বিভাগ সমূহ

শনিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৭

রজব মাসের ফযিলত, রোজা রাখা ও আমল (পর্ব ৩)

৬০ মাসের রোযার সাওয়াব

হাদীসে পাকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি ২৭ রজবের রোযা রাখবে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য ষাট (৬০) মাসের রোজার সাওয়াব লিখে দিবেন। আর তা সেই দিন, যেই দিনে হযরত জিবরাঈল عليه السلام হযরত মুহাম্মদ এর জন্য প্রথম অহী নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন। (তানযিহুশ শরীয়াহ, খন্ড-২য়, পৃ-১৬১, হাদীস নং-৪১)

শত বছরের রোজার সাওয়াব

হযরত সায়্যিদুনা সালমান ফারসী رضى الله عنه থেকে বর্ণিত, আল্লাহর মাহবুব হযরত মুহাম্মদ এর বাণী হচ্ছে, রজবে এমন একটি দিন ও রাত রয়েছে যে, সেই দিনে যে রোযা রাখবে ও রাতে কিয়াম তথা ইবাদত বন্দেগী করবে সে যেন একশত বছর রোযা রাখল। আর সেই দিন হল ২৭ রজব। এই দিন হযরত মুহাম্মদ কে আল্লাহ তাআলার প্রতি প্রেরণ করেছেন। (শুআবুল ঈমান, খণ্ড-৩য়, পৃ-৩৭৪, হাদীস নং-৩৮১১)


অতি আদর আমাকে অবাধ্য বানিয়ে দিয়েছিল

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! রজবুল মুরাজ্জবের রোযার জন্য মাদানী মন-মানসিকতা তৈরীর, গুনাহের বদ অভ্যাস ছেড়ে দেওয়ার এবং ইবাদতের স্বাদ পাওয়ার জন্য তবলীগে কুরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফিলায় আশিকানে রসূলগণের সাথে সফর করাকে নিজ অভ্যাসে পরিণত করুন। আপনাদের আগ্রহের জন্য মাদানী কাফিলার একটি মাদানী বাহার আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। যেমন শাহদারাহ (মারকাযুল আউলিয়া লাহোর) এর এক ইসলামী ভাই! বর্ণনার সার-সংক্ষেপ হচ্ছে, “আমি আমার পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান ছিলাম। অতিরিক্ত আদর ভালবাসা আমাকে শেষ পর্যায়ে পিতামাতার অবাধ্য বানিয়ে দিয়েছিল। রাতভর বেহায়াপনা করতাম। সকালে দেরী পর্যন্ত ঘুমাতাম। মা-বাবা বুঝাতে চাইলে তাদেরকে ধমক দিতাম। তারা মাঝে মধ্যে কেঁদে দিতেন। দু’আ করতে করতে আমার মার চোখ ভিজে যেত।
সেই মহা মূল্যবান মুহুর্তকে জানাই লাখো সালাম যেই মুহুর্তে দা’ওয়াতে ইসলামীর এক আশিকে রসূলের সাথে আমার সাক্ষাতের সৌভাগ্য হয়েছিল। আর তিনি অতি আদর আর ভালবাসা দিয়ে “ইনফিরাদী কৌশিশের” মাধ্যমে আমি গুনাহগারকে মাদানী কাফিলায় সফরের জন্য প্রস্তুত করলেন। তাই আমি আশিকানে রসূলদের সাথে তিনদিনের মাদানী কাফিলার মুসাফির হয়ে গেলাম। জানিনা ঐ আশিকানে রসূলগণ তিনদিনের ভিতর আমাকে কি খাইয়ে দিল যার কারণে আমার মত অবাধ্য মানুষের পাথরের অন্তর (যা মাতাপিতার চোখের পানিতে ভিজেনি তা) মোমের মত গলে গেল। আমার অন্তরে মাদানী বিপ্লব শুরু হল এবং আমি মাদানী কাফিলা থেকে নামাযী হয়ে ফিরে আসলাম। ঘরে এসে আমি সালাম করলাম, বাবার হাত চুমু দিলাম এবং আম্মাজানের কদমে চুমু খেলাম। ঘরের সবাই আশ্চর্য হয়ে গেল যে, তার কি হল যে, কাল পর্যন্ত যে কোন কথাই শুনত না। আজ সে এতই ভদ্র নম্র ও বিনয়ী হয়ে গেল!

الحمد لله عزوجل মাদানী কাফিলায় আশিকানে রসূলদের সঙ্গ আমাকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দিয়েছে। এই ঘটনাটি বর্ণনা করার সময় দা’ওয়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আমার মত একজন অতীতের বে-নামাযীর ভাগ্যে মুসলমানদেরকে ফযরের নামাযের জন্য জাগিয়ে দেয়ার যিম্মাদারী লাভ হয়েছে। (দা’ওয়াতে ইসলামীল মাদানী পরিবেশে মুসলমানদেরকে ফযরের নামাযের জন্য জাগিয়ে দেয়াকে ‘সাদায়ে মদীনা’ বলা হয়।)


