিচয় প্রদানের চেষ্টা করছি।
রক্ত
জবাই করার সময় যে রক্ত বের হয় সেটাকে “দমে মাসফূহ” (প্রবাহিত রক্ত) বলা হয়। তা অপবিত্র, খাওয়া হারাম, জবাই করার পর যে রক্ত মাংসের মধ্যে থেকে যায়, যেমন- ঘাড়ের কাটা অংশে, হৃদপিন্ডের ভিতর, কলিজা, প্লীহা ও মাংসের আভ্যন্তরিণ ছোট ছোট রগের মধ্যে, এসব যদিও নাপাক নয় তবুও এসব রক্ত খাওয়া নিষিদ্ধ। তাই রান্না করার পূর্বে এগুলো পরিস্কার করে নিন। মাংসের মধ্যে কিছু জায়গায় ছোট ছোট রগে রক্ত থাকে তা চোখে পড়া খুবই কঠিন। রান্নার পর ঐ রগগুলো কালো রেখার ন্যায় হয়ে যায়। বিশেষতঃ মগজ, মাথা, পা ও মুরগীর রান ও ডানার মাংস ইত্যাদির মধ্যে হালকা কালো রেখা দেখা যায়, খাওয়ার সময় তা বের করে ফেলে দিন। মুরগীর হৃদপিন্ডও সরাসরি রান্না করবেন না, লম্বাতে চার ভাগ করে কেটে ফাঁক করে প্রথমে সেটার রক্ত ভালভাবে পরিস্কার করে নিন।
হারাম মজ্জা
এটা সাদা রেখার মত হয়ে থাকে। মগজ থেকে শুরু করে ঘাড়ের মাঝখানে পুরো মেরুদন্ডের হাড্ডির শেষ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে। অভিজ্ঞ কসাই ঘাড় ও মেরুদন্ডের হাড্ডির মাঝখান থেকে ভেঙ্গে দু’টুকরো করে হারাম মজ্জা বের করে ফেলে দেয়। কিন্তু অনেক সময় অসাবধানতাবশতঃ কম বেশি থেকে যায় ও তরকারী বা বিরিয়ানী ইত্যাদির সাথে রান্নাও হয়ে যায়। সুতরাং ঘাড়, সীনা কিংবা পাঁজরের মাংস ও কোমরের মাংস ধোয়ার সময় হারাম মজ্জা খুঁজে বের করে ফেলে দিন। এটা মুরগী ও অন্যান্য পাখির ঘাড়ে ও মেরুদন্ডের হাঁড়েও থাকে রান্না করার পূর্বে তা বের করা খুবই কঠিন। সুতরাং খাওয়ার সময় বের করে নেয়া উচিত।
পাট্টা
ঘাড় মজবুত থাকার জন্য ঘাড়ের দু দিকে (হালকা) হলদে রংয়ের দুটি লম্বা লম্বা পাট্টা থাকে, যা কাঁধ পর্যন্ত টানা অবস্থায় থাকে। এ পাট্টাগুলো খাওয়া হারাম। গরু ও ছাগলের পাট্টাগুলো সহজে দেখা যায় কিন্ত মুরগী ও পাখির ঘাড়ের পাট্টা সহজে দেখা যায় না। খাওয়ার সময় খুঁজে বা কোন অভিজ্ঞ ব্যক্তি থেকে জিজ্ঞাসা করে তা বের করে ফেলুন।
শরীরের গাঁট
ঘাড়ে, কণ্ঠনালীতে ও কিছু জায়গায় চর্বি ইত্যাদিতে ছোট বড় কোথাও লাল আবার কোথাও মাটি রংয়ের গোল গোল গাঁট থাকে। সেগুলোকে আরবীতে গুদ্দাহ, উর্দূতে গুদূদ (ও বাংলায় গাঁট) বলা হয়। এগুলো খাবেন না। রান্না করার পূর্বে খুঁজে করে এগুলো ফেলে দেয়া উচিত। যদি রান্নাকৃত মাংসেও দেখা যায় তবে ফেলে দিন।
অন্ডকোষ
অন্ডকোষকে খুসইয়া, ফাওতাহ বা বায়দাহও বলা হয়। এগুলো খাওয়া মাকরূহে তাহরীমা। তা গরু, ছাগল ইত্যাদি পুরুষ প্রজাতির মধ্যে সুস্পষ্ট পরিলক্ষিত হয়। মোরগের পেট খুলে অন্ত্র (ভূড়ি) সরালে পিঠের অভ্যন্তরিন উপরিভাগে ডিমের ন্যায় সাদা দুটো ছোট ছোট বিচি ন্যায় দেখা যাবে এগুলোই হচ্ছে অন্ডকোষ। এগুলো বের করে ফেলুন। আফসোস! মুসলমানদের অনেক হোটেলে হৃদপিন্ড, কলিজা ছাড়া গরু ছাগলের অন্ডকোষও তাবায় ভুনে পেশ করা হয়। সম্ভবত হোটেলের ভাষায় এ ডিসকে “কাটাকাট” বলা হয়। সম্ভবত এটাকে কাটাকাট এজন্য বলা হয়, গ্রাহকের সামনেই হৃদপিন্ড বা অন্ডকোষ ইত্যাদি ঢেলে প্রচন্ড আওয়াজ সহকারে তাবার উপর কাটে ও ভুনে, এতে কাটাকাটের আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হয়।
ওজুরি
ওজুরির ভিতর আবর্জনা ভরা থাকে, এটাও খাওয়া মাকরূহে তাহরীমী। কিন্তু মুসলমানদের একাংশ রয়েছে, যারা আজকাল এটা আগ্রহভরে খেয়ে থাকে।
--------
লিখাটি আমিরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত কুরবানী সম্পর্কিত “ঘোড়ার আরোহী” রিসালার ৩৮-৪১ নং পৃষ্ঠা থেকে সংগৃহীত। “ঘোড়ার আরোহী” কুরবানী বিষয়ে এক পূর্ণাঙ্গ এনসাইক্লোপিডিয়া ও মাসআলার বই। বইটির পিডিএফ বই ফ্রি ডাউনলোড করুন।
- পিডিএফ বই ফ্রি ডাউনলোড লিংক