সঙ্গ সম্পর্কিত ৩টি বর্ণনা

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা শুনলেনতো! আশিকানে রসূলদের সঙ্গ কিভাবে একজন বেনামাযী যুবককে অপরের নামাযের আহ্বানকারী বানিয়ে দিল। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, সঙ্গ অবশ্যই রং ছড়ায়। সৎ সঙ্গ মানুষকে সৎ ও খারাপ সঙ্গ খারাপ বানায়। এজন্য সর্বদা আশিকানে রসূলদের সঙ্গ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এই বিষয়ে ৩টি হাদিসে মোবারক উল্লেখ করছি।

(১) ‘উত্তম বন্ধু সে-ই যখন তুমি আল্লাহকে স্মরণ করবে, সে তোমাকে সহযোগীতা করবে। আর যখন তুমি ভুলে যাবে আল্লাহর স্মরণ থেকে সে তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিবে।’(জালালুদ্দীন সুয়ূতী প্রণীত জামেউস সগীর, পৃ-২৪৪, হাদীস নং-৩৯৯৯)

(২) উত্তম সাথী সে, যাকে দেখলে তোমার আল্লহ তাআলার কথা স্মরণ হয়। আর তার আমল তোমাকে আখিরাতের স্মরণ করিয়ে দেয়। (প্রাগুক্ত, পৃ-২৪৭, হাদীস নং-৪০৬৩)

(৩) আমিরুল মু’মিনীন হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম رضى الله عنه ইরশাদ করেন, এমন কোন কাজে জড়াইওনা যা তোমাদের জন্য উপকারী নয়। শত্রু থেকে দূরে থাক, বন্ধু থেকে বেঁচে থাক কিন্তু যখন বন্ধু আমানতদার হয় (তখন মিশতে পার) কেননা আমানতদারীর মত আর কিছু নাই। আর আমানতদার সেই যে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে। আর ফাযির তথা আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্যদের সাথে থেকো না। কেননা তারা তোমাদের নাফরমানী, শিক্ষা দিবে এবং তাদের সাথে গোপন রহস্যের কথা বলিওনা। আর নিজের কাজের মধ্যে তাদের পরামর্শ নিবে যারা আল্লাহকে ভয় করে। (কানযুল উম্মাল, খন্ড-৯ম, পৃ-৭৫, হাদীস নং-২৫৫৬৫)

মন্দ সঙ্গের নিষেধাজ্ঞা

বেনামাযী, গালি গালাজকারী, নাটক সিনেমা দর্শনকারী, গান বাজনা শ্রবণকারী, মিথ্যা, গীবত, পরনিন্দাকারী, চোগলখোর, ওয়াদাখেলাপী, চোর, ঘুষখোর, মদ্যপায়ী, ফাসিক ও ফাযির, গুনাহগার বদ মাযহাবী ও কাফিরদের সঙ্গ গ্রহণের ব্যাপারে শরীয়তের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কোন শরয়ী প্রয়োজন ছাড়া, সমস্যা ব্যতীত জেনে বুঝে তাদের সঙ্গে বসবাসকারীরা গুনাহগার হবে না। ফাতাওয়ায়ে রযবীয়্যা ২২ পৃ: ২৩৭ পৃষ্ঠায় রয়েছে যে, আলা হযরত رحمة الله عليه এর নিকট প্রশ্ন করা হল, যিনাকারী ও দায়্যুস (তথা যে নিজ স্ত্রী বা কোন মুহরিমা মহিলার বেপর্দার ব্যাপারে বাধা দেয় না এবং যথাসাধ্য নিষেধ করে না।) থেকে কতটুকু বেঁচে থাকতে হবে?

উত্তরে তিনি ইরশাদ করলেন, যিনাকারী ও দায়্যুস হচ্ছে ফাসিক তাদের সাথে উঠা, বসা, মিলামিশা করা থেকে বেঁচে থাকা উচিত।” এই উত্তর দেয়ার পর তিনি কুরআনের এ আয়াত শরীফটি লিখেন, যেখানে আল্লহ রব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন, (কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ-)

এবং যখনই তোমাকে শয়তান ভুলিয়ে দেবে অতঃপর স্মরণে আসতেই জালিমদের নিকটে বসবে না।

(পারা-৭ম, সূরা-আনআম, আয়াত-৬৮)

প্রসিদ্ধ মুফাস্সির হাকিমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান رحمة الله عليه এই আয়াতে মুবারাকার ব্যাখ্যায় বলেন, “এর দ্বারা বুঝা গেল অসৎ সঙ্গ থেকে বেঁচে থাকাটাই অত্যন্ত প্রয়োজন। মন্দ আমল বা মন্দ কাজ বিষাক্ত সাপের চাইতে খারাপ। কারণ খারাপ সাপ বা বিষাক্ত সাপ প্রাণ বের করে নেয় কিন্তু খারাপ বা মন্দ সঙ্গ ঈমান নষ্ট করে দেয়।” (নুরুল ইরফান, পৃ-২১৫)
--------
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত রমযানের ফযিলত নামক কিতাবের ৩৭৯-৩৯৮ পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। মাকতাবাতুল মদিনা থেকে কিতাবটি নিজের জন্য কিনুন, রমযানে অন্যকে উপহার দিন। যারা মোবাইলে কিতাবটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড দিন

বাংলা ইসলামিক বইয়ের লিংক এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন
মাদানী চ্যানেল দেখতে থাকুন